#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-২০]
~আফিয়া আফরিন
জীবনের কিছু মুহূর্ত থাকে খুব অসহায়। না নিজে থেকে সামলানো যায়, না কারো কাছে প্রকাশ করা যায়। রাফির অবস্থাটা হয়েছে এমন। সে পর পর দুইদিন গানের রেকর্ডিং ক্যান্সেল করে দিয়েছে। জুহির খোঁজ তার কাছে নাই, আজ নিয়ে দুইদিন।
—“তুমি বিহীন এই দুটো দিন!”
এই রঙ্গমঞ্চের দুনিয়ায় জুহি কোথায় লুকিয়েছে কে জানে? খুঁজবে কোথায় রাফি তাকে? চেনাপরিচিত বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছে, কিন্ত জুহির দেখা মিলে নাই। সাজানো গোছানো জীবনটা যেন কোন ক্রমশ সাগরের গভীর অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। সায়রা হক অনুসুচনায় দগ্ধ হচ্ছেন বারংবার। নিজের ছেলের সুখের জন্যই তো ওসব কথা বলেছিলেন, কে জানত ওই কথাগুলোই ছেলের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াবে!
রাফি মায়ের সাথে কথাও বলে নাই। সায়রা হক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কাল রাফিকে নিয়ে জুহি যেখানে থাকে সেখানে একবার গিয়ে ঘুরে আসবেন। সে তো কাউকে না কাউকে কিছু বলেই গেছে।
কিন্ত সেখানে গিয়েও জুহির খোঁজ পাওয়া গেল না। দেখা হল বাড়িওয়ালা আজাদ উদ্দিনের সাথে।
তিনি জানালেন, জুহি কোথায় গেছে কিছু তো বলে যায় নাই। তারপর রাফি বিনীত কণ্ঠে বলল, ‘আচ্ছা আংকেল জুহির খোঁজখবর যদি কিছু পান, কাইন্ডলি আমাকে জানাবেন।’
রাফি তাকে নিজের কনট্যাক্ট নাম্বার দিয়ে দিল। ভদ্রলোক হঠাৎই যেনো রাফিকে চিনতে পারলেন। তিনি কিছুটা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই তুমি রাফি না? গান গাও, তাইনা? হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো। জানো বাবা তোমার কতো গান শুনেছি। তুমি, তুমি আমার বাসায়? আসো আসো বাসায় আসো।’
রাফি অপ্রস্তুত বোধ করল। আগে হলে হয়ত খুশি হতো। এরকম হুটহাট করে কেউ তাকে তার কাজের মাধ্যমে চিনে ফেললে বেশ আনন্দ হয়। কিন্তু আজ খুশি হতে পারল না। বিষন্ন মন নিয়ে মায়ের দিকে চেয়ে রইল।
ভদ্রলোক ফের বললেন, ‘আমার বাসায় এসে এক কাপ চা খেলে খুব খুশি হতাম!’
রাফি বলল, ‘আংকেল, আজ না বেঁচে থাকলে কোন একদিন আসব ইনশাআল্লাহ।’
‘এসো না বাবা, এতো তাড়া কিসের? আর তুমি জুহিকে কীভাবে চেনো? ওর খোঁজ করছিলে যে?’
‘ওর খুব দরকার ছিল আংকেল। আমার ফোন নাম্বার তো আপনার কাছে থাকলই যদি খোঁজ পান তাহলে দয়া করে একটু জানাবেন।’
‘আচ্ছা জানাব। আর বারণ করো না বাবা, এক কাপ চা আজ তোমাকে আমার সাথে খেতেই হবে।’ তারপর তিনি সায়রা হকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপা আপনি প্লিজ ছেলেকে নিয়ে আসুন।’
এইরকম অবস্থায় কারো বাসায় গিয়ে শান্তিতে চা খাওয়ার কথা ভাবতেই পারে না রাফি। কিন্তু ভদ্রলোক যেভাবে বলছেন সেখানে রাফি আর না করতে পারল না। একদিকে জুহির চিন্তা, অন্যদিকে জাগতিক রহস্য; সবটাই তার মনটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে।
চা খেতে খেতে ভদ্রলোক গল্প করলেন নানান বিষয়ে। রাফি আর ওর মা যখন উঠবে তখন তিনি বললেন, ‘জুহি হয়ত ওদের বাসায় গেছে। বাড়ি গিয়ে তো বেশিদিন থাকে না, ফিরে আসে। ও এলে তোমার খবর দিব। ওর সাক্ষাতে না হয় আরেকদিন এসে আমার সাথে চা খেয়ে যেও। মেয়েটা কী লক্ষ্মী। মেয়েটাকে ছেলের বউ করতে চেয়েছিলাম।’
রাফি থমকে তাকাল। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেলের বউ করতে চেয়েছিলেন মানে?’
