ভ্যাম্পায়ার কুইন পর্ব-৩৪+৩৫

0
1

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ৩৪
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
জম্বি গুলো লড়াইয়ের মধ্যে অনেক বাধা তৈরী করছে। সেগুলোকে মেরে ফেললেও আবার জীবিত হচ্ছে। এমনিতেই ঔগুলো মৃত লাশ। যে আঘাতই ওদের করো না কেনো সবই ওরা আবার উঠে দাড়াচ্ছে। পুরিয়ে ফেললেও ছাই থেকে আবার শরীর ঠিক যাচ্ছে৷ এনা তো পাগলের মতো শুধু তলোয়ারটা দিয়ে এক এক করে কাটতেই আছে। এতোক্ষন ওর কোনো ম্যাজিকাল ক্ষমতা ও ব্যবহার করে নি। কিন্তু যেহেতু জম্বিগুলো মরার নাম নিচ্ছে না, তাই ও অনেকটা রেগে গেছে। ওর রাগ মাখা মুখ দেখেই আমার ভয় করছে। বুঝতে পারছি না হঠাৎ ও এতো বদলে গেলো কিভাবে?
।।।
।।।
এনার তলেয়ারটা দিয়ে কালো আগুন বের হতে লাগলো। আমি এরকম জিনিস কখনো দেখি নি। আমার মাথার জ্ঞানের মধ্যেও আমি এরকম আগুনের কোনো চিহ্ন খুজে পাচ্ছি না। তাই বলতে পারছি না এটা কি রকম ম্যাজিক। হয়তো তলোয়ারের ক্ষমতাই হবে এটা। এনা এবার তলোয়ার দিয়ে একটা কোপ দিলো সামনের দিকে। কালো আগুনে সামনের অনেকটা জায়গা নিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। শুধু তাই না মাটি প্রায় ষাট-সত্তর মিটারের ও বেশী উধাও হয়ে গেছে। তলোয়ারের আঘাতে শুধু কালো আগুনই বের হয় না, বরং একদম শক্তিশালী বায়ুর হাওয়া বের হয়, যেটা সামনের যে কোনো জিনিস কে উধাও করে দিতে পারে। এরকম তলোয়ার মনস্টার দুনিয়ার মধ্যে আছে বলে আমার জানা নেই। কারন আমার স্মৃতিতে এটা আসছে না। আর আমার জেনারেল চারজনও এটার সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না। তলোয়ারটা থেকে আমি অনেক বিষাক্ত শক্তি অনুভব করতে পারছি। আমার ডেভিল সাইডের থেকেও অনেক অন্ধকার, কালো কিছু আছে তলোয়ার তাই।
।।।
।।।
এনার লড়াই দেখে আমি অনেকটা অবাক। আমি কি করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। এমনিতেও আমাদের কোনো আঘাতে জম্বিদের কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু এনার তলোয়ারের কালো আগুনে জম্বি গুলো পুড়ে আর জীবিত হচ্ছে না। এনার মুখে একটা শয়তানি হাসি দেখতে পেলাম। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও এভাবে একের পর এক হত্যা করে অনেক তৃপ্তি পাচ্ছে। ওর ভিতরটা অনেকটা ডার্ক হয়ে গেছে। হঠাৎ আকাশ থেকে আমাদের সবার উপরে সাদা তীর পরতে লাগলো, শত্রুরা ম্যাজিকাল তীর মারছে আমাদের দিকে। এই তীর গুলো হাতে বানানো নয়। এটা ম্যাজিকের মাধ্যমে বানানো। এই তীর সাধারন হাতে বানানোর তীরের থেকে পনেরো গুন শক্তিশালী। তীর দেখেই আমি বুঝতে পেলাম এটা এন্জেলদের। এই তীরের রং একদম সাদা হয়। এটা দিয়ে সাদা উজ্জল আলোও বের হয়। আর এটা শত্রুর শরীরে একটা লাগলে যতক্ষন শরীরে থাকবে ততক্ষন শরীর থেকে শত্রুর স্ট্যমেনা যে তীরটা ছুরবে তার শরীরে চলে যাবে। এটা এন্জেলরা ছাড়া কেউই ব্যবহার করতে পারে না। এন্জেলদের জন্য যুদ্ধে এই একটা সুবিধা থাকে। মূলত ডেভিলদের সাথে