#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে
পর্বঃ- ১৯ ও ২০
আর কতদিন এভাবে পিছনে ঘুরবো তোমার? তোমাকে যে আমি ভালোবাসি এই কথাটা বুঝতে এতোসময় লাগার কথা? আমার কি দরকার আছে সকালে সাইকেল নিয়ে ১ কিলোমিটার পথ ঘুড়ে তোমার পিছু পিছু রিকশা ধাওয়া করা। আবার ছুটির পথে তোমাকে পৌঁছে দেওয়া। ভালোবাসি বলে এতোটা ছ্যাচড়া হয়েছি। নিজেও বুঝতে পারলাম না তোমাকে এতোটা ভালোবাসার কারণ কি? এইটাকেই মনে হয় লাভ অ্যান্ড ফার্স্ট সাইট বলে।
মোহনা রিকশাওয়ালা মামাকে বলে মামা রিকশা থামান। এরপরে ব্যাগ থেকে ১০ টাকার নোট দিয়ে বলে আমি এখানেই থাকবো। এইটা আপনার ভাড়া। রিকশাওয়ালা ১০ টাকা পেয়ে সেখান থেকে চলে যায়। মোহনা মেহেদীর সাইকেলের সামনে এসে বলে___
আমাকে যে এতো ভালোবাসার কথা বলো ভালোবাসা কি বুঝো? ভালোবাসি বললে হয়না ভালোবাসার সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহন করতে হয়? তুমি একজন সিনিয়র মেয়ের পিছনে না ঘুরে এই সময়গুলো জুনিয়র কোনো মেয়ের পিছনে ব্যয় করলে সম্পর্কের সমীকরণ সমাধান হয়ে যেতো। দয়া করে মেহেদী তুমি আমার পিছু ঘোরা বন্ধ করো।
আর কি করলে তুমি বুঝবে আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। এইযে তোমার পিছু পিছু ধাওয়া করে ভার্সিটি যাওয়া এটা কি দায়িত্ব নয়? আবার কোন ছেলে তোমাকে ডিস্টার্ব করতেছে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া দায়িত্ব নয়। তাহলে এখন বলো আমি কোন দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ?
মেহেদী আমার বাবার শরীর ভালো নয়। ওনি গতকাল স্ট্রোক করেছে কোম্পানিতে লোকসান চলছে অনেকদিন থেকে। প্রডাক্ট সেল হচ্ছেনা। বাবা যে প্রডাক্ট তৈরি করতো অন্য কোম্পানি সেই প্রডাক্টগুলোর ডুপ্লিকেট করে মার্কেটে সেল করছে। অন্য কোম্পানি প্রডাক্টগুলো যে দামে ছাড়ছে। আমরা সেই দামে ছাড়তে পারছিনা। কারণ আমাদের খরচ হয় প্রচুর। ওই দামে ছাড়লে আমাদের লোকসান হবে। এরজন্য আমাদের কোম্পানি বন্ধের পথে। আমি এগুলো কিছুই জানতাম না। বাবা গতকাল স্ট্রোক করার পর সব জেনেছি আম্মুর কাছ থেকে। এই অবস্থাতে আমাকে বাবার পাশে দাঁড়াতে হবে। এসব ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।
ভরসা করে আমার হাতটা ধরো মোহনা। একবার শুধু বলো ভালোবাসি আমি আঙ্কেলের সব লোকসানের অবসান ঘটাতে চেষ্টা করবো। কারণ ডুপ্লিকেট প্রডাক্ট জনগন পেলে বেশিদিন ঠিকবে না। আমরা দুজন মিলে সমন্বিত চেষ্টা করলে সব সম্ভব হবে।
এতো সহজ নয় মেহেদী বিষয়টা। তাছাড়া বাবার বয়স হয়েছে। বাবা আমাকে কিছুতেই এসব করতে দিবেনা। তিনি আমার নাকি বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে আমার কাজিন কানাডাতে থাকে। কানাডা থেকে আসলেই আমাদের চারহাত এক করে দিবে। এখন বাবার যাবতীয় খরচ আমাদের খরচ সব আমার কাজিন চালাচ্ছে? ডক্টর বলেছে বাবার গ্যারান্টি নাই এই অবস্থাতে তুমি পড়লে কি করতে? আর আমি সেই কাজিনকে জন্মের পর থেকে এখনো দেখিনাই। সে ওইখান থেকে সাইবার ক্রাইম কেইস করছে।
মেহেদী তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। মোহনার কথায় বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হয়। মনেমনে বলে আমি ছাত্র মানুষ এই অবস্থাতে মোহনার পরিবারের সামনে কিভাবে দাড়াবো। কিভাবে তাদের মেয়ের দায়িত্ব ও পরিবারের দায়িত্ব নিবো?
মোহনা মেহেদীকে চুপ থাকতে দেখে বলে জীবনটা সহজ নয় মেহেদী। তাছাড়া এখন যে আমার পরিবারকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিছে তার সাথে আমার চিট করা সম্ভব নয়। তুমি অনেক ছোট মেহেদী। এখন তোমার পড়াশোনার বয়স। এগুলো দায়িত্ব নেওয়ার সময় নয়। এই অবস্থাতে আমি তোমাকে ভালোবাসি বললে আমার পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে তোমার জীবনডাও শেষ হবে। কারণ আমি যদি কাজিনকে বলি আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। তাহলে সে আমাদের পাশে দাড়ানোর পরিবর্তে ঘৃণা করবে। আর এই বিয়েটা আমার বড় আব্বু আর বাবা ঠিক করে রাখছে। আমি এতদিন জানতাম না কালকেই সব জেনেছি। এখন আমার লাইফে ইমরানের আগমন দূতের মতো।
মেহেদীর দুচোখ দিয়ে অশ্রুভরা পানি বইছে। নাক দিয়ে বারবার ফ্যাচ ফ্যাচ শব্দ করছে । কারণ মেহেদী জানে এই অবস্থাকে মোহনাকে ভালোবাসি বললে তার সঙ্গে তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। যেটা মেহেদীর পক্ষে আসলেই অসম্ভব। কারণ মেহেদীর পরিবারে এতো এবেলিটি নেই যে মোহনার সঙ্গে সঙ্গে মোহনার পরিবারের সামনে দাঁড়াতে পারবে। তবুও ক্যান জানি বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। মেহেদী হাসান লাষ্টবারের মতো মোহনার দিকে তাকায়। দেখে মোহনা কাঁদছে। মোহনাকে কাঁদতে দেখে বলে তুমি কাদছো ক্যান মোহনা।
ভালোবাসি শব্দটা বড্ড বেহেয়া মেহেদী। অজান্তেই চোখে পানি চলে এসেছে। বেকার ছেলেদের এভাবে ভালেবাসা উচিত নয়। ভালোবাসলে জুনিয়রদের বাসুক অত্যন্ত এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়। কাল পরশুর মধ্যে ইমরান চলে আসবে দেশে। আশা করি তুমি আমাকে ভূলে যাবে এরমধ্যে। ভালোতো বাসতে পারলাম না, দুহাত তুলে দয়া করবো। আল্লাহ তোমার জীবনে নেকদার জীবন সঙ্গিনী দিক। যে শুধু তোমার কথা ভাববে।
মোহনার এই কথাগুলে বুকের মধ্যে এসে ছুড়ির মতো আঘাত করলো মেহেদীর। মনেমনে বললো এভাবে ক্যান তাকে ভালোবাসলাম। ভালোবাসার এমন পরিণতির জন্য আমি নিজেই দায়ী। একটা বেকার ছেলে হয়ে ক্যান আমি সিনিয়রকে ভালোবাসলাম। মোহনার এই করুণ কন্ঠ বলে দিচ্ছে ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপ তাকে স্বার্থপর বানিয়ে রাখছে। শেষবারের মতো মোহনাকে বললাম ভার্সিটি যাবেনা।
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হয়নাই মেহেদী। এইকথা গুলো তোমাকে বলার ছিলো। আমি জানতাম তুমি আমার জন্য এভাবে থাকবে। তাই এই সুযোগে সব বলে দিলাম। এখন তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবলে ভাবতে পারো। তোমার কাছে একটাই অনুরোধ নিজের জীবন গুছিয়ে নাও। তারপরে অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে শিখো।
মেহেদীর মোহনার সামনে দাড়িয়ে থাকার শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত শরীর আজ ক্যান শক্তিহীন হয়ে যাচ্ছে। শেষবারের মতো মেহেদী শুধু মোহনার কাছে আবদার করে। আমাকে একটিবার জড়িয়ে ধরতে পারবে মোহনা?
