ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৩৫+৩৬

0
384

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৫

আদ্রিয়ান মূলত রোদকে হারতে চায় না বলেই রোদকে না পেয়ে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। আর ঐ বাসায় যেতে না দেয়ার কারন হলো রোদের বাসার এমনি চাচা চাচিরা, খালারাও জানে রোদের প্রবলেমের কথা আর কেনইবা রোদের বাবা রাজি হয়েছে। বাই এনি চানস যদি কেউ রোদকে জানায় তাহলে রোদ ভেঙে পরবে এজন্যই আদ্রিয়ান ঐ বাসায় নিয়ে যেতে ভয় পায়। আগে এতো রাগ ছিলো না আদ্রিয়ানের কিন্তু কয়েকবছরে কেমন যেন হয়ে গেল আদ্রিয়ান। হুট হাট রাগ করে বসে। মাথা ঠিক থাকে না। কিন্তু আফসোস তো এখন আদ্রিয়ানের ই হচ্ছে। নিজের উপর নিজেরই বিরক্ত লাগছে।

রোদ খাটের এক কোণে গুটিয়ে বসে আছে আর একটু পর পর হিচকি তুলছে। আদ্রিয়ান আস্তে করে ডাকলো,

— রোদ!

উত্তরে রোদের হিচকিই শুনতে পেল। আদ্রিয়ান আরেকটু এগিয়ে গেল রোদ হয়তো খেয়াল করেনি।আদ্রিয়ান একদম কাছে আসতেই রোদ সরে যেতে চাইলো কিন্তু এর আগেই আদ্রিয়ান দুই হাতে ঝাপটে ধরলো রোদকে। রোদ ছাড়াতে চাইলো কিন্তু পারলো না আদ্রিয়ান শক্ত করে বুকে চেপে রেখেছে। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও ব্যার্থ হয়ে রোদ শান্ত হলো। আদ্রিয়ান রোদের কানের কাছে মুখ ছুয়িয়ে ধীর কন্ঠে বললো,

— আমি অনেক সরি রোদ। তোমাকে না পেয়ে মাথা ঠিক ছিলো না। প্লিজ মাফ করে দাও।

রোদ কিছুই বললো না। শান্ত হয়ে বুকেই রইলো।আদ্রিয়ান বুঝলো আজ আর সহজে কথা বলবে না রোদ। নিজের ভুলটা যে আজ বেশি। একেতো আজ রোদের জন্মদিন ছিল তার মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেল। বরাবরই অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ান তাও শুধু মাত্র রোদের জন্য। অধৈর্য হয়ে বিয়ে করলো, নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলো আবার আঘাতও করে ফেললো। আদ্রিয়ান অনেকক্ষন পরে আবার বললো,

— অনেক ক্ষুধা লেগেছে বউ। সকালের পর কিছু খাই নি।

রোদ কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে চোখ মুছিয়ে ওয়াশরুমে ডুকিয়ে দিল। নিজে যেয়ে খাবার আর দুধ নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান ডুকতেই রোদ বের হলো। রোদকে বসিয়ে নিজ হাতে খায়িয়ে দিল নিজেও খেয়ে নিলো। ঔষধ দিতে কোন শব্দ না করে রোদ খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ান একটু অবাক হলেও কিছু বললো না। দুধে মেডিসিন দিয়ে রোদের সামনে ধরলে রোদ এক ঢোকে সবটুকু খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ান এবার একটু বেশি অবাক হলো। কিন্তু রোদ রাগ করে খেলেও পেট সায় দিলো না।কেমন বমি পাচ্ছে। রোদ ওয়াসরুমে দৌড় দিল আদ্রিয়ান ও পেছন পেছন গেল। বমি আসবে আসবে করেও বমি হলো না। আদ্রিয়ান রোদের চোখে মুখে পানি দিয়ে মুছে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো।শান্ত কন্ঠে বললো,

— এতো রাতে কেন গোসল করেছো রোদ? ঠান্ডাটাও তো ভালোহয় নি। আবার ভেজা চুলে শুয়ে ছিলা।

রোদের কোন উত্তর পেল না। ভেতরে ভেতরে কেমন যানো লাগলো। মেয়েটা কথা কেন বলছে না। ওকি বুঝতে পারছে না আদ্রিয়ান বুকে ব্যাথা হয় ওর কথা না শুনলে। মুখে কিছু না বলে আদ্রিয়ান টাওয়াল দিয়ে ভালোমতো চুল মুছে বেধে দিল। বালিশের কাভার ভিজে বলে চেঞ্জ করে দিলো।
রোদ নিজের মতো করে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান লাইট অফ করে পাশে শুয়ে রোদের দিকে ফিরলো।রোদ একবারও ফিরলো না। মেয়েটা কি ঘুমিয়ে গেল? আদ্রিয়ানের তো ওকে বুকে না নিয়ে ঘুম আসছে না। ও কি বুঝে না? আদ্রিয়ান রোদের হাতের উপর হাত রেখে বললো,

— বুকে আসো।

রোদ কোন কিছু বললো না। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেই ওকে টেনে নিলো। মাথায় চুমু দিয়ে বললো,

— কথা বলো রোদ এভাবে থাকতে পারছি না আমি। কষ্ট হচ্ছে সোনা।প্লিজ টক উইথ মি। সে এনিথিং বাট প্লিজ টক।

রোদ কিছু বললো না শুধু বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে উঠলো। আদ্রিয়ান ও চেপে ধরে বললো,

— কাদে না রোদ। আমি অনেক সরি। আর এমন হবে না।

কিছু সময় পর আদ্রিয়ান খেয়াল করলো রোদ ঘুমিয়ে গেছে তাই নিজেও ঘুমিয়ে পরলো।

_________________

সাকলে রোদকে চার পাঁচ বার ডাকার পর রোদ চোখ খুললো। চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে। গালের লাল দাগটা কমেছে কিন্তু ফুলা কমেনি। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিল। আদ্রিয়ানও হেসে দিয়ে যেই না কিছু বলবে রোদের ওমনি রাতের কথা মনে পরলো। রোদ সরে গিয়ে উঠে পরলো। মিষ্টিকে রুমে দেখে হেসে কোলে তুলে নিল। মিষ্টি ও মায়ের গলা জরিয়ে ধরলো। রোদ ওকে কোলে তুলেই ওয়াশরুমে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিলো।নিজে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে মিষ্টিকে লোশন লাগিয়ে মুখে মশচুরাইজার লাগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান গোমরা মুখ করে বসে আছে। রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলেই বের হয়ে গেল। আদ্রিয়ান হা হয়ে বসেই রইলো। রোদের এমন রিএক্টর করা যদিও জায়েজ কিন্তু আদ্রিয়ান মানতে পারছে না। তারাতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেল।

মিষ্টিকে খাওয়াচ্ছে রোদ। আদ্রিয়ান পাশে বসলেও ফিরে তাকালো না। জারবা খেতে খেতে বললো,

— ছোট ভাবী তোমার গালে কি হয়েছে?

