ভ্যাম্পায়ার কুইন পর্ব-৮+৯

0
3

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৮
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
আমি রক্তের দিকে তাকালাম। লাল টুকটুকে রক্ত। এমনে রক্ত বাইরে থাকলে জমাট বেধে যেতো। কিন্তু মনস্টার দুনিয়ায় রক্ত জমাট হয় না। পানির মতো ঘন হয়ে আছে। লাল রক্তের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে আমার শরীর কেমন জানি গরম হতে শুরু করলো। সারা শরীরে কেমন ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম। হঠাৎ করে আমার ডান পাশের ঠোটের নিচে সরু কিছুর অনুভব করলাম। বুঝতে পারলাম না কি টাই ঠোটটা নারাচরা করলাম। মনে হচ্ছে ডান পাশের একটা দাঁত বড় হয়ে গেছে। ডেভিলদের ভ্যাম্পায়ারদের মতো দুটো বড় দাত থাকে। কিন্তু ভ্যাম্পায়ারদের থেকে অর্ধেক সাইজের হয়। আমার দাঁতটা বেশ বড়। হঠাৎ ব্লাড দেখে আমার শরীরে বিসদ পিপাশা লেগে গেলো। আমি কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারছি না। আমি এনার হাতের উপর ঝাপিয়ে পরলাম। ওর হাতে পরা সব ব্লাড আমি চুষে খেয়ে নিলাম। এনা ক্যানে থাকা পুরোটা খেয়ে ফেলে দিয়েছে। আমার ওর হাতে থাকা একটু ব্লাড খেয়ে পিপাসা আরো বেরে গেলো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এনাকে কানে টেনে জরিয়ে ধরলাম। ওকে জরিয়ে ধরে ওর ঘাড়ে একটা কামড় দিলাম। যেহেতু আমার ডান পাশে শুধু একটা বড় হাত তাই একটা দাঁতই ওর ঘাড়ের চামড়া ভেদ করলো। ওর হাতে থাকা রক্তের মতো স্বাদ না থাকলেও আমার বেশ পিপাসা মিটে গেলো এনার রক্ত খেয়ে।
.
–উহুম।(জেসি একটা কাশি দিলো)
.
–এই ছাড়ো।(এনা আমাকে ছাড়িয়ে বললো)
.
–জানতাম দুজনের মধ্যে অনেক কিছু চলছে ইদাদিং তাই বলে ভাই তুই তোর বোনের সামনে এসব কি শুরু করলি?(জেসি)
.
–এনা আমি খুব সরি আমি নিজেকে সামলাতে পারি নি।(আমি)
.
–ইটস ওকে। তোমার কোনো ভুলই নেই।(এনা)
.
–ইটস ওকে মানে। এটা কিভাবে ওকে হয়। একজন হাফ এন্জেল, হাফ ডেভিল, হাফ ডিম্যান কেনো রক্তের জন্য পাগল হয়ে গেলো। আমি তো কোনোদিন শুনি নি ডেভিলরাও রক্ত খাই।(জেসি)
.
–আসলে আমি বুঝতে পেরেছি।(এনা)
.
–কি বুঝলি?(জেসি)
.
–সেদিন আমার হাত কেটে গিয়েছিলো সামান্য। সেটা দিয়ে রক্ত পরছিলো। সেটা জ্যাক চুষে খেয়েছিলো।(এনা)
.
–তোমার একটু রক্ত খেয়েছিলাম তো কি হয়েছে।(আমি)
.
–আরে গাধা নাকি তুই। তুই কেনো ওর রক্ত খেতে গিয়েছিস? ভ্যাম্পায়াররা তাদের রক্ত মানুষকে খাইয়ে তাদেরকেও ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দিতে পারে।(জেসি)
.
–ওয়েট ওয়েট সেটা তো মানুষ ভ্যাম্পায়ার হয়। কিন্তু মনস্টার তো ভ্যাম্পায়ার হয় না।(আমি)
.
–তুমি যখন প্রথম এখানে আসলে তখন তোমার মধ্যে কোনো মনস্টারের গুন ছিলো না। তোমার ব্লাড ও সাধারন মানুষের মতো ছিলো। তাই তো আমি সব সময় তোমার ব্লাডের জন্য পাগল থাকতাম।(এনা)
.
–কিন্তু আমি তো মনস্টার ছিলাম।(আমি)
.
