ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২৩

0
214

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,২৩
মৌমো তিতলী

সুহা কে নিয়ে তিয়াশকে দেখতে হসপিটালে এসেছে সাহিত্য। তিয়াশ এখন মোটামুটি সুস্থ। কথাও বলছে স্বাভাবিক ভাবে। কেবিনে উপস্থিত অরুদ্ধ আর সিফাতও। বন্ধু অসুস্থ কিন্তু সবগুলো একজায়গায় হলে যেন সেসব ভুলে বসে এই যুবকদল।

সুহা বসে তিয়াশের পাশে একটা চেয়ারে। তিয়াশকে জিজ্ঞাসা করে,,,

:- কেমন আছেন ভাইয়া এখন?

ঘাড় ঘুরিয়ে সুহার দিকে তাকায় তিয়াশ। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,

:- এইতো আলহামদুলিল্লাহ এক্কেরে ফার্স্ট ক্লাস বনু। বনু কেমন আছো?

:- আমিও ভালো আছি। আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান। আপনাকে এভাবে হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখতে ভালো লাগছে না।

ঠোঁটে হাসি চওড়া হয় তিয়াশের। হুট করে মাথায় বদবুদ্ধির আগমন হয়। বলে,,,

:- কি আর করা বনু!! সবই কপাল! আমার তো আর তোমার এমপি সাহেবের মত কোন স্পেশাল অয়েন্টমেন্ট নেইক্কা ।তাই আমার ব্যারাম সারতে একটু দেরি হইবো! দুঃখ- দুঃখ জীবনটাই বেদনা!

তিয়াশের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাই সাহিত্য। বলে,,

:- ফাতরামি করার জায়গা পাস না তাইনা ??তোর এই শরীরের সেলাইয়ের সাথে সাথে তোর মুখটাও সেলাই করে দেয়ার দরকার ছিলো!! তাহলে যদি তোর এই বাচালগিরি একটু বন্ধ হতো!!

তিয়াশ চোখ বড় বড় করে বলে,,,

:-নাউজুবিল্লাহ দোস্ত। কস্ কি তুই!! আজকাল হাছা কইলেও দোষ। ছিধা কথার ভাত নাইক্কা! ছ্যাঃ

:- আহা! এলেন আমার সত্যবাদী যুধিষ্ঠির!

:- হ!! ছত্যিই তো কইছি! একবার যে তোর ধুমসে জ্বর হলো। লোকের জ্বর হইলে, অসুস্থ হইলে হসপিটালে যাওন লাগে। আর তুই কি করলি? চুপিসারে গিয়া দর্শন দিয়া আইলি আরেকজন রে!! আর তর জ্বর গায়েব!! তাইলে তোর মেডিসিন কেডা ক??

:- আজকাল বড্ড বেশি কথা বলছিস তুই তিয়াশ!!

তিয়াশ দাঁত কেলিয়ে খিকখিক করে হাসে। পরমুহূর্তেই সিরিয়াস ভঙ্গিতে মেহরাবের বিয়ের বেপারে জিজ্ঞাসা করলো তিয়াশ,,,

:- ওদিক্কের খবর কিতা? বিয়ের আয়োজন সব ঠিকঠাক?
আমজাদ তালুকদারের থেকে কিন্তু সাবধান কইলাম সাহিত্য। এরকম একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অনেক অচেনা মানুষদের আনাগোনা লাইগা থাকে। তাই,,

তিয়াশের কথা শুনে সাহিত্য বলে,,,

:-চিন্তা করিস না‌ আমজাদ তালুকদার মির্জা ম্যানসনের ভেতরে ঢুকে কিছুই করতে পারবে না। তাছাড়া অনুষ্ঠানে কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। কাউকে সার্চ না করে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমার মনে হয় না আমজাদ তালুকদার নিজের পায়ে কুড়োল মারার মত বোকা। শত্রুকে অবশ্য বোকা ভাবতে নেই। কিন্তু আমার মনে হয় না তোর উপরে হামলা করার পর আবার এত তাড়াতাড়ি কিছু করবে।

