ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
459

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩২

রাতেই সবার মতামত নিয়ে রোদ ফাইনাল করেছে কাচ্চি রান্না করবে সাথে ডেজার্ট। আদ্রিয়ান না করলেও রোদ জেদ করেই রাজি করিয়েছে। যেহেতু সাবা হেল্প করবে তাই আদ্রিয়ান আর তেমন কিছু বলে নি। এশারের নামাজ পরে মিষ্টিকে খায়িয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে রোদ। সবাই এখন ছাঁদে যাবে আড্ডা দিতে। এমনিতে ঠান্ডা তার মধ্যে ছাঁদে যাবে বলে সবাই মোটা সোটা কাপড় পড়ে রেডি।রোদ শুধু একটা সোয়েটশার্ট আর টাউজার পরেছে আর মাথায় উরনা। ছেলেরা সবাই ছাদে।রোদ কফি বানিয়ে ফ্লাসে ঢেলে নিল।সাবাও পাকড়া, সস,ফ্রন্চফ্রাই সাজিয়ে নিল। জারবা আর জাইফা বাকি সব নিয়ে ছাঁদে গেল। আদ্রিয়ান আপাতত নেই। তবে একটু পরেই আসবে। সবাই আড্ডা দেয়ার এক পর্যায়ে জাইফ বললো,

— ভাবী আমাদের কিন্তু হক আছে তোমাদের রিসিপশন খাওয়ার।

রোদ কি বলবে ভেবে পেল না। সাবা বললো,

— বেচারীকে না বলে আদ্রিয়ানকে রাজী করাও।

জারবা বললো,

— ভাইয়া যদি ধমক দেয়?

— আরে ধমক দিবে কেন? যেটা দরকার সেটা তো বলতেই হবে।

কথার এক পর্যায়ে জাইফা আরিয়ানকে বললো,

— ভাইয়া তোমার না সবাইকে আইসক্রিম খাওয়ানোর কথা ছিল। ঐ দিন যে বেট হারলা।

— আদ্রিয়ান যদি শুনে ওর বউকে এই ঠান্ডায় আইসক্রিম খায়িয়েছি তাহলে আমাকে ও সাইবেরিয়া না পাঠিয়ে দেয়।

রোদ ঝটপট করে বললো,

— না না ভাইয়া আমি খাব।।।। প্লিজ প্লিজ।

— কিন্তু আদ্রিয়ান।

— উনি তো এখানে নেই। আর আমরা বলবো না তাহলেই হবে।

জারবা খোচা দিয়ে টেনে টেনে বললো,

— ওহ হো ছোট ভাবী তোমার “উনি” চলে আসলে কি হবে?

সবাই হেসে লুটুপুটি খাচ্ছে আর রোদ গাল ফুলিয়ে বসে রইল। আরিয়ান জাইফকে পাঠালো আইসক্রিম আনতে। ১৫ মিনিটের মধ্যে জাইফ হাজির সাথে অনেকগুলো কোণ আইসক্রিম। রোদ খুশিতে ২ টা নিয়ে নিল। সাবা একবার না করলেও রোদের হাসি মুখ দেখে আর কিছু বললো না। সবার আইসক্রিম খাওয়া শেষ শুধু রোদের একটু বাকি। রোদ বাকিটা শেষ করার সাথে সাথে আদ্রিয়ান হাজির। রোদের মুখের ভিতর তখনও আইসক্রিম। আদ্রিয়ান এক নজর রোদের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে চলে গেল। রোদ সহ বাকি সবাই একটু ভয় পেল। রোদ ভয়ে ভয়ে বললো,

— উনি কি দেখে ফেললো?

জাইফ বললো,

— দেখার তো কথা না।

পেছন থেকে আদ্রিয়ান বললো,

— কি দেখার কথা না?

সবাই থতমত খেয়ে গেল।তবুও নিজেদের সামলে নিল। জাইফ কোনমতে কিছু বলে থামলো।আদ্রিয়ানও আর ঘাটলো না। রোদকে হালকা ধমক দিয়ে বললো,

— গাধার মতো এভাবে বসে আছো কেন? তোমার শীতের কাপড় নেই? ঠান্ডা লাগলে দেখ কি করি আমি!

বলতে বলতে রোদকে নিজের একটা মোটা জ্যাকেট পড়িয়ে দিল। আর মাথায় ঘোমটার উপর মাফলার পেচিয়ে দিল।রোদ গাল ফুলিয়ে বসে রইল আর সবাই মিটিমিটি হাসলো।আদ্রিয়ান বললো,

— গাল ফুলিয়ে লাভ নেই আর তোরা বেহুলা হাসছিস কেন?

বলে একটা চিকেন ফ্রাই এ বাইট দিল। বসেছে একদম রোদকে ঘেঁষে। সবাই আবার আড্ডায় মেতে উঠলো। আদ্রিয়ান নিজের বাইট দেয়া ফ্রাই রোদের সামনে ধরতে রোদও বাইট করে খেল। আরিয়ান আর সাবা আদ্রিয়ানকে দেখে অনেক খুশি। কতবছর পর তার ভাইকে এতো খুশি দেখলো। নয়তো রাগচজা হয়ে গিয়েছিল যদিও এখনো যথেষ্ট রাগী তবুও রোদ আছে যাকে আদ্রিয়ান নিজের ভালোবাসায় বেধে ফেলছে।

রাত ১১ টার দিকে নিচ থেকে ডাকাডাকিতে সবাই নিচে নামলো। ডিনারে রোদ তেমন কিছু খেতে পারলো না কেমন জানো মাথা, নাক ভার হয়ে আছে। আদ্রিয়ান জোর করে হালকা খাওয়ালো। রুমে ডুকে রোদ চেঞ্জ করে বেরুতেই হাচি শুরু হয়ে গেল। আদ্রিয়ান দেখেও কিছু বললো না। নিজে ফ্রেশ হয়ে রুমে ডুকে রোদকে বললো,

— কাল আমার ফ্রেন্ডদের গেট টু গেদার।

রোদ একটা হাচি দিয়ে নাক টেনে বললো,

— হু।

— হু না তুমি ও যাবে।

— ওহ।

— ঠান্ডা লাগলো কিভাব?

রোদ ভয়ে চোখ পিটপিট করে বললো,

— আমি কি জানি।

বলে দূরে সরে একটা হাচি দিল। আদ্রিয়ান জানে ঠান্ডায় বসে এমন হওয়ার কথা না। আদ্রিয়ান নিজে ওকে ঢেকে রেখেছে তার মধ্যে সব খাবার গরম ছিল, গরম কফি খেল। মনের মধ্যে একটু সন্দেহ হওয়াতে ভাবলো রোদকে একটু বাজিয়ে দেখবে। তাই বললো,

— ঠান্ডা খেলে ঠান্ডা তো লাগবেই!

রোদ ভয়ে গরগরে করে বললো,

— দেখুন আল্লাহ চেয়েছে আমার ঠান্ডা লাগবে তাই লেগেছে শুধু শুধু আইসক্রিমকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বুঝলেন।

বলেই রোদ কম্বলের নিচে ডুকে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর ভান ধরলো। আদ্রিয়ান হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ও তো আনতাজে ঢিল ছুড়ছে এভাবে যে নিশানায় লাগবে তা ভাবতে পারে নি। আবার মেজাজও গরম হয়ে গেল। এই মেয়ে এমনিতে এতো রোগ নিয়ে ঘুরে আবার ঠান্ডাও লাগিয়ে কি সুন্দর আদ্রিয়ানকে বুঝ দেয়। আদ্রিয়ান হাত ধরে টেনে রোদকে বিছানার উঠিয়ে বসালো। রোদ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আদ্রিয়ান ধমকে বললো,

–লুক এট মি!

