মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-২৬+২৭+২৮+২৯

0
234

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে

®️ রিয়া জান্নাত

| |পর্বঃ- ২৬ ও ২৭ | |

আজকে ফিহার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান ছিলো। হলুদ শেষে নিজের রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে ফিহা। মুখ ভর্তি তার হলুদ।তিহা, আর মোহনা সহ ফিহার যত কাজিনরা ছিল সবাই ওকে হলুদ দিয়ে ভুত বানিয়ে ফেলেছে। ফিহা একটা টিস্যু নিয়ে হালকা করে হলুদ গুলো তুলছে।তখনি দরজা ঠেলে ফিরোজ রুমে এল। ফিরোজ ফিহারর সামনে এসে দাঁড়াতেই ফিহা অবাক চোখে ফিরোজের দিকে তাকায়। ফিরোজের মুখেও অনেক হলুদ মাখা।মুখে মিষ্টি একটা হাসি ফুটিয়ে তুলে ফিরোজ ফিহাকে বলে,,

” সবাই তো হলুদ দিলো কিন্তু আমি তো দিলাম না।”

ফিরোজের কথা শুনে ফিহা হালকা হেসে বলে,,

” আপনারও দিতে হবে?এমনিতেই হলুদ দিয়ে আমাকে ভুত বানিয়ে দিয়েছে।এখন আপনি আবার হলুদ দেয়ার কথা বলছেন !”

ফিরোজ মুখে দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,,

” হুম অবশ্যই;সবার হলুদ দেওয়া শেষ এখন আমার পালা ।”

কথাটা বলে ফিরোজ ফিহার আরো কাছে গিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসে। ফিরোজের এতটা কাছে এসে ফিহার ভীষণ অস্বস্তি লাগছে;ফিহা চোখ তুলে ফিরোজের দিকে তাকিয়ে দেখে ফিরোজ অদ্ভুত দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে।ফিরোজের এমন শান্ত দৃষ্টি ফিহার নিশ্বাস ভারী করে তুলছে।ফিরোজের চোখে অন্যরকম মাদকতা আছে। ফিরোজের চাপ দাড়িগুলোতে হলুদ মেখে একাকার হয়ে গেছে;ফিহার কাছে মনে হচ্ছে এই হলুদ গুলো যেন ফিরোজের মুখের সৌন্দর্যটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।বেশ কিছুক্ষন ফিরোজের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ফিহা কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,,

” সখা ছাড়ুন।”

” উহু আগে আমি হলুদ লাগাবো তারপর ছাড়বো।”

ফিরোজের মিহি কণ্ঠ শুনে ফিহা আর কিছু বলতে পারেনা।এমনিতেই ফিরোজের এতো কাছে আসায় বেচারির দম যায় যায় অবস্থা তার উপর ফিরোজের এই ঘোরলাগা কণ্ঠ ফিহাকে পাগল করে তুলছে।ফিরোজ ফিহার গালের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার গালের হলুদগুলো আলতো করে ঘষে, ফিহার গালে লাগিয়ে দেয়।ফিরোজের দাড়িগুলোর খোঁচা লাগতেই ফিহা ফিরোজের পাঞ্জাবির কলারটা খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।ফিরোজ এমন করে ফিহার পাশের গালেও হলুদ লাগিয়ে দেয়।আর ফিহা তো এইদিকে পুরো ফ্রিজড।সে বুঝতেই পারেনি ফিরোজ তাকে এইভাবে হলুদ লাগাবে।হলুদ লাগানো শেষে ফিরোজ ফিহার দিকে তাকিয়ে দেখে ফিহা এখনো ফিরোজের পাঞ্জাবি খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।ফিরোজ এবার মুচকি হেসে বলে,,,

” আমার হলুদ লাগানো তো শেষ প্রেয়সী ।এবার তুমি ছাড়ো আমাকে। বাসররাতে যত পারো ধরিয়ো আমাকে ।”

ফিরোজের কথায় ফিহা জলদি চোখ খুলে ফিরোজকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।তারপর বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,,,

”আপনার হলুদ লাগানো শেষ হলে আপনি এখন যান।”

ফিহার অস্থিরতা দেখে ফিরোজ হালকা হেসে বলে,,,

” জ্বি প্রেয়সী যাচ্ছি।আবার কাল দেখা হচ্ছে।আল্লাহ হাফেজ।”

কথাটা বলে ফিরোজ বেরিয়ে যায়। ফিরোজ যেতেই ফিহা সস্থির নিশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

★★★

এমপি সাহেব আমাকে ছাড়ুন। কেউ দেখে ফেললে মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে আপনার। সবাই বলাবলি করবে এমপি সাহেব ছাঁদে এক নিরীহ মেয়ে পেয়ে __

কথাটি শেষ করতে পারেনা তিহা। তার আগেই শাফখাত দুই বাহু দ্বারা আগলে নেয়। শাফখাত এই প্রথম তিহার কাছাকাছি এসেছে। তাই তিহার মাঝে সংকীর্ণতা বিরাজ করছে। তিহার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। তিহার হৃদপিণ্ড কেপে উঠছে। হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে চলছে। বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডের গতি ধরাস ধরাস করে শব্দ করছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে জড়িয়ে রাখলে তিহার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হবে। তিহা আস্তেধীরে শাফখাতের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,,,

” এমপি সাহেব আপনার কি হয়েছে? আপনার বোধশক্তি কাজ করছে তো ঠিকমতো? আপনিতো এরকম পাগলামি করেন না? একবার ভেবে দেখেছেন আমাদের এভাবে কেউ দেখে ফেললে কি হবে? ”

” শাফখাত মুচকি হাসি দিয়ে বলে, সকাল থেকে তুমি আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলছো তিহা। কত সুযোগ খুঁজতেছিলাম একটুখানি এই মোমেন্ট পাওয়ার জন্য। কিন্তু তুমিতো বান্ধবীর বিয়েতে এসে আমাকে ভূলেই গেছো? কতবার তোমার সামনে গেছি, তোমার ধারণা আছে?”

তিহা নিজের মনে কঠোরতা এনে বলে,,,

বিয়ের আগে এভাবে জড়িয়ে ধরা হারাম এমপি সাহেব? বান্ধবীর গায়ে হলুদ বলে কথা তাই ব্যস্ত থাকা স্বাভাবিক। ব্যাচ আগামীকাল বিয়েটা হলেই আমি বেঁচে যাই। এইখানে আপনার যত কাছে থাকবো ততই পাগলামি বাড়তে থাকবে আপনার? তো এমপি সাহেব আজকে আমার মধ্যে এমন কি দেখলেন যে মাদকতা ভীড় করেছে আপনার মনে?

