#মন_কারিগর🩷[পর্ব-৩৪]
~আফিয়া আফরিন
ভালোবাসা মানুষকে মুক্ত করে, বেঁধে ফেলে না। ভালোবাসা আফিমের মতো, লোহার শিকল নয়। ভালোবাসা নামক এই চার অক্ষরের শব্দ মানুষের গোটা একটা জীবনকে বদলে ফেলতে পারে। কখনো সেটা ইতিবাচক অথবা কখনো নেতিবাচক।
এই শহরে মাঝেসাঝে প্রেম নামক অঝোর ধারায় বৃষ্টির মতো। সেই প্রেমের বর্ষণে প্রতিটি প্রেমিক হৃদয় সিক্ত হোক। এই প্রেমবর্ষণে একে অপরের প্রতি রাগ, অভিমান, বিদ্বেষ, সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক। সেদিন সায়রা হক রাফি জুহির মান-অভিমানের কিছু কথা শুনে পরবর্তীতে জুহিকে বলেছিলে, ‘শুনো মা সম্পর্কের মধ্যে রাগ অভিমান যা থাকে না কেন তা বেশি সময় স্থায়ী করবে না। জানো তো ঘরভাঙ্গা ঝড় আসতে বেশি সময় লাগে না। তোমরা এখন স্বামী স্ত্রী, এটা কিন্তু কোন আলগোছের সম্পর্ক নয়। এই সম্পর্কে কখনো অতিরিক্ত রাগ জেদ দেখাবে না। রাগারাগি হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু। আর একজন রাগ করলে অবশ্যই অপরজনের রাগ ভাঙ্গানোটা বাধ্যতামূলক। আর সম্পর্কে কখনোই ইগো দেখাবে না। ইগো থাকলে সেই সম্পর্ক কখনো স্থায়ী হতে পারে না। বেশি হলেও একদিন, দুইদিন অথবা দশ দিন। তারপর, তারপর সব শেষ! তারচেয়ে বরং বেশি বেশি ভালোবাসো। ভালোবাসার যতই ডালপালা গজাবে সম্পর্ক ততই গভীরে যাবে। আর অভিমানের যতই ডালপালা গজাবে সম্পর্ক ততই বিচ্ছেদের দিকে ঠেকবে।’
আচমকা শাশুড়ির মুখে এসব কথা শুনে জুহি সেই মুহূর্তে লজ্জা পেয়েছিল বটে, তবে কথাগুলোর সত্যতা হারে হারে টের পেয়েছে।
মামা মামীর খুব অনুরোধে জুহি সেইবার মামাবাড়ি গেল। রাফিরও যাওয়ার কথা ছিল জুহির সাথে, কিন্তু কারণবশত শেষ পর্যন্ত রাফি আসতে পারল না। এদিকে জুহি বাড়ি এসেছে বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। রাফির সাথে নিয়ম করে প্রতিদিন কথা হয় ঠিকই, কিন্তু তবুও যাকে ভালোবাসার হাজার সিন্ধু উৎসর্গ করেছে তাকে ছেড়ে কি আর দিন কাটে?
জুহি নিজের ডায়েরীর পাতায় পাতায় কিছু অনুভূতি বদ্ধ করে রেখে দিয়েছে। থাক না রাফির প্রতি কিছু অনুভূতি একান্ত নিজের হয়ে, সবটা প্রকাশ করে দিলে তো ভালোবাসায় কোনো রহস্যই থাকল না!
—“ভালোবাসার শক্তি কী অদ্ভুত, তাই না? একজন বিনে আরেকজন বেঁচে থাকা দায়। দিনগুলো যেনো কাটতেই চায় না। তবুও তুমি বিহীন দিন কাটাতে হয়। কী অদ্ভুত ব্যাপার!”
—“এখানে এসে তোমার সাথে ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে ঘোরার দৃশ্যগুলো খুব মনে পড়ছে। কী করি বলতো? সেদিন যে গোলাপটা খোপায় গুঁজে দিয়েছিলে, জানো সেটার পাপড়ি গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।”
—“অনেক শান্তি ওই মানুষটার মধ্যে। শুধু শান্তিই নয়, আত্মভোলা তৃপ্তিও বটে। অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু হাত আটকে আসছে বারবার। তোমাকে ছাড়া প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা ঘন্টার মতো কাটাচ্ছি।”
—“তোমার দেওয়া সেই গোলাপ ফুলের পাপড়িটা একদম শুকিয়ে কুড়কুড়ে হয়ে গেছে। তবুও গোলাপের মাঝে গোলাপের ঘ্রাণ ব্যতীত, রাফি রাফি ঘ্রাণও পাই আমি!”