জারবার কথায় সবাই তাকালো রোদের দিকে। রোদ আজ বড় করে ঘোমটা দেওয়াতে কেউ খেয়াল করে নি। ঘোমটা কখন সরে গিয়েছে তাও খেয়াল করে নি। আদ্রিয়ান তাকালো রোদের দিকে। দৃষ্টি পুরো শান্ত। রোদ আস্তে করে বললো,

— রাতে একসাইড হয়ে শুয়েছিলাম তাই চাপ পরেছে হয় তো।

সাবা বললো,

— চোখ কেন ফোলা তোর?

রোদ কিছু বলার আগেই আরিয়ান বললো,

— খেতে দাও ওকে পরে জিজ্ঞেস করো।

রোদ যেন বাচলো। আর আদ্রিয়ান আটকে রাখা শ্বাস ছাড়লো।
মিষ্টিকে খায়িয়ে নিজের জন্য অল্প করে খাবার নিয়ে খেতে লাগলো রোদ। আদ্রিয়ান সব সময়ের মতো আজও নিজের খাওয়া অর্ধেক ব্রেড আর ডিম রোদের প্লেটে দিলো। আদ্রিয়ান ভেবেছিলো রোদ হয়তো খাবে না কিন্তু রোদ চুপচাপ খেয়ে নিলো।

রুমে ডুকে নিজেই মেডিসিন খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ানের আর সহ্য হলো না। এগুলো সব আদ্রিয়ানের কাজ। অনেক মজা নিয়ে করে ও কিন্তু রোদ কেন আজ নিজে নিজে করছে? চোখ মুখ শক্ত করে রোদের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। রোদ কিছু বললো না দেখে আদ্রিয়ান একটু জোরেই বললো,

— কি সমস্যা হ্যাঁ? দোষ করেছি মাফ চেয়েছি। কেন এমন করছো?

— মাফ চেয়েছেন মাফ করেছি। কেন চিল্লাছেন?

আদ্রিয়ান হুট করে মনে হচ্ছে যেন এক রাতে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে রোদ। এত ঘন্টা পর কথা বললো তাও এমন কথা যা বুকে বিধলো। আদ্রিয়ানের রাগ নিমিষেই পানি হয়ে গেল। চোখে আকুল আবেদন নিয়ে রোদের হাত ধরে বললো,

— এমন করো না রোদ আমার সাথে।

রোদ হঠাৎ করে ফিক করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বললো,

— এখন বুঝলেন ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কেমম লাগে?

আদ্রিয়ান বোকা বনে গেল। এই পুচকি বউ ওকে কেমন হেনস্তা করলো। আদ্রিয়ান ও হেসে জড়িয়ে ধরলো। মোহনিয় কন্ঠে বললো,

— এর মানে ভালোবাসো আমায়?

— আমি কি একবার ও বলেছি।

আদ্রিয়ান বুঝলো মেয়ে ভাংবে কিন্তু মচকাবে না। তবুও তোতাপাখিটা যে কথা বলছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। রোদ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

— কফি নিয়ে আসি। মিষ্টিটাও দুধ খেল না এখনো।

বলতে বলতে নিচে নেমে গেল। মিষ্টিকে খায়িয়ে কফি নিয়ে রুমে ডুকে আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে নিজে রেডি হয়ে নিল। আদ্রিয়ান জেলটা আলতো করে আবারো গালে লাগিয়ে দিল। রোদ হেসে বললো,

— চলুন। লেট হচ্ছে।

— তোমার তো আমার কাছে গিফট পাওনা। কি চাও?

— না ভাই আমি আর কোন গিফট চাই না। পেট ভরে গেছে।

বলে নিকাব বেধে নিচে নেমে গেল। আদ্রিয়ান দুঃখী মুখ করে নেমে মিষ্টিকে আদর করে চলে গেল। রোদকে ড্রপ করে নিজে চলে গেল। সিদ্ধান্ত নিলো রোদকে নিয়ে ওদের বাসা থেকে ঘুরিয়ে আনবে মাঝে মধ্যে।

_________________

আজও মেডিকেল শেষে কোচিং এ এসে ২ ক্লাস শেষ করে একটু রেস্ট নিচ্ছিল এমন সময় রাতুল দাত কেলিয়ে এসে পাশে বসলো। রোদ বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। ভদ্রতা বজায় রেখে সালাম জানালো। রাতুলও বেশ ভালো ব্যবহার করে। বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব ও দিয়েছে। রোদ কোন কিছু বলে নি। শুধু ক্লাসের টাইম হয়েছে বলে এরিয়ে গেছে। বাসায় এসে কোনমতে গোসল করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেল রোদ। সারাদিন আজ অনেক খাটুনি গেছে। মিষ্টি সাবার কাছে আলিফের সাথে ঘুম তাই আর ডাকে নি। সন্ধ্যায় হঠাৎ প্রচন্ড পেট ব্যাথায় ধরফরিয়ে উঠলো রোদ। বুঝতে বাকি নেই কি হয়েছে। ওয়াসরুমে ডুকে সব ঠিকঠাক করে বের হতেই আদ্রিয়ানের কল এলো। রিসিভ করতেই আদ্রিয়ান ধমকিয়ে উঠলো কেন এখনো খায় নি। মা দুই বার এসে দেখেছে ঘুমিয়ে ছিল বলে আর ডাকে নি। রোদ কোনমতে বললো,

— আরে এমন করেন কেন? বাসায় এসে অনেক টায়ার্ড লাগছিলো তাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।

— এখন যাও খেয়ে নাও।

— আপনি খেয়েছেন?

