#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪
সবাই টেবিলে খেতে বসেছে।ইরিনা আর মৌ ইরহাম ইয়াদ আর ইলমাকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে।ইরিনা বেগম জোর করেই ইয়াদ ইলমাকে রেখে দিয়েছে।ইরহাম ও চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ইরিনা যেতে দেয়নি।অর্ষা মুখ বাকিয়ে মনে মনে বলে,,
—“ইশশ ঢং দেখে বাঁচি না বাবা।জামাই জামাই করে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।আমাকে খাওয়াবে ভালো ভালো তা না এই অসভ্য পুরুষ মানুষকে জামাই আদর দিচ্ছে।এটা আমার মা না হয়ে এই বজ্জাত ব্যাডার মা হলে ভালো হতো।”
ইরহামের খেতে খেতে জান শেষ।কালকে থেকে ইরিনা আর মৌ ইচ্ছা মতো খাইয়ে যাচ্ছে তাকে।এতো খাবার ইরহাম কখনোই খায় না।নিজের হেলথ্ এর ব্যাপারে খুব সচেতন ইরহাম।একদিনে খেয়ে সে মনে হয় দশ কেজি বেড়ে গিয়েছে।তবুও হাসি মুখে খাচ্ছে।
—“আম্মু আর দিবেন না অনেক হয়েছে আর দিলে খেতে পারবো না সব নষ্ট হবে”
—“না না বাবা বাহানা দিলে চলবে না তো।খেতেই হবে তোমাকে সব”
ইরহাম অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
—“আম্মু সত্যি আর পারবো না দিবেন না প্লিজ”
ইরিনা আর দেয় না।মৌ রহমান ইলমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে সযত্নে।ইলমা অবাক হয়ে এবাড়ির সবাইকে দেখছে।এতো ভালো কেনো এরা।আরিশা খাচ্ছে আর ইয়াদকে জ্বালাচ্ছে।ইয়াদ বিরক্ত হলেও কিছু বলে না।
অর্ষা নিজের মতো খেয়ে চলেছে।ইরহামকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।আগে সবাই তাকে নিয়ে মেতে থাকতো আর এখন এই বজ্জাত ব্যাডারে নিয়ে।বিরক্তির সপ্তম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।তার মাই এসব করছে আর কাকে কি বলবে সে।অর্ষার খাওয়া শেষ উঠতেও পারছে না।রুশানকে বলে,,
—“রুশাইন্না আমাকে নিয়ে একটু ড্রয়িংরুমে চল”
রুশান ভেংচি কেটে বলে,,,
—“জীবনে জ্বালাইছোস না এখন তার প্রতিশোধ নেবো তোর বররে বল নিয়ে যাইতে পারবো না আমি”
রুশানের কথায় অর্ষা কটমট দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।রুশান তা দেখে মুখ বাঁকালো।অর্ষা উশাকে বলল,,,
—“উশা আমাকে একটু ড্রয়িংরুমে নিয়ে চল”
উশারও খাওয়া শেষ।ও অর্ষাকে নিয়ে হাত ধুইয়ে নিজেও ধুয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে।আরিশা আর ইলমাও কিছুক্ষণ পর এসে ওদের পাশে বসে।চারজন মিলে গল্প করা শুরু করে দিয়েছে।ছেলেদের খাওয়াও শেষ।সবাই এসে ড্রয়িংরুমে বসে পরে।ইরহামের অবস্থা কাহিল।বেচারাকে ইরিনা আর মৌ মিলে খাইয়ে খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে।
ইয়াদ বসে ফোন টিপছে।অর্ষাকে মাথা থেকে বের করতে চাইছে।চাইলেও সম্ভব না।কিন্তু চেষ্টা তো করে দেখতেই পারে।ইয়াদ ফোনে তাও অর্ষার ছবি ঘাটছিলো।কিন্তু কিছুক্ষণ দেখে ফোনে অর্ষার যত ছবি ছিলো ডিলিট করে দিলো।এরপর অর্ষার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মনে মনে বললো,,,
—“আমি না হয় তোমায় ডুবে ডুবে ভালোবেসে গেলাম।তোমার জন্য আমার মনের #ভালোবাসার_রং_মিছিল গুলো না হয় ধামা চাপা পরে থাক।তুমি সুখী থেকো।তোমার সুখেই আমার সুখ অর্ষা।”