মোহনা মেহেদীকে দেখে পর্যবেক্ষণ করলো মেহেদীকে জড়িয়ে ধরলে ছেলেটা এখান থেকে যেতে পারবেনা। আমাকে ছাড়তেও পারবেনা। আর আমি যদি তখন তার প্রতি দুর্বল হয়ে বলি আমিয়ো তোমাকে ভালোবাসি মেহেদী। তখনতো এই ছেলের পক্ষে আমাকে ভূলা সম্ভব নয়। তাই মোহনা কাঠকাঠ গলায় বলে অভদ্র ছেলে আমি তোকে ভালোবাসি নাকি? যে তোকে জড়িয়ে ধরবো রাস্তার মাঝখানে। রিকশা নিয়ে বাড়ি যা। আমার চোখের সামনে দ্বিতীয়বার যেনো না পড়িস।
শেষসময়ে মোহনার কথাগুলো মেহেদী নিতে পারলো না। রাস্তার মাঝখানে নুইয়ে পড়ে গেলো। এরপরে রিকশাওয়ালা মামাকে ডেকে সেখান থেকে চলে গেলো?
মোহনা বুকফাটা চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকলো। নিজের বিবেক কে বললো ভালোবাসা ছুঁতে পারার আগেই পরিস্থিতির চাপে ফিরিয়ে দিলাম। অথচো দুইদিন আগেই ঠিক করেছিলাম মেহেদীকে বলবো আমিয়ো তোমাকে ভালোবাসি। হে আল্লাহ সম্পর্ক গুলোর সমাধান যদি মিল হওয়ার নাহয়। তাহলে তার জন্য মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করেন কেনো? ভাগ্যিস তাকে কখনো বলিনাই আমিয়ো তোমাকে ভালেবাসি। তাহলে সে এই যাতনা সইতো কি করে? আশা করি সে আমার দেওয়া দুঃখগুলো খুব সহজেই ভূলে যাবে।
★★★
দাঁড়াও ওখানে বাড়ির মান সম্মান লুটিয়ে কোথায় থেকে ফিরলে?
ফিহার হাতে রাখা ব্যাগটি ফ্লোরে ফেলে দেয়। তার বাবার এই কন্ঠস্বর তারমনে বিজলীর সৃষ্টি করলো। শিহরণ দিয়ে উঠলো লোমগুলি।
কি হলো কথা বলছো না কেনো? বলো বিয়ের দিন কার সঙ্গে পালাইছো? কার সঙ্গে রাত কাটিয়ে খান বাড়িতে ফিরলে। আমার ভাবতেও লজ্জা করছে এরকম মেয়ে আমি জন্ম দিয়েছিলাম।
বাবার মুুখে নিজের নামে অ’শ্লী’ল অভিযোগ শুনে হৃদয় কেঁপে উঠলো ফিহার। মনে মনে বললো এই চিনলে তোমার মেয়েকে? এসব অভিযোগ করার আগে তোমার হৃদয় কেঁপে উঠেনা বাবা।
মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে ফাতেমা গালে এসে থা’প্প’র দেয়। কিরে কথা কানে যায়না তোর? কোথায় মরতে গিয়েছিলি? আবার ফিরে আসলি ক্যান, ওইখানেই মরে থাকতে পারলিনা।
ফিহার পৃথিবী মূহুর্তের মধ্যেই আধার নেমে আসে। মনে মনে বলে যেখানে ঘরের লোক সন্দেহর তীর ছুড়ে। বাইরের লোকের কাছে এগুলা বলা স্বাভাবিক।
সিয়াম ও জেবা খান একসঙ্গে ফুয়াদকে ধমক দিলো। মেয়েটা ফিরতে না ফিরতেই তারপিছনে বাইরের লোকের মতো গোয়েন্দাগিরি করা শুরু করে দিলে?
ফাতেমা খান কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ভাইয়া ভাবি আমি যদি জানতাম এই মেয়ের জন্য একদিন আমাকে এতকথা শুনতে হবে। তাহলে তাকে পৃথিবীতে আনার আগেই নিজেই বি’ষ খেয়ে মরতাম। এতদিন শশুড় বাড়ির লোকের কাছে ছিলাম রাজাগারের মেয়ে। যেই একটু সুখ আসলো পোড়া কপালে এই মেয়ে আমার সব সুখ কেড়ে নিলো মুহুর্তেই। আগে যদি জানতাম ফুয়াদকে বিয়ে করার জন্য আমার এই পরিস্থিতি হবে। কখনো তাকে বিয়েও করতাম না দিতাম না কোনো কুলঙ্গিকে জন্ম।
ফিহার কান স্তব্ধ হয়ে যায়। মাইকের মতো পু পু করতে থাকে। বিশ্বাস করতে পারছেনা তার মা তাকে কুলঙ্গি বলছে? অথচো বলাটা স্বাভাবিক।
ফাহিম খান এবার বলে উঠে ফিহা আমরা কি তোমাকে জোড় করছিলাম এই বিয়েতে। বিয়ের আগে তোমার মতামত নেওয়া হয়েছিলো। এরপরেও তুমি আমাদের সঙ্গে এমন করলে কেনো?
ফাহিমে খানের প্রশ্নটা ফিহার কাছে স্বাভাবিক লাগলো। কিন্তু উত্তর বলার কোনো কারণ ফিহার মাথায় এই মূহুর্তে আসছে না।
মায়া খান বলে তোমার জন্য আমরা ডিলের সঙ্গে লিটুর বিয়ে করিয়ে দিই। কিন্তু লিটু ডিলকে অবমাননা করে পাকিস্তান সফরে গিয়েছে। সদ্য বিবাহিত বউয়ের মনে কেমন লাগতে পারে এই ব্যাপারটা একবারো ভেবেছো। তোমার কারণে মান সম্মানের ভয়ে ডিলের জীবন আজ মরভাবাপন্ন। ডিলের যদি বিয়ে টা টিকে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে??