:-হ এইডা তুই হাছা কইছস! তবুও সাবধানের মাইর নাইক্কা। তাই কইলাম আর কি।

এমনই টুকটাক কথা হলো নিজেদের মধ্য। অরুদ্ধ আর সিফাত কে রেখে সুহাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো সাহিত্য। মেয়েটা দারুণ লজ্জা পেয়েছে তিয়াশের করা ইয়ার্কি ঠাট্টায়।

________

আনমনে গাড়ি চালাচ্ছে সাহিত্য। নিজের গাড়ি নিয়েই বের হয়েছিল সে ‌। সুহা আড় চোখে তাকাই সাহিত্যের দিকে। তখন যে তিয়াশ ভাইয়া বলল, এমপি সাহেব অসুস্থ অবস্থায় নাকি আড়ালে তাকে দেখতে গিয়েছিলো!! নাম না বললেও সুহা বেশ বুঝতে পারে তিয়াশ ভাইয়া তার কথাই বলছিলো। এমপি সাহেব তাকে কত আগে থেকে ভালোবাসে প্রশ্ন জাগে মনে। কই কখনো তো বুঝতে দেয়নি। সব সময় খালি বকাঝকা আর ধামকি দিতো। এই জন্যই তো সুহা এমপি সাহেবকে খুব ভয় পেতো।

ভাবনার মাঝেই গাড়ি থেমে যায়। গাড়ি থামাতে হতচকিয়ে যায় সুুহা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বেশ নির্জন জায়গাটা। আশেপাশে ঘন জঙ্গল। সাহিত্য কে জিজ্ঞাসা করতেই যাবে, দেখে সাহিত্য গাড়ী থেকে বের হচ্ছে। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এপাশে সুহার জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়।
আলতো করে সুহার গালে হাত রেখে বলে,,,

:-আমার একটু কাজ আছে এখানে। আমি যাব আর আসবো। গাড়ি থেকে বের হবি না। এক্ষুনি আসছি আমি।

:- হ্যাঁ কিন্তু!!
সুহার কথা সম্পূর্ণ হয় না …গাড়ির ডোর লক করে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যায় সাহিত্য। ভ্রু কুঁচকে আসে সুহার। এই ঘন জঙ্গলে কি কাজ এমপি সাহেবের!! দেখতে দেখতেই জঙ্গলের আড়ালে অদৃশ্য হলো সাহিত্য।

ঘড়ি ধরে ঠিক দশ থেকে বারো মিনিট পরেই সাহিত্যের দেখা পাই সুহা। সাহিত্যর হাতে একটা ছোট্ট প্যাকেটে কিছু মোড়ানো। ডোর ওপেন করে সেটাই সাবধানে রাখতে রাখতে হাসিমুখে তাকাই সুহার দিকে। সুহা প্রশ্নবিদ্ধ নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
সাফাই দেয়ার ভঙ্গিতে বলে ,,,

:-একটা কাজের জিনিস আনতে গিয়েছিলাম।

:-এই ঘন জঙ্গলে আপনার কাজের জিনিস কোথা থেকে এলো? কি আছে প্যাকেটের ভেতরে??

এবার ধমক দেয় সাহিত্য.,,

:-যায় থাকুক তোর কি তাতে? সবকিছুতে এত কৌতুহল দেখানো ভালো নয়।

সাহিত্যের ধমক শুনে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে সুহা। আর কোন কথাই বলবে না সে। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সাহিত্য।

_________

আজ মেহরাবের গায়ে হলুদ। মির্জা ম্যানসনে রমরমা আয়োজন। হলুদের তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাবে সাহিত্য, সুহা, অরুদ্ধ , সিফাত আর নীলিমা। নিপা কেও আসতে বলা হয়েছে। সাহিত্য জানায় রাস্তা থেকেই পিক করে নেবে নিপা কে।