— টাইম পাই নি।

— বাহ ভালো তো নিজে খাবে না আমাকে শুধু ধমকাবে।

আদ্রিয়ান রোদকে কনসার্ন দেখে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বললো,

— আমি খেয়ে নিচ্ছি পাখি। প্লিজ তুমি খেয়ে নাও।আমার আসতে লেট হবে।

— আচ্ছা। ভালো মতো আসবেন কিন্তু।

— হু। ভালোবাসি।

উত্তরে রোদ আল্লাহ হাফেজ বলে রেখে দিল। নিজের অনুভূতি নিয়ে এখন দ্বিধায় আছে রোদ। আদ্রিয়ানকে ওর ভালোলাগে, আদ্রিয়ান ছাড়া আর মিষ্টি ছাড়া এখন নিজেকে কল্পনা করে না রোদ। কিন্তু ভালোলাগাটা একটু না বরং বেশি। তবুও এটা ভালোবাসা কি না জানে না রোদ। হয়তো কখনো কাউকে ভালো না বাসার ফলাফল এটা।
ঐদিকে আদ্রিয়ান ও দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। রোদ কি ওর ভালোবাসা বুঝতে পারল না ঠিকমতো।না কি আদ্রিয়ানের ছোট ছোট ভুল গুলো আরো দূরে সরিয়ে দিচ্ছে রোদকে পরক্ষণেই ভাবলো মাত্র তো কয়েকদিনের সম্পর্ক তার মধ্যে অনুভূতি জানালো একদিন ও হয় নি। এরমধ্যে অবশ্যই রোদের মনে ভালোবাসার মতো প্রখর অনুভূতি জাগ্রত হওয়া অসম্ভব। ভাবতেই হালকা হাসল আদ্রিয়ান।

খেতে বসতেই পেট ব্যাথা যেন বেড়ে গেছে রোদের। সচরাচর পিরিয়ডে পেট ব্যাথা হয় না রোদের বছরে চার পাঁচবার হয়তো ব্যাথা হয়। কিন্তু যখন হয় তখন তা অসহনীয় হয়ে যায়। কিন্তু এবার এক ডেটের আগেই হওয়াতে হালকা চিন্তিত হলো রোদ। তবুও তুচ্ছ মনে করে অল্প করে খেল। শাশুড়ী অবশ্য এ নিয়ে অল্প সল্প বকলো কেন এত কম খায়। রোদ কোন মতে কেটে পরলো। মিষ্টিকে হালকা সেনক্স খায়িয়ে দিল। রুমে ডুকে মা আর রুদ্রর সাথে অনেক্ষন কথা বললো। এশারের আজান দিতেই মিষ্টিকে ডিনার করিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো। এখন টিকা যাচ্ছে না পেট ব্যাথা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ব্যাথার ঔষধ রোদ মরে গেলেও খেতে চায় না কারন এতে অভ্যাস হয়ে যায় আর অতিরিক্ত ব্যাথার ঔষধ সেবন করলে কিডনির সমস্যা হয়। এসব ভেবেই রোদ খায় না। কিন্তু লাস্ট সময় না পেরে খেতে হয়। এবাসায় আদ্রিয়ানের সামনে এভাবে থাকা যাবে না। আবার ব্যাথাটাও বাড়ছে না পেরে একটা ঔষধ খেয়ে নিলো রোদ। আধ ঘন্টাপর হালকা কমলে পড়তে বসলো রোদ। রাত ১২ টা পর্যন্ত পড়লো রোদ। সাবা ডেকে গেছে খেতে রোদ জানিয়েছে আদ্রিয়ানের সাথে খাবে। ব্যাথাটা আবার হচ্ছে তাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

________________

১২:৩০ এ আদ্রিয়ান বাসায় ফিরলো। ইদানীং ব্যাস্ততা বেশি। আরিয়ান বাবার বিজনেসে মোটেও ইনট্রাসটেড না আদ্রিয়ান ও না কিন্তু বাবার জোরা জুরিতে মাঝে মধ্যে যেতে হয়।একেতো নিজের কাজ করেই জান যায় তার মধ্যে বাবার জেদের জন্য অফিসের বড় ডিল গুলো আদ্রিয়ানের করতে হয়। আরিয়ান মন চাইলে দুই এক সময় যায় তাও ঠেকায় পড়ে। ক্লান্ত আদ্রিয়ান রুমে ডুকে দেখে রোদ হেটে হেটে পড়ছে। আদ্রিয়ানকে দেখা মাত্র বই রেখে এগিয়ে এলো। আদ্রিয়ান ও একটু এগিয়ে চুমু খেল কপালে। রোদ ওকে ফ্রেশ হতে বলে নিজে খাবার গরম করতে চলে গেল। খাবার আনতেই আদ্রিয়ান বললো,

— তুমি ও আস।জানি রাতে খাও নি।

— প্লিজ আজ জোর করেন না। লেট করে খাওয়াতে পেট এখনও ভরা।

বলে আদ্রিয়ানকে পানি দিয়ে বই নিয়ে কাউচের একসাইডে বসলো।

— হুম বুঝলাম।কাছে আসো।

রোদ কাছে আসতেই এক লোকমা মুখের সামনে ধরল। রোদের চাহনি দেখে আদ্রিয়ান বললো,

— বেশি খাওয়াবো না।

রোদ তিন চার লোকমা খেয়ে আর পারলো না। আদ্রিয়ান খেয়ে উঠলো।রোদ সব গুছিয়ে রেখে আসলো। পেট ব্যাথায় এবার মনে হচ্ছে আবার ঔষধ খেতে হবে কিন্তু কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে মেডিসিন নেয়া যাবে না। আদ্রিয়ান রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে ওর কপাল ছুয়ে বললো,

— কি হয়েছে? চেহারা এমন লাগছে কেন?

— তেমন কিছু না।

— তেমন কিছু কি না সেটা আমি বুঝবো। কি হয়েছে বলো?

রোদ সহজভাবেই বললো,

— পেইন হচ্ছে।

— পিরিয়ড?

— হুম।

আদ্রিয়ান নিচে যেয়ে হট ব্যাগের ভেতর গরম পানি করে ভরে আনলো। রোদ বিছানায় শুতেই তা পেটে চেপে ধরলো। আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— নরমাল ডেটে হয়েছে?

— না।

— পেইন বেশি?

— হুম। সবসময় এতো হয় না। আজ অনেক হচ্ছিল তাই মেডিসিন নিয়েছিলাম বাট আবার বেড়ে গেছে।

— ওয়েট তুমি মেডিসিন নিয়েছো?

— হুম।অনেক পেইন ছিলো।

আদ্রিয়ান বিরবির করে বললো,

— মেডিসিন নেয়াটা কি ঠিক হলো?

— কি বিরবির করছেন?