ফাহমিদুল খান ও জাদেজা খান সোফায় গা হেলান দিয়ে বসে আছে। তারা ফিহাকে কিছু না বলে ডাকে ফিহা আমাদের কাছে আয়?
ফিহা নরম নরম করে পা ফেলে হেটে দাদা দাদির কাছে যায়। ফিহার দাদু জিজ্ঞেস করে তোমার কি অন্যকারো সঙ্গে সম্পর্ক আছে?
ফিহা মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।
তা দেখে ফাহমিদুল বলে তাহলে ছেলেটাকে ডাকো। আমরাও তাকে দেখতে চাই।
ফিহা চুপ করে থাকে।
হঠাৎ শাফখাত বাইরে থেকে এসে লিভিং রুমে ঢুকতেই ফিহাকে বলে তুই এখনো রুমে যাইস নাই কেনো?
শাফখাতের এমন প্রশ্নে সবাই শাফখাতের দিকে নজর ফেলে। শাফখাত সবাইকে দেখে বলে তোমরা আমাকে এভাবে দেখছো কেন? আমি শাফখাত এলিয়েন নই।
ফাহিম খান বলে ফিহাকে কই পাইছো? আর ও বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে গেছে ক্যানো?
ফিহা তুই রুমে যা। আর তোমাদের সকলের প্রশ্নের উত্তর কাল সকালে পাবে। ফিহা মনে মনে বলে হাফ ছেড়ে বাচলাম কিন্তু কাল সকালে কি বলবো। কিছু না বললে তো সবাই আমার নামে বাইরের লোকের মতো ভূল ধারণা নিয়ে বসে থাকবে।
শাফখাতের উপর কেউ কোনো কথা বলতে পারলোনা। শাফখাত ফিহাকে নিজেই রুমে রেখে আসে।
সবাই শাফখাতের দিকে লক্ষ্য রাখে। দাদু বলে কি হচ্ছে বাড়িতে এসব। ছেলে মেয়েগুলো দিন দিন রহস্যজনক হচ্ছে কি করে?
মায়া খান বলে বাদ দাও রাত অনেক হয়েছে রাতের খাবার খেয়ে নাও সকালেই জানতে পারবো। শাফখাত যেহেতু বলছে কথা রাখবে শিউর।
★★★
সকাল হয় সবাই খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে ফিহা এই তিনদিন কোথায় ছিলো। বিয়ে থেকে পালিয়ে গেছে, কেনো তা জানার জন্য। সবাই শাফখাত আর ফিহার দিকে চেয়ে রয়েছে। কিন্তু দুজনেই নিচু হয়ে নাস্তা করছে সামনে পিছনের কাউকে দেখছে না। ফিহা ভয়ে কুচকিয়ে আছে। কিন্তু শাফখাত থাকাতে শক্ত হয়ে শাফখাতকে অনুসরণ করছে। এমন ব্যাপার দেখে ফুয়াদ এবার রেগে যায় এমপি সাহেবের উপর।
শাফখাত তুমি বলেছিলে ফিহা কোথায় গিয়েছিলো, কেনো গিয়েছিলো আজকে সকালে জানতে পারবো? কিন্তু তোমরা দুজনেই এভাবে খাচ্ছো। আর আমরা দর্শক হয়ে তেতে আছি সেইটা বুঝতেছো না।
শাফখাত রুটিটা প্লেট রেখে বলে সকাল সকাল খাওয়া বাদ দিয়ে পুরনো কাসুন্দি ঘেটে কি লাভ? ফিহার এই বিয়েটা করতে ইচ্ছে নাই তা পালিয়ে গেছে?
ফাহিম রেগে যায় শাফখাতের উপর! শাফখাতকে বলে এমন বুদ্ধি নিয়ে চললে রাজনীতি বাড়ি সামলাবে কি করে শাফখাত। বোকা বোকা কথা এমপি সাহেবের মুখে মানায় না। কারণ এই বিয়েটা ফিহার সম্মতিতে আয়োজন করেছি আমরা। কখনো তাকে জোড় করিনাই। সে মত দিয়েছিলো বলে আগিয়েছিলাম? এরকম ছেলেখেলার মানে কি? যথেষ্ট বুঝদার তোমরা এরপরেও বোকা বোকা কথা কেনো?
শাফখাত মুচকি হেসে বলে ননস্টপ এই বিষয় নিয়ে না ভাবলেই হয়!
সিয়াম খান এবার ছেলের আচরণে রেগে যায়। তোমরা দুজন কোনো একটা বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছো? কিন্তু তোমরা ভালো করেই জানো তোমরা আজকে সফল হবেনা। তারপরেও বৃথা চেষ্টা ক্যান করছো?
শাফখাত রুটি খাওয়া আবার শুরু করলো। ফিহা চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। বাটিতে রাখা নুডলস গুলো কাটা চামচ দিয়ে নাড়ছে। আর সবার কথা শুনছে। ভয়ে তার হৃদপিণ্ড ধরাস ধরাস করছে। ছেলের এমন ছন্নছড়া ভাব দেখে জেবা খান শাফখাতের কাছে এসে বলে যা জানিস বলে দে বাবা। আমাদের রহস্যেই রাখিস না। বলনা ফিহা কোন ছেলের জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছে। ছেলেটা কি ফিহাকে ধোকা দিয়েছে।
তোমাদের সঙ্গে আজকাল নাস্তা করাও আমার জন্য বোঝা। চারিদিকে এতো কথা সামলাতে হয়। আবার বাড়িতে তোমাদের কথা। এতো চাপে পাগল না হয়ে যাই।
মায়া খান শাফখাতকে বলে তোদের বড় করেছি এভাবে সবাইকে টেনশনে রাখার জন্য। আগে যদি জানতাম তোদের বড়ই করতাম না। একজন তো হুট করে যুক্তরাষ্ট্র গেলো? আর তুই সবসময় ছন্নছড়া ভাব ধরে থাকিস। ফিহার ব্যাপারে যা জানিস বলনা।
শাফখাত বামহাত দিয়ে তার মাথার চুল উপরে উঠায়। এরপরে টাইম দেখে বলে আমার একটা ইউনিয়নে কাজ পড়ে গেছে। টাইম হয়েছে আমি বের হবো। আর হ্যা ফিহা তুমি সোজা উপরে চলে যাও কেউ ডাকলে ঘরের দ্বার খুলবেনা। আমি দুপুরে ঠিক সময়ে আসবো।
শাফখাতের এই কথায় যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো ফিহা কিছুক্ষণের জন্য। মনে মনে বলে সখা আপনি চলে আসেন বাংলাদেশে আমি অনেক বড় বিপদে
শাফখাত ফিহার হাতে শাফখাতের একটা ফোন দেয়। এরপরে বলে আজ থেকে এইটা তোর?
