ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-০১

0
926

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

১.
পাত্র হিসেবে ভার্সিটির সব থেকে অপ্রিয় স্যারকে দেখবে তা কখনো ভাবেনি অর্ষা।হতভম্ব হতবাক হয়ে সবার সামনেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে অর্ষা ইরহামের দিকে।ইরহাম ভদ্রতার খাতিরে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।বিরক্ত ও লাগছে বেশ তার।তার মা কি আর মেয়ে পেলো না এই বাদর মেয়েকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে।

অর্ষা হুট করে দাঁড়িয়ে যায়।অর্ষা ইরহামকে দেখে একটা ঘোরের ভেতরে চলে গিয়েছে।আশেপাশের কিছু তার খেয়াল নেই।অর্ষা চেঁচিয়ে বলে,,,

—“আমি কখনোই ইরহাম স্যারকে বিয়ে করবো না!এই বদ অসভ্য লোককে জীবনেও আমার জামাই হিসাবে মেনে নিতে পারবো না আমি”

অর্ষার এমন ব্যবহারে ড্রয়ংরুমে উপস্থিত থাকা প্রতিটা মানুষ হতভম্ব হয়ে যায়।সবাই একে অপরের দিকে তাকা তাকি করছে।ইরহাম নিজেও লজ্জায় পরে যায়।সে কখনো ভাবেনি তাকে এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে কোনো দিন।রাগও হচ্ছে প্রচুর।অর্ষার হুশ ফেরে ও কোথায় কি বলে ফেলেছে!অর্ষা মায়ের দিকে তাকাতেই মা চোখ গরম করে তাকান।অর্ষা মাথায় ঘোমটা টেনে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।

অর্ষা চলে যেতেই ইরহামের বোন ইলমা ফিক করে হেসে দেয়।তার বেশ মজা লেগেছে অর্ষার কান্ড।ইরহামের মা আয়রা শেখ হেসে ফেলেন অর্ষার কান্ডে।তার অর্ষাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে।এই মেয়েই পারবে তার নাছোড়বান্দা,বদমেজাজি রাগী ছেলেকে ঠিক করতে।আয়রা শেখ পরিবেশ ঠিক করতে বলে,,

—“আয়রা মা বেশ দুষ্ট কিন্তু।আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে আর্ষা মাকে।এমন একটা মেয়েই খুঁজতে ছিলাম আমি।”

ইলামা মায়ের কথায় সহমত প্রকাশ করে বলে,,,

—“আমার ও অর্ষা আপুকে বেশ পছন্দ হয়েছে।ভাইয়ার সাথে ভীষণ মানাবে।”

অর্ষার আব্বু আসিফ আহমেদ লজ্জা পায় মেয়ের কান্ডে।কিন্তু ভীষণ অবাক ও হয় আয়রা শেখের কান্ডে।আয়রার ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হন তিনি।আসিফ আহমেদ লজ্জিত কন্ঠে বলেন,,,

—“কিছু মনে করবেন না আপা।ও ছোট মানুষ বেশ দুষ্টু স্বভাবের মেয়ে।এই লাফালাফি,ছোটদের সাথে ঝগড়া এগুলো করে বাড়ি মাতিয়ে রাখে।এমনি মেয়েটার মন মানসিকতা খুব ভালো।আমার মেয়ে বলে বলছি না আপা”

আয়রা হাসতে হাসতে বলেন,,,,,

—“আরে ভাইজান আপনি লজ্জা পাবেন না অর্ষা মায়ের কান্ডে।ছোট মানুষ তাই এমন বলে ফেলেছে।আমরা কিছু মনে করিনি।”

আসিফ আহমেদ স্বস্থির নিশ্বাস ফেলেন।সে ভেবেছিলো হয়তো আয়রা অর্ষাকে খারাপ ভাবছে।আসিফ আহমেদের খুব পছন্দ হয়েছে সবাইকে।কেমন হাসিখুশি সবাই।শুধু ইরহাম ছেলেটা একটু গম্ভীর,হাসে না।কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দর।তার মেয়ের সাথে মানাবে বেশ।

ইরহামের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।এই বাচ্চা মেয়েটা তাকে সবার সামনে অপমান করেছে।নাহ ইরহাম কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছে না।ইরহাম যদি এখন বাসায় থাকতো তাহলে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে নিজের রাগ কমাতে পারতো।এখন কি করবে সে!

—“আরিশা মা যাও তো ইরহাম বাবাকে অর্ষার কাছে নিয়ে যাও।ওদের একটু একান্তে কথা বলার প্রয়োজন আছে”

আসিফ আহমেদ কথাটা তার ছোট মেয়ে আরিশাকে বললেন।আসিফ আহমেদের কথায় ইরহামের ঘোর কাটে।ইরহাম সবার আড়ালে বাঁকা হেসে আরিশার পেছনে যেতে থাকে।আরিশা তাকে একটা রুমে সামনে এনে তাকে ভেতরে যেতে বলে চলে যায়।

—“সয়তান অসভ্য ব্যাডারে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না।বেয়াদপ লোক ভার্সিটিতে সব সময় আমায় জ্বালিয়ে মারে এখন বিয়ে করে সারাদিন জ্বালানোর পরিকল্পনা করছে।আমি জীবনেও বিয়ে করবো না তোকে হুহ বজ্জাত ইরহামের বাচ্চা।”

