#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৫
অর্ষা সেই নেশাক্ত দৃষ্টিতে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না।চোখ ঘুরিয়ে নেয়।ইরহাম অর্ষার মুখের সামনে পরে থাকা চুল কানের পেছনে গুঁজে দেয়।অর্ষার হার্টবিট জোরে জোরে যাচ্ছে।নিশ্বাস ভারি হয়ে এসেছে।ইরহাম অর্ষাকে নিচে ফেলে নিজে অর্ষার উপরে উঠে যায়।অর্ষা চোখ বন্ধ করে আছে।অর্ষার ইরহামের ওই মাতাল করা চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই।
—“তুমি কাছে থাকলে কেনো আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।মাতাল হয়ে যাই আমি।”
অর্ষা কাঁপছে ভীষণ ভাবে।এই লোকটা তার আশেপাশে থাকলে তারও সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।ইরহামের নেশাক্ত কন্ঠ অর্ষার ভেতরে ঝড় তুলে।ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের বেলকনিতে যায়।বেলকনি থেকে সমুদ্র স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।দু’জন ভালোবাসার মানুষের আজ মিলন হয়েছে তাদের মান অভিমানের পালা শেষ হয়েছে।তবে আদেও কি তাদের টকঝাল মিষ্টি ঝগড়া শেষ হয়েছে।মোটেও না অর্ষা তার অসভ্য পুরুষের সাথে সারাজীবন ঝগড়া কডরবে।
অর্ষা ইরহামের কাঁধে মাথা রেখে সমুদ্রের পানে তাকিয়ে আছে।ইরহাম তার পাশে বসে থাকা একান্ত ব্যক্তিগত চাঁদকে দেখছে।মেয়েটা তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়লো।অর্ষা বকবক করছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইরহাম দেখে চলেছে তার প্রেয়সীকে।অর্ষা কথা বলতে বলতে ইরহামের কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরে।
—“পাগলি বউ আমার,পাগল করে ছাড়লে আমাকে”
ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়।অর্ষার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ইরহাম বেশ কিছুক্ষণ।এরপর অর্ষার কপালে চুমু খেয়ে অর্ষার পাশে শুয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
৫৫.
সকালে অর্ষার ঘুম ভাঙতেই নিজের উপর ভাড়ি কিছু অনুভব করে।কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখ খুলে ইরহামের ঘুমন্ত মুখটা দেখে।এক নিমেষেই মন ভালো হয়ে যায় অর্ষার।অর্ষা ইরহামের কপালে টুপ করে একটা চুমু খায়।
—“বউ আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো কেনো?জেগে থাকলেই তো কয়েকটা চুমু দিতে পারো।আমি কিন্তু কিছু মনে করব না”
অর্ষা হকচকিয়ে যায়।ইরহাম চোখ বন্ধ রেখেই কথাগুলো বলল।অর্ষা ভেবেছিলো ইরহাম ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু তার অসভ্য পুরুষ যে না ঘুমিয়ে তাকে বোকা বানাচ্ছিল।অর্ষা ইরহামের কাছ থেকে উঠে যেতে চায়।ইরহাম অর্ষার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখে।অর্ষা মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলে,,,
—“আপনি আমাকে ধোকা দিয়েছেন জেগে থেকেও ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় করেছেন বদ লোক”
ইরহাম চোখ খুলে তাকায় অর্ষার দিকে।অর্ষা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়।ইরহাম তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।অর্ষা দ্রুত উঠে পরে।ইরহাম ও উঠে দাঁড়ায়।ইরহাম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।অর্ষা ফোন বের করে সময় চেক করে ৭ টা বাজে।এখনও কেউ ওঠেনি।এখনই তার এখান থেকে নিজের রুমে চলে যাওয়া উচিত।
যদিও তারা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ তবুও সবার সামনে ইরহামের রুম থেকে বের হতে অর্ষার অস্বস্তি হবে।ইরহামকে বলে যাবে বিধায় ইরহামের অপেক্ষা করছে অর্ষা।ইরহাম বের হতেই অর্ষা উঠে দাঁড়ায়।
—“আমি এখন আমার রুমে যাচ্ছি।সবার সামনে বের হতে আমার লজ্জা লাগবে।”
—“বউ তুমি এইভাবে বের হতে চাইছো কিন্তু এভাবে তো তোমাকে শুধু আমিই দেখবো।আর কেউ না”
অর্ষার নিজের দিকে চোখ পরে।ওড়না নেই তার শরীরে।লজ্জা পায়।সে এতো সময় ওড়না ছাড়া ছিলো ইরহামের সামনে।ইশ কি লজ্জা।দ্রুত ওড়না খোঁজে ওড়না নিয়েই ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়।ইরহাম তা দেখে বাঁকা হাসে।অর্ষা ইরহামের এই লুকের ও প্রেমে পরে।ইরহাম পকেটে হাত গুঁজে তার দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অর্ষা কিছু না বলে বের হয়ে যেতে নেয় তখনই পেছন থেকে ইরহাম বলে ওঠে,,,
—“ড্রেস চেঞ্জ করে ফার্স্ট বাইরে আসো”
