মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব-২০+২১+২২

0
375

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২০
একটু আগের গরমের ছ্যাট এখন আর নেই।প্রকৃতিতে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া বইছে।প্রাণ জুরিয়ে যাওয়ার মতো বাতাস যাকে বলে।সূর্য তার প্রখরতা দেখাতে পারছে না।কারন একটু আগের শুভ্র মেঘে ভরা আকাশটা।এখন ঘনকালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে।সেই কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গিয়েছে সূর্য।পৃথিবীর বুকে বর্ষন নামার আগমনি বার্তা দিচ্ছে তারা।ঠান্ডা এই পরিবেশের মতোই ঠান্ডা হয়ে আছে পিহু আর প্রিয়ান।একটু আগে অথৈয়ের করা প্রশ্নে তারা ঠিক কি জবাব দিবে জানে না।পিহু একটু পর প্রিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।তার চোখেও স্পষ্ট ভেসে আছে।সেও জানতে চায় কি চায় প্রিয়ান।ঠিক কি কারনে সে পিহুর সাথে ওইদিন ওরকম ব্যবহার করেছিল।ওদের চুপ থাকতে দেখে অথৈ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে,
‘ কি? মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছিস কেন?জবাব দিচ্ছিস কেন?তাড়াতাড়ি দে জবাব। নাহলে ভালো হবে না।’

পিহু কাচুমাচু হয়ে বসল।আমতা আমতা করে বলে,
‘ কি বলব?কিসের জবাব দিতে বলছিস?আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’

আহিদ এইবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
‘ পিহু বাই এনি চান্স। তুই কি আমি এখানে দেখে ভয় পাচ্ছিস বলতে?দেখ আমি তোর ভাই এটা ঠিক আছে।সাথে কিন্তু আমরা বেস্টফ্রেন্ডও।তাই কোনো কিছু লুকাতে হবে না।সোজাসাপ্টা বলে ফেল।’

পিহু আহিদের কথায় নাক মুখ কুচকে ফেলল।বলল,
‘ এমন একটা ভাব করছিস যেন আমি তোকে কতো ভয় পাই।আর সেই ভয়ে একদম গুটিয়ে থাকি।ভুলে যাস না আমি তোর দু মিনিটের বড়ো।সো তোকে ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই।আর তাছাড়া আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই।কারন আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।যা জিজ্ঞেস করার প্রিয়ানকেই কর।সেই ভালো জবাব দিতে পারবে।’

পিহুর কথায় আহিদ রাখি চোখে তাকালো।এই মেয়েটা তাকে দু পয়সার দাম দেয়না।আহিদ বির বির করল,’ বট গাছের ডা*য়নি কি কখনো কাউকে ভয় পায়?’

পিহু শুনলো আহিদ কিছু বলেছে।কিন্তু কি বলেছে তা শোনতে পায়নি।তাই বলল,’ কিছু বললি আমায়?’
‘ নাহ, তোকে আর কি বলব।তুই আমাকে ভয় পাস না।তাই তোকে কিছু বলে লাভ আছে?’
‘ এইতো লাইনে এসেছিস।’

অথৈ সবার কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলে উঠে, ‘ তোরা চুপ থাকবি?এখানে সিরিয়াস ডিসক্যাশন করছিলাম আমরা।আর তোরা ঝগরা করছিস।আর আহিদ,তুই এমন ঝগড়া করতে শিখেছিস কার থেকে?’

আহিদ বলল,’ ঝগড়া আবার না শিখে থাকা যায়?তুই একটা,রিধি একটা আর দুই দুইটার( প্রিয়ান আর পিহুকে দেখিয়ে) কথা তো বাদই দিলাম।যেই ঝগড়া করিস।তো আমি বাদ থাকবো কেন?’

আহিদের বলতে দেরি চারজোড়া রাগি চোখের দৃষ্টি ওর দিক পরতে দেরি হয়নি।অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান ওই রাগি চোখের দৃষ্টির তেজে আহিদকে পারলে ভস্ম করে দেয়।আহিদ থতমত খেয়ে বলে,’ কিরে এইবাভে তাকিয়ে আছিস কেন?’

রিধি রাগি স্বরে বলে, ‘ তুই আমাদের ঝগড়াখোর বলছিস।তো এইজন্যে কি তোকে চুমু দিব?’

আহিদ রিধির কথায় দুষ্টু হাসল।লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে বলে, ‘ যাহ,সবার সামনে এসব কি বলিস? আমার লজ্জা করে নাহ।আর তাছাড়া যদি এতোই আমায় চুমু দিতে চাস তো অন্য জায়গায় গিয়ে দিতে পারিস।আমি মাইন্ড করবো নাহ।’

আহিদের এই কথায় রিধি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল।পরপরেই খেকিয়ে উঠল,’ আহিদ্দার বাচ্চা।তোরে তো আমি আজকে শেষ করে দিবো।বান্দর পোলা।’

রিধি গিয়ে আহিদের চুল টেনে ধরল।আকস্মিক হামলায় আহিদ ভড়কে যায়।চেঁচিয়ে উঠে,’ ছাড় আমাকে।উফ ছাড়।আমার কতো যত্নের চুল এগুলা।আমার একটা চুলও যদি ছিড়ে না। তাহলে তোর মাথায় একটা চুলও থাকবে না।’

এদিকে অথৈ বিরক্ত হয়ে বসে বসে এদের কান্ড দেখছে।সে এদের কি এইজন্যে ডেকেছিল? কি করতে এসেছে এখানে।আর কি হচ্ছে।তার এই মেন্টা’ল বন্ধুগুলো ভালো হবার নয়।তা সে বুঝে গিয়েছে।এদের সাথে যে একটা সুস্থ্য আলোচনা করবে বসে শান্তভাবে তা আর হবে না বোধহয় কোনোদিন।অথৈ দীর্ঘশ্বাস ফেলল তারপর উঠে গিয়ে রিধিকে টেনে সরিয়ে আনল।রিধি তখনও রাগে ফুসছে আহিদের দিকে তাকিয়ে।এদিকে আহিদ মাথায় হাত বুলাচ্ছে।এভাবে চুল ধরে টানাটানি করায় সে বেশ ব্যথা পেয়েছে।এদিকে অথৈ পিহুর কানে কানে বলে,’ কিরে এই আহিদ্দার হলোটা কি?ও তো এমন ব্যবহার তো কোনোদিন করে না।মনে হচ্ছে ও একটু বেশিই হ্যাপি মুডে আছে।কেমন যেন ঘ্যাপলা লাগছে।ডাল মি কুছ কালা হ্যায়।দায়া থুক্কু পিহু পাতা লাগাও।’

পিহু ভাবুক গলায় বলে,’ কিন্তু পাতা লাগায় কিভাবে?আমি তো জানি গাছ লাগায়।’

পিহুর কথায় অথৈ ওর মাথায় গাট্টা মারল,’ গাধি একটা।’

পিহু দাঁত কেলালো।এইভাবেই হইচই করে সারাটা বিকেল কেটে গেল।অথৈ ইচ্ছে করেই আর ঘাটেনি পিহু আর প্রিয়ানকে।যা তারা এখন বলতে চাচ্ছে না তা জোড় করে লাভ নেই।সময় হলে নিজেরা এসেই বলবে তা অথৈও ভালোভাবেই জানে।তবে এদের যে আগের মতো স্বাভাবিক করতে পেরেছে তাই অনেক।ওদের আড্ডার মাঝে আকাশে তীব্র স্বরে গর্জন করে উঠল।ওরা হাসি ঠাট্টায় এতোটাই মত্ত ছিলো যে আকাশের পরিস্থিতির কথা ভুলেই গিয়েছিল।কিন্তু যতোক্ষণে সজাগ হয়েছে ততোক্ষণে শো শো বাতাস ছেড়ে, আকাশে তীব্র মেঘের গর্জন করে,ঝমঝমিয়ে মুষুলধারে বৃৃষ্টি নেমে গেল।সামনে নদী,নদীর পানিতে বাতাসের কারনে উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে,ঝড়ো হাওয়া,কালো মেঘে ঢাকা আবছা আধারে ছেঁয়ে থাকা প্রকৃতি, সাথে ঝুমঝুম বৃষ্টি।সেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা পাঁচজন বন্ধু।আহা আর কি চাই এই মুহূর্তে। ওরা পাঁচজন বন্ধু মিলে হইহুল্লোড় করে বৃষ্টিবিলাশে মত্ত হয়ে গেল।প্রায় একঘন্টা পর বৃষ্টি কমে আসছে।চারপাশ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।তাই সিদ্ধান্ত নেয় এখান সবাই চলে যাবে।হলোও তাই।আহিদ আর পিহু চলে গেল একটা বাইকে করে।আর প্রিয়ান অথৈ আর রিধিকে সাথে নিয়ে চলে গেল।বাড়িতে এসে অথৈ ক্লান্ত শরীরে বাড়ির কলিং বেল বাজালো।মিনহা বেগম এসে দরজা খুলে মেয়েকে এমন জুবজুবে ভেজা অবস্থায় দেখেই শুরু করে দিলেন বকাবকি।অথৈ কানে নিলো না।নিজের রুমের দিকে যেতে লাগল।কিন্তু তার আগেই বসার ঘর থেকে ইহানের ডাকে থেমে গেল।
‘ এইভাবে ভিজে এসেছিস কেন?নিশ্চয়ই সবগুলো মিলে বৃষ্টিতে ভিজেছিস?’