তিনি হেসে বলতে শুরু করলেন,’জুহির সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল কমলাপুর স্টেশনে। আমি রংপুর থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। সেদিন কয়েকজন ছিনতাইকারী আমার ব্যাগ, ফোন, আরো বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী যা ছিল সব নিয়ে আমায় নির্মমভাবে ফেলে গিয়েছিল। কেউ বাঁচাতে পর্যন্ত আসে নাই আমার ঐ শোচনীয় অবস্থাতেও। কিন্ত সৃষ্টিকর্তা বোধহয় জুহিকে আমার বাঁচানোর দূত রূপে পাঠিয়েছিলেন। মেয়েটা ঠিক আমায় সারিয়ে তুলল। এটা বছর খানেক আগের কথা, তখন জুহি সবে ঢাকা এসেছে ওর মামার সাথে। বাড়ি খুঁজছিল, আমার বাসা ফাঁকা ছিল তাই দিয়ে দিলাম। এইরকম একটা মেয়ে কাছাকাছি থাকাও আনন্দের ব্যাপার। তাই পার্মানেন্ট ওকে নিজের মেয়ে করে রাখার জন্য ছেলের সাথে বিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্ত, জুহি মানল না। উল্টো বলল, আঙ্কেল কিছু কিছু সম্পর্ক অনেক দূর থেকেই সুন্দর। আপনি আমাকে মেয়ে হিসেবে যেমন স্নেহ করেন, আমি এটাই চাই। এর থেকে বেশি কিছু আমার থেকে আশা করবেন না, আমি একেবারেই সেই আশ পূরণ করতে পারব না। তারপর থেকে এইতো, মেয়ের মতোই রয়েছে।’
রাফি আর কিছু বলল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাকে নিয়ে বেরিয়ে এল। বাড়ি ফিরে অস্থিরতা তাকে আঁকড়ে ধরল। মায়ের কাছে ভেজা কন্ঠে আবদার করে বসল, ‘জুহিকে এনে দাও মা। আমি ওকে ভালোবাসি। এতদিন তো চোখের দেখাটা দেখতে পারতাম এখন তো তাও পারছিনা। ওকে ফিরে পেতে চাই মা। ওকে ছাড়া এই জীবন কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। নিজের স্বার্থে ওকে দরকার, জুহিকে না পেলে আমি আর কখনো ভালো থাকতে পারব না।’
সায়রা হক অশ্রুসিদ্ধ হলেন। রাফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘এমন করিস না বাবা আমাকে মাফ করে দিস। কত বড় একটা ভুল করে ফেললাম আমি।’
‘আমি কিছু জানি না মা। আমি শুধু জানি জুহিকে আমার চাই।’ ছেলের কণ্ঠে কী তীব্র আকুলতা!
সায়রা হক সেই সেই মুহূর্তে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যেটা রাফিকে তৎক্ষণাৎ জানালেন না। রাফিকে কিছুক্ষণের জন্য শান্ত করতে চাইলেন, কিন্তু সে শান্ত হলো না। ছুটে গেল মাহিদের কাছে, তাকে বারবার জিজ্ঞেস করল জুহি কোথায় আছে? কিন্তু মাহিদ বরাবরের মতোই “জানিনা” উত্তর দিল। রাফি যতই তাকে ভালবাসুক না কেন, যেখানে জুহি বলে দিয়েছে রাফিকে যেন তার কথা না বলা হয়; সেখানে মাহিদ তো কিছুতেই পুরো ঘটনা বিস্তারিত না জেনে জুহির কথা রাফিকে বলে দিতে পারে না।
কিন্তু রাফি সিদ্ধান্ত নিল জুহির মামাবাড়ি থেকে ঘুরে আসবে একবার। জুহি কোথাও নেই, যাবে কোথায়? নিশ্চয়ই মামা বাড়িতেই আছে।
পরদিনই রাফি ছুটল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। যে করেই হোক জুহিকে খুঁজে পেতেই হবে।
.