লড়তেই এন্জেলরা এই স্পেল তৈরী করেছিলো অনেক হাজার বছর পূর্বে। আমি চিন্তা করি নি এই স্পেল এখানে দেখবো। মূলত এন্জেলরা এখানে আসবে এটাই আমি কল্পনা করি নি। কিন্তু আকাশের দিকে তাকানোর পর আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। প্রায় এক লক্ষের বেশী এন্জেল ডানা ছড়িয়ে হাতে ম্যাজিকাল ধনুক নিয়ে উড়ছে। আর তাদের সামনে একটা মেয়ে এন্জেল রয়েছে। দূর থেকে দেখতে অনেকটা আফরিয়েল এর মতো দেখতে হলেও যখন আমি আমার চোখের ক্ষমতা বারিয়ে দেখলাম, তখন বুঝতে পারলাম হয়তো আফরিয়েল এর বড় দুই বোনের এক জন হবে।
।।।
একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। এন্জেলরা এখানে আসবে কেনো? তবে কি এন্জেলরা আমাদের সাহায্য করতে এসেছে? না সেটা কখনো হবে না। ওদের আক্রমন দেখে বোঝায় যাচ্ছে ওরা জম্বিদের উপরে আক্রমন করে নি। বরং আক্রমনটা আমাদের উপরে করেছিলো। ঠিক সময়ে আমি একটা ঢাল বানিয়ে নিয়েছিলাম বরফ দিয়ে। আমার মধ্যে পানির এট্রিবিউট থাকায় আমি বরফ ও বানাতে পারি। বরফ কখনো ট্রাই করে নি। কিন্তু মাথার উপর দিয়ে হাজার হাজার তীর আসতে দেখে তখন মাথায় বরফের চিন্তাই আসলো। এক হাত উচু করায় মাথার উপরে বিশাল একটা বরফের ঢাল হয়ে গিয়েছিলো। ঢালের কারনে আমার চারপাশে অনেকটা জায়গার সাধারন মনস্টারের শরীরে তীর লাগে নি। উপর থেকে আক্রমনের ফলে তীর গুলো অনেকের মাথায় লেগেছে। যার কারনে অনেক মনস্টার এবং ডেভিল মারা গিয়েছে। আমাদের যত সৈন্য ছিলো তার মধ্যে ত্রিশ ভাগই মারা গেছে এই আঘাতে। এন্জেলরা যে লোকির সাথে হাত মিলাবে এটা আমি কল্পনা করি নি কখনো। কিন্তু যা হয়েছে সেটা আমাকে মেনে নিতেই হবে। হ্যাভেন আমাদের উপরে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে আমরাও ছেড়ে দিবো না। আমি আমার একটা ডার্ক ম্যাজিক ব্যবহার করলাম। মূলত এটা একটা ট্যালিপ্যাথি স্পেল। এটার মাধ্যমে আমি আমার সকল ডেভিল সেনাকে আদেশ করতে পারবো। আমার কথা তারা সকলেই শুনবে।
.
–সকল ডেভিল সেনা। আমি ডেভিল কিং জ্যাকসন ব্রিট। হ্যাভেন যে যুদ্ধে লোকির সাথে হাত মিলাবে এটা আমার কল্পনা ছিলো না। তাই আমি সবাইকে আদেশ করছি। এক একটা এন্জেলকে প্রথমে আহত করবে। তারপর তাদের ডানা গুলো টেনে ছিড়ে ফেলবে। তারপর তাদের শরীর তোমাদের অস্ত্র দিয়ে আস্তে আস্তে কাটবে। একটা এন্জেল কে ও মারবে না বরং তাদেরকে মৃত্যুর জন্য আগ্রহী করবে। এতো কষ্ট দিবা যাতে করে তারা মরতে চাই। দুই হাত, দুই পা ভেঙে এই যুদ্ধের ময়দানে ফেলে দিবে। আমাদের সকল মৃত সেনাদের প্রতিশোধ নিবে।(আমি)
।।।
।।।
এন্জেলদের হঠাৎ এই আক্রমনে আমার মাথায় রাগ চলে আসলো। আর যেহেতু বেশী রেগে গেছি তাই আমার মনে শুধু ডেভিল চিন্তা আসতেছে এখন। কারো নিজের সেনার এরকম অবস্থা দেখলে সে এমনিতেই রেগে যাবে।
৷।।।
।।।।
