ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৪২+৪৩

0
378

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪২

আদ্রিয়ানের বাড়ীর লোকজনরা আসতেই রোদ সাবাকে জড়িয়ে ধরে। খুশিতে গদগদ হয়ে সাবাকে নিয়ে বসালো। ইয়াজ ও এলো একটু পর। জারবা, আলিফ আর মিষ্টি ঘুরে ঘুরে রোদের সব কাজিনদের সঙ্গে খেলতে লাগলো। রোদের পুরো পরিবার নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে খাতির যত্ন করলো মেয়ের শশুর বাড়ীর। আদ্রিয়ানের মা একটু মনমরা হয়ে ছিলেন যা বেশিক্ষণ টিকতে দেয় নি রোদের মা চাচিরা। সবাই কেমন যেন মিশুক প্রকৃতির। চাচি তো মাঝে মধ্যে ছ ছ করে কথা বলায় জারবা ফিক করে হেসে উঠল। সাবা ওর হাত চেপে ধরে না করলো।সবাই অনেক আনন্দ করলো একসাথে। এ যেন পুরো বিয়ে বাড়ি থেকে কোন অংশে কম না। রাতে সবাই চলে গেল কিন্তু থেকে গেল জারবা। রোদ ই যেতে দেয় নি। এরমধ্যেই কথা উঠেছিল আদ্রিয়ান আর রোদের একটা রিসিপশন হওয়ার। আদ্রিয়ান মতামত দিয়েছে, রোদ জানে না এ বিষয়ে। আদ্রিয়ান মনে করে রোদের মতো ছোট্ট বউকে বিয়ের সাজের অধিকার আছে। হুট করেই তো ওকে বিয়ে করে নিলো। এখন যেহেতু রোদ একটু সহজ হয়েছে তাই অনুষ্ঠান করাই যায়। একমাত্র মেয়ে মি.রহমানের তারও অনেক স্বপ্ন আছে। সবাই মতামত দিলো শুধু ডেট ফিক্স হওয়া বাকি।
সব আত্নীয় সহ বাকি সবাই আদ্রিয়ানকে দেখে সালামি দিলো। আদ্রিয়ান প্রচন্ড লজ্জা পেল। সব মিলিয়ে না হলেও ৮০ হাজার টাকা পেয়েছে। সবাই ৫/১০ হাজার করে দিয়েছেন।
রাতে ঘুমাতে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি। রোদকে রুমে ডুকতে দিচ্ছে না কেউ। মিষ্টি সেই এশারের পরই খেয়েই ঘুম। সারাদিন দৌড় ঝাপ করে সে ক্লান্ত। বিরক্ত হলো রোদ। চিল্লিয়ে বললো,

— থাকো তোমরা এখানে। আমি আম্মুর রুমে ঘুমাবো।

বলে যেতে নিলেই দিশা আর তিশা আটকে বললো,

— আরে আরে রাগ করিস কেন? দুই মিনিট দাড়া।

একটু পরই রোদকে রুমে ডুকিয়ে ওরা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে গেল। রুম পুরো অন্ধকার তাই রোদ দৌড়ে ওয়াসরুমে ডুকে পরলো। আদ্রিয়ান যেই না রুমে ডুকবে ওমনি খপ করে ধরলো সব। রুদ্র পথ আটকে বললো,

— দুলাভাই কোথায় যান?

আদ্রিয়ান যেন মুহূর্তে অবুঝে পরিণত হলো। অবুঝ গলায় বললো,

— রুমে।

— আজ তো এই রুমে ডুকতে হলে ফি দিতে হবে।

দিশা বললো,

– নো মানি নো হানি!!

আদ্রিয়ান বুঝলো কিছু একটা। তাও বললো,

— আজ তো আমার বাসর রাত না। তাই আমি ফুল হানি পাব উইথ নো মানি।

কিন্তু ওরাও এটা ওটা বলছে। আদ্রিয়ান ক্লান্ত থাকায় কথা না বাড়িয়ে তাদের দাবী জানতে চাইলো। ওরা যেহেতু জানে অনুষ্ঠান আবার হবে তাই শুধু ৫ হাজার টাকা চাইলো।আদ্রিয়ান বেচারা কথা না বাড়িয়ে টাকা দিতেই সবাই চলে গেল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে ডুকে অবাক হলো কারন রুম পুরো অন্ধকার। সুইচ খুজে অন করতেই আরেকদফা অবাক হলো। এরমধ্যে রোদ ওয়াসরুম থেকে বের হলো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই রোদ খেয়াল করলো নিজের বেডে। গোলাপের পাপড়ী দিয়ে ভরা। সাইডেও ফুল দিয়ে সাজানো। যদিও খুবই অল্প কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। রোদ খুশি হয়ে যেয়ে বললো,

–আল্লাহ! দেখুন কত্ত সুন্দর লাগছে। আমি তো খেয়ালই করি নি।

আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,

— আচ্ছা এই মেয়ে কি এতই ছোট যে কিছু বুঝে নি কেন সাজানো হয়েছে?

