মন একে একে দুই পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
8

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩০(আবারও!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– ‘কি করছিলি? ধরতে এতক্ষণ সময় লাগলো যে?’

প্রাহী কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কিছুক্ষণ অদ্ভুতচোখে চেয়ে রইলো! দাঁত চেপে বললো,
– ‘সাথে সাথেই তো ফোন ধরলাম? ঠেলে কথা বলছিস কেন?’

ওপাশ থেকে নক্ষত্র একটা শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘আচ্ছা,আম্মাকে ফোনটা দে।’

প্রাহী চুপ থেকে বললো,
– ‘কিছু হয়েছে? ফোন দিয়েই মাকে চাচ্ছিস?’

– ‘না কিছু হয়নি। তোর পরীক্ষা চলছে না! কেমন দিচ্ছিস!’

– ‘ভালোমতোই দিচ্ছি।’

– ‘আর ক’টা পরীক্ষা আছে?’

– ‘আছে বেশ কয়েকটা।’

নক্ষত্র এবার কথার ইতি টেনে বললো,
– ‘ভালোভাবে পরীক্ষাগুলো দে। মা’কে এখন ফোনটা দে।’

প্রাহী মাথা নেড়ে মায়ের ঘরে যেয়ে ফোনটা মায়ের কাছে দিলো। মা নক্ষত্রের সাথে কথা বলছে। প্রাহী কিছুক্ষণ তা দেখে নিজের ঘরে চলে এলো। আগামীকাল একাউন্টটং পরীক্ষা পড়তে বসা লাগবে। তার আগে এককাপ চা দরকার! ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যেয়ে ও এককাপ চা বসালো।

|

তন্নির আজ একটা টিউশন ছিলো। বিকেলে যেয়ে সন্ধ্যেনাগাদ ও বাসায় ফিরছে। আজ একটু বেশিই সন্ধ্যা হয়ে গেছে। যদিও বাসার রাস্তা যে খুব বেশি দূরে তা নয়। রাস্তার একপাশ ধরে ও হেঁটে চলেছে। কেন জানিনা ওর মনে হলো কিছুটা শুনশান রাস্তায় ওর পিছনে আরও একজন আছে! তন্নি চটপট ঘুরলো। ল্যাম্পপোস্টের হালকা আলোয় পরিচিত এক অবয়ব দাঁড়িয়ে। শোয়াইব প্যান্টের পকেটে হাত রেখে ওর দিকেই চেয়ে!

– ‘আপনি! এখানে?’

শোয়াইব মাথা ঝাঁকালো,
– ‘হুম আমি।’

তন্নি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ‘এটাতো আপনার বাসার রাস্তা না! এদিকে কি করছেন?’

শোয়াইব শান্তভাবে বললো,
– ‘পাশেই এক বন্ধুর বাসায় এসেছিলাম। ওর বাসা থেকে বের হয়ে কিছু কাজ ছিলো৷ কাজ সেরে ফিরার পথে তোমার পিছন সাইড দেখে চেনা চেনা লাগলো। তাই এসে দেখলাম তুমিই কিনা!’

তন্নি ঠোঁটদুটো গোল গোল করে বললো,
– ‘ওহ্!’

– ‘তা তুমি এই সময়ে এদিকে কি করছো?’

– ‘টিউশন সেরে বাসায় ফিরছিলাম।’

– ‘রাত করে বাড়ি ফিরছো যে?’

তন্নি হাতঘড়ির দিক চেয়ে বললো,
– ‘আজকে একটু লেট হয়ে গেছে। স্টুডেন্ট দু’দিন নাকি পড়বে না। এজন্য বেশি করে পড়াতে যেয়ে সময় কখন চলে গেছে টের পাইনি।’

– ‘আচ্ছা চলো তোমাকে এগিয়ে দেই।’

তন্নি বাঁধা দিলো,
– ‘না না! আমার বাসা সামনেই আমি যেতে পারবো!’

শোয়াইব শান্ত চোখে তন্নির দিক তাকালো,
– ‘কয়দিন আগে প্রাহীর সাথে কি হয়েছে শুনেছো নিশ্চয়ই! তা জেনেও রিস্ক কিভাবে নাও বুঝলাম না। নিজের সেইফটি আগে! পৌঁছে দিচ্ছি চলো।’

অগত্যা তন্নি শোয়াইবের সাথে চললো। দুজন পাশাপাশি হাঁটছে। কেউ কথা বলেও বলছে না। শোয়াইব নীরবতা ভঙ্গ করে বললো,
– ‘তুমি টিউশন কর কবে থেকে।’

– ‘এইতো কিছুদিন হলো শুরু করেছি।’

শোয়াইব হালকা হাসলো,
– ‘তোমার আবাব এখানকার চেয়ারম্যান ছিলেন! গত বছর মনে হয় পদ ত্যাগ করেছে। তোমাদের তো অবস্থা ভালোই! তাও টিউশন করছো যে! আংকেল খুব স্ট্রিক্ট নাকি?’

তন্নি মাথা তুলে শোয়াইবের চিকন ঠোঁটের হাসির দিক তাকালো,
– ‘বাবা ওতটা স্ট্রিক্ট না। বলতে গেলে অনেকটাই সরল। কিন্তু সবসময় তো আর বাবা-মা’য়ের কাছ থেকে টাকা চাওয়া যায়না তাইনা? বড় হয়েছি। এছাড়া দু এক টাকা রোজগার করা খারাপ কিছু তো না অবশ্যই!’

– ‘না খারাপ হতে যাবে কেন! টিউশনি করা ভালো। পড়ানোর মাধ্যমে চর্চা হয় নিজেরও।

তন্নি মাথা নাড়ালো,
– ‘হুম!’

তন্নি গুজে রাখা হাতজোড়া ছেঁড়ে দিল। যার ফলে পাশে থাকা মানুষটার হাতের উল্টো পিঠের সাথে ওর হাতের পিঠে ছোঁয়া লাগছে। প্রাহী হাত সরিয়ে নিলেও বারবার ছোঁয়া লেগেই যাচ্ছে!

– ‘তুমি আমাকে আপনি বলে ডাকো কেন?’

শোয়াইবের কথায় তন্নি কাঁধের ব্যাগ ধরে বললো,
– ‘আসলে… ভেবেছিলাম আপনি আমার সিনিয়র হবেন। কিন্তু সেইম ক্লাসে দেখার পর বুঝলাম আপনি আমার ব্যাচমেট। এদিকে প্রথম থেকে আপনি বলেই ডেকে আসছি তাই ‘ তুমি’ বলতে একটু কেমন যেন লাগে।’

শোয়াইব পা দিয়ে পাথরে ঝাড়া মেরে বললো,
– ‘যেহেতু আমরা তো ব্যাচমেট, তুমি বলে ডাকলেই বেটার! আমি তোমাকে প্রথমে আপনি বলে ডাকলেও এখন থেকে তুমিই ডাকছি। আর এটাই ডাকবো।’

শোয়াইবের কথায় তন্নি গাঢ় চোখে ওর দিকে তাকালো,
– ‘আচ্ছা বেশ তাহলে?’

-‘হু!’

তন্নি প্রতিউত্তরে আর কিছু বললো না। হাঁটার ছলে হাতের স্পর্শে কেউ এবার কিছু বললো না। থাকুক না! কিছু ভালোলাগার সূচনা না হয় এভাবেই হোক! নীরব অনুভূতির আদান প্রদান শেষে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই শোয়াইব তন্নির দিক ফিরলো,

– ‘আসি! পরীক্ষার হলে দেখা হচ্ছে!’

– ‘ওকে! এগিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ নিবেন কি?’

– ‘না আপাতত নিতে চাচ্ছি না?’

তন্নি হাসলো,
– ‘ঠিক আছে তাহলে সাবধানে যাবেন!’

শোয়াইব মাথা নাড়লো। একে অপরকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।

|

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে । বারান্দায় বসে আকসাদ ল্যাপটপে কাজ করছে। একটানা নীরবে কাজ করে চলেছে। কিছুক্ষণ পর ল্যাপটপের স্ক্রিণে চোখ রাখতেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ওয়ালস্ক্রিনে পরিচিত নাম দেখে ফোনটা তুললো,

– ‘এনি আপডেট?’

– ‘আপাতত না। শিপমেন্ট তো বন্ধ রেখেছিস তাইনা!’

আকসাদ মাথার চুলগুলো টেনে বললো,
– ‘হুম আপাতত সব ওফ।’

– ‘এবার যে গেলি কবে আসবি?’

– ‘দেখা যাক!’