একটা ডেভিলের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। দুদিন আগে আমি তাদের চিন্তামই না। কিন্তু এখন তাদের মৃত শরীর দেখে আমার রাগ হচ্ছে। প্রতিশোধ নিতে মন চাচ্ছে। হয়তো রাজা হলে এরকমই হয় সবার। কিন্তু এরকম কেনো আমি? ছোট থেকেই সব কিছুতেই আমার মায়া বেশী। মানুষের দুনিয়ায় যতদিন থেকেছি প্রায় সবাই আমাকে ঘৃণা করেছে, ছোট চোখে দেখেছে, কিন্তু তারপরও তাদের জন্য সবসময় আমার মায়া হতো। আর এখনো যাদের আমি কখনো দেখি নি, তাদের মৃত শরীর দেখে আমার মায়া হচ্ছে, রাগ হচ্ছে। আমি কিছু করতে যাবো তার আগেই এনা ওর ডানা দুটো বের করে উড়াল দিলো। ওর ডানা একবার মনে হয় দেখেছিলাম। ভ্যাম্পায়ারদের ডানা সাধারন হলেও ওর ডানা অন্যরকম। অন্য ভ্যাম্পয়ারদের মতো দেখতে হলেও ডানা দিয়ে কালো ধোয়া বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে কালো আগুন ধরে আছে ওর ডানায়। ওর চোখ দুটো রাগের কারনে লাল হয়ে গেছে। আর চুল গুলো উড়ছে আকাশে। এই রূপ যে দেখবে সে ভয়েই মারা যাবে হয়তো। এক সেকেন্ডের মধ্যে উড়াল দিয়ে ও এন্জেলদের সেনার একদম সামনে চলে গেলো। পুরো এক লক্ষের বেশী সেনা আর ও সামনে দাড়িয়ে আছে একা। আমি প্রথমে ভাবলাম হয়তো পাগল হয়ে গেছে ও। নিচেও ডানা বের করলাম ওর কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওর আক্রমন দেখে আমি নিজেই অবাক হলাম। ওর ডান হাত দিয়ে তলোয়ারটা উচু করলো। তলোয়ারের উপরে বিশাল একটা কালো বল তৈরী হলো। বল টা এতো বিশাল যেটা দেখতে দশতলা বিল্ডিং এর মতো। হ্যাভেনের এন্জেলরা তীর ছুরতে লাগলো। সব গুলো তীর আস্তে আস্তে বলটার মধ্যে যেতে লাগলো আর বলটা আরো বড় হচ্ছে। দেখতে দেখতে বলটা আরো বিশাল হয়ে যাচ্ছে। এটা যদি এনা এন্জেলদের উপরে ছুড়ে, তাহলে শুধু এক লক্ষ এন্জেল নয় বরং এখানে আমাদের সকল সেনা নিজের জীবন হারাবে। এনার কাছে এতো শক্তিশালী স্পেল আসলো কিভাবে আমি বুঝছে পারলাম না। সকল দুনিয়ার মধ্যে মানুষের দুনিয়ার পৃথিবী সবচেয়ে ছোট। পৃথিবীতে এই স্পেলটা যদি পুরো ক্ষমতা ব্যবহার করে ছোড়া যায় তাহলে পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ হয়তো ধ্বংস হয়ে যাবে। এমন কোনো স্পেলই এগারো দুনিয়ার মধ্যে কোথাও নেই। এনা কিভাবে এটা জানলো সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমি স্পেলটার পাওয়ার লেভেল দেখেই বুঝতে পারলাম কতটা ক্ষতিকর এটা। আর এনা এটা প্রথম বার ব্যবহার করছে, তাই তেমন শক্তিশালী হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও এই যুদ্ধের ময়দানের সবাইকে মেরে ফেলতে পারবে যদি এই বিশাল বলটা এনা এখানে ছুড়ে। এনার সাথে আমি ম্যাজিকের মাধ্যমে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না। এনা কোনো কথায় বলছে না। মনে হচ্ছে রাগের ফলে ও ভুলেই গেছে ও কি করছে। পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। সকল এন্জেল পরিস্থিতি খারাপ দেখে টেলিপোর্ট হয়ে চলে যেতে লাগলো। আর আমি সাথে সাথে আল্ট্রা স্পিডে এনার কাছে চলে গেলাম। এনা ওর বিশাল বলটা মারতে যাবে সামনের দিকে, আর আমি তার আগেই ওর কাছে গিয়ে ওর বানানো বলটার মধ্যে হাত দিয়ে সেটাকে