মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
405

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৬
রুদ্রিকের বক্ষে লেপ্টে আছে অথৈ। এখনও সে থেমে থেমে কেঁপে উঠছে।সে এখনও ঠিকঠাকভাবে স্বাভাবিক হতে পারছে না।রুদ্রিকের হঠাৎ দেওয়া ভালোবাসার স্পর্শগুলো তার রন্দ্রে রন্দ্রে প্রকট আকারের ভূমিকম্পের রূপ নিয়েছিলো।এখনও সেই ভূমিকম্পের রেশ রয়ে গিয়েছে।রুদ্রিক অথৈয়ের এমন নাঁজেহাল অবস্থা দেখে হাসল।তার এই একটুখানি স্পর্শে মেয়েটার এমন অবস্থা।যখন সে মেয়েটাকে নিয়ে ভালোবাসার সাগরে তলিয়ে যাবে।সুখময় যন্ত্রনায় ভড়িয়ে তুলবে মেয়েটাকে।তখন মনে হয় মেয়েটাকে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না।রুদ্রিক হুট করে কোলে তুলে নিলো।অথৈ কিছুই বলল না।চুপচাপ রইলো।রুদ্রিক ওকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।অথৈয়ের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে নিলো।তারপর অথৈকে খাইয়ে দিলো। পানি পান করে অথৈ একটু স্বাভাবিক হলো।রুদ্রিক এইবার তার দুষ্টু চাহনী অথৈয়ের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে,’ এই এইটুকুতে এই অবস্থা?বাসর রাতে তো তোমাকে আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না।’

অথৈয়ের শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল।লোকটা যে এমন অসভ্য হয়েছে।মুখে কিছুই আটকায় না।লজ্জায় গালদুটো ফুলেফেঁপে উঠেছে ওর।মুখ ফুলিয়ে বলে,’ আপনি আপনার অসভ্য কথাবার্তা বন্ধ করুন।নাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।’

রুদ্রিক ধীর আওয়াজে বলে,’ তাহলে বলো তো।অভিমানিনীর অভিমান কি আমি ভাঙাতে পেরেছি?নাকি তার অভিমান ভাঙাতে আরও আদর লাগবে তার?’

অথৈ রুদ্রিকের এমন লাগামহীন কথাবার্তায় উঠে দাঁড়ালো।চেঁচিয়ে বলল,’ চরম অসভ্য লোক।এতোটা নির্লজ্জ কেউ কিভাবে হতে পারে?’

রুদ্রিক পকেটে দুহাত গুজে।নির্বিকার ভঙিতে দাঁড়িয়ে বলে,’ সব পুরুষেরাই নিজেদের বউদের কাছে নির্লজ্জই হয়।আর পুরুষদের লজ্জা পেতে নেই। লজ্জা তো নারীদের ভূষণ।আর আমি যদি লজ্জা পাই।তাহলে আমাদের বাচ্চা কাচ্চা’রা পৃথিবীর আলো দেখবে কিভাবে?’

অথৈ হা করে তাকিয়ে রইলো।এখনও বউ সেঁজে তার বাড়িই যেতে পারলো না।আর এই লোক বাচ্চা কাচ্চা পর্যন্ত চলে গিয়েছে?

অথৈকে হা করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করল।তীর্জক স্বরে বলে,’ আই নো আই আম সো হ্যান্ডসাম।আর এভাবে তাকালে তো আমার লজ্জা লাগে।’

বিষ্ময়ে অথৈয়ের ভ্রুদ্বয় কপালে উঠে গেল।অবাক কণ্ঠে বলে,’ আপনি না একটু আগে বললেন আপনার লজ্জা নেই। আপনি লজ্জা পান নাহ?তো এখন আবার বলছেন আমি তাকালে আপনি লজ্জা পান?’

রুদ্রিক বড়ো বড়ো পা ফেলে অথৈয়ের কাছে আসল।ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে বলে,’ আর কথা বলো না তো।এখন চলো আমার সাথে।’
‘ আরেহ! কিন্তু কোথায় যাবো?সেটা তো বলুন?’
‘ তোমার বন্ধুদের বলেছিলাম।তোমার অভিমান ভাঙাতে পারলে তাদের ট্রিট দিবো আমি।সো সেখানেই যাচ্ছি আমরা।’

রুদ্রিকের কথায় অথৈ চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বলে,’ তার মানে ওরাও আপনাকে হ্যাল্প করেছে তাই না?’