ইরহাম এসে সিঙ্গেল সোফায় বসে পরে।রুশান নাইমকিছু নিয়ে কথা বলছে।মুহিব অর্নার সাথে ফোনে কথা বলছে।রুহান ঘুমাতে চলে গিয়েছে।মৌ ইরিন যাওয়ার সময় ঘুমাতে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে গিয়েছে।কিন্তু এরা কি শোনার মতো মানুষ।রুশান বলে ওঠে,,,
—“সবাই ছাদে যাই মাত্র দশটা বাজে এখন কেউই ঘুমাই না আমরা তার থেকে বরং ছাদে গিয়ে আড্ডা দেই”
অর্ষার খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পায়ে ব্যাথার কারণে পারবে না।অর্ষার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো রাতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিবে।অবশেষে তার ইচ্ছাটা পূরন হচ্ছে।অর্ষা খুশির ঠেলায় দিক বেদিক হারিয়ে বলে ফেলে,,,
—“রুশাইন্না রে তোরে যে কি করতে মন চাচ্ছে রে। মনে হচ্ছে তোরে জড়াই ধরে একখান চুম্মা দেই”
অর্ষার কথা শুনে উপস্থিত সবাই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে অর্ষার দিকে।সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকাতে দেখে অর্ষার মাথায় আসে ও কি বলেছে।নিজের প্রতি ভীষণ বিরক্ত হয়।লজ্জায় কারো দিকে তাকাতেও পারছে না।জামাইয়ের সামনে ভাইকে চুমু দিয়ার কথা বলে ফেলেছে ছি ছি ছি।
রুশান কপাল চাপড়াচ্ছে।আগেই বোঝা উচিত ছিলো এই মেয়ে সবার সামনে ভুলভাল না বকলে এর শান্তি হয় না।ইরহাম নিজের মতো ফোন চেপে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কিছু শুনেইনি।অর্ষা স্বাভাবিক কোনো কথা বলেছে।ইয়াদ অর্ষার কথা শুনে হেসে ফেলেছে।মেয়েটা এতো দুষ্ট অর্ষার এই স্বভাবের জন্যই প্রেমে পরতে বাধ্য হয়েছে ইয়াদ।
রুশান নাক সিটকে বলে,,,
—“ছি ছি অর্ষা তুই জামাই থাকতে ছোট ভাইরে চুম্মাইতে চাস।তোর জামাই রে চুমু দে একশো ডা আমাগে সমস্যা নাই বোইন।”
রুশানের কথা শুনে অর্ষার কাশি শুরু হয়ে গিয়েছে।এই ছেলের কি কোনো বুদ্ধি হবে না ইরহাম স্যারের সামনে এমন বেহায়াপনা কথা বলতে কি লজ্জা করলো না।অর্ষা রাগি দৃষ্টিতে তাকালো রুশানের দিকে।অর্ষা রুশানকে হাতে পেলেই কাঁচা চিবিয়ে খাবে।ইলমা আরিশা হেসে যাচ্ছে।ইরহাম ফোন পকেটে পুরে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,
—“তোমরা আড্ডা দিবে বললে না চলো ছাদে চলো সবাই।এই টপিক এখানেই অফ।”
রুশান দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।সবাই উপরে উঠতে লাগলো।সবাই চলে গিয়েছে বলতে গেলে।ইরহাম এসে অর্ষাকে কোলে তুলে নিলো।অর্ষা কলার খামচে ধরলো।অর্ষা ইরহামের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।ইরহাম সোজা হাঁটতে হাঁটতে বলল,,,
—“ইডিয়ট এভাবে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন ভাবে তাকিয়ে আছো যেনো ছেলে দেখোনি তুমি কখনো এন্ড আই নো আই আম হ্যান্ডসাম ম্যান”
অর্ষা ভাবতেও পারিনি ইরহাম এমন কথা বলবে।ইরহামের দৃষ্টি সোজা তবু সে বুঝলো কি করে অর্ষা তাকে দেখছে।অর্ষার লজ্জা লাগে ইরহামের কথায়।তাও সে বলে,,,
—“ওরে আমার চেহারে হিরো আলমের লাইট ভার্সন আপনি।বুঝতে পারছেন তো কি বলতে চাইছি?আবার নিজেকে ভাবে হ্যান্ডসাম।আপনি হ্যান্ডসাম এর h টাও না বুঝেছেন”