টেলিপোর্ট করে পাঠিয়ে দিলাম লিম্বো ডাইমেনশনে। লিম্বো ডাইমেনশন এমন একটা জায়গা যার মধ্যে সময়ের কোনো মূল্য নেই। সেখানে যে সময়ে একজন ঢুকবে, একবছর পর বের হলেও যে সময়ে সে ঢুকেছে একদম সেই সময়েই বের হবে সেখান থেকে। আমি বিশাল বলটাকে টেলিপোর্ট করলাম লিম্বো ডাইমেনশনে। বলটাই হাত দেওয়ার ফলে আমার ডান হাতটা জ্বলে গেলো। পুরো ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত আমার একদম জ্বলে গেলো। আমার শরীরের যে কোনো ক্ষত ঠিক হতে বেশীক্ষন সময় প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই ক্ষতটা ঠিক হওয়ার নাম নিচ্ছে না। শরীর হিল করতে পারছে না। এটা ঠিক করতে হিলিং ম্যাজিক এর প্রয়োজন। আপাতোতো আমি কোনো হিলিং ম্যাজিক জানি না। লিম্বো ডাইমেনশনে এনার বানানো বিশাল বলটা ব্লাস্ট হয়েছে। আর সেটার আমরা এখানে থেকেই বুঝতে পেরেছি। বিশাল একটা ভৃমিকম্প হয়ে গেলো মাত্র। এনা ওর ঔ স্পেলের মাধ্যমে ওর ম্যাজিক পাওয়ার ফুরিয়ে ফেলেছে। ওর এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। ম্যাজিক পাওয়ার বেশী ব্যবহার করলে শারিরীক ক্লান্তি দেখা দেই। আর একদম বেশী ব্যবহার করলে শরীর প্যারালাইসিস হয়ে যায় কিছু ক্ষনের জন্য। আর অত্যন্ত বেশী ব্যবহার করলে একজন মারাও যেতে পারে। এনা ওর এই স্পেলে একদম বেশী ম্যাজিক পাওয়ার ব্যবহার করেছে যার ফলে ওর পুরো শরীর ক্লান্ত হয়ে প্যারালাইসিস হয়ে গেছে৷ আমার শরীরে উপরে ওর শরীরটা পরে গেলো। ওর হাতে থাকা তলোয়ারটা উধাও হয়ে গেলো। আমি তাকিয়ে রইলাম আকাশের দিকে। সমস্ত এন্জেলরা ভয়ে হ্যাভেনে টেলিপোর্ট হয়ে চলে গেছে। হয়তো লোকির সেনারাও আপাতোতো চলে গেছে। আমি এনাকে নিয়ে আস্তে আস্তে নামতে লাগলাম। কিন্তু পিছন থেকে কে যেনো তলোয়ার নিয়ে আমার পিঠে আঘাত করলো। তলোয়ারের আঘাতটা আমার জন্য এতো গুরুতর না হলেও। আমার বাম হাত দিয়ে আমার বুকে এনাকে জরিয়ে রেখেছিলাম। আর তলোয়ারটা আমার পিঠ বরাবর ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে এনার বুকের মধ্য দিয়ে ঢুকে গেছে। পিছনে ফিরে দেখতে পেলাম লোকি শয়তানি একটা হাসি দিচ্ছে।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ৩৫
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
লোকির শয়তানি হাসিতে শরীরটা শিরশির করে উঠলো। আমি আমার নিজের চিন্তা করছি না। আমার বুকের উপরে এনা ছিলো। ওর চিন্তা হচ্ছে। এমনিতেও একটু আগের বিশাল স্পেল ব্যবহার করার ফলে ওর ম্যাজিক পাওয়ার প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ওর শরীর একদম প্যারালাইস হয়ে গিয়েছে। আর এই অবস্থায় ওর বুকে তলোয়ারের আঘাত লেগেছে। তার উপর লোকির হাতের তলোয়ার তা সাধারন তলোয়ার না। লোকির হাতে রয়েছে ড্রাগোনিয়া রাজ্যের ফায়ার সোর্ড(আগুনের তলোয়ার)। এই তলোয়ার দিয়ে এতো শক্তিশালী আগুন বের হয় যেটা যেকোনো জিনিসই পুরিয়ে ফেলতে পারবে৷ লোকি তলোয়ারটা আমার নাভি বরাবর জায়গায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর এবার ও তলোয়ারটা আস্তে আস্তে ডান দিকে টান দিতে লাগলো৷ আস্তে আস্তে আমার আর এনার দুজনের পেট কাটতে লাগলো। তলোয়ারটার ব্লেডে এতো উত্তাপ যে সেটা আমার পেট পুরিয়ে দিতে চাচ্ছে। এভাবে চললে আমাদের দুজনের কেউই বাঁচবে না। এদিকে ইগড্রাসিলকে আমি ডাকতে চাইলাম, কিন্তু সে ড্রাগনদের সাথে লড়তে ব্যস্ত। ড্রাগনরা আবার আক্রমন করেছে। আর ভিরু তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। যুদ্ধ পুরো উল্টে গেছে। নিচে তাকিয়ে দেখতে পেলাম এন্জেলরা আবার ফেরত এসেছে, আর তারা এক এক করে আমাদের সেনাদের মারতে শুরু করেছে। আলফাইমের সকল সেনারা পরিস্থিতি খারাপ দেখে টেলিপোর্ট হয়ে চলে গেছে। বুঝতে পারলাম যুদ্ধ কখনো বেশী সংখ্যক সৈন্য থাকলেই জয় সম্ভব নয়। যুদ্ধ জয় করতে চাইলে বুদ্ধিও দরকার। থর এবং আমার চার জেনারেলকে ডার্ক এল্ফসের বিশাল একটা সৈন্য ঘিরে ধরেছে। আমার চার সেনাপতি সেখান থেকে আসতে পারছে না, কারন সেখানে ম্যালিকিত এর প্রধান সেনাপতি আছে।
।।।
।।।
সব মিলিয়ে শত্রুরা আমাদের চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরেছে। আর আমি আর এনা দুজনের মৃত্যুর পথে। আমি এখানে কিছু করলে আমি বেচে যেতে পারবো, কিন্তু এনার কি হবে আমি সেটা নিয়ে ভাবতে পারছি না। সব মিলিয়ে আমার মাথা পুরো অন্ধকার হয়ে আসলো। আমি এনার হাতটা ধরে সোজা ওকে টেলিপোর্ট করে আন্ডারওয়ার্ল্ডে পাঠিয়ে দিলাম। এটা একটা স্পেল। এটার নাম আইটেম টেলিপোর্টেশন। এই স্পেলের মাধ্যমে আমি যে কোনো জিনিস বা যে কাউকে, আমি যেখানে একবার গিয়েছে সেখানে টেলিপোর্ট করে দিতে পারবো। আমি ম্যাজিকের মাধ্যমে জেসিকে এনার চিকিৎসা করার কথা বলে দিলাম,
.
–যতই চেষ্টা করো মেয়েটা বাঁচবে না। আমার ফায়ার ব্লেডের আঘাত যার লাগবে তার সহজে বাচার কথা নয়। আর মেয়েটার ম্যাজিক পাওয়ার এমনিই অনেক কমে গেছে। বেশীক্ষন হয়তো বাচবে না আর।(লোকি)
।।।
।।।
লোকির কথা শুনে আমার মাথা পুরো ভারী হয়ে গেলো। আমি নরতে পারছি না। এমনিতেই আমার পেটের ভিতরে লোকির তলোয়ারটা রয়েছে। জ্বলতে লাগলো পেটটা। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। চোখ দিয়ে এমনিতেই পানি পরছে আমার। হঠাৎ আমার চোখ অন্ধকার হয়ে গেলো। আমার চারিদিক দিয়ে কালো ধোয়া বের হতে লাগলো। আমার পিঠের সাদা ছয়টা ডানাও আস্তে আস্তে কালো হতে লাগলো। আমার শরীরের আকারও প্রায় দশ মিটার বেরে গেলো। আমার শরীরের সবগুলো অস্থিও ফুলে গেলো। দেখে মনে হবে বডিবিল্ডার হয়ে গেছি। আমার আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় যে কেউ দেখে ভয় পাবে। এক কথায় বলতে গেলে আমার শরীর পুরো ডেভিল কিং হয়ে গেছে। আমি আমার শরীরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না। দুচোখ দিয়ে শুধু দেখতেই পাচ্ছি। হাত পা নারাতে পারছি না। এমনিতেই রাগে আমার মাথা অনেক গরম হয়ে আছে। কি করবো সেটা ভেবে পাচ্ছি না। যেহেতু আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করবো, সেই