মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-৩২+৩৩

0
225

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে

®️ রিয়া জান্নাত

| পর্বঃ- ৩২ |

কানাডা পৌঁছে আমাদের ভূলে যাসনা। প্রতিদিন সময় করে আমাদের কল করবি। ভাইয়া ও নিজের যত্ন নিবি। পরিবারের সবার খেয়াল রাখিস মোহনা।

” মোহনা দুই বান্ধবী ফিহা ও তিহাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। ”

তিহা ফিহা মোহনাকে বক্ষের মাঝখান থেকে আলগা করে দুজনেই বলে,,,

” কাঁদছিস ক্যান রে মোহনা? ভাইয়া তোর দরকারেই কানাডা যাচ্ছে। এখানকার ডক্টর আঙ্কেলকে সুস্থ করতে পারবেনা। তুই চাসনা আঙ্কেল আবার আগের মতো সুস্থ জীবনে ফিরুক। তোদের সঙ্গে কথা বলুক। ”

” মোহনা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। ”

এমন সময় ইমরান মোহনার বান্ধবীদের বলে,, কথা বলা হয়েছে তোমাদের। ফ্লাইট ছাড়ার টাইম হচ্ছে। আর আমরা দ্রুত ফিরে আসবো এই ধরো ৬ মাস। আমাদের জন্য দোয়া করিও বান্ধবীরা মোহনার বাবা যাতে সুস্থ জীবনে ফিরে। শাশুড়ি আর আম্মাকেও সঙ্গে করে নিচ্ছি। ওদের বাংলাদেশে রেখে টেনশন করতে পারবো না।

” মোহনা আবারো ফিহা তিহাকে একসঙ্গে জড়িয়ে ধরে। তিহা বলে পাগলী আল্লাহর নাম নিয়ে উড়াল দে। ০৬ টা মাসের তো ব্যাপার। বাংলাদেশে এসে কিন্তু ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিতে হবে। তাই ওখানে যেয়ে পড়াশোনা টাও কন্টিনিয়ো করিস ”

” ইমরান বলে আসছি সময় নাই। আমাদের জন্য দোয়া করিও। আল্লাহ হাফেজ। ”

” ফিহা বলে বেষ্ট অফ লাখ। ”

” তিহা বলে আল্লাহ হাফেজ। ”

ইমরান মোহনার হাত ধরে ফ্লাইটের দিকে যায়। মোহনা পিছন ফিরে শুধু ফিহা তিহাকে দেখে। ফিহা ও তিহা আর এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। কারণ মোহনা খুবই কাঁদতেছে। ফিহা ও তিহা দুজনের হাত ধরে এয়ারপোর্টের বাইরে চলে আসে।

যাত্রীদের নির্দেশনা দিয়ে ফ্লাইট উড়ে চলে কানাডার উদ্দেশ্যে।

★★★

সন্ধ্যাবেলা লিটন সরকার তাদের বিয়েতে উঠানো সেই ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে। ডিলনাসিনকে একদম বাচ্চা লাগছেনা এখানে? ডিলনাসিনের পরিবর্তন লিটন পাকিস্তান থেকে ফেরার পর, তিনদিনেই একটু একটু করে বুঝতে পেরেছিলো। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসলো যখন নিজ বাড়িতে নিজের ঘরকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলো না এইটা তার নিজস্ব রুম ছিলো? কারণ রুমটা যেমন অগোছালো ছিলো। আসার পর থেকে পরিপাটি পেয়েছিলো। ডিল এক সপ্তাহ এই রুমে না থাকাতে আবার আগের এলোমেলো হয়ে গেছে সব। রুমের প্রতিটি কোনায় ও ওয়ালে ডিলনাসিনের ব্যবহার করা পারফিউমের গন্ধ টা কেমন জানি উবে যাচ্ছে দিনদিন। বিয়ের সেই কাপল ফ্রেমটা হাতে নিয়ে নিখুঁত ভাবে দেখলো আজ। আসলেই ডিলনাসিন অনেক বড় হয়ে গেছে। বাচ্চামি স্বভাব গুলো একদম নেই তার মাঝে। পাকিস্তান থেকে ফিরে প্রথম তিনদিনেই একথা বুঝে গেছিলো। পুরো সরকার বাড়ি ফাঁকা শুধুমাত্র আমার কারণে। লিটু মনে মনে স্থির করলো যে মেয়ে আমার বাবা মায়ের সুখের কারণ, যার কারণে বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবা _ মা চলে গেছে। তাদের ভালো রাখার জন্য এবং ঘরে নিয়ে আসার জন্য ডিলকে তার এই বাড়িতে আনা বড্ডো প্রয়োজন। কারণ ডিল বাড়িতে আসলে সরকার বাড়ি পূর্ণতা পাবে।

লিটন সরকার সাদা পাঞ্জাবি পড়লো। বিকালে বাজার থেকে আনা একগুচ্ছ লালটুকে গোলাপ কিনেছিলো সেই গোলাপগুলো হাতে নিয়ে খান বাড়ির দিকে রওনা হলো।

★★★

সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপি সাহেব আজকে বাসায় ফিরে। কারণ এই এক সপ্তাহ পুরো ব্যস্ত সময় পার করছিলো। সেই যে সকালে বেড়াতো বাড়ি থেকে ফিরতো রাত বারোটা, দুইটা নাগাদ।রুমে এসে দেখতে পেতো তিহা ঘুমিয়ে পড়ছে। তিহার সঙ্গে সেরকম ভাবে সময় কাটাতে পারেনাই। তাই তিহা কিছুটা রাগ করে ছিলো এমপি সাহেবের উপর। এমপি সাহেব বউয়ের অভিমান ভাঙানোর জন্যই আজ কাজ ফেলে বাসায় দ্রুত ফিরলো।

” কিন্তু রুমের কোনো জায়গায় তিহাকে না পেয়ে খুজতে থাকে। করিডোরে পারিজাতকে দেখে বলে তোর ভাবীকে দেখেছিস? ”

” হুম ভাইয়া ভাবী কিচেন রুমে রান্না না কিজানি করতেছে। ”