—“এর জন্যই তো তুমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে।”
অর্ষার মুখ বন্ধ করার জন্য এই একটা কথায় যথেষ্ট ছিলো।ইরহাম মনে মনে হাসে।ছাদে আসতেই দেখে সবাই গোল করে বসে আছে।ইয়াদের পাশে আরিশা, উশা নাইম পাশাপাশি মুহিব আর ইলমা পাশাপাশি বসে আছে।রুশান এখনো আসেনি।ইরহাম ইয়াদের পাশে বসে অর্ষাকে নিজের পাশে বসায়।
রুশান গিটার আর কফি নিয়ে হাজির।রুশা এসে ইলমা আর অর্ষার মাঝে বসে পরে।সবাইকে কফি দিয়ে বলে,,
—“আজকে সবাই মিলে গান গাওয়া যাক আমি সব ব্যবস্থা করে এসেছি”
অর্ষা রুশানের হাত থেকে ছো মেরে গিটার ছিনিয়ে নেয়।রুশান ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় অর্ষার কান্ডে।অর্ষা গিটারে সুর উঠাটে চায় কিন্তু পারে না।তার ভীষণ সখ গিটার বাজানোর।রুশানকে বললেও রুশান শেখাইনি কখনো।ইরহাম খেয়াল করে অর্ষার হাতের উপর হাত রেখে বাজাতে থাকে ঠিকমতো।
অর্ষা নিজের হাতের উপর ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে।এরকম স্পর্শের সাথে তার এইন প্রথম পরিচয়।রুশান মুহিবের নাইম বাদে অন্য কোনো ছেলের সাথে কখনো কথাও বলেনি অর্ষা।ইরহামের স্পর্শ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
রুশান তো মুখ ফসকে বলেই ফেলে,,,
—“ইশ কি রোমান্টিক।আল্লাহ সিঙ্গেল মানুষের সামনে এমন করতেছে না জীবনেও ভালো হবে না এদের”
ইরহাম ধমক দিয়ে বলে,,,,”সাট আপ স্টুপিড অতিরিক্ত কথা বলো তুমি”
রুশান ইরহামের ধমকে লাফিয়ে উঠে।ইলমার গায়ে গিয়ে পরে।বেচারি চিকনি ইলমার অবস্থা খারাপ।রুশান কাঁদার ভান করে বলে,,,
—“অর্ষারে তোর জামাই এখনো আমাগে দুলাভাই হতে পারলো না সেই স্যারই রয়ে গেলো রররররে”
—“তুমি চুপ করবে ইডিয়ট।বাচ্চামো করা কি তোমাদের স্বভাব।ভার্সিটিতে পরো তাও বাচ্চামো করছো।তোমাদের থেকে তো আরিশা ম্যাচিউর।”
—“দেখলি দেখলি অর্ষা আমাকে কিভাবে অপমান করছে তোর বর”
অর্ষা ইরহামকে রাগ দেখিয়ে বলে,,,
—“আমরা না হয় বাচ্চামো করি তাহলে এখন আপনি কি করছেন এটা ভার্সিটি না এটা আমার বাড়ি মানে আপনার শ্বশুর বাড়ি এখানে স্যারগিড়ি করছেন লজ্জা লাগে না”
—“না লজ্জা লাগে না কারণ তোমাদের সোজা করতে হলে যা করার তাই করবো আমি”
রুশান অর্ষা একসাথে বলে,,
—“ইন ইউর ড্রিম মি.আমরা ভালো হচ্ছি না”
ইরহাম ভ্রু কুচকে তাকায় দুই ভাই বোনের দিকে।ইলমা বলে ওঠে,,,
—“আরে তোমরা এইগুলো রাখো।জানো দা ভাই কতো সুন্দর গান গাইতে পারে।দা ভাই একটা গান গাও না”
ইরহাম না বললেও কেউ শুনতে চায় না।ইয়াদও জোর করে।সবার জোর করায় ইরহাম গিটারে সুর তুলে গাইতে থাকে,,,
অবাক চাদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী,
আড়াল হতে দেখেছি তোমায়
নিষ্পাপ মুখখানি
অবাক চাঁদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী
আড়াল হতে দেখেছি তোমায়
নিষ্পাপ মুখখানি
ডুবেছি আমি তোমার চোখের,অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়া,তো আমার তরে নয়।
ডুবেছি আমি তোমার চোখের,অনন্ত মায়ায়,
বুঝিনি কভু সেই মায়া, তো আমার তরে নয়।
চলবে~