সুযোগে আমার ডেভিল সাইড আমার পুরো শরীরকে টেক ওভার করে নিয়েছে। যেহেতু আমার রাগ বেশী ছিলো, তাই আমার এন্জেল সাইড ডেভিল সাইডের সাথে লড়তে পারে নি। আর এখন আমার পুরো শরীরের নিয়ন্ত্রন আমার ডেভিল সত্ত্বার কাছে। আমি আমার সত্ত্বা গুলোর কাজ এখন বুঝতে পেরেছি। আমার চার সত্ত্বার মধ্যে যদি একজন আমার শরীর নিজের করে নেই তাহলে আমার আগের সব স্মৃতি চলে যাবে। আর চারজনের মধ্যে যে সত্ত্বা আমার শরীর পাবে, তার চরিত্র হিসাবে আমার ব্যবহার থাকবে। এখন ডেভিল সত্ত্বা যদি আমার শরীর নিয়ে যায় তাহলে আমি আমার সকল মেমোরী হারিয়ে ফেলবো। এবং আমি আগের ডেভিল কিং দের মতো হয়ে যাবো। আপাতোতো এতোদিন আমার মধ্যে এন্জেল সত্ত্বাই প্রধান ছিলো। যার জন্য আমার মনে সব সময় সবার জন্য মায়া থাকে। সে যাইহোক আমি কিছুই করতে পারছি না আর নিজের ইচ্ছায়। আমার শরীর একা একাই চলছে এখন। আমি লোকির গলাটা পিছনে হাত দিয়ে ধরলাম। যেহেতু আমার আকার অনেক বড় হয়েছে তাই ধরতে সমস্যা হলো না। ওর গলাটা ধরে আমি সামনে নিয়ে আসলাম, সামনে আনার পর বাম হাত দিলো পিঠে ঢোকানো তলোয়ারটা বের করলাম। এবং সেটা হাতে ধরার পর নিচে ফেলে দিলাম। আমার বাকি দিকে কোনো নজর নাই, আমার নিজের শরীরের প্রতি নিয়ন্ত্রন নেই আমার আর। আমার ডান হাতের ক্ষতটা এখনো ঠিক নাই, লোকির গলা ধরায় অনেক ব্যথা করছে। পেটের ক্ষতটা সাথে সাথে হিল হয়ে যাচ্ছে। লোকি আমার দিকে চেয়ে হাসছে। ওর গলা এতো শক্ত করে ধরেছি তারপরও ও হাসতে লাগলো। এমন সময় ব্যথায় কান্না করবে, কিন্তু তা না করে হাসতে লাগলো।
.
–আমি যা চাচ্ছিলাম সেটা হয়ে গেছে। ডেভিল কিং যদি ডেভিল কিং এর মতো ভয়ানক না হয়ে মায়াবতী হয় সেটা মানায় না। তোমার আম্মা যে ভবিষ্যত পাল্টে দিয়েছিলো সেটা আজকে আমি পাল্টে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে তোমার ডেভিল সত্ত্বা তোমার শরীরের বাকি সত্ত্বা গুলোকে মেরে নিজেই শরীরের মালিক হয়ে যাবে। আর তারপর একদম সত্য ডেভিল কিং হয়ে যাবে তুমি।(লোকি)
।।।
।।।
আমি লোকিকে কিছু বলতে পারছি না। কিছু বলার ও নাই। এমনিতেই রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে। আর আমার শরীর আমার নিয়ন্ত্রনে নেই এখন আর। আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কি করবো। কিন্তু লোকির কথা শুনে বুঝতে পারলাম, এই যুদ্ধ শুধু নামের ছিলো। লোকির আসল কাজ ছিলো আমার ডেভিল সত্ত্বাকে আমার শরীর দিয়ে দেওয়া। ছোট থেকেই আমার শরীর এন্জেল সত্ত্বার নিয়ন্ত্রনে ছিলো। একদম ছোট বেলায় আমার দাদা ভাই আমার ডেভিল সত্ত্বাসহ আমার ডিম্যান সত্ত্বাকে ম্যাজিক দিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলো। তারপর এনার ব্লাড খাওয়ার পরে আমার মধ্যে ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বার জন্ম হয়ে যায়। কিন্তু ডিম্যান আর ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বা আমার শরীরের লড়াইয়ের মধ্যে আসতে চাই না সেটা আমি সেদিনের স্বপ্নেই দেখেছি। মূলত এন্জেল আর ডেভিল সত্ত্বার মধ্যে লড়াই চলে।