” পারিজাতের কথা শুনে এমপি সাহেব কিচেনে ঢুকে। এসে দেখতে পায় কিচেনে রাতের খাবার তৈরি করছে তার বড়আম্মু, মা ও ছোটআম্মু সহ। পাশে দাঁড়িয়ে গাজর কাটছে তিহা। ”

” শাফখাতের কিচেনে প্রবেশ দেখে মায়া খান বলে,, সূর্য আজ কোন দেখে উঠছিলো মেঝ? ”

শাফখাত বলে আসলেই বড়আম্মু আমার দরকারি একটা ফাইল খুঁজে পাচ্ছিনা। তিহাকে রাখতে দিয়েছিলাম ও যে কোথায় রাখছে ওটা ? এরজন্য এইখানে আশা।

” মায়া খান, জেবার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে চোখ দিয়ে জেবাকে ইশারা করে তিহাকে রুমে যেতে বল মেঝ? ”

” জেবা খান মায়া খানের ইশারা বুঝতে পেরে তিহাকে বলে বউমা শাফখাত কি বললো শুনতে পাও নাই? যাও রুমে যেয়ে শাফখাতকে ফাইল বের করে দাও। তোমাকে আর কিচেনে আসতে হবেনা। আমি ছোট বড় আফা সবটা করে নিবো যাও? ”

” তিহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে মনেমনে বলে এমপি সাহেব কিসের ফাইল আমাকে রাখতে দিয়েছে। আমারতো এমন কথা মনে পড়ছে না। শাফখাত তিহার দিকে নেশালো চোখে তাকায়। করুন ভাবে বুঝায় রুমে আসো। ”

তিহা শাফখাতের চাহনি বুঝতে পেরে মনেমনে বলে এইটা তাহলে আমাকে রুমে নিয়ে যাওয়ার বাহানা। মনের মাঝে হাসি ফুটে উঠে। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে এমপি সাহেবের বউয়ের জন্য সময় বেরালো তাহলে। হাতটা ধুয়ে এমপি সাহেবের পিছনে পিছনে রুমে আসলো।

” তিন জা কিচেনে কি যেনো একটা কথা মনে করে একসঙ্গে অট্রহাসি দিলো। ”

★★★

ফিহা রুমে পড়ছিলো। ফিরোজ ল্যাপটপে কাজ করতেছিলো। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়? আইপিসের লাইন ফিরোজের রুমে নষ্ট থাকাতে রুমের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছড়িয়ে পড়লো। ফিহা ভয় পেয়ে গেলো দৌড়ে যেয়ে ফিরোজের স্কন্ধে দুহাত রেখে বলে ভয় করছে সখা?

” ফিরোজ ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দাড়ালো। এরপরে ফিহাকে জড়িয়ে ধরে বললো কি হয়েছে প্রেয়সী। কিসের ভয় তোমার মধ্যে বিরাজমান আমাকে জানতে হচ্ছে। ”

” আমার অন্ধকারে ভয় করে সখা। তোমাকে গতকাল বলেছিলাম আমাদের রুমের আইপিএস লাইনটা বোধহয় কেটে গেছে। তুমি এখনো ঠিক করাও নাই? ভূতের মতো অন্ধকার কালোকুটকুটে ছায়া নেমে গেছে। ”

” তো কি হয়েছে? আমি আছি না। আমি থাকতেও তোমার ভয় করে একবার ভাবতো আমি যদি এই পৃথিবী থেকে চলে যাই। তোমাকে সাহস দিবে কে? বুকে সাহস রাখো প্রেয়সী? ”

” ফিহা ফিরোজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এরপরে বলে,, এই অন্ধকার রুমে তোমার মুখ থেকে অলক্ষুণে কথাগুলো না বেড়ালেই নয়। তোমার কিছু হবেনা। আমার দেহ যতদিন শ্বাস চলবে তোমার দেহতেও চলবে। তুমি ছাড়া আমি এই অন্ধকার রুমের মতো। আমার জীবনজুড়ে শুধুই তুমি সখা। তুমি ছাড়া আমি অপূর্ণতা। ”

” ফিরোজ আর ভারী ভারী কথা না বলে ফিহাকে দুই বাহু দ্বারা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ললাটে অধর ছুয়ে দেয়। ”

” ফিহা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফিরোজের কোমল স্পর্শ শরীরে এক প্রকার ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। ”

হুট করেই বিদ্যুৎ চলে আসে। রুমের চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে ফিরোজ ফিহাকে বুকের বাহু থেকে মুক্ত করে বলে আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত বানাতে পারবে।

” ফিহা মাথা দিয়ে উহুম বলে। ”

” তাহলে লেবুর রস , গুড় দিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত বানিয়ে আনোতো। মাথাটা খুব ধরেছে। ”

” ফিরোজের এমন কথায় ফিহা বলে মাথা টিপে দিবো? ”
” ফিরোজ মুচকি হেসে বলে না। ”
” কিন্তু শরবত খেয়ে তো মাথাধরা কমবে না? কফি বা চা আনবো সঙ্গে করে? ”
” তোমার যেইটা মন চায় করে নিয়ে আসো। বিকাল থেকেই মাথাটা ধরেছে। ভার্সিটি থেকে ফেরার পর। ”

” ফিহা আর কোনো কথা না বলে ফ্রিজ থেকে লেবু বের করলো। এরপরে কিচেনে যেয়ে কফি ও শরবত বানিয়ে ট্রেতে করে ফিরোজের কাছে যেতে লাগলো। ”

” মায়া খান এসব দেখে বলে আহারে মেঝ ছেলেগুলো বউ পেয়ে আমাদের ভূলেই গেছে। এখন সব দায়িত্ব বউগুলোই নিয়ে নিছে রে। ফাতেমা খান এই কথা শুনেও না শোনার ভান করলো? ”

ফিহা ড্রয়িং রুম দিয়ে উপরে যেতেই পিছন থেকে একজন ডাক দিয়ে বলে শুনুন।

” ফিহা পিছন ফিরে চায়। দেখতে পায় লিটন সরকার ডাকছে তাকে। ফিহা মুখটা মলিন করে ফেলে লিটনকে দেখে। ”