” শাফখাত একটু দূরে সরিয়ে যায়। হলুদের বাটি থেকে কিছু হলুদ আঙুলে লাগিয়ে নেয়। এরপরে আস্তে ধীরে তিহার সামনে এসে দাড়ায়। ”

তিহা কিছু বুঝতে পারছিলো না! শাফখাতের হাতে হলুদ দেখে রোবটের মতো দাড়িয়ে থাকে সেখান ঠায়।

শাফখাত হলুদগুলো তিহার দুই গালে মেখে দিয়ে বলে। তৈরি থেকো আগামীকাল তোমার ও আমার শুভ বিবাহ। হঠাৎ করে ছাঁদে বাজি ফুটতে থাকে? আর বাজি গুলো ফোটায় মোহনা, ইমরান,পারিজাত,ডিলনাসিন।

হঠাৎ বাজির শব্দে ভয় পায় তিহা। কান চেপে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপরে চোখ খুলে দেখে বাজি ফোটাচ্ছে মোহনারা। এদের এভাবে বাজি ফোটাতে দেখে তিহা অবাক হয়। আরও বেশি অবাক হয় এমপি সাহেবের কর্মকাণ্ডে। এমপি সাহেব এসব কি বলছে?? রাত গভীর হয়েছে এমপি সাহেবের মাথাটাও গেছে তিহা এসব ভেবে সামনে পা ফেলে নিচে যাওয়ার জন্য।

মোহনা তিহাকে বলে তোদের বিয়েতে না আসলে জানতেই পারতাম না। রাত পোহালে আমার দুই বান্ধবী অন্য কারো হয়ে যাবে। আরও বেশি অবাক লাগে ফিহা আর ফিরোজ একে অপরকে বিয়ে করছে।

মোহনার কথা শুনে তিহা মোহনাকে বলে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। কালকে শুধু ফিহা আর ফিরোজ স্যারের বিয়ে। এমপি সাহেবের বিয়ের মতো তুচ্ছ কাজ করার জন্য সময় অনেক পড়ে আছে।

ডিলনাসিন তিহার কাছাকাছি এসে বলে, আর জ্বালাতে পারবো না আপনাদের। তবুও জোড়া বিয়ের সারপ্রাইজ পাবো আমরা কেউ ভাবিনি? পারিজাত এসে বলে তিহাভাবী নিচে তোমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে নিচে যাও।

তিহা কারো সঙ্গে আর কোনো কথা বলে নিচে চলে আসে। পিছন পিছন ডিলনাসিন ও পারিজাত আসে।

শাফখাত শেষবারের মতো ইমরান ও মোহনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিচে চলে আসে।

ইমরান ও মোহনা মুচকি হাসি দেয়। ইমরান মোহনাকে বলে ভালোই হলো বউ। সবাই তার প্রিয়কে পেয়ে যাচ্ছে। মোহনা ইমরানকে বলে সবটা হলো তোমার জন্য?

ইমরান দুই বাহু দ্বারা আগলে ধরে নেয় মোহনাকে। এরপরে কপালে চুম্বন দিয়ে বলে, ভালোবাসা জগতে আসলেই সুন্দর। তুমি আমার লাইফে এসে আমার লাইফটাকে রঙিন করেছো। তাই সবার লাইফ রঙিন করার দায়িত্ব নিতে হয় অনায়াসে। মোহনার কপালে চুম্বন দিয়ে বলে ভালোবাসি বউ তোমাকে অনেক ভালোবাসি৷

মোহনা ইমরানকে বলে রাত হলে তোমার পাগলামি বাড়ে। ভূলে যেয়োনা আজকে বিয়ে বাড়িতে এসেছো? তাই নিজেকে সংযত রাখো। আর দুষ্টুমিগুলো মন থেকে মুছে ফেলো।

ইমরান শক্তপোক্ত ভাবে মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বলে নিচে চলো বউ। তিহার গালে হলুদ লাগাবে না।

” হুম! ”

★★★

তিহা বুঝতে পারছেনা তার সঙ্গে রাত বিরাতে হচ্ছে কি? সবাই তাকে ক্যান এভাবে হলুদ মাখাচ্ছে। ফিহা এসে তিহার দুই গালে হলুদ ভর্তি করে লাগিয়ে বলে শুভ বিবাহ।

ফিহার কর্মকাণ্ড তিহা অবাক হলোনা। কারণ এরচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো যখন তিহার বাবা মা তিহার গালে হলুদ লাগায়।

” ইমরান আর মোহনা না জানালে জানতেই পারতাম না আমাদের ছেলের ও পছন্দ করা মেয়ে আছে? তিহা তুমি আমাদের ছেলে শাফখাতকে আগামীকাল বিয়ে করতে পারবে তো? ”

” ফাহিম খানের কথাশুনে গলা শুকিয়ে যায় তিহার। তিহা মনে মনে বলে এসব কি আসলেই তার সঙ্গে হচ্ছে? নাকি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। তিহাকে ভ্যাবাচ্যাকা খেতে দেখে ফিহা তিহার কানে কানে বলে আমার শশুড়জ্বি তোকে কিছু বলছে সাড়া দে নাহলে কিন্তু পস্তাতে হবে। ”

” তিহা মাথানিচু করে বলে, বিয়ের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এতো তাড়াতাড়ি আমার সঙ্গে ঘটবে, আমি প্রস্তুত ছিলাম না আঙ্কেল। হুট করে কিভাবে বিয়ে হয়? এরজন্য তো আগাম প্রস্তুত লাগে? ”

” ফাহিম খান হেসে বলে ক্যান বাড়িটা তো বিয়ে বাড়ির মতোই সেজে উঠেছে? সমস্যা কি আমরা নাহয় একটা বিয়ের জায়গায় দুইটা বিয়ে দিলাম? তোমরাতো একে অপরকে ভালোবাসো তাহলে পরিস্থিতি যেমনই হোক বিয়ে করতে আপত্তি থাকার কথাতো না। ”

” ফাহমিদুল খান সবার সামনে বলে কাল এই দুটো বিয়ে হলে আমি মরেও শান্তি পাবো । কারণ নাতী দুইটা আমার বড্ডো আদুরের ছিলো।”

ফাহমিদুল খানের এই কথা শুনে পারিজাত, ডিলনাসিন ক্ষেপে উঠে। সবার সামনে বলে এই বুড়ো নাতী দুইটা আপনার আদুরের। আর নাতনীগুলো কি বন্যার জ্বলে ভেসে এসেছে।

জাদেজা খান স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নাতনীদের বলে আরে তোদের দাদু এভাবে কোনোকিছু বলেনাই। তোরা রাগ করিস না বুড়ো মানুষ কখন কি বলে? এই কথাগুলো তোরা ধরবি?

ফিরোজ আর শাফখাত দুইজনের দিকে লালচোখে তাকায়। এরপরে দুইজন দুজনের বোনকে বলে শনিবার তো তোদের শেষ পরীক্ষা। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখানে সময় নষ্ট করতেছিস ক্যান?

পারিজাত বলে উঠে বাহ রে আমাদের দুইভাইয়ের বিয়ে আমরা ইনজয় করা বাদ দিয়ে পড়াশোনা করবো? আর বাড়িতে কি পড়াশোনার পরিবেশ আছে? চারদিকে তো লোকের সমাগম, এরউপর জোড়া বিয়ে।

ফিরোজ ডিলকে বলে ডিল তোর শশুড়বাড়ি নিয়ে যাতো এই পারিজাত বাচালকে। ভালোমতে পড়াশোনা কর দুজনে। এগুলা ইভেন্টে থাকতে হবেনা তোদের।

ডিলনাসিন বলে ভাইয়া এতো পড়াশোনা করে কি হবে? তোমাদের বিয়ে কি বাড়বাড় হবে? তাই আমাদের উপভোগ করতে দাও আজ আর কালকের দিনটা?

সিয়াম খান বাচ্চাদের ধমক দিয়ে চুপ করায়। রাগ দেখিয়ে বলে একেকটা বড় হয়ে তালগাছ হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধি সেই হাটুর নিচেই রয়ে গেছে। এই বয়সে এসে বাচ্চামো মানায় না তোদের।

সবাই চুপ করে থাকে। শাফখাত মনে মনে ভয়ে সংকীর্ণ হয়ে আছে! কারণ তিহা এখনো বিয়েতে মত দেয় নাই। মনে মনে ভাবে তিহা যদি আজকে বিয়েতে মত না দেয় তাহলে এমপি সাহেবের মান সম্মান লুটোপুটি খাবে।

ইমরান শাফখাতের কাঁধে হাত রেখে বলে,,

” এমপি সাহেবের মনে ভয় উঁকি দিচ্ছে নাকি? ”

” তা হচ্ছে ইমরান। বাড়িতে তোমরা দুজন কি জানালা এসব? আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি কিছু কাজ গুছিয়ে বিয়েটা করতে চেয়েছিলাম? কিন্তু তোমরা দুজন এমন সময় বাড়িতে সবাইকে এই বিষয়টা বলেছো। সবাই তো উঠে পড়ে লেগেছে। এখন যদি তিহা সবার সামনে আমাকে বিয়ে করতে না চায়? তাহলে আমার মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? ”

” ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে বলে বিয়ে হচ্ছে একটা বন্ধন। একবার বিয়েটা হতে দাও তুমি নিজেই কৃতজ্ঞ থাকবে আমাদের উপর। সারাদিন বাইরে কাজ করে রাতে যখন বউয়ের সোহাগ পাবে। তখন বুঝবে বিয়ের জন্য সময় নেওয়া উচিত নয় একেবারে। মনেমনে ভাববে বিয়েটা আরো আগে করলাম না কেনো?