রোদ এগিয়ে এসে বললো,

— ফ্রেশ হয়ে আসুন।

আদ্রিয়ান কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। রোদ আটকে রাখা শ্বাস ছাড়লো। লজ্জায় কান দিয়ে যেন ধুয়া বের হবে। গাল দুটো লাল হয়ে গেল লজ্জায়। বজ্জাত গুলোকে পেলে কাল চটকিয়ে চাটনি বানাবে রোদ। কি লজ্জটাই না পেল আদ্রিয়ানের সামনে কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধি খাটিয়ে বেঁচে গিয়েছে। ছটপট বেড থেকে হাত দিয়ে পাপড়িগুলো সরিয়ে ঝেড়ে নিলো।তারাতাড়ি করে কম্বল মুরি দিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিল। মাথা সহ ডেকে নিয়ে শুয়ে রইলো।
একটুপরই খট করে আওয়াজ হওয়ায় বুঝতে পারল আদ্রিয়ান বের হয়েছে।
আদ্রিয়ান রোদকে শুয়ে থাকতে দেখেই আদ্রিয়ান এগিয়ে গেল। বুঝার চেষ্টা করলো রোদ ঘুমিয়েছে নাকি। ঔষধ আজ আগেই খায়িয়েছে তাই টেনশন নেই কিন্তু আদ্রিয়ান ছাড়া তো ঘুমায় না। তাও ওতোশত না ভেবে লাইট অফ করে এগিয়ে গেল। নিজেও কম্বলের ভিতর ডুকে পরলো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে দিতেই হালকা নড়েচড়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান মুখ গুজেই আদুরে গলায় ডাকলো,

— রোদ?

অস্পষ্ট স্বরে উত্তর দিলো রোদ,

— হু

পরক্ষণেই নিজের উপর বিরক্ত হলো। মুখটা বেশিই চলে তার। কেন জবাব দিলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে মুখ উঠিয়ে কানের কাছে নিয়ে বললো,

–তুমি আমার বাসর ঘর নষ্ট করলা কেন? হু?

রোদ ততলিয়ে বললো,

— ক..কই?

— এই যে সব ফুল ফেলে দিলা। কি শাস্তি দিব তোমায়?

হালকা কেঁপে উঠল রোদ। আদ্রিয়ান বলতে বলতেই শাস্তি দিয়ে দিলো।সজোরে কামড় বসালো গলায়। পরপর কয়েকটা কামড়ে ব্যাথায় ছটফটিয়ে উঠলো রোদ। কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান চুমুতে ভরিয়ে তুলেছে গলা। রোদের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। একটুপর ফুপানোর শব্দে আদ্রিয়ান ভরকে গেল। ঘোরের মধ্যে কি করেছে ভাবতেই গা শিউরে উঠলো। চটজলদি উঠে বসলো। সাইডে ল্যাম্প অন করতেই রোদের দিকে ঝুঁকে গলায় তাকালো। তাকিয়ে যেন বাক হারা হয়ে গেল আদ্রিয়ান। কিভাবে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেললো রোদকে। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে টেনে রোদকে নিজের কাছে আনলো। ধীর আওয়াজে বললো,

— আমি সরি রোদ। প্লিজ সোনা মাফ করে দাও।

বলে গলায় চুমু খেল গাঢ় করে। রোদ ফুপিয়েই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ওকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পরলো। ফুপানো থামতেই আদ্রিয়ান মিনমিনে গলায় বললো,

— সরি বউ। প্লিজ সোনা কথা বলো।

…….

— আচ্ছা ব্যাথা দিয়েছি এখন আদর করে দেই?

বলে কপালে চুমু খেল। রোদ কিছু না বলে বুক মুখ গুজে দিল। একটুপর আদ্রিয়ান “আহ” করে উঠলো। রোদকে ছাড়িয়ে উঠে বসে পরনের পাতলা টিশার্ট খুলে ফেললো। অল্প আলোতে বুঝা যাচ্ছে বুকের বা দিকে লাল হয়ে আছে। আরেকটু হলেই র*ক্ত বেরিয়ে যেত। আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বউ এবার আদর করে দাও।দেখ ব্লিডিং হচ্ছে।

ধুম করে উঠে বসলো রোদ। বুকে হাত দিয়ে বললো,

— কই কই? দেখি।

আদ্রিয়ান ওকে ঝাপটে ধরে শুয়ে পরলো। কানে ফিসফিস করে বললো,

— সব উসুল করবো আমি।

রোদ কিছু না বলে বুকের বা দিকে চুমু খেয়ে বুকেই শুয়ে রইলো।

__________

সকাল থেকে মুখ ভার করে বসে আছে রোদ। আদ্রিয়ান তারা দিতেই রোদ চোখ তুলে তাকালো। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে রেডি হতে হতে বললো,

— কলার দেয়া ড্রেস পরো কোন। কেমন লাল হয়ে আছে।

বলে গলার দিকে মুখ বাড়াতেই রোদ উঠে দাড়ালো। শক্ত হয়ে বললো,

— যাব না আমি।

— সকাল থেকে একথা শুনে আমি ক্লান্ত রোদ। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না আমি।

— প্লিজ না আমরা এখানেই থাকি। আমি, আপনি আর মিষ্টি।

হাসি হাসি গলায় বললো রোদ। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

— এটা হয় না সোনা। বুঝার চেষ্টা করো।

রোদ কেদে দিল। জড়ানো গলায় বললো,

— কেন হয় না? থাকলেই হবে। প্লিজ না যাই।

আদ্রিয়ান ওর কথা বন্ধ করে দিলো নিজের উপায়ে। কিছুক্ষন পর ছাড়তেই রোদ হাঁপাতে হাঁপাতে ওয়াসরুমে ডুকে জোরে দরজা অফ করে দিলো।
আদ্রিয়ান নিচে নেমে গেল। রোদের বাবা এগিয়ে এসে বললেন,

— খুব বেশি জরুরি যাওয়া?