ওপাশ থেকে কেউ গভীর শ্বাস ফেলে বললো,
– ‘ডোন্ট টেইক টু মাচ টাইম! আদারওয়াইজ আমি কিন্তু…।’

– ‘ওকে ওকে। রাতে কথা হবে।’

ফোনটা রেখে আকসাদ টাইম দেখলো। সন্ধ্যে ছয়টা বাজে! মাথায় আসলো, আজকে প্রাহীর সাথে ওর দেখা হয়নি! আসলে ও যেতে পারেনি আজ। পেন্ডিং কাজগুলো করতে করতে দেরী হয়ে দুপুর হয়ে গিয়েছে। সেই মুহূর্তে খাড়া রোদ একদম মাথা বরাবর পড়ছিল। ওই অবস্থায় আর বের হয়নি ও। মেয়েটা পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়েছে আবার রোদের মধ্যে ঘুড়ে বেড়াবে! তার জন্য আকসাদ আর যাইনি ভেবেছে বিকালে দেখা করবে। কিন্তু বিকালেও খাওয়া শেষে কাজ নিয়ে যে বসেছিল এখন উঠলো! কাল সকাল সকাল বা বিকাল মেয়েটার সাথে দেখা করতে হবে! একদিন দেখা করেনি তাতেই কেমন মন আনচান করছে! আকসাদ ফিচেল হাসলো। ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। পিঠটা ব্যাথা করছে। হাত টানটান করে, ঘাড়ের রগ দু’একটা ফুটিয়ে ল্যাপটপ টা চার্জে দিলো। এককাপ কফির দরকার! ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো। নিশ্চয়ই চাচীমণি সন্ধ্যার নাস্তার আয়োজন করছে!

.

আজ নাকি প্রাহীদের এক্সাম নেই! পরপর দুদিন নাকি বন্ধ। আকসাদ এজন্য ভেবেছিলো প্রাহীকে নিয়ে একটু ঘুরবে! কিন্তু কই? রাতের বেলা মেয়েটাকে বড্ড মিস করছিলো। নাম্বার থাকলে ফোনে কথা বলা যেত! এজন্য সকাল সকাল মেয়েটার বাড়ির সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। দেখা মিলেনি! ভেবেছে একবারে বিকেলে যাবে! দুপুরের দিক আকসাদ এর ভালো লাগছে না। একটাবার প্রাহীর সাথে নরমালি কথা বলা দরকার! হোক ফোনে কিংবা সামনাসামনি! বিছানা ছেড়ে বসে আকসাদ আওয়াজ করে শিমলাকে ডাকার আগেই দেখলো শিমলা দরজা সরিয়ে উঁকি মেরে ওর দিক তাকিয়ে,

– ‘নিচ থেকে মা কয়বার ডেকেছে তোমায়! শুনোনি?’

আকসাদ মাথা চুলকালো,
– ‘সরি রে। আমি আসছি।’

– ‘জলদি এসো?’

শিমলা যেতে নিলেই আকসাদ ওকে পিছু ডাকলো,
– ‘এই শিমলা! শোন?’

শিমলা পিছু ফিরলো,
– ‘হু বলো?’

– ‘উম…প্রাহীর নাম্বার আছে তোর কাছে!’

শিমলা কিছুটা অবাক হলো,
– ‘আছে কিন্তু তোমার কাছে নেই!’

– ‘না! নাম্বারটা নেইনি আমি।’

শিমলা আকসাদের দিক বিস্মিত দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে রইলো। একসাথে ঘুরছে, ফিরছে, কথা বলছে এদিকে নাকি নাম্বারটাই নেই!

– ‘নাম্বারটা আমাকে দে বা তুই একটু ফোন দিয়ে আমার সাথে ওর কথা বলিয়ে দে! কালকে থেকে ওর সাথে কোনো কথা বলতে পারছিনা!’

– ‘আচ্ছা আমি ওকে ফোন দিচ্ছি! নাম্বারটাও দিয়ে যাচ্ছি?’

আকসাদ মাথা নাড়াতেই শিমলা দরজা চাপিয়ে বের হলো। ঘরের দিক যেতে যেতে ও ভাবলো, প্রাহীটার সাথে ওরও পুরো একটা দিন কথা হয়নি! মেয়েটা ফোনই ধরছে না! আবার সকালে ফোন দিয়েছিলো ফোন বন্ধ পেয়ছিলো তখন। কি হলো ওর!

.

আকসাদ নিজ ঘরে বসে। চিন্তায় ওর কপাল কুঁচকে আসছে। মেয়েটার কোনো খবর নেই! ও ঠিক আছে তো! বাসার সামনে যেয়ে নামি দাঁড়াবে একবার! কিন্তু কতা বলে বের হলে ভালো হতো নক! ওর এখন টেনশন হচ্ছে। কি না কি হয়েছে এসব ভেবে। দরজায় ধরাম শব্দে পিছু ফিরে দেখলো শিমলা দরজার লকে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দৌড়ে এসেছে বোধহয়! এইযে কেমন হাঁপাচ্ছে! শিমলাকে দেখেই আকসাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। ওর সবকিছু যেনো ঠিক ভালো ঠিকছে না! আকসাদ জিজ্ঞাসা দৃষ্টি নিয়ে শিমলার দিক তাকিয়ে! আবার কি হলো?

– ‘আকসাদ ভাই…প্রাহী।’

চলবে!!!

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩১(কি হবে?)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

বিছানার মধ্যে প্রাহী গোল হয়ে বসে আছে। ওর সামনে মামী একটা বেগুনী রঙের জামদানী শাড়ি বিছিয়ে রেখেছে। মামার পরিচিত কোন এক শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত ছেলের পরিবার ওকে দেখবে! মোট কথা ছেলেপক্ষ আজ ওকে দেখতে আসবে! প্রাহী হতভম্ব হয়ে বসে আছে। সকাল সকাল মামী এসে ওর মাকে বলেছে আজ বিকেল নাগাদ দুই থেকে তিনজন লোক নাকি ওকে দেখতে আসবে। প্রাহীর মা এ কথা শুনার পর থেকে সেই যে নিজের ঘরে ওর মামীকে নিয়ে গেছে তারপর আর মায়ের দেখা পায়নি। প্রাহী বুঝতে পারছে না ওকে হঠাৎ এভাবে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে কেন! ওর তো পড়ালেখাও শেষ হয়নি? প্রাহী ছলছল চোখে সামনে তাকিয়ে। ভেজা চুল একপাশে পড়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে ওর মামাতো বোন সেতু জোড় করে ওকে গোসল করতে পাঠিয়েছিলো। কোনো রকম গোসল সেরে ও বিছানায় বসে আছে।

– ‘কি ব্যাপার তুই এখনও রেডি হোসনি?’

প্রাহীর মামীর কথায় ও মুখ তুললো। জলে ভেজা চাহনী দিয়ে ও বলে,

– ‘কি শুরু করেছো তোমরা মামী! আমার মতামত না নিয়ে কেন বাড়িতে অপরিচিত লোকজনদের দাওয়াত করেছ!’

– ‘আরে বাবা, দাওয়াত করিনি উনারা শুধু তোকে একটু দেখবে।’

– ‘কিন্তু আমি…।’

প্রাহী থামলো, দেখলো রুমে ওর মা এসেছে। আস্তে আস্তে হেঁটে উনি মামীর পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রাহীর মা মেয়ের দিক তাকিয়ে। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। সকাল থেকেই এভাবে চোখ ভেজা নিয়ে মেয়েটা বসে আছে। মুখটা একদম ছোটো হয়ে গেছে উনার মেয়ের!

– ‘মা! আমি কি এতোই বোঝা হয়ে গেছি! যে এখনই ধরে বেঁধে বিয়ে দিতে চাচ্ছো!’

মেয়ের কান্নাভেজা কন্ঠে প্রাহীর মা দ্রুত মেয়ের কাছে যেয়ে পাশে বসে ওর ছোটো মুখখানা নিজের হাতে নিয়ে চোখের পানি নিছেপুছে দিলো,

– ‘আমরা কখনোই তোকে বোঝা মনে করিনি। কেন করব! তুই আমাদের সন্তান! আর তাছাড়া তোর সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই হবে না! কোনো কিছু তোর উপর চাপিয়ে দেয়া হবেনা আমি বলছি তোকে!’

– ‘তাহলে যে উনারা…।’

প্রাহীর মামী এবার ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলালো,
– ‘শোন মেয়ে হয়ে জন্মেছিস। কত এরকম পাত্র পক্ষ আসবে যাবে । দেখতে আসা মানেই তো আর বিয়ে হয়ে যাওয়া না তাইনা? অনেক কিছুর ব্যপার আছে এখানে!’

– ‘হ্যাঁ রে হেনা! কিছুতেই কি লোকজনদের আসাটা আটকানো যায়না?’

প্রাহীর মামী চিন্তিত মুখ নিয়ে ওর মাকে বললো,
– ‘আপা চেষ্টা করেছি আটকানোর। কিন্তু তোমার ভাইকে উনারা এমনভাবে ধরেছে যে আজকে এক পলক হলেও মেয়েকে উনারা শুধু দেখবে। ও নিজেই ফ্যাসাদের মধ্যে পড়েছে। এখন এখানে কি করবো?’