রোদ ভয়ে ভয়ে চোরা চোখে তাকালো। আদ্রিয়ান যে রেগে বোম হয়ে আছে তা বুঝতে আর বেগ পেতে হয় নি। কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান রোদের হাত চেপে ধরে বললো,

— না করিনি আমি? বলো করেছিলাম? তবুও কেন খেলে এই ঠান্ডার মধ্যে? তুমি কি বাচ্চা?

ভয়ে রোদের মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না তবুও মিনমিন করে বললো,

— অনেকদিন খাইনা তাই আজ..

— তাই আজ তুমি যতখুশি আইসক্রিম খাবে?

— না না সত্যি আমি মাত্র ২ টা কোন খেয়েছি। বিশ্বাস না করলে সবাইকে জিজ্ঞেস করেন।

আদ্রিয়ানের এখন নিজের উপর বিরক্ত লাগছে। এই মেয়ে ওর মাথা খারাপ করে দিবে। এই ঠান্ডার ২ টা কোন খেয়ে বসে আছে। কিছু না বলে জোর জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললো,

— বসো।

রোদ বসতেই আদ্রিয়ান কিছু মেডিসিন আর পানি ওর হাতে দিল। রোদ ভ্রু কুচকে তাকাতেই আদ্রিয়ান বললো,

–আগে যদি গ্যাপ না দিতা তাহলে আজ আর খেতে হতো না।

— কি ছিল রিপোর্টে?

— তোমার না জানলেও হবে।

ভয়ে রোদ আর কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ওকে বসিয়ে নিচে নেমে দুধ গরম করে নিয়ে রুমে ডুকলো। রোদ ফোনে কিছু করছিলো। আদ্রিয়ান বাকি মেডিসিন দুধে গুলিয়ে রোদের সামনে দিল। রোগ বুঝতে না পেরে বললো,

— কি?

— ফিনিস ইট এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস।

রোদ হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে নাক কুচকে বললো,

— আর না প্লিজ।

আদ্রিয়ান চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। রোদ ভয়ে বললো,

— এটা মজা না। আচ্ছা শুনুন…

— খেতে বলেছি।

— হরলিক্স মিক্স করে দিন। শুধু দুধ খেতে পারবো না।

— কিছু মিক্স হবে না। খাও তারাতারি।

রোদ কোনমতে অর্ধেক খেয়ে বললো,

— সত্যি আর পারছি না।

আদ্রিয়ান খেয়াল করলো রোদ আসলেই খেতে পারছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। তাই নিজেকে শক্ত দেখিয়ে পুরোটা খায়িয়ে দিল। রোদের এখন বমি বমি পাচ্ছে। তাই পানি খেল। আদ্রিয়ান ওর মুখ মুছে দিল। রোদের খারাপ লাগছে তাও বুঝতে পারল। রোদ কোন কথাই বলছে না। একটু পর মুখ চেপে ধরে ওয়াশরুমে দৌড়ে এসে বেসিনে বমি করে দিল। আদ্রিয়ান ওকে ধরে মুখ মুছিয়ে দিল। এতো কষ্টে খাওয়ালো তবুও লাভ হলো না। রোদকে নিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরলো। রোদকে বুকে চেপে ধরে মিষ্টিকে আরেকপাশে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

__________________

আজকে সকাল থেকে কিচেনে মেহনাত করে যাচ্ছে রোদ আর সাবা। আদ্রিয়ানের মা অনেকবার হেল্প করবে বলেছে কিন্তু দুজনের একজনও রাজি হয় নি। দুই জা মিলে কাচ্চি, পুডিং, সেমাই, চিলি চিকেন, সালাত আর ভেজিটেবল রান্না করেছে।এরমধ্যে কাচ্চি একা রোদ রান্না করেছে।ফুল ইউ টিউব দেখে। এতক্ষণ যদিও রোদ অনেক কনফিডেন্ট ছিল বাট এখন ওর মনে হচ্ছে হয়তো মজা হয় নি। রান্না শেষে রোদ নিচে থেকে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে ডুকলো। ওকে গোসল করিয়ে রুমে ডুকে লোশন, ক্রিম লাগিয়ে ড্রেস পারিয়ে চুল শুকিয়ে বেধে দিল। বসতে বলে নিজেও গেল গোসল করতে। মসলা দিয়ে মনে হয় মেখে গেছে শরীর। এতবড় রান্না প্রথম বার করলো। গোসল করে বেরিয়ে রোদ কিছুটা শক্ড হয়ে আছে। এই সময় আদ্রিয়ানকে বাসায় এক্সপেক্ট করেনি রোদ। আদ্রিয়ান মিষ্টির সাথে খেলতে ব্যাস্ত। রোদকে বেরতে দেখে নিজে গেল সাওয়ার নিতে। আদ্রিয়ান বেরুতে বেরুতে রোদের নামাজ পড়া শেষ। বারান্দায় চুল মুছতে গিয়েছে। আদ্রিয়ান পেছন থেকে নিজেই মুছে দিতে লাগলো। মুছা শেষে রোদের চুলে নাক ডুবিয়ে দিল। রোদ শক্ত করে রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলো। কোন মতে বললো,

— আজ এই সময় বাসায় যে?

— খুশি হও নি?

— না তেমন কিছু না।

— হু।

— চলুন নিচে যাই।

— হু।

— কি হু?

— হু

রোদ এবার বিরক্ত হয়ে আদ্রিয়ানকে জোর করে ছাড়ালো।আদ্রিয়ান একটু হকচকিয়ে গেল। এরপর মাথা চুলকে বিরবির করতে করতে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বসে রইলো। এই মেয়ে আদ্রিয়ানের সামনে এভাবে থাকলে আদ্রিয়ান কন্ট্রোল করতে পারে না নিজেকে। রোদ নিজেকে পরিপাটি করে তিনজন নিচে নেমে গেল।

_______________

টেবিলে কয়েকজন বসা। আরিয়ান আর আদ্রিয়ানের বাবা ও বাসায়।রোদ আগে ভাগে মিষ্টিকে খায়িয়ে দিচ্ছে। খাওয়া শেষে মিষ্টি আর আলিফ খেলতে লাগলো। বাকি সবাই আসতেই রোদ আর সাবা সব সার্ভ করলো। আদ্রিয়ানকে দেখা জারবা বাললো,

— ছোট ভাইয়া আজ এসময়ে বাসায় যে?

— আমার বউ প্রথমবার রান্না করেছে এতকিছু আমি খাব না তো কি তুই খাবি?

আদ্রিয়ান সোজা উত্তরে রোদ লজ্জা পেলেও সবার সামনে বউ বলাতে বিব্রত বোধ করলো। বাকি সবাই হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে। কি একটা অবস্থা।

সবার খাওয়া শুরু করলো। রোদ তো টেনশনে এখনো মুখে তুলে নি।শুধু নাড়াচাড়া করছে। সবার আগে জাইফ বললো,

— ও মাই আল্লাহ ভাবী।অনেক মজা হয়েছে।

বাকি সবাই ও অনেক প্রসংশা করলো। রোদের যদিও অনেক খুশি লাগছিল কিন্তু আদ্রিয়ান কিছু না বলাতে মনটা আবার বিষিয়ে উঠল। ইদানীং আদ্রিয়ান থেকে এটেনশন পেতে চায় রোদ আবার ভয়ও পায় অনেক।
খাওয়া শেষে ডেজার্ট খেয়েও সবাই আরেকদফা প্রশংসা করলো।নানুমনি আর বড় মামা আর ছোট মামা আজও সালামি দিয়েছে।

