ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৮১+৮২

0
2487

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৮১

★ আদিত্য নূরের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত যেয়ে দরজায় বেল বাজালো। একটু পরে নূরের বাবা এসে দরজা খুলে দিতেই আদিত্য তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
……নূর কোথায়?

নূরের বাবা বললো।
….তুমি ভেতরে আস বাবা। নূর ওর রুমে আছে। আসার পর থেকেই দরজা আটকে বসে আছে। অনেক ডাকলাম কিন্তু খুলছেই না।

আদিত্য আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে নূরের রুমের দিকে দৌড়াল। নূরের বাবা ভাবলো ওদের একা ছেড়ে দেওয়াই ঠিক হবে। তাই সে আর ওদের কাছে গেলোনা।

আদিত্য নূরের রুমের দরজায় এসে জোরে জোরে চাপড় মেরে বলে উঠলো।
….প্রাণপাখী, দরজা খোল প্লিজ। দেখ আমি চলে এসেছি। একবার দরজা খোল প্লিজ। আমি সব ঠিক করে দেব।

নূর বেডের ওপর বসে বসে কাঁদছে। আদিত্যের কথা শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু ও কোনো উত্তর দিচ্ছে না। দুই কানে হাত চেপে ধরে কাঁদতে লাগলো। যাতে আদিত্যের আওয়াজ না আসে।
এদিকে নূরের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আদিত্য আরও ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য আরও জোরে জোরে থাবড়াতে থাবড়াতে বললো ।
….প্রাণপাখী, প্লিজ দরজা খোল। আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে। প্লিজ কিছু বলো। দেখ তুমি দরজা না খুললে, আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো? শেষ বারের মতো বলছি দরজা খোল। ঠিক আছে খুলবে নাতো? তাহলে আমি এখন দরজাই ভাঙবো।
কথাটা বলে আদিত্য নিজের গায়ের জোর দিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। হঠাৎ আদিত্য হাতে একটু ব্যাথা পেয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করে উঠলো।
….আহহ,,

নূর এতক্ষণ কঠোর হয়ে বসে থাকলেও, আদিত্যের ব্যাথা পাওয়ার আওয়াজ শুনে আর থাকতে পারলোনা। নূর ঘাবড়ে গিয়ে ছুটে যেয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই আদিত্য কোনো কিছু না বলে দ্রুত গতিতে যেয়ে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। নূর ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পিছিয়ে যেতে লাগলো, আর আদিত্য ঠোঁট চেপে ধরেই নূরের সাথে সাথে এগিয়ে যেতে লাগলো। নূর পেছাতে পেছাতে একসময় কাবার্ডের সাথে ঠেকে গেল। আদিত্য এবার নূরের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দুই হাত দিয়ে নূরের গালে হাত বোলাতে বোলাতে আদুরে গলায় বললো।
…..আই এ্যাম সরি প্রাণপাখী, আই এ্যাম সরি। আমি জানি আমি রাগের মাথায় তোমার সাথে রুড বিহেভ করে ফেলেছি। কি করবো, তুমি ওমন একটা কথা বলে ফেলেছিলে তাই আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। প্লিজ মাফ করে দাও আমাকে। আর তুমি কিভাবে কাওকে কিছু না বলে এখানে চলে এলে? জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?

নূরের ইচ্ছে করছে এখুনি ওর আদিত্যকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে।আর বলতে যে,আমি ওর ওপর একটুও রাগ করিনি। কিন্তু সেরকম কিছুই বললো না ও। মাথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো।
….কেন এখন কি আমি তোমাদের পারমিশন ছাড়া কোথাও যেতেও পারবো না?

নূরের কথা শুনে আদিত্য প্রচুর অবাক হলো। নূর এর আগে কখনো ওর সাথে এভাবে কথা বলেনি। আদিত্য জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
….না না নূর তুমি ভুল বুঝছ। আমি সেটা বলিনি। আমিতো শুধু বলছি যে,আমাকে জানিয়ে আসলে আর আমার টেনশন হয় না।

….সব কথা সবসময় তোমাকে জানিয়ে করতে হবে এমনতো কোনো কথা নেই। আমার ইচ্ছে হয় নি তাই জানায়নি।

….এভাবে কেন কথা বলছ প্রাণপাখী? বুঝতে পেরেছি, তুমি এখোনো আমার ওপর রেগে আছ তাইনা? সরি না কলিজাটা? এবারতো আমাকে মাফ করে দাও? তাকাও আমার দিকে? প্লিজ চলোনা বাড়ি ফিরে যাই?

আদিত্যের এমন মায়াবী ডাকে নূরের ভেতরটা ভেঙে গুরিয়ে পড়ছে। তবুও নিজেকে অনেক কষ্টে শক্ত রেখে কড়া গলায় বললো।
….আমি যাবোনা। এখানেই থাকবো।

নূরের কথায় আদিত্যের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। আদিত্য জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
….যাবেনা মানে? ও আচ্ছা, তুমি আজ রাত এখানেই থাকতে চাচ্ছ? ইটস ওঁকে, তাহলে আমরা আজরাত এখানেই থাকবো। সকাল হলে নাহয় চলে যাবো।

…..না, সকালেও যাবোনা। আমি কিছুদিন এখানেই থাকবো।

….ওকে ওকে, তুমি চাইলে তাই হবে। আমরা কিছুদিন এখানেই থাকবো। আর আমিও একটু শশুর বাড়ির মজা নেব কেমন?

নূর কাঠ কাঠ গলায় বললো।
….তুমি হয়তো ব্যাপার টা বুঝতে পারোনি। আমি বলেছি আমি কিছুদিন এখানে থাকবো মানে, শুধু আমি থাকবো। তুমি না। আমি একাই থাকতে চাই।

নূরের কথায় এবার আদিত্যের ভয় লাগছে। আদিত্য কম্পিত গলায় বললো।
….এ একা মানে? কি বলছ এসব প্রাণপাখী? আমি তোমাকে ছাড়া একা কিভাবে থাকবো? তোমাকে ছাড়া তো আমি এক সেকেন্ডও থাকতে পারবো না। আর তুমি আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবে?