জুহি সকাল সকাল স্টেশনের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে। কিন্তু এখানে এসেই অবাকের সপ্ত সীমানায় পৌঁছে গেল সে। রাফি এখানে? নিশ্চয়ই জুহিকে খুঁজতে এসেছে। জুহি তড়িঘড়ি করে একটা দোকানের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। সে কিছুতেই দেখা দিতে চায় না। একলা ছিল, একলাই থাকবে; কষ্ট পেলেও এই ছোট্ট জীবনে আর কাউকে জড়াবে না।
ভাগ্যিস আসার সময় মামাকে বলে এসেছিল, জুহির খোঁজে যদি কেউ আসে মামা যেন তাকে খোঁজ না দেয়। রাফি দৃষ্টির আড়াল হতেই জুহি আরেকবার মামাকে ফোন করে বলে দিল, তার খোঁজ যেন কাউকে না দেওয়া হয়। মামা বারবার কারণ জিজ্ঞেস করল, জুহি উত্তর দিল সে ফিরে এসে সব জানাবে। তারপর জুহি চলল, নিজ গন্তব্যে।
রাফি যখন জুহির খোঁজে এল তখন মামা বেশ অবাক হল। রাফি হঠাৎ করে কেন জুহির খোঁজে আসবে? জুহির সাথে তার কি সম্পর্ক? একবার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও পিছিয়ে গেলেন। জুহি যেহেতু বলেছে সে এসে সব বলবে, তাহলে তাই হবে আগ বাড়িয়ে কিছু করার দরকার নেই।
জুহিকে খুঁজে না পেয়ে আজকের দিনটাও বিষাক্ত দিনে পরিণত হলো রাফির।
জুহির খবর একেবারেই কেউ জানে না? কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? একটা মেয়ে এভাবে ভোজবাজির মত কী করে উধাও হয়ে যেতে পারে? আজ বেশ কয়েকটা দিন পর্যন্ত জুহি নিখোঁজ অথচ কারো মধ্যে চিন্তার কোন রেশমাত্র নেই।
মামাকে জুহির কথা জিজ্ঞেস করা হলো, মামা নির্বিকার ভাবে জুহির কোনো খবর জানেন না বলে দিলেন। তার মধ্যে দুশ্চিন্তার ছাপটুকুও নেই। আর মাহিদের সামনে দিয়ে রাফি সারাদিন জুহিকে খুঁজে বেড়ায় অথচ মাহিদের ভাববঙ্গিও নির্বিকার। কিন্ত কেনো? এর পেছনে রহস্য কী? নাকি সবাই জানে জুহির খোঁজ, কিন্ত রাফিকে কেউ বলছে না! হতেই পারে এমন। রাফি ফের ছুটল ঢাকার উদ্দেশ্য।
.
জুহি যখন যশোর সাগরদাঁড়িতে পৌঁছেছে তখন সাড়ে চারটা পার হয়ে গেছে। মামার থেকে ঠিকানা তো আগেই নিয়েছিল, সেই ঠিকানা অনুযায়ী পনেরো মিনিটের মাথায় গন্তব্যে পৌঁছে গেল।
চোখের সামনেই দেখতে পেল বহু আকাঙ্খিত বাড়িটি। একতলা বিশিষ্ট সাদা মার্বেল পাথরের বাড়িটি নানান রঙের ফুলের কারুকার্যে সজ্জিত। বাড়িতে বোধহয় কোনো অনুষ্ঠান চলছে, হয়ত বা কারো বিয়ে। জুহি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্যে অচেনা একজন মানুষ হুট করে ঢুকে পড়লে কে কী মনে করবে, এই ভেবে যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল জুহি। আবার ফিরেও যাওয়া যায় না, অনেক দূর থেকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। মূলফটক দিয়ে এক মধ্য বয়সী মহিলাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে পিছু ডাকল।
তিনি পেছন ফিরে জুহির উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমাকে ডাকলে মা?’
‘জি আন্টি। এটাই কি রাশেদ চৌধুরীর বাসা?’