বিকেলে ওরা চলে গেল। রোদের মনটা অনেক খারাপ। জাইফা আর জাইফের সাথে অনেক মজা করেছিল। বাসায় ওরা ছিল বলে রোদের নিজের বাসার কথা তেমন মনে পড়তো না কিন্তু আজ আবার মনে পরছে। এই বাসার ছাঁদে রোদ কখনো যায় নি তাই আজ ভাবলো যাবে। আসলে এতকিছুর মধ্যে রোদ পুরো বাসাও দেখে নি। মায়ের সাথে কথা বলে ছাঁদে উঠলো। বিশাল বড় ছাদ। অনেক গাছ লাগানো। রোদ সব ছুয়ে ছুয়ে দেখলো। গাছ বরাবরই রোদের প্রিয়। নিজের বাসায়ও অনেক গাছ লাগিয়েছে রোদ আবারও বাসার কথা মনে পরলো। রোদ সিদ্ধান্ত নিল কাল ম্যাডিকেল থেকে বাসায় যাবে। আদ্রিয়ান বলে কিন্তু পরে টালবাহানা করে।

রেলিং এ বসে বসে এসব ভাবতে ভাবতে রোদের অনেক কান্না পেল। মেয়েটা এমনই ছোটবেলা থেকে একটু কষ্ট পেলেই লুকিয়ে কাঁদে। বিশেষ কিছু মানুষ বাদে কারো সামনে নিজেকে দুর্বল দেখাতে রাজী না রোদ। কয়েক ফোটা পানি পরলো চোখ দিয়ে। কাল রোদ যাবেই যাবে।

আদ্রিয়ান সারাবাড়ী রোদকে খুজেও পেল না। শেষ মেস ছাঁদে এসে একটু ভয় পেয়ে গেল রোদকে রেলিং এ বসা দেখে। আস্তে করে পেছন দিক থেকে রোদকে জাড়িয়ে ধরলো। রোদ এই হাত চিনে তাই কিছু বললো না। আদ্রিয়ান রোদের কাধে ঠোঁট চেপে ধরলো রোদ কেপে উঠলো। আদ্রিয়ান না ছেড়ে ওভাবেই মিনমিনিয়ে বললো,

— এখানে কেন বসেছে আমার বউ হু? আমি সারাবাড়ী খুঁজে অস্থির।

………..

— বলো?

……….

রোদের উত্তর না পেয়ে আদ্রিয়ান ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। রোদ মাথা নিচু করে রাখলো। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো তার প্রাণপাখিটা কান্না করছে। শান্ত কন্ঠে বললো,

— কি হয়েছে?

— ভালো লাগছে না।

আদ্রিয়ান জানে কেন ভালো লাগছে না তাই আস্তে করে রোদকে নিজের বুকে চেপে ধরলো। রোদও কিছু না বলে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে রইল।

#চলবে……

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৩

মিষ্টিকেও নিয়ে যাবে বলেছে রোদ কিন্তু মেয়ে ওর বড়মাপের ধোকা দিয়ে আজ এশারের আগেই ঢুলুঢুলু করছে ঘুমে। রোদ ওকে খায়িয়ে সুয়িয়ে দিল। নিজের ও চোখ লেগে আসছে। এমন সময় সাবা কফি নিয়ে রুমে নক করলো। রোদ উঠে বললো,

— দরজা খোলা।

সাবা ভেতরে আসতেই রোদ বললো,

— তোমার আবার নক করতে হয় আপিপু?

— হু বোনের প্রাইভেসি আছে না।

রোদ হেসে বললো,

— বোনের রুমে আর নক করবা না। বুঝলা?

— বুঝলাম। নে কফি।

— সত্যিই দরকার ছিল। ঘুম আসছিল।

— তারাতাড়ি শেষ কর।তোকে রেডি করিয়ে দেই।

— কেন?

— আদ্রিয়ানের সাথে না বাইরে যাবি।

— হু।

এরপর কারো কিছুক্ষন কথা বলে সাবা কফির মগ নিয়ে চলে গেল। রোদ ওযু করে নামাজ পড়তেই জারবা ডেকে বললো যাতে সাবার রুমে যায়। রোদ জারবাকে বললো যাতে মিষ্টির সাথে থাকে। জারবাকে মিষ্টির কাছে রোদ নিরদ্বিধায় সাবার রুমে গেল। সাবা সুন্দর একটা শাড়ি দিয়ে বললো,

–আজ এটা পড়বি। তোকে অনেক মানাবে।

— শাড়ী না পরে কোন ড্রেস পড়ি।

— আপনার জামাই এটা দিয়ে গিয়েছে। এবার বলুন।

রোদ একটু অবাক হলেও কিছু বললো না। লাইট ব্লু রং এর হালকা কাজের শাড়ীতে রোদ থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরলো। সাবা হালকা করে সাজিয়ে ও দিল। এমনিতেই সুন্দর রোদকে এই হালকা সাজেই অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। রোদ সুন্দর করে হিজাব বেধে নিল। ফুল হাতা সাদা ব্লাউজ, হালকা নীল শাড়ি সাদা আচল, মিক্স হিজাব আর একটু সাজ। রোদ যেন নিজেকে চিনতেই অক্ষম কারন রোদ সচারাচর সাজে না। পড়ার চাপে কখনো তেমন সাজা হয় নি। সাবা খোচা দিয়ে বললো,

— তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। পুতুলের মতো।

এরমধ্যে রোদের ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান বললো,

— রেডি?

–হু।

— রুমে আসো।

— আচ্ছা।

সাবাকে বলে রোদ নিজের রুমে যেতে লাগলো। রুমে ডুকে দেখে আদ্রিয়ান পুরো রেডি। রোদের সাথে ম্যাচিং করে হালকা ব্লু রং এর পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা। চুল গুলো সেট করে রাখা। কে বলবে এই লোকের কয়েকবছর পর ৩০ হবে। রোদ রুমে ডুকে উহুম উহুম আওয়াজ করে। আদ্রিয়ান ঐ দিকে না তাকিয়েই বলে,

— লেট হয়ে যাচ্ছে। তুমি রেডি না?

রোদ জুতা পরতে পরতে বললো,

— আমি তো কখন থেকে রেডি আপনিই তো লেট করে আসলেন।

আদ্রিয়ান রোদের কথায় ঘার ফিরিয়ে তাকালো। বেচারা ঘার ঘুরাত ভুলে গেল। চোখ আটকে গেল জুতার ফিতা নিয়ে টানাটানি করা রোদের দিকে। মেয়েটাকে আজকেও কেমন বড় বড় লাগছে। আদ্রিয়ান ভেবেছিল আজ রোদকে সারপ্রাইজ দিবে কিন্তু এই মেয়ে তো ওকে এখানেই আটকে দিবে মনে হয়। অসম্ভব সুন্দর লাগছে রোদকে।
রোদ বিরক্ত হয়ে গেল জুতা নিয়ে। শাড়ী পরেছে তার মধ্যে আদ্রিয়ানের তুলনায় রোদ যথেষ্ট খাটো। তাই হিল পরতে চেষ্টা করছে। কিন্তু শাড়ী পরে নিচু হয়ে পরতে পারছে না। তাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠে গেল নিচু জুতা পরবে বলে। রোদকে উঠতে দেখে আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে আটকে বসিয়ে দিল। নিজে বসলো হাটু গেরে ওর সামনে। রোদ কিছু বুঝার আগেই আদ্রিয়ান ওর পায়ে হাত দিতেই রোদ ঝামটা মেরে দাঁড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ওর দিকে। বিরক্ত হয়ে বললো,

— কি সমস্যা?

— আমি অন্য জুতা পরবো।

— কেন?