” লিটন তার ক্রাসকে দেখে সহসা চুপ করে যায়। মাথা নিচু করে বলে ভাবী ডিলনাসিন কোথায়? ”

” ফিহার মুখে মলিনতা কেটে যায়। হেঁসে হেঁসে বলে রুমে না পেলে ছাঁদে গেলেই ডিলকে পাবেন মিস্টার লিটন সরকার। ”

” লিটন আর কিছু না বলে সহসা ফিহাকে অতিক্রম করে উপড়ে উঠে। কারণ লিটন শাফখাতের বন্ধু হওয়ার দরুণ এই বাড়িতে যাতাযাতের মাধ্যমে সব জায়গা চিনে। ফিহার সামনে দাড়াতেও কুণ্ঠাবোধ লাগার কারণে দ্রুত চলে গেলো। ”

” ফিহা ধীরপায়ে উপরে উঠে, মনে মনে বলে তাহলে ডিলনাসিনকে লিটন ভালোই বেসে ফেলছে। কারণ ভালো না বাসলে তো হাতভর্তি টকটকে গোলাপ নিয়ে আসতো না। আল্লাহ সকলের দুরত্বের অবসান ঘটাক! ”

” ফিহা ভিতরে ঢুকে দেখে ফিরোজ আবার ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসেছে । তা দেখে ফিহা বিরক্তভাব মুখে এনে বলে,,

” এইতো আপনার লেবু দেওয়া ঠান্ডা শরবত। আর এক মগ কফি। ”

” ফিরোজ ফিহার দিকে না তাকিয়ে বলে এইখানে রাখো পরে খাচ্ছি। ”

” ফিহা আর কিছু না বলে কফি, শরবত টেবিলে রেখে পড়তে বসলো৷ ”

★★★

ডিলনাসিনকে রুমে না গোলাপ গুলো রুমে রেখে,, ছাঁদে চলে আসে লিটন সরকার। হঠাৎ ছাঁদে লিটনের উপস্থিত পেয়ে ডিলনাসিন চোখ আঙুল দিয়ে কচলাতে থাকে। পারিজাতকে বলে এই পারি আমি কি ঠিক দেখছি? এইখানে কি সত্যি লিটন সরকার এসেছেন?

” পারিজাত মুচকি হেসে বলে হ্যা এসেছে। তোরা ইনজয় কর আমি আসি। ”

” ডিলনাসিন পারিজাতের পিছনে পিছনে হাঁটতে থাকে। লিটন পেছন থেকে ডিলের হাত শক্ত করে ধরে একটানে বুকের কাছে নিয়ে আসে।”

” লিটনের বক্ষে নিজের মস্তক মিলিয়ে দিয়ে বলে আজ সূর্য কোনদিক উঠেছে? আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেললেন এটা কিন্তু বেশি হয়ে গেলো লিটু সরকার? ”

” বেশির কি আছে ডিল সরকার? আপনিতো আমার বউ। আপনাকে জড়িয়ে ধরার জন্য কোনো কারণ বেশি মনে হয়না? ”

লিটুর মুখে বউ ডাক শুনে মূহুর্তের মধ্যে মিইয়ে গেলো লিটুর বক্ষে। এবং চোখ দিয়ে অশ্রুজ্বল পড়তে থাকে। লিটু অনুভব করলো তার বক্ষে শীতল কিছু টপটপ করে পড়ছে। লিটু ডিলকে বক্ষে থেকে আলগা করে দুহাত দিয়ে ডিলের গাল দুখানি ধরলো। এরপরে ডিলকে বললো আমার পিচ্চি বউ অশ্রু নিপাত করছেন কেনো? আমি এখানে এসে কি আপনার কোমল হৃদয়ে আঘাত করে বসলাম।

ডিলনাসিন কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কারণ ডিলের এই অশ্রুজ্বল আনন্দের। সাড়ে চারমাস পড় স্বামীর মুখে বউ ডাক শুনতে পেরে নিজের হৃদয় কে সংবরণ করতে পারছে না। ডিলনাসিনের চোখ দিয়ে ক্রমাগত অশ্রু পড়ছে।

” কি হলো বউ আপনি এভাবেই কাঁদবেন। আগের মতো বলবেন না আমাকে আপনি ভালোবাসেন কি না? ”

” ডিলনাসিন তপ্তশ্বাস ছেড়ে লিটুর চক্ষুতে চোখ রেখে বলে,, আমি একাই আর কত ভালোবাসবো লিটু সরকারকে? লিটু সরকারতো আমাকে ভালোবাসেনা। আমাকে পিচ্চিমেয়ে মনে করে সে? তার হৃদয়ে আমি কি জায়গা পাবো কখনো ও। ”

” ভালো না বেসে উপায় আছে পিচ্চিবউ। স্বামীর উপর অভিমান থেকে ঘর ছাড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার বাবা-মা কেউ নিয়ে আসলেন। পিচ্চিবউয়ের এতো অসীম ক্ষমতা জন্মিয়েছে আমার অনুপস্থিতে জানতেই পারলাম না। পিচ্চিবউ আমার বাবা-মা কে বশীকরণ করলে কিভাবে? ”

” ডিলনাসিনের মন খারাপ হয়ে যায় এই কথা শুনে। মনেমনে বলে আমি তাদের নিয়ে আসিনি লিটু। ওরা আসলে আমি কি করবো? তবে ওরা এসে ভালোই করেছে। নাহলে আপনার মুখে বউ ডাকটা শুনতাম কি করে? ”

” কি হলো পিচ্চিবউ মন খারাপ করলেন কেনো? আমি আগের মতো ডিলনাসিন কে চাই। সে আবার আমাকে বলুক ভালোবাসি আপনাকে। যদি তা না বলেন তাহলে আমি কিন্তু কিন্তু,,,”

” হঠাৎ ডিলনাসিন লিটুকে বলে উঠে কি করবেন আপনি? ”

” লিটু ডিলনাসিনের জবান বন্ধ রাখাতে ডিলের অধরে নিজের অধর ছুঁইয়ে দেয়। ”

” কয়েক মিনিট পর লিটু ডিলনাসিনকে ছেড়ে দেয় । ডিলনাসিন অধরে হাত দিয়ে বলে এতো জোড়ে কেউ দন্ত দ্বারা আঘাত করে। দেখেন তো লাল করে দিয়েছেন সম্ভবত! ”

” লিটু মুচকি হেসে বলে পিচ্চিবউ আগের মতো ভালোবাসি না বললে আবারো এরকম করবো আপনার সঙ্গে! ”

” হঠাৎ ডিলনাসিন লিটুর এতো পরিবর্তন দেখে ঘামতে থাকে। মনে মনে বলে লোকটা ঠিক আছে তো? নাকি লোকটাকে জ্বীনে আচড় করলো? সে আমার অধর ছুঁইলো এটা কি সত্যি নাকি তার জ্বীন এসব করলো?

