ভ্যাম্পায়ার কুইন পর্ব-১০+১১

0
2

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ১০
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো। আমি বসে আছি ট্রেনের মধ্যে একটা কেবিনের মধ্যে আমি, জেসি, এনা আর জেসির বয়ফ্রেন্ড হ্যারি। হ্যারি কেনো জেসিকে ফেলে এখানে চলে এসেছিলো সেটা বলেছে। ওর দুই বছরের ছুটির বেশী দিন হয়ে গিয়েছিলো। তাই ওর বাবা লুসেফার কয়েকজন ডেভিলকে দিয়ে ওকে ধরে নিয়ে এসেছিলো এখানে। জেসি আর হ্যারির মধ্যে সব ঠিক ঠাক হয়ে গেছে। অবশ্য হ্যারির সাথে আমার কথা হয়েছিলো। ও জানিয়েছিলো ওর সাথে আমার লড়াই ও সবই ওর অভিনয় ছিলো। শুধু আমার ভিতরে কি শক্তি আছে সেটা দেখতে চেয়েছিলো ও।
।।
।।
আমি ঘুমানোর অভিনয় করে এনার কাধে মাথা দিয়ে ছিলাম এতোক্ষন। কিন্তু এনা আমার মাথা ওর কাধ থেকে নামিয়ে ওর কোলে দিয়ে রাখলো। আমি ভাবতেও পারি নি এনা এমন করবে।
.
–কিরে ওর খেয়াল তো এখন থেকেই রাখা শুরু করে দিয়েছিস।(জেসি)
.
–উহু এখন থেকে কোথায়। ওর খেয়াল তো প্রতিরাতেই রাখি।(এনা)
.
–কি তুই?(জেসি অন্য কিছু ভেবে বলো উঠলো)
.
–আরে তুই যেটা ভাবছিস সেটা না। ওর রুম তো আমার রুমের সামনা সামনি। ওর জানালা খোলায় থাকে প্রতিদিন। আমি প্রতিরাতে ওর রুমে গিয়ে ওর এলোমেলো করা রুম পরিস্কার করে দিয়ে আসি। সকালে উঠে ও ভাবে হয়তো ঘুমের ঘোরে ও নিজেই করেছে।(এনা)
.
–অন্য কিছু তো করোস না?(জেসি)
.
–আর কি করবো? আর তোরা দুজন ওমন দূরে দূরে বসে আছোস কেনো। হ্যারি তুমিও ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকো।(এনা)
.
–না ভাইয়ের মাইর খেয়ে সেদিন যে ভয় পাইছে এখন নাকি ওর সামনে আমার হাত ধরতেই ওর হাত পা কাপে।(জেসি হাসতে হাসতে বললো)
.
–হাইসো না। আমি কি জানতাম তোমার ভাইয়া হাইব্রিড জিনিস।(হ্যারি)
.
–এখন ধরো ও তো ঘুমাচ্ছে আমার কোলে।(এনা)
.
–কখন উঠে তার ঠিক আছে?(হ্যারি)
.
–আমার ভাবতেই অবাক লাগে তুমি একাডেমীর স্টুডেন্ট কাউন্সিলর প্রেসিডেন্ট আর তুমি কিনা আমার ভাইকে এতো ভয় পাচ্ছো?(জেসি)
.
–বেবী ভয় তো আমি আমার বাবাকে ও পাই না। কিন্তু তোমার ভাইকে ভয় না পেলে তো তোমাকে আমার হাতে তুলে দিবে না।(হ্যারি জ্যাসির হাতে তালুর উপরে একটা চুমু দিয়ে বললো)
.
–বাব্বা কি রোমান্টিক দৃশ্য।(এনা)
.
–মনে হয় আমরা চলে এসেছি।(জেসি)
.
–হ্যা সামনেই ট্রেন থামবে।(এনা)
।।।
।।।
ট্রেনটা থেমে গেলো। ব্লাক লোটাস রাজ্যের প্রধান স্টেশনে আমরা চলে আসলাম। বাইরের মনোরম পরিবেশ ট্রেন থেকে উপভোগ করা যায় না। বেশীরভাগ সময় সাদা থাকে বাইরে দিয়ে। এনা আমাকে ডাকতে যাবে তখনি আমি উঠে গেলাম।
.
–চলো ট্রেন তো থেমে গেছে।(আমি)
.