নূর নিজেকে শক্ত করে চোখ বন্ধ করে বললো।
….কেন পারবো না? আমি একটু সংসারের ঝামেলা ছাড়া নিজের মতো স্বাধীন ভাবে থাকতে চাই। যেখানে কোনো বন্ধনের বেড়াজাল না থাকবে না। আমি এসবে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। তাই কিছুদিন একা থাকতে চাই।

নূরের কথায় আদিত্য পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল। আজকের নূরকে আদিত্যের কাছে অপরিচিত লাগছে। আদিত্যের মনে হচ্ছে এটা ওর প্রাণপাখী না,এটা অন্য কেউ। যাকে ও চেনেনা, কারণ ওর প্রাণপাখী কখনো ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারতো না। আদিত্য ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো।
….আ আমি তোমার কাছে বেড়াজাল? আমার সাথে থাকাটা তোমার ঝামেলা মনে হয়? কেন এমন করছ প্রানপাখী? কিসের শাস্তি দিচ্ছ আমাকে? প্লিজ এমন করোনা। আমার কাছ থেকে দূরে যেওনা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্রাণপাখী। প্লিজ আমাকে এতবড় শাস্তি দিওনা।

নূরের ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ও এখনো কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে তা শুধু ওই জানে। তবুও নূর নিজেকে শক্ত করে আবারও বলে উঠলো।
….. কেন? কেন থাকতে পারবে না? নাকি বউ কাছে না থাকলে দৈহিক জ্বালা মেটাতে পারবে না, সেই আপসোস হচ্ছে? কেন তুমিইতো বললে, তোমার বলার সাথে সাথে হাজার টা মেয়ে তোমার বেডে চলে আসবে। তাহলে তাদের দিয়েই তোমার দৈহিক চাহিদা মেটাও।আমার কি দরকার?

এতক্ষণ সবকথা সহ্য করতে পারলেও, এবারের নূরের কথা শুনে আদিত্য আর সহ্য করতে পারলোনা। রাগে ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেল। আদিত্য রাগে নূরের মাথার পাশে কাবার্ডে একটা ঘুষি মেরে চোয়াল শক্ত করে রাগী কন্ঠে বললো।
….নূরররর,, এনাফ ইস এনাফ নাও। দিস টাইম ইউ ক্রস ইউর লিমিট। হাউ ডেয়ার ইউ টু সে দ্যাট? তুমি একা থাতে চাওনা? ঠিক আছে থাক তুমি যতদিন খুশী ততদিন একা একা।
কথাটা বলে আদিত্য রাগে ওখান থেকে চলে যেতে নেয়। দরজা পর্যন্ত এসে আদিত্য হঠাৎ পেছনে ঘুরে দৌড়ে যেয়ে নূরকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে করুন সুরে বললো।
….সরি সরি প্রাণপাখী। আমি আবারও তোমার ওপর রাগ করছিলাম। প্লিজ প্রাণপাখী এমন করোনা। আমাকে দূরে সরিয়ে দিওনা প্লিজ।

নূর দুই হাত শক্ত করে মুঠ করে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো।
….ঠিক আছে, তাহলে তুমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও। তাহলে আর আমি তোমার কাছ থেকে দূরে যাবোনা।

আদিত্য এক ঝটকায় নূরকে ছেড়ে দিয়ে বললো।
….আচ্ছা তো এতকিছু এই কারণে হচ্ছিল তাইনা? তবে আপনি যত চেষ্টাই করেন না কেন, আপনার এই আশা কখনোই পূরণ হবে না।

….ঠিক আছে, তাহলে আমিও এখন থেকে এখানেই থাকবো। আর তুমি এখানে আসবে না, আর না আমাকে ফোন করবে। নাহলে আমি এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাবো।

আদিত্য রাগে কটমট করে বললো।
…ঠিক আছে, তোমার যা খুশী তাই করো। আমিও দেখি কতদিন তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারো?
কথাটা বলে আদিত্য হনহন করে বেড়িয়ে গেল।

আদিত্য চলে যেতেই নূর কাঁদতে কাঁদতে কাবার্ডের গা ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো। তারপর দুই হাত দিয়ে নিজের দুই গালে চড়াতে চড়াতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
…..কিভাবে পারলি তুই, কিভাবে পারলি?আমার আদিত্যকে এতো কষ্ট দিতে কিভাবে পারলি তুই? আমার আদিত্য কতো কষ্ট পেল আজ। এর আগে তোর মরণ কেন হলোনা? তোর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। কোনো অধিকার নেই। বারবার আমার সাথেই কেন এমন হয়? কেন এমন হয় আমার সাথে? সুখ কেন আমার কপালে সয়না? কেন?
এসব বলে কাঁদছে আর কাবার্ডের সাথে নিজের মাথা ঠোকাচ্ছে।

আদিত্য বাইরে এসে রাগে গাড়িতে একটা লাথি মারলো। তারপর মাথার চুল টেনে ধরে গাড়ির গা ঘেঁষে নিচে বসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। কাঁদো কাঁদো গলায় বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
….কেন আমার সাথে এমন করছ প্রাণপাখী? কেন বুঝতে পারছ না, আমার তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাইনা।কিছু না। প্লিজ ফিরে এস আমার কাছে প্রাণপাখী। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।কিছুতেই না।

নূর আধাঘন্টা পর নিজেকে একটু শান্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে মুখে পানি ছিটা দিয়ে এলো। তারপর জানালার কাছে যেয়ে পর্দা সরিয়ে মনমরা হয়ে বাইরে তাকালো। হঠাৎ নিচে তাকাতেই দেখলো আদিত্য গাড়ির বনেটের ওপর এক হাঁটু ভাজ করে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, নূরের রুমের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর সাথে সাথে মুখে হাত চেপে ধরে নিচে বসে পড়ে আবার কাঁদতে লাগলো। তারমানে আদিত্য চলে যাইনি? ও তখন থেকে ওখানেই রয়েছে? কথাটা ভেবে নূরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ওর আদিত্য কতো কষ্ট পাচ্ছে। আমি যে আর পারছিনা, আমার আদিত্য এভাবে কষ্টে দেখতে। কি করবো আমি? নূর উঠে দৌড়ে আদিত্যের কাছে যেতে নেয়। দরজা পর্যন্ত এসে আবার থেমে যায়। না না নূর, তোকে শক্ত থাকতে হবে। এভাবে দূর্বল হয়ে পড়লে চলবে না। আদিত্যের ভালোর জন্য আমাকে এটা করতেই হবে। এখন হয়তো আদিত্যর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পরে ও ঠিকই খুশী থাকবে।
এসব ভেবে নূর আর গেলনা। আবার জানালার কাছে এসে হালকা করে পর্দা সরিয়ে অশ্রু চোখে আদিত্যকে দেখতে লাগলো।

