ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-১২

0
474

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

কিছু ছবি তোলার পর অর্ষা ছিটকে দূরে সরে যায় ইরহামের থেকে।ইরহাম মনে মনে হাসে।অর্ষা আলাদা হ্যা সবার থেকে আলাদা।ইরহামের কোনো মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট কোনো কালেই ছিলো নাহ।কিন্তু অর্ষাই একমাত্র মেয়ে যার প্রেমে পরেছে যার চোখের প্রেমে পরেছে।

ইরহামের হৃদহরনী।ইরহাম অর্ষার দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে ওঠে।এই দৃশ্য কেউ না দেখলেও ইয়াদ খেয়াল করে।ইয়াদ মলিন হাসে।তার ভাই হয়তো ভালোবাসে অর্ষাকে।কিছুক্ষণ আগে ইরহাম অর্ষাকে একসাথে দেখে তার বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

অর্ষা নিজের কথা বলা দুষ্টমিতে মেতে ছিলো এতো সময়।ইয়াদকে তার মাত্রই খেয়ালে এসেছে।ইয়াদ দূরে দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষা ইলমাকে জিজ্ঞেস করে,,,

—“মিষ্টি পাখি উনি কে”

অর্ষা ইশারা করে ইলমাকে দেখিয়ে কথাটা বলে।ইলমা ইয়াদকে দেখে হেসে বলে,,,
—“ভাবিমনি তুমি আমার ছোট ভাইয়াকে চেনো না।উনি হলেন তোমার ছোট দেবর ইয়াদ ইনান চৌধুরী।”

অর্ষা ইলমার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দেয়।সে আসলেই জানতো না ইরহামরা দুই ভাই এক বোন।আসলে কেউ ইয়াদের কথা তোলেইনি।আরিশা ইয়াদের নামটা শুনে বিড়বিড় করে আওড়ায়।অর্ষা খুশি মনে ইয়াদের সামনে এসে মিষ্টি হেসে বলে,,,

—“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?”

ইয়াদ চমকায় ভীষণ ভাবে চমকায়।সে অন্যদিকে তাকিয়ে অর্ষার কথায় ভাবছিলো তখনই হুট করে অর্ষা এসে কথাটা বলল।ইয়াদ অন্যদিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলল,,,

—“ওয়ালাইকুম আসসালাম ভা……বি।জি আমি ভালো আছি আপনি”

ভাবি বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল ইয়াদের কিন্তু বলতেই হবে।ইয়াদ অর্ষাকে অনেক কষ্টেই ভাবি বলেছে।ভালোবাসার মানুষকে কি ভাবি বলা যায়।অর্ষা তার মাঝে বলল,,,

—“আমিও ভাইয়া।আমি খুবই দুঃখিত ভাইয়া কালকে আপনার সাথে কথা বলতে না পারার জন্য।আপনি কিছু মনে করবেন না”

—“না না আমি কিছু মনে করিনি।আর আমিও কালকে একটু অসুস্থ থাকায় বাসায় চলে গিয়েছিলাম”

—“আরে ভাইয়া আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন সমস্যা নেই।আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো চলুন আমাদের সাথে মজা করবেন।”

—“আমি আসলে একটু অসুস্থ ভা…বি।তুমি যাও কোলাহল ভালো লাগছে না।”

—“ভাইয়া আপনার হয়তো আমাকে ভাবি বলতে অসুবিধা হচ্ছে আপনি আমায় অর্ষা বলেই ডাকতে পারেন।”

ইয়াদ “হুম” বললে অর্ষা ইয়াদকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিকে ইলমা আরিশার কাছে চলে আসে।ইয়াদ মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।পার্কে বেশি লোকজন নেই আজকে।ইলমা আরিশা ছবি তুলছে।রুশান বেচারা ছবি তুলতে তুলতে শেষ।মুহিব রুহানের সাথে দুষ্টমি করছে।নাইম উশা গল্প করছে।

ইরহাম অর্ষাকে পর্যবেক্ষণ করছে।অর্ষার চোখ ইরহামের উপর পরতেই দেখে ইরহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে।অর্ষা অস্বস্তি ফিল করে।নিজেকে একবার দেখে নেয় ভালোভাবে।ইরহাম অর্ষার কান্ড দেখে মনে মনে হেসে চলেছে।

ছবি তোলার পর্ব শেষ হতেই ওরা সামনে এগোয়।সামনে এগোতেই দেখতে পায় নৌকার ছড়াছড়ি।অসংখ্য নৌকা পাড়ে রয়েছে।কৃষ্ণচূড়া গাছটা খালের পাড় ঘেষে রয়েছে।নদীর পাড়ে যাওয়ার রাস্তাটা কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরা।অর্ষা সেখান থেকে একটা কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কানে গুঁজে ফেললো।