–দেখো মনস্টার দুনিয়ার সবাই যখন জন্ম নেই তখন তারা মানুষের রূপেই জন্ম নেই। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তারা নিজেদের মনস্টার রূপ নিতে পারে। যদি কোনো সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে তার মনস্টার পাওয়ার সিল করে রাখা হয় তাহলে সে সন্তান সাধারন মানুষের মতোই বারতে থাকে। তবে একদম সাধারন হয় না সে। তার মধ্যে কিছুটা তারতম্য থাকে।(এনা)
.
–তার মানে আমি ছোট থেকে একদম মানুষের মতো বড় হয়েছি?(আমি)
.
–হ্যা।(এনা)
.
–তাহলে আমার সিল করা ক্ষমতা ফিরে আসার আগেই আমি তোমার ব্লাড খাওয়ায় আমি ভ্যাম্পায়ার হয়েছি?(আমি)
.
–হ্যা।(এনা)
.
–আচ্ছা বুঝলাম। বিষয়টা খারাপ না। হঠাৎ করে জানতে পারলাম আমি একজন মনস্টার। প্রথমে জানলাম আমার বাবা একজন ডিম্যান। তার মানে আমিও সেটা হবো। কিন্তু সেরকম কোনো লক্ষন না দেখে আমি শংকায় ছিলাম আমি কিরকম মনস্টার। আর এখন আমি জানতে পারলাম আমার একটা ডানা সাদা, একটা ডানা কালো, আমার শরীরে ডিম্যানদের মতো শারিরীক শক্তি রয়েছে, ম্যাজিকিল ক্ষমতা রয়েছে। আর এখন জানতে পারলাম আমার ডান পাশে ভ্যাম্পায়ারের মতো দাত আছে।(আমি)
.
–আমার ভাই একের ভিতর একশ।(জেসি)
.
–সবই মেনে নিলাম। কিন্তু আমার বাম পাশের দাতটা কি করেছিলো? একটা মুভি দেখেছিলাম একটা ভ্যাম্পায়ারের একটা দাত ভেঙে যায় তখন থেকে সবাই তাকে দাঁত ভাঙা ড্রাকুলা বলে ডাকতো। আমার তো একটা দাঁত উঠেছে আরেকটার বয়স হয়তো হয়নি কিন্তু লোকজন তো আমাকেও দাঁতভাঙা বলে ভেঙাবে।(আমি)
.
–তুই এই চিন্তা করছিলি এতোক্ষন আমি তো ভাবলাম তোর মাথা গেছে মনে হয়।(জেসি)
.
–কিন্তু জেসি একটা কথা তো আমি বুঝলাম না। আমি শুনেছি যারা হাফ ভ্যাম্পায়ার তারা নাকি অন্য কাউকে ভ্যাম্পায়ার করতে পারে না?(আমি)
.
–এটা কিছুদিন আগ পর্যন্ত ছিলো। শুধু রয়েল ব্লাড থাকা ভ্যাম্পায়াররাই মানুষদের ভ্যাম্পায়ার করতে পারতো নিজেদের রক্ত খাইয়ে। কিন্তু আমাদের রাজার আদেশে ২ বছর পূর্বে কিছু বিশেষ ভ্যাম্পায়ারকে একরকম ড্রাগস দেওয়া হয়। আমাদের রাজ্যের বিজ্ঞানী গন সেই ড্রাগসের নাম দিয়েছিলো এপোলা। এটি যে ভ্যাম্পায়ারের শরীরে আছে সে ভ্যাম্পায়ার পূর্ন বয়স্ক হলে একজন রয়েল ব্লাড ভ্যাম্পায়ারের মতোই শক্তিশালী হবে। এবং একজন মানুষকে ভ্যাম্পায়ার বানাতে পারবে।(এনা)
.
–তাহলে তুই বলতে চাচ্ছিস তোর ঔ এপোলা ড্রাগসের জন্য তুই জ্যাককে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে ফেলেছিস?(জেসি)
.
–হ্যা।(এনা)
.
–আরে তোরা বাদ দে তো কথা বার্তা। চল একটু বাইরে যায়। আমার শরীরে চার রকমের শক্তি রয়েছে। একটু চেক করে দেখি কি কি করতে পারি আমি।(আমি)
.