” শাফখাত বলে এখনতো আমি রাজি। কিন্তু আদৌও কি হবে ও রাজি? ”

” ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে বলে ও রাজি না থাকলেও ওর বাপ_মা তো রাজি। ”

ফিরোজ এসে শাফখাতের ডানহাত ধরে বলে,, শাফখাত এতো এসিতে ঘামছিস ক্যান? টিস্যু টা নে ঘামটা মুছেক।

ফিরোজের এমন কথায় লজ্জায় পড়ে যায়। এরপরে টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছে।

” তিহা এমপি সাহেবের মুখ দেখে আড়চোখে। মনে মনে হাসে খানিকটা। এরপরে সামনে থাকা সবার উদ্দেশ্য বলে, আমি এই বিয়েতে রাজি আঙ্কেল যদি আমার বাবা মা মত দেয়? ”

উপস্থিত থাকা সকল লোক বলে উঠে আলহামদুলিল্লাহ। ফিহা আর মোহনা নিজেদের একহাত দিয়ে তালি দেয় দুজনে জোড়া করে। পারিজাত আর ডিলনাসিন খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। সিয়াম খান, জেবা খান তিহার বাবা মায়ের সঙ্গে কোলাকুলি করে। এরপরে চারজনকে মিষ্টিমুখ করায় ফাতেমা খান। এরপরে ট্রেতে রাখা কিছু মিষ্টি ওখানে উপস্থিত থাকা সকল লোককে বিলি করে পারিজাত।

তিহার মা বাবা অনেক খুশি। কারণ এমপি সাহেবের মতো নিষ্ঠাবান এক ছেলেকে তাদের মেয়ের জামাই করে নিতে পারছে এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হয়না।

ফিরোজ শাফখাত কে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। শাফখাত ফিরোজ ও ইমরানকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়। শাফখাতের মুখের একটা হাসির রেখা দেখা দিলো যা কখনো দেখতে পায়নি তিহা আগে। তিহাও মনেমনে খুশি। এসেছিলাম বান্ধবীর বিয়ে খেতে। এখন বিয়ে করছি বান্ধবীর দেবরকে। আহা কি শান্তি। এই খুশিতে মোহনার হাত চেপে ধরে তিহা।

মোহনা ফিহার কানেকানে বলে দেখ একটুআগে কত ঢং করছিলো? এখন এমনভাবে খুশির আমেজে আমার হাত চেপে ধরছে। এমন শক্তি দিয়ে আমার জামাই ও আমার হাত ধরেনা। মোহনার কথায় লজ্জা পেয়ে যায় তিহা। মোহনার হাত ছেড়ে দেয়।

ফাহিম খান সবার উদ্দেশ্য বলে, রাত অনেক গভীর হয়েছে। সকাল হলেই জোড়া বিয়ে। কালকে শুধু আমরা ছেলেমেয়ে গুলোকে এক করে দিবো? এরপরের রাতে বিয়ে উপলক্ষ্যে সমস্ত গ্রামবাসীকে খাওয়াবো। আগে যা ঠিক ছিলো এখনো সেই সমস্ত কিছুই বহাল থাকবে। সবাই এই সময়টুকু রেস্ট করে নাও। আগামীকাল অনেক কাজ পড়ে আছে।

সবাই যার যারমতো সেখান থেকে চলে যায়। বাড়িভর্তি লোকজন তাই আজকে সবাই সবার সঙ্গে বেড শেয়ার করে শুইতে যায়।

ফিরোজের রুমে ফিরোজ, শাফখাত, ইমরান ঘুমাতে যায়। শাফখাতের রুমে তিহার বাবা – মা, ছোটভাই সহ ঘুমাতে যায়? ফিহার রুমে ফিহা, তিহা ঘুমায়। আর পারিজাতের রুমে মোহনা,পারিজাত,ডিলনাসিন ঘুমায়। ফিহার বেডটি সিঙ্গেল এরজন্য মোহনা ছোটদের সঙ্গে বেড শেয়ার করে। ফাহিমের রুমে ওরা তিন ভাই ঘুমায়। সিয়ামের রুমে তিন জা ঘুমায়। গেষ্ট রুমে কিছু আত্নীয়, ফুয়াদের রুমে কিছু আত্নীয় ঘুমায়। ফাহমিদুল খান নিজ রুমে জাদেজাকে নিয়ে ঘুমায়।

★★★

ঘুমের ঘোড়ে ফিহা অনুভব করলো তার পা ধরে টানছে কেউ। ফিহার খুব বিরক্ত লাগলো। চোখটা খুলে ইচ্ছে করলো একটা থা’প্প’র মেরে দিই গালে । কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো সকাল সকাল তোর কি হয়েছে?

” মোহনা বিরক্ত ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফিহার উপর। তোর যে আজকে বিয়ে তোর খেয়াল আছে। বিয়েটা দিনের মধ্যে হবে। ”

” ফিহা হাই তুলে বলে তিহা কই মোহনা? ”

” সে কি তোর মতো অলস নাকি? সে তো খুব সকালেই উঠে শাওয়ার নিতে গিয়েছে। আর তোকে ডেকেও তোলা যাচ্ছিলো না। ”

” ফিহা গাছাড়া ভাব এনে বলে ‘ও’। ”

” মোহনা ভ্রু জোড়া কুচকে বলে শুধু ও যা রেডি হ ভাইয়ারা রেডি হয়ে যাচ্ছে,ইমরান বললো আমাদের আবার পার্লার যেতে হবে ।

” বিয়েটা পরে করলেও হবে আগে ঘুম দিই। ”

মোহনা এই কথা শুনে নিজেকে আর সংযত রাখতে না পেরে। ল্যাম্পপোস্টের টেবিলে রাখা গ্লাসটির পানি ছুড়ে দেয় ফিহার উপর। ফিহা চিল্লিয়ে উঠে মোহনার উপর। এরপরে কোনো উপায় না পেয়ে শাওয়ার নিতে যায়।

★★★

সাজ শেষে ফিহা,তিহা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।একটা গাঢ় লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে ফিহা।সাথে ম্যাচিং জুয়েলার্স।ফিহা তার দুপাট্টার এক পাশ মুঠো করে ধরে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।তখনি তার ফিরোজের কথা মনে পড়ে। ফিরোজকে আজ কেমন লাগবে সেটাই ভাবছে ফিহা ।ফিরোজের কথা ভাবতেই গতকাল বিকালে ফিরোজের হলুদ লাগানোর কথা তার মনে পড়ে যায়।সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় ফিহা মাথা নিচু করে মুচকি হাসে।