–এই তুমি ঘুমাও নি?(এনা)
.
–কি খারাপ দেখছিস? ঘুমের ভান করে তোর কোলে শোয়ার মজা নিচ্ছিলো।(জেসি হাসতে হাসতে বললো)
.
–আচ্ছা বাদ দে বের হ নাহলে ট্রোন আমাদের নিয়েই চলে যাবে।(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
।।।
।।।
আমার কাধে শুধু একটা ব্যাগ। তাছাড়া কেউ কোনো জিনিস আনে নি। আমি আবার আমার ব্যাগ ছাড়া কোথাও যায় না। যেখানে যাবো আমার ব্যাগ নিয়েই যাবো। আমরা চারজন বের হলাম ট্রেন থেকে। যেটা দেখলাম সেটা দেখার মতো প্রস্তুত ছিলাম না আমি। মনে হচ্ছে পুরো একশ জনের উপরে লোক এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে। সবাই কালো কোর্ট, কালো প্যান্ট, কালো চশমা, কালো সু পরে দাড়িয়ে আছে লাইন ধরে। সবার ডান হাতে একটা ধারালো তলোয়ার। আমাদের দেখে একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে আসলেন। তার হাতে ফুলের একটা তোড়া। সেটা সে এনার হাতে তুলে দিলো। আর বলতে লাগলো,
.
–সেকেন্ড প্রিন্সেস অফ ব্লাক লোটাস এলিনা কোয়াডার্ট, মাই লেডি আপনার জন্য সেনা প্রস্তুত। আমি আপনার সেনাপতি জন মাইক।(বয়স্ক লোকটা)
.
–বাবাকে কত করে বলেছি আমার এসবের দরকার নেই।(এনা)
.
–সরি মাই লেডি। কিন্তু এটা মহারাজের আদেশ না।(মাইক)
.
–তাহলে ভাইয়ার কাজ। আমি তো এখনো আমার গ্রাজুয়েশন কম্প্লিট করলাম না। এর মধ্যেই আমার সেনা আমার কাছে দিয়ে দেওয়ার কোনো মানে আছে?(এনা)
.
–এনা কি হচ্ছে?(আমি অবাক হয়ে এনাকে জিজ্ঞেস করলাম)
.
–ও মাই এপোলজি। আপনারা প্রিন্সেস এর ফ্রেন্ড মনে হচ্ছে। প্রথমে পরিচয় দি, আমি জন মাইক। মাই লেডি প্রিন্সেস এলিনা কোয়াডার্টের প্রধান সেনাপতি আমি।(মাইক)
.
–আমি জ্যাকসন, ও আমার বোন জেসিকা, আর ও হ্যারি।(আমি)
.
–স্যার জ্যাকসন, স্যার হ্যারি, ম্যাডাম জেসিকা আপনাদের সবাইকে স্বাগতম ব্লাক লোটাসে।(মাইক)
.
–মাইক আমরা খুব ক্লান্ত আমরা প্রাসাদে যাবো।(এনা)
.
–জ্বী মাই লেডি আমাকে ফলো করুন।(মাইক পুরো ফরমালিটির সাথে হাত দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো এনাকে)
।।।
।।।
পিছনে দাড়ানো সবাই এবার দুই পাশ হয়ে দাড়িয়ে মাঝ খান দিয়ে যাওয়ার একটা রাস্তা করে দিলো। আমি দাড়িয়ে রইলাম। বুঝতে পারলাম না কি হয়ে গেলো। এনা একজন প্রিন্সেস সেটা তো কখনো বলে নি আমাকে। তাহলে মিথ্যা বলেছে আমাদের কাছে ও। এনা বুড়ো লোকটার হাত ধরে যেতে লাগলো। হয়তো এটা ফরমালিটি। এনা আমাকেও ফলো করতে বললো। আমরা তিনজনও এনার পিছন পিছন যেতে লাগলাম। স্টেশন থেকে বের হয়ে পুরো অবাক হয়ে গেলাম। রাস্তা দিয়ে পুরো ৫০ টার বেশী কালো গাড়ি দাড়িয়ে আছে। দেখতে আমাদের দুনিয়ার বিএমডব্লিউ এর মতোই। এনাকে একটা গাড়িতে বসিয়ে দিলো। ভাবলাম আমরাও একই গাড়িতে গিয়ে বসবো। কিন্তু না শুধু জেসিকে এসে নিয়ে গেলো বুড়োটা। একদম সেই ফরমালিটি দিয়ে জেসির হাত ধরে এনার পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো। আমি আর হ্যারি তাকিয়ে রইলাম। হ্যারি রাগে দাত করমর করতে লাগলো,
.