প্রাহীর মামাতো বোন সেতু ঘরে এলো। প্রাহীর সামনে যেয়ে বললো,
– ‘কিরে এখনও রেডি হোসনি?’

প্রাহীর মামী এবার ওর হাতে হাত রাখলো,
– ‘শোন শুধু উনাদের সামনে যেয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকবি! তাতেই হবে। আমরা পরে না করে দিব।’

– ‘উনারা আসলে উনাদের তাড়িয়ে দাও?’

প্রাহীর মা এবার মেয়ের কাঁধে হাত বুলিয়ে বললেন,
– ‘বাসায় কেউ আসলে তাডিয়ে দেই কিভাবে প্রাহী! তুই শাড়িটা পড়ে শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য বসিস তাহলেই হবে!’

প্রাহীর মা উঠে দাঁড়ালেন। উনার কিছুই ভালো লাগছে না। মন থেকে উনিও কিছুতেই রাজি না। প্রাহীর বাবাও কিছু বলতে পারছেনা। বিয়ের ঘটক আগে ভাগে এসে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। এমতাবস্থায় কি করবে উনারা! প্রাহীর মামী ওকে রেডি হতে ঘর ছেড়ে বেরোলেন। প্রাহীর মা পিছন ফিরে একবার মেয়েটা তার ছলছল আর অসহায় চাহনী দিয়ে উনার দিক তাকিয়ে! না উনি কিছুতেই উনার মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারবে না। প্রাহীর বাবার সাথে একটাবার কথা বলা দরকার। তৎক্ষনাৎ উনি বেড়িয়ে গেলেন। প্রাহী নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে আছ। প্রাহী সেতুর দিক কোনোরকম তাকিয়ে টেনে টেনে।বললো,

– ‘আমার ফোনটা কথায় সেতু!’

সেতু প্রাহীর ফোনটা ড্র‍য়ার থেকে বের করে বললো,
– ‘এই যে কাল সারারাত টিম্মি এইটাতে গেইমস খেলেছে। চার্জ নেই তোর ফোনে!’

প্রাহী কাঁপা হাতে ফোনটা বেডসাইডের পাশে চার্জে দিলো। বিছানায় শাড়ির দিক তাকাতেই ও চোখ বুঝলো। চোখ বুঝতেই আকসাদের মুখখানা ওর সামনে ভেসে উঠলো। প্রাহী চোখ খুলে মুখে হাত চেপে কেঁদে যাচ্ছে। আকসাদ জানতে পারলে কি হবে! আকসাদকে ঠকানো হচ্ছে। যদিও ও আকসাদকে প্রতিশ্রুতি দেয়নি তারপরও মানুষটা ওর মন মস্তিষ্কে না চাইতেই গেড়ে বসে গেছে। ও কিভাবে এই কাজ করবে! আকসাদ ওকে ভুল বুঝবে! প্রাহী চায়না আকসাদ ভুল বুঝুক ওকে! কান্নার বেগে ওর শরীর দুলছে। সেতু সহায়হীন হয়ে ওর দিক তাকিয়ে আছে!

·

—————–

·

প্রাহীর মা ড্রয়িং রুমে এসে উনার স্বামীকে ডাক দিলেন। প্রাহীর বাবা সোফায় বসে একজন লোকের সাথে কথা বলছিলেন। প্রাহীর মায়ের ডাক শুনে উনি উঠে সেদিকে যেতেই বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। প্রাহীর মা দ্রুত দেয়াল ঘড়ির দিক তাকালেন। বিকেলের সময় তো হয়ে গেছে। তার মানে কি উনারা এসে পড়েছে। প্রাহীর বাবা দরজা খুলতে এগিয়ে গেলেন। পিছন পিছন প্রাহীর মাও গেলেন। দরজা খুলতেই প্রাহীর বাবা অবাক হলেন। প্রাহীর মা স্বামীর পাশ দিয়ে দাঁড়াতেই উনিও চোখ বড় বড় করে তাকালেন। দরজার বাইরে আকসাদের মা দাঁড়ানো, সাথে শিমলার মা শিমলা দাঁড়িয়ে। প্রাহীর বাবা ভেবেছিলেন হয়তো পাত্রপক্ষরা এসেছে কিন্তু উনারা এ সময়!

– ‘আসসালামু আলাইকুম। ভিতরে আসতে বলবেন না?’

– ‘ওয়া আলাইকুমাস সালাম। জ্বি জ্বি আসুন না।’
মুখে হাসি বজায় রেখে প্রাহীর বাবা বলে উঠলেন। আকসাদের মা ওরা ঢোকার পর সবার শেষে আকসাদ ঢুকলো। আকসাদের মা সোফার এক কোণে বসলেন। সোফার আরেক প্রান্তে বসে থাকা একটা অপরিচিত লোক উনার নজরে এলেন। আকসাদের মা সেদিক তাকিয়ে চোখ ফিরালেন। আশপাশ দেখতে দেখতে বললেন,

– ‘আপনাদের বাসায় কেউ আসবে নাকি?’

আকসাদের মা’য়ের কথায় সোফায় বসে থাকা লোকটা দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন,
– ‘হ্যাঁ। এনাদের মেয়েকে দেখতে আসবে। ‘

আকসাদের মা উনার দিক এক পলক তাকিয়ে প্রাহীর বাবা-মায়ের দিক তাকালেন,
– ‘তাই নাকি!’

– ‘হ্যাঁ। ছেলে আমার পরিচিত! আমার ভাইপো হয়। বেশ ভালো। বেশ ভালো!’

লোকটার কথায় শিমলা বিরক্তি নিয়ে তার দিক তাকালো। আকসাদের মা আয়লিনা হোসেন প্রাহীর বাবা-মায়ের দিক তাকিয়ে বললেন,

– ‘আপনারা একটু বসুন না! দাঁড়িয়ে আছেন যে?’

প্রাহীর বাবা মাথা নেড়ে সিংগেল সোফায় বসলেন। প্রাহীর মা উনার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।

– ‘ভাবী আপনিও বসুন।’

শিমলার মায়ের কথায় প্রাহীর মা মাথা নেড়ে বোঝালেন, ‘অসুবিধে নেই!’

আয়লিনা হোসেন হাসিমুখে প্রাহীর বাবা-মায়ের দিক তাকিয়ে বললেন,
– ‘প্রথমত না বলে আসার জন্য দুঃখিত৷ আসলে এভাবে আসার প্ল্যান ছিলোনা।’

প্রাহীর বাবা হালকা হেসে বললেন,
– ‘না কোনো সমস্যা নেই। এভাবে বলবেন না। মানুষের বাসায় মানুষ প্রয়োজনে হোক কিংবা অপ্রয়োজনে আসতেই পারে।’

আকসাদের মা হালকা হাসলেন,
– ‘তা ঠিক বলেছেন। কিন্তু আমি একান্ত নিজের প্রয়োজনেই এসেছি বলতে পারেন!’

প্রাহীর বাবা কপাল কিছুটা সংকুচিত করলেন,
– ‘জ্বী?’

আয়লিনা বেগম এবার হালকা শ্বাস ফেললেন,
– ‘ভাইজান আমি ঘুড়েফিরে কথা বলতে আসলে পছন্দ করিনা। আপাতত এই সময়ে তো নয়ই। আমার ছেলেকে তো চিনেন! আকসাদ? আমার এক ছেলে এক মেয়ে। আকসাদ আবার বড় সন্তান। আমি আমার বড় সন্তান, আমার ছেলের জন্য আপনার ছোটো মেয়ে প্রাহীর হাতজোড়া চাচ্ছি!’

প্রাহীর বাবা আর মা দুজনেই হতভম্ব। এভাবেই এক দল লোক আসছে প্রাহীকে দেখতে। আবার আরেকদল এসে চাইছে মেয়েকে বাড়ির বউ করে নিতে! উনি আকসাদের মায়ের সহজস্বীকারক্তির কথায় হতবাক! মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেনা! শিমলার মাও প্রাহীর মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে উনার কাঁধে হাত রাখলেন। সবাই আপাতত নির্বাক। সোফায় বসে থাকা অপরিচিত লোকটার হাত থেকে দাঁত খোচানোর কাঠি পড়ে গেছে। আকসাদের মা মুচকি হেসে বললেন,

– ‘সবাইকে একটু বিভ্রান্তিতে ফেলে দিলাম তাইনা? আসলে এরকমটা করার ইচ্ছে ছিলোনা। আমার ছেলে আকসাদ আপনার মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু পছন্দ করে বললে ভুল হবে। ও ভালোবাসে আপনার মেয়েটাকে। একটা দীর্ঘসময় ধরে আপনার মেয়েকে ও পছন্দ করে এসেছে, চেয়েও এসেছে। ছেলের চাওয়ার প্রেক্ষিতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সরাসরি বা সামনাসামনি কথা বলার মাধ্যমে আপনাদের প্রস্তাব দিব! কিন্তু সেটা হয়তো কপালে ছিলোনা! আমি আজকেই বাংলাদেশে এসেছি সকাল আটটার দিক। ঢাকা থেকে পরে খুলনায় এসেছি একঘন্টার মতো হবে। বাসায় যেয়েই শুনলাম আপনার মেয়েকে নাকি দেখতে আসবে। আমি গুরুত্ব দেয়নি প্রথম প্রথম কারণ মেয়ে দেখতে আসা মানেই তো বিয়ে হয়ে যাওয়া নয়। তাইনা! কিন্তু কিছু কারণবশত আর ছেলের মুখের দিক তাকিয়ে আমাকে এভাবেই আসতে হয়েছে। নয়তো হুট করে প্রস্তাবটা দেয়ার ইচ্ছে আমার ছিলো না! সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী!’