ফাতেমা বেগম যখন জানতে পারছেনা। তারমেয়ে ক্যানো বিয়ে থেকে পালিয়েছে। উপায় না পেয়ে ধেয়ে আসে তক্ষুণি ফিহার গালে থা’প্প’র দেওয়ার জন্য। কিন্তু শাফখাত বাধা হয়ে দাড়ায়। ফাতেমার হাত আটকিয়ে বলে ছোটমা, এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলতে নেই। ফিহা তুই উপড়ে যা এক্ষুণি।
ফিহা আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। পারিজাত এসব কান্ড দেখে মনে মনে সন্দেহ করে শাফখাত ভাইয়া মেবি ফিহাআপুকে ভালোবাসে। নাহলে এভাবে প্রটেট করছে হাতে আবার ফোন দিচ্ছে। যেই ফোনটা আমায় আর ডিলকে একবারো ধরতে দেয়না। আবার এই কথায় ভাবে তাহলে তিহা আপুর সঙ্গে ভাইয়ার কি ব্রেকআপ হইছে? পারিজাতের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ফাহিম খান রেগে যেয়ে বলে শাফখাত দিন দিন তোমার সাহস বেড়েই যাচ্ছে। ফিহার জন্য ডিলনাসিনের জীবন অনিশ্চিত। আর তুমি এই বিষয়টা নিয়ে ছেলেখেলা করছো।
আমি মোটেও ছেলেখেলা করছি না বড়আব্বু। সবকিছু জানার জন্য একটা নিদিষ্ট সময় লাগে। এখন সেই সময় আসেনাই। আর আজকের পর বাড়িতে ফিহার এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা হবেনা। আমি বলছি ফিহা যেখানে ছিলো সেইফ ছিলো। কারো সঙ্গে পালায় নাই।
ফাহমিদুল খান বলে দাদুভাই আমি তোমাদের গুরুজন। আমাকে এভাবে টেনশন না দিলেও পারো তোমরা।
দাদা এসব ছোটখাটো বিষয়। টেনশন করিয়ো না বলে দাদুকে ডান চোখ টিপ দেয় শাফখাত।
চোখ টিপার ইশারায় দাদু সবাইকে বলে শাফখাত যা বলছে শুনো।
সবাই অবাক হয়ে যায়। সিয়াম খান ফাহমিদুলের দিকে তাকিয়ে বলে আপনি ও শাফখাতকে সাপোর্ট দিচ্ছেন।
মায়া খান বলে তো যাই হোক বাইরের মানুষের মুখ বন্ধ করবে কিভাবে? লিটুর বাড়িতে যারাই যায় এ ব্যাপারে শুনে আসে ফিহার নামে ছি ছি করে।
আজকের পর থেকে এই কথা বলার সাহস পাবেনা কেউ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক তোমরা স্বাভাবিক নিলেই হয়। আর লিটু ডিলকে ভালোবাসবে ওর সংসার সেখানেই হবে। ভালোবাসবে লিটু ডিলকে। ডিলের মতো মেয়েকে যে পেয়ে হারাবে সে অভাগা। লিটু এরকম ভূল জীবনেও করবেনা। পাকিস্তান সফর করে কাজ শেষ হলে লিটু একাই ফিরবে। এদিকে ডিলের এইচএসসি পরীক্ষা। তাই লিটু ডিল এখন আলাদা থাকা ভালো। তোমরা অহেতুক টেনশন বাদ দাও।
সবাই শাফখাতের মুখের সামনে চুপসে যায়। কিছু বলতে পারেনা আর। শাফখাত সেই সুযোগে বাড়ি থেকে বেড় হয়।
★★★
ফিহা নিজের রুমের কাচের জানালা গুলো খুলে দেয়। সকাল ১০ টা সূর্য মাথার উপর প্রায়। তবুও জানালা ভেদ করে আলো ঢুকছে ফিহার রুমে। এমন সময় পারিজাত আসে ফিহার কাছে। আপু দরজা খুলো আমি পারিজাত।
পারিজাতের কন্ঠস্বর শুনে চমকে যায় ফিহা। ফিহার মনে হলো এই বুঝি মা এলো। পরক্ষনেই মনে হলো এটা তো পারিজাতের গলা। এপাশ থেকে বলে কি চাই পারি?
আপু তোমার সঙ্গে কথা আছে দরজাটা খুলো। ফিহা বলে আমার কোনো দরকার নাই পারিজাত। জানিনা তুই কাকে সঙ্গে করে এনেছিস? দরজা খুললে আমি ফেঁসে যাবো। এখন শাফখাত ভাইয়া বাড়িতে নাই যে আমাকে প্রটেট করবে?
আপু আমাকে বিশ্বাস করছো না আমি পারিজাত?
ফিহা দরজা খুলে পারিজাতকে টান দিয়ে দ্রুত সিটকানি মারে। এরপরে বলে কি চাই পারি? দেখ তুই কিন্তু বাড়ির লোকের মতো প্রশ্ন করবি না। আমি পালিয়েছি ক্যান ভালোমতোই জানিস? কোথায় ছিলাম কিভাবে ছিলাম আশা করি টেকনিক খাটালেই বুঝবি।
পারিজাত বলে আরে আপু তুমিতো জানো আমি মনভূলো তাই সকালে ভাইয়ার তোমাকে প্রটেট বিষয়টা সন্দেহ হয়েছিলো একটুখানি। এরপরে মনে পড়ে যায়। আমি সব জানি ডিলনাসিনের বিয়েটা যে আমরাই দিলাম।
হুম! মনে মনে ফিহা বলে যাক এই মেয়ে তিলকে তাল করতে পারে নাই। এমনিতেও ছোট মেয়ে কিছু জানলে পেটে রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ।
আপু আমি আসলাম তোমাকে একটা কথা বলতে? শুনবা!
কি কথা বল?
আপু তার আগে বলো রাগ করবে না?
আরে না বল?
আপু আমিনা কাব্যকে দেখে ভালোবেসে ফেলছি! এতদিন কথাটা মনে চেপে রেখেছিলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম এইটা বোধহয় লাভ অ্যান্ড ফার্স্ট সাইট কিন্তু তা নয় আপু। আমি ওকে সত্যি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
ফিহার এমনিতে টেনশনে মাথা খারাপ। তারমাঝে এই মেয়ে এসে এসব বলতেছে। ফিহা কাঠ কাঠ গলায় বলে ডিলনাসিনের সেটিংস করিয়ে দিতে গেতে আমার জীবন হদ্দ। আর ইনি নাকি এক দেখাতে কাব্য ভাইয়াকে ভালোবেসেছে।
ক্যান আপু তুমি কি তাকে ভালোবাসো? তারজন্য খাবার নিয়ে গেছিলে? পারির এমন কথায় হুট করে রেগে যায় ফিহা। চোখ লাল করে বলে পুঁচকে মেয়ে তিনমাস পর এইচএসসি সে চিন্তা নাই। এসেছে কে কার সঙ্গে প্রেম করছে তা শুনতে। ভাগ এখান থেকে আমার মাথাটা খাস না। আগে এইচএসসি দে। ব্যাডা! যদি সিঙ্গেল থাকে তাহলে পরে বিষয়টা ভাববো। এখন আমি বাড়তি চাপ নিতে পারবো না।
পারি কেঁদে ফেলে ফিহার ধমকে। পারি বলে মনের কথা শেয়ার করতে আসলাম তুমিয়ো আমাকে বকা দিলে। ছেলেটাকে এখন জানালে কি হবে? বলার সঙ্গে সঙ্গে কি আর ছেলেটা প্রেমে পড়বে।
আরেকবার যদি এখানে দাড়িয়ে এসব বলিস। আমি শাফখাত ভাইয়াকে সব বলে দিবো।
এই আপু ভূলেও না। তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে।
তাহলে যা!