—“দূরে থাকলে নাকি ভালোবাসা জিনিসটা বেশ জোরালো ভাবে উপলব্ধি করা যায়। আমি কিন্তু বেশ ভালোভাবেই করছি। তুমি করছ কি?”
জুহি আপনমনে হাসে, আনমনে ডায়েরীর পাতায় হাত বুলিয়ে রাফিকে অনুভব করে।
সব মিলিয়ে জুহির দিনকালও ভালো কাটছে। সে বাজে ঘটনার পর তাদের এনজিও নিজেদের কাজে বেশ উন্নতি করেছে। চেয়ারম্যান পদে যিনি এসেছেন, তিনি বেশ সাহায্য করেছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রতি পদক্ষেপে। নারীদের পক্ষে দুর্দান্ত বক্তব্য পেশ করে সারা দেশেই বেশ আলোচনায় রয়েছে তারা।
আর এই বছর রাফি সেরা সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে মনোনীত হলো এবং “দ্যা মিউজিক্যাল রকস্টার অফ বাংলাদেশ” অনুষ্ঠানে সুরকার এবং গীতিকার খেতাবের পুরস্কার অর্জন করল।
সেই উপলক্ষে বাড়িতে বিশাল এক আয়োজন রাখা হল। জুহির সাথেও রাফির অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের বেশ ভালো আলাপ হল। একপর্যায়ে রাফি জুহিকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘চলো, আরেকবার বিয়ে করে ফেলি।’
জুহি চোখ পাকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা? আবার বিয়ে করার শখ জাগছে? তো, কাকে বিয়ে করবে শুনি?’
‘বলব কেন? আমি বিয়ে করব, ব্যাপারখানা আমার মধ্যেই থাকুক।’
‘আচ্ছা আচ্ছা যাও তবে, বিয়ে করো।’
‘অনুমতি দিচ্ছ তাহলে?’ রাফি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।
জুহি মুচকি হেসে বলল, ‘আমি তো একশয়ে একশ বার অনুমতি দিলাম। এখন দেখার বিষয়, তোমার সেই অনুমতি খাটানোর সাহস আছে কিনা!’
রাফি সহসা বলে উঠল, ‘এই এই আমার সাহস নিয়ে কোন দ্বিধা রেখ না। আমার সাহসের ব্যাপারে তোমার কোন ধারনাই নাই।’
‘হুহ ভাব নিও না। পারলে আরেকটা বিয়ে করে তারপর আমার সামনে আসো।’
‘বিয়েটা তো করবই তোমার সামনে।’
‘তাই?’ জুহি শ্রাগ করল।
রাফি উত্তরে মুচকি হাসল কিছু বলল না। মুখে হাসি বজায় রেখেই বন্ধুদের দিকে ছুটল। রাফিকে চলে যেতে দেখে মিতা জুহির দিকে এগিয়ে এল। হাত নাড়িয়ে বলল, ‘হাই আপু।’
জুহিও উত্তরে হাত নাড়িয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করল। তারপর মিতা ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল, ‘রাফির সেই অসুখটা কি এখনো আছে আপু?’
জুহি নির্বিকার কন্ঠে উত্তর দিল, ‘আরও বেড়েছে।’
মিতা চোখ বড় বড় করে বলল, ‘বলো কি? সামলাও কীভাবে?’
জুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘ওকে সামলানো কঠিন ঠিক তবে আমার কঠিন মনে হয় না। ভালোবাসি তো! ভালোবাসলে কত কিছু সহ্য করতে হয়। যাইহোক, এসব ব্যাপার না। তারপর তুমি বলো, তোমার আর কোনো নতুন খবর আছে? আই মিন, নতুন কেউ জুটল?’