এমন সময় পারিজাত ছাঁদে উঠে হালকা কেশে বললো। এই রোমান্টিক কাপল ভালোবাসা শেষ হলে খেতে আসুন। বাড়ির সবাই নতুন জামাইয়ের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে।

” লিটু পারিজাতকে বললো কি বলছো পারি বাড়ির সবাই জেনে গেছে আমি এই বাড়িতে আসছি? ”

” পারিজাত রসিকতার স্বরে বলে,, বাহ লিটু ভাইয়ার এতো উন্নতি কবে থেকে হলো? চুপি চুপি এসে বউকে ভালোবাসবেন। বাড়ির লোক জেনে গেলে ধরা পড়ার অভিনয়? হায়রে ড্রামাবাজ। ”

” লিটু পারিজাতের এই কথা শুনে হালকা কেশে উঠে। লজ্জাজনক হাসি দিয়ে বলে চলো পিচ্চিবউ নিচে চলো? ”

চলবে,,,

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে

®️রিয়া জান্নাত

| পর্বঃ- ৩৩ (প্রথমাংশ) |

সবাই ডাইনিং এ বসে আছে। খাবার পরিবেশন করছে ফাতেমা,মায়া ও জেবা খান। মায়া খানের মনে আজ আনন্দে বিরাজ করছে। ফাইনালি তার মেয়ের জামাই মেয়ের পাশে বসে খাচ্ছে। খুব যত্নের সহিত লিটুকে খাবারগুলো দিচ্ছে মায়া খান। জামাইয়ের কাছ থেকে একটু নড়েচড়েও না। বাকিদের দিকটা ফাতেমা ও জেবা খান দেখছে।

বাড়ির সবাই বেশ অবাক। খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে লিটনের দিকে তাকিয়ে আছে। লিটন বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো। কিছুতেই সবার দৃষ্টি সরিয়ে খাবার খেতে পারছেনা।

এমপি সাহেব বলে কিরে লিটন তুই কখন এলি? আগে তো আমার বাড়ি আসার আগে আমাকে নক করে আসতি? আজ হঠাৎ নক না করেই চলে এলি?

এমপি সাহেবের এই প্রশ্ন মোটেও বাড়ির লোক ভালো ভাবে নিলো না? ফিরোজ কথাটির অর্থ বেশিদূর গড়াতে না দিয়ে বললো শাফখাত তোর মাথা খারাপ হয়েছে? লিটন সরকার এখন বাড়ির জামাই এই বাড়িতে আসতে হলো কাউকে নক দেওয়ার দরকার আছে নাকি?

লিটু আর কিছুই খেতে পারলো না। লজ্জায় খাবারে পানি ঢেলে হাতটা ধুয়ে ফেললো? তা দেখে মায়া খান বললো ও কি করলে জামাই খাবার টা না খেয়েই পানি ঢেলে দিলে? খাবার ভালো হয় নাই জামাই? এই ফাতেমা মুরগীর বাটিটা আর সাদা ভাত আনতো।

” লিটু রুমাল দিয়ে মুখ হাত মুছে বললো মা আমি খেতে পারবো না আজকে। আমার পেট ভরা। এই কথা বলে হনহনে ডিলনাসিনের রুমের দিকে গেলো লিটন? ”

” মায়া খান রেগে যেয়ে শাফখাতকে বললো তুমি খাচ্ছিলে চুপচাপ খাওয়া বাদ দিয়ে লিটনকে এভাবে প্রশ্ন করার কি দরকার? ”

” লিটুর বাবা বলে, আরে বিয়াইন শুধু জামাইকে খাওয়ালে হবে। আমাদের পরিবেশন করুন। লিটুকে নিয়ে ভাববেন না আমাদের ছেলে তো লজ্জায় পড়ে গেছিলো। ছোটথেকেই ছেলেটার লজ্জা মুখয়বে বিরাজমান । ”

” মায়া খান আর কিছু বলে না । লিটুর বাবা, লিটুর আম্মাকে দুই পিস গরুর মাংস দিয়ে বললো,, ধন্যবাদ বিয়াই, বিয়াইন আপনাদের জন্যই জামাই আজ এই বাড়িতে আসলো। আমার মনে হচ্ছে জামাই সবকিছু এবার ঠিক করে নিবে? ”

” লিটুর মা বলে সবকিছু ঠিকঠাক করার জন্য বাড়ি থেকে দূরে আছি আমরা। আমাদের ঘরের লক্ষীকে বাড়িছাড়া করতে পারিনা। আর বিয়েটা মেনে নিয়েছে বলে আপনাকে একটু আগে মা বলেছে। হয়তো আপনি তাড়াহুড়োয় খেয়াল করেন নাই বিষয়টা। ”

” মায়া খান মনে মনে বললো অবশেষে আমার মেয়ের সুন্দর একটা সংসার হবে। ”

সিয়াম খান, ফাহিম খানকে বলে ভাইয়া বাবা মা বেশ কয়েকদিন হলো গ্রামের বাড়ি গেছে। এমনিতেও বাবা রুগ্ন লোক। এতদিন বাইরে থাকা ঠিক না। তুমিতো এখন বাসায় থাকো আগামীকাল বাবাকে নিয়ে আসলে হয়না?