— জ্বি বাবা। ফুপি আসছে রোদকে দেখতে। আগেই আসতো কিন্তু ফ্লাইট দুবার ক্যান্সেল হওয়াতে লেট হলো।

— আমার নাতনী আর মেয়েকে নিয়ে কিন্তু শীঘ্রই আসবে।

–জ্বি বাবা।

বাকিদের সাথেও বেশকিছুক্ষন কথা হলো। রোদ নিচে নামলো একঘন্টা পর। চোখ, মুখ ফুলা। বুঝা যাচ্ছে কান্না করেছে। আদ্রিয়ান ই বা কি করবে? ফুপি শুধু মাত্র রোদের জন্য আসছেন এতবছর পর।সেখানে যদি রোদ ই না থাকে কেমন দেখায়।
রোদ সবার সামনে কাদবে না বলে ওয়াসরুমে ইচ্ছে মতো কান্না করছে। কিন্তু মায়ের আর ভাইদের মুখ দেখে কতক্ষণ সামলানো যায় এটাই ভাবার বিষয়। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে বললো,

— চলো। আবার আসব আমরা।

রোদের মা মিষ্টিকে কোলে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো মেয়েকে। যদিও চোখ ভর্তি পানি তবুও মেয়েকে দুর্বল করবেন না বলে কাদলেন না।কিন্তু হায় তার সর্বনাশা ছেলে দুটো তা হতে দিলে তো। রুদ্র হু হু করে কেঁদে উঠলো রোদকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। বোনকে সে যেতে দিবে না। রাদ এসে বড়োর মতো আচরন করে ওদের থামাবে তো দূর সেও বোনকে ধরে কান্না করছে। আদ্রিয়ান পরলো মহাবিপদে। এ যেন রোদের বিদায় হচ্ছে। চাচাতো ভাই বোনরাও কান্না জুড়ে দিলো। চাচিও আচলে মুখ গুজে কেঁদে যাচ্ছেন। রোদের মা ও মিষ্টিকে কোলে নিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে কিন্তু শব্দহীন। কে কাকে থামাবে?এদের সবার কান্না দেখে মিষ্টি ও কেঁদে যাচ্ছে। অনেক কষ্টের পর মি.রহমান আর ওনার ভাই মিলে কোন মতে রুদ্র আর রাদকে ছাড়ালো। এ দুটোই যত নষ্টের মূল। হাজার বুঝিয়ে ছিলো কিন্তু লাভ হয় নি। রাদ কোন মতে নিজেকে সামলে নিলেও রুদ্র হাত পা ছড়িয়ে কান্না জুড়ে দিলো। রোদের হিচকি উঠে যাচ্ছে। মি.রহমান জোরে এক ধমক দিলো রুদ্র কে। রুদ্র বোনের বুকে মাথা রেখে চুপ হয়ে গেল। রোদ ওকে আদর করে কপালে চুমু খেল। হাত ধরে রুমে নিয়ে এটা ওটা বুঝিয়ে বললো আবার আসবে। রুদ্র শান্ত হয়ে মাথা নাড়ালো। রোদ কপালে চুমু খেয়ে ওর হাতে কিছু গুজে দিয়ে রুম থেকে বের হলো।
রুদ্র মুঠি খুলে দেখলো টাকা। বুকটা ফেটে কেন জানি আবার কান্না আসছে। ১০,২০ টাকার জন্য সে কি ঝগরা টাই না করত রোদের সাথে। পিছু পিছু ঘুরঘুর করতো। এখন কেন এমন হয় না? বোনটা কেন পাশের রুমে থাকে না? কেন মা বড় পিস কাকে দিলো এ নিয়ে ঝগরা হয় না? কেন ভাইয়া চকলেট আনলে আপু কেড়ে নেয় না? কেন হুট হাট রাত ১,২ টা বাজে চুপ করে নুডুলস খাওয়া হয় না দুজন? চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরলো। বালিশে মুখ গুজে কেঁদে উঠলো রুদ্র। দুজনের বয়সের পার্থক্য ৬ বছর হলেও পিঠাপিঠির মতো লেগেই থাকতো দুজন। বোনের শূন্যতা প্রতি ক্ষনে ক্ষনে টের পায় সে।

______________

সবার সাথে আর তেমন কোন না বলে মিষ্টিকে কোলে তুলে গাড়িতে গিয়ে বসলো রোদ। বাবার উপর ভিষণ অভিমান জমেছে কেন রুদ্রকে ধমক দিলো। জারবা আর আদ্রিয়ান ও এসে বসলো। রোদ আদ্রিয়ান থেকে দূরত্ব রেখে বসে আছে। চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে বসে আছে। কোলে মিষ্টি। রোদের চোখ মুখ ফুলে আছে। মিষ্টি কিছু না বলে মায়ের বুকে মাথা দিয়ে চুপ করে আছে।

বাসায় আসতেই রোদ রুমে ডুকে চেঞ্জ করে মিষ্টিকেও চেঞ্জ করিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান রুমে ডুকতেই মিষ্টিকে নিয়ে বেরিয়ে এলো রোদ। আদ্রিয়ানকে ভালোলাগছে না তার। কেন আনলো? সে কি বুকে রোদের কষ্ট? আদ্রিয়ান ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। রোদ নিচে নেমে শাশুড়ীকে কিচেনে দেখে এগিয়ে গেল তা দেখেও উনি কিছু বললেন না। রোদ তবুও বললো,

— মামনি হেল্প করি?

— লাগবে না। রুমে যাও।

রোদের বুকে লাগলো কথাটা কারন উনি তো রোদকে তুই করে বলেন আজ কেন তুমি? রোদ তবুও এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছিলো বলে উনি কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন। এবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরা শুরু করলো। বিকেলেও রোদ কথা বলতে গেলেই উনি এরিয়ে গেলেন। আদ্রিয়ান সহ বাকিরাও সোফায় বসে তা খেয়াল করলো। তাহলে কি মা রোদকে জাইফার জন্য এভয়েড করছে?

হঠাৎ দরজায় নক হওয়ায় তাকালো আদ্রিয়ানের মা। রোদকে দাঁড়ানো দেখা কিছু বললেল না। রোদ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,

— মামনি তোমার কি শরীর খারাপ?