‘না।’ মুখ কালো করে বলল মিতা। পরক্ষণেই ফের বলল, ‘ভেবেছি জীবনে আর প্রেমই করব না। আমাকে দেখলেই কেমন ওরা দৌঁড়ে পালায়। ওইতো আদনান আর প্রান্ত বসে আছে। ভাবলাম এতদিন পর দেখা একটু কথা বলে আসি। গিয়ে দাঁড়ালাম দুজনের সামনে, দুজন কেমন দুজনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে। কোনো কথা নেই কিছু নেই, কিছুক্ষণ বাদেই দুজন দুই দিকে দৌঁড়। তুমিই বলো আপু, এসবের কোন মানে আছে? আমি বাঘ না ভাল্লুক? সেই মুহূর্তে ভেবে নিয়েছি জীবনে আর কোনদিন প্রেমই করব না। বিয়ের বয়স হলে একদম বিয়ে করে বরের গলায় ঝুলে পড়ব। আইডিয়া কেমন?’
‘একদম ঝাকানাকা আইডিয়া। তখন হাজার চেষ্টা করলেও তোমার বর আর তোমার থেকে দৌঁড়ে পালাতে পারবে না। পালিয়ে গেলেও বাঁচতে পারবে না।’
‘হ্যাঁ আমিও এটাই ভেবেছি।’
তারপর দুইজনের মধ্যে আরও বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হল। মিতা বিদায় নেওয়ার পর জুহি রাফিকে খুঁজতে খুঁজতে ঘরে গেল। গিয়ে চোখে পড়ল ঘরটা অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু সাজানো গোছানো। গোলাপ ফুলের হালকা ছোঁয়া আছে। আশ্চর্য হয়ে সে রাফিকে খুঁজতে লাগল। ড্রয়িং রুমে আদনান আর প্রান্তকে দেখে জিজ্ঞেস করল, তারা কেউ রাফিকে দেখেছে কিনা?
জুহির কথায় আদনান উত্তর দিল, ‘দশ মিনিট আগে বের হল। কোথায় গেল সেটা বলে নাই।’
‘এই সময় আমার কোথায় গেছে? ফোন দিচ্ছি ফোন ধরে না। মারাত্মক রকমের ইরিস্পন্সিবল ছেলে তো!’
আদনান বলল, ‘চিন্তা করবেন না ভাবি। চলে আসবে। আমি ফোন দিয়ে দেখতেছি।’
পাশেই মাহিদ ছিল। জুহির কথা তার কান অব্দিও পৌঁছাল। সে উঁচু স্বরে জুহিকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘বিয়ের পর মানুষ এই ভাবেই চেঞ্জ হয়ে যায়। আগে যার নিজেরই কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছিল না, সে এখন আরেকজনের খোঁজ খবর নিচ্ছে। তাকে ইরিস্পন্সিবল বলছে। আর সেগুলো আমাদের নিজেদের চোখে দেখা লাগতেছে। কী আর করব? দেখতে তো হবেই। সিঙ্গেল বলে কথা। সইতেও পারি না কিছু বলতেও পারি না। চোখের সামনে এই দুজনের আদিখ্যেতা দেখতে হয়।’
জুহিও বলল, ‘ঠিকই আছে। বিয়ে শাদি না করলে এভাবেই ছোটভাই বোনদের আদিখ্যেতা রোজ চোখের সামনে দেখতে হবে। হুহ।’
সবাই হৈ হৈ করে উঠল মাহিদের বিয়ে নিয়ে। তার বিয়ের কথা চলছিল আরও কিছুদিন আগে থেকেই। সেই কথা এগোতে এগোতে এই মাসে ফাইনাল করা হয়েছিল। কিন্তু মাহিদের ব্যস্ততার কারণে সেটা পিছিয়ে সামনের মাসে নিয়ে যাওয়া হয়। জুহি এজন্যই মাঝে মাঝে কটাক্ষ করে। বারবার বলে, ইশশশ বিয়েটা হয়ে গেলে কত ভালো হতো! একটা বিয়ে খেতে পারতাম। নতুন বউ দেখতে পারতাম।’
.
একঘন্টা পেরিয়ে গেলেও রাফি বাড়ি ফিরে এল না। এতক্ষণে সব মেহমান বিদায় নিচ্ছে। শাশুড়িকে একা পেয়ে জুহি এগিয়ে এসে বলল, ‘মা আপনার ছেলের খোঁজ জানেন?’