” ফাহিম খান সিয়ামকে বলে আমার শরীর টা ভালো নারে? ফুয়াদ বা তুই যেয়ে নিয়ে আয়। ”

” আমি পারলে কি তোমাকে বলতাম? আগামীকাল ৫ লক্ষ্য মালের শিপমেন্ট আছে। আমাকে কারখানায় থাকতে হবে? ফুয়াদ তুই পারবি? ”

” না সিয়াম ভাইয়া আমি পারবো না? আমার অফিসে অনেক কাজ জমে গেছে। অফিস মিস করা যাবেনা।”

” ফিরোজ বলে আচ্ছা আমি দাদু দাদিকে নিয়ে আসবো? শাফখাত তুই আগামীকাল ভার্সিটিতে তিহা ও ফিহাকে ড্রপ করে দিয়ে আসিস তো? ”

” ফিহা বলে আগামীকাল তো আপনার ক্লাস আছে? তাহলে আপনি ক্লাস না করিয়ে কিভাবে যাবেন গ্রামের বাড়িতে? ”

” আমি তিনদিনের জন্য ছুটি রাখছি ফিহা। তাছাড়াও দাদু দাদিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা একটা কর্তব্যর মধ্যে পড়ে। ”

ফিহা চুপ করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। তিহা বেশকিছুক্ষণ যাবত ডিলের দিকে নজর রেখেছিলো বাড়তি কথা চলাকালীন। ডিল শুধু খাবার নাড়াচাড়া করছিলো কিন্তু খাচ্ছেছিলো না। ”

তিহা বলে উঠে,,

” ডিলনাসিন খেতে ইচ্ছে করছেনা? খেতে ইচ্ছে না করলে হাতটা ধুয়ে উপড়ে যাও। লিটন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ”

তিহার কথায় সবার হুশ এলো। মায়া খান ডিলনাসিন কে বললো মাথামোটা মেয়ে তোর ঘটে বুদ্ধি হবে কবে? জামাই কখন উপড়ে গেছে। তুই এখনো এখানে বসে আছিস?

” ডিলনাসিন আর কারো কথা গায়ে না মেখে দ্রুত হাতটা ধুয়ে উপড়ে চলে যায়।”

ডাইনিং এ থাকা সকলে অট্রহাসি দেয়। কি যেনো মনে করে? লিটুর বাবা _ মা বলে আমাদের খাওয়া শেষ। তবে আমরা উঠি।

ফাতেমা খান পানিটা এগিয়ে দিলো। জেবা খান তোয়ালে এগিয়ে দিলো। লিটুর বাবা মা হাতটা মুছে বললো। অবশেষে সকল চিন্তা দূর হলো বিয়াই বিয়াইন। খুশিতে চোখে ঘুম বিরাজ করছে। আমি চললাম ঘুমাতে। লিটুর বাবাও পিছন পিছন যায়।

একে একে সিয়াম,ফুয়াদ, ফাহিম খাওয়া শেষ করে ডাইনিং ছেড়ে নিজ রুমে গেলো? পারিজাত এসব বিষয়ের মধ্যে আজকে নিজেকে ইয়াতীম মনে করলো? মনে মনে বলে সে কবে আমার হবে? কতদিন আর তার ছবি দেখে ছোয়ার স্বাদ নিবো? আমারতো ইচ্ছে হয় এমন সংসার করতে।

ফাতেমা,জেবা,মায়া সবার প্লেটগুলি একত্রে করে কিচেনে নিয়ে গেলো?

শাফখাত তিহার হাত ধরে ফিরোজ ফিহার হাত ধরে উপড়ে উঠলো। মায়া খান বললো ছোটরা আজ অনেকদিন পর খান বাড়িতে আগের মতো আমেজ পেলাম। চল আমরাও কিছু খেয়ে নিই এই আনন্দে।

★★★

রাত সাড়ে এগারোটা বাজতে চললো। ডিলনাসিন ডাইনিং থেকে উঠার পর সোজা স্টাডি রুমে এসেছিলো। ভিতরের সব অস্থিরতা ডায়েরিতে লিখে ফেললো। এরপরে পারিজাতের রুমে যেয়ে লিটুর জন্য সুন্দর ভাবে সেজে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

এসব অবস্থা দেখে পারিজাত ফোনের মধ্যে কারো ছবি বের করে দেখলো। এরপরে ছবিটির সঙ্গে কথা বলা শুরু করলো? শেষে ছবিটিকে বললো আমি এভাবে বউ সাজবো আপনার জন্য? আপনি প্রস্তুত আছেন তো?

” অনেকক্ষণ যাবত লিটু ডিলের অপেক্ষায় বসে আছে। কিন্তু ডিল এখনো রুমে আসলো না। কিছুক্ষণ পরপর বিছানা থেকে উঠে চত্বুরদিক পায়চারি করে আবার বিছানায় বসে। এভাবে ০৬ বার পায়চারি করার পর ঘড়িতে টাইম দেখলো। টাইম দেখে লিটুর চোখ ললাটে উঠলো। মনেমনে বললো ডিলনাসিন কোথায়? তুমি কি আদৌও আসবে আমার কাছে? না এভাবে তার অপেক্ষায় থাকতে পারছিনা। নিচে যেয়ে ডেকে নিয়ে আসবো। যেই ভাবনা সেই কাজ, রুমের দরজা খুলে সামনে পা ফেলতেই দেখতে পায় ডিলনাসিন তার সামনে দাড়িয়ে আছে?

” ডিলনাসিনকে একবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সমস্ত রুপের দিকে মোহের দৃষ্টিতে তাকায় লিটু। এরপরে বলে শাড়ি কখন পড়লেন? ”

” এইতো কিছুক্ষণ আগে? ক্যান শাড়িটা আমাকে মানাচ্ছে না? ”

” লিটু ডিলনাসিনের হাত টেনে রুমে আনলো। এরপরে দরজার সিটকানি লাগিয়ে দিলো । ডিলের দিকে এগেতো থাকলো নেশার চোখে। ”

” ডিলনাসিনের মধ্যে ভীতি কাজ করা শুরু করলো। গলা শুকিয়ে গেলো ভয়ে। লিটুর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে আমার গলা শুকিয়ে গেছে লিটু আমি পানি খাবো! ”