— এমনি।

— চুপচাপ বসো।

রোদ কিছু না বলে বসে পরলো।আদ্রিয়ান নিজে রোদকে জুতা পরিয়ে ফিতা বেধে দিল। রোদকে ধরে দাড় করিয়ে টেবিলের সামনে থেকে একজোড়া হোয়াইট স্টোনের চুড়ি পরিয়ে দিল। রোদের দু গালে হাত দিয়ে ছোট করে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— মাশাআল্লাহ। আমার বউকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।

রোদ লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনি সব রং চেহারায় ফুটিয়ে তুললো। হালকা নাক টানলো। ঠান্ডাটা পুরোপুরি সারে নি। আদ্রিয়ান হালকা হেসে উঠল। রোদের হাত চেপে ধরে বললো,

— চলুন। যাওয়া যাক ম্যাডাম। আজ আপনার জন্য অনেক কিছু ওয়েট করছে।

বলে মিষ্টির কপালে চুমু খেয়ে জারবাকে রুমে বসিয়ে বের হলো।

_______________

গাড়ি এসে থামল বসুন্ধরা এলাকায় জাকজমক এক রুফটপের সামনে। গাড়িতে আদ্রিয়ান পইপই করে বলেছে যে ওর ফ্রন্ডরা একটু ফ্রী মাইন্ডের। সবার মধ্যে রোদ হলো সবচেয়ে ছোট।তাই যাতে কিছু মনে না করে। ক্লোজ ফ্রেন্ডদের সাথে তো দেখা হয়েছিলোই। আজ তাদের ওয়াইফরা ও আসবে। তাই যাতে রোদ বিব্রত বোধ না করে।

রোদের হাত ধরে দুই জন ভিতরে গেল। আশেপাশে অনেক সুন্দর করে ডেকরেশন করা। ন্যাচারাল ভিউ অনেক সুন্দর। রোদ উতফুল্ল হয়ে বললো,

— এই জায়গাটা অনেক সুন্দর। মিষ্টি থাকলে ভালো হতো।

— এর পর নিয়ে আসবো নে।

— আচ্ছা।

ওরা উপরে উঠতেই হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে এসে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। রোদ দূরে সরতে চেয়েও পারলো না আদ্রিয়ান ওর হাত ছাড়ে নি। আদ্রিয়ান সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। বাকি সবাই ও একপ্রকার হুরমুরিয়ে এলো। রোদ যতটুকু বুঝতে পারল তা হলো আদ্রিয়ান অনেক বছর পর কোন গেট টু গেদার এ এসেছে। শুধু মাত্র ক্লোজ ফ্রেন্ড দের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাও তারা জোর করে যোগাযোগ রেখেছেন। সবার সাথে কথা শেষে সবার নজর গেল রোদের দিকে। রোদ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান ওকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। একপাশে জড়িয়ে ধরে বললো,

–মিট মাই ওয়াইফ রুদ্রিতা খান রোদ।

রোদ সবাইকে সালাম দিল। সবাই একটু শক্ড খেল। অসম্ভব সুন্দর রোদ তার মধ্যে যথেষ্ট ছোট আদ্রিয়ানের তুলনায়।সবাই হাসি মুখে ওর সাথে কথা বললো। রিশান এসে ওদের ভিতরে নিয়ে গেল। পুরোটা রুফটপ জুরে আদ্রিয়ানের ফ্রন্ডরা। ছেলে মেয়ে সবাই আছে। বেশির ভাগই বউ আর জামাই নিয়ে এসেছে। আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে বসলো।বাকিরাও একে একে বসলো।কেউ কেউ আলাদা জোট করে গল্প করছে। সফট মিউজিক বাজছে।

হুট করে একটা মেয়ে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরলো। রোদ চমকিয়ে গেল পরে বুঝতে পারল এটা আর কেউ না প্রাণো আপু। রিশান ভাইয়ার বউ। প্রণো বললো,

— কেমন আছ রোদ। তোমকে অনেক সুন্দর লাগছে।

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপু।আপনাকেও সুন্দর লাগছে।

প্রণয় আর প্রান্ত এসে বসে পরলো। আদ্রিয়ানকে বললো,

— অবশেষে তুই আসলি।

— কেন খুশি হস নি।

— বাদ দে তোর খুশি। কেমন আছ রোদ?

— ভালো ভাইয়া।

অয়ন এসে কাদো কাদো হয়ে বললো,

— ভাই আমার বউ পাইতাসি না।

রিশান বললো,

— বেচারীরে শান্তি দে। একটু বাচুক।

অয়ন তেতে উঠে বললো,

— ক্যান তুই কি আমার বেড রুমে ডুকে যায়া দেখছিস যে আমি ওরে শান্তি দেই নাকি দেই না?

রাইফ বললো,

— ওহ মাই আল্লাহ! কি কস কি এগুলা? রিশান তোর রুচি এতো খারাপ আরেকজনের বেডরুমে উকিঝুকি দেও। সো ব্যাড ডুড।

রিশান ধুম করে রাইফের পিঠে একটা কিল মেরে বললো,

— সালা উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।

— তুই আমারে ক্যান মারলি। অয়নই তো শুরু করলো।

প্রণয় বললো,

— সবগুলো অশ্লীল।

অয়ন প্রণয়ের গা ঘেঁষে বসে বললো,

— তাই নাকি? তো তুমি কেমনে বুঝলা আমরা অশ্লীল? তুমিও বুঝি উকি ঝুঁকি দাও।

প্রণয় বোনের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রণো মুখ টিপে হাসছে। ধমকি দিয়ে বললো,

— প্রাণোর বাচ্চা হাসবি না।

রিশান আর প্রন্ত একসাথে বললো,

— ঐ তুই ওরে ধমকাস কেন?

এরমধ্যেই সুন্দর একটি মেয়ে এসে প্রণয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

— তোমরা প্রণয়কে ধমকাচ্ছো কেন?

প্রণয় অসহায় মুখ করে তাকালো। প্রাণো বললো,

— সব কিছুর মূলে তুমি।

মেয়েটি না বুঝে প্রণয়ের সামনে বসে বললো,

— বুঝলাম না।

অয়ন মেয়েটির হাত ধরে বললো,

— জান তুমি ওর সামনে বসলা কেন? আমি তোমাকে কখন থেকে খুজছি।

মেয়েটি নাক কুচকে বললো,

— উফ হাত ছাড়। ভালোলাগে না সারাদিন।

— এমন কর কেন বউ?

— ভাই শান্তি দাও। যাও তো।

সবাই হো হো করে হেসে উঠল। রিশান বললো,

— কি মিললো তো আমার কথা। সোহা শান্তি চায়।

রোদ এতক্ষণে বুঝতে পারল সোহা মেয়েটি অয়নের বউ। এদের লাগামহীন কথাবর্তায় রোদ শক্ত হয়ে বসে আছে মাথা নিচু করে। আদ্রিয়ান ওকে একহাতে জড়িয়ে আছে। সোহা হুট করে বললো,

— এই তুমি রোদ?

— জ্বি।

— আল্লাহ কত সুন্দর তুমি।

অয়ন বললো,

— এই জন্যই তো আদ্রিয়ান পিছলা খাইসে।

বলে টেনেটুনে সোহাকে নিজের কাছে বসালো। সোহা বিরক্ত হলো। বাকি সবাই হেসে উঠল। রোদ ভাবলো, আহারে সোহা মেয়েটা হয়তো লজ্জা পেল। হঠাৎ রোদ নাক টানাতে সাহিল বললো,

— রোদ ঠান্ডা লাগলো কিভাবে?

রোদ কিছু বলার আগেই সাবা বললো,

— বুঝ না নতুন নতুন বিয়ে ঠান্ডা তো লাগবেই।

প্রণো বললো,

— কয়বার গোসল করো রোদ যে এত ঠান্ডা লেগে গেল?