— না। রুমে যাও।

রোদ এবার কেঁদে দিয়ে বললো,

— আমি কি করেছি মামনি? তুমি কি রেগে আছ আমার সাথে? কথা কেন বলছো না? তুমিও কি মামওর মতো জাইফা আপুর জন্য আমাকে অপরাধী ভাবছো?

আচমকা রোদকে জড়িয়ে ধরলেন উনি। কান্নারত গলায় বললেন,

— আমাকে মাফ করে দে রোদ। বড় ভাবী তোর উপর হাত তুলেছে আমি কিছু করতে পারি নি। কোন মুখে তোর সাথে কথা বলব আমি?

— এভাবে বলো না প্লিজ। তোমার তো দোষ নেই। তুমি নিজেকে দোষী ভেবো না।

বাহির থেকে সব দেখলো আদ্রিয়ান।

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৩

সন্ধ্যার একটু পরপরই ফুপিরা পৌছাল আদ্রিয়ানদের বাসায়। এতক্ষণ পর্যন্ত রোদ একবারও আদ্রিয়ানের দিকে ফিরে ও তাকায় নি। অভিমান জমেছে অনেক তার যদিও রোদ জানে আদ্রিয়ানের ই বা কি করার ছিলো তবুও রোদ ফুলে টম হয়ে আছে। আরিয়ান শুধু বাসায় নেই বাকি সবাই বাসায়। ফুপি সহ তার এক মেয়ে এবং ছেলে এসেছে। মেয়ের বয়স ২৪/২৫ হবে আর ছেলের ও সেম। চেহারা দেখে তো জমজ ভাই-বোন মনে হচ্ছে। রোদ আর বেশি ভাবলো না। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝবয়সী সুন্দরী নারীকে দেখলো। পরণে শাড়ী, মাথায় হিজাব বাঁধা। তার মেয়েও সেলোওয়ার সুট পরা যদিও মাথা ডাকা না। রোদ বুঝতে পারল আমিরিকাতে থাকলেও ফুপি যথেষ্ট ইসলামিক মাইন্ডের এবং তার মেয়েও। যদিও ছেলেটা ডেনিম প্যান্ট আর জ্যাকেট পড়া। আদ্রিয়ান ফুপিয়ে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরলো। ফুপি পরম আদরে কপালে চুমু খেল। ড্রাইভার তাদের সব জিনিস দিয়ে যেতেই আদ্রিয়ানের মা তা ভিতরে রাখতে বললো। তারা সবাই সোফায় বসতেই রোদ পানি এনে দিয়ে ফুপিকে সালাম দিলো। ফুপি গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর নিলেন যেন তার রোদকে পছন্দ হয় নি। রোদ কিছু না বলে সামনে থেকে সরে যেতে নিলো। রোদের এখন এসব বিরক্ত লাগা শুরু হয়েছে। দুই দিন পরপরই একেক জন দেখতে আসে আর নিজেদের মতামত দেয়।
রোদ সরে যেতে নিলেই গম্ভীর নারী কন্ঠে শুনা গেল,

— পাশে বসো।

রোদ একটু ইতস্তত করে পাশে বসলো।ফুপি হালকা হাসার চেষ্টা করলো যেন সে নিজেও একটু হেজিটেশনে আছেন। যদিও এর যথার্থ কারণ রয়েছে। আদ্রিয়ান সহ বাকিরা তা বুঝতে পারল। আদ্রিয়ান মা এগিয়ে এসে বললো,

— আপা উপরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন।

উত্তরে ফুপি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— একটু পর যাবো। আগে আদ্রিয়ানের বউ দেখে নি।

এরপর উনি নিজেই রোদকে জিজ্ঞেস করলেন,

— কি করছো এখন?

— মেডিকেল ফাস্ট ইয়ার।

— ওহ্।

ছোট্ট করে উত্তর দিয়ে আবার চুপ হয়ে গেলেন। রোদ আজ যেন চরম বিরক্ত হচ্ছে। ফুপির মেয়ে হঠাৎ করে বললো,

— মম তুমি বলেছিলে কথা বলবে সবার সাথে?

ফুপি যেন মেয়ের কথায় বিরক্ত বোধ করলো। হালকা শাসানো স্বরে বললেন,

— জারা স্টে ইন ইউর কোন্ট্রল।

রোদ বুঝলো মেয়েটার নাম জারা। জারা মায়ের কথায় অপমান বোধ করলো তবুও ঠায় বসে রইলো। ফুপি রোদের হাত ধরে বললো,

— মাশাআল্লাহ। আমার আদ্রিয়ানের পছন্দ আছে। তোমার চোখ অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে। মেয়ে হিসেবে তুমি যথেষ্ট সুন্দরী বাট নট গুড এজ এ ওয়াইফ অব আওয়ার হাইজ।

আদ্রিয়ান সহ বাকি সবাই চমকে গেল। ফুপি এটা কি বললো রোদকে?রোদ ই বা কি মনে করছে? জুরাইন যেন মায়ের কথায় বিরক্ত হচ্ছে। কি দরকার একজনের সংসারে নাক গলানোর তাই উঠে বললো,

— মামি আমি রুমে যাই।

বলেই চলে গেল। সবার চেহারায় রাগ অথবা চিন্তা থাকলেও হাসি হাসি মুখ ছিলো জারার। সে ভাবছে মম হয়তো আসল কথাটা তুলবে যার জন্য আসা এখানে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে তার মম বললো,

— আশা করি তুমি মন খারাপ করো নি। আমি সরাসরি কথা বলে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

রোদ খুবই স্বাভাবিক ভাবে বললো,

— আমি কেন মন খারাপ করবো। আপনি শুধু আপনার মতামত দিয়েছেন এতে তো আমি বা ব্যাক্তিক্ত চেঞ্জ হয়ে যায় নি।

