#ভালোবাসি_প্রেয়সী [০৬]
#জান্নাতুল_বিথী
পারভীন আরা জানতেন ইমাদ কখনো বিয়েতে রাজী হবে না। তারপরো তিনি কথাটা তুলেছিলেন ছেলের রিয়েকশন দেখার জন্য। কিন্তু উপমা নামের মেয়েটাও যে তার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইবে না তা উনার ধারনার বাহিরে ছিলো। মেয়েটার রিয়েকশন দেখে তিনি তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার মতে তার ছেলে কোনো অংশে কম নয় বিয়ে পাত্র হিসেবে। যেকোনো মেয়ে অনায়াসে নিজের ছেলেকে বিয়ে করার জন্য রাজী হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু উপমার রি’জেক্ট তাকে বারবার ভাবাচ্ছে।
দুজনের বিয়ের কথা তোলায় সবাই যতোটা অবাক হয়েছে তার চাইতেও বেশি চমকে গেছে দুজনের একই সাথে বিয়েতে অমত পো’ষন করা দেখে। ইমাদ নিজেকে সামলে আবারো বসে পড়ে বললো,
‘মম বিয়ে আমার জীবনের অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত, চাইলেও হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। তাই বলছি এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও তুমি। যখন আমার বিয়ে করার সময় হবে তখন কাউ কে বলতে হবে না। এখন যাদের বিয়ের আলাপ করতে আসছো তাদের নিয়েই কথা বলো!’
ইমাদ ভাইয়ের কথা শুনে আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলি আমি। দম বন্ধ কর একজন মানুষকে বিয়ে করার কথাটা ভাবলেও মেজাজ খারাপ হয় আমার। দাঁতে দাঁত পিসে কোনো রকমে উঠে পড়ি আমি। ততক্ষনে সেখান থেকে ইমাদ ভাই ও উঠে চলে গেছে।
ইমাদ, উপমা দুজনে দুদিকে উঠে যেতেই পারভীন আরা নিজেও উঠে পড়ে সেখান থেকে। ছোট জা কে বসিয়ে রেখে তিনি এগিয়ে যান আয়েশার মা আখি বেগমের কাছে। তিনি তখনো কিচেন রুমে খুটি নাটি কাজ করছিলেন। বাড়ির মেহমানকে কিচেন রুমে আসতে দেখে তিনি এগিয়ে গিয়ে ব্যস্ত স্বরে বললো,
‘আরে বেয়াইন আপনি ক”ষ্ট করে এদিকে আসতে গেলেন কেনো? কিছু লাগলে আয়েশাকে বলতেন সে এগিয়ে দিতো!’
তার কথায় পারভীন আরা অমায়িক হাসে! ভদ্র মহিলার আচরন তার বেশ লাগে। তিনি বললেন,
‘আরে ধুর ক”ষ্ট হবে কেনো আমার? আমি আসলে আপনার সাথেই একটু গল্প করতে আসছি!’
‘জ্বী অবশ্যই আপনি আসুন!’
বলতে বলতে উনি পারভীন আরা কে নিয়ে ভেতরের একটা রুমে এগিয়ে যান! কুশলাধী বিনিময় শেষে পারভীন আরা প্রশ্ন করলেন,
‘উপমা কি আপনাদের মেয়ে? না মানে মেয়েটা অনেক মিষ্টি তাই ভাবলাম ছেলের বউ করা যায় কি না দেখি!’
এই প্রশ্নে আখি বেগম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, ইতস্ততা করে বললো,
‘আমার ননদ পূর্না আপার মেয়ে উপমা!’
‘আপনার ননদ এখন কোথায় আছে?’
‘তারা আরো বারো বছর আগেই মারা যায়, যদিও মৃ”ত্যটা স্বাভাবিক মৃ”ত্য ছিলো না!’
তার কথা শুনে পারভীন আরা ভ্রু কুচকে চিন্তিত স্বরে বললো,
‘কেনো? আপনার কি মনে হয় তাদের কেউ খু”ন করছে?’
‘হ্যা, আর এটাই সত্যি!’
‘উনাদের কে এমন শত্রু থাকতে পারে যে দুজন মানুষকে হ”ত্যা করবে? যদি উপমার বাবা মা খু”ন হয়ে থাকে তাহলে উপমা বেচে আছে কিভাবে?’
পারভীন আরার এতো প্রশ্নের কবলে পড়ে আরো শিটিয়ে যায় আখি বেগম। একে তো নতুন আত্বীয় তার উপর এতো কিছু শুনলে যদি মেয়ের বিয়ে ভে”ঙ্গে যায় তাহলে কি করবেন তিনি? সব ভেবে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন কিছু বলবে না সে পারভীন আরা কে। ভদ্র মহিলা মনে হয় তার মনের কথা টের পেয়ে গেছে। তাই তো বললো,
‘আপনি প্লিজ শান্ত হন, ভাববেন না উপমার কোনো কিছু আপনার মেয়ের উপর প্রভাব ফেলবে। আমি শুধু মেয়েটার উপর একটু ইন্টারেস্টেড তাই আপনাকে এতো প্রশ্ন করছি। তাছাড়া উপমা কে আমি আরো কয়েক মাস আগে থেকেই ছিনি। তাই আপনি প্লিজ ভ”য় পাবেন না!’
