ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১৭+১৮

0
230

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১৭
মৌমো তিতলী

কেটে যায় অনেকগুলো দিন।সকাল থেকে না খেয়ে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে সুহা। আজ তাদের রেজাল্ট দেবে। টেনসনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে সুহার। তাহিরা বেগম অনেকবার মেয়েকে ডাকে দরজা খুলতে কিন্তু কে শোনে কার কথা!!

মোতালেব হোসেন এসে মেয়েকে ডাকেন,,

:- দরজা খোলো আম্মা!! এভাবে দরজা দিয়ে, না খেয়ে বসে থাকলে কি হয়?? দরজা খোলা আম্মা।

বাবার কথায় আস্তে করে দরজা খুলে দেয় সুহা। মুখটা গোমরা করে রেখেছে। মোতালেব হোসেন মেয়েকে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত রাখেন। বলেন চিন্তা না করতে।

দুপুর ১২:৩০ মিনিট। টানটান উত্তেজনা নিয়ে নিজের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার,রোল নাম্বার দিয়ে রেজাল্ট বের করে সুহা। ৪.৮৯, মুখে হাসি ফোটে সুহার। খুব একটা হাইফাই মেধাবী ছাত্রী নয় সুহা। আবার খারাপও নয় মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট। তাই এ প্লাস না হওয়া নিয়ে তার মধ্যে কোন ক্ষোভ নেই রেজাল্ট যেটা এসেছে এতেই খুশি সুহা। মোতালেব হোসেন ,তাহিরা বেগম ভীষণ খুশি মেয়ে ভালো রেজাল্ট এ পাস করাতে। নিপার রেজাল্ট হয়েছে ৪.৭৫। সেও ভীষণ খুশি। মোতালেব হোসেন পাড়ায় মিষ্টি বিলিয়ে দেন। মসজিদেও দান করেন সামর্থ্য অনুযায়ী।

এতকিছুর মধ্যেও সুহার মন অন্য কারণেএকটু খারাপ। আজ সুহার রেজাল্ট দিল কিন্তু এমপি সাহেব একবারও খোঁজ নিল না। একটা বারও জিজ্ঞাসা করল না তার রেজাল্ট কি হয়েছে কংগ্রাচুলেশন তো দূরে থাক। এটা নিয়েই মুখ ভার এমপি সাহেবের পদ্ম ফুলের।

বিকেলের দিকে নিপা আসে সুহা দের বাড়ি। সুহা আর নিপা ফুরফুরে মেজাজে হাঁটতে বের হয়। দু বান্ধবী নানা কথা বলাবলি করছে। অনেকক্ষণ ধরে নিপা কিছু বলার চেষ্টা করছে সুহাকে। কিন্তু ভয় পাচ্ছে যদি এতো দিন বিষয়টা লুকানোর জন্য রাগ করে সুহা।

নিপা কে উসখুস করতে দেখে সুহা বলে,,,

:- কি বলবি বলে ফেল।

সুহার কথায় চমকে ওঠে নিপা। তারপর হালকা হেসে বলে,,

:- আসলে একটা বিষয় তোর সাথে শেয়ার করা হয়নি। এ কয়দিন বলবো বলবো করে বলা হয়নি।

সুহা ভ্রু কুঁচকে তাকায় নিপার দিকে। কি এমন কথা যেটা সুহার থেকে আড়াল করেছে নিপা!!

নিপা কিছুক্ষণ দম নিয়ে চোখমুখ খিঁচে এক নিঃশ্বাসে বলে,,

:- আই এম ইন লাভ উইথ অরুদ্ধ ভাইয়া!!!

নিপার কথাটা ক্যাচ করতে কয়েক সেকেন্ড লেগে যায় সুহার। যেন বড়সড় একটা ঝটকা খেয়েছে মেয়েটা।পরমুহূর্তেই চেঁচিয়ে উঠলো সুহা,,

:- হুয়াট!!

নিপা মুখ কাচুমাচু করে বলে,,,

:- আমি জানিনা কখন কিভাবে হলো। কিন্তু আই লাভ হিম ইয়াররর!

:- অরুদ্ধ ভাইয়া জানে??

:- আসলে….he proposed me! and now we are both in a relationship!!

সুহা দ্বিতীয় দফায় ঝটকা খেয়ে আবারো চেঁচিয়ে ওঠে,,

:- কিহ!!!

সুহার চিল্লানিতে কানে হাত দেয় নিপা‌। সুহা নিপার দিকে তেড়ে এসে বলে,,,

:- কবে থেকে চলছে এসব?? আমাকে বলিসনি কেন? তলে তলে এতো কিছু ঘটলো আর আমি জানতেই পারলাম না!!! তুই তো বন্ধু নামের কলঙ্ক!!

