#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১০
—“তুই এই ড্রেসে কেনো অর্ষা!বিয়ে হয়েছে এখনো বুদ্ধি হয়নি তোমার”
রান্না ঘরে প্রবেশ করতেই ইরিনা বেগম কথাটা বলে উঠলো।অর্ষা পাত্তা দিলো না।মৌকে বলল,,,
—“ছোট আম্মু খাবার দাও খিদে লেগেছে খুব”
—“শাড়ি পরতে পারিসনা ঠিক আছে তাই বলে কি থ্রী পিসটা পড়া যেতো না।আর জামাই না খাওয়া অব্দি খেতে পারবি না তুই”
অর্ষা বিরক্ত হয়।মেজাজ গরম হয় ইরহামের প্রতি।তার জন্যই হচ্ছে এতো কিছু হচ্ছে।খেতেও পারবে না এখন ইরহামের না খাওয়া পর্যন্ত।অর্ষার ভাবনার মাঝেই ইরিনা বেগম আবার বলে ওঠেন,,,
—“এখনি যাবি গিয়ে একটা থ্রি পিস পরবি।”
অর্ষা বিরক্ত হয়ে রুমে চলে আসে।কাবার্ড খুলতে গেলে দেখে লক করা।কালকে নিজেই করেছিল।কাবার্ডের উপরে চাবি রাখা।রুশান রেখে দিয়েছিলো কালকে।এখন নামাবে কিভাবে!ওতো আর রুশান ইরহামের মতো তালগাছ না।ছোট খাটো একটা মেয়ে।চেয়ার এনে তার উপর উপরে দাঁড়িয়ে চাবি খোঁজার চেষ্টা করে।
চেয়ারের এক পাশে পানি থাকায় অর্ষা স্লিপ করে পরে যেতে নেয়।কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই একটা শক্তপোক্ত হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরে।অর্ষা ভয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে আছে।অর্ষা চোখ খুলে ইরহামকে দেখে।চোখাচোখি হয়ে যায়।ইরহাম চমকায় কিছুটা এ চোখ যে সে আগেও দেখেছে।এতোদিন তো খেয়াল করেনি।অর্ষা তাড়াতাড়ি সরে আসে ইরহামের থেকে।ইরহাম অর্ষাকে ধমক দিয়ে বলে,,,
—“যেই জিনিসটা পারো না তা করতে কেনো যাও স্টুপিড”
অর্ষা ভেংচি কেটে বলে,,,”তো আমার জিনিস কে করে দেবে আপনি?”
ইরহাম চাবিটা উপর থেকে খুঁজে ওকে দিয়ে দেয়।অর্ষা বিরক্ত হয় ইরহামের কথায়।বদ লোক উত্তর দিলো না তার কথার।অর্ষা সবুজ সাদা মিশ্রনের একটা থ্রি পিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ইরহাম এখনো অর্ষার চোখগুলো কল্পনা করছে।অর্ষার চোখগুলো তার হৃদহরনীর মতো।চোখে কাজল আর মাশকারা লাগালে হয়তো বোঝা যেতো।ইরহাম নিজের ভাবনার প্রতিই বিরক্ত হয়।কি ভাবছে সে এইগুলো অর্ষা কখনোই তার হৃদহরনী হতে পারে না সম্ভব ও না।ইরহাম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল।
২২.
ইরহাম অর্ষা নিচে নামতেই ইরানী বেগম বলেন,,,
—“অর্ষা ইরহাম বাবাকে নিয়ে দাদিমার সাথে দেখা করে আয় যা”
অর্ষা সম্মতি দিয়ে ইরহামকে নিয়ে দাদিমার রুমে হাজির হয়।কালকে অনেক রাত হওয়ায় দেখা করতে পারিনি।দাদিমা তখন বসে তজবি গুনছিলো।ইরহাম এসে পাশে বসে মৃদু হেসে বলে,,,,
—“আসসালামু আলাইকুম দাদিমা!কেমন আছেন?”