অথৈ জোড়পূর্বক হাসল।ভাইয়ার বকা সে সহজে খায় না।তবে ইহান যখন রেগে যায়।তখন ইহানকে অথৈ অনেক ভয় পায়।ইহান অথৈর নিজেকে হেলাফেলা একদম সহ্য করতে পারে না। তখনই ও রেগে অথৈকে বকাঝকা করে।অথৈ ইহানের বকা খাওয়ার ভয়ে বলে,
‘ আরে, কি বলছিস ভাইয়া?এমন কিছুই না।ওই প্রিয়ানের বাইক দিয়ে এসেছি তো।রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে ভিজে গিয়েছি।’

ইহান গম্ভীর গলায় বলে,’ আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নেই।আমি তোর সম্পর্কে সবকিছুই জানি।ভুলে যাস না আমি তোর ভাই।সো এইসব লেইম এক্সকিউজ একদম দিবি না।আমায়।এখন যা দ্রুত চেঞ্জ করে নেহ।জ্বর আজকে আসবে তা নিশ্চিত আমি। আম্মুকে দিয়ে গরম দুধ পাঠাচ্ছি।কোনোরকম ভণিতা ছাড়া খেয়ে নিবি।নাহলে তোর কপালে শনি আছে।’

অথৈ শুকনো ঢোক গিলল।ইহানের ভয়ে আর নাকচ করল না।না এদিক সেদিক তাকালো।একদৌড়ে নিজের রুমে।অথৈকে ভয় পেতে দেখে ইহান মুচঁকি হাসলো।পরক্ষণে হঠাৎ করেই তার রিধির কথা মনে পরে গেল।মেয়েটাও নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভিজেছে।ঠান্ডা,জ্বরে তো সেও ভুগবে।পরমুহূর্তে নিজের ভাবনায় নিজেই হতভম্ব হয়ে যায়।আশ্চর্য! তার কেনো আজ হঠাৎ হঠাৎ রিধির কথা মনে পরছে।সে বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছে।নিজের মনে বিরবির করতে করতে ইহান নিজের রুমে চলে গেল।
——-
গরম পানি দিয়ে গোসল দিয়ে অথৈ কম্বল মুরি দিয়ে শুয়েছে।শরীর ম্যাজম্যাজ করছে,মাথা ব্যথা, সেই সাথে চোখ দিয়ে পানি পরছে অনবরত।তাকে যে ভয়ানকভাবে জ্বরটা কাবু করে নিচ্ছে তা সে ভালোভাবে বুঝতে পারছে।এমনসময় আজিজুর সাহেব অথৈয়ের রুমে আসলেন।অফিস থেকে ফিরে এসেই মিনহার কাছ থেকে শুনেছেন তার মেয়ে নাকি আজ বৃষ্টিতে ভিজে এসেছেন।তাই অথৈকে দেখতে আসলেন।নিশ্চয়ই জ্বর আসবে মেয়েটার।আজিজুর সাহেব রুমে প্রবেশ করে রুমের আলো জ্বালাতেই অথৈ চোখের উপর হাত রেখে মুখ ঢেকে ফেলল।মূলত অথৈ অন্ধকারে থাকতে বেশি পছন্দ করে।দিনের বেলায় রুমের পর্দা দিয়ে রাখে আর রাতে কাজ ছাড়া সহজে আলো জ্বালায় না।এদিকে হঠাৎ করে আলো এসে মুখে পরতেই অথৈ চোখে ঠাওর করতে পারেনি।আস্তে আস্তে আলোটা সয়ে আসতেই অথৈ চোখ থেকে হাত সরায়।তারপর সামনে তাকাতেই আজিজুর সাহেবকে চিন্তিত অবস্থায় তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে;কষ্ট হলেও কোনোরকমে উঠে বসল অথৈ।বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে বসে দূর্বল গলায় বলে,
‘ আরেহ, বাবা তুমি কখন আসলে।আর ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?এদিকে আসো।’

মেয়ের ভাঙা গলার আওয়াজ শুনেই আজিজুর সাহেব যা বুঝে ফেলার বুঝে ফেললেন।দ্রুত মিনহা বেগমকে হাক ছুড়ে ডেকে মেয়ের কাছে গেলেন।গিয়েই আগে অথৈয়ের কপালে হাত রাখল।জ্বরে মেয়েটার গা পুড়ে যাচ্ছে।ইহান আর মিনহা বেগম তখন রুমে আসলেন।তাদের দেখে আজিজুর সাহেব বলেন,
‘ দেখেছ?মেয়ে আমার জ্বরে ভুগে এখানে পরে আছে।তুমি যেহেতু দেখেছ ও বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে।তুমি এসে ওকে দেখবে না?আমি না আসলে তো মেয়েটা আমার এইভাবেই পরে থাকত।এতোটুকু খেয়াল রাখতে পারো না তুমি মিনহা?’

মিনহা বেগম স্বামির কথায় রেগে গিয়ে বলে,’ হ্যা,এখন সব দোষ আমার তাই নাহ?তোমার গুনধর মেয়ে গিয়েছে কেন বৃষ্টিতে ভিজতে?সে জানে না তার যে জ্বর আসবে?’
‘ ও তো ছোটো মানুষ বুঝে নাই।’
‘ হ্যা এমন ধিঙি মেয়েকে ছোটো ছোটো বলে আরও মাথায় উঠাও।এমনিতেই আমার কথা শুনে না।তোমার আহ্লাদে আহ্লাদে মেয়েটা পুরো বখে গিয়েছে।একটা কথাও শোনে না আমার।ওর যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।সেই খেয়ালও কি ও করে? এখন তো একটু শান্ত শিষ্ট হতে পারে?না তা হবে কেন?এটা করলে আমাকে জ্বালাবে কে?সব জ্বালা হয়েছে আমার।আমি চলে গেলেই বুঝবে তোমরা।’

মিনহা বেগম আরও অনেক কিছু বলতে বলতে রান্নাঘরে চলে গেলেন।মেয়ের জন্যে তিনিও চিন্তিত।দ্রুত চুলায় রঙচা বসালো।এটা খেলে গলা ব্যথা যদি থাকে সেরে যাবে।তারপর স্যুপ বানাতে লেগে পরলেন।ভাত যে তার মেয়ে এখন একটুও।মায়েরা এমনি।সন্তানের কিছু হলে তারা অস্থির হয়ে পরেন।কিভাবে সে সন্তানকে সুস্থ করে তুলবেন।

এদিকে আজিজুর সাহেব ইহানকে বললেন গিয়ে এক বালতি পানি আনতে অথৈয়ের মাথায় পানি ঢালতে হবে।ইহানও তাই করল।আজিজুর সাহেব নিজ হাতে মেয়ের সেবা করতে লাগল।এদিকে জ্বর বাড়ার কারনে অথৈ কথাও বলতে পারছে না।চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।গা থেকে মনে হয় লাভার আগুনের তাপ বের হচ্ছে এমন।
হঠাৎ ইহানের মোবাইল বেজে উঠল।ইহান মোবাইলে তাকিয়ে দেখে রুদ্রিক কল করেছে।ইহান একবার অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে ফোনকল রিসিভ করে কানে লাগাল।পরপরেই শুনতে পেল রুদ্রিকের চিন্তিত কণ্ঠস্বর,’ ইহান?অথৈ কোথায়?ওর ফোনে কল দিচ্ছি।কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ শোনাচ্ছে।’

ইহান আশেপাশে তাকালো।তারপর দেখল ওয়ারড্রবের উপর অথৈয়ের ফোন চার্জে লাগানো।বোধহয় চার্জ নেই।ইহান বলল,’ ওর ফোনে চার্জ নেই।’

রুদ্রিক শ্বাস ফেলল সস্তির।কিন্তু তারপরেও ওর কেমন যেন লাগছে।মনে হচ্ছে অথৈ ঠিক নেই।রুদ্রিক বলল,’ অথৈ কোথায়?ওকে একটু দে তো।আজ সারাদিন কথা হয়নি।বলল বন্ধুদের সাথে পিকনিকে যাচ্ছে।তাই আমি ডিস্টার্ব করিনি।কিন্তু এখন কথা না বললে যে আমার রাতে ঘুম আসবে না।’

ইহান কি বলবে ভেবে পেলো না।সে কি এখন রুদ্রিককে বলে দিবে অথৈয়ের জ্বর এসেছে?রুদ্রিক যদি এই কথা শোনো তো পাগলামি করবে।কারন সে জানে তার বন্ধু অথৈকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।দুটো বছর যাবত নিজ চোখে দেখে আসছে তা।কিন্তু না বলেও পারছে না।সে অথৈয়ের হাজবেন্ড।তার জানার অধিকার কাছে।যা হওয়ার হবে।তাই ইহান আর বেশি ঘাটল না।সত্যি কথাটাই বলল,’ বন্ধুরা পিকনিক করতে গিয়েই ঝামেলা পাকিয়ে এসেছে।সবগুলো মনে হয় একসাথে এই সময়ের বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে।এখন দেখ বাড়ি এসেই নেতিয়ে পরেছে।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।’

ইহান কথাগুলো বলেই রুদ্রিকের পাগলামি শোনার আশায় রইলো।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে রুদ্রিক বলল,’ মেডিসিন দিয়েছিস?’