চলবে,,,
®️রিয়া জান্নাত
#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে
পর্বঃ- ২১ ও ২২
আজ পনেরো দিন হলো ফিহা রুমে নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখছে। বাইরে খুব দরকারি কাজের ছুতোয় বের হয়। তাছাড়া পারিজাত খাবার দিয়ে যায়। শাফখাত ও তিহা নানান কথার মাধ্যমে ফিহাকে বুঝায়।
গুমোট আবহাওয়া‚ ভেতরে তীব্র হাহাকার। অসহনীয় ভাবে আজ বুকের ভেতরটা পুড়ছে। সব কিছু থাকার পরেও না পাওয়ার বেদনায় ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে ফিহার। আজকে ফিরোজের কথা খুব মনে পড়ছে তার। ফিরোজ থাকলে হয়তো বাড়ির সবাই এত অবহেলা করতে পারত না। আলগোছে ওয়ারড্রব থেকে একটা ছবি বের করল। অতি সন্তপর্ণে ছবিটি উপর হাত বুলিয়ে দিল। চোখের পানি কোনো বিঘ্নতা মানে না। ঠোঁট চেপে অশ্রু আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে গেল ফিহা । তবুও কয়েক ফোঁটা অবাধ্য জল দু’গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। খুব নিভৃতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। বিস্তর অভিমান নিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল‚
“আমার জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয় সত্যি হচ্ছে আপনি আমার পাশে নাই ফিরোজ। প্রতিনিয়ত আমি আপনার অপ্রতুলতা উপলব্ধি করছি।
কাধে কারো স্পর্শে চমকে উঠল । ঘন ঘন নেত্রপল্লব ঝাপ্টে অশ্রুকণা শুষে নিল।মেকি ভঙ্গিতে অধর প্রসারিত করল। ঘুরে দাঁড়াল পেছনে থাকা মানবীর দিকে। তাকে এভাবে একা ঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভুরু যুগল কুঁচকে আসল মানবীর৷
” আজকে মোহনার বিয়ে। দেখ ও আমাদের কতবার কল করছে। আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস ফিহা ?”
“ ওইখানে অনেক লোক থাকবে। সবার মাঝে মোহনার বিয়েতে যেতে ভালো লাগছিল না । তাই একাকীত্বে গা ভাসাতে বাড়িতেই আছি ।”
তিহা বুঝতে পারলো ফিহারর মন আবারও বিষাদে ছেঁয়ে গিয়েছে। কারণ ফিহা আর শাফখাত এই সময়ে তাকে সাপোর্ট করছে। ফোনের মাধ্যমে সবসময় তিহা আর বাড়িতে মেন্টাল সাপোর্ট দিচ্ছে শাফখাত। তিহা ফিহার হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসায় । ফিহার মাথায় শিথিলভাবে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
“ বাড়ির সকলের কথায় কষ্ট পাচ্ছিস ?”
“ আমার কষ্ট পেতে নেই তিহা। বাড়ির কেউ আমাকে না বুঝলেও ফিরোজের তো বুঝা উচিত, তার এখন বাড়ি ফিরা উচিত, আমি কিভাবে সবটা বাড়িতে বলবো? সে যদি সামনে থাকতো সাহস করে সবটা বলতাম বাড়ির লোকের কাছে। তাহলে নাহয় বিশ্বাস করতো। এখন সেও আমার পাশে নেই, ফোন দিলে দু একটা কথা বলে ফোন কেটে দেয়। এই মূহুর্তে বাড়িতে যদি বলি আমি ফিরোজকে ভালেবাসি। তাহলে বাড়ির লোক আমাকে ভূল বুঝতে পারে। বড়আম্মু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ সে তো মনে প্রাণে চায় তার বোনের মেয়ে ফিরোজের বউ হোক । ফিরোজ এখন আর ফোনে বলেনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। শাফখাত ভাইয়াকে এ ব্যাপারে কথা বলতে বলেছিলাম শাফখাত ভাইয়াও কিছু করতেছে না ।”
“ শাফখাত তোর জন্য… ”
“প্লিজ তিহা। সেই অশুভ রাতকে আমি মনে করতে চাই না। যে রাত আমার থেকে আমার আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে।”
তিহা চুপ করে গেলো। এমনিতেই মেয়ের জীবনটা এলোমেলো হয়ে আছে। সেই বিভীষিকাময় ঘটনা মনে করিয়ে কাঁ’টা ঘায়ে নুনের ছিটা আর দিতে চাইছেন না তিহা । ফিহার হাত থেকে ফটোফ্রেমটা নিয়ে আগের স্থানে রেখে দেয় তিহা ।
“চল।”
“আমি এখানেই ঠিক আছি। শুধু শুধু ওদের সামনে দিয়ে বের হলে আরও কথা শুনতে হবে। ওদের ধারালো কথা আমি সহ্য করে পারি না তিহা । ভেতরটা ক্ষ’তবিক্ষ’ত হয়ে যায়।”
“তোকে দেখতে না পেলে মোহনা কষ্ট পাবে। আমার কথা শোন৷ ও আমাদের বন্ধু না। চল!”
ফিহা তিহার কথা উপেক্ষা করতে পারল না। তিহার পেছন পেছন চলে এলো বাইরে। বসার ঘরে কেউ ছিলোনা বলে দেখতে পায় নাই কেউ।
★★★
তিহা ও ফিহাকে কাছে পেয়ে কেঁদে দেয় মোহনা। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে তোরা আমাকে ভূলে গেছিস। সেই যে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হলো তখন থেকেই প্রায় আমাদের মাঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মাঝেতে দুইবার শুধু ভার্সিটিতে দেখা হয়েছিলো তিহার সঙ্গে ? আর ফিহাকে শেষ দেখেছিলাম হসপিটালে, বাবার অসুস্থতা জেনে এসেছিলি। আজকেও তোরা লেইট? আমি অনেক আশা করেছিলাম তোরা কালকেই আসবি। কিন্তু তোরা কালকে তো আসলি না। আজকে একদম শেষসময়ে আসলি।
ফিহা মোহনার চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছে বলে কাঁদিস না। এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট হয়ে যাবে। আঙ্কেলের জন্য তোকে স্ট্রং থাকতে হবে। তুই ভেঙ্গে পড়লে আঙ্কেল মনে করবে তুই বিয়েটা মন থেকে মেনে নিতে পারিস নাই?