ছেলেরা পরবে সাদা প্যান্টের সাথে কচি কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবি। আর মেয়েরা হলুদ শাড়ি।
মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার আগে মেহরাবের হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সুহা একটা হালকা কাঁচা হলুদ রঙের গাউন পরেছে । কোকড়া চুলগুলো ছেড়ে রাখা। সাহিত্য মুগ্ধ হয়ে দেখে তার পদ্মফুল কে। সুহা মেহরাবকে হলুদ ছোঁয়াতে আসে। সামনে রাখা বাটি থেকে একটু হলুদ নিয়ে ছুইয়ে দেয় মেহেরাবকে। মেহরাবও একটু হলুদ দিয়ে সুহার নাকে ছুঁইয়ে দেয়। খিল খিল করে হেসে ওঠে সুহা।
নীলিমা একটা ফিনফিনে জর্জেটের হলুদ শাড়ি পড়েছে সাথে একদম চিকন হাতার সাদা রঙের ব্লাউজ। নীলিমাকে দেখতে অনেকটাই হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের মত লাগছে।সেও এসে মেহরাব কে হলুদ ছোঁয়ায়। মেহরাব একটু হলুদ নীলিমাকে ছোঁয়াতে গেলে বাধা দেয় নীলিমা। ন্যাকা সুরে বলে,,,

:- উফ!! ভাইয়া প্লিজ এই কাঁচা হলুদ আমার মুখে লাগিও না। একটু পর আমরা তোমার হবু বউয়ের বাড়িতে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে যাবো। ততক্ষণ এই হলুদের দাগ উঠবে নাকি??
হলুদের দাগ হয়ে থাকলে আমাকে একটুও ভালো লাগবে না দেখতে।
পাশ থেকে সুহা হালকা হেসে বলে,,
:- নীলিমা আপু !তাই বলে আজ তুমি হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ মাখবে না?? আর এটা তো অর্গানিক কাঁচা হলুদ। এটাতো স্কিনের জন্য ভালো।

সুহার কথা শুনে নাক মুখ কুঁচকে নীলিমা ধমকে ওঠে,,

:- you shut up!! আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছি কিছু?? গাইয়া ভূত কোথাকার!এ্যান্ড ডোন্ট কল মি আপু।
তোমার মত একটা ছোটলোক গাইয়া মেয়ের কাছ থেকে আপু ডাক শুনতে আমি মোটেও ইচ্ছুক নই।

নীলিমার ব্যবহার দেখে ধমকে ওঠে মেহরাব,,

:- ছিহ নীলি!! এটা কি ধরনের ব্যবহার তোর? সুহা এই বাড়ির গেস্ট। তার সাথে এ ধরনের আচরণ তুই করতে পারিস না!!

:-ওকে! তাহলে তোমাদের সো কল্ড গেস্ট কে বলো আমার কোন কাজে নাক না গলাতে। যত্তসব!!
বলেই মুখ বাঁকিয়ে ওখান থেকে চলে যায় নীলিমা।

নীলিমার ব্যবহারে ভীষণ কষ্ট পাই সুহা। সুহার মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে সুহার মাথায় হাত রাখে মেহরাব। বলে ,,,,

:-ওর কথায় কিছু মনে করো না! ব্যাপারটা কি জানিস সুহা ??আসলে নীলিমা সাহিত্যকে অনেক ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে।আর সাহিত্য তোকে ভালোবাসে, এটা হয়তো বুঝতে পেরেছে নীলিমা। এই জন্য তোকে সহ্য করতে পারে না। সাহিত্য কিন্তু মোটেও নীলিমাকে পছন্দ করেনা। তাই নীলিমা তোকে হিংসা করে। কথায় কথায় অপমান করার চেষ্টা করে।
আজকের ব্যবহারের কথা সাহিত্যকে কিছু বলিস না। নয়তো সাহিত্য আবার ঝামেলা করবে। তুই বরং নীলিমার থেকে একটু সাবধান থাকিস। ও কিন্তু সুযোগ পেলেই তোর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। বুঝলি ভাইয়ার কথা??