।।।
।।।
আমি আরো রেগে গেলাম লোকির কথায়, আমার হাত এবার জোরে করে লোকির গলা চেপে ধরলো। এক মুহূর্তের মধ্যেই লোকির গলা পিষে গেলো আমার হাতের মধ্যে। লোকির মাথা শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেলো। শরীর নিচে পরতে লাগলো, আর মাথা আমার ডান হাতের মধ্যেই রইলো। আমি ভেবেছিলাম আমি লোকিকে মেরেছি, কিন্তু মাথাটা ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম সেটা একজন ভাইকিংস এর। লোকি হয়তো কারো উপরে ম্যাজিক ব্যবহার করে তার শরীর দখল করে নিয়েছিলো। এটা অনেক মারাত্মক একটা স্পেল। এটার নাম বডি ট্রান্সফার। এটার মাধ্যমে একদম দুর্বল কারো শরীরের নিয়ন্ত্রন করা যায়। এটা যার উপরে ব্যবহার করা হবে সে দেখতে একদম আমার মতই হবে, এবং আমি ওকে যা করতে বলবো সেটা করবে সে এবং দূর থেকে আমি যা বলবো সেটাই ও বলবে, আবার যার উপরে স্পেলটা ব্যবহার করবো, সে যা দেখবে আমিও দূর থেকে তাই দেখবো। লোকি হয়তো দূরে কোথাও বসে এই ভাইকিংসটাকে নিয়ন্ত্রন করেছে। লোকির এই কার্যে আমার মাথা আরো বেশী গরম হয়ে গেলো। এমনিতেই আমার শরীর আমি নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না। আর যত রাগ হচ্ছি ততই আমার নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছি। আমি নিচে দেখতে পেলাম এন্জেল আর ডার্ক এল্ফসরা মিলে মনস্টার এবং ডেভিলদের যুদ্ধে হারিয়ে ফেলছে। আমাদের অনেক সংখ্যক সেনা মারা গিয়েছে ইতিমধ্যে। আর আমার চার জেনারেলদের অবস্থাও মোটেও সুবিধার না। এমনিতেই ডেভিল কিং এর পাওয়ার হিসাবে তাদের সেনাদের পাওয়ার হয়। আমার বুদ্ধি ছিলো না যুদ্ধের প্রতি এজন্য তাদের চারিদিক দিয়ে শক্তিশালী শত্রু ঘিরে ধরেছে এখন। থরের অবস্থাও সুবিধার না। হাতের সাধারন কুরালটাও ভেঙে গেছে। সাধারন কোনো অস্ত্র দিয়ে কি ম্যাজিকের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। আর তারপরও ওনার থান্ডার ম্যাজিকের মাধ্যমে অনেক সেনাদের হারিয়েছেন। কিন্তু মিওনির ছাড়া থর কোনো যুদ্ধই এখন জিততে পারবে না। যুদ্ধে অবস্থা অনেক করুন ইগড্রাসিল একাই পুরো হাজার ড্রাগন সেনার বিরুদ্ধে লড়ছে।
।।।
।।।
নিচের করুন দৃশ্য দেখে আর আমার সহ্য হলো না। আমি আমার সকল সেনাদের সাথে সাথে টেলিপোর্ট করে দিলাম। একসাথে আমার সকল সেনা আন্ডারওয়ার্ল্ডে চলে গেছে। আমি কোনো কথা বলতে পারছি না। শুধু হাত পায়ের নরাচরা দেখেই বুঝতে পারছি সামনে কি হবে। এবার আমার হাতের উপরে ছোট একটা কালো বল চলে আসলো। বলটা একদম এনার কালো বলের মতো দেখতে হলেও পার্থক্য হলো সাইজে। এনারটার আকার ছিলো অনেক বিশাল। আর আমার হাতে যেটা হয়েছে সেটা একটা গোল ফুটবলের মতো। এটার এনার টার থেকে অনেক ছোট হলেও এটা পাওয়ার এনার টার থেকে অর্ধেক। আমার মাথায় এবার আমার ডেভিল সাইডের সমস্ত ক্ষমতার নাম, ধারনা চলে আসলাম। এনার শেষ ব্যবহার করা স্পেলটার চেয়ে কিছুটা শক্তিশালী স্পেল আছে আমার কাছে, কিন্তু এনার ব্যবহার করা স্পেল আমি কখনো দেখি নি। এনা ঔ স্পেল এখনো ভালো করে শিখেনি। প্রথম বার ব্যবহার করেছে বলে এটোতাও শক্তিশালী হয় নি। আমি শুধু ভাবছি আমার ফুটবলের মতো ডার্ক বল স্পেলটা যদি ওর স্পেলের চেয়ে অর্ধেক ধ্বংসাত্মক হয়, তাহলে ওর ঔ বিশাল বড় গোল বলটা যদি আমি কোনো প্লানেটে ফেলি তাহলে সেটার কোনো নামই থাকবে না।