তিহা মোহনার হাত ধরে বলে, ইমরান ভাইয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে এরমধ্যে বেশ কয়েকবার। লোকটা অনেক ভালো রে? তোর কি কি পছন্দ? কি খেতে ভালোবাসিস? মন খারাপ হলে কি করিস? স্বপ্নের জায়গাগুলোর নাম কি কি? সব আমার কাছ থেকে শোনার চেষ্টা করেছে। ইমরান ভাইয়া তোকে না দেখেই এতো ভালোবেসে যে তোর কি কি পছন্দ? কি কি অপছন্দ সব জানার চেষ্টা করছে? তাহলে তুই ভাব লোকটা তোকে কত ভালোবাসে?
মোহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, হ্যা ভালো না বাসলে কি নিঃসার্থ ভাবে আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতো? ভালোবেসেই বলে মেন্টাল সাপোর্ট, অর্থনৈতিক সাপোর্ট, সবধরনের সাপোর্ট দিয়েই যাচ্ছে। এই মানুষ টাকে ঠকাতে পারবো না। তবে একটা কথা কি মেহেদীর ভালোবাসা আমার প্রতি সত্যিই ছিলো। ছেলেটাকে সবকিছু বলতে যেয়ে অনুভব করেছিলাম আমিয়ো তাকে ভালোবাসতাম।
ফিহা মোহনার ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে, এই ভালোবাসার ভবিষ্যত শুধুই অন্ধকার। তোর পরিস্থিতি এখন যতটা শোচনীয়। তোর লাইফে মেহেদী নয় ইমরানই ঠিক আছে।
মোহনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, সব জানিরে ছেলেটাও বুঝবে কেনো আমি তাকে না করেছি। আশা করি সে আমার উপর ক্ষোভ রাখবেনা। তবে আমি বোধহয় আর ভার্সিটিতে ক্লাস করতে পারবো না।যে কয়দিন আছি তার সামনে যেতে পারবো না। কারণ মেহেদীর সামনে দাঁড়াতে গেলে নিজেকে সার্থপর লাগবে। তারচেয়ে পরীক্ষার সময় পরীক্ষা টা দিয়ে সম্ভবত কানাডা যেতে হবে। এই বিষয়টা আমার মনকে আর কষ্ট দিচ্ছে। আমি বাবা মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে থাকতে চাই।
তিহা মুচকি হেসে বলে তাহলে তোকে রেকর্ড টা আজকে শুনাতে হবে।
কিসের রেকর্ড?
ভয়েস রেকর্ড।
কার?
শুন! আসসালামু আলাইকুম মোহনা। আমি মেহেদী হাসান। আমাকে ক্ষমা করো। আমি শুধুই মুখে বলতাম আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমার পরিস্থিতিতে তোমাকে সাহায্য করার শক্তি আসলে আমার নেই। আমি এক মধ্যেবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমি কিভাবে তোমার পরিবারের পাশে দাড়াতে পারি বলো? আমার বাবা আমার খরচ বহন করতেই হিমসিম খায়। কিন্তু তোমার যা এখন পরিস্থিতি তোমার লাইফে ইমরান ভাই ঠিক আছে। আমি তোমার লাইফে মরীচিকা। যা শুধুই অকোজো। আমার তোমার প্রতি কোনো ক্ষোভ নাই। তুমি ইমরানকে বিয়ে করো? আর হ্যা তোমার শেষকথা মনে প্রাণে মানবো। নিজের পরিচয় তৈরি করে অন্যকে স্বপ্ন দেখাবো এর আগে নয়। তুমি আমার লাইফের জন্য শিক্ষা। আসলে এই পৃথিবীতে এভাবে বেকার ছেলেগুলো কাউকে ভালোবাসার ভূল যেনো ভূলেও না করে। লাইফে এগিয়ে যাও। আমি তোমার সামনে দাড়াতে পারবো না কারণ সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। তাই আমি আজকের পর থেকে এই ভার্সিটিতে থাকবোনা। সুখে সংসার করো। অভিনন্দন তোমাদের। আজকের পর থেকে আমি এই শহর থেকে বিলীন হবো। অন্য শহরে নতুন জীবন তৈরি করবো। এখানে যত থাকবো স্মৃতি গুলো ততই চারা দিবে। আল্লাহ হাফেজ।
ভয়েস রেকর্ড টা শুনে কেঁদে ফেলে মোহনা। ফিহা তিহাকে বলে এ কেমন প্রেমাতাল। জীবন শুধুই দুঃবিপাকে যাবে আমার।
ফিহা মোহনার মাথায় হাত দিয়ে বলে সব ঠিক হবে একদিন। লাইফে মুভ অন করা শিখতে হয়। যত মনে করবি ততই কষ্ট পাবি। ইমরান ভাইকে আজকের পর থেকে আপন করে নিবি। কারন মানুষটা একান্তই তোর হবে।
তিহা ফিহার দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলে সবাই সবাইকে বুঝ দিতে অস্তাদ। অথচো নিজের বেলায় কাচকলা। ফিহাকে দেখলেই আপনারা বুঝবেন?
এমন সময় রুমে এসে মোহনার মা বলে ফিহা তিহা মোহনাকে নিয়ে আসো। কাজী সাহেব চলে এসেছে।
এরপরে তিহা,ফিহা, মোহনাকে নিচে নিয়ে আসে। ইমরান একদৃষ্টিতে মোহনাকে দেখে। পরনে পার্পল কালারের লেহেঙ্গা, মাথায় ঘোমটা কপাল পযর্ন্ত ঢাকা। চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক, গলায় নেকলেস, কোমড়ে কোমড়বন্ধনী, কানে ঝুমকো। মোহনাকে এইগুলার সাজে পরী লাগছে ইমরানের কাছে।
আড়চোখে মোহনা ইমরানের দিকে তাকায়। দেখে মুচকি হাসি দেয় মানুষটার সাজ একদম যুবরাজদের মতো ঠেকলো মোহনার কাছে।
ফিহা, তিহা দুজনকে একসঙ্গে বসিয়ে দেয়। এরপরে বলে দারুণ মানিয়েছে আপনাদের জুটিকে। তিহা, মোহনা ও ইমরানের কাপল পিক তুলতে ব্যস্ত হয় যায়। ফিহা এমন টাইমে ওয়াশরুমে যায়।
ইমরান মোহনার কানে যেয়ে বলে আপনাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। মনে হচ্ছে আসমান থেকে পরী নেমে এসেছে আমার জন্য। বাংলাদেশে যে এমন পরী আছে আপনাকে না দেখলে বিশ্বাস হতোনা। কানাডাতে মোবাইলে একটা পিক দেখে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যেই পিকটা আমার কাছে পাঠিয়েছিলো তার থেকেও আপনি বেশি সুন্দর।
মোহনা চুপসে যায়। ইমরানের কথা তার কাছে কেমন জানি সংকোচবোধের সৃষ্টি করলো। মনে মনে বললো এই ব্যাডা আমাকে কখন দেখলো এভাবে? নাকি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য পাম্প দিচ্ছে। কই মেহেদী তো আগে এই কথা বলে নাই?
মোহনাকে চুপ থাকতে দেখে ইমরান মোহনার কানের কাছে এসে বলে আপনি কিছু বলবেন না? আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে বললেন নাতো?