হঠাৎ নিজের মুখের উপর গরম নিশ্বাস পরতেই চমকে চোখ খুলে অর্ষা।চোখ খুলে নিজের এতো কাছে ইরহামকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।ইরহাম গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।নিজের অবস্থা মনে পরতেই ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় ইরহামকে।উঠে বসে শাড়ি ঠিক করে নেয়।অর্ষা এতো সময় বিছানায় এলোমেলো ভাবে শুয়ে কথাগুলো বলছিলো।

—“আপনি তো অসভ্যের উপরে অসভ্য,চরম লেভেলের অভদ্র পুরুষ মানুষ।একটা মেয়ের রুমে কি কেউ এইভাবে নক না করে ঢুকে পরে।”

অর্ষা ইরহামের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথাটা বলল।অর্ষাকে রাগতে দেখে ইরহাম বাঁকা হাসে।অর্ষার দিকে এক পা এক পা করে আগাতে থাকে।অর্ষা ভয় পেয়ে নিজেও পিছাতে থাকে।পেছাতে পেছাতে দেওয়ালের সাথে লেগে যায়।

—“আআআআআপনি এএএএভাবে আআআমার দদদদিকে এএএগোচ্ছেন কেনো?ভালো হবে না বলে দিলাম।আররর এএএকটুও এগোবেন না।”

ইরহাম অর্ষার একদম কাছে এসে বলে,,,

—“এই যে দেখো তোমার একদম কাছে এসেছি কি করবে তুমি।আর একটু আগে কি বলছিলে যেনো আমি তোমাকে জ্বালিয়ে মারি তাই না”

—“আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন ইরহাম স্যার।দূরে সরুন বলছি।আপনি তো ভীষণ অসভ্য দেখছি।একটা মেয়ে মানুষকে একা রুমে পেয়ে তাকে ভয় দেখাচ্ছেন।”

হঠাৎ করে ইরহামের চোখ লাল হতে থাকে।অর্ষা ভয় পেয়ে যায় ইরহামকে রাগতে দেখে।ইরহাম রেগে অর্ষার বাহু চেপে ধরে বলে,,,

—“তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে সবার সামনে ওভাবে অপমান করার।হু দ্যা হেল আর ইউ!তোমার মতো হাজার মেয়ে আমার পেছনে পরে আছে শুধু কথা বলার জন্য।”

—“সসসবার পছন্দ এক না স্যার।আপনি যেমন আমায় পছন্দ করেন না তেমন আমিও আপনাকে পছন্দ করি নাহ।”

ব্যাথার জন্য অর্ষার চোখে পানি চলে এসেছে।ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।অর্ষা বাহুতে বেশ ব্যাথা পেয়েছে।চোখ মুছে বলে,,

—“সয়তান ব্যাডা,ছাগলের পাঁচ নাম্বার পোলা,রাম ছাগল,বদমেজাজি উগান্ডার হাতি আমার মতো কিউট মাইয়ারে ব্যাথা দেওনা না।তোর কপালে বউ জুটবে না হুহ।ব্যাডা বজ্জাত।”

অর্ষা কি বলেছে তা মাথায় আসতেই ভয়ে ভয়ে ইরহামের দিকে তাকায়।ইরহাম কেমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।অর্ষা মাথা নিচু করে নেয়।ইরহাম বেরিয়ে যায় রুম থেকে।ইরহাম বের হতেই অর্ষা বলে,,,

—“আমাকে এই অর্ষাকে বিয়ে করতে চাইছেন স্যার এখন আপনার সাথে কি কি হয় শুধু দেখতে থাকুন।আপনি অনেক জ্বালিয়েছেন আমায়।এখন আমার পালা অসভ্য পুরুষ মানুষ।”

২.

বাসায় আসতেই ইরহাম নিজের রুমের জিনিস পত্র ভাংচুর করছে।নিচে বসে ইরহামের বাবা ইসফাক চৌধুরী তা শুনে আয়রাকে বলেন,,

—“হঠাৎ এই নবাবজাদার রাগ উঠলো কেনো!মেয়ে কি তার পছন্দ হয়নি।নাকি তুমি কিছু বলেছো আয়রা”

আয়রা কফি খাচ্ছিলো।ইসফাক চৌধুরীর কথায় হাসতে হাসতে বলেন,,,

—“আর বলো না মেয়েটা তোমার ছেলের ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী।বেশ দেখতে মেয়েটা।তোমার ছেলেকে টাইট করার জন্য এই মেয়ে একাই যথেষ্ট”

—“কি বলো আয়ু সত্যি!আমার ছেলেকেও কেউ টক্কর দিতে পারে।ভাবতেই খুব আনন্দ লাগছে।বলো তো মেয়েটা কি করেছে।”

আয়রা ইসফাককে সব খুলে বলে।ইসফাক তো হাসতে হাসতে শেষ।যাক অবশেষে কেউ একজনকে তো পেলো যে ইরহামকে ভয়ও পায় না ,আবার তাকে উচিত জবাব ও দিতে পারবে।এটা ভেবেই বেশ খুশি হলেন দু’জন।
ইরহাম বেলকনিতে বসে সিগারেট টানছে।যখন অতিরিক্ত রাগ তখনই সে সিগারেট খায়।অদ্ভুত হলেও ইরহাম এটাই করে।ইরহাম বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলে,,,

—“ইউ পে ফর দিস,গেট রেডি মিস অর্ষা!”
.
.
.

চলবে~