ইহান অবাক হয়ে গেল।সে ভাবেনি রুদ্রিক এতোটা শান্ত থাকবে।ইহান অবাকের রেশ কাটিয়ে বলে,’ নাহ এখনও দেয়নি।আম্মুকে খাবার আনতে বলেছি।দেখি কিছু খাওয়াতে পারি কিনা।খাওয়ার পরেই মেডিসিন দিবো।’
‘ জোড় করে হলেও খাওয়াবি কিন্তু।রাখছি।’
‘ আরেহ কিন্তু শোন রুদ্রিক….!’

ইহান কিছু বলার আগেই রুদ্রিক ফোন কেটে দিলো।এদিকে ইহান আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।এই ছেলের মাথায় কি চলে তা ও ছাড়া বোধহয় কেউ জানবে নাহ।ইহান লম্বা শ্বাস ফেলে অথৈয়ের কাছে এগিয়ে গেল।ততোক্ষণে মিনহা বেগম একবাটি স্যুপ,গরম দুধ নিয়ে এসেছেন।তারপর মেয়ের কাছে এগিয়ে গেলেন।আজিজুর সাহেবকে বললেন অথৈকে খাইয়ে দিতে।আজিজুর সাহেব তাই করলেন।আর মিনহা বেগম বসে বসে অথৈয়ের মাথায় পানি ঢালতে লাগল।মিনিট বিশেক পর ওদের বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল।ইহান অবাক হলো।ঘড়ির দিকে তাকালো।রাত তখন এগারোটা।এতো রাতে কে আসবে?হঠাৎই ওর মাথায় টনক নড়ল।সে একশ পার্সেন্ট নিশ্চিত এটা তার পাগল বন্ধু ছাড়া কেউ নাহ।ইহান দ্রুত পায়ে চলে গেল দরজা খুলতে।কিন্তু দরজা খুলতে সে অবাক হয়ে গেল।সে তো ভেবেছিল রুদ্রিক আসবে।অবশ্য সেটা সঠিক রুদ্রিকই এসেছে।তবে একা না সাথে আতিক মাহাবুব সাহেব,আরহাম সাহেব,আরিয়ান আর রোজাও এসেছে।ইহানকে এইভাবে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলল,’ সরছিস না কেন?না কি বাসায় ঢুকতে দিবি নাহ?’

রুদ্রিকের কথায় ইহান তার সম্ভিত ফিরে পেল।দ্রুত দরজা থেকে সরে গিয়ে দাঁড়াল।এরপর সবাইকে সালাম জানিয়ে ভীতরে আসতে বলল।তারাও সালামের জবাব নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলেন।এদিকে বসার ঘরে মানুষের কোলাহলপূর্ণ আওয়াজে আজিজুর সাহেব আর মিনহা বেগম না চাইতেও মেয়ের কাছ থেকে উঠে এলেন।এসেই মেয়ের শশুড় বাড়ি মানুষদের দেখে ভড়কে গেলেন।তারপর দ্রুত গিয়ে তাদের সালাম জানিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন।মিনহা বেগম দ্রুত পায়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে উদ্যুত হলেন।কিন্তু তার আগেই রোজা উনাকে থামিয়ে দিলেন,’ একদম না আন্টি।কোনোরকম কোনো আয়োজন করবেন নাহ।এসব আজ না অন্য একদিন।আজ আমরা বেড়াতে আসিনি।অথৈ অসুস্থ তাই তাকে দেখতে এসেছি।এখন এখানে আসুন।’

আতিক মাহাবুবও বলেন,’ হ্যা বড় নাতবউ একদম ঠিক বলছে।আপনার মেয়ে অসুস্থ আপনি তার কাছে যান।আজকে আমরা আমাদের বাড়ির বউ অসুস্থ তাই তাকে দেখতে এসেছি।’

আজিজুর সাহেব আর মিনহা বেগম আর কিছু বললেন না।শুধু মনে মনে আল্লাহ্’র কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন তার মেয়েকে এতো ভালো একটা পরিবারের বউ হওয়ার ভাগ্য দেওয়ার জন্যে।আজিজুর সাহেব আর মিনহা বেগম সবাইকে নিয়ে অথৈয়ের রুমে আসলেন।অথৈ তখন গায়ে দুটো ভারি লেপ আর কম্ব্ল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।মুখশ্রী জ্বরের প্রকোপে লাল হয়ে আছে।জ্বরের কারনে তার হুশ নেই।মিনহা বেগমের মন চাইছে না অসুস্থ মেয়েকে ডেকে তুলতে।কিন্তু না ডেকেও তো পারছেন না মেয়ের শশুড়বাড়ির লোক এসেছে।তিনি অথৈকে ডাকতে গেলেই আরহাম সাহেব বলে উঠলেন,’ আপা বউমাকে ডাকবেন না।সে অসুস্থ।জ্বরে মেয়েটা কেমন করছে।আমরা তো মেয়েটাকে একটু দেখতে এসেছি।আসলে কি বলেন তো রুদ্রিকের মুখে যখন শুনলাম বউমা অসুস্থ তখন আর নিজেদের ধরে রাখতে পারিনি।ও তো আমার ছেলের বউ না। আমার মেয়ে।মেয়ে অসুস্থ হলে বাবা না এসে পারে?’

আজিজুর সাহেবের চোখের কোণে জল জমেছে।এতো সুন্দর কথা শুনে কেইবা না কেঁদে পারবে?এতো সুখের কান্না।সবাই এইভাবে টুকাটুকি কথা বলতে লাগল।এদিকে রুদ্রিক শুধু পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।তবে দৃষ্টি তার অশান্ত।বুকের ভীতর বয়ে চলেছে তীব্র ঝড়।প্রিয়তমাকে এইভাবে মূর্ছা যাওয়া অবস্থা দেখে তার মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে ধারালো ছু’ড়ি দিয়ে ক্রমাগত আঘা’ত করে চলেছে।অথৈয়ের ফ্যাকাশে মুখশ্রীটা বড্ড পিড়া দিচ্ছে ওকে।অথৈকে এইভাবে একদম দেখতে পারছে না রুদ্রিক।মেয়েটাকে মন চাচ্ছে এই মুহুর্তে বুকের মাঝে ঝাপ্টে নিতে।কিন্তু সবাই থাকায় তা করতে পারছে না।চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো রুদ্রিক।অশান্ত মনটাকে একটুখানি শান্ত করার প্রয়াস চালালো।কিন্তু তা সম্ভব হলে তো?অথৈ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রুদ্রিকের শান্তি নেই।এদিকে রোজা এসে অথৈয়ের হাত পা মুছে দিচ্ছে।মাথায় পানি ঢালতে গেলে রুদ্রিক কাউকে পরোয়া না করে নিজেই এগিয়ে যায়।তারপর রোজাকে বলে,’ ভাবি তুমি সরো।আমি করছি।’

রোজা বিনাবাক্যে উঠে গেল।সে কিছুটা হলেও রুদ্রিকের অবস্থা বুঝতে পারছে।রুদ্রিকের লাল হয়ে আসা চোখ দুটোই সব বলে দিচ্ছে।রুদ্রিক অথৈয়ের মাথায় পানি ঢালল।সরিষার তেল গরম করে এনে দিলেন মিনহা বেগম।শাশুড়িকে বসতে বলে নিজেই অথৈয়ের হাতে পায়ে তেল মালিশ করতে শুরু করল।যা দেখে এখানে আর কেউ বসে থাকতে পারল না।রুদ্রিক আর অথৈকে একা ছেড়ে দিয়ে সবাই রুমের বাহিরে চলে গেলো।সবাইকে যেতে দেখে রুদ্রিক দ্রত বিছানা থেকে নেমে রুমের দরজা আটকে আবার বিছানায় ফিরে আসল।তারপর দ্রুত অথৈয়ের কম্বলগুলোর নিচে নিজে ঢুকে গেল।কাল বিলম্ব না করে অথৈয়ের তপ্ত দেহখানা নিজের শক্তপোক্ত বুকের মাঝে আঁকড়ে নিলো।শক্ত করে ধরল অথৈকে।এদিকে এতো শক্ত করে ধরায় অথৈ অস্পষ্ট স্বরে গুঙিয়ে উঠল।পর পর বহু কষ্টে চোখ পিটপিট করে তাকালো।ঝাপ্সা চোখে তাকিয়ে আবছাভাবে রুদ্রিককে দেখে নিলো।এরপর চোখ বন্ধ করে ফেলল।তার চোখ খুলে রাখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।সে আবারও বিড়াল ছানার ন্যায় রুদ্রিকের বুকের উম পেয়ে রুদ্রিকের কাছে আরও গুটিয়ে গেল।দূর্বল কণ্ঠে থেমে থেমে বলে,’ আপ..আপনি এসেছেন?আ…আমি আপ…আপনাকে অনেক মিস করেছি।’

অথৈ ওকে মিস করেছে শুনে রুদ্রিকের হৃদয়ে শীতলতা ছেঁয়ে গেল।সে একটু সুযোগ নিল অসুস্থ অথৈয়ের।প্রশ্ন করল,’ তাই?’
‘হ…হুঁ!’
‘ কেন মিস করেছ?’