–ভাই এটা কি হলো?(হ্যারি)
.
–আমিও তো বুঝতেছি না।(আমি)
.
–তোমার গার্লফ্রেন্ড যে একটা রাজার মেয়ে হবে সেটা কি ভেবেছিলে কখনো?(হ্যারি)
.
–না। ভাবলে তো এতো অবাক হতাম না।(আমি)
.
–মিয়া তোমার কপালে কষ্ট আছে। তোমার রাজ্য আর ব্লাক লোটাসের অনেক আগে থেকেই শত্রুতা চলছে। আর যদি এখানের রাজা জানে তুমি অষ্টম ডিউকের হারানো বড় ছেলে প্রিন্স জ্যাকসন তাহলে তুমি শেষ।(হ্যারি আমার কানে কানে বললো)
।।।
।।।
আমি আর হ্যারি এনার পিছনের গাড়িতে বসলাম। সেনাপতি শালা আমাদের গাড়িতেই সামনে বসেছে। হ্যারির কথায় এখন ভয় করতে লাগলো। যদি লংস্টার আর লোটাসের মধ্যে শত্রুতা থাকে তাহলে আমার আসল পরিচয় কখনো শেয়ার করা যাবে না।
।।
।।
গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমি প্রথমে ভাবলাম মনস্টার দুনিয়া অনেক অস্বাভাবিক হবে। চারিদিক ভয়ংঙ্কর পরিবেশ থাকবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিলো। একটা ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিলো। রাজ প্রাসাদে যাওয়ার জন্য এটাই নাকি একটা রাস্তা। আর যেতে হলে উড়ে যেতে হবে। ফ্লাইওভারের উপর থেকে সব ভালো করে দেখা যাচ্ছে। ফ্লাইওভারটা কাচঁ দিয়ে ঢাকা। স্বচ্ছ কাচঁ হওয়ায় বাইরের সব কিছু দেখা যাচ্ছে। অনেকটা উচু হওয়ায় নিচের বাড়িঘর দেখতে সুবিধা হচ্ছিলো। এখানের বাড়ি ঘর দেখে মনে হচ্ছে আমি আমাদের দুনিয়াতেই আছি। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে এখানের সময় নিয়ে। যদি এটা মানুষের দুনিয়া হতো তাহলে কেউ মেনে নিবে না। কোনো সাধারন মানুষকে এখানে এনে দিলে সে বলবে আমি অতীতে চলে এসেছি।
।।।
।।।
হ্যা এখানের সব কিছু মানুষের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। বাড়ি ঘর উন্নত হলেও এখানে কোনো প্রযুক্তি নেই যে এদের সংস্কৃতি ও উন্নত হবে। মোট কথা আমার অনেক ভালো লেগেছে। কারন এই মনস্টার দুনিয়া পুরো ফ্যান্টাসি দুনিয়ার মতোই। কারন এখানে ম্যাজিক আছে। ম্যাজিক দিয়েই এখানে সব কাজ কর্ম হয়। আমি বইতে যেসব পড়েছি সেসবের মধ্যে বেশী মিল নেই। আমার এই দুনিয়া সম্পর্কে জানতে হলে এই শহর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে।
.
–তো কেমন লাগছে জ্যাক আমাদের মনস্টার দুনিয়া?(হ্যারি)
.
–অনেক সুন্দর। পুরো ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড একটা।(আমি)
.
–হ্যা মানুষের দুনিয়ায় গিয়ে আমারও তেমনি মনে হয়েছিলো।(হ্যারি)
.
–আচ্ছা এখন তো আমরা একাডেমী জোনের বাইরে তাই না?(আমি)
.
–হ্যা।(হ্যারি)
.
–এখন তো ন্যাচারাল ম্যাজিক গুলো ব্যবহার করতে পারবো তাইনা?(আমি)
.
–হ্যা। পারবে। চারটা স্তরে ভাগ করা হয় ম্যাজিক ব্যাবহারকারীদের।(হ্যারি)
.
