ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-২৬

0
428

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৬

৫৭.
ট্যুর থেকে ফিরেছে গতকাল রাতে।আজকে আর রুশান, অর্ষা বা বন্ধুমহলের কেউই ভার্সিটিতে যায়নি।সবাই আজকে নিজেদের বাড়িতে আছে।অর্ষা ঘুম থেকে উঠে বের হয় রুম থেকে।সোজা রুশানের রুমে চলে আসে।রুশান ঘুমাচ্ছিল।অর্ষার কি আর রুশানের শান্তির ঘুম সহ্য হয়।ওয়াশরুমে এসে এক মগ পানি এনে ঢেলে দেয় রুশানের গায়ে।

—“আম্মু আম্মু বাড়ির ছাদ ফুঁটো হয়ে বৃষ্টির পানি পরছে বাঁচাও বাঁচাও”

রুশান লাফ দিয়ে উঠে ঘুমের ঘোরেই আবোল তাবোল বকছে।অর্ষা রুশানের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে সোফায় বসে পরে।হাসির শব্দে রুশানের ঘোর কাটে।রুশান কোমড়ে হাত দিয়ে অর্ষার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,,,

—“সয়তান মাইয়া তুই আমারে ঘুমাইতেও দিবি না নাকি”

—“তোর শান্তি আমার সহ্য হয় না রে তাই জ্বালাতে এসেছি”

—“তবে রে কুত্তা মাইয়া দাঁড়া”

অর্ষা রুশানের রুম থেকে বের হয়ে ছুট লাগায়।রুশানও তার ভেজা টিশার্ট পরেই অর্ষার পেছনে দৌড় লাগায়।দুজন ছোটাছুটি করছে।আরিশা আর রুহান ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখছিলো।তারা টিভি রেখে বাস্তবের টম এন্ড জেরির মারামারি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে।আরিশা আর রুহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।

ইরিনা বেগম এসে দুজনকে ধমক দিয়ে খেতে বসায়।দুজন খাবার টেবিলে বসেও চোখে চোখে যুদ্ধ করেছে।মৌ রহমান হাসেন ছেলে মেয়েদের কান্ড দেখে।এই দুজন জীবনেও ঠিক হবে না।আসিফ আহমেদ বা আহিন আহমেদ কেউই বাড়িতে নেই।অর্ষাদের জামা কাপড়ের ব্যবসা।নিউ মার্কেটে অনেকগুলো দোকান আছে।আহিন আহমেদ সেগুলো দেখাশোনা করে। আসিফ আহমেদ একজন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

আর আহিন সব দোকানগুলোই দেখা শোনা করেন।আসিফ ভাইয়ের পরেই সেইসব ছেড়ে দিয়েছেন।তার এই সবে মাথা ব্যাথা নেই মোটেও।এভাবেই চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে তাদের পরিবার ভালোই চলছে।সুখেই আছে তারা।

সন্ধ্যায় চার ভাই বোন মিলে লুডু খেলতে বসেছে।রুশান চুরি করে একটা গুটি উঠিয়ে দিয়েছে এতে অর্ষা রেগে ঝগড়া করছে।রুশানও তো স্বীকার করছে না ঝগড়া করছে।মৌ রহমান নাস্তা দিতে আসেন।

—“তোরা এত ঝগড়া করিস কেনো বলতো তোদের দুজনের থেকে তো আরিশা আর রুহান ভালো ওরাও তোদের মতো করে না”

—“তুমি এটা বলতে পারলে ছোট আম্মু যাও কথানেই তোমার সাথে”

—“আরে অর্ষা মা আমি তো এমনি বলেছি সরি সরি”

অর্ষা ফিক করে হেসে দেয়।লুডু যে আর খেলা হবে না খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।তাই লুডু রেখে দেয়।এরপর মৌ রহমানের আনা নাস্তা খেতে শুরু করে চার ভাই বোন।খাওয়া শেষে সবাই দুষ্টুমি করে অনেক।আসিফ ও আহিন আহমেদ বাসায় আসলেই সবাই খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।

৫৮.