অথৈ ঠোঁট উলটে বলে,’ তা তো জানি নাহ।’
রুদ্রিক হাসল।অথৈয়ের এমন কান্ডে।ফের বলে,’ আচ্ছা তুমি আমার একটা কাজ করবে।আমি কিছু প্রশ্ন করব।প্রশ্নগুলোর সত্যি সত্যি জবাব দিবে।’

অথৈ কিছু বলল না।রুদ্রিক প্রশ্ন করল,
‘ তোমাকে আমার কেমন লাগে অথৈ?’

অথৈ সময় নিয়ে জবাব দেয়,’ অনেক ভালো।’
‘ কেমন ভালো।’
‘ তা জানি না তবে অনেক ভালো লাগে।আপনি দেখতে অনেক সুন্দর।’
‘ আমার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে?’
‘ হুঁ!’
‘ আমাকে দেখলে বুক ধুকপুক করে?’
‘ হুঁ!’
‘ আমি কাছে আসলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়?’
‘ হুঁ!’
‘ সারাদিন আমার সাথে কাটাতে ইচ্ছে করে?’
‘ অনেক।’
‘ ভালোবাসো আমাকে?’

এই পর্যায়ে আর অথৈয়ের জবাব এলো না।রুদ্রিক অথৈয়ের মাথাটা ওর বুক থেকে উঠিয়ে সামনে এনে দেখে অথৈ ঘুমিয়ে গিয়েছে।রুদ্রিক হাসল অথৈয়ের ঘুমন্ত মুখ দেখে।অথৈয়ের ভেজা চুলগুলো সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিয়ে।ওর ওষ্ঠজোড়া স্পর্শ করল অথৈয়ের উত্তপ্ত কপালে।সময় নিয়ে সরে আসল।জ্বর কিছুটা কমেছে।এইভাবে প্রায় অনেকক্ষণ রইলো রুদ্রিক।হঠাৎ রোজার কণ্ঠ শুনতে পেল।রোজা ডাকছে ওকে।তাদের যেতে হবে।রুদ্রিক জানালো সে আসছে।রোজা চলে গেল।রুদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে অথৈকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিল।তারপর অথৈয়ের দিকে ঝুকে শীতল কণ্ঠে বলে,
‘ বলেছিলাম আমি তোমার মনে যেদিন জায়গা নিতে পারব সেদিনই এই বাড়িতে পা রাখব।আর দেখো আমি তাই করেছি।তুমি মুখে স্বিকার না করলেও আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো।তবে চিন্তার কারন নেই।তোমার মুখ থেকেও একদিন স্বিকার করিয়ে নিবো তুমি আমায় ভালোবাসো।এখন আমার যেতে হবে জান।মন তো চাচ্ছে না তবে যেতে হবে।ভালো থেকো জান।নিজের খেয়াল রেখো।’

এইবলে অথৈয়ের কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে রুদ্রিক রুম থেকে বের হয়ে গেল।আর তাকালো না পিছনে।কারন তাকালেই তার সর্বনাষ হয়ে যাবে।সে আর যেতে পারবে না তাহলে।এদিকে মির্জা বাড়ির সবাইকে অনেক জোড় করলেন আজিজুর সাহেব,মিনহা আর ইহান।কিন্তু তারা মানলেন না।অথৈ অসুস্থ এর মাঝে আর ঝামেলা করতে চাননা।তারা মির্জাদের কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন।মধ্যরাতেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে তারা চলে যান নিজেদের গন্তব্যে।

#চলবে___________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২১
গতকাল যে মুষুলধারে বৃষ্টি হয়েছিলো,ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় একপ্রকার সব লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।তার এখন লেশ মাত্র নেই।উল্টো মনে হচ্ছে গতকালকের সেই বৃষ্টির কারনে সূর্য তার তেজের প্রখরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইহান অথৈকে নিয়ে ভার্সিটিতে মাত্রই পৌছালো।ইহান অথৈকে আনতে চায়নি।ওর শরীর ভালো না।কাল কি ভয়ানক জ্বরটাই না বাঁধিয়েছিল মেয়েটা।তাই বলেছিলো আজকে বিশ্রাম নিতে।কিন্তু এই ঘ্যাড়ত্যাড়া মেয়ে শুনলে তো? যেই বন্ধুরা ফোন করে বলল ওরা আজ ভার্সিটিতে আসবে।সেটা শুনে নিজেও জোড় জবরদস্তি করে এসেছে আজ।তাই রাগ দেখিয়ে কথা বলছে না ওর সাথে।অথৈ বাইক থেকে নামলে ইহানও নেমে দাঁড়ায়।অথৈ হাসে ভাইয়ের মুখ ফোলানো দেখে।চট করে ভাইকে জড়িয়ে ধরল।ইহান হকচকিয়ে গেল।তারপর নিজেও দুহাতে বোনকে আগলে নিল।অথৈ আহ্লাদী স্বরে বলে উঠে,
‘ ভাইয়া রাগ করে থাকবি না একদম।তুই রাগ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।আর যদি এমন মুখ ফুলিয়ে রাখিস তো আমি গিয়ে ইচ্ছে মতো আইসক্রিম খাবো।তারপর আবারও আমার জ্বর আসবে।তখন তুই খুশি থাকিস।’

অথৈয়ের কথায় ইহান অথৈকে বুক থেকে সরিয়ে আনলো।রাগ দেখিয়ে বলে,’ আর একবার যদি উল্টোপাল্টা কথা বলিস তো খবর আছে।’
‘ তাহলে আর রাগ করে থাকবে?বলো?’

দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইহান।বোনের সাথে না পেরে বলে,
‘ আচ্ছা আর রাগ করে থাকব না।তবে এক শর্তে তুই সাবধানে থাকবি।আর নিজের খেয়াল রাখবি।আর হ্যা বেশি খারাপ লাগলে আমায় সাথে সাথে জানাবি কিন্তু।’
‘ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।এতো চিন্তা করো না তো।এখন আমি যাই ঠিক আছে?’
‘ আচ্ছা যা।সাবধানে কিন্তু।’
‘ ওকে।’

ইহান চলে গেল বন্ধুদের কাছে।আর অথৈ সামনের দিকে হাটা ধরল।জ্বরের রেশ এখনও কাটেনি।তাই হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।এইজন্যে আস্তে আস্তে হাটছে ও।এতোক্ষণ দূর থেকেই অথৈয়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রিক।মেয়েটার কাল কি জ্বর‍টাই না এসেছিলো।আর এই মেয়ে আজ বাসায় বিশ্রাম না করে ভার্সিটিতে এসেছে।মন তো চাচ্ছে এখনই গিয়ে কয়েকটা চ’ড় মেরে আসতে।কিন্তু তা কোনোদিন রুদ্রিক পারবে না।কারন এই মেয়েটার গায়ে একটা ফুলের টোকাও লাগলে। তার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়ে যায়।এই মেয়েটা তার অস্তিত্ব। আর নিজের অস্তিত্বের গায়ে কেউ কিভাবে হাত উঠাতে পারে?উহু, রুদ্রিক তা কোনোদিন পারবে না।কিন্তু রাগটাকেও তো সামলাতে পারছে না।মারতে পারবে না ঠিক আছে।কিন্তু যে করেই হোক আজ এই মেয়েকে দু চারটা ধমক তো সে অবশ্যই দিবে।শুধু বাগে পেয়ে নিক একবার।এদিকে ইহান এসে দাঁড়ালো ওর পাশে।বলে উঠল,
‘ কিরে কি দেখছিস ওদিক তাকিয়ে?’

রুদ্রিক তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ইহানের দিকে।এমন দৃষ্টিতে ইহান ভড়কে গেল।রুদ্রিক রাগে হিসহিস করে বলে,
‘ তোর গাধি বোনকে দেখছি।ও যে অসুস্থ্ সেটা কি ও জানে নাহ?এই অবস্থায় আজ ভার্সিটি এসেছে কেন?নাকি সে একাই স্টাডি করে একেবারে উলটে দিবে সব?’