ভদ্রমহিলা হেসে জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি কি বরপক্ষের কেউ নাকি?’
জুহি সহসা জবাব দিল, ‘না না আমি বরপক্ষ অথবা কোনে পক্ষের কেউ না। আসলে আমার ওনার সাথে একটু দরকার ছিল। দেখা করা যাবে কি ওনার সাথে?’
‘ও আচ্ছা ভেতরে আসো। আসলে মেয়ের বিয়ে তো, রাশেদ ভাই মনে হয় ওখানেই ব্যস্ত আছে। তবুও, আসো। আচ্ছা তুমি কে তোমাকে তো চিনতে পারলাম না?’
জুহি তাচ্ছিল্যর হাসি ফুটাল ওষ্ঠদ্বয়ে। মেয়ের বিয়ে? হতেই পারে, সে যখন বিয়ে করে এসেছিল তখন একটা ছেলে আর একটা মেয়ে তো ছিলই। তারাও তো সৎ ছেলে মেয়েই!
খানিকক্ষণের জন্য ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে জুহি ভদ্রমহিলার প্রশ্নের জবাব ছিল, ‘আমাকে চেনার কথাও নয় আন্টি। হয়তো ঠিকঠাক পরিচয় দিলে চিনতেও পারেন।’
ভদ্রমহিলাকে অনুসরণ করে জুহি ভিতর পর্যন্ত চলে এল। ভিতরে এসে আন্তরালের চাকচিক্য দেখে জুহি আরেকদফা অবাক হলো।
ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আসো, রাশেদ ভাই ঘরেই আছেন।’
জুহি কিছুটা সংশয় নিয়ে চলল। যতযাই হোক, লোকটা তার জন্মদাতা পিতা। যা কথা বলবে ভেবে এসেছিল, সব তো গুলিয়ে গেছে। এখন, এখন কী হবে?
রাশেদ চৌধুরীর হাতের কাজ গোছাচ্ছিলেন। মেয়ের বিয়ের পুরো দায়িত্ব ছেলের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তবুও নিজে নিজের মতো করে কিছু দিক সামলাচ্ছেন। তার বোন মায়মুনার কাছ থেকে যখন শুনলেন একটা মেয়ে তার সাথে দেখা করতে এসেছে, তিনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললেন।
অগত্যা জুহিকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। ঠিক আধা ঘন্টা পর রাশেদ চৌধুরী জুহিকে ডেকে পাঠালেন। জুহি ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। বুঝ হবার পর আজ প্রথম জন্মদাতা পিতাকে চাক্ষুষ দেখা। বুকের মধ্যে একবার কম্পন দিয়ে উঠল বটে, কিন্তু জুহি সেসব পাত্তা দিল না। ঘনঘন বার কয়েক নিঃশ্বাস নিল। রক্তের টান বলেও তো একটা কথা আছে, জুহি আজ হাড়ে হাড়ে অনুভব করল সেটা।
রাশেদ চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, ‘শুনলাম তুমি নাকি আমার সাথে দেখা করতে এসেছ? চেনো তুমি আমাকে? অথবা আমি কী চিনি তোমাকে?’
জুহি কিঞ্চিৎ হেসে স্থির কন্ঠে উত্তর দিল, ‘আমাকে আপনি হয়ত চিনবেন না কিন্তু আপনি আমার মাকে চেনেন।’
চৌধুরী সাহেব সামান্য ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মা? কে তোমার মা?’
‘তিনি—ই, আজ থেকে ১৬ বছর আগে যিনি আপনার স্ত্রী ছিলেন। তিনি—ই আমার মা, যে আপনার প্রতারনার স্বীকার হয়ে আপনার বাড়ি ছেড়েছিল। মনে পড়ে কিছু? ১৬ বছর কী খুব দীর্ঘ সময়?’
.
.
.
চলবে…..
#মন_কারিগর🩷 [পর্ব-২১]
~আফিয়া আফরিন
জুহির কথা শুনে তৎক্ষণাৎ তিনি কোন কথা বলতে পারলেন না। বুকের ভেতরটায় স্পষ্ট ভাঙচুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
নিজেকে খানিক সামলে বললেন, ‘তু—তুমি জুহি? তুমি তো আমার—ই মেয়ে। তুমি জানো, কত খুঁজেছি আমি তোমাদের?’