আদিত্যও তাকিয়ে আছে নূরের রুমের জানালার দিকে। ও তখন রাগ করে চলে আসলেও, এখন আর নূরকে না দেখে থাকতে পারছে না। তাই নূরের জানালার দিকে তাকিয়ে আছে ওকে দেখার জন্য। নূর যেহেতু মানা করেছে তাই ও আর যাবেনা ভেতরে। তবে এখানে থাকতে তো আর নূর মানা করেনি।তাই এখান থেকেই নূরকে দেখবে।
এভাবেই দুজন দুই জায়গায় কষ্ট পাচ্ছে।এভাবে থাকতে থাকতে একসময় রাত পার হয়ে যায়। দুজন সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়।

আদিত্য ভাবে হয়তো সকাল হলে নূরের রাগ কমে আসবে। আর তখন ও আদিত্যের কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু তা আর হয়না। শেষমেশ আদিত্য হতাশ হয়ে ফিরে যায়। আর নূর আদিত্যের যাওয়া দেখে আবার কাঁদতে থাকে।
_____

এইভাবে তিনদিন কেটে গেছে। এই তিনদিনেই আদিত্যর পাগল প্রায় অবস্থা হয়ে গেছে। নূর এই তিনদিনেও ফিরে আসেনি। আদিত্য নূরকে কথা দিয়ে এসেছে,যে ও নূরের কাছে যাবে না। তাই ও নিজে থেকে ওর কাছে যেতে পারছে না।আদিত্যর যেন পৃথিবীটাই থেমে গেছে। না ঠিকমত খায়, না ঘুমায়,আর না কারোর সাথে কোনো কথা বলে। ওদিকে নূরেরও একই অবস্থা। বাসার সবাই আদিত্য আর নূরকে অনেক বার জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওরা দুজনেই কাউকে কিছু বলেনি। আদিত্য রোজ রাতেই নূরের বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে এসে গাড়িতে বসে থাকে। নূরকে এক নজর দেখার আশায়। আর নূর জানালা দিয়ে আদিত্যকে দেখে রাত পার করে। মাঝে মধ্যে নূরের ইচ্ছে হয় আদিত্যের কাছে ছুটে যেয়ে আদিত্যের বুকে লুটিয়ে পরতে। কিন্তু আবার নূর নিজের মনকে বুঝিয়ে শক্ত করে নেয়। নিজেকে শক্ত করে নেয়।
নূরের বাবা অনেক বার আদিত্যকে বাসার ভেতরে আসতে বলেছে। কিন্তু আদিত্য যায়না। ও চায় নূর নিজে থেকে যেদিন ওকে ডাকবে, সেদিনই ও যাবে।

রাত ১০টা
নূর রোজকার মতো জানালার কাছে বসে আছে আদিত্যের অপেক্ষায়। রোজ এই টাইমেই আসে আদিত্য। কিন্তু আজ অনেক্ক্ষণ হয়ে গেল আদিত্য আসছে না। নূর বসে বসে অপেক্ষা করছে। দেখতে দেখতে ১১টা বেজে গেল, তবুও আদিত্য আসছে না। নূর মনে মনে ভাবছে, তাহলে কি আজ আদিত্য আসবে না? কথাটা ভেবে নূরের মন খারাপ হয়ে গেল। তাহলে কি আদিত্য ধীরে ধীরে আমাকে ভুলতে শুরু করে দিয়েছে? আমাকে ছেড়ে থাকার অভ্যাস করছে? এসব ভেবে নূরের চোখে পানি চলে এলো। নূর চোখের পানি মুছে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
….তুই কাঁদছিস কেন নূর? এটাই তুই চেয়েছিলি, আদিত্য যেন তোর মায়া কাটিয়ে ওঠে। তাহলে এখন কাদছিস কেন হুম? এসব আবোল তাবোল বলছে আর চোখের পানি ঝরাচ্ছে নূর। কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো নূর।

পরদিন রাতেও নূর অপেক্ষা করছে। কিন্তু আজও আদিত্য আসছে না। নূরের এবার চিন্তা হতে লাগলো। আদিত্যর আবার কিছু হলো নাতো? না না কি হবে? আমার আদিত্য একদম ঠিক আছে। হ্যাঁ একদম ঠিক আছে।
মনে মনে এসব বললেও , নূরের চিন্তা কমলো না। ওর খুব অস্থির লাগতে শুরু করলো। মনটা ছটফট করছে। নূর উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারী করতে লাগলো। নূর ফোন বের ভাবছে আদিত্যকে একবার ফোন করবো? আবার ভাবলো কোন মুখে ফোন করবো? আমি ওর সাথে যে ব্যবহার করে ওকে তাড়িয়ে দিয়ছি। তারপরে কোন মুখে ওর কাছে ফোন দিবো? এসব ভেবে নূর সারারাত ওভাবেই ছটফট করতে লাগলো।

সকাল বেলা উঠেও নূর শান্তি পাচ্ছে না। আদিত্যের খবর না জানা পর্যন্ত ওর কিছুই ভালো লাগছে না। নূর থাকতে না পেরে তানির নাম্বারে ফোন দিল। তানি ফোন রিসিভ করে বললো।
….হ্যাঁ নূর বল।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
…..তা তানি শোন না,আদিত্য কোথায়? ও ঠিক আছে তো?

তানি একটু কড়া গলায় বললো।
….কেন? তা জেনে তুই কি করবি? তোর কি ভাইয়ার চিন্তা আছে?

নূর কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…এ এভাবে বলছিস কেন?

…তো কিভাবে বলবো? তোর কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি। জানিনা তোদের মাঝে কি হয়েছে? তবে আমি তোকে যতদূর চিনি, তুই নিশ্চয় আবার কোনো কিছু নিয়ে বেশি বুঝে এসব করছিস। কিন্তু যাইহোক না কেন তুই এসব একদম ঠিক করিসনি। তুই জানিস ভাইয়ার কি অবস্থা হয়ে গেছে?