মোহনা শুধু সৌজন্যবোধ হওয়ার জন্য মা নেড়ে সম্মতি জানায়। হ্যা পছন্দ হয়েছে।
ইমরান আপাতত এই কথা শুনে অনেক খুশি হয়ে যায়। মোহনার কানের কাছে এসে বলে যাক তাহলে কাউকে জোড় করে বিয়ে করছি না।
এমন সময় কাজী সাহেব এসে আকত পড়ায়। দুইজন দুজনকে আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে স্বামী স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করে। তিহা ও ফিহা শেষে বলে অবশেষে মোহনার শুভ পরিণয় হইলো।
বিয়েতে উপস্থিত থাকা সকল লোক আলহামদুলিল্লাহ বললো। মোহনার বাবা হুইল চেয়ার থেকে মেয়ের বিয়ে দেখলো। মনে মনে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে তাদের দুজনের কাছে এসে ইমরানের হাত ধরে বললো বাবা আজ থেকে আমার রাজকন্যাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। আশা করছি রাজকন্যাকে অবহেলা করবে না। ইমরান শশুড়ের হাত ছেড়ে দিয়ে শশুড়কে সালাম দিয়ে আশস্ত করলো। আপনি এসব টেনশন করবেন না। আজ থেকে মোহনার সঙ্গে সঙ্গে পুরোপুরি ভাবে আপনাদের দায়িত্ব নিলাম। কারণ আপনাদের তো কোনো ছেলে নাই। আজ থেকে আমি আপনাদের ছেলে। আমার বাবা মারা গেছে অনেকদিন। আপনি যে বাবার দেওয়া শেষ কথাটা রাখছেন এইটায় অনেক। এখন বলেন আপনি কি হবেন আমার বাবা।
মোহনার বাবা সব লোকের সামনে কেঁদে ফেলে। মোহনার শাশুড়ী এসে বলে পরিচয় তো বিলুপ্তির পথে ছিলো। ভাগ্যিস আপনি ফোন করে ডাকলেন নয়তো আমরা বাংলাদেশে আসতাম না। আজ থেকে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকবো। সুখে দুঃখে হাসিমুখে সবকিছু ভোগ করবো।
এসব কথা শুনে মোহনার ঠোঁটে হাসির রেখা মিলে। কারণ তাকে কানাডা যেতে হবেনা। বাবা মায়ের কাছ থেকে আলাদাও হতে হবেনা। এইভেবে সবার সামনে ইমরানকে জড়িয়ে ধরে বলে ধন্যবাদ আপনি আমার জীবনে পূর্নতা।
ওখানে থাকা সব মানুষ লজ্জা পেয়ে যায়। ফিহা তিহা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে তোরা রোমান্স কর আমরা আসি
★★★
ফিরোজ যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আজ একমাস পূর্ণ হলো। এই একমাস ফিহার উপর দিয়ে গেছে তীব্র যন্ত্রণা । নিজেকে ঘরবন্দী করেছে ২০ দিন হলো। বাড়িতে কেউ ফিহার সঙ্গে কথা বলেনা,ফিহাও কারো সঙ্গে কথা বলেনা । ফিহা আর চরিত্রহীনার অপবাদ শুনতে পারছেনা। বাড়ির সবার সামনে দাঁড়ালে ফিহা নিজেকে অপরাধী মনে করে। কারো চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারেনা আমি চরিত্রহীন নই। এসব বললেই তার কারণ জানতে চাইবে। কিন্তু ফিহার কাছে যে উত্তর রয়েছে তা বড্ডই অপ্রাঙ্সগিক। কারণ ফিহা মনে করতেছে ফিরোজ তাকে সত্যিই ভালোবাসে নাই। ফোন দিলে টুকটাক কথা বলে ফোন কেটে দেয়। লম্বা একটাদিনে মাত্র রুটিন করে একবার ফোন দেয় ফিহাকে। তবুও ফিহাকে জিজ্ঞেস করেনা ভালোমন্দ কিছুই। ফিহাও শুধু এই ২০ দিন রোবটের মতো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে ফিরোজ দায়ছাড়া ভাব নিয়ে উত্তর দেয়।
ফিহা স্থির করলো নিজেকে আর ঘরবন্দী করে রাখবেনা। যেই মানুষ টার জন্য কষ্ট পাচ্ছি সেই মানুষটা তো দিব্যি দিন কাটাচ্ছে। তাহলে আমি কেনো আমার জীবন থেকে আনন্দ গুলো বির্সজন দিবো। আমি তাকে ভালোবাসি এটা যেমন ধ্রুব সত্যি। তেমন আমার ক্যারিয়ারে ফোকাস করা উচিত। তারজন্য নিজের ক্ষতি করবোনা। আজকে ভার্সিটি যেয়ে খোঁজ নিবো ওনি কি আসলেই ভার্সিটি থেকে রিজেকনেশন নিয়েছে? তাহলে মনটা শান্তি পাবে। এগুলো আর ভাবতে হবেনা। লাইফে মুভ অন করতে হবে।
অনেকদিনের অ্যাসাইমেন্ট জমে গেছে ফিহার। ইনকোর্স পরীক্ষা আজ তাই সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে আসলো। কাউকে কোনো কিছু না বলে। শুধু আসার সময় শাফখাতকে একটা মেজেস করছে। ভাইয়া আমি ভার্সিটিতে এসেছি বাড়ির কেউতো আমার সন্ধান করবে না তুমি ছাড়া। তুমি ঘুমুচ্ছিলে হয়তো তাই মেজেস করে জানিয়ে গেলাম।
★★★
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে কাব্য একা একা বসে আছে। যেইখানে ফিহা, তিহা,মোহনা একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতো ঠিক সেই জায়গায়। হঠাৎ কাব্য ফিহাকে দেখতে পায় ক্যাম্পাসে । কাব্য ফিহাকে দেখে দৌড়ে আসে। ফিহাকে দেখে কাব্য বিস্মিত। এ কি অবস্থা করেছে মেয়েটা নিজের? গোলআলুর মতো মুখটা বেগুনের মতো হয়েছে। চোখের নিচে কালসিটে দাগ। হাত পা শুকিয়ে কাকের মতো লাগছে। ফিহাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন যাবত কিছু খায়না? ফিহার সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছিলো কাব্যর, ফিহার তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার শেষের দিন। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার পর তাদের তিন বান্ধবীর মধ্যে কাউকে তেমন ক্যাম্পাসে দেখে নাই কাব্য। তিহাকে মাঝে মাঝে দেখতো ফিহার কথা জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে চলতো তিহা। কয়েকদিন আগে মোহনার বিয়ে হয়েছিল সেইখানে কাব্য ইনভাইটেট না হওয়া সত্বেও ফিহাকে খুজতে গিয়েছিলো কিন্তু ফিহার দেখা পায়নাই কাব্য। ফিহার বাড়ির রাস্তার সামনে কাব্য প্রায় সময় যেতো ফিহার মুখ দেখার জন্য কিন্তু ফিহাকে কখনো দেখে নাই। আজকে ফিহাকে এইভাবে দেখতে পাবে কস্মিনকালেও ভাবে নাই কাব্য।
ফিহা ভার্সিটিতে ঢুকেই কাব্যের মুখ দেখতে পাবে কস্মিনকালেও ভাবে নাই। কাব্য ফিহাকে এতদিন পর দেখতে পেয়ে কেঁদে ফেলে। জিজ্ঞেস করে কেমন আছো ফিহা? তোমাকে এতো রুগ্ন লাগছে কেনো?