জুহি চোখ তুলে চাইল। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
‘না জানিনা। আর এটা জানার প্রয়োজনও মনে করি না। তবে আমি আজ আপনার কাছে কেন এসেছি জানেন? আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে, সেগুলোর উত্তর চাই।’ কড়া কণ্ঠে স্পষ্ট ভাষায় বলল সে।
জুহির কথা শুনে চৌধুরী সাহেব কোনো কথা বলতে পারলেন না। এতো বছর পর বিষাক্ত অতীত সামনে আসবে, তা ভাবনার বাহিরেই ছিল। চোখের সামনে ভেসে উঠল সোনালী সেই দিনগুলো। কী সুন্দর মুহূর্তগুলো ছিল! শারমিন আর তার কত সুন্দর সাজানো গোছানো স্বপ্নের মত সংসার ছিল। ঠিক সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতেন বউয়ের মুখদর্শন করে, আবার ফিরেও বউয়ের লাল টুকটুকে গোলাপের মতন মুখখানি দেখতে পেতেন। এই লাল টুকটুকে মুখখানি তার জীবনে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্যই তো সবার সাথে কত লড়াই করেছেন। যখন শারমিনের পরিবারের কেউ মেনে নিল না, তখন এক বুক দুঃসাহস নিয়ে পালিয়ে চলে গেলেন।
শুরু হলো টোনাটুনির ছোট্ট সংসার। কোল আলো করে জন্ম নিল, ফুলের পাপড়ির ন্যায় কোমল মখমল এক ছোট্ট শিশু। সেই ফুল সারাজীবন ভালোবেসে আগলে রাখতে মা-বাবা নাম দিলেন জুহি; যার অর্থ ফুলের ধরন। তারপর হঠাৎ করে সুখে শান্তির এই সংসারে কী হয়ে গেল? কেউ একজন এসে জীবনটাকে বদলে দিল। ব্যাস, এক নিমেষের মধ্যেই সাজানো গোছানোর স্বপ্নের সংসারটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সবটা তো তার ইচ্ছাকৃত ছিল না, কিছুটা দায়িত্বের বেড়াজালে পড়ে আর কিছুটা একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের কথা রাখতে।
চৌধুরী সাহেব যখন স্মৃতিচারণ করছিলেন তখন জুহি নিম্নপানে দৃষ্টি স্থির রেখে বলতে শুরু করল, ‘আপনি জানেন, আপনার একটা ভুল কত সর্বনাশের সৃষ্টি করেছে? আমার ছোটবেলাটা ছারখার করে দিয়েছেন। বড়ো হয়েও কি শান্তি পেয়েছি আমি? নাকি পাচ্ছি? সবার কাছ থেকে একটাই কথা আমাকেও শুনতে হয়, আমার ভেতরেও বেইমান প্রতারকের রক্ত বইছে। এসব কথা শুনতে শুনতে আমি এতটাই বিরক্ত হয়ে গেছি, কারো উপর ভালোবাসা নামক শব্দটা আমি অনুভব করতে পারি না। সবাই আগে চায় আমার একটা পরিচয়। তাদের কী করে বলব, যারা আমায় জন্ম দিয়েছে তারাই আমার পরিচয়টা নিজ হাতে শেষ করে দিয়েছে! আমি কেনো সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাইনা বলতে পারেন? এর কোন উত্তর আছে আপনার কাছে? আপনি তো দিব্যি সুখে শান্তিতে আছেন, আজকে শুনলাম ছোট মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। তাহলে আপনার পাপের শাস্তি আমাকে কেন ভোগ করতে হচ্ছে? শৈশবে আমি অন্যদের মতো কেন মা বাবার ভালোবাসা পাই নাই বলতে পারেন? আপনাদের দ্বন্দ্বে আমাকে কেন পুড়তে হচ্ছে? আমার কি দোষ?’ বেশ ক্রোধ নিয়ে কথাগুলো বলে থামল জুহি।
চৌধুরী সাহেব এইবারও জবাব দিতে পারলেন না। আসলে কোন উত্তর তার শব্দ গুচ্ছে নেই। পাশে থাকা বেতের চেয়ারে বসে পড়লেন। এই ছোট্ট জীবনে এত পাপ তিনি করে ফেলেছেন? আজ জুহি না বললে হয়ত কখনো জানা হতো না। এতো অপরাধী লাগছে নিজেকে! জুহি তার নিজের মেয়ে, অথচ মেয়ের সামনে মুখ তুলে একটা কথা বলার মত সাহস তিনি দেখাতে পারছেন না। জুহি যে সমস্ত কথাগুলো বলল তার উত্তর আসলেই হয় না। সত্যিই তো, মেয়েটার কী দোষ ছিল? মা বাবার সকল অন্যায় সেগুলো সন্তানদের উপর এত বিশ্রী ভাবে কেন পড়ে?