মেহরাবের কথা শুনে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুহা! নীলিমা ছোটবেলা থেকেই এমপি সাহেবকে পছন্দ করে !! এই কথাটাই কানে বাজছে সুহার।
এই জন্যই বুঝি তার সাথে নীলিমার এই দুর্ব্যবহার। এতদিনে নীলিমার খারাপ ব্যবহারের কারণ খুঁজে পেতো না সুহা ।কিন্তু এখন সবটা পানির মতো পরিষ্কার। তার এমপি সাহেবের উপরে অন্য কারোর নজর এই কথাটাই যেন হজম হয় না সুহার। চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

মুহূর্তেই ওপর থেকে নীলিমার চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। হাউ মাউ করে কাঁদছে নীলিমা। ব্যাপারটা কি হলো দেখার জন্য সবাই তড়িঘড়ি উপরে যাই। নীলিমার ঘরে গিয়ে দেখতে পায় মুখে ফেসিয়াল ক্রিম মেখে আছে নীলিমা। বাজেভাবে মুখ ডলা ডলি করছে আর কাঁদছে।
আয়েশা সিদ্দিকা আর শেফালী বেগম নীলিমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে?
নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে বলে ,,তার মুখে নাকি ভীষণ চুলকাচ্ছে। নীলিমার হাতের লম্বা লম্বা নখ গুলো দিয়ে বাজেভাবে মুখের ওপর চুলকাচ্ছে নীলিমা।
আহাদ মির্জা ভাগ্নির ঘরে এসে অবস্থা দেখে ডক্টর কে ফোন করে। প্রায় দশ মিনিট পর ডাক্তার আসে। ততক্ষণে নীলিমার মুখের ফেসিয়াল ক্রিম ধুয়ে এসেছে। মুখের জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। কেমন একটা বীভৎস দেখাচ্ছে নীলিমাকে!!
আর সেই ফুলে যাওয়া লাল র্যাশ বের হওয়া নিজের মুখ দেখে আর চুলকানিতে হাউমাউ করে কাঁদছে নীলিমা।

ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে জানাই এলার্জির কারণে এরকম হয়েছে। নীলিমা জানাই, এই ফেসিয়াল ক্রিম সে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করে। কখনো এমন এলার্জির সমস্যা হয়নি।
এটা শুনে ডাক্তার একটু চিন্তিত হয়। তারপর দেখতে চাই সেই ক্রিমটা। শেফালী বেগম নীলিমার ব্যবহৃত ক্রিমটা এনে ডাক্তারের হাতে দেয়‌ ডাক্তার সেটা কিছুক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাই, এই ক্রিমের ভেতরে বিচুটি পাতা মেশানো আছে। ডাক্তারের কথা শুনে সবাই নিস্তব্ধ। নীলিমার ব্যবহৃত ক্রিম এর ভেতরে বিচুটি পাতা কোথা থেকে আসবে? আর কেইবা এমন নীলিমার ক্রিমে বিচুটি পাতা মেশানোর মতো কাজ করবে?
ক্রিমে বিচুটি পাতা আছে জেনে নীলিমা প্রথমে সুহার দিকে তাকাই। কিন্তু সুহাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে সবকিছু জানতো। তাহলে কে করলো তার সাথে এমন? হুট করেই মাথায় কিছু একটা খেলে যায় নীলিমার। সে তড়িত সাহিত্যর দিকে তাকায়। ঘরের প্রত্যেকটা মানুষকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। একমাত্র সাহিত্য স্বাভাবিক ভাবে নির্বাক, নিরুদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নীলিমা বুঝতে পারে কাজটা সাহিত্যই করেছে। নিজের মুখের এই বীভৎস অবস্থা দেখে এমনিতেই রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে নীলিমা। তার ওপর কাজটা সাহিত্যর সেটা বুঝতে পেরেই চিৎকার করে ওঠে নীলিমা,,,

:- আমার সাথে এটা কেন করলে সোহরাব?? তুমি আমার ক্রিমে বিচুটি পাতা মিশিয়েছো তাই না?
ঘরের প্রত্যেকটা মানুষ অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে।
সাহিত্য কেন এমন একটা কাজ করতে যাবে? সবার মনেই প্রশ্ন!
সাহিত্য একেবারেই স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,,,

:- কেন মনে হচ্ছে যে তোর ক্রিমে বিচুটি পাতা আমি মিশিয়েছি? আমি কেন মিশাতে যাবো তোর ক্রিমে বিচুটি পাতা?? এর কোন কারণ আছে আমার? একটা কারণ দেখাতে পারবি??