— ভালোই কথা পারো দেখছি।

— দুঃখীত আমি সে ভাবে বলি নি।

— বাড়ির বউ হয়ে তোমাকে এসব ড্রেসে মানায় না। যেখানে আমি আমেরিকায় আমার পোশাক পরিচ্ছদ ধরে রেখেছি সেখানে তুমি নিজ দেশে থেকে এসব পরা মানায় না।

সব কিছু হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই আদ্রিয়ানের বাবা বলে উঠলেন,

— আপা অনেক হয়েছে কথা। বাকি কথা পরে বলেন। ফ্রেশ হয়ে খাবেন আসুন।

আদ্রিয়ান হাফ ছেড়ে বাচলো। ফুপিকে সে অনেক সম্মান করে তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারছিলো না। আল্লাহ মালুম রোদ আজ কি করে। একেতো আগের থেকেই রেগে টম হয়ে ছিলো আর এখন তো ফুপি কি না কি আজিরা কথা বললো নিশ্চিত রোদ এবার এটম বোম হয়ে আছে যা ফুটবে শুধু মাত্র আদ্রিয়ানের উপর কারণ রোদ আজ যে ধাচে কথা বললো এখন পর্যন্ত কখনো আদ্রিয়ান সহ কেউ তা দেখে নি।

ফুপি হু বলে উঠলেন। জারা ও উঠে দাড়ালো। পাশ থেকে জারবা ঢং করে বললো,

— ওমা জারাপু তুমি এটা কি পরেছো? তুমি কবে থেকে থ্রি পিছ পরো? নাকি এখানে আসবে বলে পরলা? যাই হোক আমি যাই হ্যাঁ। পরে কথা হবে।

একনাগাড়ে সব বলে কিছুটা দৌড়ে চলে গেল জারবা। সাবা মুখ টিপে হাসছে। এদিকে জারা রাগে ফুসছে আর ফুপি ও কিছুটা চোরা চোখে তাকালো যেন তার চুরী ধরা পরলো। তবুও গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— রাতে কথা হবে তোর সাথে। ( আদ্রিয়ানের বাবাকে)

–জ্বি আপা।

_____________

রোদ ঐ যে রুমে ডুকেছে আর বেড় হয় নি। সন্ধ্যায় মিষ্টিকে খায়িয়েছে তাও রুমে এনে। আপাতত মেজাজ ভালো না তার তাই বাসা আসা নতুন গেস্টদের সাথে কোন প্রকার কথা বা দৃষ্টি বিনিময় করতে সে নারাজ। এমন সময় আদ্রিয়ান ডুকলো রুমে। একটু জরুরি কাজে বাইরে গিয়েছিলো। রোদ তখন পড়া কম্পিলিট করছে। হাতে বই আর কোলে মিষ্টি মাথা দিয়ে শুয়ে কিউব দিয়ে খেলছে। রোদের ভাবনা এতে বাচ্চাদের ব্রেন শার্প হয়।আদ্রিয়ান কিছু চকলেট রোদের পাশে আর বাকি গুলো মিষ্টিকে দিলো। আদ্রিয়ানকে দেখেই মিষ্টি ধপ করে উঠে বসলো। হাত বাড়িয়ে দিলো তার ভালোবাসার প্রতি। প্রতিটি মেয়েরই প্রথম ভালোবাসার পুরুষ হলো তার বাবা। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। আদ্রিয়ান দুহাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো তার প্রাণটাকে। মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করল,

— আমার মা কি করছিলো?

— কিউব মিলাচ্ছি।

— ওহ্। আমার মা কি খেয়েছে?

বলে পেটে হাত দিয়ে সুড়সুড়ি দিলো।খিলখিল করে হেসে উঠল মিষ্টি। বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

— খেয়েছে।

আদ্রিয়ান আবার আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো মেয়েকে। কোলে নিয়েই বিছানায় শুয়ে পরলো। পাশেই রোদ। আদ্রিয়ান মিষ্টির গালে চুমু খেয়ে বললো,

— মা তোমার চকলেট গুলো আলিফকে দেখিয়ে আসো। ভাইয়াকেও দিও।

— আচ্ছা।

বলে টুনটুন করতে করতে চলে গেল মিষ্টি।
রোদ এখনও মনযোগ দিয়ে কিছু লিখছে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষন মনযোগ দিয়ে দেখলো এরপর ভাবলো ডিসটার্ব করবে না তাই ফ্রেশ হতে চলে গেল। আদ্রিয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো রোদ রুমে নেই। ব্যালকনিতে পা বাড়াতেই শুনলো রোদ কারো সাথে কথা বলছে। সম্ভবত মায়ের সাথে বলছে। কিন্তু কখনো এখানকার ঘটনা ওখানে বলে না এতে অশান্তি কম হয়। কথা শেষ হলেও রুমে এলো না রোদ। প্রায় আধ ঘন্টা পর আদ্রিয়ান গেল বারান্দায়। রোদ বসে কিছু ভাবছে। আদ্রিয়ান ওর ঘাড়ে হাত দিতেই রোদ ছিটকে সরে গেল। আদ্রিয়ান ঝটপট করে বললো,

— আরে আরে আমি। ভয় পেয় না।

রোদ জোরে শ্বাস নিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে রুমে চলে এলো। এরপর নিজের কিছু বই ঘাটতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— আমার পাখির কি রাগ কমে নি?

………

–এই বউ?