–জ্যাক এখনকার সময় মোটেও নিজের ক্ষমতা গুলো দেখার নয়। তোর সাদা আর কালো ডানা এখানের সবাই দেখেছে। এটা নিয়েই অনেক ঝামেলা হতে পারে। যদি কোনো রাজ্য থেকে এই খবর শুনে নেই তাহলে।(জেসি)
.
–ভয় পাচ্ছিস কেনো? কিছুই হবে না।(আমি)
.
–কাছের সব কিছুই তো হারালাম। আর কিছু হারাতে পারবো না ভাইয়া।(জেসি)
.
–জেসি কিন্তু ঠিকই বলেছে। মনস্টার দুনিয়ায় এমন কখনো হয় নি। কোনো মনস্টারের মধ্যে দুই রকমের ক্ষমতা আজ পর্যন্ত হয় নি। তুমি যেভাবে আমার রক্ত খেয়ে ভ্যাম্পায়ার হলে সেভাবে অনেকেই চেষ্টা করেছিলো। নিজের পাওয়ার সিল করে মানুষের মতোই ছিলো। কিন্তু সকলেই মারা গিয়েছে।(এনা)
.
–আরে কোনো চিন্তা কইরো না তোমরা দুজন। সবাই জানুক আমার ব্যাপারে এতেই তো মজা হবে।(আমি)
.
–কি বলতে চাচ্ছিস?(জেসি)
.
–দুজনেই তো মানুষের দুনিয়ায় ছিলি তাই না?(আমি)
.
–হ্যা।(জেসি)
.
–তো এই সময় মানুষের মতো ভাবতে হবে। সকল মনস্টাররাই তো মনস্টারের মতো ভাববে। তাদের মতো ভাবলে আমাদের কোনো উন্নতি হবে না।(আমি)
.
–কি বলতে চাচ্ছিস?(জেসি)
.
–কিছুই না আপাতোতো আমি গিয়ে একটু ঘুমাবো। আর ড্রেসেও ব্লাড লেগে আছে।(আমি)
.
–তুমিও না। কোনো সময় সিরিয়াস হও না।(এনা)
।।।।
।।।।
হঠাৎ এনার কাছে একটা পাখি এসে একটা চিঠি দিয়ে গেলো। চিঠিটা পরে এনা আমাদের বলতে লাগলো,
.
–জ্যাক তাহলে তুমি রুমে গিয়ে ড্রেস পালটাও। আর জেসি ওকে একটু বুঝিয়ে বল সাবধান থাকতে।(এনা)
.
–তোর কি হলো। কোথায় যাচ্ছিস?(জেসি)
.
–বাসা থেকে চিঠি এসেছে। আমাকে রিপ্লাই দিতে হবে।(এনা চলে গেলো তারাহুরা করে)
.
–এবার বলবি তুই কি ভাবতে ছিলি?(জেসি)
.
–কোথায়?(আমি)
.
–নাটক করবি না? আমি জানি তুই কিছু ভাবতে ছিলি। একটা প্লান বের করেছিস হয়তো।(জেসি)
.
–আচ্ছা আমাকে বলতো তুই কি চাস?(আমি)
.
–কি চাই মানে?(জেসি)
.
–মানে ধর এখান থেকে আমরা পাশ করে বেরিয়ে গেলাম তারপর কি করবি?(আমি)
.
–সত্য বলতে এখান থেকে দশজনের একজন না হতে পারলে আমার স্বপ্ন কখনো পূরন হবে না।(জেসি)
.
–কি তোর স্বপ্ন?(আমি)
.
–এখান থেকে পাশ করে বেরিয়ে আমি আর তুই মানুষের দুনিয়ায় চলে যাবো। দুই ভাই বোন সাধারন একটা জীবন পার করবো।(জেসি)
.
–তোর মনে হয় আমরা মানুষের মধ্যে এখন সাধারন ভাবে থাকতে পারবো?(আমি)
.
–কেনো পারবো না?(জেসি)
.
–আমাদের বয়স মানুষের মতো বারবে না। যদি আমরা কোনো মানুষের সাথে সংসার শুরু করি দুজনেই আমাদের চোখের সামনে সবাই মারা যাবে। সেই কষ্টটা নিতে পারবি?(আমি)
.
–তাহলে কি করতে চাস তুই?(জেসি)
.