‘না তো।’
‘ফোন ধরছে না। কোথায় গেছে বলেও যায় নাই।’
‘ফাজিল ছেলে কোথায় গেছে কে যানে? ওর কথা বাদ দাও তো। তুমি ভেতরে যাও, বাকি আত্মীয়-স্বজনরা বিদায় হবে। তুমি গিয়ে কথাবার্তা বল।’
‘আচ্ছা।’ মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল জুহি।
রাফি বাড়ি এল, মেহমানরা সব বিদায় হওয়ার পর। জুহি কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘সমস্যা কি তোমার ফোন ধরো না কেন? কোথায় গিয়েছিলে? বলে যাও নাই কেন?’
রাফি উত্তর না দিয়ে সরু চোখে তাকিয়ে ঘরে চলে গেল। জুহিও পিছু পিছু চলল। ফের জিজ্ঞেস করল, ‘কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন?’
‘উত্তর দেওয়ার মতো প্রশ্ন হলে তারপর না উত্তর দিব!’
‘তারমানে আমি যা জানতে চাচ্ছি তার উত্তর হয় না, এটাই বলতে চাচ্ছ তুমি?’
‘বলতে চাই না, এটাই বলছি। বলেছিলাম না, বিয়ে করব। বিয়ের বন্দবস্ত করতে গেছিলাম। এই দেখো ঘরটাও ইন্সট্যান্ট সাজিয়ে ফেলেছি। সুন্দর হয়েছে না?’
জুহি ধমকের সুরে বলল, ‘রাফি! বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।’
‘উহু। আজকে আমাকে ধমক দিলেও আমি মানব না। আমি বিয়ে করব বলেছি যখন তখন করবই। আর তুমিও অনুমতি দিয়ে দিয়েছ। এখন কথা পাল্টালে আমি মানব কেন? এত কষ্ট করে বিয়ের ব্যবস্থা করলাম, আর যদি বিয়েই না করি লোকে মন্দ বলবে না?’
জুহি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, ‘ধুর, যা ইচ্ছে করো।’
রাফি জুহির মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে দু’কাঁধে নিজের দু’হাত রেখে বলল, ‘আমার বউ না দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? বউ দেখবে না?’
‘তোমার বউ তুমি মন ভরে দেখো তো। আমার সাথে কী? যাও।’ রাগ অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলল জুহি।
রাফি জুহির নাকে নাক ঘষে বলল, ‘দেখব তো, সাথে তোমাকেও দেখাব।’
আচমকা রাফি পেছন থেকে জুহির দু’চোখে নিজের হাতের সাহায্যে বাঁধন দিল। তারপর এগিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। জুহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই কানে মুখে ফিসফিস করে বলল, ‘আমার বউ দেখো।’
জুহির চোখ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল রাফি। জুহি আয়নায় নিজেকে দেখে রাফির উদ্দেশ্য নাক ছিটকে বলল, ‘এ তোমার বউ? ভীষণ বাজে দেখতে।’
‘মন থেকে বলছ নাকি জেলাসি থেকে?’ ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল রাফি।
জুহি অধিক আত্নবিশ্বাস নিয়ে বলল, ‘অবশ্যই মন থেকে বলছি। ইশশ রাফি, তোমার বউটা এত পঁচা।’
‘হ্যাঁ পঁচা। আমায় একটুও ভালোবাসে না। আমার থেকে সবসময় দশ হাত দূরে দূরে থাকে।’
‘তারপরেও ভালোবাসো আমাকে?’
রাফির চোখে দু’খানা চকচক করে উঠল। কণ্ঠে উচ্ছ্বাস। সহসা হাসিতে মাতল তারপর অনুরক্তিতে বলল, ‘হ্যাঁ ভীষণ ভালোবাসি, মারাত্মক ভাবে ভালোবাসি!’
‘কেন?’
‘কারণ শুনবে?’
‘হুঁ।’
‘কারণ…….,
তোমার চোখে আকাশ আমার
চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা,
ভেতর থেকে বলছে হৃদয়
তুমি আমার প্রিয়তমা
পথের শুরু থেকে শেষে
যাব তোমায় ভালোবেসে
বুকে আছে তোমার জন্য
অনেক কথা জমা
ভালোবাসি তোমায় কত
দেখো হৃদয় খুলে
রাঙিয়ে দেব তোমার পাঁজর
মনের রঙিন ফুলে
তোমায় দেখার শেষ হবে না
দু’চোখ বোজার আগে
আকাশ হয়ে জড়িয়ে রব
গভীর অনুরাগে..!’
.
.
.
চলবে…..