ইহান নাক-মুখ কুচকে বলে,’ এহহ! একদম আমাকে রাগ দেখাবি না।আর তাছাড়া তুই নিজেও ভালোভাবে জানিস।অথৈ যেই পরিমানে ঘ্যাড়ত্যাড়া।ও যা বলবে তাই করে।তোর কি মনে হয় আমি কি ওকে শখের বসে নাঁচতে নাঁচতে এখানে নিয়ে এসেছি?সে আমাকে,বাবাকে আর মা’কে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে আজ জোড় করে ভার্সিটিতে এসেছে।’

রুদ্রিক আবার দৃষ্টি তাক করল অথৈয়ের দিকে।মেয়েটা কেমন আস্তেধীরে হাটছে।নিশ্চয়ই শরীরটা অনেক দূর্বল।তাই তো এইভাবে হাটছে।রাগটা তরতর করে বাড়তে লাল রুদ্রিকের।দাঁতেদাঁত চিপে বলল,
‘ ওকে তো দেখে নিব।ছুটোচ্ছি ওর ঘ্যাড় ত্যাড়ামি।’

হঠাৎ সাফাত বলে উঠল,’ কিরে তোরা দুইটা কি ফুসুরফাসুর করছিস?’

ইহান বলল, ‘ এমনি কথা বলছিলাম।তেমন কিছু না।হ্যা রে অনিক কই?’

অনিকের কথা উঠাতেই নীল বলল,’ আর বলিস না ব্যাটা যে কি চায় সে নিজেও জানে না।সিয়াকে ভালোবাসলে বলে দিতে পারে নাহ?শুধু কেন মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছে?নিজেও কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটাকেও দিচ্ছে।আমি বললাম যা সিয়াকে গিয়ে মনের কথা বলে দে।সে তো শুনলই না।কেমন খাম্বার মতো কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এখন কই জানি চলে গিয়েছে।’

রুদ্রিক কিছু একটা আঁচ করতে পারল।পর পর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে,’ ও সিয়ার কাছেই গিয়েছে।’

ওর এমন কথায় সাফাত অবাক হয়ে বলে,’ তুই কিভাবে বুঝলি?’
‘ ইটস ম্যাজিক।’ বলেই রুদ্রিক হাসল।
______________
সিয়া লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়ছে।সামনে অনার্স ফাইনাল এক্সাম তাদের।পড়াশোনায় এমনিতে বেশ ভালো সিয়া।কিন্ত্য অনিকের সাথে ব্রেক-আপ হওয়ার পর থেকে পড়ালেখার প্রতি অতো একটা ধ্যান দেয়নি সে।কিন্তু পরিক্ষা প্রায় ঘনিয়ে আসছে।স্যারের মুখে এই কথা শুনে সবকিছু ভুলে গিয়ে পড়াশোনায় পুরো দমে মন দিতে চাইছে সে।এতে যদি অনিককে ভুলে থাকা যায়।কিন্তু বেহায়া মন মানলে তো?ক্ষণে ক্ষণেই অনিকের কথা মনে করিয়ে দেয় ওকে।এতে নিজের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে সিয়া পড়ার মাত্রা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।চায় না সে আর কিছু মনে করতে।অনেক তো হলো।প্রায় একবছর হতে চলেছে।অনিক তো দিব্যি লাইফটা এঞ্জয় করছে। তাহলে ও পারবে না কেন?পারতে হবে তাকে।কিন্তু মনের সাথে কি কেউ জোড় করে পারে?একবার যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে।তাকে কি ভোলা এতোটাই সহজ?সাহজ না হলেও যে তাকে এটা করতেই হবে।আর কতোকাল পিছুটাব বয়ে বেড়াবে?সিয়া দিক বেদিক ভুলে পড়তে লাগল।সে বিন্দু মাত্র টের পায়নি তাকে এতোক্ষণ যাবত কেউ গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করছিলো।অনিক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে সিয়ার দিকে।রিলেশন থাকা কালিন সময়েও অনিক এতোটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি সিয়াকে।যতোটা না এই ইদানিং ধরে করছে।আর তখন করবেই বা কিভাবে?তার আসল সৌন্দর্যযে ঢাকা পরে থাকতে ভারি মেক-আপের আস্তরনে।আর আজ দেখো একদম সাধারনভাবে আছে মেয়েটা।আজ সিয়া গোলাপি রঙের একটা গোল জামা পরেছে,চুলগুলো পনিটেইল বাধা,তার ছোটো চুলগুলো অবাধ্য হয়ে কপালের উপর পরে আছে,চোখে কাঁজল টানা,আর ঠোঁটে লিপগ্লস লাগানো।এতেই যেন অমায়িক সুন্দর লাগছে সিয়াকে।চোখ ফেরানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।অনিক সিয়ার সৌন্দর্যে এতোটাই মোহিত হয়েছে যে ও বেশ জোড়েই মুখ ফোসকে বলে ফেলে,’ মাশা-আল্লাহ! একদম আমার মনের রানির মতো লাগছে।’

এদিকে আকস্মিক অতি কাছের চেনা মানুষটার কণ্ঠস্বর শুনে যতোটা না সিয়া চমকালো।তার থেকে বেশি চমকালো তার মুখে এমন এক বাক্য শুনে।অবিশ্বাস্যভাবে দৃষ্টি তাক করল অনিকের দিকে।হঠাৎ সিয়ার এহেন দৃষ্টিতে অনিক থতমত খেয়ে যায়। এতোক্ষণে তার হুশ আসল।সে সিয়াকে দেখতে দেখতে এতোটাই ঘোরে চলে গিয়েছিল যে সে যে বেশ জোড়েসোড়েই মনের কথাটা বলে ফেলেছে।তা খেয়ালই করেনি।সিয়া অনিককে নিজের পাশের চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো।বলল,’ তুমি…মানে আপনি এখানে কেন?’

অনিক ভ্রু-উঁচু করে বলল,’ কেন এখানে আসতে সমস্যা আছে নাকি?লাইব্রেরিটা কি তোর একার? আর কিসের আপনি আপনি করছিস?থাপ’ড়িয়ে গাল লাল করে দিবো।’

অনিকের এহেন ব্যবহারে যেন আকাশ থেকে পরল সিয়া।এই অনিকের কি হলো?সে আজ যেচে এসে ওর সাথে কথা বলছে?এই ছেলের মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেলো না তো আবার? সিয়া ভয়ে ভয়ে বলে,’ আপনার কি কিছু হয়েছে?অসুস্থ আপনি?নাহলে এইভাবে কথা বলছেন কেন?’

অনিক কেমন করে যেন তাকালো সিয়ার দিকে।তারপর হুট করে ঝুকে আসল সিয়ার দিকে।এতে সিয়া ভয় পেয়ে দ্রুত মাথা পিছনের দিকে নিয়ে যায়।হাত দুটো বুকের কাছে এনে গুটিয়ে নেয়।অনিক এইভাবে কাছে আসায় ওর শ্বাস আটকে যাচ্ছে।হাত পা কাঁপছে।তোলপাড় হচ্ছে বুকের মাঝে।হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিকভাবে দৌড়াচ্ছে।সিয়া কাঁপা গলায় বলে,’ কি করছেন?’
‘ শুনবি না আমার কি হয়েছে?’

সিয়া পিটপিট করে তাকালে।অনিক শীতল কণ্ঠে বলে,’ আমি ভীষণ বাজে একটা রোগে আক্রান্ত হয়েছি।যার থেকে নিস্তার নেই আমার। একবিন্দুও নিস্তার নেই।প্রতিনিয়ত সেই রোগটা আমায় গ্রাস করে নিচ্ছে।আমার স্বর্বষ কেরে নিচ্ছে।আমি আর আমার মাঝে নেই।আর আমাকে এই রোগের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো তুই।তুই-ই আমার এই রোগের উপশম!’