নূর কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো।
…মা মানে কি হয়েছে ওর? বলনা তানি প্লিজ? আমি তোর পায়ে পড়ি।

…এই কয়দিন হলো ভাইয়া একদম ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না।কারো সাথে কথা বলে না। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকানো যায় না। আর পরশু দিন থেকে ভাইয়ার প্রচুর জ্বর। অতিরিক্ত জ্বরে কাল ভাইয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল।

কথাটা শোনার সাথেই নূরের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল।হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। হাত থেকে ফোনটা ঠাসস করে নিচে পড়ে গেল। ওদিক থেকে তানি হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।কিন্তু নূরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। ওর মাথায় শুধু আদিত্যর চিন্তা ঘুরছে।ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।এটা কি করলো ও? ওর জন্য ওর আদিত্যর আজ এই অবস্থা হয়ে গেছে। না না আদিত্যের কিছু হবে না। আমার আদিত্যের কিছু হবে না। নূর আর এক মুহূর্তও বসে না থেকে পাগলের এলোমেলো ভাবে দৌড়াল ওর আদিত্যের কাছে।

বিশ মিনিট পর নূর বাসায় এসে পৌঁছাল। এতটুকু রাস্তা কিভাবে এসেছে তার কোনো হুঁশ নেই ওর। সিএনজি থেকে নেমে দৌড়ে বাসার ভেতর ঢুকলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দৌড়ে ওর রুমে গেল। নিচ থেকে সবাই ডাকতে নিলে তানি ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো।
…যেতে দিন ওকে। নূর চলে এসেছে আর কোনো চিন্তা নেই ভাইয়াকে নিয়ে।

নূর দৌড়ে এসে দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলো। আদিত্য বিছানায় শুয়ে আছে। শরীরের কি অবস্থা হয়েছে, চেহরাটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আদিত্যের এমন অবস্থা দেখে নূরের কলিজাটা ছিড়ে আসছে। ওর অপরাধ বোধে মর যেতে ইচ্ছে করছে ওর। আজ ওর জন্য আদিত্যের এই অবস্থা হয়েছে। ও কিভাবে মাফ করবে নিজেকে? নূর আর এগুতে পারছে না মুখে হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে এঁটে যেয়ে কাঁদতে লাগলো।

কারোর কান্নার শব্দে আদিত্য চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকিয়ে নূরকে দেখে আদিত্য এক ঝটকায় উঠে বসলো। ওর নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ও স্বপ্ন দেখছে নাতো? ওর প্রাণপাখী ওর কাছে ফিরে এসেছে? আদিত্য খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে নূরের দিকে করুন মায়া ভরা চোখে তাকালো।
আদিত্যের তাকানো দেখে নূর আরও জোরে কেঁদে উঠলো। আদিত্য দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে নূরকে নিজের কাছে আসার আহবান জানাল।

নূর আর থাকতে পারলোনা। দৌড়ে যেয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আদিত্যও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো ওর প্রাণপাখীকে। এইকয়দিন পর যেন ওর দেহে প্রাণ ফিরে পেল। সব অসুস্থতা যেন মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল।
নূর আদিত্যকে ছেড়ে দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে পাগলের মতো সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো। তারপর আদিত্যের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো। আদিত্যও নূরের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুখ অনুভব করতে লাগলো।

একটু পরে নূর আদিত্যের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে, দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললো।
….আই এ্যাম সরি, আই এ্যাম সরি। আমি অনেক পঁচা, একদম পঁচা আমি। একটুও ভালো না। আমি তোমাকে সবসময় শুধু কষ্ট দেই। কখনো কোনো খুশী দিতে পারি না। আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা হয়ে গেছে। আমি খুবই পঁচা। আমি আসলে তোমার যোগ্যই না। তুমি কেন এই পঁচা মেয়েটাকে এতো ভালবাস? আমার মতো পঁচা মেয়েকে একদম ভালোবাসা উচিৎ না তোমার।

আদিত্য অশ্রু চোখে মুচকি হেসে বললো।
….হুঁশশ, একদম আমার প্রাণপাখীকে পঁচা বলবে না। আমার প্রাণপাখী সবার থেকে ভালো। হ্যাঁ মাঝেমধ্যে শুধু একটু বোকামি করে ফেলে। একটু মাথামোটাতো তাই আরকি।

নূর কান্নার মাঝে হেসে উঠে আদিত্যে আবার জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য নূরকে জড়িয়ে ধরে আবেগি কন্ঠে বললো।
…..যা খুশী করো প্রানপাখী। বাচ কখনো আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। আমি বাঁচতে পারবো না।

নূর আদিত্যকে ছেড়ে দুই কান ধরে মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
….আই এ্যাম সরি। আর কখনো এমন করবো না।প্লিজ মাফ করে দাও আমাকে।

আদিত্য নূরের দুই হাত কান থেকে নামিয়ে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো।
….আমার তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাই না প্রানপাখী। কিছু না। তুমি আছতো আমি আছি। তুমি নেই তো আমিও নেই।

নূর অশ্রু চোখে মুচকি হেসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যও মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। ওর প্রাণপাখী ওর কাছে ফিরে এসেছে। আর কিছু চাইনা ওর।

চলবে……

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৮২

★এক সপ্তাহ পর,
এই এক সপ্তাহে নূর আদিত্যের সেবা করে ওকে একদম সুস্থ করে দিয়েছে। আদিত্য এখন আবার অফিস যাওয়া শুরু করেছে। নূরও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ও বুঝতে পেরেছে যে ও শুধু নিজের দুঃখের কথা ভেবে ভেবে আদিত্যকে কষ্ট দিচ্ছিল। আদিত্যর কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল ও। কিন্তু ওর আদিত্যের তো শুধু ওর প্রাণপাখী চাই। আর কিছু না। তাই এখন নূরও ওর আদিত্যের জন্যই বাঁচবে। আদিত্যের খুশীর জন্য সব করবো। নূর এখন আবার আগের মতো আদিত্যের সাথে সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। যাতে ওকে দেখে আদিত্য মন খারাপ না হয়। সর্বক্ষণ চেষ্টা করে নিজের কষ্টটাকে ভুলে থাকার। তবুও দিনশেষে নূরের চাপা কষ্টটা ঠিকই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। নিজের মা না হওয়ার দুঃখটা চেয়েও দমিয়ে রাখতে পারে না। তবে নূর মনে মনে এখনো আশায় আছে যে,আল্লাহ একদিন না একদিন ওর ফরিয়াদ অবশ্যই শুনবে। ওর দিকে মুখ তুলে তাকাবে। নূরের কষ্টটা আদিত্য ঠিকই বুঝতে পারে।তাই এখন ও নিজেও চায় যে নূরের আশা পূরণ হোক। যাতে ওর প্রাণপাখী পুরোপুরি খুশি থাকতে পারে।