নিপা হেসে জড়িয়ে ধরে সুহাকে। বলে,,

:- কি যে বলিস!! তুই তো আমার একমাত্র জানটুস বান্ধুপি। তোর কাছে কি লুকাতাম নাকি আমি? একটু সময় নিয়েছি এই যা!

সুহাও খুব খুশি হয়। তার মতে অরুদ্ধ ভাইয়া খুব ভালো ছেলে। নিপার সাথে মানাবে ভালো। সাহিত্যের মুখটা মনে পড়ে সুহার। আবারো মনটা খারাপ হয়। মনে মনে ভাবে…

_এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা আপনার সাথে আমি কথা বলবো না। কাল থেকে একবারও খোঁজ নেননি আমার। আজ আমার রেজাল্ট দিলো,, আপনি একটা মেসেজ পর্যন্ত দিলেন না।

তখনই নিপার ডাকে হুঁশ ফেরে সুহার।

:- এই সুহা!! দেখ এদিকে আসছে ওইটা সাহিত্য ভাইয়ার গাড়ি না??

চকিতে চোখ তুলে তাকায় সুহা। হ্যাঁ!! সুহার এমপি সাহেবের গাড়িই এটা। চিনতে কোন ভুল হয়না সুহার।
সেকেন্ডেই সুহাদের কাছে এসে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়।
পেছনের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সাহিত্যে, সাথে অরুদ্ধ।

অরুদ্ধ কে দেখেই নিপা গুটিয়ে যায় লজ্জায়। এদিকে সাহিত্য অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার প্রেয়সীর দিকে। কিছুক্ষণ শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,,

:- অরুদ্ধ তুই নিপার সাথে থাক। সুহার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে,,,,,

:-আর তুই!! কাম উইথ মি!বলেই আবার গাড়িতে উঠে বসে। আড়ালে ভেংচি কাটে সুহা!!

_উউউ কাম উইথ মি 😎 সারাদিন খোঁজ নেয় এখন এসে হুকুম দিচ্ছে মহারাজ।

সাথে সাথেই আবার সাহিত্যের ধমক খেয়ে হুড়মুড় করে গাড়িতে উঠে বসে সুহা।
গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে।
প্রায় ২০ মিনিট পর গাড়ি এসে থামে একটি নদীর ধারে নির্জন জায়গায়। গাড়ি থেকে নেমে সাহিত্য ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে বলে আশেপাশে ঘুরে আসতে। সময় হলে ফোন করে ডেকে নেবে। ড্রাইভার সাহিত্যর কথা মতো বিনা বাক্যে টাকাটা নিয়ে চলে যায়।

সাহিত্য গিয়ে সুহার হাত ধরে এগিয়ে যায়। সামনেই একটা বড় নদী। কুল কুল পানির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনটা আনন্দে নেচে ওঠে তার। ফুরফুরে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। গোধূলি বেলা। চমৎকার আবহাওয়া সাথে প্রিয় পুরুষ।মনটা ভালো হয়ে যায় সুহার। দুহাত মেলে দিয়ে নদীর তীরে দাঁড়ায় সুহা। চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকে বাতাসের সাথে নদীর ছলছল শব্দ। পেছন ঘুরে সাহিত্যর দিকে তাকাই সুহা। সাহিত্য বুকে হাত বেঁধে গাড়িতে হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহার দিকে। এগিয়ে যায় সুহাসিনী।

সাহিত্যর কাছে গিয়ে বলে,,

:- এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন একটু হাটি!!

সাহিত্য যেন ঘোরের মধ্যে আছে। আলগোছে জবাব দেয়,,

:- হাঁটতে হবে না। নদীর মাঝে যাবো।

:- নদীর মাঝে কি করে যাবেন ?এখানে তো একটাও নৌকা নেই।

:- নৌকা আসবে। একটুখানি অপেক্ষা কর।

পাঁচ মিনিটের মাথায় একটা নৌকা আসতে দেখা যায়। নৌকাটা বেশ বড় সাথে ছাউনি দেয়া। সাহিত্য সুহার হাত ধরে এগিয়ে যায়। লাফ দিয়ে উঠে যায় নৌকায়। তারপর সুহাকেও সাবধানে উঠিয়ে নেয়। সুহা নৌকার ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। ছাউনি টা এতো বড় যে সুহা অনাসায়ে ছাউনির নিচেই দাঁড়াতে পারে। তবে সাহিত্যের হয়তো মাথাটা ছুঁইয়ে যাবে ছাউনিটা।
সাহিত্য মাঝির সাথে কথা বলে সুহার কাছে এগিয়ে আসে। সুহার হাত ধরে ছাউনির ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে গিয়েই সুহার চোখ ছানাবড়া!!