–আমি জানতে চাই আমাদের আম্মা কেনো তার জীবন দিলেন আমাকে বাঁচানোর জন্য। কেনো আমাদের বাবা পাল্টে গেলেন। তুই কি চাস না?(আমি)
.
–চাই কিন্তু আমাদের জন্য সেখানে কোনো জায়গা নেই। রাজার নতুন রানী আছে। তার ছোট এক ছেলে আর মেয়ে ও আছে এখন। আমাদের জায়গা বদলে নিয়েছে। রাজকুমার জ্যাকসন আর রাজকুমারী জেসিকা দুজনেই রাজার ১ম রানীর সাথে মারা গিয়েছে এটাই জানে লংস্টার রাজ্যের সবাই।(জেসি)
.
–তো আমরা সেটা পরিবর্তন করবো। আমাদের জায়গা আমরা ফিরিয়ে নিবো। আর এমনিতেও অষ্টম ডিউকের এখন বয়স হয়েছে। রাজ্য এখন বড় রাজকুমার সামলাবে।(আমি)
.
–তুই কি পাগল হয়েছিস? পুরো রাজ্য আমাদের বিরুদ্ধে চলে আসবে।(জেসি)
.
–তুই সেটার চিন্তা করিস না। আমি দেখে নিবো সেটা। আমার মাথায় দারুন একটা প্লান এসেছে। চিঠি পাঠাতে পারবি ডিউকের কাছে?(আমি)
.
–যদি মিথ্যা অপবাদে আমাদের মাথা কেটে নেই?(জেসি)
.
–কিছুই হবে না। আমার উপরে বিশ্বাস কর।(আমি)
.
–কি লিখবো চিঠিতে?(জেসি)
.
–প্রিয় অষ্টম ডিউক,
আপনার পুত্র সন্তান জ্যাকসন ব্রিট বেঁচে আছেন, এবং আপনার কন্যা জেসিকা ব্রিট ও বেঁচে আছেন। অনেক দেড়ীতে খবর দিলাম। কিন্তু সত্যি আমাদের আম্মা আমাদের কাছে আগে বলেন নি। আজ এক মাস হলো তিনি মারা গিয়েছেন। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি আমাদেরকে বলে গিয়েছেন আপনার কাছে যেতে। আশা করি আপনি আমাদের গ্রহন করবেন।
আপনার পুত্র,
জ্যাকসন ব্রিএ।(আমি)
.
–এটা করলে কিন্তু এই কলেজের জায়গা পার করতে পারবো না আমরা? এখানের বাইরে বের হলেই আমাদের ধরে নিয়ে যাবেন।(জেসি)
.
–আসুক ধরতে সেটাই তো চাই আমি।(আমি)
.
–তুই মনে হয় পুরো প্লান করেই রেখেছোস তাই না?(জেসি)
.
–অরিয়ান স্যারকে তো চিনিসই?(আমি)
.
–আমাদের ছোট চাচা।(জেসি)
.
–হ্যা। তার কিছুটা সাহায্য নিয়েছি। তিনি সম্পূর্ন জানেন না তবে কি হচ্ছে রাজ্যে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দিয়েছেন।(আমি)
.
–কি হচ্ছে?(জেসি)
.
–রাজার দ্বিতীয় স্ত্রীকে দেখেছিস?(আমি)
.
–না শুধু নাম শুনেছি। কর্ডিলা জেনেফার।(জেসি)
.
–আমাদের আম্মার নাম এন্জিলা জেনিফার।(আমি)
.
–তার মানে দুজন….(জেসি অবাক হলো)
.
–হ্যা দুজন বোন। আমাদের আম্মা বড় এবং কর্ডিলা জেনিফার ছোট।(আমি)
.
–তারমানে তিনি আমাদের খালামনি।(জেসি)
.
–হ্যা। চাচার মনে হয় কর্ডিলা জেনিফার একজন সাকুবিচ্।(আমি)
.
–চুমু দিয়ে পুরুষদের নিজের বশে আনা ডাইনী।(জেসি)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–তাহলে বুঝতে পারছি বাবা হঠাৎ করে বদলে গেলো কেনো।(জেসি)
.
–আমার ধারনাও ঔটা। কিন্তু সমস্যা হলো চাচা সিওর না ব্যাপারটা নিয়ে। কোনো রকম ধারনায় বলেছে।(আমি)
.
–তাহলে তো এইটা আমরা রাজপ্রাসাদে গিয়েই জানতে পারবো।(জেসি)
.