অর্ষা মাথা নাড়িয়ে বের হয় রুম থেকে।রুম থেকে বের হয়ে আসে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা।কাউকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।রুমে এসে নক করে।নাইম ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে।অর্ষাকে দেখে লাফিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।অর্ষা মুখ বাঁকিয়ে নাইমকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে রুমে ঢোকে।
অর্ষা রুমে ঢুকতেই নাইমের খেয়াল আসে।দ্রুত উশাকে টেনে তোলে।এরপর নিজে বাইরে চলে যায়।অর্ষা উশার দিকে তাকিয়ে একটা জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।উশার মাত্র ঘুম ভেঙেছে কালকে নাইম তাকে ঘুমাতে দেয়নি সারা রাত গল্প করেছে আর দুষ্টমি করেছে।অর্ষাকে দেখে থতমত খেয়ে তাকিয়ে থাকে।
৫ মিনিট পর অর্ষা বেরিয়ে দেখে উশা বলদের মতো হা করে তাকিয়ে আছে।সে মুখ বাঁকিয়ে বলে,,,
—“মুখ বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে আয়।তোদের রোমান্সের ঠেলায় আমার ইরহাম স্যারের সাথে থাকতে হয়েছে সয়তান মাইয়া”
—“তোমার তো আরো সুবিধা হয়েছে জানু।তুমি নিজেও স্যারের সাথে রোমান্স করে এসেছো”
—“তোকে বলেছে না নিজে যা আমাকেও তাই ভাবিস নাকি”
অর্ষা বেরিয়ে যায় রুম থেকে।বাইরে এসে দেখতে পায় ইরহাম দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়।সে মৃদু হেসে নিজের প্রেমিক পুরুষের কাছে চলে আসে।এই সুদর্শন পুরুষটা তার একান্তই তার।ভালোবাসে সে তার অসভ্য পুরুষকে।
—“এতো সময় লাগে আসতে দ্রুত আসতে বলেছিলাম আমি”
—“জামা চেঞ্জ করে আসবো তো”
ইরহাম অর্ষার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সোজা হাঁটতে থাকে।অর্ষাও ইরহামের সাথে হাঁটতে থাকে।অর্ষা আলতো হেসে ইরহামের পকেটে গুঁজে রাখা হাতের বাহু চেপে ধরে।ইরহাম মুচকি হাসে।ইরহামের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।চুলগুলো এসে চোখের সামনে পরেছে।দেখতে ভীষণ কিউট লাগছে।
ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে ডাব খেতে আসে।দু’জন ডাব খায়।এরপর সমুদ্র সৈকতে এসে পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটে দু’জন।ইরহামের মনে হচ্ছে সময়টাকে এখানেই থামিয়ে দিতে।সে হাজার বছর তাকিয়ে থাকতে পারবে নিজের প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে।অর্ষা হঠাৎ করে তাকায় ইরহামের দিকে ইরহাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।
—“এই যে মিস্টার অসভ্য পুরুষ এইভাবে তাকাবেন না আমি জানি আমি সুন্দরী।এভাবে তাকিয়ে আর বোঝাতে হবে না।”
অর্ষা ভেবেছিলো ইরহাম হয়তো অন্যদিকে তাকাবে।কিন্তু ইরহাম অর্ষার কোমড় চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,,
—“আমি জানি আমার বউ সুন্দরী।আর সেই রূপের দিকে তাকানোর অধিকার শুধু আমার আছে।”
অর্ষা ভেংচি কেটে বলে,,,”এসেছে আমার বউ ওয়ালা”
৫৬.
সকালে নাস্তা করে সবাই এখানের মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।আজকে রাতেই তারা নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিবে।রুশান তো সকাল থেকে অর্ষা আর উশার মজা উড়াচ্ছে।অর্ষা রেগে কয়েকটা বসিয়েও দিয়েছে।কিন্তু রুশান তো রুশান।এখনও বলে যাচ্ছে।অর্ষাও এবার বলে,,,
—“তো তুই নিজের শত্রুর সাথে কিভাবে মিলে গেলি বলতো কাল রাতে হাসছিলি তো দুজন বেশ”
—“বুঝিস না ইলমাকে নিজের করতে হলে তো তার বড় ভাইকে ইমপ্রেস করতে হবে তাই করেছি”
অর্ষা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রুশানের দিকে।রুশান বোকা হেসে ফোনের দিকে তাকায়।আসলে কালকে রাতে ইরহাম রুশান মুহিব নাইমকে সব খুলে বলে এবং তারা সবাই মিলে ইরহাম কি করে অর্ষাকে প্রপোজ করবে তার প্লান করে।
মার্কেটে এসে সবাই যার যার কাপল বা ফ্রেন্ডের সাথে ভাগ হয়ে যায়।উশা নাইম একসাথে গিয়েছে।অর্ষাকে ইরহাম নিয়ে গিয়েছে। বেচারা আপাতত সিঙ্গেল মুহিব আর জন্ম থেকে সিঙ্গেল রুশাইন্না একসাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে।দোকান থেকে ইরহাম অর্ষাকে পছন্দ করে বিভিন্ন ঝিনুক মুক্তার জিনিস কিনে দিচ্ছে।অর্ষার চোখ পরে চুড়ির দিকে।মনে পরে কালকের কথা সবাই গোলাপ রিং দিয়ে প্রপোজ করলেও ইরহাম তাকে চুড়ি দিয়ে প্রপোজ করেছে।
—“আচ্ছা আপনি আমায় চুড়ি দিয়ে কেনো প্রপোজ করলেন অসভ্য পুরুষ”
—“আমার প্রেয়সীর চুড়ি পছন্দ।তার চুড়ির ঝনঝন শব্দ আমায় মাতাল করে,বুকের মাঝে শান্তি দেয় তাই তো তাকে ভিন্ন ভাবে নিজের মনের কথা জানানো”
#চলবে