জুহি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ‘কী, উত্তর দিতে পারছেন না?’
‘তোমার মা কোথায়?’ থমথমে কণ্ঠে শুধালেন চৌধুরী সাহেব।
জুহি হেসে জবাব দিল, ‘ও আচ্ছা আপনি তো জানেন না! আপনার দেওয়া কষ্ট তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে দিতে একদম নিঃশেষ করে দিয়েছে। পৃথিবীর বুকে এখন আর আমার মায়ের নিঃশ্বাস পড়ে না। সে অনেক কাল আগেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। মরা কি খুব সহজ? আমার মায়ের মত সংসার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যারা সব অন্যায় চেপে রাখে তারা কি খুব সহজেই মরতে পারে? না, পারে না। আপনি সেই কঠিন কাজটা আমার মাকে দিয়ে করিয়েছেন।’
রাশেদ চৌধুরী এইবার নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেলেন। এক জীবনে এত পাপ তিনি করে ফেলেছেন? এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন কিভাবে? বুকের ভিতর কী অদ্ভুত চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। তার নিজের মেয়েটা তার সামনে, অথচ একবার গিয়ে বুকে জড়িয়ে নিতে পারছেন না! এই মুহূর্তে দুনিয়াটাকে খুব বিষাক্ত মনে হচ্ছে।
এমন সময় কারো কন্ঠে ঘোর কাটল। নারী কন্ঠে পাশের ঘর থেকে ডাক শোনা গেল। তবুও রাশেদ চৌধুরী নির্বিকার বসে রইলেন।
জুহি ফের বলল, ‘আপনাকে কষ্ট দেওয়া অথবা আপনার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটাকে নষ্ট করে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি জানতাম না আজ আপনার ছোট মেয়ের বিয়ে। জানলে হয়ত এই দিনে এসে উপস্থিত হতাম না। কিন্তু আজকে আপনাকে কথাগুলো না বলেও পারলাম না। অনেকদিন ধরে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিলাম। আজ যে উত্তর পেয়েছি এমনটাও নয়! কিন্তু আমার মনটা শান্ত হয়েছে। একজনকে ভালোবাসার ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম, সেখানেও দরকার আমার পরিচয়। তাই খুব করে জানতে ইচ্ছে হলো, আমি কেন ঠিকঠাক ভাবে নিজের পরিচয়টা পেলাম না? যাইহোক ব্যাপার না, আমি তো বাবা নামক শব্দটার সাথে পরিচিত নয়। তাই, নিজের বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় এটাও আমার জানা নেই। আমার ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। আর আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ বা রাগ কিছুই নেই। “কেউ কারো জন্য মরে না” এই কথাটা যেমন সত্যি ঠিক সেভাবেই এই কথাটাও সত্যি যে আমার মা আপনার জন্যই আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন। আমার আপনার উপর রাগ থাকলেও সময় বিবর্তনে সেটা নিঃশেষ হয়ে গেছে।’
জুহি অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে। সেকি একবারও খেয়াল করছে না বাবার চোখের পানি, নাকি খেয়াল করার প্রয়োজন বোধ করছে না। সম্পর্কের সীমারেখা গুলো এতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেছে?
এমন সময় ঘরে মায়মুনা ঢুকলেন। এতক্ষণ জুহি আর তার বাবা ব্যতীত এই ঘরে কেউ ছিল না। বোনের আগমনও যেন চৌধুরী সাহেবকে নড়াতে পারল না নিজের জায়গা থেকে। তবে তিনি ভাইয়ের চোখে পানি দেখে অবাক হলেন! সরু দৃষ্টিতে চাইলেন জুহির দিকে।
তারপর জুহিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে এখানে? ভাই কাঁদছে কেন?’