— কিছু না।

বলে ব্যালকনিতে এসে আরিয়ানকে কল করলো। সব শুনে আরিয়ান কাল ডক্টরের সাথে দেখা করতে বললো।

__________

এদিকে জাইফা রোজ রোজ রাদকে কল করে। ওর নাম্বার ব্লক করায় ফ্রেন্ডদের টা দিয়ে কল করে। রাদ কয়েকবার ধমক টমক দিয়েছে। না পেরে শান্ত স্বরে বুঝিয়েছে বাট লাভ হয় নি। জাইফা মনে করে ওর মা রোদের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় হয়তো রাদ ওর সাথে এমন করে। দিনে দিনে জাইফা যেন আরো বেশি ভালোবেসে ফেলছে রাদকে কিন্তু রাদ পাত্তা দেয় না।জাইফ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না। মায়ের সাথে কথা বলছে না ঠিক মতো। জাইফা মনে মনে বলে,

— আমি ভালোবাসি রাদ। কেন বুঝেন না আপনি? আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি।

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৬

জাইফার আচরন দিন দিন উগ্র হয়ে যাচ্ছে। এক তরফা ভালোবাসার আগুনে খুব ভালোভাবেই পুরছে। রাদের প্রতি তার কোন মোহ কাজ করে না কাজ করে যন্ত্রণা এক বুক যন্ত্রণা। যা সে না কাউকে বলতে পারছে না রাদকে বুঝাতে পারছে। আজও সে ভার্সিটি ফাকি দিয়ে রাদর অফিসের সামনে দাড়িয়ে ছিলো। নিজেকে যথাসম্ভব মার্জিত করে সাজিয়েছিলো।কখনো হিজাব না পড়া মেয়ে হিজাব পড়েছিলো।ভেবেছিলো রোদ যেহেতু সবসময় হিজাব পড়ে হয়তো তার ভাইও এমনটা পছন্দ করে।এরআগেও সে রাদের অফিসের সামনে এসেছিলো। রাদ যেন দেখেও দেখি নি। আজ জাইফা নিজেকে প্রস্তুত করে এসেছিলো। রাদকে সে আজ বুঝাবেই সে কতটা ভালোবাসা পোষণ করছে রাদের প্রতি। রাদের গাড়ি থামতেই জাইফা রাদের সামনে চলে আসে। রাদ কিছু বলার আগেই জাইফা বললো,

— আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি রাদ।প্লিজ ফিরিয়ে দিবেন না আজ। আমি আমার মায়ের মতো না৷ প্রয়োজনে আমি রোদের কাছে মাফ চাইবো।

সকাল বেলা সকালে রাদের মেজাজ খারাপ করার জন্য এটাই যথেষ্ট ছিলো। সজোরে থাপ্পড় পরলো জাইফার গালে। দমলো না জাইফা। ভালোবাসা তাকে বেহায়া করে দিয়েছে। রাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— ফারদার আমার সামনে এসব বেহুদা পেচাল পারবে না। ভালোকরে বুঝিয়েছি বাট তুমি ভালোবুঝার মানুষ না। এরপর আমার সামনে এসব বললে আমি রোদের কথা ভুলে যাব যে তুমি কোন ভাবে আমাদের আত্মীয়।

বলই গটগট করে হেটে ভিতরে চলে গেল রাদ। জাইফাও অনেকক্ষণ পর বাসায় ফিরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। মা অনেকবার ডাকলেও খুলে নি সে।

_______________

রোদকে নিয়ে হসপিটাল এসেছে আদ্রিয়ান। রোদ সারা রাস্তা কেন যাচ্ছি, কি হয়েছে, পেট তো আগেও ব্যাথা হতো ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করতে করতে আদ্রিয়ানের মাথা হেং করে দিয়েছে। ডক্টরের কেবিনে বসে আছে আদ্রিয়ান, রোদ আর রিশান। ডক্টর শাহ্ আসতেই রিশান চলে গেল। উনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রোদ প্রায় হাফিয়ে উঠলো।উনি সব শুনে আদ্রিয়ানের সাথে একা বলতে চাইলেই রোদ বললো,

— আমার প্রবলেম আমাকে বলুন।

আদ্রিয়ান চোখ গরম করলে রোদ আর কিছু বললো না। ডক্টর শাহ্ হেসে উঠল। বললো,

— তেমন কিছু না রোদ। এমনিতে কিছু কথা ছিলো। তুমি চাইলে থাকতে পারো।

রোদ একটু ইতস্তত করে বললো,

— সরি। আচ্ছা আমি বাইরে আছি।

বলে উঠে গেল। রোদ যেতেই আদ্রিয়ান চিন্তিত মুখ করে তাকালো।ডক্টর শাহ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— লুক আদ্রিয়ান মেডিসিন তিন দিন নেয়ার পর পিরিয়ড শুরু হওয়াটা আমি ভালোভাবে দেখতে পারছি না। তার মধ্যে ব্যাথার মেডিসিন নেয়াটাও ঠিক হলো না। যেহেতু রোদের রেগুলার পেইন হয় না তাই আমি মনে করছি তুমি এই ব্যাপারে এক্সপার্ট ডক্টর দেখাও। আর রইলো খাদ্য নালির সমস্যা তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ১৫ দিন পর এসে মেডিসিন চেঞ্জ করে নিয়ে যেও। আর হালকা একটু বেশি খেতে জোর করো আশা করি ১ সপ্তাহের মধ্যে রুচি একটু হলেও বাড়বে। আর ইনজেকশনটা আজ দিয়ে নিও।

আদ্রিয়ান একদিক থেকে সস্তি পেলেও আরেকদিক থেকে অস্থির হয়ে আছে। ডক্টরের সাথে কথা শেষ করে বের হতেই রোদকে খুজতে লাগলো। আশে পাশে না পেয়ে কপাল কুচকে এলো। সামনের করিডরে যেয়ে যেই না ফোন দিবে ওমনি দেখলো রোদ খুশি মনে কারো সাথে অপরিচিত একজন লোকের সাথে কথা বলছে। কপালের ভাজ আরেকটু বেড়ে গেল। আদ্রিয়ান ভাবছে হয়তো রোদের পরিচিত কিন্তু সামনে যেয়ে দেখলো লোকটির কোলে সদ্য জন্মানো ফুটফুটে একটি বাচ্চা। রোদ ও অনেক মনে দেখে যাচ্ছে। একটু পরই নার্স এসে বাচ্চা নিয়ে গেল। আদ্রিয়ানকে আসতে দেখেই রোদ বললো,

–মিস করলেন। একটু আগে আসলে এই ভাইয়ার বেবি দেখতে পেতেন। অনেক কিউট হয়েছে। একদম পুতুলের মতো মাশা-আল্লাহ।

আদ্রিয়ান রোদর হাস্যজ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, মেয়েটা বাচ্চাদের কত পছন্দ করে। অথচ আল্লাহ তার জন্য এই সুখের পথটা কঠিন করে দিয়েছে। আবার ভাবলো যদি রোদের এই সমস্যাটা না থাকতো তাহলে তো রোদ আজ আদ্রিয়ানের কাছে থাকতো না। রোদের বাবা মা নিশ্চয়ই এমন কারো সাথে মেয়ে বিয়ে দিত না যায় নাকি আগে থেকে সাড়ে তিনবছরের মেয়ে আছে। কিন্তু যাই হোক আদ্রিয়ান নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে এই সমস্যা থেকে রোদকে বের করতে। আদ্রিয়ান রোদের হাত ধরে বললো,