:- অবশ্যই এটা তুমি মিশিয়েছো। আমি হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর যে বিচুটি পাতাটা তুমি মিশিয়েছো।

:- আশ্চর্য! আমার ওপরে অ্যালিগেশন দিচ্ছিস কিসের ভিত্তিতে? সেটা তো বলবি সবাইকে??

:- অ্যালিগেশন দিচ্ছি না। এটা তুমিই করেছো। কাল আমি সুহার মেহেন্দিতে মরিচ গুঁড়া মিশিয়ে দিয়েছিলাম বুঝতে পেরেই তুমি আজ আমার সাথে এটা করেছো ।প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এটা করেছো তাই না??

ঘরের প্রত্যেকটা মানুষের উপরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কি বলছে এসব নীলিমা? তার মানে কাল নীলিমাই সুহার মেহেদীতে মরিচ গুঁড়া মিশিয়ে ছিলো ।এই জন্য সুহার হাত এত জ্বালাপোড়া করছিলো।
এদিকে নিজের কু-কির্তির কথা ফাঁস করে নিজেই স্তব্ধ নীলিমা।

মুখে বিজয়ী হাসি ফুটে ওঠে সাহিত্যের। তার সন্দেহই সত্যি প্রমাণিত হলো। অবশ্য সাহিত্য ১০০% নিশ্চিতই ছিল কাজটা নীলিমার। তার প্রিয়শীকে কষ্ট দিয়ে নীলিমা এত সহজে ছাড় পেয়ে যাবে সেটা তো সাহিত্য কিছুতেই হতে দিতো না।।
মেয়ের কথা শুনে শেফালী বেগম এগিয়ে এসে বলে ,,,

:-কি বললি তুই? কাল তুই এই মেয়েটার মেহেন্দিতে মরিচ গুঁড়া মিশিয়ে ছিলি? কেন? কি শত্রুতা তোরে এই মেয়েটার সাথে??
মায়ের কথায় কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকে নীলিমা।

আহাদ মির্জাও নিজের ভাগ্নির কাজে লজ্জিত। তিনি কিছুতেই ভাবতে পারেননি নীলিমা এতটা নিচে নামতে পারে। নিজের সহধর্মীনির দিকে তাকিয়ে দেখেন আয়েশা সিদ্দিকা তার দিকে কেমন তাচ্ছিল্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি এটাই বোঝাতে চাইছে!
_ চিনে রাখো নিজের ভাগ্নিকে! কি তার ব্যবহার, কি তার চরিত্র!
লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে আহাদ মির্জার।আর এই মেয়েটাকে কিনা সে নিজের কলিজার ছোট ছেলের বউ করে আনার জন্য কথা দিয়েছে!! নিজের ওয়াদার জন্য অনুশোচনা হয় আহাদ মির্জার!

সাহিত্য সিরিয়াস ভঙ্গিতে গম্ভীর গলায় বলে ,,,

:-সবাই ঘর খালি করো!! যে যার কর্মফল ভোগ করবে এটাই নিয়তি। আমি আর এই বিষয়টা নিয়ে দ্বিতীয় কোন কথা শুনতে চাই না।বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান সবাই যে যার কাজে লেগে পড়ো।