জুহি কিছু বলল না। এখন তাকে চলে যেতে হবে। এতক্ষণ বুকের উপর পাথর চেপে রেখে কত কথাই তো বলে দিল, কিন্তু আর যে সম্ভব না। বারবার নেত্রজোড়া পূর্ণ হচ্ছে অশ্রুতে। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কাঁদার জন্যও তো একটা ভরসার জায়গা লাগে। জুহির তো সেটুকুও নেই। কী সহায়হীন, নিঃসঙ্গ, একলা অচেনা রাস্তার পথিক সে!
জুহি খুব আলতো হাতে আড়ালে চোখের কার্নিশ মুছে নিল। তারপর বলল, ‘আমি আসছি।’
কিন্তু মায়মুনা এসে পথ রোধ করলেন জুহির। তীক্ষ্ণকণ্ঠে শুনালেন, ‘এই মেয়ে কে তুমি? আর ভাইজানকে কি বলেছ তুমি? উনি এরকম করছেন কেন?’
জুহি কাঠকাঠ কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘সব প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই আমি।’
‘অবশ্যই তুমি বাধ্য। তুমি আমার ভাইকে কি বলেছ এটা আমি জানতে পারব না? এটা কি আমি জানার অধিকার রাখিনা মেয়ে?’
দুজনের বাক বিতন্ডায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন চৌধুরী সাহেব। মায়মুনাকে থামিয়ে কিঞ্চিত হেসে বললেন, ‘ও জুহি। ও আমার মেয়ে, আমার নিজের মেয়ে। আমাদের সেই ছোট্ট জুহি। দেখেছিস কতো বড়ো হয়ে গেছে।’
কথাটুকু বলতে গিয়েও তিনি অশ্রু সিক্ত হলেন। মায়মুনা বাকরুদ্ধ হলেন কিয়ৎক্ষণের জন্য। সেই ছোট্ট মেয়েটা এতো বড়ো হয়ে গেছে?
জুহি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। পিছু পিছু তারাও এলেন। বসার ঘর পেরোতেই এক শক্ত পুরুষালী কণ্ঠে জুহি থমকে গেল।
‘আরে জুহি তুমি এখানে?’
জুহি পেছন ফিরে তাকাল। অবাক হলো এখানে জাহিনকে দেখে। জাহিন এগিয়ে এল। বসার ঘরে অনেক মানুষজন। সবাই নিজেদের মত হই-হুল্লোড় করছে, আবার কয়েকজনের দৃষ্টি তাদের দিকে নিবদ্ধ। জাহিনের কথায় জুহি একটু অপ্রস্তুত বোধ করল।
জাহিন ফের জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখানে? আমার জানামতে তোমার তো এখানে আসার কথা নয়। আরে তুমি তো খুব দরকার ছাড়া তোমার মামা বাড়িও যাওনা, সেই তুমি হঠাৎ করে যশোর! তাও আবার আমাদের বাড়িতে? তুমি কি আমাদের বাড়ির কাউকে চেনো?’
জুহি হাসল। কিন্তু জবাব দিতে পারল না। জাহিনের পরিচয় এখনো হাতড়ে যাচ্ছে। কে সে?