— চলো ঐ দিকে কাজ আছে।

রোদ পেছনে ফিরে বললো,

— ভাইয়া আবার দেখা হবে।আল্লাহ হাফেজ।

উত্তরে লোকটা হেসে বিদায় দিলো।আদ্রিয়ান এগুতে এগুতে বললো,

— অচেনা কারো সাথে কথা বলতে নেই। মিষ্টিকে এসব বুঝাও কিন্তু নিজে বুঝো না।

— আমি তো বেবি দেখতে গিয়েছিলাম। আপনিই তো বের হচ্ছিলেন না।আল্লাহ জানে ছেলে ছেলে কিসের পার্সোনাল কথা।

–ছিঃ রোদ! কেমন কথা এগুলো।

রোদ হাসতে হাসতেই বললো,

— যা সত্যি তাই বললাম।

— বাসায় চলো এরপর বুঝাচ্ছি।

— এখন কোথায় যাচ্ছি? বাসায় যাব না?

— না কাজ আছে একটু।

________________

আরিয়ানের কেবিনে বসে আছে রোদ আর আদ্রিয়ান। একটু পর রিশান এসে বললো,

— আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে আয়। সব রেডি করেছি।

আরিয়ান বললো,

— রিশান এখানে পাঠিয়ে দাও। ওখানে যেতে হবে না।

— ওকে।

বলে রিশান চলে গেল। একজন নার্স এসে বললো,

— ম্যাম আসুন।

— কোথায়?

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই আরিয়ান বললো,

— রোদ একটা ইনজেকশন পুস করতে হবে।

— কেন ভাইয়া?

— তোমাকে প্রতি সপ্তাহেই নিতে হবে এটা। মেডিসিন রেগুলার নিলে হয়তো পরে আর নিতে হবে না।

রোদ কিছুই বললো না কারণ এটা রোদের প্রশ্নের উত্তর না। রোদ বুঝতে পারল হয়তো বলতে চাইছে না। আদ্রিয়ানকে অবাক করে দিয়ে রোদ উঠে সাইডের চেয়ারে বসলো। আরিয়ানই ইনজেকশন নিলো পুস করার জন্য। রোদ নার্সকে শুধু বললো,

— আপু আমি আপনার হাত ধরি একটু?

— সিউর ম্যাম।

আদ্রিয়ান অবাক না হয়ে পারলো না। ও যতটুকু জানে রোদ কাউকে ইনজেকশন পুস করতে ভয় পায় না কিন্তু নিজে দিতে ভয় পায়। রাদই বলেছে এটা। তাহলে আজ এতো শান্ত কেন?চেহারায় ভয় স্পষ্ট কিন্তু কিছু বলছে না। নার্সের হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। আদ্রিয়ানের কষ্ট লাগলো রোদ কেন আদ্রিয়ানের হাত ধরলো না? আরিয়ান ইনজেকশন নিয়ে আসতেই আদ্রিয়ান নার্সকে সরিয়ে নিজে রোদের পাশে দাড়িয়ে রোদকে ঘুরিয়ে নিল। নিজের বাহুতে আটকে নিলো। রোদ কিছু না বলে শুধু আদ্রিয়ানের পেটে মুখ গুজে শক্ত করে ধরে আছে। আরিয়ান আস্তে করে পুশ করতেই রোদ “উফ” বলে উঠলো। আরিয়ান বললো,

— হয়ে গেছে।

রোদের চোখ, মুখ লাল হয়ে আছে তবুও কিছু বললো না। আাবার অন্য ডক্টর দেখিয়ে বের হলো। গাড়িতে হেলান দিয়ে রোদ বললো,

— কি সমস্যা আমার?

আদ্রিয়ান চমকালেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,

— মানে? জানোই তো তোমার খাদ্য না…

— সত্যিটা জানতে চাইছি।

আদ্রিয়ানের কথার মধ্যেই রোদ বললো।

— সত্যিই তো বললাম।

— আমি বোকা না। খাদ্য নালির সংকোচন এর সাথে পিরিয়ডের কি সম্পর্ক? আর দ্বিতীয় জন যে গাইনি চিকিৎসক ছিলো তা আমি জানি।অযথা মিথ্যা কেন বলছেন?

আদ্রিয়ান এবার হালকা ঘামতে গুরু করলো। ধীর কন্ঠে বললো,

— তেমন কিছু না রোদ। বিশ্বাস না করলে আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করো। আমি জাস্ট চাচ্ছি তুমি ঠিক থাকো।

রোদ কিছুই বললো না। শুধু বললো,

— তারাতাড়ি করুন। ১২ টায় ক্লাস আছে।

_____________

৩টা বাজে। রোদের ক্লাস মাত্র ই শেষ হলো। রোদের ফোনে কল আসতেই তা রিসিভ করতেই কেউ একজন বললো,

— হ্যালো এটা যার ফোন তিনি এক্সিডেন্ট করেছেন। ফোনরা রাস্তায় গাড়ির পাশে ছিলো। লাস্ট কল আপনার ছিলো বলে কল করলাম। আপনি সিটি হসপিটালে চলে আসুন।

রোদ শুনে যেন হা হয়ে গেল। এক্সিডেন্ট! মুখ দিয়ে কিছু বের হলো না। সব কেমন লাগছে। রোদের মাথা ঘুরছে নাকি পৃথিবী ঘুরছে বুঝলো না রোদ। পরে যেতে নিলেই ইয়াজ দৌড়ে এসে ধরে পাশে বসালো। বার বার বললো,

— এই রোদ কি হয়েছে? খারাপ লাগছে তোর? বল।

রোদ কিছু বলতে পারলো না। হঠাৎ করে হাউমাউ করে কেদে উঠলো। ইয়াজ এবার ভালোই ভয় পেয়ে গেল। রোদের হাত ঝাকিয়ে বললো,

— বল কি হয়েছে।

রোদ কান্নার জোরে কিছুই বলতে পারলো না। অনেক কষ্টে বললো,

— সিটি হসপিটালে চল।

ইয়াজ কিছু না বলে রোদকে বাইকে তুলে সিটি হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হলো। হসপিটালে ডুকেই রোদ এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার ফোন দিলো ওই নাম্বারে।রিসিভ হতেই ওই লোক ধরে বললো,

— আপনি এসেছে?

— কো কোথায়?