–স্তর কিসের আবার?(আমি)
.
–আগে শুনো। প্রথম স্তরে থাকে রাজার বংশ, নোবেল প্রধান জেনারেলের বংশধর, এরপরের স্তর হলো যারা সেনার অংশ হয় তারা, আরেক অংশ হলো হান্টার, আর সব শেষ স্তর হলো সাধারন জনতা।(হ্যারি)
.
–এর মধ্যে শক্তিশালী কারা?(আমি)
.
–সবাই শক্তিশালী হতে পারে। তবে সেটা নিজের ট্রেনিং আর ম্যাজিকের উপরে।(হ্যারি)
.
–আমি দুংখিত আপনাদের কথার মধ্যে কথা বল্লাম। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে স্যার জ্যাকসন আপনি মানুষের দুনিয়া থেকে এসেছেন তাইনা?(মাইক)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–আপনার জন্য কিছু কথা বলি। আপনি তো নোবেল পরিবারের সন্তান নাহলে লোচার্ট একাডেমীতে চান্স পেতেন না। আসলে সেখান থেকে প্রথম ১০ জনদের ৫ টা রাজ্যে ভালো পদে চাকরী দিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো তো সাধারন জনতাদের জন্য না। কিন্তু আপনি আমরা এদের থেকেও বেশী সুবিধা সব সময় থাকে হান্টারদের। সেনাদের আইনী সুবিধা বেশী দিলেও বেশীরভাগ দিক দিয়ে তাদেরকে আটকে রাখা হয়। কিন্তু হান্টারদের কাজের ভিতরে কোনো আটকানো হয় না।(মাইক)
.
–হান্টারদের কাজ কি?(আমি)
.
–হান্টারদের আরেক নাম হলো এডভেঞ্চরেরার। তাদের প্রধান কাজই বিভিন্ন এডভেঞ্চারে যাওয়া। বিভিন্ন রকম মিশন শেষ করা। এবং সেই মিশনের বদলে টাকা ইনকাম করা।(মাইক)
.
–এটা তো সেরকম লাগছে।(আমি)
.
–হ্যা। জিনিসটা আসলেই অনেক সুন্দর। কিন্তু হান্টার আর রাজ্যের সেনাদের মধ্যে তেমন যায় না। লড়াই হয় অনেক গোপনে।(হ্যারি)
.
–তো হান্টার হওয়ার কোনো লাভ আছে?(আমি)
.
–হ্যা লাভ থাকবে না কেনো? একজন হান্টার পুরো পাঁচটা রাজ্যে বিনা কোনো আইডি কার্ড ছাড়া যেকোনো সময় ঘুরতে পারবে। পুরো পাঁচটা রাজ্যেই থাকতে পারবে। যেকোনো গিল্ডে জয়েন হতে পারবে।(হ্যারি)
.
–স্যার একটা কথা বলতাম আপনাকে। আমাদের প্রিন্স নিজে একজন হান্টার।(মাইক)
.
–একজন প্রিন্স হান্টার হতে পারেন।(আমি)
.
–হ্যা কেনো নয়। যদি রাজার আদেশ থাকে তাহলে সবই হতে পারবে।(হ্যারি)
.
–এটা তো ভালো জিনিস।(আমি)
।।।
।।।
দেখতে দেখতে আমরা প্রাসাদে চলে আসলাম। আসলেই এই দুনিয়া আমার ভালো লাগতে শুরু করেছে। আমি এমন দুনিয়া শুধু কার্টুন মুভিতেই দেখেছি। কোনোদিন ভাবতে পারি নাই আমি নিজেই এমন একটা দুনিয়া থেকে জন্মেছি।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ১১
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমি ভেবে নিয়েছি আমি কি করবো। শুধু একাডেমীতে থেকে এতো সুন্দর দুনিয়া মিস করে লাভ নাই। আমি একাডেমীতে আর ফিরবো না। এখানেই থাকবো কিছুদিন। দেখি এখান থেকে হান্টার হয়ে আমি লংস্টারে যাবো। দেখতে দেখতে গাড়ি গুলো বিশাল একটা প্রাসাদের সামনে এসে থামলো। আমি হা হয়ে রইলাম। আমি সিনেমাতেও এতো সুন্দর প্রাসাদ দেখি নি। পুরো প্রাসাদ মনে হচ্ছে মূল্যবান কোনো ধাতু দিয়ে বানানো হয়েছে। কারন সূর্যের আলো পরে সেটা প্রতিফলন করে দিচ্ছে। প্রাসাদটা পুরো রাজ্যের সবচেয়ে উপরের দিকে। দূর থেকে যাতে দেখা যায় তাই অনেক উচুতে বানানো হয়েছে। আমাদেরকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। অবশ্য এনা আগে আগে যাচ্ছে। আর আমরা তিনজন পিছন পিছন। এবার আর বুড়ো টাকলু হাত ধরে নিচ্ছে না। এনা নিজেই যাচ্ছে। আমরা সোজা গিয়ে রাজার দরবারে পৌছে গেলাম। রাজা কিছুক্ষন এনার সাথে আলাদা কথা বললেন
আর আমাদের তিনজনকে আমাদের নিজেদের থাকার ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেসিকে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন মেয়ে এসে।
.