অনিকের এহেন রহস্যমাখা কথা সবটা সিয়ার মাথার উপর দিয়ে গেল।বোকা কণ্ঠে সুধালো,’ আমি রোগের উপশম?’
‘ হ্যা তুই।তাই বলছি নিজেকে তৈরি করে নেহ।আমার রোগের চিকিৎসা করার জন্যে।আমি সেরে না উঠা পর্যন্ত তোর কোনো নিস্তার নেই আমার হাত থেকে।বুঝেছিস?
আর হ্যা,ভুলেও আর আপনি আপনি করবি না।তাহলে খু’ন করে ফেলব।’

কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না অনিক।দ্রুত পায়ে হেটে লাইব্রেরি থেকে চলে গেল।আর এক আকাশসম অবাকের মাঝে রেখে গেল সিয়াকে।যে আপাততো ব্যস্ত অনিকের সব কথাগুলো হিসাব মিলাতে।
____________
বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে অথৈ।বাকিগুলোরও একই অবস্থা।তবে সবচেয়ে বেশি খারাপ অথৈ,পিহু আর প্রিয়ানের।এই তিনটার জ্বর এসে একেবারে বেহাল অবস্থা।আহিদ আর রিধিরও জ্বর এসেছে।তবে ওতোটাও না।ওরা মেডিসিন নিতেই সেরে গিয়েছিলো।কিন্তু সর্দি কাশি আছে এখনও।পাঁচজনের হাতেই একটা করে রুমাল।একটু পর হাঁচি দিচ্ছে তারা।মাঝে তো একসাথেও দিয়ে ফেলে।এতে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেঁটে পরে ওরা।হঠাৎ ওদের আনন্দঘণ মুহুর্তে এসে ব্যাঘাত ঘটায় জেনি।সে এসেই ওদের মাঝে ঢুকে পরল।অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ এদিকে আসো তো মেয়ে।তোমার সাথে আমার কথা আছে।’

অথৈয়ের কপালে ভাঁজ পরল।এই মেয়ের সাথে জীবনেও কথা হয়নি ওর।তবে এটা জানে রুদ্রিক আর ওর ভাইয়ের ফ্রেন্ড সার্কেলের একজন।হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে।তাই পিছনে ঘুরে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,’ তোরা এখানেই থাক।আমি আপুটার সাথে কথা বলে আসি।’

তারপর জেনির সাথে অথৈ চলে গেল।রিধি পিহুকে বলে,’ আমার কিন্তু বেশি সুবিধার লাগছে না এই মেয়েকে।’
‘ আমারও।তবে চিন্তা করিস না। এটা আমাদের অথৈ ভুলে যাস না।’

রিধি আর পিহু হেসে উঠল একসাথে।

এদিকে বন্ধুদের কাছ থেকে সরে গিয়ে বেশ খানিকটা দূরে এসে দাঁড়াল অথৈ আর জেনি।অথৈ শান্ত কণ্ঠে বলে,’ জি আপু।কি কথা বলবেন বলুন।’

জেনি বুকে হাত গুজে দাঁড়াল।ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে,’ আরে এতো তারা কিসের? নাকি বয়ফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে তোমার।চিপায় চাপায় যাবে নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে?’

জেনির কথায় মাথায় ধপ করে রাগ উঠে গেল অথৈয়ের।তবে নিজের স্বামী আর ভাইয়ের বন্ধু বলে নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে বলে,’ ভদ্রভাবে কথা বলুন আপু।আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।’

জেনি রেগে গেল অথৈয়ের কথায়।রাগে দাঁত কিরমির করে বলে,’ আমি বাড়াবাড়ি করছি?বাড়াবাড়ি তো করছিস তুই।তুই-ই তো ছ্যাছড়া মেয়েদের মতো আমার রুদ্রিকের পিছনে পরে আছিস।কেন যাস আমার রুদ্রিকের কাছে?ইহানের বোন যে এতোটা চিপ ম্যান্টালিটির তা আগে জানতাম নাহ।কিভাবে ফাসিয়েছিস আমার রুদ্রিককে?বল?নিশ্চয়ই শরীর দেখিয়ে।এ ছাড়া তোদের মতো মেয়েরা আর পারেই বা কি? আরে এতোই যখন দেহ দেখানোর শখ তাহলে পতি…..’

বাকিটা আর বলতে পারল না জেনি।আর আগেই অথৈ নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে কষিয়ে চ’ড় মারে জেনিকে। অথৈয়ের হাতে চড় খেয়ে জেনির মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগল।মাথায় হাত চেপে সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।পরপরেই রেগে আবার তেড়ে গেল অথৈয়ের কাছে।
‘ তোর সাহস কিভাবে হলো আমাকে মারার।তোকে আজ আমি শেষ করে দিব।’

জেনি অথৈয়ের কাছে এগিয়ে আসতেই অথৈ প্রচন্ড রাতে এলোপাথাড়ি প্রায় আট দশটা চড় মেরে বসল।জেনি এইবার মাঠের মধ্যে বসে পরেছে।ততোক্ষণে আহিদ,প্রিয়ান,রিধি, পিহু এসে পরেছে।অথৈ রেগে আবারও তেড়ে যেতে নিতেই আহিদ অথৈকে টেনে ধরে।অথৈ রাগে ফুসফুস করে বলতে লাগল,’ ছাড় আমাকে তুই,ছাড়।ওর সাহস কিভাবে হলো আমাকে এসব বলার।তোর জিভ টেনে আমি ছিড়ে ফেলব।ও জানে ও কাকে কি বলছে?’

অসুস্থ অথৈকেও যেন ধরে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আহিদের।রেগে গেলে মেয়েটার হুশ থাকে না।অথৈ ঝাটকা মেরে আহিদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর জেনির কাছে গিয়ে ওর ব্রাউন কালার করা চুলগুলো সজোড়ে টেনে ধরল।তেজি কণ্ঠে বলে,’ আর তুই সাহসের কথা বলছিস?তাই নাহ?যে আমি কোন সাহসে রুদ্রিকের কাছে যাই।আরে তুই কে রে? যে তোকে জবাবদিহিতা করতে হবে?এখন আমি বলছি তোর সাহস কিভাবে হয় রুদ্রিককে ‘ আমার, আমার ‘ বলার?বল এতো সাহস কে দিয়েছে?’

ব্যথায় ছটফট করছে জেনি।তাও নিজেকে দমালো না।বলল,’ আমার সাহস জানিস তুই?রুদ্রিক আর আমি একে-অপরকে ভালোবাসি।আর তুই আমাদের মাঝখানে এসে পরেছিস।তুই কোন অধিকারে ওর কাছে যাস?’

অথৈ জেনির কথায় হেসে উঠল।পর পর আবার একটা থাপ্পড় লাগালো জেনির গালে।জোড়ালো কণ্ঠে বলে উঠল,’ অধিকারের কথা বলছিস? তবে বলে দেই রুদ্রিকের কাছে যাওয়ার অধিকার‍ যদি কোনো মেয়ের হয়ে থাকে।তবে সেটা হবে শুধু মাত্র আমার।বুঝেছিস?’

‘ মিথ্যে কথা।তুই কে যে তোর কথা আমি বিশ্বাস করব?’

জেনির কথায় জেনিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো অথৈ।বুকে আড়াআড়িভাবে হাত বেঁধে বাঁকা হেসে বলে,’ মানলাম তুই রুদ্রিকের প্রেমিকাই।তবে এখন আর নেই।যদি অতীতে হয়েই থাকিস।তবে সেটা বর্তমানে না।আর অতীত ঘাটিয়ে লাভ নেই।আর আমি কে শুনতে চাস?আমি হলাম রুদ্রিকের বর্তমান আর ভবিষ্যত।রুদ্রিকের সব।আমি হলাম মিসেস আরিহান রুদ্রিক মির্জা।মানে রুদ্রিকের বিয়ে করা বউ।তার অর্ধাঙ্গিনী।এখন বল তোর অধিকার বেশি না কি আমার?’

অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো জেনি।রুদ্রিক বিয়ে করে ফেলেছে?তাও এই মেয়েটাকে?কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব? ও বিয়ে করলে তো ওর মাকে ওর মামা এই বিষয়ে জানাতো।মেয়েটা মিথ্যে বলছে।জেনি বলে উঠল,’ মিথ্যে বলছিস তুই।এমন কিছু হলে সবার আগে আমি জানতাম।’

অথৈ ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,’ এখন তুই কে জানিসনি তা তো আমি জানি না।তবে বিশ্বাস না হলে রুদ্রিককে গিয়েই স্বয়ং জিজ্ঞেস করে নিস।চল তোরা এখানে আর একমুহূর্ত দাঁড়াতে পারব না আমি।দেখা যাবে রাগে একে খু’নও করে ফেলতে পারি।আমার প্রচুর রাগ লাগছে।আজকে এমন একটা পরিস্থিতিতে আমায় পরতে হবে ভাবিনি। এর জবাব মিস্টার আরিহান রুদ্রিক মির্জাকে দিতেই হবে।হবে মানে হবেই।চল।’

শেষ কথাগুলো বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে পা বাড়াতে নিয়েও থেমে যায়।ঘুরে তাকিয়ে জেনিকে শীতল গলায় হুমকি ছুড়ল, ‘ তুই রুদ্রিকের আগে কি আছিলি না আছিলি সব ভুলে যাহ।আমার স্বামীর দিকে ফের বাজে নজর যদি তোকে দিতে দেখি তাহলে তোর চোখ দুটো আর তোর সাথে থাকবে না। কথাটা মাথায় রাখিস।’

হাড়কাঁপানো হুমকিতে জমে গেল জেনি।অথৈয়ের সেই লাল চোখজোড়া যেন পারলে এখনি ভস্ম করে দেয়।অথৈ বাকিদের নিয়ে সামনে পা বাড়াতে গিয়েই দেখে সাফাত দাঁড়িয়ে আছে।চোখে মুখে কেমন অস্বাভাবিকতা তার।অথৈ ভ্রু-কুচকালো।এই লোক এমন রিয়েকশন দিচ্ছে কেন?তবে কি রুদ্রিক তাদের বিয়ের বিষয়টা ওর বন্ধুদের জানায়নি?কেন জানায়নি?কি কারনে এমন লুকোচুরি করল রুদ্রিক।ও এমন না করলে তো আজ ওর সাথে এসব হতো না।রুদ্রিকের প্রতি রাগ আরও একধাপ বেড়ে গেল।রাগে হনহন করে সাফাতের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।ওর পিছন পিছন রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদও চলে গেল।
কিন্তু অথৈ তো জানতেই পারল না। একটু আগে তার বলা কথাগুলো ঠিক কতোটা ধারা’লো ছুড়ির ন্যায় আঘা’ত করেছে সাফাতের বুকে।সাফাত এখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে।
সামনে কি হতে চলেছে কে জানে?সাফাত কি মানতে পারবে এই তিক্ত সত্তিটা?নাকি এই সত্যের কারনে ফাটল ধরে যাবে ওর আর রুদ্রিকের বন্ধুত্বে?