রাত ১০টা
আদিত্য বেডে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। আর নূর পাশে বসে খালি উশখুশ করছে। আদিত্য কখন ঘুমাবে সেই চিন্তায়। আদিত্য তাড়াতাড়ি না ঘুমালে ও ওর কাজ করবে কি করে? আজ যে ও আদিত্যর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে। সবসময় আদিত্যই ওকে সারপ্রাইজ দেয় ওর খুশির জন্য কতকিছু করে। তাই আজ নূরও আদিত্যর জন্য স্পেশাল কিছু করতে চায়। গত কিছুদিন ধরে ও শুধু নিজের দুঃখের মাঝে ডুবে ছিল। আদিত্যকেও অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। তাই আজ আদিত্যকে সারপ্রাইজ দিয়ে খুশী করবে। কিন্তু আদিত্য তাড়াতাড়ি না ঘুমালে এসব করবে কিভাবে?

এসব ভেবে নূর আড়মোড়া ভেঙে হায় তুলে আদিত্যের কাছে এসে কাঁধে মাথা রেখে আদুরে গলায় বললো।
…আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে, চলনা ঘুমায়?

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এত তাড়াতাড়ি ঘুম ধরেছে তোমার? মাত্রতো দশটা বাজে।

….হ্যাঁ আমার আজ সকাল সকালই ঘুম ধরছে। চলনা ঘুমায়?

…..কিন্তু আমিতো একটু কাজ করছি। আচ্ছা তুমি শুয়ে পড়ো। আমি কাজটা শেষ করেই আসছি।

নূর বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে মিথ্যে অভিমান দেখিয়ে বললো।
…..আজ আমার থেকে তোমার কাজ বড়ো হয়ে গেল? অফিসে কাজ করে হয়না যে তোমার বাসায়ও কাজ করতে হবে? ঠিক আছে তুমি থাক তোমার কাজ নিয়ে, আর যেন এসোনা আমার কাছে হুহ।
কথাটা বলে নূর মিথ্যে রাগ দেখিয়ে উল্টো দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো।

আদিত্য মুচকি হেসে ল্যাপটপটা রেখে দিয়ে, নূরের কাছে শুয়ে পড়ে পেছন থেকে নূরকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
….আমার প্রাণপাখীর চেয়ে কি কখনো কিছু বড়ো হতে পারে আমার কাছে? সবকিছুর উর্ধ্বে সে।

নূর একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিল।ও জানতো এই টেকনিক অবশ্যই কাজ করবে। নূর হাসি মুখে আদিত্যের দিকে ঘুরে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যও মুচকি হেসে ওর প্রাণপাখীকে বুকে জড়িয়ে নিল।

রাত ১১-৫৫
হঠাৎ এলার্ম বেজে উঠল। এলার্মের শব্দে আদিত্যের ঘুম ভেঙে গেল। আদিত্য কপাল কুঁচকে চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকাতেই দেখলো নূর ওর কাছে নেই। আদিত্য চমকে গিয়ে এক ঝটকায় উঠে বসলো। ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওখানেও নেই। আদিত্য প্রচুর ঘাবড়ে গেল। এতরাতে নূর কোথায় গেল?

আদিত্য তড়িঘড়ি করে বেড থেকে নামতে গিয়ে হঠাৎ ওর নজর গেল বেডের পাশে ছোট টেবিলের ওপর পেপার ওয়েটের নিচে একটা চিরকুট রাখা। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো। চিরকুটে লিখা আছে,

“এদিক ওদিক বাইরে খুঁজে পাবেনা আমাকে
আমি যে আছি তোমার মনের গহীনে।
উঁকি দিয়ে দেখ আছি লুকিয়ে সেখানে।
মুচকি হেসে কদম বাড়াও সেদিকে। ❤️”

চিরকুটটা পড়ে আদিত্য মুচকি হেসে উঠে দাড়াল। দরজার কাছে আসতেই নিচে আরেকটা চিট পেল আদিত্য। চিটটাতে লেখা আছে,

” আর কিছুটা পথ পেড়িয়ে,
চলে এস তোমার মনের রাণীর কাছে “❤️

আদিত্য ঠোঁট কামড়ে আবারও মুচকি হেসে পা বাড়াল। করিডরে আসতেই আরেকটা চিট পেল।

” আর কিছু কদমের দুরত্বে আছি বসে
আর কিছুক্ষণের ক্ষীণ অপেক্ষা,
আর যে দেরি সয়না রাজকুমার
জলদি চলে এসো তোমার প্রানপাখীর কাছে “❤️

আদিত্য দেখলো করিডরের ফ্লোরে এরো⇒ চিহ্ন দেওয়া আছে। যা ছাদের দিকে যায়। আদিত্য প্রাপ্তির হাসি দিয়ে দৌড়ে ছাদে উঠে গেল। ছাদে এসে আদিত্য অবাক হয়ে গেল। পুরো ছাদ লাল সাদা হার্ট শেপের বেলুন আর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। ছাদের মাঝখানে একটা টেবিলের ওপর ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে। আর টেবিলের মাঝখানে একটা কেক রাখা আছে। আদিত্য এদিক ওদিক তাকিয়ে নূরকে কোথাও দেখতে পেল না। তাই নূরের নাম ধরে ডাকতে লাগলো।
….প্রাণপাখী প্রাণপাখী, কোথায় তুমি?