তিহাও সেইম ভাবনাগুলো ভাবছে। শাফখাতকে কেমন লাগবে এসব চিন্তা মাথায় ভর করেছে

ফিহা আর তিহাকে নিয়ে সবাই কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর ঢুকে। ফিহা ও তিহা মাথা নিচু করে ধীর পায়ে হেটে চলছে। তাদের একটা রুমে রাখা হলো। ধীরে ধীরে সব মেহমানরা তিহা ও ফিহার কাছে আসে। সবাই যার যার মতো ছবি তুলায় ব্যাস্ত!ফিহা, তিহার আসে পাশে মানুষ গিজ গিজ করছে এতে করে তাদের কেমন যেন অস্বস্থি লাগছে। তখনি একটা পিচ্চি মেয়ে রুমে দৌড়ে এসে বলে যায়;বর এসেছে;বর এসেছে।

বর এসেছে কথাটা কানে যেতেই ফিহা, তিহার অস্থিরতাটা দ্বিগুন হারে বেড়ে যায়। ফিহা ও তিহাকে রেখে মোহনা সহ ফিহার সব কাজিনরা বরকে বরণ করতে চলে যায়। ফিহা আর তিহা সেখানে চুপচাপ বসে থাকে।

ফিহা ও তিহা আজকে একসঙ্গে কনে সেজে বসে থাকলেও দুজনের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছে না। কারণ দুজনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে প্রচুর।

কিছুক্ষন বাদে সবাই আবার রুমে ফিরে আসে। মোহনার হাতে অনেক গুলো টাকা। তিহা, ফিহা বুঝতে পারে গেইট ধরার টাকা। মোহনা টাকা গুলো ডিলের হাতে দিয়ে বলে,

” এগুলো আমাদের সবার মাঝে ভাগ করে দাও ।”

ডিলনাসিন মোহনার কথা মতো টাকা গুলো আলাদা করে ভাগ করতে থাকে। মোহনা ফিহা তিহার পাশে বসে হেসে বলে,,

”জানিস ফিহা, তিহা আমাদের দুলাভাই দুইটা যা ভালো না। আমরা যত চেয়েছি আমাদের ততই দিয়েছে।আর জানিস দোস্ত স্যারকে আজ যা লাগছে না।ডার্ক রেড কালারের একটা শেরোয়ানি পড়েছে।ইশ!কি মারাত্মক লাগছিলোরে। আর এমপি সাহেব তো খয়েরি রঙের একটা শেরোওয়ানি পড়ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না হুট করে তার বিয়ে? মনে হচ্ছে পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়াই ছিলো? ”

মোহনার কথা শুনে ফিহা চোখ ছোট ছোট করে মোহনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ওই পেত্নী প্রথমত উনি তোর স্যার, দ্বিতয়ত উনি তোর দুলাভাই।তৃতীয়ত তুই বিবাহিত। তাই তোর এতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখতে হবে না।আমি আছি না তাকে দেখার জন্য।আর হ্যা দেখে মনে হচ্ছে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছিস।কিছু তাহলে আমাকেও দিস!”

ফিহার কথা শুনে মোহনা চোখ বড় বড় করে বলে,,

” কিহ!গেইট ধরার টাকার ভাগ তোকে দিবো।ইম্পসিবল!তুই না স্যারের বউ!তুই কি করে টাকার ভাগ চাস ?”

মোহনার কথা শুনে ফিহা ঠোঁট উল্টিয়ে ইনোসেন্ট ফেইস করে বলে,,
”কেনোরে একটু ভাগ দিলে কি হয়?”

মোহনা মুখ ঘুরিয়ে বলে,,

”না একদমই না।তোর কোনো ভাগ নেই।”

ফিহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফাতেমা খান, তিহার মা একটা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে সেই রুমে আসে।এসেই ওরা তড়িগড়ি করে মেয়েদের পাশে বসে বলে,,,

” নেও হা করো ।তোমাদের খাইয়ে দেই।নয়তো পরে ভালো ভাবে খেতে পারবা না ।”

সেইযে সকালে তাদের মাকে দেখেছিলো পার্লারে যাওয়ার আগে এখন আবার দেখছে।একটা বাদামি রঙের শাড়ি পড়েছে তিহার মা, ফিহার মা পার্পল কালারের শাড়ি পড়েছে । চুলগুলো একটা খোঁপা করে মাথায় বড় একটা ঘোমটা টানা।মুখে তেমন সাজ নেয় শুধু চোখের নিচে হালকা কাজল।মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে তিহার মায়ের । তিহা মায়ের গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,

”মা আজ তো অন্তত একটু সাজতে পারতে।”

তিহার মা রাহেলা বেগম হালকা হেসে বলে,
”এই বয়সে আমার আবার কিসের সাজ।যা সেজেছি তাই যথেষ্ট।এখন নে তুই হা করতো।তোকে খাইয়ে দিয়ে আমাদের আবার মেহমানদের দেখতে হবে।”

” দেখছিস তিহা তোর মাকে কত করে বলছি আপনিতো মেহমান বিয়াইন। কিন্তু ওনি সেই সকাল থেকে ছুটোছুটি করছে। ”
” থাক বিয়াইন এসব কথা তাড়াতাড়ি মেয়েদের খাইয়ে দিই। ”

কথাটা বলে তারা মেয়েদের মুখে একটা লোকমা তুলে দেয়। তিহা, ফিহা ছলছল নয়নে তাদের মাকে দেখছে।এত কাজের চাপেও তাদের খাইয়ে দেয়ার কথাটা ঠিক মনে রেখেছে।

মেয়েদের খাইয়ে দিয়েই রাহেলা বেগম, ফাতেমা খান আবার তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে যান।

★★★

ছোট একটা ফটোসেশন শেষে বিয়ের আসল কাজ কবুল বলার সময় আসে।একটা বিশাল চাদরের একপাশে ফিহা,তিহা আর অন্য পাশে ফিরোজ, শাফখাত হুজর, ফিহা, তিহার বাবা আর ফাহিম খান,সিয়াম খান সহ আরো, কয়েকজন মুরুব্বি বসা। সবাই অধীর আগ্রহে ফিহার কবুল শুনার অপেক্ষা করছে।কাজী সাহেব বার বার বলছে মা কবুল বলো। ফিহার গলা আটকে আসছিলো কয়েকবার। কিন্তু বিয়ের পর তাকে বাবা মাকে ছাড়তে হবেনা এই আনন্দে চোখ বন্ধ করে তিনবার কবুল বলে ফেলে।

এরপরে ফিরোজের পালা। ফিরোজকে কাজী সাহেব কবুল বলার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত গতিতে কবুল বলে ফেলে।

উপস্থিত থাকা সকল লোক আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। প্রথম বিয়েটা সুস্পূর্ণ ভাবে গঠিত হয়।

এখন দ্বিতীয় বিয়ের পালা হুজুর সাহেব মন্ত্র পড়িয়ে তিহাকে কবুল বলতে বলে অনেকবার। কিন্তু তিহা কিছুতেই মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারছেনা। মনে হচ্ছে এই মূহূর্তে কেউ মুখ চিপে ধরছে। মুখ দিয়ে কথা আসছেনা। কিন্তু তিহার যে আজ কি হয়েছে তা সে নিজেই জানে না।তার গলা জমে গিয়েছে যার ফলে মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে।এক অজানা ভয় তাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরেছে।তিহা বুঝতে পারছে তার গাল বেয়ে টুপটাপ চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। তিহাকে কাঁদতে দেখে পাশ থেকে মোহনা তিহার চোখের পানি মুছে দিয়ে আস্তে করে বলে,,

”দোস্ত এবার কবুল বলে ফেল।”

তিহা এবার আলতো করে মোহনার দিকে তাকিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে,,,

”মা কোথায় মোহনা ?”