রোদ আলগোছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। অন্য বই নিতে নিতে বললো,

–রাগ করার আমি কে? আর হ্যাঁ রাগ করি নি।

রোদ এমন চটর চটর করে কথা বলছে যা ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। সবসময় শান্ত হয়ে অথবা গাল ফুলিয়ে অথবা হালকা রেগে কথা বলে রোদ। কিন্তু এমন ভাবে না। তবুও আদ্রিয়ান রোদকে নিজের দিকে ফিরিয়ে একগালে হাত দিয়ে বললো,

–কি হয়েছে? সরি বলেছিনা? আবার যাবো তো ঐ বাড়ী। কি করতাম বলো ফুপি আসছে তোমাকে দেখতে।

— হু।

বলে তাচ্ছিল্য করে মুচকি হাসলো রোদ যা আদ্রিয়ানের বুক মোচড়াতে সক্ষম। তবুও আদ্রিয়ান ওর দুগাল ধরে বললো,

— ফুপির কথার উত্তর তোমার এভাবে দেয়াটা উচিত হয় নি রোদ। উনি নিশ্চিত কষ্ট পেয়েছেন।

— যেয়ে তাহলে মাফ চেয়ে আসি দাঁড়ান।

আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে না রোদের এই ব্যবহারের কারণ। তাই কিছুটা অধৈর্য হয়ে বললো,

— কি সমস্যা? এভাবে কথা বলছো কেন? তুমি তো বেয়াদব না রোদ তাহলে?

আর কিছু বলার আগেই রোদ হাতে থাকা বইট ঠাস করে টেবিলে রাখলো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— হ্যাঁ আমি তো বেয়াদপ।খারাপ আমি তাহলে কেন এনেছেন? রেখে আসুন আমায় যেখান থেকে এনেছেন?আমি বলেছিলেন আমায় আনুন? বলুন।

আদ্রিয়ান রোদকে জড়িয়ে ধরলো যেখানে ওর উচিত ছিল নিজেও রেগে যাওয়া। রোদকে শান্ত করার ভঙ্গিতে বললো,

— শান্ত হও রোদ। কি হয়েছে বলো আমায়।

রোদ জোর করে নিজেকে ছাড়ালো। চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান আটকে এবার জোর গলায় বললো,

— বলতে বলেছি না?

— কি বলবো? কি বলবো আমি? বিরক্ত আমি। বিরক্ত হয়ে উঠেছি এসব কথা শুনে। যে না সেই আসে আমাকে দেখে নিজেদের মতামত দিয়ে চলে যান।কখনো আপনারা কেউ প্রতিবাদ করেন কখনো চুপ থাকেন। আমাকে বিয়ে করার আগে আপনার উচিত ছিল আপনার সব আত্নীয়কে আমাকে দেখানো। এটা না ওটা না করতে করতে আমার জান খেয়ে ফেলছে একেকজন। আজ কেন আপনার ফুপিকে কিছু বললেন না? আপনার কি উচিত ছিল না কিছু বলা। নাকি আমি আপনার যোগ্য না এটা আপনিও মনে করেন। করাটা ও স্বাভাবিক আমি তো আপনার ভালোবাসা পাওয়া সত্ত্বেও আপনাকে পরিপূর্ণ সুখ দিতে পারিনি। স্ত্রী হওয়ার….

আর কিছু বলার আগেই ধমকে চুপ করালো আদ্রিয়ান। রোদকে বুকে চেপে ধরলো। সারা মুখে চুমু খেয়ে বললো,

— সরি সোনা। আমার পাখি যে এটতা প্রেশার ফিল করেছে আমি খেয়াল করি নি।

বলে আদর করলো সারা মুখে। আজ কাঁদলো না রোদ। কেন বারবার বাইরের লোকের কথা শুনে কাঁদবে।

________

রাতে খেতে ডাকলেও নিচে নামলো না রোদ। আদ্রিয়ান কত জোর করলো লাভ হলো না। ওর এক কথা আগে যোগ্য হই পরে খাব আপনার ফুপির সাথে। আদ্রিয়ান না পেরে রুমে এনে খাওয়ালো রোদকে। নিজে ফুপিদের সাথে খেয়ে কথা বলে রুমে আসতে নিলেই আরিয়ান ডাকলো। আরিয়ান ওকে জিজ্ঞেস করল,

— এই কি হয়েছে রে রোদের?

— কি হবে?

— তুই জানিস কি বলছি আমি?

দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো আদ্রিয়ান। বললো,

— হুট করেই মেজাজ দেখাচ্ছে। ফুপিও ওর সাথে তেমন ভালো আচরণ করে নি। বুঝি না আমি যাকে আমি পায়ে ধরে এনেছি তাকে আজ অবদি ভালো রাখতেই পারলাম। প্রতিবার আঘাত আমার আত্মীয়দের কাছ থেকেই পায়। এবার কিছু হলে রোদের বাবা আর রোদকে দিবে না। কি করবো বল?

মনের সব কথা বললো ভাইকে। আরিয়ান পিঠ চাপরে বললো,

— ফুপির কথা জানিয়ে দে ওকে।

— এখন না।

— ওর মেজাজ খারাপ করার কারণ আমার জানা।

— মানে?

— তোর বুঝা উচিত ছিল আদ্রিয়ান। হাই ডোজ এর মেডিসিন এর রিএক্ট এটা।

— ওহ সিট সিট..কি করে ভুলে গেলাম? আল্লাহ। আমি আরো ধমক দিলাম।

— গাধা যে তুই। আাশা করি হ্যান্ডেল করতে পারবি।

ভাইকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল রুমে।

#চলবে…

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৩(বর্ধিতাংশ)

রুমে ফিরে এসে আদ্রিয়ান দেখলো রোদ রুমে নেই। দুপাশে বালিশ দিয়ে মিষ্টিকে মাঝে ঘুমপাড়ানো হয়েছে যা দেখে হাসে আদ্রিয়ান। রোদ কি নিজে জানে ঘুমালে যে ও নিজেও উল্টো পাল্টা হয়ে যায়? ওয়াসরুমেও রোদ নেই তাই হেঁটে বারান্দায় গেল। বারান্দায় রাখা কাউচে হাটু ভাজ করে বসে একটা বই মনোযোগ দিয়ে পরছে। আদ্রিয়ান ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। রোদ খেয়াল করলেও কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো।এমন করে তাকালে যে কারোই অসস্তি লাগবে তাই রোদ বললো,

— কিছু বলবেন?