–দেখছো হ্যারি আমার বোনের কি ভাগ্য। কত সুন্দরী মেয়ে তাকে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় আমি ভাবলাম আমাদেরও ঔভাবে ধরে নিয়ে যাবে।(আমি)
.
–তুমি তো দেখছি সেই লুচু। মিয়া লজ্জা করো। শ্বশুড় বাড়ি আসছো।(আমার কানে কানে বললো)
.
–আপনারা দুজন আলাদা থাকবেন না এক সাথে?(মাইক)
.
–সেনাপতি জন মাইক। আমরা এতো বড় বাসাতে একা থাকলে তো ভয় পেতে পারি। তাই আমাকে আর আমার এই হবু দুলাভাইকে এক ঘরেই রাখেন।(আমি)
.
–এই আমি এক ঘরে তোমার সাথে থাকবো না।(হ্যারি)
.
–এক ঘরেই থাকবো। তোমায় দিয়ে ঠিক নাই। দেখা গেলো আলাদা ঘরে আমার বোন নিয়ে ঢুকে গেছো তুমি।(আমি)
.
–আপনারা নির্ভয়ে থাকুন। রাজ প্রাসাদের মধ্যে এমন কিছু হবে না কখনো। প্রাসাদের মধ্যে বিবাহিত না হলে কোনো পুরুষ আর নারী এক ঘরে থাকতে পারবে না।(মাইক)
।।।।
।।।।
আমরা হাটতে হাটতে চলে আসলাম আমাদের ঘরের দিকে। সেনাপতি খুলে দিলে আমাদের ঘর। বিশাল বড় একটা ঘর। বিশাল বড় একটা বিছানা। মনে হয় ১০ থেকে ১২ জন খুব আরামেই ঘুমাতে পারবে। চারটা সিঙ্গেল সোফা সেট আছে মাঝখানের জায়গায়। জামাকাপড়ের জন্য কয়েকটা ওয়ারড্রপ। সেনাপতি আমাদের দেখি দিলো বেশ কিছু জিনিস। সবচেয়ে সুন্দর লাগলো বেলকনিটা। বেলকনিতে গিয়ে দেখলাম রাজপ্রাসাদের মাঝ খানের তলায় আমরা। পুরো রাজ্য দূরে নিচে ছোট করে দেখা যাচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি সেদিকে। হ্যারি আমার পাশে দাড়িয়ে বলতে শুরু করেছে
.
–সুন্দর অনেক তাইনা?(হ্যারি)
.
–হ্যা। আচ্ছা তোমাদের রাজ্যও তো সুন্দর তাইনা?(আমি)
.
–আমাদের রাজ্য? এই সব যা দেখছো সবই তো আমাদেরই ছিলো এক সময়।(হ্যারি)
.
–ওও সরি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা এখন ডেভিলরা কোথায় থাকে?(আমি)
.
–আন্ডারওয়ার্ল্ডে।(হ্যারি)
.
–আচ্ছা ডেভিল কিং তো এখনো জন্ম নেই নি তাহলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের রাজা কে এখন?(আমি)
.
–ডেভিল কিং এর চার সেনাপতি শাসন করছে।(হ্যারি)
.
–আচ্ছা ডেভিল রাজার চারজন সেনাপতি এতো বছর বেঁচে আছে কিভাবে? ডেভিলরা তো অন্য মনস্টারদের মতোই হায়াত পাই।(আমি)
.