”কি জানি বোধ হয় বাইরের মেহমানদের কাছে আছেন।”

”মাকে একটু ডেকে দেনা।আমার কেন যেন খুব ভয় করছে;মাকে বল না আসতে।”

তিহার কথা শুনে চাদর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা তার মামী বলে উঠে,,

” তিহা ভাবী খুব ব্যাস্ত আছেন।তিনি আমাদের এখানে তোমার কাছে থাকতে বলেছেন;তুমি এতো টেনশন না করে কবুলটা বলে ফেলো।”

তিহা জানে তার মা এখানে আসলে নিজেকে সামলাতে পারবেন না।তাই তিনি কাজের বাহানা দিয়ে তিহার থেকে দূরে আছেন।তিহার এই মুহূর্তে তার বাবা মার্ সাথে কাটানো আনন্দকর মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়ছে।এত দিন বিয়ের জন্য যে আগ্রহটা ছিল এখন সেই আগ্রহটা যেন সে আর খুঁজে পাচ্ছে না।তার এখন মন চাচ্ছে সব ছেড়ে উঠে যেতে।কি করে থাকবে তার বাবা মাকে ছেড়ে।এই একটা শব্দ বলে ফেললেই তো সব শেষ।কথা গুলো ভাবতেই তিহার চোখ থেকে গড়গড়িয়ে পানি পড়ে যায়। ফিহা টিস্যু দিয়ে তিহার চোখ মুছে দিয়ে বলে,,

” দোস্ত এইভাবে কাঁদিস না।আমিও তো কবুল বললাম কাদলাম না। তুই এরকম করলে কিন্তু এবার কাঁদতে আরাম্ভ করবো ।”

পাশ থেকে মোহনা বলে উঠে,,

” ওই কুত্তি এইভাবে কেঁদে কি তোর এতো দামি মেকাপ নষ্ট করবি নাকি।তখন কিন্তু তোর এই পেত্নী মার্কা মুখ দেখে এমপি সাহেব ভয়ে তোকে বিয়ে না করেই উঠে দৌড় দিবে।তাই প্লিজ এখন কান্না কাটি বন্ধ করে কবুলটা বলে ফেল ।”

সবার আগ্রহের দরুন এক পর্যায়ে তিহা কাঁপাকাঁপা গলায় তিনবার কবুল বলে দেয়।তিহার কবুল বলা শেষ হতেই শাফখাতের পালা শুরু।শাফখাত বেশি সময় না নিয়ে জলদি কবুল বলে ফেলে।যেন এতক্ষন সে এটা বলারই অপেক্ষা করছিলো।শাফখাতের কবুল বলার মধ্যে দিয়ে তিহা আর শাফখাতের বিয়েটা সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয়।

কাজী সাহেব বলে উঠে জোড়া বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আজ থেকে আপনারা বৈধ সম্পর্কের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করবেন

চলবে..

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে

®️ রিয়া জান্নাত

| | পর্বঃ- ২৮ ও ২৯ | |

রাত দুইটা বাজতে চললো। ঘরের মধ্যে কোনো জনমানবের শব্দ নেই। একা রুমে বসে আছে ফিহা। পুরো খাটটি উপর থেকে গাদা ও রজনীগন্ধা ফুলে সজ্জিত। খাটের নিচের অংশে কিছু গোলাপের পাপড়ি পড়ে আছে। মধ্যিখানে বসে আছে ফিহা। অনেকক্ষণ যাবত এক মানবের অপেক্ষায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর দরজার দিকে উকি দিচ্ছে ফিহা। কারো জন্য একা রুমে বসে অপেক্ষা করছে ফিহা, হয়তো সেই মানুষটি এই কথাটি ভূলে গেছে। পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা। দেয়ালের ডানপাশের ঘড়িটির সেকেন্ডের কাটার শব্দ ছাড়া রুমে আর কোনো শব্দ নেই। ফিহার মন ভগ্নপ্রায় হইয়া আসছিলো। চোখের পাতায় ঘুম আসতেছিলো। কিন্তু ঘুমানোর চেষ্টাও করতে পারছেনা।

” এমন সময় কারো বন্ধ দরজা খোলার শব্দ পায়। ফিহা লোকটিকে দেখে উঠে দাড়ায় খাট থেকে। ফিরোজ মুচকি হাসি দিয়ে বলে,, উঠছো ক্যানো প্রেয়সী? ফিহা আস্তে করে একটা সালাম দেয়। আসসালামু আলাইকুম। ”

ফিরোজ সালামের উত্তর দিয়ে বলে বসো প্রেয়সী। ফিহা আলগোছে খাটের উপর পা এলিয়ে বসে। ফিরোজ ও একইভাবে পাশে বসে।

” অনেক অপেক্ষা করালাম প্রেয়সী। আসলে সন্ধ্যার পর বিয়ে বাড়িতে এতো লোকের সমাগম ছিলো যে ব্যাস্ততার মাঝে এইঘরে আসতে পারিনাই। তুমিতো জানোই ত বাবা আমাদের বিয়েতে গ্রামের সব লোকদের রাতের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে। বাবা, চাচা,তোমার বাবার একাই পেরে উঠা সক্ষম না। তাই আমি কিছুটা অংশ দেখাশোনা করছিলাম। আর বাড়ির পরিবেশটা ফাঁকা হওয়ার খুব দরকার ছিলো। গ্রামের লোক আত্নীয়-স্বজন এখন সবাই যার যার গন্তব্যস্থলে। তাই কাছে আসার সময় পাইনাই। ”

” ফিহা মাথা নিচু করে ঘোমটা কপাল পযর্ন্ত টেনে চুপচাপ বসে রয়েছে। মুখে কোনো কথা নাই। তা দেখে ফিরোজ বলে,,

❝ রাগ করোনা অবুঝ প্রেয়সী, এইতো আমি চলে এসেছি। আরও যদি করো রাগ , ঘর ছাড়বো এক্ষুণি । ❞

” স্বামীর মুখে বিবাহের প্রথম রজনীতে এই কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা ফিহা। ফিহা কেঁদে ফেলে। কান্নার আওয়াজ ফিরোজের কর্ণে এসে মাদলের মতো বাজলো। ”

” ফিরোজ প্রেয়সীর আরেকটু কাছে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে ফিহার মুখমন্ডল থেকে ঘোমটা সরালো। ফিহাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ফিরোজের হৃদয়ে আঘাত লাগলো। হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেলো। শিরায় শিরায় রক্তগুলি তরলের মতো ছুটে চলছিলো। বুকের মধ্যে ধরাস ধরাস শব্দ বেড়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রেয়সীকে বললো,,

” আমার হৃদয়ে প্রণয় সৃষ্টি করে তোমার আখিতে জল শোভা পায়না। আমার প্রেম মজিলো তোমার সনে। ঘর করিবো প্রেয়সীর সনে। যাবোনা আমি অন্য কোথায়। মজার ছলে বলছি সেই কথা। চুপ করো আমার প্রেয়সী। তোমার কান্না আমার হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করছে ইতিমধ্যে। ”

” ফিহা সহসা চুপ হয়ে যায়। ”

” ফিরোজ ফিহার চিবুক ধরে বলে,,, আমার দিকে তাকাবে না প্রেয়সী। ”

” ফিহা ফিরোজের কথায় ফিরোজের দিকে এক নজর দেখে লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে বলে আপনি অনেক ঘামছেন যান শেরেওয়ানী চেঞ্জ করে পাতলা কাপড় পড়ে আসুন। ”

” ফিরোজ প্রেয়সীর বিয়ের সৌন্দর্য অবলোকগমন করলো পুরোটা। এরপরে বললো তুমিও পরিবর্তন করে আসো। তোমাকে এই সাজে দেখে আমি বিমোহিত। কিন্তু বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে গরম লাগবে তোমার। ”

” ফিহা এতক্ষণ যাবত এই কথার অপেক্ষা করতেছিলো। অবশেষে স্বামীর কাছে অর্ডার পেয়ে দ্রুত আলমারি থেকে মায়ের দেওয়া সেই শাড়িটি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। ”