আদ্রিয়ান এতক্ষণে মুখ খুলে বললো,

— চুপ কর।

অয়ন বললো,

— কেন মামা? নো চুপচাপ থাকা। বুঝলা।

প্রাণো আবার বলতেই রোদ না বুঝে সোজা বললো,

— আমি তো দুপুরে একবার গোসল করি আপু।

সবাই এবার হু হা করে হেসে উঠল। রোদ বোকা চোখে আদ্রিয়ানের তাকালো। আদ্রিয়ানও হালকা হাসল। প্রন্ত বললো,

— ভাইরে ভাই তোর বউ তো সত্যিই ছোট রে।

আদ্রিয়ান জোরে বললো,

— জাস্ট সাট আপ গাইস। এমন কিছু হয় নি।

সবাই একটু শান্ত হলো জেন। রোদ অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারল আসল কাহীনি। ওর এখন এই রুফ থেকে লাভ দিতে মন চাইলো। আর এটা ও মনে হলো যে সোহা মোটেও বেচারী না। সবগুলো একই রং এর রংগিলা।

সবাই আবারও কথায় মেতে উঠলো। প্রণো আর সোহা রোদকে টেনে নিয়ে বললো,

— ঐ দিকে চলো বাকি সবার বউদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান চোখের ইশারায় যেতে বললো। রোদও উঠে গেল।

________________

হেটে হেটে কথা বলছিল সবাই। সোহা বললো,

— চল ঐ দিকে বসি।

ওরা বসতেই প্রাণো বললো,

— অনেক ধন্যবাদ রোদ।

— কেন আপু?

— তোমার জন্যই আদ্রিয়ান আজ এখানে। নাহলে ওর মৃত্যুর পর আদ্রিয়ান সব ছেড়ে দিয়েছিল।

রোদ বুঝে শুধু বললো,

— হুম।

সোহা বললো,

— জানো আদ্রিয়ান আর অনিমা ছিল বেস্ট জুড়ি আমাদের সবার মধ্যে। কলেজেও একসাথে ছিলাম সবাই। বাট কি ভাবে সব উলোট পালোট হয়ে গেল।

রোদ আগ্রহ প্রকাশ করে বললো,

— ওনাদের কি লাভ ম্যারেজ ছিল?

প্রাণো বললো,

— তা আর বলতে।দুইজন ক্লাস নাইন থেকে প্রেম করতো। কলেজে পরিক্ষা শেষে অনির বিয়ের কথা উঠলে দুজন পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। যেহেতু সাবা আপুর বোন ছিল তাই কেউ দ্বি মত করে নি।শুধু এত ছোট বেলায় বিয়ে করায় রাগ করে। এরপর আদ্রিয়ান এবরোড চলে যায় পড়াশোনা করতে আর অনি এখানে পড়া শেষ করলো। আদ্রিয়ান ফিরে এসে আবার সবাই বিয়ে ধুমধামে দেয়। একবছর হতে না হতেই মিষ্টি হওয়ার খবর পায়।এরপর তো জানই।

রোদের খারাপ লাগলো। কত সুন্দর একটা প্রেম ছিল।ভালোবাসা ছিল। কিন্তু শেষ হলো না। সাবা বললো,

— মন খারাপ করো না। তোমাকে অনেক ভালোভাবে বুঝলা। দেখ না কেমন করে তাকিয়ে আছে।

রোদ দেখলো আদ্রিয়ান কথা বলছে ঠিকই কিন্তু রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ একটু লজ্জা পেল। রোদ সবার সাথে কথা বলে বললো,

— আপু আমি একটু ওয়াসরুমে যাব।

প্রাণো নিয়ে গেল রোদকে। রোদ ঢুকতেই রিশানের ডাকে প্রাণো অন্য দিকে গেল। রোদ বের হতেই দেখলো প্রাণো নেই। তাই নিজেই হাটতে লাগলো।হুট করে হাতে টান লাগায় রোদ ঘার ঘুরিয়ে দেখলো একটা ছেলে। না চিনে হাত ধরায় রোদ ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিল। ছেলেটা হেসে বললো,

— কেমন আছ?

–সরি। অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে চাইছি না।

— বাট আমরা তো পরিচিত। মনে আছে ঐ দিন পার্কে।

রোদের হালকা মনে পরলো। এই ছেলেটাই তো প্রপোজ করেছিল কিন্তু মিষ্টি মাম্মা বলে ডাকায় মুখের বারটা বাজিয়ে চলে গিয়েছিল। রোদ বললো,

— হু চিনেছি।

— তাহলে তো কথা বলতে পারি।

— লেট হচ্ছে আমার হাসবেন্ড ওয়েট করছে।গেলাম।

বলে চলে যেতেই ছেলের হাত ধরে আটকে বললো,

— আরে এতো তারাহুরো কেন?

বলতেই আদ্রিয়ান এসে রোদের হাত ছাড়িয়ে নিল। দাত চেপে বললো,

— পারমিশন ছাড়া টাচ নট এলাউড।

কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদকে নিয়ে হাটা ধরলো। রোদকে বসিয়ে বললো,

— হাত ধরে ছিল। না করনি কেন?

— আমি তো

— সাট আপ।

রোদ আর কিছু বললো না। বাকি সবাই সাথে খেতে বসলো। রাত ১২ টায় বিদায় নিয়ে যে যার মতো যেতে লাগলো।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪

১২ টা বাজতে প্রায় ৫/৬ মিনিট বাকি। আদ্রিয়ান গাড়ি পার্ক করলো একটা খোলা জায়গায়। মানুষ জন নেই বললেই চলে। রোদ একটু ভয়ও পেল। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান বললো,

— তাড়াতাড়ি নামো।

— এখানে কেন?

আদ্রিয়ান উত্তর না দিয়ে নিজে বের হয়ে রোদকেও টেনে বের করলো। রোদ নেমে আদ্রিয়ানের একবাহু টাইট করে ধরে আছে। রোদের ভিতু চেহারার দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ান হালকা হাসল। ওকে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

— রোদ?

— হু।

— ভয় পাচ্ছ?

— না।

— মিথ্যা।

— আপনি আছেন তো।

আদ্রিয়ান আর কিছু বললো না। রোদের ওর প্রতি বিশ্বাস রোদের প্রতি ভালোবাসাকে আরেকটু গাঢ় হতে সাহায্য করলো।
সামনে এগুতেই রোদ চমকে গেল। এখানে যে কোন ক্যাফে হতে পারে তা রোদের ধারণায় ছিল না। সুন্দর করে লাইটিং করা বড় জায়গা জুরে ক্যাফেটেরিয়া। মানুষ এখানে নেই কিন্তু ভেতর থেকে মিউজিকের আওয়াজ আসছে মানে ভিতরে লোক আছে। রোগ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে এর আগেই রোদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে সফট ভাবে আদ্রিয়ান বললো,

— হ্যাপি বার্থডে বউ।

রোদ প্রথমে ভরকে গেলেও পরক্ষণেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। এই প্রথম রোদ নিজের বার্থডে ভুলে গিয়েছিল। কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান সরে গেল আর রোদের ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই রোদের মা, বাবা, রাদ আর রুদ্র একসাথে উইস করে উঠলো। রোদের মুখের জলজল করা হাসিতে আদ্রিয়ানের ঠোঁটে ও হাসি ফুটে উঠলো। ফোন কাটতেই রোদ আদ্রিয়ানকে খুজে পেল না। ডাক দেয়ার আগেই কারো কন্ঠে রোদ সামনে তাকাতেই চমকে গেল। আদ্রিয়ান রোদের সামনে হাটু গেরে বসা। রোদকে বলার সুযোগ না দিয়েই আদ্রিয়ান বললো,

— প্রথম যেদিন তোমায় দেখেছিলাম ঠিক সেদিনই তোমার মধ্যে হারিয়েছিলাম। তোমার চোখ আর গলার স্বরে নিজের হারানো প্রিয়তমাকে খুজেছিলাম। কিন্তু সে তো আমার বুকে শায়িত তাকে কি আর নতুন করে খুজতে হয়। তবুও তোমার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি বারবার। কি করবো না করবো ওতো কিছু বুঝি নি বুঝার চেষ্টাও করিনি। তোমাকে যেভাবে হোক নিজের করে নিয়েছি। আমি স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে নিজের করার জন্য তর সইছিলো না তাই তো অধৈর্য হয়ে বিয়ে করে নিলাম।আমাকে কখনো মিথ্যা বলবে না। তোমার সব কিছু আমাকে জানাবে। বেচে থাকার জন্য, ভালোথাকার জন্য আই নিড ইউ রোদ। আই লাভ ইউ। ইউল ইউ লাভ মি?