হঠাৎ পেছন থেকে দুটো হাত এসে ধীরে ধীরে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য মুচকি হাসলো, ও জানে এটা ওর প্রাণপাখী। নূর আদিত্যকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে, কানে একটা চুমু খেয়ে লো ভয়েসে গানের সুরে বললো।
…..হ্যাপি বার্থডে, হ্যাপি বার্থডে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। শুভ জন্মদিন ভালোবাসা।

আদিত্য তো ভুলেই গিয়েছিল যে আজ ওর জন্মদিন। নূরের এমন সারপ্রাইজে আদিত্যের মনটা ভরে গেল। আদিত্য তৃপ্তির হাসি দিয়ে নূরের দিকে ঘুরে তাকালো। আর তাকাতেই আবারও থ হয়ে গেল। নূর আজ একটা হোয়াইট কালারের অফ সোলডার ফ্লোর টাচ পার্টি গাউন পরেছে। গলায় শুধু আদিত্যের দেওয়া পেনডেন্ট টা ছাড়া আর কোনো অর্ণামেন্ট পড়েনি। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। নূরকে দেখতে একদম বারবিডল লাগছে। আদিত্য আবারও হারিয়ে গেল। ও ভেবে পায়না এই মেয়েটা আর কতো রুপে ওকে ঘায়েল করবে?

নূর মুচকি হেসে আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
…..শুধু আমাকে দেখলেই হবে? কেকে কাটতে হবে না?

আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নেশা লাগানো কন্ঠে বললো।
….উহু লাগবে না। তোমাকে মন ভরে দেখে আগে তৃপ্তি মেটাতে দাও। তারপর বাকি সব।

….আচ্ছা? আর আমি যে এতো মেহনত করে কেক বানালাম। তার কি হবে?

আদিত্য উৎসাহ নিয়ে বললো।
….ওয়াও তুমি নিজের হাতে কেক বানিয়েছ আমার জন্য?

…তো? আমার হাসব্যান্ড এর জন্য কেক আমি বানাবো তো কি আরেক জনের বউ বানাবে? এখন চলো কেক কাটবে।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের হাত ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে গেল। তারপর আদিত্যের হাতে ছুরি দিয়ে কেক কাটতে বললো। আদিত্য মুচকি হেসে কেক কাটলো। কেকের পিচ নিয়ে নূরকে খাইয়ে দিতে নিলে, নূর সেটা ঘুরিয়ে আদিত্যকেই খাইয়ে দিল। তারপর নূর পা উঁচু করে আদিত্যর ঠোঁটে লেগে থাকা কেকটুকু নিজের ঠোঁট লাগিয়ে খেয়ে নিল। আদিত্য নূরের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

তারপর নূর আদিত্যের ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে নেমে এলো। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটু পরে নূর গিয়ে মিউজিক প্লেয়ারে একটা গান প্লে করে, আদিত্যের সামনে এসে এক হাত বাড়িয়ে বললো।
……উইল ইউ ডান্স উইথ মি, মাই প্রিন্স?

আদিত্য মুচকি হেসে হাত ধরে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাপল ডান্স করতে লাগলো। নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ সাছ মে তেরি সাছ মিলি তো
♬ ♬ মুঝে সাছ আয়ি, মুঝে সাছ আয়ি
♬ ♬ মুঝেএ সাছ আয়ি

(আদিত্য মায়া ভরা কন্ঠে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ রুহু নে জিসম কি খুসবো
♬ ♬ তুজো পাস আয়ি, তুজো পাস আয়ি
♬ ♬ তুজো পাস আয়ি
(সংক্ষিপ্ত)

ডান্স শেষে আদিত্য চুমু খাওয়ার জন্য নূরের ঠোঁটের দিকে ঝুকতেই, নূর আদিত্যের আঙুল ঠেকিয়ে বললো।
…..উহুম এখুনি না, তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ বাকি আছে।

……আরও সারপ্রাইজ? একদিনে এতকিছু হজম করবো কিভাবে প্রাণপাখী?

….সমস্যা নেই, আমি আছি না? আমি হজম করতে সাহায্য করবো।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের হাত ধরে ছাদের পেছন সাইডের দিকে নিয়ে গেল।

আদিত্যও মুচকি হেসে নূরের সাথে গেল। সেখানে গিয়ে আদিত্য আরেক দফা অবাক হলো। এখানে চারদিকে পিলার দিয়ে, পিলারের সাথে পাতলা সাদা পর্দা ঝুলিয়ে সুন্দর করে ছোট্ট ঘরের মতো সাজানো হয়েছে। আর নিচে সাদা গদির বিছানা পারা আছে। সবকিছু একদম মনোমুগ্ধকর লাগছে। আদিত্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর প্রাণপাখীটা ওর জন্য কতকিছু করেছে আজ। এমন সারপ্রাইজ তো ও নিজেও কখনো ভাবতে পারে নি।

নূর আদিত্যের হাত ধরে ধীরে ধীরে এনে গদির বিছানায় বসালো। নিজেও আদিত্যের মুখোমুখি বসে আদিত্যের গালে হাত রেখে লো ভয়েসে বললো।
….সবসময় তুমি আমাকে আদর করো। আজ আমি তোমাকে আদর করবো।

নূরের কথায় আদিত্য মায়াবী চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। নূর মুখটা উঁচু করে আদিত্যের কপালে চুমু দিল। আদিত্য মুচকি হেসে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। নূর আদিত্যের দুই চোখের পাতায় চুমু খেল,নাকের ডগায়, দুই গালে চুমু খেল। তারপর আদিত্যের ঠোঁটে নেমে এলো, চুমু খেতে লাগলো আদিত্যের ঠোঁটে। আদিত্যও নূরের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নূরের ভালোবাসায় মিলিয়ে যেতে লাগলো। নূরের সাথে সমানতালে চুমু খাচ্ছে। নূর এবারে আদিত্যের ঠোঁট ছেড়ে চুমু খেতে খেতে আদিত্যের গলায় নেমে এলো। গলায় চুমু খেতে খেতে নূর আদিত্যের শার্টের বোতাম এক এক করে খুলতে লাগলো। বোতাম খোলা শেষে নূর আদিত্যের বুকে পেটে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিল। আদিত্য যেন সুখের সাগরে ভাসছে। যেখান থেকে ও আর ফিরতে চায় না। আদিত্য নূরের পিঠে হাত বুলিয়ে গাউনের চেনটা খুলে ফেললো। তারপর নূরকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নূরের পিঠে চুমু খেতে লাগলো। নূর চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। পিঠে চুমু খাওয়া শেষে আদিত্য নূরকে আবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো। চুমু খেতে নূর আদিত্যের শার্ট পুরো খুলে ফেললো। তারপর আদিত্যকে নিয়ে ধীরে ধীরে শুয়ে পড়লো। রাতের খোলা আকাশের নীচে, ভরা জোছনার আলোয় আরেকটা ভালোবাসাময় মুহূর্ত পার করলো ওরা। চারিদিকের ঠান্ডা শীতল বাতাস যেন মুহূর্ত টাকে আরও স্বর্গীও করে তুলেছে।
____