নৌকার কাছে আসতেই ওরা তিনটা নৌকা ভাড়া করলো।রুশান সয়তানি করে একটা নৌকায় শুধু অর্ষা আর ইরহামকে উঠিয়ে দেয়।অন্যটায় সে আরিশা,মুহিব ইলমা আর রুহান আর আরেকটায় উশা নাইম।ইয়াদ অসুস্থতার বাহানা দিয়ে যায়নি।

অর্ষা বসে বসে সেলফি তুলতে ব্যস্ত আর ইরহাম সে তো অর্ষার চোখ দেখে নিজের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।মনে হচ্ছে কতো বছর সে দেখেনি এই চোখ জোড়া।সেলফি তুলে বিরক্ত হয়ে অর্ষা ইরহামের কাছে এসে বলে,,,

—“এই যে শুনছেন আমাকে কি কিছু ছবি তুলে দেওয়া যাবে।”

ইরহাম অর্ষার কথা না শোনার ভান করে।অর্ষা বিরক্ত হয় ইরহামের কান্ডে।সে ইরহামের কানের কাছে চিল্লিয়ে বলে,,,,

—“আআআআপনি কি আমার কিছু ছবি তুলে দিতে পারবেন”

ইরহাম আরেকটু হলে সোজা পানিতে পরতো।এতো জোড়ে কানের কাছে চেঁচিয়েছো অর্ষা।অর্ষা ভয় পেয়ে যায়।এই নৌকায় তার সাথে শুধু ইরহামই আছে।এখন তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেও কেউ দেখবে না।অর্ষা ভাবে ইরহাম তাকে এবার ধমক দিবে কিন্তু ইরহাম তার পরিবর্তে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,

—“স্টুপিড এভাবে কেউ কানের কাছে চেঁচিয়ে বলে।পোস দাও ছবি তুলে দিচ্ছি।”

অর্ষা ইরহামের সামনে পোস দিতে পারছে না।যতই হোক আগে স্যার ছিলো তার।কেমন একটা অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরেছে।বিয়ের পর থেকেই এমন হচ্ছে তার সাথে।আগে তো কখনো ইরহামের সামনে থাকলে এমন হতো না।তখন তো বিরক্ত লাগতো।

অর্ষা দুই একটা ছবি তুলে বলে,,,
—“আর দরকার নেই ছবি তোলার”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

ইরহাম কথা না বাড়িয়ে অর্ষাকে ওর ফোনটা ফেরত দিয়ে দেয়।অর্ষা বসে বসে ভিডিও করছে খালের এপাশ ওপাশের।খালটা অনেকটাই বড়।মাঝি নৌকা নিয়ে আশেপাশে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।ইরহাম অর্ষার অজান্তে কিছু ছবি তুলে নেয়।

২৬.

নাইম অনেকক্ষণ ধরে হাসফাস করছে কিছু বলার জন্য।কিন্তু বলে উঠতে পারছে না।কিভাবে যে সে উশাকে তার মনের কথা জানাবে বুঝে উঠটে পারছে না তখনই ফোনে টুং করে মেসেজ আসে।নাইম মেসেজ চেক করে দেখে রুশান লিখেছে,,

“অত সংকোচ না করে মনের কথাটা জানিয়ে দে।যখন দূরে চলে যাবে তখন কিন্তু হাজার কেঁদেও পাবি না তাকে।আর উশার জন্য কিন্তু ছেলে দেখছে ওর বাবা মা”

শেষের টুকু দেখেই নাইমের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।ও কল্পনা করতেও পারবে না উশাকে অন্যকারো সাথে আর সেখানে বাস্তবে কি করে সয্য করবে।নাইম উশার কাছে এসে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,,,

—“আমি সত্যিই জানি না কীভাবে কখন তোকে ভালোবেসেছি তবে আমার শুধু তোকে চাই,তোকে অন্যকারো পাশে সয্য করা আমার পক্ষে পসিবল না।আমি তোকে ভালোবাসি উশা ভীষণ ভালোবাসি আমায় ছেড়ে যাস না কখনো”

উশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নাইম কি বললো তাকে ভালোবাসে!উশা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না নাইম তাকে ভালোবাসে আর সেই কথা বলছে।উশার চোখে পানি টলমল করছে।নাইম তা দেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

—“কি হলো তুই কাঁদছিস কেনো উশা।তোর কি আমাকে পছন্দ না। যদি পছন্দ না হয় তবুও তোকে আমায় ভালো বাসতে হবে”