–হ্যা কিন্তু এই ব্যাপারে এনাকে কিছু বলা যাবে না।(আমি)
.
–হ্যা। আমি রুমে গিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুই রেস্ট নে গিয়ে একটু।(জেসি)
.
–ওকে।।।(আমি)
।।।
।।।
আমি আমার রুমের দিকে আসতে লাগলাম। বেশ ক্লান্তময় একটা দিন গেলো আজ। আমার হার্ট বিট বেরে আছে সকাল থেকেই৷ আজকে যা কিছু হলো সেটা কখনো ধারনা করি নাই। আমার নিজের মাথায় কিছু ঢুকছে না আমি কি? আমার পরিচয় কি? আমি কোনো মনস্টারের সাথে নিজেকে মিশাতে পারছি না। আমি আমার রুমের মধ্যে ঢুকলাম। দরজা আটকানোর সাথে সাথে পুরো রুম মনে হলো কাপতে লাগলো। আস্তে আস্তে পুরো রুম সাদা হতে শুরু করলো। আমার শরীরকে একটা সাদা শিকল এসে বেধে ফেললো। আমি কিছুতেই নরাচরা করতে পারছি না। হঠাৎ করে উপর থেকে কারো আওয়াজ শুনলাম। একজন সাদা পোশাক পরা লোক উপর থেকে উড়তে উড়তে আসছে। তার পিঠে মোট সাদা দশটা ডানা। তার শরীর এবং ডানা দুটো দিয়েই সাদা আলো বের হচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে তার আলোতেই আমার আশে পাশের সব সাদা হয়ে গেছে।
.
–কে আপনি?(আমি)
.
–আমার নাম মাইকেল। মাইকেল গোঞ্চি ফ্যারাডে। আমি এন্জেলদের দুনিয়ার রাজা।(মাইকেল)
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ০৯
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
–তো আপনি এখানে কি করছেন?(আমি)
.
–আমি কোথাও আসেনি। বরং তুমি এসেছো লিম্বো ডাইমেনশনে।(মাইকেল)
.
–লিম্বো ডাইমেনশন? এটা কোথায় আবার?(আমি)
.
–এই জায়গাটায় সময়ের কোনো চিহ্নই নেই। তুমি যখন এখানে আসবে তখন তোমার আসল দুনিয়ার সময় পুরো থেমে যাবে। আবার তুমি এখান থেকে গেলে তোমার আসল দুনিয়ার সময় শুরু হবে। এখানে সময় নিউটল থাকে।(মাইকেল)
.
–আমি নিশ্চয়ই এখানে আসি নি। আপনিই আমাকে এখানে এনেছেন। তো কিসের জন্য বলবেন?(আমি)
.
–তোমার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য ঘুরপাক খাওয়ারই কথা। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো। জিজ্ঞেস করো আমায় আমি উত্তর দিচ্ছি।(মাইকেল)
.
–আচ্ছা বুঝলাম উত্তর দিবেন কিন্তু কিসের জন্য সেটা তো বলবেন আগে? আমি তো চিনিই না আপনাকে।(আমি)
.
–তোমার আম্মার কাছে আমি ঋনি তাই কিছুটা ঋন পরিশোধ করতে চাই। তবে একটা প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারবো আমি এর থেকে বেশী না।(মাইকেল)
.
–ওকে একটাই হবে। আমার একটা ডানা সাদা একটা ডানা কালো কেনো? ব্যাখ্যা করেন?(আমি)
.
–কারন তোমার মধ্যে ডেভিল আর এন্জেলের ব্লাড রয়েছে।(মাইকেল)
.
–ব্যাখ্যা করেন। আমার আম্মা নাহয় এন্জেল ছিলো। কিন্তু আমার বাবা একজন হাফ ডিম্যান। তাহলে আমার মধ্যে ডেভিলের ব্লাড আসবে কি করে?(আমি)
.
–এটা অনেক বড় কাহিনী। ছোট করে বলতে গেলে তোমার আম্মা ট্রিসা জেনিফারের পালিত সন্তান ছিলো। তোমার আম্মার আসল বাবা মার সঠিক পরিচয় অজানা সবার। তবে তার মা শেষ ডেভিল কিং এর বংশধর ছিলো। তোমার আম্মা জেনেটিক ভাবে এন্জেল ছিলো। ডেভিল রাজা মরার পূর্বে তার মেয়ের উপর একটা শক্তিশালী স্পেল পরে দিয়েছিলো। আর সেই স্পেল শেষ তোমার আম্মা বহন করেছিলো।(মাইকেল)
.