–এটা বেশ রহস্যময় ব্যাপার। শুধু তোমাকেই বলছি ডেভিল কিং মারা যাবার সময় একটা স্পেল পরেছিলো। তখন ডেভিল কিং এর সকল বিশ্বস্তরা কয়েক হাজার বছর পারি দিয়ে ভবিষ্যতে চলে আসে।।(হ্যারি)
.
–কত বছর আগে এসেছে তারা?(আমি)
.
–চল্লিশ বছর হয়েছে। এখানে এসে তারা আন্ডারওয়ার্ল্ড দখল করে নিলো।(হ্যারি)
.
–কিন্তু তাদের ভবিষ্যতে আসার কারন কি?(আমি)
.
–আমার বাবা তো বললেন এটা বেশ কয়েক রাজাই করেছেন। একজন রাজা যদি দেখেন তারপরের রাজা তার ছেলে মেয়ে কেউ হতে চাচ্ছে না তাহলে তিনি একটা স্পেল পড়েন। সেই স্পেলে রাজার মৃত্যুর পর রাজার অনুসারীরা ভবিষ্যতে চলে যাবে। ঠিক সেই ভবিষ্যতে যাবে যার বেশ কিছু বছর পরই পরের ডেভিল কিং জন্ম নিবে।(হ্যারি)
.
–এটা তো বেশ প্যাচালো বিষয়।(আমি)
.
–তোমার কাছে এগুলো প্যাচালোই লাগবে। কিন্তু আমাদের কাছে সাধারন।(আমি)
.
–আচ্ছা তোমার ম্যাজিক এট্রিবিউট কি জানো?(হ্যারি)
.
–মানে?(আমি)
.
–মানে তুমি কোনো ধরনের ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারো? ন্যাচারাল ভাবে চার ধরনের এট্রিবিউট থাকে। Water, Earth, Air এবং Fire। আবার তাদের মধ্যে কিছু ভিন্ন এট্রিবিউট ও দেখা যায়। এগুলো অনেক রেয়ার হয়। তাদের মধ্যে হলো Light, Dark, Plant এছাড়াও কিছু লেজেন্ডারী ম্যাজিক রয়েছে যেগুলো খুব কম মানুষের কাছে থাকে।(হ্যারি)
.
–তো তোমার তো মনে হচ্ছে ডার্ক এট্রিবিউট।(আমি)
.
–হ্যা আমি ডার্ক ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি। অবশ্য সেটা বড় কোনো ব্যাপার না। কারন দুইটা বা তিনটা এট্রিবিউট থাকে তাদের কাছে আমি কিছুই না।(হ্যারি)
.
–এখন তো আমরা একাডেমী জোনের বাইরে। নিজের এট্রিবিউট অনুযায়ী ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারবো তাই না?(আমি)
.
–হ্যা। ম্যাজিকের কোনো রুলস নাই একাডেমী জোনের বাইরে। কিন্তু তোমার এট্রিবিউট কি সেটা কি জানো?(হ্যারি)
.
–না। সেটা তো জানি না। আচ্ছা এটা চেক করে কিভাবে?(আমি)
.
–একটু রেস্ট করো। এনাকে বইলো ও কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিবে।(হ্যারি)
.
–ওকে।(আমি)
।।।
।।।
আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম। আসলেই ট্রেনের জার্নিতে আমার এমনিতেও ভালো লাগে না। তারপর আবার গাড়িতে উঠতেও ভালো লাগে না। সব মিলিয়ে আমার অবস্থা টাইট। আমি বুঝলাম না, এই দুনিয়া ম্যাজিকের কিন্তু কলেজের মধ্যে আমাদের কোনো ম্যাজিকই শিখানো হয় না। সেখানে আমাদের শুধু উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হয়। আমাদের দুনিয়ার মতে সেখানে পিএইচডি করানো হয়। সেখান থেকে বের হলে সবারই মর্যাদা অনেক বেড়ে যাবে। আমি আর হ্যারি কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে নিলাম। আমি ঘুমিয়ে গেলাম। বিকালের দিকে হ্যারির ডাকে আমি উঠলাম। দেখি জেসি আর এনা দুজনেই এসেছে।
.
–কি হলো এতো ঘুমালে কি হবে?(এনা)
.