জাহিন পুনরায় সবার দিকে চেয়ে বলল, ‘ও হচ্ছে জুহি। আমার খুব পরিচিত, আর একদম ছোট বোনের মত। আমরা একই সংস্থায় কাজ করছি।’
উপস্থিত কয়েকজন জুহির সাথে কুশল বিনিময় করল। তারপর যে যার মতো নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। ওইদিকে বোধহয় বর পক্ষ চলে এসেছে। জাহিন আশেপাশে তাকাচ্ছে। তাকে বরপক্ষের কাছেও থাকতে হবে আবার জুহির দিকটাও ছেড়ে দিতে পারছে না।
জাহিনের অবস্থা জুহি বুঝতে পারল। তাই বলল, ‘জাহিন ভাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবেন না। আমি আসলে এখানে একটা কাজে এসেছিলাম। আমার কাজ শেষ, তাই আমি ফিরে যাব। আপনি বরং গিয়ে ওই দিকটা সামলান।’
মায়মুনাও জাহিনকে ইশারা করলেন। জাহিন যাওয়ার আগে জুহিকে বলে গেল, ‘আজকে আমার ছোট বোনের বিয়ে তো তাই একটু ব্যস্ত আর কী! তুমি অপেক্ষা করো আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।’
জুহি নির্বিকার রইল। যতদিন যাচ্ছে তার অবাক হওয়ার ক্ষমতাটাও বোধহয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জাহিনকে দেখে তো অবাক হওয়ার-ই কথা ছিল, কিন্তু যতটা অবাক হওয়ার কথা ততটা জুহি হলো না।
মানুষ যখন বাস্তবতার নির্মম বেড়াজালে এইভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়, তখন বোধহয় তার জাগতিক সব অনুভূতি অসাড় হয়ে যায়।
জুহি বেড়িয়ে এলো চৌধুরী নিবাস থেকে। অগোছালো পায়ে হাঁটতে লাগল গন্তব্যহীন পথিকের ন্যায়। আজ সত্যিই সে নিঃস্ব। কিছু নেই তার, কেউ নেই। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। অচেনা ফোন নাম্বার দেখে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও বারবার ফোন করার কারণে রিসিভ করল।
.
নিঃশব্দে অনাগ্রহে অনেকদূর পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে খেয়ালে এল সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন তো আর বাড়ি ফিরে যাওয়া যাবে না। মামাকে ফোন করে জানিয়ে দিল। তারপর খুঁজে একটা হোটেল রুম বুক করে নিল। আজকের রাতটা কোনোভাবে কাটিয়ে সকালে ফিরে যাওয়া যাবে ক্ষন। হোটেলের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে জানালার কোণে গিয়ে বসল।
আজ ভরা পূর্ণিমার রাত। পূর্ণিমা রাতে পৃথিবীর জলে-স্থলে নেমে এসেছে সুন্দরের দেবতা। মনকে চন্দ্রগ্রস্ত করে মায়াময় মােহ রচনা করছে রাতের রহস্য মায়াজাল। চন্দ্রকিরণের নরম স্পর্শে আলাে আর আঁধারের মায়ায় মিলন চাঁদনি রাতকে করেছিল অপরূপ আর জুহির মনটাকে করেছে অপহরণ! সে ফোন বের করে পুরনো সিম চালু করল; যেই ফোন নাম্বার রাফির কাছে আছে। সিম চালু করে নেটওয়ার্ক কানেক্ট করতেই হোয়াটসঅ্যাপে একের পর মেসেজ আসতে লাগল। জুহি চেক করে দেখল সবগুলো মেসেজ রাফির তরফ থেকে আর একটা মেসেজ জাহিন দিয়েছে যেটা কিছুক্ষণ আগেই এল।
অনেকগুলো মেসেজের মধ্যে একটা মেসেজ তার বুকের ঠিক বা’পাশে গিয়ে আঘাত হানল।
—“সর্বনাশের দেবীর নামটা কেন দিয়েছিলাম জানো? ঐ যে শরৎকালের উপসংহার লগ্নে চৈত্র মাসের ন্যায় আমার সর্বনাশের বীজ বপন হয়েছিল। এভাবে না বলে কয়ে চলে গেলে কেন? ভালোবাসো না আমায় ঠিক আছে, কিন্তু চোখের সামনে সামনে তো থাকতে পারতে। তুমি জানো, কি দ্বগ্ধ অনলে পুড়ছি আমি? কারো থেকে তোমার কোন খোঁজ পাচ্ছিনা। আমি জানি ইচ্ছে করেই কেউ তোমার খোঁজ আমায় দিচ্ছেনা। আচ্ছা ব্যাপার না,
দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব,
দূর হতে আমি তারে সাধিব
বাঁধন-বিহীন সেই, যে বাঁধন অকারন
মায়াবন বিহারিণী,
মায়াবন বিহারিণী হরিনী,
গহন-স্বপন-সঞ্চারিণী,
কেন তারে ধরিবারে, করি পণ অকারণ
মায়াবন বিহারিণী!”
লেখা অংশটুকু পড়ে এইবার আর জুহির খারাপ লাগল না, বরং রাফির পাগলামি দেখে হাসি পেল। জুহি পাল্টা রিপ্লাই করল, ‘এতো মিস করছেন আমাকে?’
.
.
.
চলবে….
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৬৪৫