আদ্রিয়ানের এতোগুলা কথার পিস্ঠে রোদের কি বলা উচিত তা বুঝতে পারল না রোদ। চোখ দিয়ে শুধু টুপটাপ পানি পরছে। আচ্ছা এতো ভালোবাসা কিভাবে সামলাবে রোদ? কিভাবে ভালোরাখবে আদ্রিয়ানকে? কোন উত্তর জানে না রোদ। ঘটনার প্রেক্ষিতে কথার খেই হারিয়ে ফেলে নিজেও আদ্রিয়ানের সামনে হাটু গেরে বসে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ানও যত্নসহকারে জড়িয়ে নিল তার রোদকে। রোদের কানে আস্তে করে বললো,

— বউ উত্তর দিলে না?

রোদ এখন কিভাবে উত্তর দিবে জানা নেই। আস্তে করে আদ্রিয়ান থেকে সরতে চেয়েও পারলো না। আদ্রিয়ান ছারছে না। অনেকক্ষণ পর আদ্রিয়ান সুন্দর একটা পাথরের আংটি পড়িয়ে দিল রোদকে। তারপর সবগুলো আংগুলে চুমু খেল। নিজে উঠে রোদকেও উঠালো। আবারো জড়িয়ে ধরে বললো,

— মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো তোমার উত্তরের জন্য।

রোদ একটু শক্ত করে ধরে বললো,

— মৃত্যুর আগে উত্তর দিয়ে যাব।

হঠাৎ করে হাত তালি আর বাশির আওয়াজে আদ্রিয়ান আর রোদ ছিটকে সরে গেল। আদ্রিয়ানের ফ্রেন্ডরা এখানে। সবাই মিলে আরেকদফা মজা করলো।রোদ জন্মদিন কেক কাটে না বুঝ হবার পর থেকে। তাই আদ্রিয়ান কেটে রোদকে খায়িয়ে দিল।
রাত ২ টায় বাসায় ফিরলো রোদ আর আদ্রিয়ান। গাড়িতেই ঘুমিয়ে পরেছে রোদ। বাসায় এসে আদ্রিয়ান কোলে তুলবে এর আগেই রোদ উঠে গেল।

জারবা দরজা খুলে হাই তুলে বললো,

— হ্যাপি বার্থডে ছোট ভাবী।

— ধন্যবাদ জারবা।

__________________

রুমে ডুকে আদ্রিয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেল। রোদ আয়নার সামনে দাড়িয়ে সব খুলতে লাগলো। আংগুলের আংটির দিকে তাকিয়ে লজ্জায় কান গরম হয়ে গেল। হঠাৎ করেই রোদের লজ্জা লাগতে শুরু করলো। আদ্রিয়ানের সামনে যাবে কিভাবে? ভাবতে ভাবতে হিজাব খুলে শাড়ীর পিন ছুটাতে লাগলো। পিঠের দিকেরটা খুলতে পারছে না। আদ্রিয়ান এসে সুন্দর করে খুলে বললো,

— ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি আসছি।

রোদও ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে চুপচাপ মিষ্টির সাথে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে দুধে মিডিসিন মিশিয়ে দেখে রোদ প্রায় ঘুম। তারাতাড়ি সামনে যেয়ে ডাকতে শুরু করলো। রোদ চোখ টেনে খুলে বললো,

— হু।

— উঠো।

রোদ না শুনে আবারও ঘুমাতে গেলে আদ্রিয়ান টেনে তুলে হাতে দুধের কাপ ধরিয়ে দিল। রোদ অসহায় হয়ে বললো,

— কষ্ট করে খাব আবার কষ্ট করে বমি করবো। পারবো না আমি।

— আজ কাপে এনেছি তাও আবার চকলেট পাউডার মিক্স করে। ফিনিস করো।

রোদ কষ্ট করে খেয়ে নিল।আদ্রিয়ান হাত দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল। কাপ রেখে কপলে চুমু দিয়ে বললো,

— গুড গার্ল।

— পানি খাব।

— না। কাল পানি খেয়েই বমি করেছো।

— একটু।

— না।

বলে রোদকে পাশে শুয়িয়ে নিজেও শুয়ে পরলো। রোদকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো।রোদ মাথা উচু করে বললো,

— আপুকে অনেক ভালোবাসতেন?

— উহু। এখনো বাসি। বুকে যত্ন করে রাখি ওর প্রতি ভালোবাসা।

— হুম।

— ঘুমাও।

_____________

কয়েকটা লাইন, কিছু কথা, কিছু প্রকাশিত অনুভূতি, ভালোবাসার স্বীকারোক্তি রোদের সকালটা যে এত সুন্দর করে দিবে রোদের হয়তো জানা ছিলো না।যদিও আদ্রিয়ানের করা কেয়ার দেখে বুঝতে পারতো তবুও মুখে শুনে তা যেন প্রখর হলো।সকালে ব্রেকফাস্ট এ সবাই রোদকে উইশ করেছে। আরিয়ান, সাবা আর জারবা পার্টির কথা বললেও রোদ না বলে দিয়েছে কারন রোদ জন্মদিনে কেক কাটা পছন্দ করে না।কফি নিয়ে রুমে ডুকে দেখে আদ্রিয়ান রেডি হচ্ছে। রোদ কফি আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে আটকে বললো,

— কি?

— কি আবার আপনিই তো আটকালেন।

— সকাল থেকে এরিয়ে চলছো কেন?

— ক কই?

আদ্রিয়ান হেচকা টানে সামনে এনে বললো,

— এরাচ্ছো না তাই না?

— হুম।

— তাহলে গাল গুলো টমেটু হয়ে আছে কেন?

রোদ ছাড়াতে চাইলেই আদ্রিয়ান আরো জোড়ে ধরে বললো,

— ওয়েট এ মিনিট তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ আমাকে? কিন্তু কেন?

— জানিনা তো।

হঠাৎ মিষ্টি রুমে ডুকতেই আদ্রিয়ান রোদকে ছেড়ে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিল। কফি খেতে খেতে বললো,

— রোদ রেডি হও।

আচ্ছা বলে রোদও রেডি হয়ে নিল। আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। রোদের লজ্জা এখনো কাটে নি। আদ্রিয়ান তা খেয়াল করে হালকা হাসল। গাড়ি থেকে নামার আগে আদ্রিয়ান রোদকে থামিয়ে দিয়ে কাছে টেনে নিল।রোদ চোখ বন্ধ করে নিল কিন্তু কই কিছইতো হলো না। আদ্রিয়ান রোদের নিকাব ঠিক করে দিয়ে বললো,

— এবার ঠিক আছে। যাও।

রোদ হতবাক হয়ে গেল। রোদতো অন্য কিছু ভেবেছিলো। রোদ তারাহুরো করে নেমে গেল। আদ্রিয়ান ডাক দিলেও ফিরে তাকালো না।এই লোকের সামনে আর আসবে না রোদ। আদ্রিয়ান তো গাড়ির মধ্যেই হাসতে হাসতে শেষ।

______________

মেডিকেলে ডুকতেই ইয়াজ দৌড়ে এসে বললো,

— হ্যাপি বার্থডে দোস্ত।

— থাংকু।

— বাসায় যাবি কবে?