একটা ফুটফুটে পুতুলের মতো বাচ্চা মেয়ে খিলখিল করে হেসে পুরো বাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আর নূর ওর পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে বলছে।
….মামুনি মামুনি দাড়াও, পড়ে যাবেতো।

কিন্তু বাচ্চাটা শুনছেই না। তখনই সামনে থেকে আদিত্য এসে মুচকি হেসে বাচ্চাটাকে ধরে কোলে তুলে নিয়ে বললো।
….কি করছে আমার সোনামণিটা? মামুনিকে কেন জালাচ্ছ হুম?

বাচ্চাটা আদিত্যর গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….আগে বও আমাল চতলেত কই পাপা?

আদিত্য পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে দিয়ে বললো।
….এইযে আমার প্রিন্সেসের চকলেট।

বাচ্চাটা খুশী হয়ে চকলেট হাতে নিয়ে আদিত্যের গালে চুমু খেয়ে বললো।
….ইয়েএএ আমাল ভাও পাপা।

নূর ওদের কাছে এসে অভিমানী সুরে বললো।
….বারে এখন পাপাই সব হয়ে গেল? পাপা ভালো আর আমি কি পঁচা?

পিচ্চিটা নূরের গালেও চুমু খেয়ে বললো।
…..তুমিও ভাও মাম্মা।
কথাটা বলে পিচ্চিটা দুই হাতে দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য আর নূর হেসে দিয়ে দুই পাশ থেকে পিচ্চিটার দুই গালে চুমু খেল। মনে হচ্ছে একদম পিকচার পারফেক্ট ফ্যামিলি।

নূর হাসিমুখে চোখ খুলে তাকালো। তখনই ওর হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল। তারমানে ও এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? ওর এই স্বপ্ন কি কখনো বাস্তবে রুপ নিবেনা? লোকে বলে সকালের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়? তাহলে কি আমার স্বপ্ন সত্যি হবে? এসব ভেবে নূরের চোখে পানি চলে এলো।

নূর মাথা তুলে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো, আদিত্য কি সুন্দর প্রশান্তির ঘুম দিচ্ছে। আদিত্য ভোররাতে নূরকে কোলে নিয়ে রুমে চলে এসেছিল। নূর নিজের চোখের পানি মুছে মনে মনে বললো। না না আজ আমি এসব ভেবে মন খারাপ করবো না।আজ আমার আদিত্যের জন্মদিন। আজ ওকে কোনভাবে মন খারাপ হতে দেবনা।

নূর মুচকি হেসে আদিত্যের কপালে একটা চুমু খেল। আদিত্য ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো। মুচকি হেসে নূরের গালে হাত বুলিয়ে বললো।
….গুড মর্নিং প্রাণপাখি।

….গুড মর্নিং বার্থডে বয়।

আদিত্য নূরের ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো।
…..এটা আমার বেস্ট বার্থডে ছিল প্রাণপাখী। কাল রাত আমার জীবনের একটা স্পেশাল রাত ছিল। যা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। থ্যাংক ইউ সো মাচ প্রাণপাখী। আমাকে এত সুন্দর বার্থডে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। ভালোবাসি প্রাণপাখী।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….আচ্ছা হয়েছে, এখন ওঠো। অফিস যেতে হবে না? আর হ্যাঁ আজ অফিস থেকে একটু জলদি এসো। সন্ধ্যায় তোমার জন্য ছোট্ট একটা বার্থডে পার্টি অ্যারেঞ্জ করেছি। শুধু ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে।

…..জো হুকুম রাণী সাহেবা। আপনার যা আজ্ঞা।

নূর মুচকি হেসে আদিত্যকে ছেড়ে বেডের নিচে পা রেখে উঠে দাঁড়াতেই, হঠাৎ ওর মাথা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। নূর শরীরের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে মাথা ধরে বেডের ওপর বসে পড়লো। নূরের এমন অবস্থা দেখে আদিত্য চমকে উঠে দ্রুত নূরকে ধরে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….হেই প্রাণপাখী, কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ করেছে? মাথা ঘুরছে? বলোনা?

নূর মুচকি হেসে বললো।
….আরে তেমন কিছুই না। এমনি মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠেছিল। এখন আবার ঠিক হয়ে গেছে। হয়তো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছি তাই এমন হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই।

….কি চিন্তার কিছু নেই? আমি এতকিছু জানি না। তুমি এখুনি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেও। আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।

…আরে তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছ। কাল অনেক রাত জাগা হয়েছে। তাই এমন হয়েছে। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। সত্যিই বলছি।

…সত্যি বলছ তো? দেখ আমার কাছে কিছু লুকাবেনা। তোমার হেল্থ নিয়ে আমি কোনো গাফিলতি সহ্য করবো না।

…সত্যি বলছি বাবা। এখন ছাড়োতো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

…ঠিক আছে। কিন্তু আবার এমন হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে কেমন?

…ঠিক আছে।
কথাটা বলে নূর উঠে ওয়াশরুমে গেল।

সন্ধ্যা ৬টা
ড্রয়িং রুমে সবাই পার্টির অ্যারেঞ্জমেন্ট করছে।আদিত্য এখনো আসেনি। তাসির আর সানাও এসেছে। সানা প্রেগন্যান্ট, তাই শুধু বসে বসে এটা ওটা খাচ্ছে আর সবার কাজ দেখছে। তাসির একটু পর পর তদারকি করছে সানার কিছু লাগবে কিনা।

তানি বসে বসে বেলুন ফোলাচ্ছে, আর ওর ছেলে নিবিড় সগুলো নিয়ে খেলছে। কতগুলো আবার ফাটিয়েও ফেলছে। তানি মানা করছে কিন্তু শুনছে না।
নূরও বেলুন ফুলানোর জন্য একটা বেলুন মুখে দিতেই, হঠাৎ বেলুনের গন্ধে ওর ভেতরটা কেমন যেন উল্টে আসতে লাগলো। নূর তাড়াতাড়ি মুখে হাত চেপে ধরে দৌড়ে বেসিনে গিয়ে গড়গড় করে বমি করে ফেললো। নূরকে এভাবে দেখে তানি আর সানা ওর কাছে এগিয়ে গেল। নূর বমি করে একবারে ক্লান্ত হয়ে গেল। তানি নূরকে ধরে নিয়ে আসতে আসতে চিন্তিত স্বরে বললো।
…কি হলো তোর হঠাৎ? কিছু উল্টো পাল্টা খেয়েছিস?