সাহিত্যর কথা শুনে কেউ আর কোন কথা বলতে সাহস করে না। এক এক করে সবাই যে যার কাজে চলে যায়। একমাত্র শেফালী বেগম মেয়ের পাশে বসে থাকেন।
শেফালী বেগমের স্বামী ব্যবসার কাজে সব সময় দেশের বাইরে বাইরে থাকেন। শেফালী বেগমের শ্বশুর শাশুড়ি কেউ বেঁচে নেই।তার স্বামীর কোন ভাই বোনও নেই। তাই স্বামী দেশের বাইরে থাকাই মেয়েকে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতেই থাকেন তিনি। শেফালী বেগমের হাজবেন্ড যথেষ্ট ধনী। কিন্তু সমত্ত যুবতী মেয়েকে নিয়ে একা থাকতে ভয় পান তিনি। আমাদের সমাজ তো খুব একটা সুবিধার নয়। এই জন্যই শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আহাদ মির্জা বোনকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছেন। এমনকি মেয়েকে নিজের আদরের ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। আর তার মেয়ে কিনা এই ধরনের নিচু কাজ করেছে জানতে পেরে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে শেফালী বেগমের। মেয়েটা কেন যে এমন উগ্র মেজাজের আর অহংকারী হলো বোঝেনা শেফালী বেগম। ছোট থেকেই সে বাপের শাসন পাইনি। তিনি আর একা কত দিকে দেখবেন! বাইরের অবাধ্য বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিশেই আজ এই অধঃপতন মেয়ের‌। দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে শেফালী বেগমের বুক চিরে।

_______

করিডোর দিয়ে নিজের রুমের দিকে হেটে আসছিল সাহিত্য। হুট করেই পেছনে হাত টান পড়ায় তাকিয়ে দেখে সুহা হাত ধরে রেখেছে তার। তিনি পেছন ঘুরে সুহার দিকে তাকাতেই সুহা বলে,,,

:- আপনি এটা নীলিমা আপুর সাথে কেন করলেন? তার মানে হসপিটাল থেকে আসার পথে আপনি জঙ্গলে এই বিছুটি পাতা আনতেই গিয়েছিলেন তাই না??

সাহিত্য হেসে সুহার গাল টেনে দিয়ে বলে,,,

:-এইতো আমার বোকারানির মাথায় বুদ্ধি হচ্ছে!!

সুহা মুখ থেকে সাহিত্যর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,,,

:- ওসব কথা ছাড়ুন! এমনটা কেন করলেন উনার সাথে? উনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন!! কি অবস্থা হয়েছে ওনার মুখে!

সুহার কথা শুনে রাগের চোয়াল শক্ত হয় সাহিত্যের ।
দুহাতে শক্ত করে খিচে ধরে সুহার বাহু। নিজের সাথে চেপে ধরে সাহিত্য মুখ শক্ত করে বলে,,,

: খবরদার সুহাসিনী !!ডোন্ট ডেয়ার ওকে?? ওর সাথে কেন এমনটা করেছি সেটা তো নিজেই বললো। শুনতে পাসনি? আর ও কষ্ট পাচ্ছে তাতে তোর কি?? কষ্ট তো তুইও কাল পেয়েছিলি। ওর তাতে যাই এসেছিলো ?বরং পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছিলো তোর কষ্ট দেখে। আর আমার বাড়িতে, আমারই সামনে আমার জান কে কষ্ট দিয়ে ছাড় পেয়ে যাবে সেটা অসম্ভব। এই সোহরাব সাহিত্য মির্জার জিনিসে কেউ কু নজর দিয়ে পার পায় না। সেখানে তুই তো আমার সবকিছু। সবচেয়ে মূল্যবান। তোকে কষ্ট দিয়ে সে কখনোই ছাড় পেত না।
একটা অসভ্য ফালতু মেয়ের জন্য যদি তোর মুখে কষ্টের ছাপ দেখি সুহাসিনী!! আই স্যুয়ার!! থাপরে তোর দাঁত ফেলে দেবো।

সাহিত্যর রাগ দেখে ঢোক গেলে সুহা। এইরে এমপি সাহেব মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে গেছে। এনার মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন। নয়তো দেখা যাবে নীলিমাকে ছেড়ে তার উপরেই এক দফা ঝড় বয়ে যাবে। পরিস্থিতি সামলাতে সুহা ফট করে সাহিত্যর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। ঘটনার আকষ্মিকতায় হতভম্ব সাহিত্য। অবাক হয়ে সুহাসিনীর মুখের দিকে তাকায়। সুহার মুখে দুষ্টুমি হাসি ফুটে আছে। ব্যাস!! রাগ গায়েব এমপি সাহেবের।
সেও পাল্টা রিটার্ন দিতে যাবে তার আগেই সুহা সাহিত্যের হাত ছুটিয়ে এক ছুটে নিজের রুমে গিয়ে দরজা দিয়ে দেয়। সেদিকে তাকিয়ে প্রশান্তি হাসে সাহিত্য। তারপর নিজেও নিজের রুমে ঢুকে যায়। রেডি হতে হবে। অনেকটা দেরি হয়েছে। আরশিদের বাড়িতে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে যেতে হবে।