” ডিলের কথাটি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে ডিলের কোমড় একহাতের বাহু দ্বারা আচ্ছাদিত করে ধরলো লিটু। ডিলের পুরো শরীরে অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠলো। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ ভয়ে দাড়িয়ে গেলো। লিটুর স্পর্শে ডিলের শরীরের হৃদপিণ্ডের গতি অসারতা হলো। খুব শক্ত করে ডিলকে চেপে ধরলো লিটু। নিজের শরীরে সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে শক্ত করে ধরে ডিলের অধরে লিটু নিজের অধর মিলেয়ে দিলো। ”

” ঠোঁটের প্রতি এহন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ডিলনাসিন লিটুকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এরপরে নিজের ঠোঁট হাতের তালু দ্বারা ঢেকে লিটুকে বলে আপনি ঠিক আছেন তো? নাকি কোনো লাল পানি খেয়েছেন ? ”

” লিটুর মনের লজ্জা প্রকাশ পায়। মাথা নিচু করে বলে আসলে ডিল আপনি শাড়িটা যেভাবে পড়ে এসেছিলেন তাতে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনাই। আপনার চর্বিযুক্ত পেটের ওই গোলাকার জায়গাটা আমার মধ্যে নেশার সৃষ্টি করেছিলো? ”

” লিটুর কথা শুনে ডিলনাসিন মুচকি মুচকি হাসি দেয়? এরপরে বলে এতদিনে নজর পড়লো আপনার? ”

” লিটু মাথা নিচু করে বলে ভূল করেছি। ”

” আমি ছোটমেয়ে তাইনা, আমাকে ভালোবাসা যায়না? ”

” এটাও ভূল। আসলে এতদিন সেইভাবে আপনার দিকে তাকাই নাই? ”

” আমি ভালোবাসি বললে এমপি সাহেবের ভয় দেখাতেন। আর দেখাবেন না? ”

” আমার ভূল হয়েছে। ”

” ছ্যাচড়ার মতো আপনাকে বিয়ে করেছি। আপনার সব অবহেলা মুখ বুঝে সহ্য করেছি। বিয়ের পর আপনার অপেক্ষায় থেকেছি। এগুলা সব আমার ভ্রম ছিলো মনে করতেন! আজ বলেন তো এগুলা কি ছিলো? ”

” লিটু মাথা নিচু করে বলে সবই আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা ছিলো? ”

” এতদিন পর বুঝার পরেও স্ত্রীকে খালিহাতে ভালোবাসা দিতে চাচ্ছেন? ”

” লিটুর মনে পড়লো ডিলনাসিনের জন্য লালটকটকে গোলাপ এনেছিলো। ওগুলা দেওয়ার কথা ভূলেই গেছিলো। ডিলনাসিনের পড়ার টেবিলে রেখেছিলো। লিটু মাথা উপড়ে তুলে তাকাতেই দেখলো ডিলের ঠোঁট দন্তের আঘাতে লাল হয়ে গেছে। লিটু নিজের মনে লজ্জা এনে মুচকি মুচকি হাসলো। এরপরে টেবিল থেকে গোলাপ গুচ্ছটি এনে ডিলের হাতে দিলো। ”

” ডিল ফুলগুলো হাতে নিয়ে অদ্ভুত ভাবে লিটুর দিকে তাকালো! ”

” ডিলের চাহনিতে লিটু ইতস্তত করা শুরু করলো। মাথা নিচু করে ডিলকে বললো আবার কি হলো? ”

” মাথামোটা আনরোমান্টিক জামাই একটা। বউকে ফুল হাতে দিয়ে ভালোবাসি বলতে হয়। অবশ্য আপনিতো সম্ভবত আমাকে ভালোবাসেন না। এরজন্য বললেন না। পোড়া কপাল আমার স্বামীর মুখে ভালোবাসি শব্দটা শোনার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো! ”

” লিটু আমতা আমতা করে বলে আসলে আপনার এই সাজ আমাকে মাতাল বানিয়ে দিছে। সবকিছু ভূলে গেছি ডিলনাসিন। আচ্ছা আপনার ড্রিমটা পূরণ করলাম ভালোবাসি আপনাকে? ”

” অদ্ভুত এইভাবে কেউ কাউকে প্রপোজ করে নাকি? আপনার থেকে অনেক ছোট আমি এইভাবে আপনি আপনি করবেন না! ”

” লিটুর মুখে বিষাদ নগরীর ছায়ার দেখা মিললো। মনেমনে বলে এমনিতে হট লুকসে সামনে এসেছে। তারউপর এতো ধৈর্য ধরা যায়? এই ছোট মেয়েটি ক্যান বুঝেনা এখন আমার অন্য কিছু চাই? ”

” কি হলো চুপ থেকে সময় নষ্ট করবেন? ”

” লিটু ডিলের সামনে রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করলো। আমি তোমাকে ভালোবাসি ডিলনাসিন। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। যা কিছু আগে ঘটেছে সব ভূলে যাও ডিলনাসিন। আজ থেকে আমি শুধুই তোমার। ”

” কথাটি শেষ করে ডিলকে নিজের বাহু দ্বারা আচ্ছাদিত করে ফেললো। এরপরে ডিলের মাতাল করা রুপে ডুব দিলো লিটু। ”

চলবে,,,,

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে

®️ রিয়া জান্নাত

| পর্বঃ- ৩৩ ( শেষাংশ) |

ফিরোজ রাতের খাবার খেয়ে আসার পর, ল্যাপটপ নিয়ে গভীর ভাবে মিশে গেছে কাজের সঙ্গে। ফিহা রুমে পায়চারি করছে । একবার টেবিলে রাখা বই নিয়ে বসছে । কিন্তু পড়াশোনায় মন দিতে পারছেনা। অস্থির অস্থির লাগছে ফিহার। কিছুতেই পড়ায় মন দিতে পারছেনা। বাড়বাড় টেবিল থেকে আড়চোখে ফিরোজের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু ফিরোজ রোবটের মতো ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।

ফিরোজের সঙ্গে কোনো এক ব্যাপার নিয়ে কথা বলার জন্য তৈরি হয়ে আছে ফিহা। কিন্তু ফিরোজ একবারো ফিহার দিকে তাকাচ্ছে না। ফিহা মন খারাপ করে মাথা টেবিলের নিচে রাখলো।