প্রাহীর মা নীরব কন্ঠে বললেন,
– ‘ক্ষমার কিছু নেই আপা। কিন্তু মেয়েটাকে যে দেখতে আসবে…।’

.

– ‘এছাড়াও মিলমিশেরও তো একটা ব্যপার আছে। তাইনা!’

আচমকা কারো কথায় সবাই চোখ ঘুরে তাকালো। শিমলার বড় মামী দাঁড়িয়ে। শিমলা চোখ কুচকালো এই মামী এখানে কেন? শিমলার বড় মামী রাবেয়া খাতুন হেলেদুলে সামনে আসলেন। আকসাদের মা’য়ের দিক তাকিয়ে বললেন,

– ‘কিছু মনে করবেন না আপা। আপনার ছেলে তো বিদেশে বড় হয়েছে। সেইরকম সমাজ, পরিবেশে থেকেছে। সেখানে এই মফস্বল শহরের সাধারণ মেয়ের সাথে কি মানিয়ে নিতে পারবে! তাছাড়া স্ট্যটাস বলেও তো কিছু আছে! তাইনা?’ এটা কি ঠিক হবে বলুন! অজপাড়াগাঁয়ের একটা…।’

– ‘কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিকনা সেটা নিশ্চয়ই আপনার মতো একটা ডিজগাস্টিং মহিলার কাছে কেউ জিজ্ঞেস করেনি?’

গম্ভীর কন্ঠস্বরে সবাই ফের পিছন তাকালো। পিছনে আকসাদ আর শিমলার বাবা দাঁড়ানো। আকসাদ চোখমুখ লাল করে সামনে আসলো। দাঁতে দাঁতে চাপ চেপে বললো,

– ‘নাও ইউ সে! কেউ আপনাকে আমার জীবন নিয়ে ঘাটতে বলেছে? আই ওয়াজ ওয়ার্নড ইউ! মনে নেই?’

শিমলার বাবা আকসাদের কাঁধে চাপড় মেরে ওকে শান্ত হতে বললো। আকসাদের মা এবার নিজের চশমা টা খুলে শিমলার মামীর দিক তাকালেন,

– ‘আমি কিন্তু বাঙালি নই! জানেন নিশ্চয়ই? আমি তুর্কিবংশের একজন। অথচ বিয়ে কিন্তু করেছি বাঙালী একজন পুরুষকে! আমি দুনিয়ার ওপিঠ হতে দুনিয়ার এপিঠের সাধারণ একটা বাঙালি মানুষের সাথে সংসার করছি পঁচিশ বছর ধরে। এর মাঝে দু’টো সন্তান আমাকে আল্লাহ্ দিয়েছে৷ আমি যদি ভিন্ন দেশের, ভিন্ন সমাজের হয়ে একদম আলাদা একটা সমাজ, দেশের কালচারের সাথে মানিয়ে আসতে পারি সেখানে আমার ছেলে কেন মানিয়ে পারবে না! কি সমস্যা এতে! দুজনের মনের মিল যদি থাকে, দুজন যদি দুজনের প্রতি সম্মান, মর্যাদা,চাওয়া পাওয়া সব দিক থেকে ঠিক থাকে তাহলে সেখানে সমাজে কিংবা কালচারের সাথে মানিয়ে নেওয়া কোনো ব্যপারই না।’

শিমলার মামী মেকি হাসি দিয়ে বললেন,
– ‘তা ঠিক আছে আপা কিন্তু…।’

– ‘আপনি কি আগে দেশের বাইরে থাকতেন?’

আয়লিনা হোসেনের প্রশ্নে শিমলার মামী মাথা নেড়ে বললো,
– ‘না আমি তো বাংলাদেশেই…।’

– ‘তাহলে আপনি ওই দেশের মানুষের কালচার, মানিয়ে নেয়া নিয়ে এত কিছু জানেন কিভাবে!’

– ‘আসলে…।’

– ‘আপনার মেয়েই বা ওইসব উচ্চ সোসাইটির সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারবে এটা আপনি এতটা শিউর হন কিভাবে?’

শিমলার মামী চুপসে যাওয়া কন্ঠে বললো,
– ‘মানে!’

আকসাদের মা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– ‘আপনার ঘরে উপযুক্ত মেয়ে আছে, আমার ঘরেও উপযুক্ত ছেলে আছে। তাই এসব কথার ইশারা বা অর্থ আমি বুঝি! আমার মনে আপনার মতো কিছু বাঙালি মানুষের মতো এতো প্যাচগোচ নেই। আমি যা বলার স্পষ্টভাবে বলতেই পছন্দ করি। সুতরাং, আকসাদ কিংবা ওর ভবিষ্যৎ স্ত্রী নিয়ে আপনার এত চিন্তা করার প্রয়োজন নেই!’

– ‘কিন্তু…।’

আকসাদের মা শান্ত চোখে শিমলার মামীর দিক তাকালেন,
– ‘আমি আপাতত আপনার থেকে আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছিনা। তাছাড়া আমি কিন্তু সেদিনের দুপুরের লাঞ্চের কথা সবটাই জানি। আপনি কাউকে সহজেই কথার দ্বারা আঘাত করতে পারলেও আমিও পারি। তবে আমার ধরনটা আলাদা। তাই নিজেকে আপাতত সংযত করুন!

//

ড্রয়িং রুম হতে পরিচিত কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে প্রাহী হালকা উঁকি দিলো। সোফায় বসে থাকা সেই মধ্য ময়সী লোকটার দিক তাকিয়ে ও ভ্রু কুঁচকালো। তার মানে এই লোকই কি বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে! এজন্যই কি প্রাহীদের বাড়ির সামনে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো? সোফায় বসে থাকা আকসাদের মাকে প্রাহী ভেজা চোখ বড় বড় করে তাকালো। পর্দা গলিয়ে ও বেরিয়ে এলো। সামনে তাকাতেই একজোড়া ডাগর চোখের মায়ারসহিত চাহনীর সাথে ওর নজর মিললো। আকসাদ এক দৃষ্টিতে ওর দিক তাকিয়ে আছে। প্রাহীর চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই ও দেখলো শিমলা ওর কাঁধচেপে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখের জল মুছে বললো,

– ‘কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।’

প্রাহী কোনোরকম সুধালো,
– ‘তোরা সবাই এখানে এভাবে?’

শিমলা আস্তেধীরে বললো,
– ‘তোকে ফোনে পাচ্ছিলাম না সকাল থেকে। দুপুরের দিক তোর ফোন বন্ধ। আকসাদ ভাই টেনশনে অস্থির। কাকীমাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। পরে না পেরে নক্ষত্র ভাইকে ফোন দিলাম। উনি জানালো, আজ নাকি তোকে দেখতে আসবে। আমি কোনো রকম কথাটা আকসাদ ভাইকে জানাতেই সে পারে না পারে উড়ে চলে আসে এদিক। তখনই আকসাদ ভাইয়ের মা আর বাবা বাসায় আসেন। পরে সবাই মিলে এখানে এসেছি৷ ওই পাত্রপক্ষের দেখাদেখি ভাঙতে!’

প্রাহী সোফায় বসে থাকা লোকটার দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘এই লোক…।’

শিমলা একশ্বাস ফেলে বললো,
– ‘এই লোক ঘটক। আবার ছেলের আত্নীয় হয়। এর আবার কাহিনী আছে তোকে পরে সব বলব।’

আকসাদ এদিকে একদৃষ্টিতে প্রাহীর দিক তাকিয়ে আছে। মেয়েটার চোখমুখ ফোলা ফোলা। অনেক কেঁদেছে নিশ্চয়ই? মাথার ভেজা চুলগুলোর পানিতে জামার হাতা ভিজে গেছে। মুখটা অনেক শুকনো লাগছে। আরও আগে আসলে হয়তো মেয়েটাকে এত কিছু সহ্য করতে হতো না! ভাবতেই আকসাদ মাথার চুলগুলো শক্ত করে ধরে পিছনে নিলো। মায়ের কথায় চোখ সরালো।

– ‘সবই তো শুনলেন ভাইসাহেব! এবার আপনি কিছু তো বলুন?’