জাহানারা বেগম চমকান।সামনে তাকিয়ে ইরহামকে দেখে হাসে।তজবি রেখে দেন।জাহানারা বেগম অর্ষাকেও ইশারা করে নিজের পাশে বসতে বলেন।অর্ষা ও এসে পাশে বসে।জাহানারা দু’জনকে একসাথে চোখ জুড়িয়ে দেখে যায়।দুজনকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে।
—“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি নাতজামাই তুমি কেমন আছো”
—“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছু দাদিমা।শরীর কেমন যাচ্ছে”
—“আল্লাহর রহমতে ভালো যাচ্ছে।তা খেয়েছো তোমরা”
—“না দাদিমা আপনাকে ছাড়া কি খেতে পারি।আপনাকে নিতেই তো এলাম।চলুন আমাদের সাথে”
জাহানারা ইরহামের ব্যবহারে বেশ খুশি হলেন।সম্মতি দিতেই ইরহাম তাকে ধরে নিয়ে যেতে শুরু করলো।অর্ষা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় যাওয়ার পানে।নিজেও পিছু পিছু ড্রয়িংরুমে আসে।ড্রয়িংরুমের সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইরহাম যে এমন কেউ ভাবতেও পারেনি।রুশান তো দেখতে দেখতে নিচেই পরে গেছে।
কেউ দেখার আগে নিজের জায়গায় বসে পরে।উশা,মুহিব,নাইম সব অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওরা বিশ্বাসই করতে পারছে না ভার্সিটির সব থেকে রাগী স্যারটা নাকি এভাবে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।অর্ষার মতো ওরাও শক খেয়েছে।
আসফি আহমেদ মুচকি হাসেন।সে প্রথম দিনই ইরহামকে দেখে বুঝতে পেরেছিলো ছেলেটা রাগী হলেও মনটা ভীষণ ভালো।ইরহাম জাহানারাকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে বড়দের সবাইকে বলে,,,
—“আঙ্কেল দাদুজান আসুন সবাই একসাথে খেয়ে নেই।”
সবাই খুশি হয় ভীষণ।আসিফ আহমেদ,আহিন আহমেদ সাথে আশরাফ আহমেদ ও আসেন।নাত জামাইকে তার বেশ মনে ধরেছে।তিনি আবার যে সে মানুষ পছন্দ করে না।খুবই খুঁতখুঁতে একজন লোক।আর সে নিজের একমাত্র বড় নাতির জন্য যে সে পাত্র তো আর ঠিক করতে পারে না।সব খোঁজ নিয়েই ইরহামের সাথে অর্ষাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সবাই টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করছে আস হাসাহাসি করছে।অর্ষা ইরহামের পাশে বসে খাচ্ছে।রুশান মুহিব,নাইম তার সামনেই বসা।তিনজন কিছুক্ষণ পর পর অর্ষার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।যা দেখে ভীষণ রাগ লাগছে অর্ষার।
এখানে কিছু বললে যে মা তাকে আস্ত রাখবে না তা খুব ভালো মতোই জানে অর্ষা।বাবা চাচা কিছু না বললেও মা তাকে ছেড়ে দেবে না।অর্ষা রুশানকে পা দিয়ে গুতা মারতে গিয়ে ইরহামকে মেরে দেয়।ইরহাম বেচারা হালকা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে।অর্ষা বুঝে যায় সে রুশানকে নয় ইরহামকে গুতাটা মেরেছে।সবাই ইরহামের দিকে তাকিয়ে পরে।ইরিনা বেগম অস্থির কন্ঠে বলেন,,,