ফিরোজ কাজ শেষ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে ফিহার কাছে আসলো। ফিহাকে টেবিলে মাথা রাখতে দেখে বলে,,,

” ঘুম পেয়েছে প্রেয়সী? তাহলে বিছানায় যাও। এইখানে এইভাবে শুয়ে থাকলে শরীর ব্যাথা করবে? ”

” ফিহা টেবিল থেকে মাথা তোলে। এরপরে বলে তুমি ঘুমাবে না সখা? ”

” হ্যা ঘুমাবো। আমার একটু দেরি হবে। ছাঁদে যাবো একটু? ”

” কেনো? এতরাতে ছাঁদে ক্যান যাবে? ”

” ফিরোজ টেবিলের ট্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিলো। লাইটার হাতে নিয়ে বললো আমি সিগারেট খাবো। ”

” ফিহা চেয়ার থেকে দ্রুত উঠে ফিরোজের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে বললো এইটা কিসের জন্য খাও? ”

” ফিরোজ মুচকি হেসে বলে সমস্যা নাই প্রেয়সী। প্রতিরাতের মতো মুখ ধুয়েই ঘরে ঢুকবো? ”

” আমি জানতে চাই এইটার উপকারিতা কি? কিসের জন্য খাও? প্যাকেট এর সঙ্গে লেখা আছে ধূমপান স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর? এগুলো খেয়ে নিজের ক্ষতি করছো কেনো? ”

” অভ্যাস থেকে খাই প্রেয়সী? বেশিতো আর খাইনা প্রতিদিন একটা করে খাই! একটা খেলে তেমন ক্ষতি হবেনা। ”

” এইটা খেয়ে যদি উপকার না পাও তাহলে খাবে কেনো? উল্টো তোমার ক্ষতি করছো? ”

” প্রেয়সীর সঙ্গে তর্কে না যেয়ে ফিহাকে বলে তুমি ছটফট করছো ক্যান আজকে? কিছু বলতে চাও? ”

” এতক্ষণে আমার অস্থিরতা দেখতে পেলে? আজকাল তুমি আমার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করোনা সখা? আমাকে দেখতে কি আগের মতো সুন্দর লাগেনা? ”

” ফিরোজ ফিহার ঠোঁটে তর্জনী আঙুল রেখে বলে এভাবে বলছো ক্যান? তুমি আমার মধ্যে কি অনুপস্থিতি লক্ষ্য করছো? ”

” ফিহা কিছুক্ষণ চুপ থাকে। ”

” ফিহার মৌনতা দেখে বলো প্রেয়সী আমি তোমাকে কিভাবে আঘাত করলাম? ”

” ফিহা এবার শুকনো গলায় বলে তুমি যে আগামীকাল গ্রামে যাচ্ছো? আগে বলো নাই কেনো? ”

” দাদু দাদিকে বাড়িতে আনা দরকার ফিহা? বাড়ির সকল লোক ব্যস্ত । এরজন্য হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম। গ্রামে যাওয়ার জন্য আমিও প্রস্তুত ছিলাম না। তাহলে তোমাকে কিভাবে বলতাম বলো? ”

” ফিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে কতদিন থাকবে ওখানে? ”

” এইতো কাল সকালে গেলে পরশু বিকাল হতে হতে ফিরবো? ”

” ফিহা বলে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায়না? ”

” ফিরোজ মুচকি হেঁসে বলে রাগ করোনা অবুঝ প্রেয়সী? তোমাকে সঙ্গে করে নিলে গ্রামে একদিনের জায়গায় বেশকয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে? কারণ তখন দাদু চাইবে তোমাকে গ্রাম ঘুড়িয়ে দেখাই সময় নিয়ে। তুমিতো জানো আমার হাতে ওতো সময় নাই। ”

” ফিহার মুখ বিষাদ নগরীর মতো করে ফেললো।”

” তা দেখে ফিরোজ বললো একটা দিনের তো ব্যাপার প্রেয়সী? খুব একা লাগলে পারিজাতকে ডেকে রাতটা কাটিয়ে দিয়ো? ”

” ফিহা অভিমানী হয়ে বললো তুমি জানো না তোমার বক্ষে মাথা না রেখে আমি ঘুমাই না? এই কয়েকদিন এই বদঅভ্যাস টা তুমিই করে রাখছো? এখন আমাকে ছেড়ে যাবে? ”

” আমি কি সারাজীবন বেঁচে থাকবো প্রেয়সী? হঠাৎ যদি আমার কিছু হয়ে যায়? তখন তো তোমাকে একাই থাকতে হবে? ”

” ফিরোজের এই কথাটি মোটেও ভালো লাগলো না ফিহার কাছে। ফিহা কর্কশস্বরে বললো আমাকে রাগাবে না। বারবার এভাবে বলো ক্যান? তোমার কিছু হবে না সখা? আমি যে তোমার বুকে মাথা রেখে বাকিটা জীবন ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। ”

” ফিরোজ অভিমানী ফিহাকে বক্ষে টেনে নেয়। এরপরে ললাটে অধর ছুঁইয়ে দেয়। আল্লাহ আমাদের ভাগ্য যাই লিখুক আমিও যে তোমার সঙ্গে বৃদ্ধ হতে চাই? ”

” ফিহা ফিরোজকে শক্ত করে চেপে ধরে। ফিরোজের বক্ষে মাথা রেখে বলে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! ”

” আই লাভ টু প্রেয়সী। এখন আমাকে ছাড়ো সিগারেট টা খেয়ে আসি। ”

” ফিহা হাত থেকে সিগারেট নিয়ে বলে আজকে এসব খাওয়া যাবেনা। ”

” ফিরোজ মুচকি হাসি দিয়ে বলে ঠিক আছে প্রেয়সী খেলাম না। আগামীকাল ভার্সিটিতে যাবা কিন্তু। ”
” যাবো না ”
” কেনো? ”

” ভার্সিটিতে যেয়ে কি করবো। আপনি তো আগামীকাল ক্লাস নিচ্ছেন না? বাকি ক্লাসগুলো আমি টিউটোরিয়াল দেখে নিজেই শিখে নিবো। আপনার অনুপস্থি ভার্সিটি আমার জন্য পীড়াদায়ক। ”