প্রাহীর বাবা এতক্ষণ ধরে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলেন। কিছুই বলেন নি। আকসাদের মায়ের কথা, শিমলার মামীর কথা, আকসাদের আসে সবটাই তিনি অবলোকন করেছেন। শিমলার মা এবার প্রাহীর বাবাকে বললো,

– ‘ভাইজান চুপ আছেন যে?’

প্রাহীর বাবা নিশ্চুপ। প্রাহী শিমলার থেকে সবটা শুনে ওর বাবার দিক তাকিয়ে আছে। আকসাদ ও চিন্তিত নজরে সেদিক তাকয়ে। প্রাহী একটা ঢোক গিললো। না জানি আজ কি হবে?’

চলবে,,,

#মন_একে_একে_দুই
#পর্বঃ৩২(জোড়া!)
#লেখনীতেঃ-#ফেরদৌসী_নবনী

– আমি আপনাদের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারলাম না। মাফ করবেন।’

প্রাহীর বাবার কথায় আকসাদ আর প্রাহী সহ বাসার সবাই থমকে গেলো। শিমলার মা একবার শিমলার বাবার দিক তাকালো। তিনি জানতেন প্রাহীর বাবা এতো সহজে রাজি হবেনা। তারপরও কোথাও একটা আশা ছিলো যে হয়তো রাজি হলেও হতে পারে! বা একটু সময় চেয়ে নিতে পারে! কিন্তু তা তো আর হলো না। উনি আগেভাগেই তাঁদের অনুমান অনুযায়ী না বলে বসে আছে! আকসাদের মা আয়লিনা হোসেন ছেলের আশাহত মুখের দিক তাকালেন। মুখে মিষ্টি হাসি বজায় রেখেই উনি প্রাহীর বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন,

– ‘ভাইসাহেব, আপনি ঠিক কি কারণে রাজি না একটু বলবেন?’

আকসাদের মায়ের কথায় প্রাহীর বাবা মুখ তুললেন,
– ‘আমি আমার দুইটা ছেলেমেয়েকে খুব আগলে বড় করেছি। ওরা আমার ঘরের বাইরে পা রাখলেই মনে হয় ওরা আমার থেকে অনেক দূরে! ওইযে, একদম কোলে পিঠে মানুষ করেছি কিনা! এজন্য ওদের এক বিন্দু না দেখলে কেমন যেন লাগে। এই যেমন দেখুন আমার বড় ছেলে ঢাকায় যেয়ে পড়াশোনা করছে। তাও আমার মনে হয় ও আমার থেকে আমাদের থেকে বুঝি অনেক দূর আছে! অথচ ওখানে থেকে এখানে আসতে যেতে লাগে ৪/৫ ঘন্টার মতো? আমার ছোটো মেয়েটা আমার বড্ড আদরের। আমি সবসময় চেয়ে এসেছি আমার মেয়েকে আমি যদি বিয়ে দেই বাড়ির পাশে বিয়ে দিব যাতে কোনো একবেলা মেয়েটাকে একটু দেখতে পারি। সেখানে আপনারা বাংলাদেশের কোনো স্থানেও নয়! দুনিয়ার আরেক প্রান্তে থাকেন কানাডায়! সেক্ষেত্রে প্রবাসে বিয়ে দিলে মেয়েও তো সেখানে চলে যাবে তাইনা? যেক্ষেত্রে আমি আমার মেয়ের ছয় মাসেও তো দূর বছরে একবার দেখা পাব কি না সন্দেহ। আমার মেয়েকে আমি এত দূরে কোথাও বিয়ে দিব না। কখনও না। ওখানে যেয়ে ও কিভাবে থাকবে না থাকবে সেটাও তো দেখার বিষয় তাইনা! আমি কখনও পারব না মেয়েটার থেকে এত দূরে থাকতে।’

আকসাদের মা নিঃশব্দে শ্বাস ফেললেন। একজন মা হয়ে উনি বুঝতে পারছেন আরেক সন্তানের বাবার কষ্ট, চিন্তা বা আপত্তি। কিন্তু উনিও একজন মা। রাত,দিন,দুপুরে ছেলের আকুল চাওয়া যার জন্য তাকেই যদি সে না পায় তাহলে তার ছেলের অবস্থা যে কি হবে সেটা উনিই ভালো জানে! আকসাদ হয়তো মুখ ফুটে কিছুই বলবে না কিন্তু ভিতরে ভিতরে একদম শেষ হয়ে যাবে! মা হয়ে উনিও বা কিভাবে পারবে এসব সহ্য করতে! আকসাদের মা অনুগ্রহ কন্ঠে প্রাহীর বাবাকে বললেন,

– ‘ভাইসাহেব, এতটা জটিল হিসেবে কেন দেখছেন সবকিছু? মেয়েকে একদিন না একদিন তো বিয়ে দিবেন নিশ্চয়ই। হোক সেটা দূরে কিংবা কাছে। এই যেমন ধরুন আমি থাকি পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ঠিক আছে! কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে ঢাকায় তো আসিই তাই না! প্রাহীও না হয়…।’

– ‘আমার পক্ষে সম্ভব না! দেখুন আমি মানছি আপনারা বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের, শিক্ষিত, মার্জিতও! কিন্তু আমি পারবোনা প্রাহীকে এত দূর যেতে দিতে। আমি এখানে দিতে ইচ্ছুক নই। কিছুতেই না।’

বলেই উনি উঠে যেতে নিলে আকসাদ এবার যেয়ে প্রাহীর বাবার সামনে দাঁড়িয়ে গেলো। সংকোচবোধ হলেও নিজেকে সামলে প্রাহীর বাবার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

– ‘আংকেল! আমরা একটু বসে কথা বলি? প্লিজ!’

– ‘দেখো এভাবে…।’

আকসাদ আকুতিভরা কন্ঠে বললো,
– ‘আংকেল প্লিজ?’

প্রাহীর বাবা আকসাদের কথায় না বলতে পারছেনা। আকসাদ প্রাহীর বাবার হাত ধরে উনাকে সোফায় বসিয়ে নিজেও উনার পাশে বসলেন। উনার হাতজোড়া নিজের হাতের ভাজে নিলো,

– ‘আংকেল আমি বুঝতে পারছি। আমার সাথে প্রাহীর বিয়ে হলে প্রাহী আপনাদের থেকে শুধু একটুই না অনেকটাই দূরে চলে যাবে! যখনই ইচ্ছা তখনই হয়তো সামনাসামনি দেখতে পাবেন না! কিন্তু আংকেল প্রাহীকে যদি আপনি না দিয়ে থাকেন তাহলে ওর সাথে আমার যে দূরত্বটা তৈরি হবে সেটা আপনার কাছে মনে হওয়া দূরত্বের চেয়েও অসীম কিছু! আমি সবকিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করতে রাজি আছি কিন্তু প্রাহীর ক্ষেত্রে এক আনাও আমি ছাড় দিতে রাজি নই!’

আকসাদ প্রাহীর বাবার হাতটা আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,

– ‘আংকেল! আমি গত প্রায় একটা বছর যাবত ওকে চেয়ে এসেছি। মাঝে হারিয়ে ফেললেও অনবরত খুঁজেছি। আর যখন ফের ওকে পেলাম নিজের সাথে কিভাবে রাখা যায় তা নিয়ে ভেবে চেষ্টা করছিলাম এতদিন। আর আজ যখন সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটা এসেছে আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবেন না আংকেল। আমি আপনার মেয়েটাকে ভালোবাসি ! আমার ভালোবাসাটা শুধু নির্দিষ্ট একটা সীমার মধ্যেই আবদ্ধ নয়, সেই সীমা পেরিয়ে আমি ওকে চেয়ে এসেছি আংকেল! ওকে আমার লাগবে! আমাকে দয়া করে ফিরিয়ে দিবেন না আংকেল, প্লিজ!’

প্রাহীর বাবা স্তব্ধ হয়ে আকসাদের দিক তাকিয়ে আছে। এই ছেলের চোখে মুখে ব্যাকুলতা, উদবেগ, আকুতি সবটা দেখে উনি যা বোঝার বুঝে গেছেন! উনি কখনও ভাবেনি উনাদের পরে উনার মেয়েটাকে কেও এভাবে ভালোবাসবে! এভাবে চাইবে? কিন্তু উনি নিজেও যে সন্তানদের প্রতি বেশ দূর্বল! মেয়েটাকে এত দূরে দিয়ে থাকার চিন্তাভাবনা উনি কখনই মাথায় আনেননি?