–তোমার সাথেই কথা বলতে চাইছিলাম।(আমি)
.
–আমি জানি কি বলবে এখন।(এনা)
.
–তো উত্তর দাও।(আমি)
.
–আসলে আমি তোমাদের কাছে লুকাতাম না। কিন্তু আমার কোনো সময়ই ভালো লাগে না নিজেকে প্রিন্সেস ভাবতে। সাধারন মনস্টার সবাই আমাকে এড়িয়ে চলে। সবাই তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করে সব সময়। কোনো বন্ধুই আমার ছিলো না। এছাড়াও যখন মানুষের দুনিয়ায় ছিলাম তখন আমি মানুষদের থেকে পুরো আলাদা ছিলাম তাই তখনও আমার কোনো বন্ধু ছিলো না। কিন্তু সেখানে আমার দেখা হয়েছিলো জেসির সাথে। প্রথম বারের মতো আমি কোনো ফ্রেন্ড পেয়েছিলাম। আমি চাই নি আমার সম্পর্কে কিছু বলতে। সাধারন একজন ভ্যাম্পায়ারের মতোই পরিচয় হয় আমার ওর সাথে। আমি ভয় পেতাম যদি আমার আসল সম্পর্ক জেনে ও আমার সাথে বন্ধুত্ব না রাখে তাই আমি যে ব্লাক লোটাসের প্রিন্সেস সেটা কখনো বলি নি ওকে।(এনা)
.
–তাহলে সেটার জন্য আমাকেও বলো নি?(আমি)
.
–হ্যা। কিন্তু সত্য কতদিন লুকানো যায়। একদিন না একদিন তো ঠিকই জানতে পারবে। তাই আজই জানিয়ে দিলাম।(এনা)
.
–তাও যেভাবে জানালে, পুরো অবাক হয়ে গেছি।(আমি)
.
–হ্যা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি।(এনা)
.
–আমি টুকটাক সন্দেহ করেছিলাম আগে থেকেই।(জেসি)
.
–তাহলে আগে বললি না কেনো?(আমি)
.
–সন্দেহ ছিলো তাই আর বলি নাই তোকে। শিওর থাকলে ঠিকই বল্তাম।(জেসি)
.
–আচ্ছা বাদ দাও। জ্যাক চলো তো।(এনা)
.
–কোথায়?(আমি)
.
–আসার সময় তো বাবা তোমাদের দুজনের সাথে কথা বলতে পারে নাই এখন কথা বলবে।(এনা)
.
–ওকে।(আমি)
।।।
।।।
আমি ফ্রেস হয়ে নিলাম। এনা বিছানার উপরে একটা ব্লেজার রেখেছে। একটা নেভি ব্লু ব্লেজার। এমনিতেি ব্লু একটা প্যান্ট, হালকা ব্লু একটা চেক শার্ট পরে আছি সেই সাথে আমার নেভি ব্লু একটা ব্লেজার। হ্যারি একটা ব্লাক ব্লেজার পরেছে। অবশ্য ভালো মানিয়েছেও। কারন জেসিও ব্লাক একটা গাউনের মতো লম্বা ড্রেস পরে আসে। আমি এনার দিকেও তাকালাম। নিল একটা বিশাল জামা পরে আছে। জামার অনেকটা অংশ মাটিতে পরে আছে। জানি না এটাকে কি বলে। কিন্তু অনেক সিনেমাতে দেখেছি আগেকার রাজকুমারীরা এরকম জামাই পরে থাকে আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম দেখে ও অনেকটা লজ্জা পেলো,
.
–ঔভাবে হা করে তাকিয়ে থাকিস না। ওর বাবা দেখলে গলা কেটে নিবে।(জেসি)
.
–কি যে বলিস না।(আমি গলায় হাত দিয়ে বল্লাম)
.
–চলো চলো এমন কিছুই হবে না।(এনা আমার হাতটা ধরে নিয়ে যাচ্ছে)
।।।
।।।
আমার হাত ধরে এনা নিয়ে যাচ্ছে। সিড়ি দিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছি। জানি না এতো সেজে গুজে কেনো যাচ্ছি। কিন্তু আমার বুক থর থর করে কাপছে। এনা আমার হাত ধরে একটা বিশাল হলরুমে নিয়ে আসলো। রুমটা ভরা লোক। পুরুষ মহিলা সবাই একত্রে দুজনের হাত স্টাইল করে ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে এখানে একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠান চলছে।
.