— জানিনারে।

ওদের কথার মধ্যে বাকি ফ্রেন্ডরা এসেও উইশ করে গেল।রোদ ইয়াজের সামনে হাত বারিয়ে বললো,

— আমার গিফট।

— কিসের গিফট?

— দে তারাতাড়ি।

ইয়াজ হেসে দুইটা বক্স বের করে দিল রোদকে। রোদ খুশি হয়ে ক্লাসে ডুকলো। আজও কোচিং করাতে যাবে রোদ। ইয়াজের সাথেই গিয়েছে। ক্লাসে ব্রেক চলাকালীন হঠাৎ অল্পপরিচিত কাউকে দেখে রোদ একটু ঘাবরে গেল। সামনের ছেলেটা এগিয়ে এসে বললো,

— দেখলে আমাদের কপালে বারবার দেখা হওয়া ছিল।

রোদ চলে যেতে নিলেই ছেলেটা আটকে বললো,

— আরে কোথায় যাচ্ছো।

ছেলেটা আর কেউ না ওই দিনের ছেলেটা যার সাথে কাল রাতে পার্টিতে ও দেখা হয়েছিলো। না চাইতেও রোদ অল্প কথা বললো। ছেলেটার নাম রাতুল। এই কোচিং ওরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে দিয়েছে। নিজের বাবার বিজনেস ও দেখে। রোদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতে রোদও আর তেমন কিছু বলে নি।

_________________

আজ বাসায় যাবে রোদ। আদ্রিয়ান যে নিবে না তা ভালোকরেই জানা আছে। একাএকাই ক্যাবে করে চলে এলো বাসায়।কলিং বেল বাজতেই রোদের মা খুলে দিল। মেয়েকে দুসপ্তাহ পর দেখে অনুভূতি প্রকাশে ব্যার্থ হলেন। জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। রোদও মাকে পেয়ে কেঁদে কেটে অস্থির। রোদ ভিতরে যেতেই রুদ্র এসে আপু বলে জড়িয়ে ধরলো। রাদ আর বাবা বাসায় ছিলো না। রোদের মা মেয়েকে বসিয়ে বললেন,

— তুই একা কেন? আর সন্ধ্যার সময় আসলি যে?

— আমার বাসায় আমি কি টাইম দেখে আসবো।

— আমার পাগল।যা গোসল করে আয়।

রোদও নিজের রুমে ডুকে পরলো। এতদিন পর নিজের রুমে ডুকে রোদ জোর শ্বাস নিল। অনেক দিন পর অনেক ভালোলাগছে। এতদিন যত যা ই হোক কেমন খালি খালি লাগছিল। মিষ্টির কথা মনে পরায় সাবাকে কল দিয়ে জানলো মিষ্টি খেলছে। রোদ গোসল করে প্যান্ট আর টিশার্ট পড়ে বের হলো। নামাজ পরে নিচে নামলো।রুদ্রর সাথে কতক্ষণ গল্প করলো। রোদ ভেবছে রাদ এলে বলবে যাতে রোদকে ওই বাসায় দিয়ে আসে। রোদের মা ঝটপট মেয়ের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে এলো। রোদ রুদ্রর সাথে বসে টিভি দেখতে দেখতে লাগলো আর মায়ের হাতে খেতে লাগলো। বেশি খেতে পারলো না। মা ও আর জোর করলো না। রুদ্র টিউশন পরতে গেল। রোদ নিজের রুমে মায়ের সাথে বসে গল্প জুরে দিল। ফোন নিচে ড্রয়িং রুমে বাজতে লাগলো।

ঐ বাসার সবাই কেমন, কত আদর করে, একটা বোন পেয়েছে সহ নানা রকম সব গল্প মায়ের সাথে করলো রোদ। আবার কতক্ষণ কান্না করলো মাকে ছাড়া সবাইকে ছাড়া কষ্ট হয় তা বলে। রোদের মাও কাদলো।মেয়ে তার অনেক আদরের। উনি বাধ্য না হলে কখনো বিয়ে দিতেন না। রোদ মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে গেল।

______________

এদিকে আদ্রিয়ান পাগল হয়ে রোদকে কল করছে। বাসায় কল দিয়ে জানলো সাবাকে কল দিয়েছিলো সন্ধ্যায়।এরপর কোথাও গেল তা জানে না। ইয়াজও বলে দিল অনেক আগেই বাসায় গিয়েছে। তাহলে তার রোদ কই? কাজের চাপে আজ আনতে যেতে পারে নি। পাগলপ্রায় আদ্রিয়ান রোদের বাসায় কল দিতে ভুলে গেল। হঠাৎ মনে পরায় রাদকে কল করায় রাদ জানালো রাদ বাসায় ডুকছে মাত্র। বাসায় ডুকতেই জানতে পারলো রোদ বাসায়। আদ্রিয়ানকে বলতেই আদ্রিয়ান ধপ করে যেখানে ছিল সেখানে বসে পরলো। বাসায় মিষ্টি কেদে কেটে এক করেছে। আদ্রিয়ান কোনমতে রাদকে বললো,

— ও কি বাসায় আসবে না?

— হ্যাঁ। এখন নাকি যাবে।

— কষ্ট করে দিয়ে যাও প্লিজ।

— আরে কষ্ট কিসের। রাখি।

— হুম।

বলে কল কেটে দিল আদ্রিয়ান। গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের বাসায় গেল। সবাই চিন্তিত। এদিকে মিষ্টি কান্না করছে। আদ্রিয়ানকে দেখেই ওর মা বললো,

— রোদ কোথায়?

— আসছে।

— তুই আনিস নি কেন?

— নিজ পায়ে গিয়েছে নিজ পায়েই আসবে।

মিষ্টি কান্না করতে করতে আদ্রিয়ানের একপা ধরে টেনে টেনে বললো,

— বাবাই মাম্মা যাব। মাম্মা এনে দাও।

আদ্রিয়ানের বুকে যেন হালকা ব্যাথা হলো।মেয়েটার কান্না ও দেখতে পারে না। কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— এসে যাবে এখনই মা। কান্না করে না।

মিষ্টি বাবার কথা বিশ্বাস করে কান্না থামালো। ফুপিয়ে যাচ্ছে এখনও। আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে রুমে যেতে নিলেই মিষ্টি বললো,

— আমি এখানে থাকি।মাম্মা এলে যাব।

আদ্রিয়ান ওকে নিজের মায়ের কাছে দিয়ে রুমে ডুকে গেল।

______________

সবাইকে বলে এক রোল কান্না কাটি করে রোদ গাড়িতে উঠলো। রুদ্র এখনে কেদে যাচ্ছে। রাদ ওকে নিয়ে গেটের সামনে এসে জড়িয়ে কপালে চুমু খেল। রোদ বললো,

— ভেতরে আসবানা ভাইয়া?

— না বনু। এই দিকে একটু কাজ আছে। বাসায় আবার রুদ্রও কান্না করছে।

— হুম।

— যা তাহলে।

আচ্ছা বলে রোদ বসায় ডুকে পরলো। রোদ ডুকতেই মিষ্টি এসে জড়িয়ে ধরলো। রোদ ওকে কোলে তুলতেই মিষ্টি ওর গলা জরিয়ে কাধে মাথা রেখে কেদে উঠলো।রোদ ভয় পেয়ে বললো,

— কি হয়েছে মা? কাদছো কেন?

— তুমি কোথায় ছিলে?