—“কি হয়েছে বাবা তোমার হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলে কেনো”
ইরহামের লজ্জা লাগে বেশ।কিন্তু কি করবে হঠাৎ কেউ তাকে লাথি মারে।সে জোরপূর্বক হেসে বলে,,,
—“আসলে হুট করে ঝাল কামড় দিয়ে ফেলেছিলাম আ…ম্মু”
ইরানী বেগম পানি এগিয়ে দেন।ইরহাম পানি খেয়ে নেয়।ইরানী বেগম ভাবতেই পারেনি ইরহাম তাকে আম্মু বলবে।সে তো ভেবেছিলো ইরহাম তাকে আন্টি বলে না বসে।কিন্তু আম্মু ডাকায় অনেক খুশি হয়েছেন তিনি।
ইরহাম অর্ষার দিকে তাকাতেই বুঝে যায় কাজটা অর্ষার।ইরহাম রাগ তড়তড় করে বেড়ে যায়।কোনো মতে খেয়ে উপরে চলে আসে।
অর্ষা তো রুশান উশা মুহিব নাইমের সাথে গল্প করতে বসে পরেছে।দুপুরের কিছুক্ষণ আগে অর্ষা নিজের রুমে আসলো।ইরহাম অর্ষাকে দেখা মাত্রই ওকে টেনে ওর বাহু চেপে ধরলো।ইরহামের চোখ দেখেই অর্ষা বুঝে গেলো ইরহাম এখনো রেগে আছে।অর্ষা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু পুরুষ মানুষের শক্তির সাথে কি অর্ষার মতো ছোট খাটো মেয়ে পেরে উঠে।
ইরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,,
—“সকালে পা দিয়ে গুতা কেনো মারলে তুমি”[লেখিকা ইশা আহমেদ]
—“আপনাকে মারতে চেয়েছিলাম নাহ।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিক হয়েছে রুশানের জায়গায় আপনার গুতাটা লেগেছে।”
—“বেয়াদপ মেয়ে স্যারকে কিভাবে রেসপেক্ট করতে হয় জানো নাহ”
—“আইছে আমার স্যার রে।এই যে মিস্টার আপনি এখন ইসলাম এবং সমাজের সব নিয়ম মেনে জামাই লাগেন।”
—“ওকে ফাইন।স্যার না হয় বাদ দিলাম হাসবেন্ডকে কিভাবে সম্মান করতে হয় জানো না তুমি”
ইরহাম বাধন একটু হালকা করতেই অর্ষা সেই সুযোগে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভেংচি কাটে ইরহামকে।ইরহাম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে অর্ষার দিকে।অর্ষা জামা কাপর নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকার সময় বলে,,,,
—“আপনাকে জামাই হিসাবে মানিই না আবার সম্মান হুহ।যদিন আমায় ভালোবাসতে পারবেন সেদিন এসে এই কথা বলবেন তার আগে না অসভ্য পুরুষ”
ইরহাম হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।কি বলে গেলো মেয়েটা অসভ্য পুরুষ সে অসভ্যতামির কি করলো যে তাকে অসভ্য বানিয়ে দিলো।সে তো অর্ষাকে খারাপ ভাবে স্পর্শ ও করেনি।অর্ষার কথাগুলো ইরহামের মাথার উপর দিয়ে গেলো।
২৩.