–কিসের স্পেল?(আমি)
.
–যদি কোনো সময় ডেভিল রাজার মেয়ের কোনো বংশধর যমজ দুই সন্তানকে জন্ম দেই তাহলে তার মধ্য থেকে একজন পরবর্তী ডেভিল কিং হবে। শুধু তাই নয়। তার শক্তি হবে অতুলনীয়। এই পুরো দুনিয়া ধ্বংসের কারন হবে সে।(মাইকেল)
.
–তাহলে আমিই ডেভিল কিং এর স্পেলের পরিনতি?(আমি)
.
–হ্যা। তোমার ব্যাপারে তোমার বাবা এবং আম্মা জানতো সবই। কিন্তু তারপর তোমার বাবার কি যেনো হয়ে গেলো। পুরো পাল্টে গেলো। তোমাকে মারার চেষ্টা করতে চাইলো।(মাইকেল)
.
–তো আমি বাকি দুনিয়ার জন্য ক্ষতিকর। তাহলে কি আমাকে মারতে আসছেন?(আমি)
.
–একদম সেটা নয়। তুমি হয়তো জানো না তোমার আম্মার ক্ষমতার ব্যাপারে। সে তার সন্তানকে কখনো খারাপের দিকে ফেলে দিতে পারে না। তোমার আম্মা ভবিষ্যৎ দেখতে এবং সেটাকে পাল্টানোর ক্ষমতা রাখতো। কিন্তু তার জীবনে দুইবারই ভবিষ্যত পাল্টানোর চেষ্টা করেছে। চাইলে সে নিজের জীবন বাচাতে পারতো। কিন্তু সে তা করে নি।(মাইকেল)
.
–একটু খুলে বলবেন এই ব্যাপারে?(আমি)
.
–না বললাম একটা প্রশ্নের উত্তরই আমি দিতে পারবো আজকের মতো। যদি কখনো আবার দেখা হয় তাহলে আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিবো।(মাইকেল)
.
–কিন্তু আপনি আমার মায়ের কি হন সেটা বলবেন না?(আমি)
.
–হ্যা। আমি তোমার মায়ের বড় ভাই।(মাইকেল আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো)
.
–বড় ভাই। তারমানে আপনি আমার মামা হন।(আমি)
.
–হ্যা। যা বল্লাম সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। তোমার মাথার কথা মতো চইলো না। সব সময় মনের কথা মতো চইলো। আর হ্যা এই জিনিসটা তোমার যাত্রা পথে কাজে দিবে।(মাইকেল)
।।।।
।।।।
আমার হাতে একটা তলোয়ার ধরিয়ে দিলো। অনেক লম্বা একটা তলোয়ার।
.
–এটার নাম এক্সোনিয়া। এটা একটি পবিত্র তলোয়ার। মনস্টারদের বিরুদ্ধে কাজে দিবে এটা।(মাইকেল)
।।।
।।।
তলোয়ারটাকে আমি দেখতে লাগলাম। তলোয়ারের ব্লেডটা অনেক ধারালো। আয়নার মতো রিফ্লেক্ট করে আলো। নিজের মুখ খুব পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। ব্লেড দিয়ে কেমন সাদা ধোয়া বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে আমার আশে পাশের সাদা জায়গা গুলো পরিস্কার হলে লাগলো। আমি দাড়িয়ে আছি আমার রুমের মধ্যে। মনে হচ্ছে লিম্বো ডাইমেনশন থেকে বেরিয়ে আসছি। সে যাইহোক আমার বাম হাতে তলোয়ারটার কোষ আর ডান হাতে তলোয়ারটা ধরা। আমি তলোয়ারটাকে কোষবদ্ধ করে টেবিলের রাখার সাথে সাথে সেটা আস্তে আস্তে উধাও হয়ে গেলো। বুঝলাম না কোথায় গেলো। আমি হালকা স্বরে এক্সেনিয়া বল্লাম, সাথে সাথে তলোয়ারটা আমার ডান হাতে চলে আসলো। আবারো কোষ খুলে বন্ধ করলাম সেটা আবার উধাও হয়ে গেলো। বুঝতে পারলাম ভারি কাজের জিনিস। আমি গোসল করতে চলে গেলাম। গোসল সেরে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম। মাইকেলের বলা কথা গুলো এখনো আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা আম্মার শেষ সময়ে কি তিনি পারতো না আম্মার সাহায্য করতে? নাকি সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো? আমি সব কিছু চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। এক ঘুমে বিকাল হয়ে গেলো। দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি এখনো। ক্যান্টিনের দিকে যেতে লাগলাম ফ্রেস হয়ে।
।।
।।
ক্যান্টিনে গিয়ে আমি চিকেন কারি নিয়ে বসলাম খেতে। এমন সময় আমাকে খুজতে খুজতে এনা আসলো,
.