আখি বেগম অবাক স্বরে বললো,
‘আপনি উপমা কে কিভাবে ছিনেন?’
‘আপনি প্লিজ আগে আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিন!’
মনে মনে বিরক্ত হয় আখি বেগম। নতুন আত্বীয় কারনে তা চেপে বললো,
‘পূর্না আপা প্রেম করে বিয়ে করছে কারনে তার ভাই তাকে দূরে ঠেলে দেয়। যে ভাই ছোট বেলা থেকে বোন কে আদর যত্ন করে বড় করছে সে বোনই দিন শেষে তার মতামত ছাড়া অন্য জনের হাত ধরায় বোনের উপর অভিমান করে আর যোগাযোগ রাখে না আমার স্বামী। পূর্না আপা বিয়ের পর অনেক কান্না কাটি করে ভাইয়ের কাছে এসে। তার স্বামী ও হাতে পায়ে ধরার পরও উনি ক্ষমা করতে পারেনি তাদের কে। আপাকে খালি হাতেই ফিরতে হয়। তারপর বিয়ের পাঁচ বছর পর্যন্ত আপা আমার স্বামীকে রোজ ফোন করে ক্ষমা চায় কথা বলতে চায়। কিন্তু উনি নিশ্চুপ থেকে বোনের কথা শুনে। শোনার পর নিজের মতামত না জানিয়ে ফোন কেটে দিতো। এভাবেই পাঁচ বছর কেটে যায় তাদের বিয়ের। তারপর হুট করেই আপা হারিয়ে যায়, আর যোগাযোগ করতো না উনার সাথে! মনে যতোই রাগ পুষে রাখুক না কেনো একমাত্র আদরের বোনের ফোন না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়ে উনি। চারদিকে খোজ খবর নিতে থাকে কিন্তু বোনের কোনো খবর না পেলে কিছুটা ভেঙ্গে পড়ে উনি।’
আখি বেগম থামতেই পারভীন আরা একটু অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলো,
‘তারপর? খুজে পায়নি আপনার স্বামী তার বোন কে?’
একটু থেমে আখি বেগম আবার বলতে শুরু করে,
‘পেয়েছে, ছয় বছর পর হঠাৎ করে একদিন পূর্না আপা ফোন করে আমার স্বামীকে!’
‘উনার বোন তো বিয়ের পর ৫ বছর আপনার স্বামীর কাছে ফোন করে কথা বলতো। তারপর ছয় বছরের জন্য উনি হুট করে হারিয়ে গিয়ে আবার যোগাযোগ করেন। এই ১১ বছরে কি আপনাদের সাথে পূর্না আপার দেখা হয়নি?’
‘জ্বী না!’
‘আচ্ছা, এতো বছর উনি কোথায় ছিলো? আর এতো বছর পর হঠাৎ আপনার স্বামীর সাথে যোগাযোগই বা কেনো করছে?’
‘বলছি, সে দিন আপা ফোন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলো! তার ভাইকে ফোনে শুধু একটা কথাই বলেছিলো,
“ভাই আমার মেয়েটাকে একটু আপনি বাঁচান প্লিজ, মেরে ফেলবে ওরা আমার মেয়েকে! আপনি প্লিজ ******* ঠিকানায় এসে আমার মেয়েকে নিয়ে যান!”
এতো বছর পর বোনের কল পেয়ে উনি অস্থির চিত্তে বাহিরে যায়! এতো টুকুই জানি আমি, তারপর ঘরে ফেরার সময় উপমা কে কোলে করে নিয়ে আসছে। আমার হাতে তাকে বুঝিয়ে দিয়ে বলেছিলো,
‘আমার বোনের রত্ন সে, তার যেনো বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়। তাকে তুমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসেই বড় করবে সেই বিশ্বাস আছে আমার তোমার প্রতি!’
আখি বেগমের কথা শুনে ভ্রু কুচকায় পারভীন আরা, অনেক ঘটনাই এখনো তার কাছে ক্লিয়ার হয়নি। তারপরো যতোটুকু শুনেছে তাতেই হ্যাপি তিনি। তাই কিছুটা হেসে বললো,
‘উপমা জানে যে আপনারা তার মামা মামী হন?’
‘জ্বী না, জানে না সে, উপমা জানে আমার স্বামীর বন্ধুর মেয়ে সে! আর তারা মারা যাওয়ার পূর্বে তাকে আমাদের নিকট আমানত হিসেবে রেখে গেছে!’
‘ওহহ আচ্ছা আমি আ….
‘মম তোমাকে সবাই খুজছে বাহিরে এসো!’
হঠাৎ করে ইমাদের কন্ঠ পেয়ে চমকে উঠে পারভীন আরা। কথা শেষ না করে ছেলের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার ছেলে কখনো তাকে খুজতে আসবে না এ ব্যাপারে তিনি শিওর! তাহলে কি তার ছেলে এতক্ষন আড়ালে দাড়িয়ে তাদের সব কথা শুনেছে? মা কে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে। নিজেকে সামলে বললো,
‘বাহিরে আসো সবাই অপেক্ষা করছে!’
পারভীন আরা নিজের বিস্ময় ঢেকে বললো,
‘চলুন বাহিরে যাই, আরেক দিন কথা হবে এখন তো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!’
চলবে,,,,,,,,