অসংখ্য পদ্মফুল দিয়ে চমৎকার করে সাজানো ছাউনির ভেতরে। ছাউনির একপাশে পদ্ম ফুলের পাপড়ি দিয়ে আর্ট করে লেখা “কংগ্রাচুলেশনস মাই পার্সোনাল লোটাস”লেখাটা দেখেই লজ্জায় মুখ রক্তিম হয় সুহার। ঠোঁট কামড়ে মুখ নিচু করে সুহা।
নৌকার মেঝেতে ভারি একটা ছোটখাটো টেবিলের মতো চৌকি রাখা। হেলে না পড়ে তার জন্য এই ভারি চৌকিটা টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তার ওপর একটা ছোট্ট বোলে ছোট ছোট কয়েকটা তাজা পদ্মফুল ফুটে আছে।দুটো চেয়ার পেতে রাখা হয়েছে পাশাপাশি। টেবিলের ওপর কিছু একটা ঢেকে রাখা রয়েছে।
সাহিত্য সুহার হাত ধরে টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। টেবিলের ওপর ঢেকে রাখা জিনিসটা সরাতেই দৃশ্যমান হয় চমৎকার ডেকোরেশন এর একটা কেক। তার ওপর লেখা
“Best wishes and congratulations for passing the exam”

ভিষণ খুশি সাথে অবাক হয় সুহা। তার এমপি সাহেব এতো কিছু করেছে আর সে কিনা অভিমান নিয়ে বসে ছিলো!!
মিষ্টি হাসে সুহা। সাহিত্য মন ভরে দেখে তার পদ্মফুলের সেই হাসি। বেসামাল হয় অবাধ্য মনটা। শুষ্ক ঢোক গেলে সাহিত্য। মনের মাঝে ডানা মেলে কিছু নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হিমসিম খায় দায়িত্বশীল এমপি।

সুহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় কেকের সামনে। হাতে একটা ফিতা বাঁধা প্লাস্টিকের নাইফ তুলে দেয় ।পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুজনে কেক কাটতে দাঁড়ায়।এক হাতে সুহার ছুরি ধরে রাখা হাতটা আলতো করে চেপে ধরে। আরেক হাত সুহার কোমরে। কেঁপে ওঠে সুহা। অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে যায় তার অস্তিত্ব। সাহিত্য সুহার হাতে হাত রেখে কেকটা কাটে। তারপর সুপার কানে ফিসফিস করে বলে,,

:- কংগ্রাচুলেশন মাই গার্ল!!

সাহিত্যের ঠোঁট ছুঁয়ে যায় সুহার কান। শিরশির করে ওঠে সুহার শরীরে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে তার। সুহাকে ঘুরিয়ে বুকের সাথে জাপটে ধরে সাহিত্য। এক টুকরো কেক নিয়ে খাইয়ে দেয় সুহাকে। সুহাও এক টুকরো কেক নিয়ে খাওয়াতে যায় সাহিত্য কে। সুহার হাত থামিয়ে দেয় সাহিত্য। হাতটা ঘুরিয়ে সুহার মুখেই গুজে দেয় কেকের টুকরো টা। অবাক হয়ে সাহিত্যের দিকে তাকায় সুহা। মুহুর্তেই সুহার নরম তুলতুলে ঠোঁট চলে যায় সাহিত্যের দখলে। যেন কেকটা সুহার মুখ থেকেই খাওয়ার সিদ্ধান্ত এমপি সাহেবের।তিব্র আসক্তিতে সুহার ঠোঁট শুষে নিচ্ছে সাহিত্য। ধকধক করে সুহার বুকের বাঁ পাশের ছোট্ট হৃদপিন্ড। সমস্ত শরীরে বিদ্যুত খেলে যায়। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে সুহার। দুহাত দিয়ে সাহিত্যকে আঁকড়ে ধরে সুহা। নিজের পিঠের ওপর সুহার হাতের অস্তিত্ব অনুভব করে আরো বেসামাল হয় অবাধ্য প্রেমিক পুরুষটি। এক হাতে সুহার কোমরে স্লাইড করে আরেক হাতে ঘাড়ের কাছে চুল গুলো আঁকড়ে ধরে। ঠোঁটের অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। একপর্যায়ে আর সাহিত্যের ঠোঁটের ভার সইতে পারে না সুহা। কেমন নিস্তেজ হয়ে আসে সে। প্রেয়সীর অবয়ব শীথিল হতে দেখে ঠোঁট ছেড়ে পরম আদরে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে। লম্বা শ্বাস নেয় সুহা। মাথাটা এলিয়ে দেয় সাহিত্যের প্রশস্ত বুকে। শুনতে পাই অসম্ভব দ্রুত বিট করছে সাহিত্যের হার্টবিট।

কিছুক্ষণ পর সুহার মুখ দুহাতে তুলে ধরে সাহিত্য।
কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধীরস্বরে বলে,,,

:- ভালোবাসি আমার সুহাসিনী!!