#চলবে_________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২২
সূর্য যেমন নিজের তেজের প্রখরতা চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।পারলে প্রকৃতিকে জ্বা’লিয়ে পুড়িয়ে দেয়।ঠিক ওই সূর্যের মতোই তেজ নিয়ে বসে আছে অথৈ।রাগে তার সারাশরীর কাঁপছে।ঠিক কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবে ভেবে পাচ্ছে না সে।জীবনে প্রথম এমন জঘন্য সিচুয়েশনে পরতে হয়েছে ওকে।আর নিজের সম্পর্কে জঘন্য সব কথা শুনতে হয়েছে।উপরে উপরে নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত করে রাখলেও। অভ্যন্তরীণে হচ্ছে রক্তক্ষর’ণ।সে আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে।পাওয়ারই কথা তা নয় কি?একটা মেয়ে নিজের সম্পর্কে বাজে সব উপাধি শুনতে পেলে কষ্ট পাবে না? অথৈ রাগে,দুঃখে দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।অনেক কান্না করতে ইচ্ছে করছে ওর।কিন্তু সে তো এতো নরম এতোটাও নরম মনের মানুষ নাহ?অথৈকে এই অবস্থায় দেখতে রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদের একটুও ভালো লাগছে না।প্রিয়ান হাটু গেড়ে বসল ওর সামনে।রিধি আর পিহু দুজন ওর দুইপাশে বসল।আহিদ দাঁড়িয়েই আছে।তবে সে অবস্থাতেই অত্যন্ত স্নেহ নিয়ে অথৈয়ের মাথায় হাত রাখল।এই মেয়েটাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে আহিদ।ঠিক যতোটা পিহুকে ভালোবাসে,ভাইয়ের দায়িত্ব নিয়ে বোনকে আগলে রাখে।ঠিক ততোটাই অথৈ আর রিধিকেও করে।ওরাও যে তার আরও দুটো বোন। রক্তের সম্পর্ক না হলেই বা কি?মনের সম্পর্কও অনেক মজবুত হয়।আর প্রমান সরূপ তারা পাঁচ বন্ধু।মাথায় ভরসাশীল মানুষের হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকায় অথৈ। তাকাতেই সবাই আঁতকে উঠে।অথৈয়ের চোখজোড়া ভয়ানকরকম লাল হয়েছে।মুখটাও লালচে আকার ধারণ করেছে।মূলত কান্না আটকে রাখার কারনেই এমনটা হয়েছে।আহিদ অস্থির হয়ে বলে উঠল,’ এ কি?কি অবস্থা করেছিস নিজের অথৈ? ‘

প্রিয়ান অথৈয়ের হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে উঠল,’ তোকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে একদম ভালো লাগছে না অথৈ। আমাদের অথৈ তো অনেক স্ট্রং একটা মেয়ে।সে বাহিরের একটা মেয়ে।যার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।তার জন্যে এইভাবে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার তো কোনো মানে নেই তাই নাহ?’

পিহু অথৈয়ের কাধে হাত রেখে বলে,’ একদম ঠিক বলছে আহিদ আর প্রিয়ান।ফালতু একটা মেয়ের জন্যে তুই কেন এতো কষ্ট পাচ্ছিস?’

রিধি অথৈয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,’ তুই তো আমার আর পিহুর থেকেও স্ট্রং।তাহলে আজ কেন এমন করছিস? এই অথৈকে আমরা চিনি না।আমদের স্ট্রং অথৈকেই চাই।’

বন্ধুদের ভরসায় আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি এনে দু হাত প্রসারিত করে দেয়।এতে রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠে।তারা দ্রুত এসে প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে।অথৈ প্রশান্তির শ্বাস নেয়।এখন অনেকটা শান্তি লাগছে।এই চারটা মানুষ না থাকলে যে ওর কি হতো?ও নিজেও জানে নাহ।ওরা শুধু অথৈয়ের বন্ধু না।ওর বন্ধু থেকেও বেশি কিছু।তার আরেকটা পরিবার।ওর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।যাদের ছাড়া অথৈ অচল।একদমই অচল।দীর্ঘ একটা হাগ করে সবাই সরে আসল।প্রিয়ান বলল,’ এখন ঠিক আছিস তুই?’

অথৈ মাথা দুলিয়ে জানালো সে ঠিক আছে।তারপর বলে উঠে,’ চিন্তা করিস না আমি ঠিক আছি।আর যা এখন তোরা বাড়ি চলে যা।ক্লাস শেষ অনেকক্ষণ হয়েছে।’

পিহু চিন্তিত কণ্ঠে বলে,’ কিন্তু তুই?’
অথৈ বলে উঠল,’ আমার আবার কি? এটা তো নিত্যদিন হয়ে আসছে।রুদ্রিকের সাথে আমি একান্তভাবে সময় কাটাই এই সময়টায়।তা তো তোরা জানিসই।আর রইলো যেটার জন্যে তোরা এমন করছিস।সেটা হবে না।আমি অথৈ এতো সহজে এই লোককে ছাড়ব না।উনি বিয়ের বিষয়টা নিজের বন্ধুদের কাছে কেন গোপন রেখেছে?সেটার জবাবদিহিতা তো তার করতেই হবে।তিনি যদি বন্ধুদের কাছে এই বিষয়ে বলে দিতেন। তবে আজ আমায় এসব শুনতে হতো না।আমার রাগে ভীতরটা ধাউ ধাউ করে জ্বলছে।সেই রাগের আগুনে যদি তাকে আমি ভ’স্ম না করেছি দেখে নিস তোরা।’

মুহূর্তেই রাগে ওর ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে আসল।আজ অথৈ প্রচন্ড রেগে আছে।বরাবরের মতোই অথৈয়ের রাগকে ওরা বেশ ভয় পায়।মেয়েটা রাগলে ওরা হুঁশ থাকে না।আর আজ তো এই বাঘিনীকে আঘাত করা হয়েছে।বলে না ব্যথিত বাঘিনীরা আগের থেকেও আরও দ্বিগুন হিংশ্র হয়ে উঠে।অথৈয়ের বেলাতেও ঠিক তাই হয়েছে।ওরা চারজন আর বেশি একটা ঘাটল না।এটা তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার বিষয়।তারাই সামলে নিতে পারবে।মন না চাওয়া সত্তেও অথৈয়ের কাছে হার মেনে ওরা বাড়ির যাওয়ার জন্যে রওনা দিলো।

অথৈ মন মরা হয়ে বসে রইলো গাছের নিচে।স্থির দৃষ্টি তার আকাশপাণে।আনমনা হয়ে কি যেনো ভেবে চলল নির্নিমেষ। প্রায় আধাঘন্টা পর সেখানে এসে উপস্থিত হলো রুদ্রিক।দূর থেকেই প্রেয়সীকে মন মরা হয়ে বসে থাকতে দেখে বুকের বা পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতে শুরু করল।মেয়েটা এইভাবে কেন বসে আছে?কোনো কারনে কি মেয়েটার মন খারাপ?রুদ্রিক দ্রুত কদম ফেলে চলে এলো অথৈয়ের কাছে।অথৈ টের পেলো ঠিকই।তবে ওর কোনো হেলদোল হলো না।সে এখনও আকাশে তাকিয়ে আছে।রুদ্রিকের বুক কাঁপছে।অথৈয়ের মুখশ্রী ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। সেই সাথে চোখজোড়াও লাল হয়ে আছে।রুদ্রিক কি করবে ভেবে পেলো না।অথৈকে এমন অবস্থায় দেখে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।রুদ্রিক এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল।কিন্তু পারল না।তাই হুট করে অথৈকে টেনে বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো।এতেও যেন অথৈয়ের কোনো নড়চড় নেই।ও শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রিকের যেন এতে পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।একহাত অথৈয়ের কোমড়ে রাখল।আরেক হাত অথৈয়ের মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘ কি হয়েছে অথৈ?এমন করছ কেন?এমন শান্ত, নিরম অথৈকে দেখতে আমার ভালো লাগছে না।কথা বলছ না কেন?শরীর খারাপ লাগছে তোমার?কিছু তো বলো অথৈ।’

রুদ্রিকের কথার পরিপেক্ষিতে অথৈ নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বলে উঠল, ‘ আমাদের বিয়ের বিষয়টা নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে কেন গোপন রাখলেন রুদ্রিক?’