–এতো মানুষ কেনো এনা?(আমি)
.
–আজকেই আমার বোনের বিয়ে। তাই বাবা বিভিন্ন রাজ্যের রাজা এবং বিশেষ নামী দামী মানুষদের ইনভাইট করেছে।(এনা)
.
–কি বলছো। কি বলছো? আজই বিয়ে, আগে জানলে তো কোনো গিফট টিফট নিয়ে আসতাম।(আমি)
.
–তুমি চুপচাপ থাকো তো। এখন সবার মতো ঔভাবে হাত রাখো। আমরা বাবার কাছে যাবো। সামনে গিয়ে সম্মান জানাবো। তারপর আমাদের যখন কথা বলতে বলবে তখন কথা বলবো। বুঝতে পারছো?(এনা খুব সিরিয়াস হয়ে বললো)
.
–হ্যা।(আমি)
।।
।।
এনাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। আসলেই তো চিন্তিত। আমার এখন মনে হলো, এনা কি আমাকে নিয়ে ওর বাবার কাছে গিয়ে বলবে ও আমাকে ভালোবাসে, নাকি আমাকে বলতে হবে সেই কথা। এটা তো এনা কিছু বললো না। আমি তো নিজেই এখনো ঠিকমতো ওকে ভালোবাসার কথা বলি নাই ওর বাবাকে কিভাবে বলবো। আমি আমার বাম হাতের আঙ্গুল গুলো মুঠো করে বুকের উপরে রাখলাম কনুই ভেঙে। আর এনা আমার ভাঙা কনুই এর মধ্যে দিয়ে ওর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে একদম আমার সাথে লেপ্টে গেলো। এভাবে এখানের সবাই হাটাহাটি করছে কিংবা গল্প করে একে অপরের সাথে। আমি আর এনা হাটতে হাটতে রাজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। রাজা দূর থেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি সামনে গিয়ে এক হাটু গেড়ে সম্মান জানালাম। এনা আমার পাশে দাড়িয়ে শুধু ওর জামাটা ধরে একটু নিচু হয়ে আবার দাড়ালো। বুঝলাম মেয়েদের ওভাবেই সম্মান দিতে হয়।
.
–উঠে পরো ইয়াং ম্যান।(রাজা)
।।।
।।।
আমি উঠে পরলাম। এনা আমাকে একটা চিমটি দিলো। মানে বোঝাচ্ছে আবারো সেইভাবে হাত দিতে।
.
–এলিনা থাক না। তোমার বন্ধু তো এই দুনিয়ার নিয়ম কানুনে অভ্যস্ত না তার যেভাবে ভালো লাগে সে সেভাবেই ইনজয় করুক।(রাজা)
.
–জ্বী মহারাজ।(এনা)
.
–আমি এখন রাজ দরবারে নেই।(রাজা)
.
–সরি বাবা।(এনা)
।।
।।
এনা গিয়ে রাজাকে জরিয়ে ধরলো। রাজাও তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
.
–তোমার ব্যাপারে হালকা পাতলা বলেছে এনা। বাকি টুকু তোমার থেকেই শুনি।(রাজা)
.
–জ্বী কি শুনবেন?(আমি জিজ্ঞেস করলাম)
.
–তোমার বাবা মার সম্পর্কে কিছু বলো।(রাজা)
.
–আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি মানুষের দুনিয়ায় বড় হয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে আমি লোচার্ট একাডেমী থেকে নিমন্ত্রন পাই। সাধারন কলেজ ভেবেই আমি পা রাখি। পরে জানতে পারি আমি মনস্টার রাজ্যে চলে এসেছি। সেই সাথে আমি নিজেও একজন মনস্টার। যাদের নিজের বাবা মা বলে জেনেছি তখন জানতে পারলাম তারা আমার বাবা মা নই।(আমি)
.
–বেশ ইন্টারেস্টিং তো। তো তোমার আসল বাবা মা সম্পর্কে কিছু জানো কি?(রাজা)
.
–হ্যা জানবো না কেনো? আমার বাবা জ্যাসন ব্রিট।(আমি)
.
–লংস্টারের অষ্টম ডিউক জ্যাসন ব্রিট?(রাজা)
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))