নূর কিছু বলতে পারছে না। ওর মাথা আবার কেমন যেন চক্কর দিতে শুরু করলো। দুই কদম আসতেই নূর হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।

সবাই প্রচুর ভয় পেয়ে দৌড়ে এলো নূরের কাছে। তানি নূরের গালে হালকা চাপড় দিয়ে নূরকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু নূরের কোনো সাড়াশব্দ নেই।

তাসির বলে উঠলো।
….এভাবে থাকলে হবে না। আবির তুই নূরকে রুমে নিয়ে যা।আমি ডক্টরকে ফোন করছি।

আবির মাথা ঝাকিয়ে দ্রুত নূরকে তুলে রুমে নিয়ে গেল।

আধাঘন্টা পর আদিত্য বাসায় ফিরলো। ভেতরে ঢুকে দেখলো ড্রয়িং রুমে সবাই জড়ো হয়ে আছে। ডক্টরকে দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..ডক্টর আঙ্কেল, আপনি এখানে? কাকে দেখতে এসেছেন? কেউ কি অসুস্থ নাকি?

ডক্টর বললো।
…হ্যাঁ, আমি আসলে তোমার ওয়াইফ নূরকে দেখতে এসেছি।

নূরের কথা শুনে আদিত্যর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। আদিত্য ভয়ে ভয়ে বললো।
….নূ নূর? কি হয়েছে নূরের? কেউ কি কিছু বলবে আমাকে?

তাসির বলে উঠলো।
….আসলে আদি, নূর হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিল। তাই ডক্টর আঙ্কেল কে আসতে বলেছি। উনি নূরকে দেখে,,,,

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য উত্তেজিত হয়ে বললো।
…ওয়াট? কখন? কিভাবে? তোরা আমাকে জানালি না কেন? নূর কোথায়? নূর,নূর, নূর,,
নূরের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে আদিত্য দৌড়ে ওপরে উঠে গেল। পেছন থেকে সবাই ডাকছে, কিন্তু কারো কথায় ওর কানে যাচ্ছে না।

আদিত্য দৌড়ে রুমে এসে দেখলো নূর বেডে শুয়ে আছে। আদিত্য নূরের কাছে যেয়ে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে পাগলের মতো বলতে লাগলো।
….কি হয়েছে আমার প্রাণপাখী টার? কিভাবে হলো এসব? আমি তোমাকে সকালেই বললাম চলো ডক্টরের কাছে যাই। তুমি মানলে না। এখন দেখলে তো অসুস্থ হয়ে পড়লে? এখন কি করবো আমি? তুমি কেন শোন না আমার কথা?

নূর দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে বললো।
….হুঁশশ, আগে শান্ত হও। তারপরে শোন আমার কথা।

…কি শান্ত হবো? তোমাকে এভাবে দেখে কিভাবে শান্ত হবো আমি? আচ্ছা বলো ডক্টর আঙ্কেল কি বললো? তোমার কি হয়েছে?

নূর শান্ত সুরে বললো।
….আঙ্কেল বলেছে আমার অনেক বড়ো রোগ হয়েছে।

নূরের কথা শুনে আদিত্যের হার্টবিট যেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। হাত পা কাপতে লাগলো। আদিত্য কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
…ব বড়ো রোগ? কি বড়ো রোগ?

….আমি আর বেশিদিন তোমার স্ত্রী হয়ে থাকবো না।

আদিত্যের চোখে পানি চলে এলো। আদিত্য নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় রাগ দেখিয়ে বললো।
….শাট আপ,শাট আপ,শাট আপ। কি বলছ এসব? একদম বাজে কথা বলবে না। নাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না? কিছু হয়নি তোমার। আমি কিছু হতে দেবনা তোমার। তুমি সবসময় আমার স্ত্রী থাকবে বুজেছ?

নূর আদিত্যের এক হাত নূরের পেটের ওপর রেখে বললো।
….আমি এখন থেকে শুধু তোমার স্ত্রী না বরং তোমার বাচ্চার মাও হতে চলেছি।

আদিত্য আনমনেই বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বাচ্চার মা তো কি হয়ে,,,

আদিত্য এবার চমকে গিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি কি বললে তুমি?

নূর অশ্রু চোখে মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ আদিত্য, আল্লাহ পাক আমাদের ফরিয়াদ কবুল করেছেন। আমি মা আর তুমি বাবা হতে চলেছ আদিত্য। আজ তোমার জন্মদিনে আমি এতবড় গিফট পাবো ভাবতেই পারিনি।

এমন একটা খবর শুনে আদিত্য যেন পুরো জমে গেছে। কেমন রিয়্যাক্ট দিবে তা বুঝতে পারছে না। নূর আদিত্যের কাঁধ ঝাকিয়ে বললো।
….কি হলো তোমার?

আদিত্য অশ্রু চোখে হেসে দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। নূরও আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…তুমি খুশী হয়েছতো আদিত্য?

…এটা আবার কেউ জিজ্ঞেস করে? আমি অনেক খুশী নূর। এটা সত্যি আমার বেস্ট বার্থডে ছিল।

আদিত্যের কথায় নূর খুশি হয়ে আদিত্যকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এদিকে আদিত্য একদিকে খুশী হলেও অন্যদিকে ভয়ে ওর কলিজা শুকিয়ে আসছে। ওর প্রাণপাখী ঠিক থাকবে তো?ওর কিছু হবে নাতো? আল্লাহ যেন ওর প্রাণপাখীকে সহিসালামত রাখে। মনে মনে শুধু এই একটা দোয়াই করছে আদিত্য।

চলবে…..