__________

খান বাড়িতে জমজমাট হলুদের আয়োজন। শাহেদ খানের একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। হলুদের অনুষ্ঠান ভীষণ জাঁকজমক করে করছেন তিনি। বাড়িতে সবাই নিজ নিজ কাজে ভীষণ ব্যস্ত। ছেলের বাড়ি থেকে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে আসার কথা ,এখনো এসে পৌঁছালো না। আরুশ পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল দেয় সাহিত্যকে। সাহিত্য জানাই তারা রাস্তায় আছে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

প্রায় ১৫ মিনিট পরেই সাহিত্যরা এসে হাজির হয় আরশিদের বাড়িতে। যার যার আসার কথা ছিল সবাই এসেছে শুধুমাত্র নীলিমা বাদে। তার মুখের যে অবস্থা তাদের সাজগোজ করতে না পেরে সে কিছুতেই আসতে রাজি হয়নি। অবশ্য সাহিত্য জানতো এমনটাই হবে। এমনিতেও নীলিমাকে সাথে আনার কোন ইচ্ছে বা ইরাদাও তার ছিলো না।

সুহা গাড়ি থেকে নেমেই নিপা কে নিয়ে চলে যায় আরশির কাছে। মেহরাব তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছে। আরশির হলুদের সাজে ছবি পাঠাতে হবে মেহেরাব ভাইয়ার কাছে। আরশিকে হলুদ একটা কাতান শাড়ি পড়ানো হয়েছে। সাথে কাঁচা হলুদ রঙের গাঁদা আর লাল গোলাপ ফুলের গহনা। খুব মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে।
আরশিকে মাঝখানে নিয়ে নিপা আর সোহা বিভিন্নভাবে পোস্ট দিচ্ছে। আর অরুদ্ধ ফটাফট ছবি তুলে দিছে তাদের।
সুহা আর নিপার সাজ প্রায় একই রকম।
হলুদ রঙের সুতি শাড়ি গায়ে জড়িয়েছে সুহা ।সাথে লাল রঙে রঞ্জিত কোমল দুটি ঠোঁট ।গলায় ,কানে ,মাথায় আর্টিফিশিয়াল হলুদের গহনা। সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকে সাহিত্য কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। দেখে কিছুতেই সাধ মেটে না এমপি সাহেবের। এই প্রজাপতির মতো চঞ্চল মেয়েটা শুধুমাত্র তার।
মনে পড়ে সকালের কথা।

সকালে
********
সুহা সবে মাত্র রেডি হয়ে বেরিয়েছে মেহরাবকে হলুদ লাগাবে বলে। তখনই সাহিত্য সুহা কে টেনে তার ঘরে নিয়ে যায়।সুহা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয় গালে। এদিকে লজ্জায় লাল তার পদ্মফুল। সাহিত্য নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে আলতো করে সুহার গালে সেই হলুদ লাগা গালটা ছুঁইয়ে দেয়। সাহিত্যের ট্রিম করা খোঁচা খোঁচা দাড়ির ছোঁয়ায় শিউরে ওঠে সুহা। হাত পা কাঁপতে থাকে সুহার। অদ্ভুত অনুভূতিতে বুঁদ হয় মন। এদিকে প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে বিভোর এমপি সাহেব।

মুহূর্তটার কথা ভেবে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে সাহিত্যের। এই মেয়েটাকে ছাড়া তার কিছুতেই চলবে না। তার জান, প্রাণ শরীরের সকল অস্থিমজ্জা, শিরা উপশিরার রন্ধে রন্ধে জড়িয়ে আছে মেয়েটা। এই মেয়েটাকে পেতে সে দুনিয়া উথাল পুথাল করে দিতেও রাজি আছে।
_________

চলবে,,,