অর্ষা রুমে আসতেই ইরহামের কথা মনে পরে।ইরহাম তাকে কোনো ফোন বা মেসেজ দেয়নি।চিন্তা হয় অর্ষার।অর্ষা ফেসবুকে ঢোকে ইরহামের আইডিতে ঢুকতেই মেজাজ বিগড়ে যায়।প্রতিটা কমেন্টে মেয়েরা আই লাভ ইউ জান,বাবু আরো কতো কি লিখেছে।অর্ষা এখন ইরহামকে পেলে সত্যিই চিবিয়ে খেতো।অর্ষার ভাবনার মাঝে ফোনে কল আসে।স্কিনের দিকে তাকাতেই দেখে ইরহামের কল।

প্রথমবারে ফোন তোলে না অর্ষা।দ্বিতীয় বারে কল রিসিভ করে।অপর পাশ থেকে ইরহাম বলে ওঠে,,,

—“বউ একটু নিচে আসবে”

অর্ষা চেয়েছিলো কিছু কড়া কথা শোনাবে ইরহামকে।কিন্তু বউ ডাক শুনেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।এই মানুষটার কন্ঠটাই নেশালো।অর্ষার সব কিছু এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য ইরহামের বউ ডাকটাই যথেষ্ট।ইরহাম অর্ষাকে কথা বলতে না দেখে বলে,,,

—“কথা বলছো না কেনো?”

—“হু বলুন কি বলবেন”

—“নিচে আসতে বলেছি”

—“এতো রাতে নিচে এসে কি করবো”

—“আমি দাঁড়িয়ে আছি নিচে।দ্রুত আসো”

অর্ষা দ্রুত জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে সত্যিই ইরহাম এসেছে।চমকায় অর্ষা।ইরহামকে দেখে একটু ভরকায় অর্ষা।এতো রাতে এখানে কেনো বুঝতে পারছে না অর্ষা।

—“আপনি এতো রাতে এখানে কেনো অসভ্য পুরুষ”

—“আসো না বউ।এতো কথা কোনো বলো?”

অর্ষা ফোন না কেটে ওড়না ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে বের হয় রুম থেকে।নিজের বাড়ি থেকেও বের হচ্ছে চোরের মতো কি দিন আসলো তার।শব্দ না করে মেন দরজা খুলে বের হলো।ইরহামকে নজরে এলো।ফোন এখনো কানে দিয়ে আছে।গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নেয়।ইরহামের কাছে আসে।ইরহাম সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

—“আপনি এতো রাতে কেনো এখানে এসেছেন?”

ইরহাম হঠাৎ করে অর্ষাকে শক্ত করে ঝাপটে ধরে।অর্ষা চমকে ওঠে।লোকটা এমন করছে কেনো কিছুই বুঝতে পারে না।ইরহাম এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে অর্ষা নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।তাও কষ্ট করে নরম কন্ঠে বলল,,,

—“কি হয়েছে আপনার।কিছু হয়েছে?”

—“হুশশ কথা বলো না”

অর্ষা চুপ করে থাকে।ইরহাম বেশ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে জড়িয়ে রাখে তার প্রেয়সীকে।প্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরলে যে এতোটা শান্তি লাগে তা জানতো না ইরহাম।অর্ষাও বুকে মাথা রেখে ইরহামের বুকের ধুকপুক আওয়াজ শুনছে।ইরহাম মাথা তুলে তাকায়।অর্ষার মুখ নিজের দু হাতের মাঝে রেখে সারা মুখে চুমু খায়।অর্ষা অবাক হয়ে দেখছে সব।এতোটা পাগল এই লোকটা তার জন্য।

—“এবার বলুন এতো রাতে এখানে কেনো এসেছেন?”