।।।
।।।
আমার স্পেল ব্যবহার করার ভাব সাব নিচের সবাই বুঝে গেছে। যেহেতু আমি আমার ডেভিল কিং রূপে ট্রান্সফর্ম হয়ে গেছি তাই সবার নজরে তো এখন আমি পরবোই। আমার সাদা ছয়টা ডানা কালো হয়ে যাওয়ায় আমার এখন বারোটা ডানায় কালো হয়ে গেছে। ডানা গুলো আরো বড় এবং নরম পাখির পালকের মতো হয়ে গেছে। আর ডানাগুলো দিয়ে কালো ধোয়া বের হচ্ছে, সেই ধোয়া গুলো থেকেই মূলত আমার হাতের ফুটবলটা হয়েছে। এই স্পেলটা আগের সকল ডেভিল কিং ব্যবহার করেছে। তাই নিচে কি হবে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে। সকল ডেভিলকে আমি আন্ডারওয়ার্ল্ডে টেলিপোর্ট করে দিয়েছে। আর এখন মনস্টাররাও নিজেদের হার নিশ্চিত জেনে পিছনে ফিরছে। আর তার উপর আমার এই স্পেল দেখে যেকেউ ভয় পেয়ে যাবে। মনস্টাররা যারা আহত হয়েছে, সুস্থ লোকেরা তাদের নিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে। এখন শুধু থর এবং ইগড্রাসিলই ছিলো যারা লরতে ছিলো। কিন্তু বেশীক্ষন পারবে না মনে হয়। আমি দূর থেকে থরের জন্য আন্ডারওয়ার্ল্ডের দরজা খুলে দিলাম। থর উপায় না দেখে সেখানে চলে গেলো। আমি আমার শরীর নিয়ন্ত্রন না করতে পারলেও বুঝতে পারছি আমি যা করবো সামনে সেটা ভয়ানক হবে। এখনো আমার এন্জেল সত্ত্বা পুরো পুরো আমার শরীর হারিয়ে ফেলে নি। মূলত তারা সম্পূর্ন হারিয়ে যাবে না আমার শরীর থেকে। আমি তাদের সম্পর্কে সব কিছু ভুলে যাবো, কিন্তু তারা আমার শরীরের ঠিক এক কোনে কোথাও লুকিয়ে থাকবে। যায় হোক আমি আমার হাতের বলটা নিচে নিক্ষেপ করলাম। বলটা অনেক স্পিডে নিজে যেতে লাগলো, যারা খুব শীঘ্রই টেলিপোর্ট হতে পেরেছে শুধু তারাই বেচে গেছে। আর বেশীরভাগ এন্জেল, ভাইকিংস, এবং ডার্ক এল্ফসদের কাহিনী মনে হয় শেষ হয়ে গিয়েছে। তাদের লাশটাও দেখা যাবে না। কারন সিলভার লোটাশ রাজ্য যতটা জায়গা জুরে রয়েছে ঠিক ততটা জায়গা শেষ হয়ে গেছে। গাছপালা যা ছিলো সব কিছু নাই এখন। শুধু দেখা যাচ্ছে বিশাল একটা গর্ত। ঠিক গর্তের মাঝ বরাবর উপরে আমি উড়তে ছিলাম। শুধু এটা করেই আমার শরীর থামছে না। বরং আমার শরীরের বারোটা ডানা থেকে এরকম আরো বারোটা ফুটবল তৈরী হতে লাগলো। একটাতেই যে অবস্থা করে দিলো। আরো বারোটা কি করবে সেটা নিয়ে আমি ভাবছি এখন। কিন্তু কোনো শত্রুই তো দেখতে পাচ্ছি না এখানে, তাহলে কাকে মারবো আমি এগুলো? আমার শরীর পুরো পাগল হয়প গেছে। নিজে থেকে আলাদা একটা মোডে চলে গেছে। এমনিতেই সব শেষ করে দিলো এখানে, এখন মনে হচ্ছে এখান দিয়ে আরো কিছু জায়গা ধ্বংস করবে।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))