” ফিরোজ মুচকি হাসি দিয়ে বলে পাগলী বউটা। এতক্ষণ কেউ এভাবে ভারী লেহেঙ্গা পড়ে থাকে নাকি। যাক বউকে সবার দৃষ্টির আড়ালে এইসাজে তো ভালোভাবে লক্ষ্য করতে পারলাম। ”

★★★

রাত আড়াইটা বাজতে চললো। ফুলের সজ্জিত খাটে বসে আছে তিহা। অপেক্ষায় আছে এমপি সাহেবের। কিন্তু এমপি সাহেবের এখনো আসার নাম নেই। কিছুক্ষণ পরপর হেটে দরজার কাছে যায়, আর পায়চারি করে তিহা। এমপি সাহেব তিহাকে মেসেজ করেই জানিয়ে দিছে। তার ঘরে আসতে লেইট হবে, এরজন্য তিহাকে আগেভাগেই চেঞ্জ করতে বলেছে। তিহা পড়নে একটা ব্ল্যাক কালারের সিল্কি পাতলা শাড়ী পড়ে আছে। ল্যামপোস্টের কাছে রাখা এমপি সাহেবের জন্য দুধের গ্লাস রেখেছে। তিহা পায়চারি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই খাটের এক সাইটে বসে পড়ে। ল্যাম্পপোস্টের কাছে থাকা দুধের গ্লাসটি হাতে নেয়। এরপরে চোখ বন্ধ করে অনুভব করে এমপি সাহেব ভিতরে আসলে কিভাবে দুধটা তাকে খেতে দিবে ?

” দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে এমপি সাহেব। ভিতরে ঢুকতেই তিহাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।

❝ বাঙালী নারীকে শারীতে পুরো পরী লাগে। এই কথাটি তিহার প্রতিফলনে দেখতে পেলো ❞

হাস্যস্বরে তিহার পাশে বসে। তিহা এমপি সাহেবকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলে। শুধু এইটুকু দৃষ্টিপাত করেছে এমপি সাহেবের পড়নে ব্লাকশার্ট,ব্লাকপ্যান্ট,ব্ল্যাকজুতা,বামহাতে ব্ল্যাকহাতঘড়ি। অর্থাৎ ব্ল্যাকে মেসিন করে রাখছে এমপি সাহেব।

” দুজনের মধ্যে হঠাৎ করে এক অজানা আশঙ্কা তৈরি হলো। কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। টপিকের অভাবে দুজনের মধ্যে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ”

সহসা এমপি সাহেব বলে উঠলো,,

” আসলে তিহা বিয়ের প্রথম রাত তারমাঝেও দলের স্বার্থে বাইরে যেতে হয়েছিলো। যদিও তোমাকে মেসেজে বলে গিয়েছিলাম আমার লেইট হবে। কিন্তু কারণটা তো জানোনা তাই জানিয়ে দিলাম। শেরওয়ানি পড়ে তো আর বাইরে যাওয়া যায়না। চেঞ্জ করেই এভাবে গেছিলাম। তোমাকে অনেক সুন্দরী লাগছে। মনে হচ্ছে আসমান থেকে পরী নেমে এসেছে আমার রুমে। ”

” এমপি সাহেবের এই কথায় খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। ইচ্ছে করছে এখনি শাড়ির আচল দিয়ে মুখটা ঢাকি। কিন্তু তা করতে পারলো না। ”

” তিহাকে চুপ থাকতে দেখে আড়চোখে তিহার দিকে তাকায় শাফখাত। এরপরে খাটথেকে একটু নড়েচড়ে তিহার কাছে আসে। তাদের দুজনের মধ্যকার গ্যাভ শুধু একটি হাত রাখার জায়গা। এরপরে আড়চোখে তাকায় শাফখাত। তিহা দ্রুত দুধের গ্লাসখানা এমপি সাহেবের হাতের দিকে দেয়। এমপি সাহেব ঠোঁটদুটি প্রসারিত করে দুধের গ্লাস হাতে বহন করে। কিছুক্ষণপর গ্লাসটি পাশে রাখে। শাফখাত দেখলে পেলো তাদের মাঝখানের জায়গাটুকুতে হাত রাখছে তিহা। শাফখাত তার কাঁপা কাঁপা হাতটি তিহার হাতের উপরে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করতে চায়। ”

” তিহা দ্রুত হাতটি সরিয়ে আনে। শাফখাত লজ্জায় পড়ে যায়। মনেমনে বলে এ আমি কি করলাম। প্রিয়তমা এখন যদি আমাকে খারাপ ভাবে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তিহাকে বলে কোনো সমস্যা তোমার?”

” তিহা বেশকিছুক্ষণ চুপ থেকে যায়। কারণ হঠাৎ কারো স্পর্শে তিহার হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে উঠে। তিহা মনেমনে ভাবে আর কিছুক্ষণ চুপ থাকলে হয়তো এমপি সাহেবের কানে আমার হৃদপিণ্ডের আওয়াজ চলে যাবে। তাই কোনো কিছু না ভেবে বলে কোনো সমস্যা নাইতো। ”

” শাফখাত যেনো এই কথাটিতে পেয়ে বসলো! তাহলে হাতটা সরিয়ে নিলে ক্যান? আমিতো তোমাকে ভালোবাসি। আজ থেকে আমরা বৈধ সম্পর্কের মধ্যে আছি। আমি তোমার হাতটা ধরতে পারিনা। তুমি এভাবে হাত ছাড়িয়ে অন্যত্র নিয়েছো আমার খুব কষ্ট লাগছে। ”

” তিহা শাফখাতের মনে কষ্ট লাগে এমনকিছুই করার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। এরপরে নিজে থেকে হাতটা শাফখাতের দিকে বাড়িয়ে দেয়।”

” শাফখাত খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। মনেমনে বলে যাক বউয়ের মন পেয়ে গেছি। শাফখাত বউয়ের হাতটা ধরে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটি হীরের আংটি বের করে পড়িয়ে দিলো। এরপরে সেই হাতে নিজের অধর মিলিয়ে দিলো। ”

” শাফখাতের অধরের ছোঁয়ায় তিহার শরীরে অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠলো। যা এরআগে কখনো হয়নি। তিহা ভয়ে গুটিয়ে যায়। শাফখাত তিহার কাছাকাছি এসে তিহার দুইহাত নিজের হাতের সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ করলো। এরপরে দুজনের অধর মিলেয়ে গেলো। ফুলসজ্জিত খাটে শরীর এলিয়ে দিলো। ডুব দিলো ভালোবাসার নতুন জগতে। ”

★★★

ফিরোজ সাদা শার্ট আর একটা সাদা প্যান্ট পড়ে প্রেয়সীর অপেক্ষায় বসে আছে খাটের এক জায়গায়। ফিরোজ অধৈর্য হয়ে উঠিলো। সেই যে, কখন গেলো প্রেয়সী এখনো তার রুমে আসার নাম নেই। মনেমনে ফিরোজের মনে ভালোবাসার অনুভূতি বেড়েই যাচ্ছিলো। প্রায় আধাঘন্টা পার হয়ে গেলো তবুও প্রেয়সীর অস্তিত্ব পাচ্ছে না রুমে। ফিরোজ এবার ফিহাকে ডাক দিলো প্রেয়সী তুমি বের হ হ হবে __

” ফিহা একটা ডার্ক কালারের শাড়ি পড়ে বের হয় বাথরুম থেকে। দুহাতে বিয়ের সেই ভারী লেহেঙ্গা আর জুলেয়ার্স দিয়ে ভর্তি। ফিরোজ দ্রুত ছুটে যেয়ে হাতথেকে ভারী লেহেঙ্গাটি নিয়ে আলমারিতে রাখলো। ফিহা জুয়েলার্সগুলি আলমারিতে রাখলো। ”