— উহু।

— তাহলে অন্যদিকে তাকান।

— কেন?

— আজব এভাবে তাকালে পড়তে পারি না আমি।

— আজব আমার বউ আমি তাকাবো।

–আপনি কিন্তু…

আদ্রিয়ান কথার মাঝেই টুপ করে চুমু খেল গালে। রোদ কিছু বললো না। মাথা নিচু করে রাখলো। আদ্রিয়ান গা ঘেঁষে বসে বললো,

— কিছু বলছিলে না। বলো?

— কিছু না।

বলে রোদ নিজেই আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রাখলো। আদ্রিয়ান একটু চিন্তিত হয়ে বললো,

— এই রোদ খারাপ লাগছে?

— হু।

— দেখি উঠো রুমে চলো।

— উহু।

বলে মুখ গুজে দিয়ে বুকে পড়ে রইলো। আদ্রিয়ান কিছু বললো না। স্বাভাবিক হতে সময় দিলো। একটু পর বুকে ভিজা অনুভব করতেই বুঝলো এটা রোদের চোখের পানি। কিছু বলার আগেই রোদ আদ্রিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

— আমি সরি। মাফ করে দিন আমায়। আমি নিজেও জানি না কি হয়েছিলো তখন। কারো কথাই সহ্য হচ্ছিল না। আপনার সাথেও বেয়াদবি করে ফেলেছি। প্লিজ মাফ করে দিন। সরি অনেকগুলো।

আদ্রিয়ান বুক ভরে শ্বাঃস নিলো। রোদ আদ্রিয়ানের গলায় মুখ গুজে বসে রইলো। আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— সরি বলতে হবে না রোদ।

— মাফ করবেন না?

— না।

রোদ ফুপিয়ে কেঁদে উঠেলো। আদ্রিয়ান ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— আমার পাখি কি কোন দোষ করেছে যে মাফের কথা আসছে?

— করেছে। বেয়াদবি করেছে, উচু স্বরে কথা বলেছে।

— সেটা আমার বউ আমারকে বলেছে। তোমার তাতে কি?

— মানে?

— বোকাপাখি না তুমি। ঐ সব বুঝবে না। কাল ফুপির সাথে কথা বলো কেমন?

— উনাকে ভালোলাগে নি আমার।( শক্ত গলায়)

ভরকে গেল আদ্রিয়ান। ফুপিকে সে অনেক সম্মান করে আর তার বউয়ের নাকি ভালোলাগে না। তাও কিছু বললো না। আবার না মেজাজ দেখায় রোদ। ইদানীং ভয়ে ভয়ে থাকে আদ্রিয়ান এই না ঐ বাড়ী থেকে কেউ এসে নিয়ে যায়।
রোদ একটুপর বললো,

— আচ্ছা মানুষ বিয়ে করে কেন?

আদ্রিয়ান বুকে আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,

— কেউ বিয়ে করে দৈহিক চাহিদা পূরণ করার জন্য, কেউ করে মনের খোড়াক জোগাতে,কেউ করে একাকীত্ব ঘোচাতে, কেউ করে ভরসার হাত ধরতে, কেউ করে ছোট্ট একটা সংসার গড়তে আবার করে বৃদ্ধ বয়সে কারো সাথে সময় কাটাতে।

রোদ সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো,

— আপনি কেন বিয়ে করেছেন?

–সবগুলো কারণে।

এই প্রথম রোদের প্রশ্নের জবাব দিলো আদ্রিয়ান। এরআগে অনেকবার প্রশ্ন করেছে কেন বিয়ে করেছে কিন্তু উত্তর পায় নি আজ একটু হলেও পেয়েছে এতেই শান্তি।

__________

জাইফাকে বসায় নেয়া হয়েছে। সব স্বাভাবিক, তার আচার আচরণ ও স্বাভাবিক যেন সব আগের মতো। বাসায় কেউ ও আগ বাড়িয়ে কিছু বলে নি এ ব্যাপারে। কিন্তু পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। বাবা কত বললেন বন্ধুদের সাথে ঘুরে আসতে। রাজি হয়নি জাইফা।

এদিকে জাইফার মা সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে রাদের সাথে মেয়ের বিয়ে হয়। কোনমতেই রাদের মতো ছেলেকে হাত ছাড়া করবেন না। মেয়ে তার রাণী হয়ে থাকবে। এ নিয়ে জাইফার বাবা আর জাইফ প্রতিবাদ করেছে যাতে এ বিষয় নিয়ে আর না ঘাটা হয়। মেয়ে তার স্বাভাবিক হচ্ছে এই ঢের।