— ৩ নং ফ্লোরে ৩০৫ নং রুম।

শুনে রোদ আর কিছু বললো না। দৌড় লাগালো ৩০৫ নং রুমের দিকে। ইয়াজও দৌড়ে গেল রোদের পিছনে। লিফটে ভীর দেখে সিরি দিয়ে দৌড়ে উঠলো। একেতো নিজের শরীর খারাপ তার মধ্যে দৌড়ের জন্য পেটে চাপ পড়লো। কান্নার কারনে সব ঝাপসা মনে হচ্ছে। নিদিষ্ট রুমের বাইরে এসে ডুকার সাহস পেল না রোদ। কেমন অবস্থায়, কি ভাবে কি হয়েছে তা জানা নেই রোদের। হঠাৎ একজন লোক এসে বললো,

— আপনি কি সেই?

ইয়াজ এসে লোকরার কাছে সব শুনে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ভেতরে চল।

রোদ অশ্রু সিক্ত নয়নে ইয়াজকে দেখে দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো। যাকে ভেবে এতক্ষণ কেদে কেটে অস্থির ছিলো রোদ সেই লোক বেডে পা ঝুলিয়ে বসে হেসে হেসে কথা বলছে ডক্টরের সাথে। রোদ কোন কিছু না বলে ওখানেই গেয়ান হারালো।

#চলবে……

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৬(বর্ধিতাংশ)

রোদের হঠাৎ করে মনে হচ্ছে বৃষ্টি পরছে। বৃষ্টিতে ভিজে হয়তো রোদ পুরো চুপচুপা হয়ে যাচ্ছে। না পেরে টেনেটুনে চোখ খুললো রোদ। না বৃষ্টি নেই কিন্তু কেউ চিন্তিত হয়ে পানি ছিটচ্ছে রোদের চোখে মুখে। টান টান চোখ খুলে দেখলো একজন নার্স পানি ছিটচ্ছে। বিরক্ত হলো রোদ। সামনেই ইয়াজ চিন্তিত মুখে দাড়ানো পাশে আদ্রিয়ানের কয়েকজন বন্ধু। অয়ন,রিশান, প্রান্ত, প্রনয়। আরিয়ান রুমে ডুকে বললো,

— গেয়ান ফিরেছে?

রোদের চোখ এখনও শান্ত হয় নি। যাকে খুজছে সে কোথায়? ইয়াজ বললো,

— হ্যাঁ গেয়ান ফিরেছে। কেমন লাগছে রোদ? ঠিক আছিস?

উত্তর না দিয়ে রোদ কেদে দিয়ে বললো,

— উনি কোথায়?

— আমি এখানে রোদ।

রোদ খেয়াল করলো ও বেডে না কারো কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। একহাতে জড়িয়ে আছে রোদকে। মাথা তুলে রোদ আদ্রিয়ানকে দেখা মাত্র ওকে ঝাপটে ধরে কেঁদে উঠলো।আদ্রিয়ান ভালোহাতটা দিয়েই রোদকে আগলে ধরলো। রোদের কান্না থামার নাম নেই।আদ্রিয়ান কত করে বলছে ঠিক আছি, কিছু হয় নি কে শুনে কার কথা। অনেকক্ষণ পর একটু থামলো হিচকি তুলছে এখনও। ইয়াজ মজা করে বললো,

— ভাইরে ভাই থাম এবার তোর জামাই ঠিক আছে। তুই কি মরার কান্না শুরু করছিলি। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।

আরিয়ান, অয়ন,রিশান, প্রান্ত আর প্রনয়ও হেসে উঠল। অয়ন বললো,

— ভাই আমার বউ তো এতবছরেও আমার জন্য এমনি কান্না করেনাই।

রিশান বললো,

— তুই চুপ থাক। তুই তো মেয়েটাকে শান্তি দেস না।

প্রান্ত বিরক্ত হয়ে বললো,

— তোরা দুইটা আবার শুরু হইলি। আমি বুঝি না দুইটা একসাথে এতবছর কেমনে একসাথে আছিস?

রোদ চুপচাপ আদ্রিয়ানের বুকে লেগে ফুপিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান হেসে বললো,

— দুইজন বাসায় যাবি নাকি জামাই বউ হসপিটালেই থাকবি?

রোদ নড়েচড়ে উঠে বসলো। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ভাইয়া বাসায় কেন যাব? উনি অসুস্থ না?

আদ্রিয়ান হেসে বললো,

— রোদ তাকাও আমার দিকে।

রোদ তাকালো দেখলো আদ্রিয়ানের ডান হাত ব্যান্ডেজ করা,কপালে ব্যান্ডেজ, পায়ে হাটুর পর্যন্ত প্যান্ট তুলে সাদা ব্যান্ডেজ করা। গালের সাইডে আচর লাগা আর বা হাতে আচর লাগা। রোদ আবারও কেদে দিয়ে বললো,

— কীভাবে এক্সিডেন্ট হলো?

— আহা আর কাদে না রোদ। গাড়ির ব্রেক ফেইল করেছিলো তাই জাম্প করেছিলাম গাড়ি থেকে তাতেই যা লেগেছে। এখন ঠিক আছি।

অবশেষে মেডিসিন নিয়ে রোদকে নিয়ে গাড়িতে বসলো। এতক্ষনে বাসায়ও জেনে গিয়েছে। ইয়াজ বিদায় নিয়ে গাড়িতে করে রওনা দিল। বাকি বন্ধুরাও চলে গেল। আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিলো। রোদ আর আদ্রিয়ান পিছনে বসে। আদ্রিয়ান সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে। রোদ ঘেষে বসে আছে। আজ ওর কেমন লেগেছে তা কেবল ওই জানে। মনে হচ্ছিল কিছু হারিয়ে ফেলেছে। বুকের মধ্যে ব্যাথা হচ্ছিল। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। কয়েক দিনের পরিচয়ে এতটা কিভাবে আপন হয়ে গেল? আজ কিছু হলে রোদ কি করতো? মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যেত। ভাবতেই চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। হঠাৎ একটা হাত তা মুছে দিলে রোদ চমকিয়ে তাকালো। আদ্রিয়ান হালকা হেসে বললো,

— আর না।

______________

বাসায় ডুকে সবার একদফা প্রশ্ন আর মায়ের কান্নায় ভেঙে পড়া থামালো আদ্রিয়ান। আরিয়ান ওকে ধরে ধরে উপরে নিয়ে গেল। মিষ্টি এখনও দেখে নি। ও জারবার আর আলিফের সাথে পার্কে আছে। রোদ আসার পর থেকে যাওয়া হয় না৷ বাসায় মা থাকতে আর কিছুর প্রয়োজন পরে না। রুমে বিছানায় বসিয়ে আরিয়ান ওকে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে মেডিসিন নিতে বললো। সাবা আর আরিয়ানের মা কে বের হতে বললো। যাওয়ার আগে সাবা দরজা ভিরিয়ে গেল। রোদ নিজের এপ্রোন আর হিজাব খুলে আদ্রিয়ানের একটা টিশার্ট আর টাউজার বের করলো। আদ্রিয়ানের সামনে দাড়িয়ে বললো,

— চেঞ্জ করতে হবে তো?