” ফিরোজ আড়চোখে ফিহার দিকে আবার নজর দেয়। এরপরে বলে তোমাকে অসম্ভব মায়াবিনী লাগছে। তোমার এই মায়াবী রুপ শৈশবেই চিনে নিয়েছিলাম। এই মায়াবী রুপেই আমাকে বাধিছো তোমার সনে।”

” ফিহা ফিরোজকে দেখে কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলছে। কারন এমনিতেও সে ধলাবিলাই সাদা পোশাকে আস্ত বিড়ালছানা মনে হচ্ছিলো ফিহার কাছে। মনেমনে বলে চুলগুলো সাদা হলে পারফেক্ট ধলাবিলাই হতো একটা। এরপরে ফিরোজের বুকের দিকে নজর পড়তেই লজ্জায় পড়ে যায়। মনে মনে বলে কি অদ্ভুত লোকরে ভাই শার্টের একটা বাটন এভাবে কেউ খোলা রাখে। আমার লজ্জা পাচ্ছে এই কথা একবারো ভাববে না । বুকের লোমশ পশমগুলো অনেকটা বেড়িয়ে আছে। তা দেখে ফিহা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ”

” ফিরোজ সহসা ফিহাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে ফিহাকে যেয়ে জড়িয়ে ধরে। ফিহার কানের কাছে ফিরোজ তার গরম নিঃশ্বাস ফেলে । ”

ফিহার রক্ত শিরা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। হঠাৎ কারো উষ্ণ ছোয়াতে ফিহার এই অবস্থা হয়। ফিহার হৃদপিণ্ড ধুকধুক করা শুরু করলো। সহসা ফিরোজে এমনভাবে জড়িয়ে ধরবে তারজন্য প্রস্তুত ছিলোনা ফিহা। হঠাৎ ফিরোজের বুক শীতল কিছু পড়ার অনুভূত লাগলো। ফিহাকে ছেড়ে দিয়ে বুকের দিকে দেখলো। এরপরে প্রেয়সীর মুখমণ্ডল দেখে পকেটে থাকা রুমাল দিয়ে ঘামগুলো মুছে দিলো।

” থুতনীতে হাত দিয়ে বললো দমবন্ধ লাগছে? ”
” হ্যা। ”
” ছাদে যাবে। ”
” হুম। ”
” ফিরোজ দ্রুত ফিহাকে পাজাকোলে করে নিয়ে ছাঁদে আসলো। ফিহা এগুলা পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। মনেমনে বললো সখা এতখানি নিলর্জ্জ হলো কিভাবে? তার মাঝে কোনো সংকীর্ণতা নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা আমাদের আজকে বিয়ে হয়েছে। ”

” ফিরোজ ফিহাকে নামিয়ে দিয়ে বললো ওই দেখো চাঁদ। চাঁদটা কত ঝলমল করছে দেখোতো? ”

” ফিহা চাঁদের দিকে তাকালো।এরপরে বললো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার। চাঁদ কই থেকে আসবে সখা? ফিহা অনুভব করলো কারো অধরের শীতল অনুভূতি তার গালে মিলিয়ে গেছে। ”

” ফিরোজের এরুপ কর্মকান্ডে ফিহা একটু সড়ে দাড়ালো এরপরে বললো এসব কি সখা? বিয়ের প্রথম রাতেই এতোটা নিলর্জ্জাতামি কোনো জামাই বোধহয় তার স্ত্রীর সঙ্গে করেনা। আপনি আজকে যতটা করলেন। আমার অনুমতি ছাড়া জড়িয়ে ধরা, কোলে নেওয়া, এখন আবার ছ্যাহ। ”

” কি ছ্যাহ! এখনতো কিছুই শুরু করিনি? এই বলে ফিহার কোমড় জড়িয়ে ধরে বামহাত দ্বারা। কাছে এনে ফিহার অধরের সঙ্গে ফিরোজ অধর মিলিয়ে দেয়। ”

” ফিহার দমবন্ধ লাগছে। ফিরোজকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু লাভ হলোনা। কারণ ডানহাত দিয়ে হাত চেপে ধরেছে। মিনিট দুয়েক এভাবেই রহিল। ফিহাকে ছাড়ামাত্রই গলা শুকিয়ে যাওয়ার কথা বললো ফিরোজকে। ”

” ফিরোজ হেসে বললো আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো বৃষ্টি এলো বলে। ”

” আকাশ কালোমেঘ। অন্ধকারে কেউ কাউকে ভালোভাবে দেখিতে পারলো না। হঠাৎ করেই ছাদের বাতিটি জ্বলে উঠলো। ফিহা চারদিকে চোখ মেলালো তখন। কারণ এতক্ষণ অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারেনাই। দেখলো ছাদে একটি সিঙ্গেল খাট ফুল সজ্জিত করে সাজানো? ”

এসব কি? অ্যা অ্যা,,,

” ফিরোজ হাত দ্বারা মুখ চেপে ধরে বলে আজ থেকে কখনো আপনি নয়। আজ থেকে শুধুই তুমি বলে ডাকবে ঠিক আছে। ”

ফিহা হ্যা না কিছুই বলতে পারছে না। ফিরোজ হাতটা সরিয়ে বললো বলোতো আমাকে কি বলবে?

” ফিহা এসব অত্যাচার নিতে পারছিলো না। মনেমনে বলে এ আমি কাকে ভালোবাসিলাম বিয়ের রাতেই এতো রোমান্টিক অত্যাচার করে কেউ। ”

” ফিহাকে চুপ থাকতে দেখে ফিরোজ বলে কি জানি বলতে চাইছিলে বলো। তোমাকে চুপ থাকতে দেখলে ভালো লাগেনা। বিয়ের আগে কত চঞ্চল ছিলে। আজকে হঠাৎ এত শান্ত কেনো? ”

” ফিহা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে তুমি এখানে সিঙ্গেল খাট ফুল দ্বারা সাজিয়েছো ক্যান? রুমেও তো খাট সাজা তাহলে এইখানে এইটা সাজালো কে? ”

” ফিরোজ মুচকি হেঁসে বললো এইটা আমার প্ল্যান। আমাদের বিয়ের প্রথম রজনী, তোমার আমার বাসর এখানেই হবে। ”

” এসব কি অদ্ভুত কথা সখা? ”
” অদ্ভুত লাগলেও এটাই হবে প্রেয়সী। ”
” আর ছাঁদে যদি কেউ চলে আসে। ”
” আসবেনা। ”
” কিভাবে শিউর হচ্ছেন? ”
” আবার আপনি। দেখো ফিহা এভাবে আপনি আপনি করতে থাকলে তোমাকে কিন্তু ০৫ মিনিট আমার অধরের সঙ্গে তোমার অধর মিলিয়ে রাখতে হবে। ”

” ফিহা মনেমনে বলে ০২ মিনিটে দমবন্ধ অবস্থা। পাঁচ মিনিট রাখলে তো আপনার উষ্ণ অধরের গরম শ্বাসে আমি মারাই যাবো। ফিহা চুপ করে যায়। ”

” ফিহাকে চুপ থাকতে দেখে ফিরোজের মনে বিজয়ের হাসি। ফিহাকে খাটে নিয়ে বসায়। এরপরে ফিহার গলায় বিয়ের প্রথমরাতের উপহার হিসাবে একটি গোল্ডেনের চেইন পড়িয়ে দেয়। ফিহা চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো বসে থাকে। ”

” ফিরোজ ফিহাকে বলে, তুমি বিরক্ত হচ্ছো ফিহা। বিরক্ত হলে কিছু করার নাই। এরপরে থেকে আমার ভালোবাসা এভাবেই প্রকাশ হবে তোমার উপর। বিয়ে যেহেতু করেছো সবকিছু মেনে নিতে শিখো। ”