—“আমি তোকে ভালোবাসি পাগল ভীষণ ভালোবাসি তুই এতোদিন কেনো বললি না”

—“যদি বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলিস সেই ভয়ে”

—“ভালোবাসি”

উশা নাইমের বুকে মাথা রেখে কথাটা বলে।নাইম আলতো হাতে উশার মাথায় হাত রেখে বলে,,,

—“আমিও”

উশা জড়িয়ে ধরে নাইমকে।নাইমও জড়িয়ে ধরে।কিছুক্ষণ যেতেই উশার মনে পরে ও কি করেছে নাইম সরিয়ে দূরে এসে গিয়ে দাঁড়ায়।ইশ কি লজ্জা লাগছে তার এখন।এতো লজ্জা কেনো লাগছে।নাইমের দিকে তাকাতেও অস্বস্তি হচ্ছে।

২৭.

রুশান হাসে উশা নাইমকে দেখে।রুহান বসে বসে গেমস খেলছে।ইলমা আর আরিশা ছবি তুলে যাচ্ছে।রুশান ক্যামেরা নিয়ে এদিক ওদিকের ছবি তুলছে।হঠাৎ করেই ইলমার হাসিমাখা মুখ ক্যামেরার সামনে আসে।

—“রুশান ভাইয়া তোমার কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে বলো তো”

আরিশার কথায় লজ্জায় পরে যায় রুশান।তার যে গার্লফ্রেন্ড নেই।পিয়র সিঙ্গেল।রুশান আরিশাকে ধমক দিয়ে বলে,,,

—“এগুলো কি ধরনের কথা আরিশা আমি তোর বড় ভাই হই।বড় ভাইকে কেউ এইসব প্রশ্ন করে।”

আরিশা মুখ বাঁকিয়ে বলে,,,

—“ওরে আমার বড় ভাই রে।বড় ভাই যখন তখন অবশ্যই গার্লফ্রেন্ড থাকার কথা তাই না।এখনকার যুগে ছেলেদের দুই তিনটা গার্লফ্রেন্ড আর তোমার নেই আহারে বেচারা”

—“নেই তো কি হয়েছে।গার্লফ্রেন্ড যে থাকতেই হবে কোনো কথা আছে।কাউকে মনে ধরেনি তাই বানায়নি”

ইলমা দুই ভাই বোনের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়।ইলমা আরিশা আবারও তাদের গল্পে ব্যস্ত হয়ে পরে।রুশান ইলমার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে হাসে।মেয়েটা হাসলে ভীষণ কিউট লাগে দেখতে।

২৮.

অর্ষা দূর থেকে ওদের ওভাবে দেখে বেশ খুশি হয়।এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো ওরা।যাক অবশেষে সেই দিনটা আসলো।ওরা দুইজন এক হলো।অর্ষা আনমনে বলে ওঠে,,,

—“ইশ ভালোবাসা কি সুন্দর।অন্যের ভলোবাসা দেখতেও সুন্দর লাগে।পৃথিবীর সকল ভালোবাসা পূর্নতা পাক”

ইরহাম অর্ষার কথা শুনে ফেলে।ইরহাম কোনো রিয়াক্ট করে না।শুধু আড়ালে হাসে।নিজের মতো ফোন চিপতে থাকে।অর্ষা কথাটা বলার পরেই মুখ হাত দিয়ে মনে মনে বলল,,,

—“অর্ষা তুই সবসময় এই অসভ্য পুরুষ মানুষের সামনেই সব উল্টাপাল্টা কথা বলে ফেলিস।তোর বুদ্ধি কবে হবে”

ইয়াদ দূর থেকে দাঁড়িয়ে অর্ষা ইটহামকে দেখছে।কি সুন্দর ছবি তুলে দিলো কিছুক্ষণ আগে ইরহাম অর্ষাকে।এগুলো দেখে ইয়াদের চোখের কোনে পানি জমা হয়।নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে তবুও চোখ ভিজে আসে।

ইরহাম অর্ষা বসে বসে বোরিং হচ্ছে।হাতের চুড়িগুলো দেখছে।অর্ষা হাত নাড়ানোর ফলে চুড়িগুলো বাজছিলো।ইরহাম মনোযোগ দিয়ে শোনে চুড়ির শব্দ।মাঝি নৌকা নিয়ে ঘাটে আসতেই অর্ষা ইরহাম সহ বাকি সবাই নেমে পরে।

ইরহাম অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

—❝আমার সব সুখ তোমায় ঘিরে হোক সুখপাখি,তোমার ওই মায়াবী চোখ আমায় মাতাল করছে বারবার বরংবার❞

চলবে~