— হু। দাও।

— কিভাবে করবেন আজব? হাতে পায়ে ব্যাথা না।আমি হেল্প করছি।

কোন লজ্জা, ইতস্তত ছাড়া রোদ আদ্রিয়ানের শার্টের বোতামে হাত দিলো। আদ্রিয়ান নিজে প্রথমে চমকে গেলেও পরে রোদকে সাহায্য করলো। রোদ শার্ট খুলে ভেতরের গেঞ্জিটাও খুলে দিল। টাওয়াল ভিজিয়ে এনে আদ্রিয়ানের চেহারা সহ সারা শরীর মুছে দিল। যথাসম্ভব পা ও মুছিয়ে দিল। আবার শুকনো টাওয়াল দিয়ে মুছে দিয়ে বললো,

— আসুন ওয়াসরুমে যাবেন না?

আদ্রিয়ান উঠতে নিলে রোদ হেল্প করলো। রোদের কাঁধে ভর দিয়েই ওয়াসরুমে ডুকলো। প্যান্ট চেঞ্জ করে বাকি কাজ সেরে ১০ মিনিট পর বের হলো। রোদ দরজায়ই দাড়িয়ে ছিলো। আদ্রিয়ানকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। মেডিসিনের সাথে আনা ক্রিমটা আচারের জায়গায় আলতো করে লাগিয়ে দিল। লাগিয়ে আবার ফু দিয়ে বলছে,

— জ্বলছে? ঠিক হয়ে যাবে।

আদ্রিয়ানের হাসি পেল এমন ভাবে বলছে মনে হয় আদ্রিয়ান বাচ্চা। রোদ আংগুল দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে দিলো। আদ্রিয়ানকে শুয়িয়ে দিয়ে পায়ের নিচে আর হাতের নিচে বালিশ দিয়ে নিজে গোসলে চলে গেল। ছটপট করে ১৫ মিনিটে বের হলো রোদ। মাথায় এখনো টাওয়াল পেচানো। টিশার্ট আর প্লাজু পড়ে আছে। শাশুড়ী নক করতেই ওরনা গলায় জড়িয়ে নিলো। রোদ দরজা খুলে বললো,

— আমি তো যেতাম। ওনাকে আবার মেডিসিন দিতে হবে।

— দুই জনই রুমে খেয়ে নে। আমি আসছি একটু।

বলে উনি চলে গেল। রোদ খাবারগুলো রেখে আদ্রিয়ানকে ডাক দিলো। আদ্রিয়ান চোখ মেলে রোদকে দেখে হাসলো যা রোদের মন ঠিক করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। রোদ ওকে উঠে বসতে সাহায্য করলো। বসিয়ে নিজে ভাত মেখে আদ্রিয়ানের মুখের সামনে ধরল। আদ্রিয়ানের মনে হচ্ছে আল্লাহ যা করেন ভালোজন্যই করেন। নাহলে বউয়ের এতো সেবা সে কোনদিনও পেত? আদ্রিয়ান রোদকে বললো,

— তুমিও খেয়ে নাও রোদ। কিছু খাও নি। এই দূর্বল শরীর নিয়ে স্বামী সেবা কিভাবে করবে হুম?

রোদ কিছু বললো না। ওকে খায়িয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ানের মুখ মুছিয়ে কম্বল দিয়ে পেট পর্যন্ত ডেকে দিলো।নিচে সব রেখতে যেয়ে দেখলো মিষ্টিরা এসে পরেছে। মিষ্টিকে নিয়ে রুমে ডুকে ওকে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। মিষ্টি হঠাৎ করে আদ্রিয়ানের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে কেদে উঠলো। বাবার কাছে যেয়ে কেদে কেটে অস্থির। আদ্রিয়ান একহাতে বুকে চেপে ধরে মেয়েকে এটা ওটা বলে কান্না থামালো। মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে ১০ মিনিট হবে।রোদ রুমে মিষ্টির জন্য ঝটপট করে নুডুলস রান্না করলো সাথে চকলেট দিয়ে দুধ গুলিয়ে নিল। রুমে ডুকতেই মিষ্টিকে ফুপাতে দেখেই ট্রে টেবিলে রেখে ছুটে রেখে বললো,

— মিষ্টি মা কি হয়েছে? দেখি ব্যাথা পেয়েছো?

আদ্রিয়ান ওকে শান্ত হতে বলে সব খুলে বললো। রোদ সস্তির শ্বাস ফেলে বললো,

— আসো মা। বাবাইয়ের কিছু হবে না।

বলে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিতেই মুখ দিয়ে অস্পষ্ট “আহ” বের হলো। যত যাই হোক যেভাবে রোদ এ অবস্থায় দৌড়েছে, সারাদিন ক্লাস করে আবার আদ্রিয়ানকে নিয়ে এসেও এখনো একটু রেস্ট নেয় নি। সবসময় দূর্বল রোদ যেন একদিনে একজন আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা হয়ে গিয়েছে। আদ্রিয়ান রোদকে বললো,

— রোদ!

— হুম।

— কোলে নিও না এখন। সমস্যা হবে।

— কিছু হবে না।

বলে রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলে কাউচে বসিয়ে খাওয়াতে লাগলো। মিষ্টি সারা পার্কে কি করেছে না করেছে সব বলতে লাগলো। হুট করেই জারবা এসে আদ্রিয়ানের পাশে বসে একদফা কান্না করলো। বেচারী জানতো না এতক্ষন। আদ্রিয়ান বরাবরের মতোই সান্তনা দিয়ে বিদায় করলো। মিষ্টি খেয়ে আবার নিচে গেল। রোদ ও সব রেখে রুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান ঘুমিয়ে আছে দেখে রোদও কাউচে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে পরলো। শরীরে কুলাচ্ছে না আর। তল পেটে চিনচিন ব্যাথা করছে।

রাতে আজ মিষ্টি জারবার রুমে ঘুমালো। রোদ ওখানে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ানের শরীরে ভুলে হাত পা পরলে কী একটা অবস্থা হবে। রোদ নিজেও চিন্তিত তাই ভেবেছে আজ রাতে ঘুমাবে না। আল্লাহ না করুক রোদের যে ঘুম। মাথা একদিকে তো পা আরেকদিকে উল্টো করে ঘুমায়।রাতে আদ্রিয়ানকে মেডিসিন খায়িয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ান জারবাকে দিয়ে রুমে দুধ আনিয়ে সব ঠিক করে রেখেছিলো। এতক্ষন সবাই ওদের রুমে ছিলো। ওরা যেতেই রোদ ওরনা খুলে চুল আচরিয়ে বেনী করে নিলো। আদ্রিয়ান ওকে ডেকে দুধ খেতে বললেই রোদ নাক মুখ কুচকে বললো,

— আজতো মাফ করতেন।

— খেয়ে নেও সোনা।

কি আর করার। দুধ খেয়ে নিলো রোদ। লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালায়ে আদ্রিয়ানের পাশে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান বা হাত দিয়ে ওকে টেনে বুকে তুললো। রোদ ফুপিয়ে উঠলো। আদ্রিয়ান জানতো ওর বোকারানী যে কান্না করছে। রোদ আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে বললো,

— আমি ভয় পেয়েছিলাম।

— জানিতো সোনা। আর কাদে না।

— কিছু হলে কি করতাম আমি?