শিমলার বাবা এবার প্রাহীর বাবার পাশে বসলেন। কাঁধে হাত রেখে বললেন,

– ‘ভাই! আমারও ঘরে মেয়ে আছে! আমিও বুঝতে পারছি মেয়েকে এত দূর বিয়ে দিলে হয়তো বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে সেই দূরত্ব মেনে নিয়ে থাকাটা অনেক কঠিন তাইনা! কিন্তু ভাইজান, আকসাদ আমাদের ঘরের ছেলে! ছোটো থেকে হয়তো ও আমার নিজের চোখের সামনে বড় হয়নি কিন্তু আমার ভাই, ভাবী ওকে যেভাবে গড়ে তুলেছে আমি জানি আমার এই ছেলে আকসাদ কখনই আপনাকে নিরাশ করবে না! ও ওর জীবনের প্রত্যেকটা জিনিসের ক্ষেত্রে নিপুণভাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছে। আর সেখানে যেই মানুষটাকে ও এত উদ্বিগ্নভাবে চায় তার ক্ষেত্রে ও সর্বদা নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করবে নিশ্চয়ই!’

শিমলার মাও এবার নরমকন্ঠে বললো,
– ‘আর ভাইয়া, মেয়েকে তো আজ বাদে কাল বিয়ে দিবেনই! সেখানে না হয় আমাদের বাড়ির ছেলের কাছে প্রাহীকে দেয়াটা তো ভুল কিছুনা? তাছাড়া আপনার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখুন? ওর নিজেরও কিন্তু আকসাদের জন্য সুপ্ত অনুভূতি আছে! প্রাহীও যে আকসাদকে চায়না তা কিন্তু নয়! বিশ্বাস না হলে নিজের মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন?’

প্রাহী এতক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে বাবার মানা করা,আকসাদের মিনতি সবটা দেখে ওর নিজের বেশ অসহায় লাগছে? বাবাকে এবার নিজের দিক তাকাতে দেখে ও টলটলে চোখে কিছুক্ষণ বাবার দিক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো! প্রাহীর বাবা নিজের মেয়েকে দেখে সবটাই বুঝে ফেললেন। তার কাছে তার মেয়ে একটা স্বচ্ছ আয়নার মতো। যাকে সহজেই পড়া যায়! মেয়ের ওই কাতর চাহনী দেখেও উনি যা উপলব্ধি করার করে ফেলেছন!

//

.

//

.

//

আকসাদ আর প্রাহীর বাবা মিলে এতক্ষণ যাবত কথা বলে চলছে।।প্রাহীর বাবা শত কারণ বা অনিচ্ছা দেখালেও আকসাদ তার প্রেক্ষিতে কোনো না কোনো যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। তাদের এই তর্ক বিতর্কের দর্শক হিসেবে আছে ড্রয়িং রুমের সবাই। আকসাদের মা ছেলের দিক তাকিয়ে ভাবছেন, উনার ছেলেটা উনার মতোই হয়েছে! উনার তুর্কিশ বাবা-মা যখন সাধারণ বাঙালি একটা ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিবেন না বলে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন। তখন উনি একা উনার মতো ফাইট করে আকসাদের বাবাকেই বিয়ে করে নিজের স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছে! আকসাদও হয়তো এভাবেই প্রাহীকে নিজের করে নিবে!

হাজারটা যুক্তিতে না পেরে প্রাহীর বাবা এবার বললেন,
– ‘আমার মেয়ে পড়াশোনা করছে। ওর অনার্স এখনও শেষ হয়নি। আর আমি অনার্স শেষ হওয়া…।’

আকসাদ চটপটে কন্ঠে বললো,
– ‘কোনো অসুবিধে নেই! ফাইনাল শেষে ওর ভার্সিটি থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে আমি ওকে কানাডার সনামধন্য একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিব। ওর ইয়ার লসও হবে না সাথে ওর পড়ালেখাটাও হবে। ওর পড়ালেখার উপর আমি কোনো আঁচ আসতে দিব না! নেভার! ও ওর পড়া শেষ করবে, সাবলম্বী হতে চাইলে হবে! যদিও আমার যা প্রফেশন, না এবিলিটি আছে তা দিয়ে আমি কেন আমার পুরো পরিবার বসে বসে খেতে পারবে! তারপরও যদি প্রাহী নিজ পায়ে দাঁড়াতে চায় ও দাঁড়াবে। আমি ওকে হেল্প করবো কোনো অসুবিধে নেই?’

প্রাহীর বাবা আকসাদের দিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। প্রাহীকে ওই দেশে পড়াবে! এই ছেলে এত কিছু ভেবে ফেলেছে?

– ‘দেখো তুমি…।’

প্রাহীর বাবাকে এবার প্রাহীর মা থামালেন। উনি প্রাহীর বাবার বাহুতে তার রেখে বললেন,

– ‘আমার সাথে এসো কথা আছে।’

প্রাহীর মা স্বামীকে নিয়ে কিছুটা জোর করেই নিজেদের ঘরে নিয়ে গেলেন। ড্রয়িং রুমে সবাই এখন চুপচাপ বসে। আকসাদ হাঁটুতে কনুই রাখে মুখটাকে হাত দিয়ে চেপে ঢেকে বসে আছে। ওর খুব হতাশ লাগছে কেন জানি না! এতদিন মনোবল বজায় রেখে চললেও এখন এসে নিজেকে কেমন যেন উইক লাগছে! হাতের ভাজ থেকে মুখ উঠিয়ে প্রাহীর দিক তাকালো ও। মেয়েটার চেহারা একদম শুকনো! চুলগুলো অগোছালো হয়ে মুখ সহ সারা গায়ে ছড়িয়ে আছে। তাও কি মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে! হাতে নরম ছোঁয়া পেতেই দেখলো ওর মা ওর পাশে বসে,

– ‘চিন্তা করিস না! আশা করি সবটা সহজেই মিটবে?’

আসলেই কি সহজভাবে হবে? আকসাদ মনে মনে যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নিয়ে ফেললো৷ সোজাভাবে না হলে নেই! বাঁকাভাবে নাহয় ও ওর জিনিস আদায় করে নিবে।

//

.

//

.

//

অনেকক্ষণ পর প্রাহীর বাবা আর মা নিচে নেমে এলো। প্রাহীর বাবার মুখ থমথমে। প্রাহীর মা সহজভাবেই আছে৷ নিচে আসতেই প্রাহীর বাবা গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,

– ‘আমি রাজি!’

সাথে সাথে সবার মুখে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। প্রাহী অবিশ্বাস্য নয়নে চেয়ে রইলো! এটা কি সত্যি! বাবা! বাবা মেনে নিয়েছে! ওর বিশ্বাস হচ্ছেনা! মায়ের দিক তাকাতেই ওর মা মুচকি হাসলো। আকসাদ হুট করে দাঁড়িয়ে প্রাহীর বাবার মুখোমুখি হয়ে বলে উঠলো,
– ‘আমি আজই আমার আর প্রাহীর এনগেজমেন্টটা সেরে ফেলতে চাই।’

প্রাহীর বাবার থমথমে মুখখানা এবার কুঁচকে এলো। প্রাহীর মাও হালকা চমকালেন! এভাবে এনগেজমেন্ট হয় নাকি?

– ‘এবার একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছেনা?’

প্রাহীর বাবার গমগমে উত্তরে আকসাদ সহজকন্ঠে বললো,
– ‘না! আমার তো ইচ্ছে ছিলো আজকেই বিয়ে করে ফেলা। কারণ আমি আর রিস্ক নিতে চাইনা।’

বলেই শিমলার মামী আর সোফায় বসে থাকা লোকটার দিক আকসাদ চোখ গরম করে তাকালো। প্রাহীর দিক ইশারা করে সামনে ফিরে বললো,

– ‘কিন্তু যেহেতু প্রাহীর পরীক্ষা চলছে, তাই আমি এনগেজমেন্ট টা সেরে নিতে চাইছি।’

প্রাহীর বাবা হতভম্ব হয়ে আকসাদের দিক তাকিয়ে আছে। এ ছেলে বলে কি? আকসাদের মা স্বাভাবিক। শিমলার বাবা-মা একটু চমকালেও চুপ আছে আপাতত! আকসাদ সোফায় বসে থাকা লোকটার দিক আঙুল উঁচু করে বললো,

– ‘এন্ড ইউ যাস্ট আউট! আর হ্যাঁ যাদের আসার কথা ছিলো ওদের অবশ্যই ফোন করে মানা করবেন। বলবেন পাত্রীর তার পাত্রের সাথেই এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। আন্ডারস্ট্যান্ড? যান এখন?’

লোকটা তড়িঘড়ি করে হাতের ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে শিমলার মামীর দিক একটা কঠোর চাহনী দিলেন। আকসাদ আড়চোখে তাকিয়ে বললো,

– ‘আর আমি আমার এনগেজমেন্ট এর সময় কোনো আনওয়ান্টেড মানুষ চাইনা!’

কথাটা যে শিমলার মামীকেই উদ্দেশ্যে করে বলা হয়েছে৷ এটা উনি ঠিক বুঝতে পেরেছেন। নিজের বড় মেয়ের জন্য আকসাদকে তিনি চাইছিলেন। এত কিছু করে কোনো লাভ তো হলোই না সাথে একগাদা কথা আর অপমান সহ্য করতে হলো! থমমারা চেহারা নিয়ে উনি বিদায় নিলেন।

ড্রয়িং রুমের পরিবেশ আপাতত শান্ত। প্রাহী একের পর এক ঝটকা নিতে পারছে না। হেলে পড়ে যেতেই শিমলা ওকে শক্ত করে ধরলো। জলদি পায়ে ওর ঘরে নিয়ে গেলো!