সুহা আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে সাহিত্যকে। সুহাও যে এই লোকটাকে ভীষণ ভালোবাসে। একটু বেশিই ভালোবাসে।

***********

দেখতে দেখতে আরশির পরীক্ষা শেষ হলো। পরীক্ষার এই কয়দিন অনেক চাপ গেছে আরশির ওপর। আরুশ রোজ বোনকে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌছে দিতো‌। মাঝে মধ্যে মেহরাবও এসেছে। মেহরাবের ডিউটি পড়েছিলো অন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে। এই জন্য চাইলেও রোজ আসা সম্ভব হয়নি।
পরীক্ষা শেষ এখন লম্বা ছুটি। কিন্তু এই ছুটি আর ব্যাচেলর হয়ে কাটানো হচ্ছে না আরশির। খুব তাড়াতাড়িই বিয়ের আয়োজন শুরু হবে। দু’জনের প্রণয়নের পরিণয় হবে।
____

নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো আরশির ভাবি রোদেলা। প্রেগনেন্সির সাত মাসের মাঝামাঝি সময় চলছে তার। প্রেগনেন্সিতে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়াই ডক্টর তাকে বেড রেস্টে থাকতে বলেছে। এতদিন বাবার বাড়িতেই ছিল রোদেলা। একমাত্র ননদের বিয়ে উপলক্ষে বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে এসেছে।
আরশি এক বাটি কাঁচা আম লবন মরিচ দিয়ে মাখতে মাখতে রোদেলার ঘরে এলো। রোদেলা ননদকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উঠে বসে। আরশি ভাবির হাতে আমের বাটিটা দিয়ে পাশে বসে। এই দুই ননদ ভাবির মাঝে খুব ভাব। নিজের বোনসম ননদকে রোদেলা খুব ভালোবাসে। আরশিও তাই। এইজন্যেই মেহরাব আর তার প্রণয়নের কথা সে একমাত্র রোদেলার সাথেই শেয়ার করেছে। আর রোদেলাও অনেক খুশি তার একমাত্র ননদের বিয়ে তার পছন্দের মানুষটির সাথে হওয়াই।

আরশি পাশে বসতেই রোদেলা নানান রকমের কথা বলে ইয়ার্কি করতে থাকে আরশির সাথে। আর আরশি লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। রত্না খান দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দুই ননদ ভাবীর খুনসুটি দেখে। বুকের ভেতর শূন্যতা ভর করে মমতাময়ী মায়ের। মেয়েটা কিছু দিন পর পরের বাড়িতে বউ হয়ে যাবে‌। বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে। আরশি মে সারাক্ষণ আরুশ আর রোদেলার সাথে হৈহৈ করে বেড়াই সারা বাড়িতে। আলগোছে শাড়ির আঁচলে চোখ মোছে রত্না খান।

_______

আজ মির্জা পরিবার আর খান পরিবার মেহেরাব আর আরশির বিয়ের দিন ধার্য করতে এক হয়েছে। অনেক আলোচনা করে শেষে ঠিক করেন চলতি মাসের ২৫ তারিখে বিয়ের আয়োজন করা হবে। আজ ১০ তারিখ। ১৫ দিনে সবটা সামলে নেয়া যাবে। বিয়ের কেনাকাটা, বাড়ি সাজানো ,মেহেন্দি ,হালদি, বিয়ের জন্য ১৫ দিন যথেষ্ট। ঠিক করা হয় বিয়েটা বাড়ি থেকেই হবে। কোন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হবে না। এত বড় বাড়ি থাকতে বাইরে আয়োজন করার কোন দরকার নেই। তাছাড়া এমপি সৌরভ সাহিত্য মির্জার বড় ভাইয়ের বিয়ে শত্রুপক্ষ ও পেতে থাকতে পারে ক্ষতি করার জন্য সিকিউরিটির একটা ব্যাপার আছে সেজন্য সবাই রাজি হয়। এটাই সবার জন্য ভালো হবে।সবাই একমত হয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে মিষ্টিমুখ করেন।

চলবে,,,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১৮
মৌমো তিতলী

সকাল সকাল ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছিলেন আহাদ মির্জা। আয়েশা সিদ্দিকা কিচেন থেকে এক কাপ চা করে স্বামীর সামনে রাখলেন। বা হাতে এক মগ ব্ল্যাক কফি। আহাদ মির্জা চশমার ওপর দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকান। হাতে কফির মগ দেখে বুঝতে পারেন ছোট ছেলের ঘরে যাবেন আয়েশা সিদ্দিকা। আহাদ মির্জা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললেন,,

:- সোহরাব কে কফি টা দিয়ে তাড়াতাড়ি এসো তো। একটু কথা আছে তোমার সাথে।

আয়েশা সিদ্দিকার কপালে ভাঁজ পড়লো। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় নীলিমা। ন্যাকামো হেসে বলে,,