অথৈয়ের আকস্মিক এহেন কণ্ঠে আর কথায় চমকে উঠে রুদ্রিক।অথৈকে ঝট করে বুক থেকে সরিয়ে আনল।শক্তপোক্ত হাতটা অথৈয়ের নরম,কোমল কপোল স্পর্শ করল।আজ আর অথৈ লজ্জা পেল না।মিইয়ে গেল না রুদ্রিকের স্পর্শে।বরংচ কেমন যেন কঠোরতার সহিত তার দিকে তাকিয়ে আছে।এই কঠোরতা কিসের জন্যে?তার অথৈ তো সে কাছে আসলেই লজ্জায় মোমের মতো গলে যায়।তাহলে আজ কি এমন হলো?রুদ্রিক ব্যাকুল কণ্ঠে সুধালো,’ কি বলছ এসব অথৈ? আর হঠাৎ এসব কেনই বা বলছ?’

অথৈ রুদ্রিকের হাত নিজের গাল হতে সরিয়ে দিল।তারপর শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,’ আমার প্রশ্নের উত্তর দিন রুদ্রিক।’

রুদ্রিক থমকালো অথৈয়ের ব্যবহারে।পর পর অথৈকে বোঝাতে লাগল,’ আকস্মিক আমাদের বিয়েটা হয়েছে।আর তাছাড়া আমাদের সম্পর্কে এখনও প্রনয় তৈরি হয়নি।আর ওদের না জানিয়ে আমি হুট করে বিয়ে করে নিয়েছি।ওদের এই কথা বললে ওরা কষ্ট পাবে।তাই আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।সুযোগ সুবিধা বুঝে ওদের সামনে তোমাকে নিয়েই গিয়েই বিয়ের কথাটা বলতাম।’

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামল রুদ্রিক। ফের বলে উঠে,’ কিন্তু কি হয়েছে?তুমি আমাকে সব খুলে বলো অথৈ। আমি জানি তুমি অকারনে এমন ব্যবহার কোনোদিন করবে না।’

রুদ্রিকের কথা শেষ হতে দেরি।অথৈয়ের রাগি ভয়ংকা’রি দৃষ্টি ওর উপর পরতে দেরি নেই।রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে আচমকা রুদ্রিকের শার্টের কলার চেপে ধরল অথৈ। রাগে চিৎকার করে উঠে অথৈ, ‘ কেন করছি জানতে চান?তো শুনুন।আপনার কারনে?হ্যা,ঠি শুনছেন আপনার কারনেই।আপনি বিয়েটা গোপন রেখেছেন এই কারনেই।আমি আপনার সাথে দেখা করি,একান্ত সময় কাটাই।এইজন্যে বাহিরের একটা মেয়ে এসে আমার চরিত্র নিয়ে কথা তুলেছে।আমাকে ভার্সিটির মধ্যে যা নয় তাই বলেছে।আমার নাকি চরিত্রে দোষ আছে।এইজন্যে নাকি আমি আপনার উপরে হাত ধুয়ে পরেছি।আমা….আমাকে পতিতালয়ের মেয়েদের সাথে তুল….’

আর বলতে পারল না অথৈ। ঝটকা মেরে রুদ্রিকের কলার ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল।উল্টো দিকে ঘুরে রাগে ফোঁপাতে লাগল।সে স্ট্রং একটা মেয়ে।যার তার সামনে সে তার আবেগ দেখাতে পারে না।কিন্তু আজ কেন যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না মেয়েটা।কথায় আছে না যতোই তুমি নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত করে রাখ না কেন?দিনশেষে প্রিয় মানুষটার সান্নিধ্যে আসলে তোমার সেই শক্ত খোলস একসময় ভেঙে গুড়িয়ে যাবেই।এটাই যে নিয়ম।তাই অথৈও পারছে না নিজেকে সামলাতে।কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে কণ্ঠনালিতে এসে আটকে আছে।কষ্ট হচ্ছে ওর।খুব কষ্ট হচ্ছে।অথৈ ভেজা কণ্ঠে বলে উঠল,’ আমি কি জোড় করেছিলাম আপনায় আমাকে বিয়ে করার জন্যে?করেনি তো! তাহলে,আজ কেন আমায় এইসব কথা শুনতে হবে।আপনার স্ত্রী আমি।তাহলে কেন আপনার কাছে যাওয়ার জন্যে আমাকে চরিত্রহীন উপাধি পেতে হবে।বলুন?জবাব দিন।আমি কি এতোটাই অযোগ্য আপনার স্ত্রী হওয়ার? নাহলে কেন আপনি সবার থেকে আমাদের বিয়েটা আড়াল করে রাখলেন?’

বহু কষ্টে নিজের অশ্রুকণাগুলো ধরে রাখতে চেয়েছিল অথৈ। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো অক্ষিপটের বারিধারাগুলো নিমিডষেই সিক্ত করে তুলল অথৈয়ের কপোল( গাল)। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না অথৈ। নিজেকে দূর্বল হতে দেখে সহ্য করতে পারছে না ও।তাই আর কাল বিলম্ব না করে দৌড়ে সেই স্থান ত্যাগ করল অথৈ। তবে যাবার আগে রুদ্রিককে বলে গেল,’ আপনাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হবে মিঃআরিহান রুদ্রিক।একটা মেয়ের সবচেয়ে বড়ো আর মূল্যবান সম্পদ হলো তার চরিত্র।আর আজ আপনার একটা ভুলের কারনে আমার সেই চরিত্রের উপরে মানুষ এনে আঙুল তুলেছে।এতো সহজে আমি জাফ্রিন অথৈ আপনাকে ক্ষমা করছি না।আমার হৃদয়ের অন্তঃকরণে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে তা না থামা পর্যন্ত অন্তত নাহ।কথাটা মাথায় স্যেট করে নিয়েন।’

অথৈয়ের বলা প্রত্যেকটা কথার প্রতিত্তুরে কিছুই বলেনি রুদ্রিক।এমনকি অথৈয়ের চলে যাবার সময়েও তাকে থামায়নি ও।তবে অথৈয়ের মুখগহ্বর হতে নিশ্রিত প্রতিটা শব্দ যেন ধারা’লো ছুড়ির ন্যায় ওর হৃৎপিণ্ডটা ঝা’ঝড়া করে দিয়েছে।অথৈয়ের চোখের প্রতি ফোটা জল যেন ওর সমস্ত কায়াকে আগুনে ভ’স্ম করে দিয়েছে।অথৈয়ের কষ্টে জর্জরিত প্রতিটা শব্দ,বাক্য ওর কানে বাজতে লাগল অনবরত।চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা নিশ্বাস নিলো রুদ্রিক।কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ধপ করে চোখ খুলে তাকালো ও।রুদ্রিকের সেই টকটকে লাল চোখজোড়া দেখলে যেন যে কেউ ভয়ে আঁতকে উঠবে।মস্তিষ্কের রগগুলো রাগের কারনে ধাপাধাপি করছে।সর্বশক্তি প্র‍য়োগ করে হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো রুদ্রিক।ফলে দৃশ্যমান হলো হাতের প্রতিটি শিরা উপশিরা।রুদ্রিকের অথৈয়ের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা,শীতল গলায় বলে উঠল,
‘ আজ যার জন্যে, যার কথার তিক্ত কথার কারনে কষ্টে পেয়ে তুমি কাঁদলে।আর তোমার চোখের প্রতিটা অশ্রুকণার সাক্ষি হলাম আমি।সেই মানুষটাকে সস্তির নিঃশ্বাস নিতে দিবো না।আমার সুখ তুমি।আর আমার সুখকে আজ এতোটা দুঃখি করার জন্যে সেই মানুষটাকে খু’ন করতেও আমার দ্বিধা কাজ করবে না।সে যেই হোক না কেন।আমার স্ত্রী,আমার অর্ধাঙ্গিনীর চোখের প্রতি ফোটা অশ্রুকণার বিনিময়ে তাকে যে আমি কি করব আমি নিজেও জানি না।তুমি শুধু অপেক্ষা করো অথৈ। আমি সব ঠিক করে দিব।শুধু আমায় ভুল বুঝে দূরে সরে যেও না।তোমার দূরত্ব আমি মেনে নিতে পারব না।তার আগেই নাহয় শ্বাস আটকে মে’রে ফেলো আমায়।কারন অথৈ ছাড়া রুদ্রিক অসম্পূর্ণ। ‘

#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।