” অবুঝ প্রেয়সী একটা দিনের তো ব্যাপার। খুব দ্রুত কেটে যাবে। ফিরোজ এরপরে প্রেয়সীর হাত ধরে বিছানায় উঠে। ল্যাম্পপোস্ট অন রেখে ফিহাকে কাছে টেনে দেয়। আস্তেআস্তে ফিহার স্যাম্পুকরা চুলের ঘ্রাণে বিমোহিত হয়ে যায়। এরপরে ফিহাকে এক হাতের বাহুর দ্বারা শক্তকরে জড়িয়ে ধরে। ফিহা ফিরোজ বুকে মাথা রেখে শান্তির ঘুম ঘুমায়। ”

ফিরোজ ও আহ্লাদী প্রেয়সীকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে ঘুমায়।

★★★

রাগ করে আছো তিহা? তুমিতো জানো আমি রাজনীতির পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। দলের কাজের চাপে তোমাকে সময় দিতে পারি না। আমি যখন বাসায় ফিরি তখন তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। সংসদে বিরোধী দলের বৈরতা বেড়ে গেছে। সরকারের নির্দেশে আমরা সকল সংসদ সদস্য নিরাপত্তা আইনের চাপে পড়েছি । তোমার স্বামীর তো শত্রুর অভাব নেই। সবাইকে সামলিয়ে ফিরতে হয় বাড়িতে। এলাকার খোজ খবর রাখতে হয় এরজন্য এত দেরি হয়।

” বিয়ের প্রথম রাতে আপনাকে কাছে পেলাম তবুও ব্যস্ততার মধ্যে। এরপরে থেকে একটা রাতে আপনার সঙ্গে সেভাবে কথা হয়নাই। আপনি সবসময় টায়ার্ড থাকেন বলে কিছু বলতেও পারিনা। আমার কি ইচ্ছে করেনা এমপি সাহেবের বুকে মাথা রেখে রাত নিপাত করতে? আপনি সকল দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলেও নিজের স্ত্রীর প্রতি এতো অবহেলা কেনো? ”

” বললাম না তোমাকে সকল দায়িত্বের মধ্যে তোমার এমপি সাহেব চাপা পড়ে গেছে। তোমার এমপি সাহেব নিজের জন্য সময়টুকু বের করতে হিমশিম খায়। সারাক্ষণ বিরোধী দল নিয়ে একটা ভয় কাজ করে? ওরা যতক্ষণ বাইরে ঘুড়বে তোমার এমপি সাহেব এভাবেই হিমশিমে পড়বে? ”

” তিহা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে কিচেনে কিসের ফাইলের কথা বললেন? ”

” তোমাকে কাছে পাওয়ার বাহানা ছিলো? তা কই আর কাছে পেলাম রুমে কয়েকটা কথা না হতেই তো খেতে ডাকলো? ”

” আচ্ছা এমপি সাহেব ফিহা আর ফিরোজ স্যার কত সুন্দর করে বিয়ের পরের দিনগুলি পার করছিলো। ওদের ভালোবাসা দেখে আপনার প্রতি অভিমান জন্মিয়েছিলো একটুখানি। এরজন্য আমাকে ক্ষমা করিয়েন? ”

” অনুচিত অভিমান নহে, আমারো তো ইচ্ছে করে বউয়ের পিছনে পিছনে ঘুড়ি। কিন্তু রাজনীতির দলের বিরোধী দলের কপটতার কারণে সিক্ত আছি। আফসোস রাখিয়ো না এমপির উপর খুব দ্রুত আমরাও ফিহা আর ফিরোজ ভাইয়ের মতো দাম্পত্য সুখ ভোগ করবো? ”

” আগামীকাল কখন বেড়াবেন? ”

” রাজনীতির সঠিক সময় নেই তিহা। তাই এসব ভেবে আমাদের এখনকার সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট করতে পারবো না! ”

” এমপি সাহেব আপনার কাছে একটা অনুরোধ রাখবো রাখবেন? ”

” এমপি সাহেবের কাছে বউয়ের অনুরোধ মানেই আদেশ। বলো কি অনুরোধ? ”

” তিহা আসলে আমি প্রায় সময় নিঃসঙ্গতা বোধ করি। আপনার অনুপস্থিতির সেই সময়টুকুতে আমি ভালোভাবে কাটাতে চাই? ”

” এরজন্য আমি কি করতে পারি? ”

” আমার বাচ্চা চাই এমপি সাহেব? বাচ্চারা হলো সংসার জীবনে প্রকৃত সুখ। সেই সুখকে আমি উপলব্ধি করতে চাই? ”

” একটু দ্রুত হয়ে যাচ্ছে না? তোমার ফাইনাল ইয়ার টা শেষ হোক তারপরে নাহয় বাচ্চার কথা ভাববো আমরা? ”

” তিহা এমপি সাহেবের কথায় মন খারাপ করে ফেলে। এরপরে মৌনতা হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রয়। ”

” আচ্ছা তুমি বাচ্চা মানুষ করতে পারবে? শুধু বাচ্চার কথা বললে হয়না? এর সঙ্গে অনেক দায়িত্ব থাকে? পারবে এসব এখন করতে? ”

” তিহা আবেগী স্বরে বলে আমি সব পারবো। আপনি শুধু আমাকে বাচ্চা এনে দেন। ”

” এমপি সাহেব তিহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,, আচ্ছা বাচ্চা চাই তোমার তাইনা। পেয়ে যাবে এমপি সাহেব বউয়ের আবদার ফেলতে পারেনা? তা কয়টা বাচ্চা চাই তোমার? ”

” এমপি সাহেবের কথায় তিহা এমপি সাহেবের বুকে মুখ লুকায়। ”

” এমপি সাহেব তিহাকে পাজাকোলে করে কোলে নেয়। এরপরে খাটে শুইয়ে দেয়। তিহার কানের ইয়ারিং জোড়া খুলে দেয় খুব যত্নের সঙ্গে । এরপরে চুলের খোঁপা খুলে দিয়ে ছেড়ে দেয়। এমপি সাহেব তিহার সঙ্গে ভালোবাসার খুনসুটির রজনীতে মেতে উঠে। ”

চলবে,,,,