//

//

অনেক কথাবার্তা, সমঝোতার পর স্থির হলো আজকেই এনগেজমেন্ট হবে। প্রাহীর বাবা পুরোপুরি মতামত দিয়েও দেয়নি এমন একটা অবস্থা। শিমলার বাবা আর প্রাহীর মামা মিলে উনাকে বুঝিয়েছেন। তাও উনি চুপ! প্রাহীর মা উনার ভাইয়ের বউ হেনা আর শিমলার মাকে নিয়ে রান্নাঘরে ব্যাস্ত! কোনো জোগাড়জন্দ ছাড়াই মেয়ের এনগেজমেন্ট হচ্ছে? কিছু হলেও তো করতে হবে! প্রাহীর মা আর মামী মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন এনগেজমেন্ট এর পর আকসাদরা রাতের খাবার খেয়ে পরে যাবে! আকসাদ আপাতত বেড়িয়েছে সাথে ওর মাও। ছেলের বউয়ের জন্য এনগেজমেন্ট এর আংটি সহ কিছু জিনিস ও বাড়ি থেকে আনতে গেছে। আকসাদের বাবা এখনও আসেনি। আকসাদের মা, বাবা, কাকা সবাই সন্ধ্যার পর একসাথে আসবে।

প্রাহী আপাতত শাড়ী পড়ে বসে আছে। আশেপাশে ছোটো বড় মামাতো ফুপাতো বোনেরা গোল হয়ে বসে আছে। ওরা মেকআপ বক্স নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। কিভাবে প্রাহীকে সাজাবে! তা নিয়ে ডিসকাস করছে। নক্ষত্র নাকি সব শোনার পর পরই ঢাকা হতে রওনা দিয়েছে। একমাত্র বোনের এনগেজমেন্ট! যেভাবেই হোক ওর থাকাটা প্রয়োজন! শিমলা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেছে। বেরিয়ে দেখে প্রাহী চুপচাপ বসে আছে! মুখ মুছতে মুছতে শিমলা সেদিক এগিয়ে গেলো,

– ‘কি ব্যাপার? কনের মুখ গোমড়া কেন?’

প্রাহী মাথা তুলে শিমলার দিক একটা ছোটো চাহনি দিয়ে শাড়ির আচলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
– ‘সবকিছু মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে!’

শিমলা হাতের তাওয়ালটা চেয়ারে মেলে দিয়ে প্রাহীর পাশে বসলো,

– ‘কিছুই তাড়াতাড়ি হচ্ছে না। যেটা যেভাবে হওয়ার দরকার সেভাবেই হচ্ছে। হয়তো এভাবেই সবটা হওয়ার কথা ছিলো? এগুলো নিয়ে ভেবে নষ্ট করিস না এখন। উঠ তো। চুলটা আছড়ে নে। কাকীমারা আসার আগেই তোকে সাজিয়ে দিব।’

প্রাহীর কাজিনগুলো ওদের দিক ফিরে বললো,

– ‘হ্যাঁ প্রাহী আপু জলদি করো। আইশ্যাডো দিয়ে তোমাকে সাজিয়ে দিব। আমরা ভাবছি তোমার এক চোখে তিন চারটা আইশ্যাডো একসাথে দিব। ভালো হবে না!’

শিমলা মাথা নেড়ে ওদের দিক চেয়ে হেসে ফেললো। প্রাহী ফোস করে একটা শ্বাস ছেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি চালালো।

//

//

//

সাড়ে সাতটা বাজে। আকসাদরা চলে আসবে কিছুক্ষণ পর। প্রাহীর মা এদিকে বারবার প্রাহীর ঘরে এসে উঁকি দিয়ে ওকে দেখছে। মেয়েটার এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে আজকে? কালও তো মেয়েটা এসময় তার সাথে বসে চা খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। আর আজ মেয়েটার এনগেজমেন্ট! মেয়েটা বুঝি আর বেশিদিন নেই উনাদের সাথে? প্রাহীর মা হালকা ভেজা চোখে ওর দিক ফের তাকালেন। বেগুনী জামদানী শাড়িতে প্রাহীকে বেশ মিষ্টি লাগছে। মেয়ে তার মুখ নিচু করে বসে আছে! উনার খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটার পাশে যেয়ে মাথায় হাত বুলাতে। কিন্তু এখন ওর পাশে বসলেই উনি নিজেকে চোখের পানি সামলাতে পারবেন না! সাথে মেয়েটাও তার সাথে চোখের জল ফেলবে! সকাল থেকে মেয়েটা উনার এমনেই অনেক কেঁদেছে। প্রাহীর মা শাড়ির আঁচলের কোনা দিয়ে চোখের কোন মুছে রান্নাঘরের দিক এগোলেন।

//

প্রাহী আপাতত জানালার দিক বাহিরে তাকিয়ে আছে। মাথায় কারো ছোঁয়া পেতেই দেখলো নক্ষত্র ব্যাগ কাঁধে ওর দিক চেয়ে আছে। প্রাহী নক্ষত্রকে দেখে দাঁড়াতে নিলেই নক্ষত্র ওকে হাত দিয়ে থামিয়ে বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসলো,

– ‘এতো কাহিনী হয়ে গেলো? অথচ আমাকে তো কিচ্ছুটি বললি না?”

প্রাহী অসহায় চোখে নক্ষত্রের দিক তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র ওর মাথায় চাপড় মেরে বললো,

– ‘কিরে বল? নাকি আমাকে কখনও ফ্রেন্ডলি মনে হয়নি তোর! দারোগা ভাইদের মতো তো আর শাসনে রাখিনি তাহলে বলিস নি কেন?’

প্রাহী নক্ষত্রের বাহুতে মাথা রেখে বললো,
– ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে এত কিছু হয়ে যাবে ভাবিনি। বিশ্বাস কর!’

নক্ষত্র বোনের মাথায় হাত বুলালো,
– ‘আচ্ছা বুঝেছি? এখন কান্নাকাটি বন্ধ! নইলে এনগেজমেন্টে যে ছবি তুলবো ছবি বাজে আসবে?’

প্রাহী মাথা তুলে ভাইয়ের দিক তাকালো,
– ‘তা তুই কি ছবি তুলার জন্য এসেছিস নাকি?’

– ‘হ্যাঁ! বিয়ে জীবনে একবারই হয়! এখন সেটা যেই সময়ে বা যেই পরিস্থিতিতেই হোক না কেন! কিছু স্মৃতি রেখে দিতে হয়! বার বার এইদিনগুলো তো আর আসবে না তাইনা?’

প্রাহী নক্ষত্রের কথায় কিছু বললো না। হালকা শ্বাস ফেলে কিছু একটা ভাবতেই বললো,

– ‘বাবা…। বাবা নাকি এখনও কারো সাথে কথা বলছে না!’

নক্ষত্র প্রাহীর গালে হাত রেখে বললো,
– ‘চিন্তা করিস না! আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। সময় দে একটু! তাতেই হবে।’

– ‘প্রাহী রেডি তুই?’

শিমলার কথায় নক্ষত্র আর প্রাহী ঘুরে তাকালো। শিমলা নক্ষত্রকে দেখেই কপালে ভাজ ফেলে বললো,

– ‘চলেও এসেছেন?’

– ‘হ্যাঁ ফকিরনী এসেছি!’

শিমলা চোখঘুরিয়ে নক্ষত্রের পানে চাইলো,
– ‘মুখ ঠিক রেখে কথা বলুন, ফালতু লোক।’

নক্ষত্র বিছানা ছেড়ে কাঁধের ব্যাগ নিয়ে বললো,
– ‘যা বলেছি ভুলতো কিছু বলিনি? তুই এভাবে ঘুরছিস কেন?

– ‘কিভাবে ঘুরছি?’

নক্ষত্র প্রাহীর দিক তাকিয়ে বললো,
– ‘ওকে একটা ড্রেস দে তোর থেকে। ওর জন্য ছবিগুলো খারাপ আসুক আমি চাইনা।’

নক্ষত্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শিমলা সেদিক বিরক্তিকর দৃষ্টি ফেলে প্রাহীর কাছে এগোলো।

– ‘ডেকেছিলি?’

– ‘হু?’


.

.

.