বিকাল ৫:৩০টার মতো বাজে।ইরহাম রুশান,মুহিব,নাইম মানে সব ছেলেরা ড্রয়িংরুমে বসা।আরিশা আবদার করেছে তার জিজুকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।ইরহামও রাজি হয়ে গেলো।ইয়াদ আর ইলমাকেও ফোন করে আসতে বলেছে।মেয়েগুলো রেডি হচ্ছে।আধা ঘন্টা যাবত সবাই অপেক্ষা করছে।
রুশান নাইম মুহিবের অস্বস্তি হচ্ছে।স্যারের সাথে এভাবে বসে থাকাটা কেমন কেমন লাগছে ওদের কাছে।ইরহাম একমনে ফোন টিপে যাচ্ছে।রুহান দৌড়ে আসে ইরহামের কাছে।ইরহাম রুহানকে দেখে হেসে কথা বলতে থাকে।
প্রতিবারের মতো রুশান,নাইম মুহিব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো ইরহামের দিকে।
—“চলুন হয়ে গিয়েছে আমাদের”
অর্ষার কথায় ইরহাম অর্ষার দিকে তাকায় কিন্তু অর্ষা ততক্ষণে পিছনে ফিরে চলে গিয়েছে।অর্ষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে ইরহাম।
—“কি হলো জিজু যাবে না চলো চলো”
রুহানের কথায় ইরহাম হালকা হেসে ওর হাত ধরে বাইরে আসে।বাইরে আসতেই দেখে গাড়িতে সবাই বসে পরেছে।ইরহামের গাড়িতে আরিশা,মুহিব বসেছে পেছনে।ইরহাম রুহানকে তার পাশে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পরে।উশা নাইম যাবে নাইমের বাইকে আর রুশানের সাথে যাবে অর্ষা।অর্ষা এক প্রকার জোর করেই রুশানের সাথে যাচ্ছে।
গন্তব্য স্থলে পৌছাতে ১৫ মিনিট লাগে।অর্ষার জায়গাটা ভীষণ পছন্দের।খাল পেয়ে পার্কটা তৈরি করা হয়েছে।প্রথমে টিকিট কাটতে হয় ভেতরে ঢোকার জন্য।ভেতরে ঢুকতেই গাছপালা চোখে।
পরে যা এখানকার সৌন্দর্যকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।কিছুদের যেতেই খালের পাড়ঘেষে রেলিং দেওয়া সুন্দর জায়গা।খালে সবাই নৌকা নিয়েও ঘুরে বেড়াতে পারে।এর ব্যবস্থাও আছে।
রুশান জোরে বাইক চালানোর ফলে কিছুক্ষণ আগেই আসে বাকিদের থেকে।রুশান অর্ষা টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে পরে।অর্ষা বাচ্চামি দেখে হেসে ফেলে রুশান।বোনটা তার বড় হয়ে গেলো বিয়েও হয়ে গিয়েছে।
২৪.
—“ইয়াদ বাবা প্লিজ চল ইরহাম তোকে ইলমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তুই যদি এখন না নিয়ে যাস ইলামাকে তাহলে বেচারির খুব মন খারাপ হবে”
—“মামনি ওখানে অর্ষা আছে।অর্ষাকে দেখলে যদি ভুল কাজ করে ফেলি”
আয়রা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,,
—“আমার তোর উপর ভরসা আছে বাবা।আমার ছেলে যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে তা আমি জানি।প্লিজ নিয়ে যা বাবা”
ইয়াদ রাজি হয়।কষ্ট হলেও একমাত্র বোনের জন্য সে এতটুকু করতে পারবে।বড্ড ভালোবাসে ইরহাম আর ইয়াদ ইলমাকে।ইয়াদ রেডি হয়ে ইলমার রুমে আসে।ইলমা মন খারাপ করে বসে আছে।
ইয়াদ মৃদু হাসে।ধীর পায়ে এসে ইলমার পাশে বসে।ইলমা নিজের চিন্তায় বিভোর তখনও।রুমে কেউ যে প্রবেশ করেছে তাও টের পায়নি সে।
—“কি হলো বনু যাবি না তুই।আমি তো যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছি।”
ইলমা চমকে ওঠে।ইয়াদকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।তারপর অভিমানী কন্ঠে বলে,,,
—“যাবো না আমি। যাও তুমি ঘুমিয়ে থাকো”
—“রাগ করে না সোনা বন।চল তাড়াতাড়ি নাহলে সবাই আমাদের ছাড়াই মজা করে ফেলবে।”
মজা করে ফেলবে শুনে ইলমা এক লাফে উঠে দাঁড়ালো।ইয়াদও হেসে বোনের হাত ধরে বাইরে প্রেশ করে।আয়রার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পার্কের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।ইলমা তো মহাখুশি ভাবিকে দেখবে,কথা বলবে।বিয়ের দিন মোটেও কথা বলতে পারিনি সে।
চলবে~