— আচ্ছা কাদে না দেখি।

বলে অনেক কষ্টে মিষ্টিকে থামালো। আদ্রিয়ানের মা আর সাবা এগিয়ে এলো। সাবা বললো,

— কোথায় ছিলি তুই?

— আমিতো বাসায় ছিলাম।

— বলে তো যাবি নাকি? সবাই চিন্তায় শেষ।

আদ্রিয়ান মাকে ওকে বললো,

— মিষ্টিতো কেদে কেটে সব এক করে দিয়েছে।

রোদ মুখ কালো করে বললো,

— সরি।

জারবা এসে বললো,

— ছোট ভাবী ছোট ভাইয়াতো পাগল হয়ে গিয়েছিলো তোমাকে না পেয়ে।

রোদ একটা ঢোক গিলে বললো,

— কোথায় উনি?

— তোমার উনি রুমে।

— ওহ।

যেহেতু এশারের আজান দিয়ে দিয়েছে তাই রোদ উপরে না উঠে নিচে মিষ্টিকে খায়িয়ে দিল। একটু পর রোদের কোলেই মিষ্টি ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ানের মা বললো,

— মিষ্টিকে নিচে আমার রুমে রেখে উপরে যাও।

রোদ মিষ্টিকে শাশুড়ীর রুমে শুয়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে নিজের রুমের দিকে গেল।

নিজের রুমে ডুকে রোদের কপাল কুচকে এলো। পুরো রুমে অন্ধকার। হাতিয়ে লাইট খুজে খুজে রোদ বললো,

— আপনি কি রুমে আছেন? এতো অন্ধকার কেন?

লাইট জ্বালাতেই দেখলো আদ্রিয়ান কাউচে মাথা নিচু করে বসে আছে। রোদকে দেখেই মাথা তুললো। সেট করে রাখা চুল গুলো এলোমেলো, চোখ গুলো ভয়ংকর দেখাচ্ছে কেমন করে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। রোদের হাসি মুখ কেমন বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। এগিয়ে এলো আস্তে আস্তে। আদ্রিয়ান উঠে সোজা হয়ে দাড়ালো। রোদ নিজের জায়গায় দাড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান দরজা লাগিয়ে দিল। রোদকে শুধু বললো,

— কোথায় গিয়েছিলে?

— বাসায়। জানেন..

আর কিছু বলার আগেই এক সজোরে থাপ্পড় পরলো রোদের নরম গালে। হঠাৎ এমন হওয়ার সামলাতে না পেরে রোদ ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পরলো। দাঁতের সাথে বারি লাগে ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পরলো। আদ্রিয়ান হুংকার দিয়ে বললো,

— কাকে বলে গিয়েছিলি তুই? বল? আমি বলেছিলাম না নিয়ে যাব তাহলে কেন গেলি? পাগল করতে চাস আমাকে?কতবার ফোন দিয়েছি?

ভয়ে রোদ ঠোঁট চেপে কান্না করে দিল। আদ্রিয়ান ঐ দিকে না তাকিয়ে রোদের চুলের পেছন দিকে ধরে ওকে উঠিয়ে বললো,

— আর কোনদিন যদি আমাকে না বলে যাস তাহলে দেখবি কি করি।

বলে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে রুম থেকে চলে গেল আদ্রিয়ান। রোদ জোরে কেদে দিল। কখনো কেউ মারে নি যে মেয়েকে সে মেয়ে নিজের বাসায় যাওয়ার মতো সামান্য কারণে যে মার খাবে তা কখনো ভাবে নি। আদ্রিয়ানের দেয়া আঘাতটা কি আদও রোদ সহ্য করতে পারবে? উপরে কেউ না থাকায় কেউ শুনলো না রোদের কান্না। অনেকক্ষণ কেদে ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল রোদ। হালকা ঠান্ডা যদিও তবুও রোদ সাওয়ার ছেড়ে ধপ করে বসে পরলো। আদ্রিয়ান তো কাল বললো যে রোদকে ভালোবাসে সে তাহলে কেন মারলো রোদকে? ভালোবাসার মানুষকে বুঝি কেউ মারে? রোদ ভেবে পেল না। এখানে আর থাকবেনা এটাই হলো রোদের কথা।

রাত ১০ টার দিকে জারবা খেতে ডাকলে রোদ ওয়াসরুমের ভিতর থেকে বললো ও পরে খেয়ে নিবে। জারবা কিছু না বলে নিচে নেমে গেল। ওর মা শুনে একটু চিন্তিত হলো। এতো রাতে মেয়েটা গোসল করছে কেন?

রোদ শরীর মুছে চেঞ্জ করে অন্য একটা প্লাজু আর টিশার্ট পড়ে বের হলো। বারান্দায় টাওয়ার মেলে দিল। চোখ দিয়ে পানি পরছে। ঠান্ডার মধ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কান্না করছে রোদ। গালটা ব্যাথায় টনটন করছে। ঠোঁটের ও একই অবস্থা। এখানে থাকবে না রোদ। মিষ্টিকে আগের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করবে। আদ্রিয়ানের কাছে যাবে না। এসব ভাবতে ভাবতে রুমে ডুকে ঘুমিয়ে গেল রোদ।

______________

রাত ১ টায় বাসায় ফিরলো আদ্রিয়ান। মিটিং সহ নানা কাজে কাটকে গিয়েছিল। বুকের মধ্যে চলমান ঝড় লুকিয়ে বাসায় ডুকলো। আদ্রিয়ানের মা এসে বললো,

— তুই কি রোদকে কিছু বলেছিস?

— কেন?

— রাতে খেল না। জারবা ১০ টায় ডাকতে যেয়ে দেখে এই ঠান্ডার মধ্যে সাওয়ার নিচ্ছে।

— মিষ্টি কোথায়?

— আমার রুমে। রোদ এসেই খায়িয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছিলো।আমি আমার রুমে রেখে দিয়েছি।

— ওহ।

বলে আদ্রিয়ান রুমে চলে গেল। রুমে ডুকে রোদের চেহারাটা দেখে বুকের ব্যাথাটা বেরে গেল। গালের মধ্যে চার আংগুলের ছাপ। ঠোঁটের কোনে রক্ত জমা হয়ে আছে। এক সাইড পুরো ফুলে গিয়েছে। চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কান্না করছে অনেক। আদ্রিয়ান আস্তে করে রোদের সামনে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। চুল গুলো এখনো ভেজা। গালে আস্তে করে হাত দিল যদি ব্যাথা পায়। রাগের মাথায় কি করে ফেলেছে। আদ্রিয়ানের নিজের ওপর রাগ হচ্ছে এখন। রোদকে না পেয়ে তখন নিজেকে পাগল মনে হচ্ছিল। ভয়, রাগ সব রোদের উপর তুলে ফেলেছে।

উঠে যেয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে এলো। রোদকে খাওয়াতে হবে সাথে মেডিসিন আছে। জেল নিয়ে রোদের গালে লাগিয়ে দিল। কাটা ঠোঁটে আলতো চুমু খেল। রোদকে হালকা করে ডাক দিতেই রোদ চোখ খুলে আদ্রিয়ানকে দেখে উঠে সরে গেল। কেদে দিয়ে বললো,

— আমি তো ভ ভেবেছিলাম চলে আ আসব তারাতাড়ি। কি কিন্তু আপনি নিয়ে যান না। মেরেছেন আম আমাকে। আব্বুকে বলে দিব। চলে যাব। থাকব না আপনার সাথে।

কান্নার কারন এ কথা বলতে পারলো না আর। আদ্রিয়ান নিজের ভুল বুঝতে পারল। রোদকে ধরতে গেলে রোদ সরে গিয়ে বললো,

— থাকব না আমি।

কথাটায় যেন বুকে মোচর দিয়ে উঠল।

#চলবে….