—“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো”

অর্ষা এবার রাগ দেখায়।সে ইরহামকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে,,,

—“আপনি এতো রাতে শুধু আমাকে দেখতে এসেছেন।এটা কি ধরেনের পাগলামি?”

ইরহাম কিছু না বলে মৃদু হেসে অর্ষাকে আবারও জড়িয়ে ধরলো।অর্ষা এবার ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।এমন করছে কেনো ইরহাম।এখানে যদি কেউ দেখে ফেলে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবে না।আরো যদি রুশান দেখে ও তো অর্ষাকে খেপাতে খেপাতে মেরেই ফেলবে।

—“আমার পাগলামি গুলোর সাথে এখন থেকে পরিচয় হয়ে নেও বউ।এর থেকেও ভয়ংকর পাগলামির সম্মুখীন হবে তুমি।”

—“এখন ছাড়ুন আমায়।বাসায় যান মামনি চিন্তা করছে হয়তো”

—“মামনি জানে তার ছেলে তার বউয়ের কাছে গিয়েছে।সে এখন নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে।”

—“তো ছাড়ুন এখন”

ইরহাম ছাড়লো বটে তবে হুট করেই একটা কাজ করে বসলো।অর্ষার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে সরে দাঁড়ালো।অর্ষা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এমন কান্ড ঘটাবে ইরহাম ভাবতেও পারিনি।লজ্জা লাগছে তার।অর্ষার অবস্থা দেখে ইরহাম মুচকি হাসে।মেয়েটাকে লজ্জা দিতে খুব ভালো লাগে।

—“আমার লজ্জাবতী লতা বউ এতো লজ্জা পেলে চলবে ইরহাম চৌধুরীর বউ নাকি লজ্জাবতী উমম এটা মানতে পারছি না তো”

—“আমি লজ্জা কোথায় পাচ্ছি মোটেও লজ্জা পাচ্ছি না।আপনি এতো রাতে এইসব আজাইরা বকবক করতে এখানে এসেছেন”

—“উহু মোটেও না আমি আর বউকে দেখতে এসেছি বউকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারছি না যে।একটা কিছু করো তো মেয়ে”

—“আপনি আপনি একটা অসভ্য পুরুষ এই রাতে আমায় ডেকে অসভ্যতামি করছেন”

ইরহাম অর্ষার দিকে ঝুঁকে বলে,,,

—“বউকে আদর করলে বুঝি অসভ্যতামি হয়ে যায়।এই প্রথম শুনলাম বউউউউ”

অর্ষা ইরহামের কাজে চমকাচ্ছে।এই সেই ইরহাম যে তাকে সহ্য করতে পারতো না।এই কি সে।আসলেই কখন কি হবে কেউ বলতে পারে না।যাকে সে একদম পছন্দই করতে পারতো না তাকেই সে ভালোবাসে।আর ইরহাম তো এক কথায় পাগলামি করছে।অর্ষার অবশ্য ইরহামের করা পাগলামিগুলো বেশ ভালো লাগছে।

—“এখন বাসায় যান অনেক রাত হয়েছে”

—“তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না বউ”

—“ঢং না করে যান তো”

—“আমি মোটেও ঢং করছি না।আমি তো আমার বউকে ছাড়া থাকতে পারছি না।এখন কি করি বলো?”

—“কিছু না বাসায় গিয়ে সোজা ঘুমিয়ে পরবেন।”

ইরহাম যেতে চাইছিলো না অর্ষা ঠেলে ঠুলে পাঠিয়েছে।যাওয়ার আগে অবশ্য অর্ষার কপালে চুমু দিয়ে গিয়েছে।অর্ষা কিছু না বলে শুধু লাজুক হেসেছে।এই সব কিছু উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলো রুশান।চোখ জুড়িয়েছে তার।বোনের জীবনে যে সঠিক মানুষই এসেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আর রুশানের।নিশ্চিত সে।শুধু আরেক বোনকে এক জন ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলেই শান্তি তার।

#চলবে