:- মামিমণি সোহরাবের কফিটা তুমি আমাকে দাও। আমি দিয়ে আসছি এটা।

আয়েশা সিদ্দিকা মনে মনে একটু বিরক্ত হলেন। তিনি জানেন সাহিত্য নীলিমা কে একদম সহ্য করতে পারে না। সকাল সকাল তিনি কোন ঝামেলা অশান্তি চান না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,,

:- তোমাকে এতো কষ্ট করতে হবে না নীলি। বসো, আমি সাহিত্য কে কফিটা দিয়ে এসেই তোমাকে কফি দিচ্ছি।

আহাদ মির্জা বাঁধা দিয়ে বললেন,,

:- আহ!! মেহরাবের আম্মা! মেয়েটা বলছে যখন দাও না ওকে। ও গিয়ে দিয়ে আসুক। যাও নীলিমা তোমার মামিমণির হাতের কফিটা তুমিই নিয়ে যাও সাহিত্যের ঘরে,,

আয়েশা সিদ্দিকা কিছু বলবেন তার আগেই নীলিমা ওনার হাত থেকে কফির মগ টা নিয়ে নাচতে নাচতে উপরে চলে গেল।
আয়েশা সিদ্দিকা স্বামীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,,

:- কি করলে এটা? তুমি জানো না সাহিত্য নীলিমাকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না? সকাল সকাল একটা ঝামেলা হবে। আমি দিয়েই তো আসছিলাম, ওকে কেন দিতে বললে তুমি??

আহাদ মির্জা সহধর্মিণীর দিকে তাকিয়ে বলেন,,,

:- যে দায়িত্বটা কয়েকদিন পর নীলিমাকেই পালন করতে হবে। সেটা না হয় এখন থেকেই অভ্যাস করুক!!

আয়েশা সিদ্দিকা অবাক হয়ে স্বামীর দিকে তাকালেন। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না যেন ।কি বলছেন তিনি এসব! অনেকটা জোর গলায় বললেন,,

:-কয়েকদিন পর নীলিমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে মানে কি?? কি বলতে চাইছো তুমি?

আহাদ মির্জা চায়ের কাপটা টেবিলের উপরে রাখলেন। তারপর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,,

:- আমি শেফালীকে কথা দিয়েছি সাহিত্যর সাথে নীলিমার বিয়ে দেবো।

স্বামীর কথায় হতভম্ব আয়েশা সিদ্দিকা। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন,,,

:- তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? সেদিন মেহুর জন্মদিনের পার্টিতে কি সব নাটক করলো দেখলে না ??তুমি জানো না নীলিমা কি ধরনের মেয়ে? আর সাহিত্যকে না জানিয়ে, তার মতামত না নিয়ে তুমি এই ধরনের সিদ্ধান্ত কি করে নিতে পারো?? কিভাবে কথা দিতে পারো শেফালী আপাকে?

আহাদ মির্জা বিরক্ত হয়ে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন,,

:- আমার ছোট ছেলেকে আমি আমার মত করে গড়ে তুলেছি। আমি যেটা বলবো ও সেটাই করবে। নীলিমাকে ওকে বিয়ে করতে হবে এটাই আমার শেষ কথা।

স্বামীর কথাই যেন গা জ্বলে যায় আয়েশা সিদ্দিকার।আবার ভেতরে ভেতরে শঙ্কায় ঘেমে উঠছেন তিনি ।সাহিত্য এই কথা শুনলে কি তান্ডব সৃষ্টি করবে সেটা ভেবেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। তাছাড়া সাহিত্য যে সুহাসিনীকে ভালোবাসে সেটা আয়েশা সিদ্দিকা অনেক আগে থেকেই জানেন। সাহিত্য সবার আগে মাকেই এই ব্যাপারে অবগত করেছিলো। মা হয়ে তিনি ছেলের খুশির জন্য রাজি হয়েছিলেন। তাছাড়া সুহাসিনীকে তারও খুব পছন্দ। কত মিষ্টি একটা মেয়ে। ছেলেকে একরকম কথাই দিয়েছিলেন সাহিত্যের জন্য তিনি সুহাসিনী কে এনে দেবেন বউ হিসেবে। কিন্তু এখন স্বামীর কথায় সে সবকিছুর যেন গড়মিল হয়ে যাচ্ছে।এটা কি করলো মেহরাব- সাহিত্যর বাবা ??ছেলের মতামত না নিয়ে, তার সাথে কোন রকম পরামর্শ না করেই নিজের বোনকে কথা দিয়ে ফেললো !!আর নীলিমা মেয়েটাকে তো এমনিতেই পছন্দ না আয়েশা সিদ্দিকার। ননদের মেয়ে হিসেবে তিনি নীলিমাকে ভালোবাসেন ।কিন্তু নীলিমা মেয়ে হিসেবে অত্যন্ত উগ্র মেজাজের ,অতি আধুনিকা আর একটু বেশিই অহংকারী। এইসব বৈশিষ্ট্যের একটাও সাহিত্য পছন্দ না ।তাছাড়া সাহিত্য সুহাসিনীকে কতটা ভালোবাসে সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।সেখানে নীলিমা কে বিয়ে করার কথা শুনলে নিশ্চয়ই রেগে সবকিছু ভাঙচুর করবে সাহিত্য। সে কখনো রাজি হবে না,, তিনি সাহিত্যকে কথা দিয়েছেন আবার স্বামী তার বোনকে কথা দিয়েছেন। অনেকটা ধর্ম সংকটে পড়লেন যেন তিনি!!