— কিছু হয় নি তো। কিন্তু কিছু হলে আফসোস রয়ে যেত।

— কিসের?

— এই যে ভালোবাসির উত্তর পেলাম না।

রোদ আর কোন উত্তর দিল না। চুপচাপ আদ্রিয়ানের বুকের ভেতরের টিপটিপ আওয়াজ শুনাতে মনোযোগ দিল।
__________________

জাইফার বাবা অনেক কষ্টে মেয়ের রুমের দরজা খুলেছে। জাইফা বিছানায় শুয়ে ছিলো। বাবা এসে মাথায় রাখলো। জাইফা বাবাকে পেয়ে হাউমাউ করে কেদে উঠলো। ওর বাবার বুকটা মোচরে উঠলো। তার এত আদরের মেয়ের কি হলো? কিসের জন্য এই পানি? জানতে চাইলেও জাইফা উত্তর দিলো না। কি বলবে যাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সে তার দিকে ফিরেও তাকায় না।

আদ্রিয়ানের খবর জানতে পেরে সবাই বিচলিত হয়ে পরলো। রাতে যাওয়া সম্ভব না বলে কাল সকালেই যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। জাইফ এসে জাইফার সামনে বসলো।মাথায় হাত দিয়ে বললো,

— বল তো জাইফু সত্যি করে কি হয়েছে?

ভাইয়ের আদর মাখা কন্ঠে সব খুলে বললো জাইফা। উত্তরে জাইফ কি বলবে জানা নেই। এতো আর মেয়ে না যে তুলে নিয়ে এসে জোর খাটাবে। এত বড় দামরা ছেলেকে আর যাই হোক জোর করা যায় না। বোনকে সান্ত্বনা দিতে বললো সে কথা বলবে রাদের সাথে।

___________

সকালে রোদ নিজে আদ্রিয়ানের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে রুমে এনে খাওয়ালো। কপালের ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করে ছোট একটা ব্যান্ডেজ করে দিলো। আচারের জায়গায় মলম লাগিয়ে মেডিসিন খায়িয়ে দিল। আলত করে আদ্রিয়ানের কপালে কোন সংকোচ ছাড়া ঠোঁট ছুয়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো কফি আনতে। থাকলে হয়তো বিস্বয় ভরা আদ্রিয়ানের চেহারাটা দেখতে পেত।

খাওয়া দাওয়া শেষে কলিং বেল বাজতেই সাবা খুলে দিল। আগত অতিথির চিনতে না পারলেও রাদকে চিনতে পারলো। সাথে বুঝলো বাকি দুজন ভদ্রলোক আর মহিলা রোদের বাবা মা আর ছেলেটা রুদ্র। সাবা সালাম দিয়ে হেসে তাদের ভিতরে আসতে বললো। রোদ হঠাৎ নিজের বাবা মা আর ভাইদের দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ানের বাবা মা আর আরিয়ানও ব্যাস্ত হয়ে পরলো। তারা বসে সবাইকে ব্যাস্ত হতে না করে বললো আদ্রিয়ানকে দেখতে এসেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই দুইজন লোক অর্ধেকর বেশি ড্রইং রুম ভরে ফেললো নানা রকমের মিষ্টি, ফলমূল, বড় বড় মাছ,মুরগি, গরুর রানের পিস সহ বিভিন্ন খাবারে। ঢাকাইয়ারা খাবারের প্রতি কতটা সোখিন তা দেখিয়ে দিলো রোদের পরিবার। সবাই যেন একটু ঝটকা খেল এতো কিছু দেখে।
সবাইকে নিয়ে রোদ উপরে গেল। মিষ্টি গোলগোল চোখে দেখে যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারলো না। রুমে ডুকে রাদ ওকে কোলে তুলতেই রোদ বললো,

— মিষ্টি সোনা তোমার বড় মামা হয় উনি।

মিষ্টি ডেকে বললো,

— মামা।

রাদের মামা ডাক শুনে নিজেকে দায়িত্বশীল মনে হচ্ছে। রুদ্র মিষ্টিকে কোলে নিতে চাইতে চাইতে বললো,

— আমি ও নিব ভাইয়া। আমাকে দাও।

রাদ ধমকে বললো,

— পারবি না তুই। যদি ফেলে দেস।

— দাও না। প্লিজ ভাইয়া।

রোদ বিরক্ত হয়ে হালকা ধমক দিয়ে বললো,

— দেখ আলুর বস্তা চুপ থাক। পরে নিস।

আবার রাদকে বললো,

— ভাইয়া রুদ্রকে দাও ওতো ছোট মামা।

রুদ্রর হঠাৎ নিজেকে বড় বড় মনে হচ্ছে। ও নাকি মামা।মিষ্টিও রুদ্রকে মামাকে বলে ডাকলো। রুদ্র খুশি হয়ে নিজের মাকে বললো,

— আম্মু দেখ আমাকে মামা ডেকেছে।

ওদের কান্ডে সবাই হেসে উঠল। আদ্রিয়ান একটু ইতস্তত করলো। ওর শশুর শাশুড়ী শালা প্রথম বার আসলো আর ওকি না শুয়ে আছে। রোদের পরিবার চলে যেতে চাইলে কেউ তাদের যেতে দিবে না। অবশেষে তারা ওয়াদা দিলো আবার আসবে বলে। তারা চলে যেতেই আদ্রিয়ানের মামা মামিরা এলো। ড্রইং রুমে এতো কিছু দেখে মামা জিজ্ঞেস করতেই আদ্রিয়ানের মা সব বললো। বড় মামির চক্ষু চড়কগাছ এতোকিছু দেখে। জারবা হঠাৎ বললো,

— বুঝলেন মামি ছোট ভাবীর পরিবার ডালা নিয়ে এসেছিলো।খেয়ে যাবেন কিন্তু।

#চলবে……