–তুমি এখানে আর আমি তোমাকে পুরো একাডেমী খুজতেছি।(এনা)
.
–কি হলো এতো খুশি লাগতেছে কেনো তোমাকে?(আমি)
.
–আমি তো সব সময়ই খুশি থাকি।(এনা)
.
–না এখন বেশী খুশি মনে হচ্ছে।(আমি)
.
–হুমমম সামনে সপ্তাহে তো আমাদের summer vacation এর বন্ধ হয়ে যাবে।(এনা)
.
–হ্যা।(আমি)
.
–তো তোমরা কোথাও যাবে বলে ঠিক করেছো?(এনা)
.
–এই মনস্টার দুনিয়ায় আমাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। জেসি হয়তো কিছু চিনে এখানের। তাই ও যেখানে আমি সেখানে।(আমি)
.
–তাহলে তো ভালোই হলো। কারন তোমরা দুজন তাহলে আমার সাথে যাচ্ছো আমাদের রাজ্যে।(এনা)
.
–তোমাদের রাজ্যে?(আমি)
.
–হ্যা। ব্লাক লোটাস আমাদের রাজ্যের নাম।(এনা)
.
–তৃতীয় বৃহৎ রাজ্য তোমাদেরটা?(আমি)
.
–হ্যা।(এনা)
.
–আচ্ছা এনা তোমাকে তো জিজ্ঞেস করা হয় নি এখনো? তোমার বাবা মা কি করেন?(আমি)
.
–এই তেমন কিছু না। বাবা মা দুজনেই বসে বসে নিজেদের টুকটাক কাজ করেন।(এনা)
.
–টুকটাক কাজ?(আমি)
.
–আরে তুমি খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই থাকবে নাকি শুধু?(এনা)
.
–তোমার সৌন্দর্য্য যেভাবে আমাকে আকৃষ্ট করে না তাকিয়ে কি পারি?(আমি)
.
–জ্যাক তুমি ও না। একদম দুষ্ট।(এনা)
.
–দুষ্টমির কি করলাম আমি।(আমি)
.
–কিছু না।(এনা)
।।।
।।।
এনা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। আমও আসে পাশে দেখতে রইলাম। আমরা এখনো লায়লা মজনুর মতো বলি নি দুজন দুজনকে ভালোবাসি। কিন্তু দুজন দুজনকে যে কতটা ভালোবাসি সেটা আমরা দুজনই জানি। ঔযে বলে না কিছু ভালোবাসা বলতে হয় না এমনেই বোঝা যায়। এমনিতেই কারি খেয়ে আমার ঝাল লেগে আছে। আর আশে পাশে কেউ নেই ভাবলাম একটু মিষ্টি লাগিয়ে নি ঠোটে। এনা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন ওর ডান হাত দিয়ে আমার বাম হাত ধরেছে আমি নিজেই জানি না। আমি ওর ঠোটের দিকে আমার ঠোট আস্তে করে এগিয়ে নিতে গেলাম। কিন্তু তার আগেই জেসির কন্ঠ শুনলাম। দুজনেই আলাদা হয়ে গেলাম।
.
–গোপনে গোপনে তো অনেকদূর চলে গেছিস দুজন। এনা তুই তো আমার পিচ্চি ভাইতাকে পাকিয়ে দিয়েছিস। যে হাত ধরতে ভয় পেতো সে তোর ঠোট ধরতে যাচ্ছিলো।(জেসি)
.
–…..(আমরা দুজনেই লজ্জা পেয়ে গেলাম)
.