পা টিপে টিপে প্রাহী ছাদে গেলো। দরজা পেরোতেই দেখলো ছাদের রেলিং এ হাত দিয়ে এক পুরুষালী অবকাঠামো দাঁড়ানো। প্রাহী সেদিক এগোলো। কাছাকাছি যেতেই পরিচিত অবয়বটি পিছন ফিরলো। প্রাহী মাথা নিচু করতেই গালে আদুরে ছোঁয়া পেতেই দেখলো আকসাদ নামক মানুষটা ওর দিকে চেয়ে! প্রাহীও মানুষটার দিক ভালোভাবে তাকালো। কালো পাঞ্জাবি কনুই পর্যন্ত গোটানো, ফর্সা হাতজোড়া বেরিয়ে আছে। হোয়াইট পাজামা, চুলগুলো ফেলে রাখলেও অগোছালো ভাবে দু’একটা চুল কপালে এসে পড়ছে। মানুষটাকে এক কথায় অসাধারণ লাগছে! এই অসাধারণ পুরুষটি বুঝি তার হবে!

বেগুনী শাড়ি পড়া, খোলা চুল, চোখে শুধু কাজল লেপ্টানো আধো মুখখানার মেয়েটাকে দেখে আকসাদের নিজেকে কেমন দিশেহারা লাগছে!ইচ্ছে করছে জাপ্টে মুখখানা ধরে কতগুলো আদরের স্পর্শ লেপে দিতে! এভাবে আর কতদিনই বা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়! গালে রাখা হাতের বুড়ো আঙুল প্রাহীর গালে বুলিয়ে বললো,

– ‘আপনাকে সুন্দর লাগছে প্রাহী!’

প্রাহী হালকা নড়ে উঠলো। আকসাদের ওই চাহনী দেখে ও শুষ্ক ঢোক গিললো। চোখ সরাতে যেয়েও সরাতে পারছেনা। কারণ মানুষটার নজরে ও নিজেই আবদ্ধ?

– ‘শুনলাম আপনি নাকি আমায় ডেকেছেন?’

আকসাদের কথায় প্রাহী হুশে ফিরলো। আস্তে মাথা নাড়লো। আকসাদ প্রাহীর গালে হাত বুলালো,

– ‘কিছু হয়েছে! সব ঠিকঠাক?’

প্রাহী আকসাদের দিক এবার নরম দৃষ্টি দিয়ে তাকালো,

– ‘আসলে…আমার আপনাকে কিছু বলার ছিলো!’

– ‘হু বলুন?’

আকসাদের চোখে প্রাহী চোখ রাখলো। সকাল থেকে কেঁদে যাওয়ার দরূন জড়ানো কন্ঠে বললো,

– ‘আকসাদ, আমাদের দেখা হয়েছে বেশিদিন হয়নি। হয়তো আপনার দিক থেকে আপনি আমায় আগে থেকে চিনে নিয়েছেন। কিন্তু আমার দিক থেকে আমাদের চেনাজানার সম্পর্ক হয়েছে বেশিদিনও হয়নি। এর মধ্যে না চাইতেও এক প্রগাঢ় অনুভূতিতে আপনার সাথে আমি জড়িয়ে পড়েছি। আকসাদ…আমি…।’

আকসাদ প্রাহীকে আরও কাছে টেনে বললো,
– ‘হু বলুন প্রাহী?’

প্রাহী অসহায়হীন চাহনী দিয়ে বললো,

– ‘আকসাদ আমি ভেবেছিলাম সম্পর্ক শুরুর আগে নিজেকে আরও কিছুটা সময় নিয়ে আপনার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করবো। নিজের আপনার প্রতি যে অনুভব জন্মেছে তাকে আরও জানবো। কিন্তু সময়টা সেভাবে পাইনি। সবকিছু যে এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ভাবিনি! আকসাদ আমার অনুভূতিগুলো হয়তো আপনার মতো এত গাঢ় বা নিবিড় নয়। আমাকে যেভাবে চিনেছেন সেভাবে আমি আপনাকে কতটুকু চিনেছি বা বুঝে উঠতে পেরেছি আমি জানি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো! আপনার মতো করে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কর‍তে পারব কি না তা আপাতত বলতে পারব না। তবে আমার দিক থেকে আমি যেভাবে পারার নিজের অনুভূতি বা অনুভবগুলো মেলে ধরার চেষ্টা করব!’

আকসাদ প্রাহীর মুখটা নিজের হাতজোড়া দিয়ে টেনে আরও কাছে আনলো,

– ‘প্রাহী আমি কি কখনও আপনাকে বলেছি আমার মতো করেই আমাকে ভালোবাসতে হবে! কেউ কখনও কারোর মতো করে ভালোবাসতে পারে না আর পারলেও সেটা যে হুবুহু অপর মানুষটার মতোন হতে হবে এমন কোনো কথা নেই! এইযে আপনি একটু একটু করে একপা এগিয়েছেন আমার নিকট এটাই আমার জন্য অনেক কিছু! এভাবেই আপনি আলতো পায়ে এগিয়ে আসবেন! আমি দুহাত মেলে আপনাকে যতটুকু সম্ভব নিজের সাথে জড়িয়ে নিব! আপনি যেভাবে ইচ্ছে নিজের অন্তরের স্বীকারোক্তি তুলে ধরবেন আমার কোনো অসুবিধে নেই। শুধু আপনার মনটার সাথে আমার মনটার জোড়া লাগাতে দিন! তাতেই হবে?’

প্রাহী টলমলে চোখে আকসাদের চোখে চেয়ে। ওই তপ্ত চোখের চাহনীর মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই! হারালে অসুবিধে নেই! সামনের মানুষটার মাঝেই না হয় ও নিজেকে খুঁজে নিবে কোমড়ে পুরুষালি স্পর্শ পেতেই প্রাহী কেঁপে উঠলো। আকসাদ প্রাহীর কোমড় চেপে ধরে ডানহাত দ্বারা চোখের কোণ মুছে বললো,

– ‘কাজল লেপ্টানো যাবেনা এখন! ঠিক আছে?’

প্রাহী মাথা উপর নিচ করলো। আকসাদ মুচকি হেসে প্রাহীর মুখখানা সামনে এনে গাল বরাবর ঠোঁটের গভীর চু*মু এঁকে দিলো। ঠোঁটের উপর ভারী নিশ্বাস অনুভব করতেই প্রাহী চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।

– ‘হয়েছে? এখন আর কথা বলা যাবেনা। যত কথা,প্রেম পড়ে করবে। নিচে যেতে হব এখন!’

শিমলার আওয়াজে প্রাহী দ্রুত সরে দাঁড়ালো। শিমলা দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে! ইশ্! মেয়েটা কি ভাববে! প্রাহী শিমলার কাছে যেতেই শিমলা ওর হাত ধরে নিয়ে গেলো। আকসাদও আস্তেধীরে ওদের পিছন পিছন চললো।

//

//

সন্ধ্যে আটটা সবাই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত! প্রাহীর বাবা ঘরে ঘাপ্টি মেরে বসেছিলেন! আসতে চাচ্ছিলেন না। পরে নক্ষত্র আর শিমলা যেয়ে বুঝিয়েছে। শিমলা হালকা ধমকে বলেছে,

– ‘উঠো পাঞ্জাবি পড়বে। মেয়ের এত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তুমি থাকবে না তো আর কে থাকবে! চলো!’

জোড় করে পাঞ্জাবি পড়িয়ে প্রাহীর বাবাকে নিচে এনেছে। আকসাদের বাবাও উপস্থিত সকলের মধ্যে। প্রাহীর বাবা নিচে নেমে আর মুখ গম্ভীর করে রাখতে পারেননি। হেসে হেসেই আকসাদের বাবা-মা সহ সবার সাথে কুশলাদি করেছে! যতো যাই হোক এনারা মেয়ের ভবিষ্যৎ শ্বশুরবাড়ির লোকজন!

আকসাদ আর প্রাহী সোফার মাঝ বরাবর বসে। পাশ হতে আকসাদের মা ব্যাগ থেকে আন্টির বক্স বের করে আকসাদের হাতে দিলেন! উনি জানতেন তার ছেলে বিয়ে না করে ফিরবেন না। তাই এবার আসার পথে সব কিছুর প্রিপারেশন নিয়েই তিনি এসেছেন! আকসাদ মায়ের হাত থেকে আন্টির বক্সটা নিয়ে তা হতে চকচকা ডায়মন্ডের রিং বের করে প্রাহীর বাম হাতের অনামিকা আঙুলে টুপ করে পড়িয়ে দিলো। প্রাহীর মা পাশ থেকে ওর হাতে আন্টি ধরিয়ে দিলো। উনি এটা মূলত প্রাহীর ভবিষ্যৎ হাসবেন্ড এর জন্যই এক বছর আগে বানিয়ে রেখেছিলেন। যার জন্য উনাদের আন্টির জন্য বেগ পোহাতে হয়নি। প্রাহীও ধীরহাতে আকসাদের পুরু অনামিকা আঙুলে স্বর্ণের আন্টিটা পড়িয়ে দিলো।

আন্টি পড়ানো শেষে সবাই যখন খোশগল্পে মত্ত। পাশ হতে শিমলা প্রাহীর কাঁধ খোপ করে ধরে বললো,

– ‘ সম্পর্কের জোড়া ধীরে ধীরে লাগছে তবে!’

চলবে,,,