” ফিহাকে বক্ষে দুই বাহু দ্বারা আগলে নেয়। এরপরে ফিহার কপালে ফিরোজ অধর ছুইয়ে দেয়। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে একজনের খাটে দুজন শুইয়ে পড়ে। ফিরোজ ফিহাকে নিজের বক্ষে টেনে নিয়ে বলে ভালোবাসি তোমায় প্রেয়সী। আমার হৃদয় জুড়েই শুধু প্রেয়সীর আভাস। ”

কিছুক্ষণ দুজন একে অপরের বুকে লেপ্টে থাকে। একটুপর বৃষ্টি নামে। সেই বৃষ্টির সময় ফিরোজ ফিহাকে নিয়ে রুমে যেতে চাইলে ফিহা বলে বৃষ্টিতে ভিজবো।

” শেষরাতে বৃষ্টিতে একে অপরের সঙ্গে খেলা করতেছিলে। বৃষ্টিগুলো হাতের তালুতে মুষ্টিবদ্ধ করে একে অপরের মুখে ছিটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। একটা সময়ের পর হাফিয়ে যায়। খাটে যেয়ে ফিরোজের বক্ষে স্থান নেয় ফিহা। ফজরের দিকে বৃষ্টি কমে যায়। সিঙ্গেল খাটের ফুলগুলো ছাদে পড়ে ছড়িয়ে যায় ফিহা আর ফিরোজ নিজের রুমে চলে আসে। ”

★★★

শেষ রাত ভোর ভোর সময় ইমরান ঘুম থেকে জেগে উঠে। মোহনার মস্তক বক্ষ থেকে সরিয়ে দেয়। এরপরে ঘুমন্ত মোহনাকে আখি দ্বারা দেখতে লাগলো। ঘুমন্ত অবস্থায় মোহনাকে ছোট বাচ্চাদের ন্যায় নিষ্পাপ শিশু মনে হচ্ছিলো। ইমরান নিজের অধর মোহনার কপালে ছুইয়ে দেয়। মনে মনে বলে বান্ধবীদের বিয়েতে দুদিন থেকে খাটুনি করছে। এরজন্য এভাবে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ইমরান ফোনে টাইম দেখলো প্রায় চারটা বেজে যাচ্ছে। একটুপর ভোর সময় ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে। তাই ইমরান বিছানা ছেড়ে উঠছিলো।

” মোহনা ইমরানের হাত ধরে। ইমরান মস্তক ঘুড়িয়ে মোহনাকে দেখে। এরপরে মুচকি হাসি দিয়ে বলে বউ তুমি ঘুমাও নাই? ”

” মোহনা খাট থেকে আস্তে ধীরে উঠে। এরপরে খাটে হেলান দিয়ে বলে আমার কি তোমার বক্ষ ছাড়া চোখে ঘুম থাকে। তুমি যখনি আমার মস্তক সরাইছো তক্ষণি আমি চেতন হয়েছি। ”

” ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে বলে আমার এই বক্ষে কি খুঁজে পাও? বিয়ের পর থেকেই দেখছি এই বক্ষ একটুর জন্য মুন্ডুছাড়া রাখোনা। ”

” মোহনা আস্তে করে ইমরানের পেটের কাছে মাথা দিয়ে বলে,, এই স্থান আমার। সো এইটা কেনো হাতছাড়া করবো। তুমি আমার ভালোবাসার পরশপাথর। তুমি আমার জীবনে না আসলে আমার পৃথিবীটা বধির হয়ে যেতো। কি করতাম আমি অসুস্থ বাবা আর আম্মুকে নিয়ে কার দ্বারে যেতাম। ভাগ্যিস আল্লাহ তোমাকে আমার জীবনের দেবদূত হয়ে পাঠাইছিলো। ”

” ইমরান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, আবার একই কথা? তোমাকে না মানা করেছিলাম এসব কখনো বলবে না। তোমার বাবা আমার বাবা বলতে কিছুই না। বলবা আমাদের বাবা মা। ওদের কাছে পেয়েছি বলে ওদের দোয়াতে আজকে আমরা অনেক সুখী। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আমার ভাগ্যে এমন বউ রেখেছিলো। যে শুধুই আমাকে ভালোবাসে? ”

” মোহনা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে ঠিক আছে। ”

” ইমরান ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফেলে দুহাত দিয়ে আলতো করে মোহনার গালদুটি স্পর্শ করে। নিচু হয়ে মোহনার কপালে আবারো অধর ছুঁইয়ে দেয়। এরপরে মোহনাকে বলে বউ আজকে তিহা,ফিহা বাসর রাত উদযাপন করলো। তুৃমি করবে না? ”

” মোহনা দ্রুত ইমরানের থেকে মস্তক তুলে বলে আযান দিবে। এসব দুষ্টুমির কথা মাথাতেও আনিয়ো না। আমাদের প্রথম রাত অনেকদিন আগে কেটে গেছে। নতুন করে এসব মনে করার লাগবে না। ”

” ইমরান মোহনার কাছে দুহাত দিয়ে মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,, বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর কাছে প্রত্যেকটা রাত প্রথম রাত হওয়া উচিত। আজকে আর আমি কোনো কথা শুনবো না । ওরা আজ বিয়ে করছে বলে উদযাপন করবে। আর আমাদের বিয়ে সাড়ে তিনমাস আগে হয়েছে বলে উদযাপন করবো না। আর যাইহোক বউয়ের এই কথা মানতে পারবো না। ”

” মোহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এরপরে ইমরানকে আর কোনো বাধা দেয় না। দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য এক দেহতে দুটি প্রাণের মতো মিশে যায়। ”

★★★

ভোর পাঁচটা ডিলনাসিন ওই বাড়ি থেকে আসার পর দুচোখ মেলাতে পারে নাই। রাত পোহালেই এইচএসসির শেষ পরীক্ষা। পরীক্ষাতে নতুন করে কোনো টেনশন নাই। লিটুকে কাছে পাওয়ার তীব্র আখাংকাতে রাতে দুচোখের পাতা এক করতে পারে নাই। পুরো রাত লিটুর ছবি দেখে এক তরফা ভালোবাসার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ছটফট করছিলো ডিলনাসিন। সেইযে, বিয়ে করে পাকিস্তান সফরে গেলো লিটু আর কোনো খবর পেলো না ডিলনাসিন। বাড়িতে শশুড় শাশুড়ীর সঙ্গে কথা বললেও ডিলকে কখনো চাহে না। বাড়ি আসার কথা জিজ্ঞেস করলে ফোন কেটে দেয় লিটু। অনিশ্চিত সম্পর্ক আর কতদিন বয়ে বেড়াবে ডিলনাসিন। তাই ডিলনাসিন ঠিক করছে লিটু দেশে ফিরলেই সে লিটুকে মুক্তি করে দিবে। জোড় করে আর যাইহোক সংসার, ও ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়না।

” অযু করে ভোরের নামাজ শেষ করে ডিলনাসিন। নামাজ শেষে মোনাজাতে লিটুর জন্য চোখের পানি ফেলে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে জানায়। হে আল্লাহ আপনি তাকে সুবুদ্ধি দেন ঘরের ছেলেকে সুস্থভাবে ঘরে ফিরিয়া দেন। সে এই সম্পর্কে থাকতে চাহেনা। আমাকে এ সম্পর্ক থেকে বেড়ানোর তৌফিক দান করো। এই জীবনে তারে নিজের করে না পেলে, আমার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষের ছায়াও দেখিতে চাইনা। আমাকে বোঝার তৌফিক দান করুন আমিন। ”

” নামাজ শেষে জায়নামাজ উঠিয়ে পবিত্র জায়গায় রাখে। তসবি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে। মুখে পানিতে ভিজানো ছোলাবুট মুখে দিয়ে চিবানোর পর পানি খায়। এরপরে টেবিলে বইটা নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য পড়তে বসে।

চলবে,,,