অবিলম্বে ব্যাপারটা সাহিত্যের কানে দিতে হবে ।তিনি কিছুতেই ছেলের খুশি কেড়ে নিতে দেবেন না। মা হয়ে তিনি যা করার করবেন। তাতে তার ননদ যা ভাবে ভাবুক!! তিনি কিছুতেই নীলিমাকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মানবেন না। আর না সাহিত্য রাজী হবে।
আয়েশা সিদ্দিকা মনে মনে বদ্ধপরিকর। ব্যাপারটা সাহিত্যকে অবশ্যই জানাতে হবে তার পরের ব্যাপারটা তার বিচক্ষণ ছোট ছেলে অবশ্যই সামলে নেবে।
আর এই মুহূর্তে যা করতে হবে সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন!! মনে মনে বাঁকা হাসি দেন আয়েশা সিদ্দিকা। মনে মনে ছক কষেন এরপর কি করবেন তিনি!! মনে মনে ভাবলেন,,,

:-খুব শখ!! আমার ছোট ছেলেকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখো? আমিও দেখবো কি করে এই স্বপ্ন সত্যি হয়!! সাহিত্যর বউ হিসেবে যদি এই বাড়িতে কেউ পা রাখে সেটা একমাত্র সুহাসিনী আর কেউ নয়!!

মুহূর্তেই ওপর থেকে কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ এলো। আয়েশা সিদ্দিকা স্বামীর দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে উপরের দিকে ছুটলেন। তিনি জানতেন এমনই হবে।
আহাদ মির্জা চিন্তিত মনে উপরের ছোট ছেলের ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

আয়েশা সিদ্দিকা হুড়মুড় করে ঢুকলেন ছোট ছেলের ঘরে। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলেন সাহিত্য বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই মেঝেতে কফির মগ ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে আছে। তার সামনে নীলিমা অনেক থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়েশা সিদ্দিকা কফির মগের দিকে তাকিয়ে ছেলের কাছে এগিয়ে গেলেন। বললেন,,,

:- কি হয়েছে আব্বা ? কফির মুখটা ভাঙলি কেন??

সাহিত্য চিৎকার করে বলল,,

:-এই বেয়াদব মেয়েটা আমার ঘরে ঢুকেছে কেন? একে কে বলেছে কফি আনতে?? একদম ম্যানারসলেস মেয়ে একটা!!

আয়েশা সিদ্দিকা ছেলেকে ঠান্ডা করতে বলেন,,,

:- আহা!! তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন? সামান্য কফি তো এনেছে ‌,খেয়ে নিতে। রাগ করছ কেন?? তাছাড়া নীলিমা তোমার বোন হয়!!

মামীমণির কোথায় নীলিমা ভীষণ বিরক্ত হয় মনে মনে ।সে কিছুতে সাহিত্যের বোন নয়। ‌সে ভালোবাসে সাহিত্যকে। বিয়ে করে আপন করে পেতে চাই।

সাহিত্য আবারও চিৎকার করে বলল,,

:-বোন মাই ফুট!!এই বেয়াদব মেয়েটা বোন হওয়ারও যোগ্য না।কি করেছে জানো? আমার ঘরে ঢুকে আমাকে না ডেকে, আমার উপরে ঝুঁকে,,,, কথাটা সম্পূর্ণ না করে থেমে যায় সাহিত্য। মায়ের সামনে মুখেও বাঁধছে তার বলতে। রাগের থরথর করে কাঁপছে সাহিত্য ।কপালের রগ ফুলে উঠেছে। ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে আছে রাগে।

ছেলের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে একরকম লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলেন আয়েশা সিদ্দিকা। এত বেয়াদব হয়েছে মেয়েটা !! একটা মেয়ে এতটা বেপরোয়া কি করে হতে পারে!!আর এই মেয়েকে কিনা তার স্বামী তার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে। তিনি কিছুতেই সেটা হতে দেবেন না। এই ক্যারেক্টার লেস বেয়াদব মেয়েটা মির্জা বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য নয়।

তিনি সাহিত্যকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দেন। ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলেন ,,,

:-তুমি বাইরে যাও নীলি !এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না ।দেখছো না সাহিত্য রেগে আছে এখন!!