_________

আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে এই রাত দুটো বাজে ড্রাইফে বের হয়েছে। একটু আগেও কথায় কথায় রেগে উঠেছিল। খিট খিট করছিলো। কতশত বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে এলো। বর্তমানে আদ্রিয়ান ড্রাইফ করছে রোদ তার বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে আছে। মনটা কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। একটু আগেও কেন যেন মেজাজ খারাপ লাগছিলো। এখন ভালোলাগছে। রাতের পোশাক পড়েই দুজন বেরিয়েছে তাই রোদের পরণে হিজাব নেই। সামনের চুল গুলো উড়ে এসে আদ্রিয়ানের মুখে পড়ছে। এতেও রয়েছে অন্য এক ভালোবাসা।
গাড়ি থামতেই নামলো আদ্রিয়ান। রোদও নেমে গেল। হাইওয়ে তে গাড়ি থামিয়েছে আদ্রিয়ান। একটু পরপর দুটি একটি গাড়ি শো শো করে চলে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আর রোদ দাঁড়িয়ে। কারো মুখে কথা নেই। উপভোগ করছে এই মুহূর্তকে। রোদ বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলো। আদ্রিয়ান একদম লেগে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। একটু পর জড়িয়ে ধরে কাঁধে ঠোঁট চেপে ধরলো। রোদ পেটের উপর আদ্রিয়ানের রাখা হাতটার উপর নিজের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো। এক মিনিট, দশ মিনিট, বিশ মিনিট কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে রইলো হিসেব নেই।
অস্বাভাবিক হয়ে উঠলো রোদ আদ্রিয়ানের ছোঁয়ায়। অনুভূতির কণা গুলো যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। খামচে ধরলো আদ্রিয়ানের হাত। আদ্রিয়ান ও থেমে কোথায় খামচে ধরেছে রোদের পেট। নরম টিশার্টের ভিতরে মসৃন পেট যেন জ্বলে উঠলো। বেসামাল হয়ে উঠলো আদ্রিয়ান। আগে থেকে ক্ষত করা গলায় আবারও একই কাজ করলো। এবার যেন গলাটা কেটে গিয়েছে। আওয়াজ করলো না রোদ। চোখ দিয়ে শুধু পানি পরলো। আদ্রিয়ান নিজেই আবার গভীর আদর দিলো ওই স্থানে। দু’জনই যখন বেসামাল তখনই শো করে একটি গাড়ি অতিক্রম করলো আওয়াজ করে। আদ্রিয়ান ছেড়ে দিলো রোদকে। রোদ ছাড়া পেয়ে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান আটকে নিলো। মত্ত হয়ে উঠলো রোদে যেন বহু দিনের পিপাসু সে।
কিছুক্ষন পর ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে শ্বাস টেনে নিলো। চোখ খুলে রোদের অশ্রু সিক্ত চোখ দেখে তা হাতের বৃদ্ধাগুলি দিয়ে মুছে দিয়ে বললো,

— আদর করলেই কাঁদতে হয় তোমার।

…….

— কাঁদলে কিন্তু আদর করব না।

আকস্মিক চোখের পানি থেমে গেল রোদের। হেসে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদের গালে আদর করে বললো,

— বোকাপাখি তোমাকে আদর করে তো নিজেকে শান্ত করি। তুমি কাদলে করবো আমি।

……

— রোদের উত্তর না পেয়ে আদ্রিয়ান বললো,

— কাছে কেন আসো না রোদ? এখনও কি ভালোবাসা জন্মায় নি?

কন্ঠে শুধু মাত্র অসহায়ত্ব শুনতে পেল রোদ। তবুও কিছু বললো না। ভালোতো কবেই বেসেছে সে কিন্তু তবুও কিছুটা ভয় ও জড়তা কাজ করে তাইতো রোদ আগাতে পারেনি।

আদ্রিয়ান রোদের নিরবতাকে না ধরে নিয়ে হালকা হেসে ওকে বুক জড়িয়ে মাথায় চুমু দিয়ে বললো,

— যা বলেছি ভুলে যাও। হু।

— হুম।

আরোকিছুক্ষন পর বাসায় ফিরলো দুজন। রাত প্রায় তিনটা। ওরা বাসায় ডুকতেই কেন একজন সরে গেল সেখান থেকে। সাথে নিয়ে গেল চোখ ভরা পানি আর ভাঙা হৃদয়।

রুমে ডুকে আদ্রিয়ান ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো রোদ চুল বেনুনী করছে। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে রোদের গলায় তাকিয়ে আতঁকে উঠে বললো,

— আল্লাহ। ও সিট সিট।

বলে গলা ছুঁয়ে দিতে নিলেই রোদ “আহ” শব্দ করে সরে গেল। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি ড্রয়ার থেকে মলম বের করে আলত হাতে গলায় লাগিয়ে দিলো। রোদ দাঁতে দাঁত চেপে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান নিজেই ফু দিচ্ছে। কাজ শেষ করে আপরাধীর সুরে বললো,

— আমি খেয়াল করি নি রোদ।

— আপনার কি? আমার জামাই করেছে এমন ।

আদ্রিয়ান ভেবাচেকা খেয়ে গেল রোদের হাসি হাসি মুখ দেখে। কোলে তুলে নিয়ে বললো,

— বাহ। আমার কথা আমায় ফিরিয়ে দিলা।

— হু।

আদ্রিয়ান ওকে মিষ্টির পাশে শুয়িয়ে নিজে লাইট অফ করে দিলো।

___________

রাতেই ফুপি আদ্রিয়ানের বাবার সাথে কথা বলেছেন। জারাকে বিয়ে দিতে চান। আদ্রিয়ানের বউ দেখা ছাড়া এরজন্যই আসা বিডিতে। তিনি কোনমতে আমেরিকার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিবেন না। কিন্তু জারা জানে না এ বিষয়ে তাকে তার মা অন্য আস্বাস দিয়ে এনেছেন।
আদ্রিয়ান বাবা সহ মা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
বেচারারা ভয়ে ছিলো এতক্ষন। কিন্তু তাদের সব আলোচনাই জারা শুনে নিয়েছে কারণ তার মায়ের উপর যথেষ্ট সন্দেহ ছিলো কিন্তু কিছু করার ও নেই। মাকে অনেক ভয় পায় সে।

#চলবে…..