ফিহা মুখে নির্লিপ্ত হাসি এনে বলে আপনি কেমন আছেন ভাইয়া। দেখলাম আপনাদের ৪র্থ বর্ষের রুটিন বের হইছে। পরীক্ষার তো বেশিদিন নাই। তাহলে এইসময়ে ভার্সিটি আসার কি দরকার? বাড়িতে পড়াশোনা করলেই হয়।
আছিতো আর কয়েকদিন। অনেক বছরের স্মৃতি জমে গেছে ভার্সিটির সঙ্গে তাই এইভাবে আশা? এতদিন কোথায় ছিলে? তুমি জানো তোমার আগের নম্বরে আমি কতবার ফোন দিয়েছি? তোমার বাড়ির সামনে কতবার গেয়েছি। কিন্তু তোমার দেখা পাইনাই।
ফিহা ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফেলে বলে ভাইয়া সামনে পরীক্ষা আপনার। আশা করছি মন দিয়ে পড়বেন? মরীচিকার পিছনে না ছুটে যে আপনাকে যে ভালোবাসবে তার পিছনে সময় ব্যায় করুন। আমি একজনকে ভালোবেসে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
ফিহার মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসে এই কথা শুনে কাব্যর শরীরে ঘামছুটে যায়। অস্থির অস্থির লাগে কাব্যর? তবুও কিয়ৎপরিমাণ চুপ থেকে কাব্য বলে সে কি তোমাকে আমার চাইতেও বেশি ভালোবাসে?
ফিহা কাব্যর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা। দীর্ঘক্ষণ চুপ থেকে বলে ভালোবাসা পরিমাপ করা যায়না ভাইয়া। কারণ এইটার কোনো ওজন নাই। আশা করছি আপনি বুঝবেন। তবে আপনাকে আমি একটা কথা বলতে চাই শুনবেন?
“জ্বী! বলো”
আপনার জন্য হসপিটালে খাবার নিয়ে গেছিলাম মনে আছে?
হুম! থাকবে না কেনো? এরপরেই তো মনে হয়েছিলো তুমিয়ো বোধহয় আমাকে ভালোবাসো?
ফিহা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে, আমার সঙ্গে আমার কাজিন পারিজাত গিয়েছিলো মনে আছে আপনার?
জ্বী! ওই পিচ্চি মেয়েটা না!
কাব্যর কথায় ফিহা অট্রহাসি দিয়ে বলে ভাইয়া আপনার দেখার ভূল। ও পিচ্চি নয়। ১৮+ বয়স এইবার এইচএসসি দিবে। আর আপনি তাকে পিচ্চি বলছেন?
সে যাই হোক! হঠাৎ তাকে মনে করে আমার কি হবে?
সে আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলছে। আমার কাছে বেশকয়েকবার গালি খেয়েছে। তবুও আপনাকে ভালোবাসে বারবার কথাটি বলেছে। তো আপনি যদি পারেন, আপনি যার কাছে মূল্য পাবেন তার কাছেই ফিরুন।
কাব্য এই কথাটি শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। কাব্যর মুখ কালা হয়ে আসে। ফিহাকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছেনা। এই মূহুর্তে ফিহা কাকে ভালোবাসে এইগুলা তো একদমই না। তারপরেও ফিহাকে শেষ একটি কথা বলে যায়। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো।
ফিহা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে আমার মধ্যে ছেলেরা এমন কি পায়? যারজন্য আমার বোনগুলো হয় অবেহেলার পাত্র।একদিকে লিটু এখন আবার কাব্য। আমার বোন দুইটাও বেঁচে বেঁচে এরকম ছেলেকেই ভালোবাসলো।
★★★
ফিরোজকে ভার্সিটিতে থেকে কল করেছিলো প্রিন্সিপাল। ফিরোজ জানতে পারে প্রেয়সী আজ ভার্সিটি গেছে। ফিরোজের মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। কারণ প্রেয়সী আজ অনেকদিন পর মুক্ত খোলা পাখির মতো ঘুড়তে বের হয়েছে। এইটা ভেবেই ফিরোজের আনন্দ হচ্ছে।
ফিরোজ ফিহার একখানা ফটোফ্রেম সামনে নিয়ে বলে আর কতোটা হবে ছন্নছাড়া। প্রেমে মজলে মানুষ এতোটা দিশেহারা হয় তোমাকে না ভালোবাসলে জানতাম না। যেই কষ্ট আমাকে দিয়েছো তীলে তীলে। সেই কষ্টের কাছে তোমার এই কষ্ট কিছুই না।
দিনের পর দিন প্রেয়সী আমার সামনে কাব্যর জন্য ঝগড়া। আবার কাব্য তোমাকে ভালোবাসি বলছে আমার সামনে। এই কষ্টের কাছে তোমার কষ্ট কিছুই না। আমার সামনে লিটুকে বিয়ে করতে চেয়েছো । আমি যুক্তরাষ্ট্র আসতেছি একবারো আমাকে বলো নাই ভালোবাসি। একবার যদি বলতে ভালোবাসি তাহলে আমায় দূরে আসতে হতোনা।
আজ বাড়িতে এই পরিস্থিতির জন্য তুমি নিজেই দায়ী। তবে তোমাকে ভিডিও কলে দেখবো না এইটাই ধ্রুব সত্যি। দেশে ফিরার পর ভালোবাসা আমাদের কতটা ক্ষত বিক্ষত করছে সামনে থেকেই দেখবো। আর তো দুইমাস প্রেয়সী ৩০ টা দিন যেভাবে কেটে গেছে দুইটা মাস ও সেইভাবেই কেটে যাবে। আমি চেয়েছিলাম তুমি পড়াশোনায় হও মনোযোগী। আজকে তুমি ভার্সিটি গেছো আমি হয়েছি খুশি। আশা করি পড়াশোনার মাঝে নিজেকে রাখবে হ্যাপি। কথাতো হবেই রুটিন করে একদিন? আমার দায়ছাড়া ভাব শুধুই তোমাকে আমার অভাব বুঝানোর জন্য।
ভালোবাসি প্রেয়সী। তোমার জায়গা সবসময় আমার বুকের মধ্যেই থাকবে। জানো প্রেয়সী তোমার এই ফটোফ্রেমের সঙ্গে কথা বলে তোমার শূন্যতা আমাকে পূর্ণতা এনে দেয়। এই ফটোফ্রেম হাতে নিলে হৃদপিণ্ডের গতি দ্রুত হয়। তুমি শুনতে পারছো আমার বুকের হৃদপিণ্ড কতটা চালু আপ-ডাউন করছে। বুকের মধ্যে শুধুই তুমি বিরাজ করছো। তাই হৃদপিণ্ডর গতি ধরাস ধরাস করছে। আমার হৃদয় জুড়ে শুধুই প্রেয়সীর আভাস। ভালোবাসি তোমায় প্রেয়সী।
চলবে,,,
®️ রিয়া জান্নাত