নীলিমার কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসে সাহিত্যের রুম থেকে। যেতে যেতে ভাবে
_কতদিন আমার সাথে এরকম করবে সোহরাব ?কয়েকদিন পরে তো সেই আমাকেই বিয়ে করতে হবে। আমাকে নিয়েই সংসার করতে হবে।
এমনি এমনি তো আর মাকে দিয়ে মামার কাছ থেকে কথা আদায় করিনি। এই মির্জা বাড়ির মালকিন হবো আমি। এই সমস্ত সম্পত্তির মালকিন হবে এই নীলিমা। দেখে নিও!!

______________

কিচেনে বিকেলের নাস্তা তৈরি করছিলেন তাহিরা বেগম। ড্রয়িং রুমে ছেলে-মেয়ে তার বাবার সাথে হইহুল্লোড় করছে। তার শব্দ শুনতে পারছেন তিনি। মনি ভীষণ শান্তি পান। কিচেনের দরজা দিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে উঁকি দেন তিনি। সুহাসিনী চক্ষু গোচর হয় !! মেয়েটার দিকে অপলক তাকিয়ে ভাবেন ,,,
_দেখতে দেখতে মেয়েটা কত বড় হয়ে গেলো ।এরপর বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের কথা ভাবতেই বুকের ভিতর মুচড়ে ওঠে তাহিরা বেগমের। তাদের অতি আদরের মেয়ে সুহাসিনী। বিয়ের সাত বছর পর সংসারে তাদের কোল আলো করে এসেছিল মেয়েটা। এর আগে সন্তান না হওয়ায় পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি নিজের শাশুড়ির কাছেও নানা কু কথা শুনেছেন তাহিরা বেগম। সেই বছর তাহিরা বেগমের শাশুড়ি মারা যায়।সাত বছর পর যখন তিনি প্রথম জানতে পারেন তিনি সন্তান সম্ভবা, খুশিতে কেঁদেই দিয়েছিলেন মোতালেব হোসেন ।স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন,, আল্লাহ যেন আমার একটা আম্মা দেন। আমার আম্মা তো চলে গেলেন,, আমার সন্তানের মধ্যেই যেন আম্মা ফিরে আসেন। সব সন্তানেরাই বাবা-মাকে ভালোবাসে। মোতালেব হোসেনের সামনে তার মা ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আড়ালে তাহিরা বেগমকে অনেক কথা শোনাতেন। কিন্তু তাহেরা বেগম কখনো স্বামীকে নালিশ করতেন না ।মায়ের নামে সন্তানের কাছে নালিশ করার শিক্ষা তিনি পাননি।
৯ মাস পর যখন তাহিরা বেগমের কোল আলো করে সত্যিই ফুটফুটে কন্যা সন্তান আসেন ,তখন মোতালেব হোসেন সবার আগে তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। কপালে চুমু দিয়ে নাম রেখেছিলেন সুহাসিনী। তাহেরা বেগমের শাশুড়ির নাম ছিল সুভাষিনী। মায়ের নামের সাথেই মিল রেখে নামকরণ করেছিলেন মোতালেব হোসেন। সুহাসিনীর বয়স যখন পাঁচ তখন ছেলে সুহানের জন্ম। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়েই তাদের সুখের সংসার।
সেই ছোট্ট সুহাসিনী আজ কত বড় হয়ে গেছে। বিয়ের বয়স হয়েছে তার। আঁখি ভিজে ওঠে জননীর। শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন তাহিরা বেগম। তখনই বাইরে থেকে কলিং বেল বেজে ওঠে,,, কিচেন থেকে তাহিরা বেগম চেচিয়ে মেয়েকে বলেন,,

:- দেখ তো সুহা,,কে এলো এখন!!

মায়ের কথায় সুহা গিয়ে দরজা খুলে দেয়,, দরজার ওপাশে আয়েশা সিদ্দিকা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু অবাক হয় সুহা। পরে হাসিমুখে সালাম দিয়ে বলে,,

:- আরে আন্টি!! কেমন আছেন? আসেন আসেন ভিতরে আসেন!!

দরজায় দাঁড়িয়েই সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে হাসেন আয়েশা সিদ্দিকা। মেয়েটাকে দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় তার।
সুহাসিনীকে এক হাতে জড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি।
তাহিরা বেগম কোন মহিলার গলার আওয়াজ শুনে কিচেন থেকে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ড্রয়িং রুমে আসেন। এসেই আয়েশা সিদ্দিকা কে দেখে উচ্ছ্বাসিত হয়ে এগিয়ে যান।

:-আরে আয়েশা আপা!! কেমন আছেন আপনি? কতদিন পর দেখলাম!!