–রোমিও জুলিয়েটের প্রেমের সময়ে আমিই এসে পরেছি। তোরা প্রেম কর আমি চলে যাচ্ছি।(জেসি)
.
–আরে যাস না। শোন তোর সাথে কথা আছে।(এনা)
.
–হ্যা বল।(জেসি আমার পাশে বসে বললো)
.
–সামনে সপ্তাহে আমি বাসায় যাচ্ছি।(এনা)
.
–আমিও ভাবছিলাম জ্যাককে নিয়ে লংস্টারে যাবো।(জেসি)
.
–কোনো লংস্টার ফংস্টারে যাওয়া নেই। তোরা দুজন আমার সাথে যাবি।(এনা)
.
–কিন্তু?(জেসি)
.
–কোনো কিন্তু নয়। আমি বাসায় বলে দিয়েছি। এমনিতেও আমার বড় বোনের বিয়ে। আপু বলেছে জ্যাক আর তোকে নিয়ে যেতে।(এনা)
.
–কিন্তু এনা?(জেসি বলতে গেলো)
.
–থাক জেসি? ও এতো করে বলছে লংস্টারে তো আমরা পরেও যেতে পারবো।(আমি)
।।।।
।।।।
আমার কথাটা বলার সাথে সাথে জেসি আমাদের আশে পাশের সময় আটকে দিলো,
.
–আমি লংস্টার রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছিলাম তোর বলা মতো। ঔখান থেকে উত্তর এসেছে।(জেসি)
.
–কি বলেছে?(আমি)
.
–সামনে সপ্তাহে লংস্টারে যেতে বলেছে আমাদের।(জেসি)
.
–আচ্ছা সমস্যা নেই আস্তে ধীরে যাওয়া যাবে।(আমি)
.
–কিন্তু?(জেসি)
.
–চিন্তা করিস না। প্রথমে লোটাস থেকে ঘুরে আসি। দেখে আসি ব্লাক লোটাস কেমন।(আমি)
.
–আচ্ছা তুই যেটা ভালো মনে করিস।(জেসি)
।।।।
।।।।
জেসি আবার সব স্বাভাবিক করে দিলো।
.
–আচ্ছা তাহলে তো শপিং স্টোর থেকে কিছু কেনাকাটা করার দরকার জেসি তাইনা?(আমি)
.
–তোমাদের কিছুই নিতে হবে না। আমাদের ঔখানে সবই পাবে।(এনা)
.
–আচ্ছা এনা তুমি তো তোমার বোনের কথা কখনো উল্লেখ করো নি। আমার জানা মতে তোমার একটা ভাই ছিলো।(আমি)
.
–আসলে আমি একাই। আমার বাবার দুটি স্ত্রী। তার মধ্যে আমার আম্মা একজন মানুষ ছিলেন। আমার আম্মা মারা যাবার পর থেকে আমার সৎ আম্মা নিজের মেয়ের মতোই আদর করতেন। তখন আমার বড় সৎ বোনের (এলিশা কোয়াডার্ট) সাথে বেশী বুনতো না। আমাকে সব সময় মারতো। একদিন আমার দুটো দাঁত উঠিয়ে নিয়েছিলো। তারপর আট বছরের মতো বাবা আমাকে মানুষের দুনিয়ায় আমার আম্মার পরিবারের কাছে রেখে এসেছিলেন। যখন আমি আমার পরিবারের কাছে আবার গেলাম আমার বড় বোন তখন পুরো আলাদা মানুষ। আমাকে তখন থেকে নিজের বোন নয় বরং নিজের মেয়ের মতো আদর করে।(এনা)
.
–অনেক হ্যাপি ফ্যামিলি।(আমি)
.
–হ্যা সেটা তো বলতে হবে। আমাদের পরিবারে কড়া নিয়ম মানতে হয় সবাইকে। কিন্তু আম্মা মারা যাবার পর থেকে আমার কোনো নিয়ম মানতে হয় না।(এনা)
.
–আচ্ছা তোর বোনের বিয়েই আমাদের নিয়ে কি করবি?(জেসি)
.
–তোদের ঘুরিয়ে দেখাবো।(এনা)
.
–আমার তো তা মনে হচ্ছে না। আমার তো মনে হচ্ছে তোর নিজের বিয়ের ব্যবস্থাও করে ফেলবি।(জেসি)
.
–দূর তুই ও না।(এনা আমার দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে দিলো)
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))