মোতালেব হোসেন ও সালাম দেন আয়েশা সিদ্দিকা কে। বন্ধু সহধর্মিনীকে সাদরে আমন্ত্রণ জানান।

সুহাসিনী কিচেনের দিকে যায় চা নাস্তা নিয়ে আসতে।

আয়েশা সিদ্দিকা মোতালেব হোসেন ও তাহিরা বেগমকে পাশে বসিয়ে হাসিমুখে বলেন,,

:-এই অবেলায় একটা আবদার নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে।না করতে পারবেন না!

মোতালেব হোসেন স্মিত হেসে বলেন ,,,

:-আমাদের কাছে আপনার কি আবদার থাকতে পারে আপা? যদি একটু খুলে বলেন,,

আয়েশা সিদ্দিকা হেসে বলেন,,

:- ভয় পাবেন না ভাইজান!! অসম্ভব কিছু চাইবো না।
তাহেরা বেগম হেসে বলেন,,

:- তেমন নয় আপা! কথাটা উনি সেভাবে বলেননি।
আয়েশা সিদ্দিকা তাহিরা বেগমকে থামিয়ে বলেন,,

:- আমি জানি তাহিরা !ভাইজানকে আমি চিনি তো ।আসলে হয়েছে কি তোমরা তো জানো আমার মেহু, মানে আমার বড় ছেলে মেহরাবের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তোমরা তো অবশ্যই আমন্ত্রিত। কিন্তু আমি এসেছি আজ অন্য একটা আবদার নিয়ে। আমি চাইছি সুহাসিনী মাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে। তোমরা তো জানো আমার কোন মেয়ে নেই ।সুহাসিনী আমার মেয়েরই মতো। তাছাড়া আরশি মানে আমার মেহুর হবু বউ, সে সুহাসিনী কে চেনে। সেও বলছিল সুহাসিনীকে সাথে রাখতে। ভালো লাগবে ওর ।তাই ভাবলাম সুহাসিনী কে আমি নিয়ে যাই সাথে করে।
মোতালেব হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললেন ,,

:-আপনার কোন আপত্তি নেই তো ভাইজান?

মোতালেব হোসেন অপ্রস্তুত হয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তার চোখে মুখে আপত্তির ছায়া। আসলে বিবাহযোগ্য মেয়েকে এভাবে বাড়ির বাইরে আলাদা করে তিনি কোথাও রাখেননি। কখনো। কিন্তু আয়েশা আপা এত করে বলছেন, নাও করতে পারছেন না ।কি করবেন সিদ্ধান্ত নিতে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়েন।
আয়েশা সিদ্দিকা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মনের ভাবটা বুঝতে পারেন। তিনি অভয় দিয়ে বলেন,,

:-চিন্তা করবেন না ভাইজান! সুহাসিনীকে আমি নিজ দায়িত্বে নিয়ে যাচ্ছি। আমার বাড়িতে তার কোন অমর্যাদা আমি হতে দেব না। কথা দিচ্ছি।

এরপর আর আপত্তি করতে পারেন না মোতালেব হোসেন ও তাহেরা বেগম। তাহিরা বেগম কিচেন এ গিয়ে সুহাসিনীকে নাস্তা রেডি করতে দেখে বলেন,,

:- আমি নিয়ে যাচ্ছি সুহা ।তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, জামা কাপড় গুছিয়ে নে ।তোরা আয়েশা আন্টি তোকে নিতে এসেছে। তোর মেহরাব ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে আগেই নিয়ে যেতে চাই তোকে।

সুহাসিনী বেশ অবাক হয়। তাকে নিয়ে যেতে চাইছে! পরক্ষণেই তার এমপি সাহেবের কথা মনে পড়ে সুহার।মনে মনে ভীষণ খুশি হয় সে। ও বাড়িতে গেলে তো তার এমপি সাহেবও থাকবে। সারাক্ষণ তার প্রিয় পুরুষের চোখের সামনে থাকবে ভেবেই ভেতরে খুশিতে অস্থির হয় সুহা।
তবে মুখে মনের ভাবটা প্রকাশ না করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:-আমি যাবো?? কিন্তু বাবা!!

তাহিরা বেগম মেয়ের কথায় বলেন,,

:- তোর বাবা রাজি হয়েছে ‌যা তো তাড়াতাড়ি গিয়ে গুছিয়ে নে। আমরা বিয়ের দিন যাবো। চিন্তা করিস না ।লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকিস ।আন্টির সাথে সাথে থাকবি। কোন দুষ্টুমি করবি না। ঠিক আছে??

সুহাসিনী মায়ের কথায় হালকা মাথা নাড়ে। তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় কিচেন থেকে। নিজের রুমের দিকে বাড়ায়।

কিছুক্ষণ পর সবকিছু গুছিয়ে বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুহা,আয়েশা সিদ্দিকার সাথে বেরিয়ে পড়ে মীরজা মেনশন এর উদ্দেশ্যে।

চলবে,,,,