রুদ্রিক কিছু না বলে শুধু হাসি দিলো।যা বোঝার বুঝে ফেলেছে অথৈ। ওর বন্ধুদেরও বশ করে নিয়েছে এই লোক।অথৈ মুখ ফুলিয়ে রুদ্রিকের সাথে হাটতে লাগল।আর রুদ্রিক হাসছে অথৈয়ের কান্ডে।
__________
ফার্স্ট ইয়ার,ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহিদ।স্যার ক্লাসরুমে ক্লাস নিচ্ছেন।আহিদ জানালা দিয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে।অবশেষে অনেক কষ্টে সেই কাঙ্খিত মুখটা দেখতে পেলো।মাইশা ক্লাসরুমের লাস্টের আগের বেঞ্চে বসে আছে।খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে সে।যেমন আশেপাশের কোনো কিছুরই খেয়াল তার নেই।আহিদের অস্থির হৃদয়টা এতোক্ষণে শান্ত হলো।অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেল নিমিষেই। এতোক্ষন মনের মাঝে যেই শূন্যতা অনুভব করছিলো সে।এখন তা বিন্দুমাত্র অনুভব করছে না।এ কেমন অনুভূতি?এ কিসের মাঝে ফেসে গেল সে? কেন এরকম লাগে তার?তবে কি সে প্রেমে পরে গেল মেয়েটার?ভালোবেসে ফেলল মেয়েটাকে?কিন্তু এক দেখাতেই কি কাউকে ভালোবাসা যায়?হ্যা, যায়তো! যাবে না কেন?নাহলে কি ‘লাভ এট ফার্স্ট সাইট ‘ বলে কি কিছু থাকত? থাকত না।ভেবেই হাসল আহিদ।পর পর আবার মুখের হাসিটা হারিয়ে গেল।সে তো ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে।কিন্তু আদৌ কি কোনোদিন এই মাইশা নামের মেয়েটা ভালোবাসা পাবে কোনোদিন?নাহ, এতোকিছু ভেবে তো আর ভালোবাসা যায় না।ভালোবাসা হলো স্নিগ্ধ,পবিত্র একটা অনুভূতি।ভালোবাসলেই যে ভালোবাসা পেতে হবে এমন কোনো কারন নেই।এক তরফা ভালোবাসাগুলোও অনেক সুন্দর হয়।তবে হ্যা,আহিদ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে মাইশার মনেও তার জন্যে অনুভূতি সৃষ্টি করানোর জন্যে।ভেবেই মুচঁকি হেসে সরে গেল সে।থাকুক মেয়েটা ক্লাস করছে।এখন আর জ্বালাতন করবে না। সে আপাততো ব্যস্ত।এখন তাকে যেতে হবে রেস্টুরেন্টে।রুদ্রিক তাদের ট্রিট দিবে।মেয়েটাকে দেখে নিয়েছে।শান্তি পেয়েছে এতেই হবে।বাকিটা না হয় পরে করা যাবে।
__________
পিহু আর প্রিয়ান ভার্সিটির মাঠ দিয়ে হাটছে।পিহু প্রায় একপ্রকার লাফিয়ে লাফিয়ে হাটছে।প্রিয়ান দু একবার বারণ করেছে ওকে।কিন্তু কে শুনে কার কথা?পিহু তার মতো করেই চলেছে। এভাবে হঠাৎ করে প্লাজোর সাথে পা বাজিয়ে পরে যেতে নিতেই।মৃদ্যু চিৎকার করে উঠল পিহু। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।কিন্তু অনুভব করল কেউ তার কোমড় আঁকড়ে ধরেছে।তাকে পরতে পরতে বাঁচিয়ে নিয়েছে।পিহু পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।চোখ মেলে তাকাতেই প্রিয়ানের রাগি মুখশ্রী দেখতে পেল।রক্তচক্ষু নিয়ে সে তাকিয়ে পিহুর দিকে।রুদ্রিক সজোড়ে টেনে পিহুকে সোজা করে দাঁড় করালো। এতে ব্যথা পেয়েও পিহু মুখ ফুটে কিছুই বলল না। চুপসে দাঁড়িয়ে রইলো প্রিয়ানের সামনে।যেভাবে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে একদম।প্রিয়ান রাগি স্বরে বলে,’ ইঁদুরের মতো ছুটাছুটি না করলে তোর ভালো লাগে না?কতোবারনা করেছি তোকে?শুনেছিস আমার কথা?এখন আমি যদি না ধরতাম তাহলে তো পরে হাড্ডি-গুড্ডি সব ভেঙ্গে বসে থাকতি।মনে তো চাচ্ছে থাপড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দেই।’

পিহু প্রিয়ানের রাগি স্বরের কথাগুলো শুনে মুখ ফোলালো।মিনমিন করে বলে,’ এভাবে বলছিস কেন? আমি কি ইচ্ছে করে পরে যেতে নিয়েছিলাম না-কি?’
‘ তুই তো ইচ্ছে করে কিছুই করিস না।এইযে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছিস।সেটাও তো তুই ইচ্ছে করে করিস না তাই না?’

পিহু অবাক হলো প্রিয়ানের কথায়।সেভাবেই বলে,’ মানে?আমি আবার তোকে কি করলাম?’

প্রিয়ান কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেলো।কপালে আঙুল ঘষে নিজের রাগটাকে দমন করার চেষ্টা করল।অনেক কষ্টে নিজের রাগিটা সামলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’ তুই তো কিছুই জানিস না। একেবারে মাসুম বাচ্চা।এখন আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে চল।এই রিধিটাও যে কোথায় মরতে চলে গিয়েছে কে জানে?মেজাজটা একেবারে খারাপের চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।এই মেয়েগুলো এক একটা প্যারা।কিভাবে যে এদের সামলায় মানুষ।’

কথাটা শেষ করে প্রিয়ানের চোখ পিহুর দিকে যায়।দেখে পিহু রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়ান তাকাতেই পিহু রাগি গলায় বলে,’ মেয়েরা এক একটা প্যারা তাই নাহ? আমি প্যারা?তো আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিস কেন?অথৈ আর রিধির সাথে কেন করেছিস বন্ধুত্ব?থাক তুই তোর মতো।আর আসবি না আমার সাথে কথা বলতে।বান্দরের জাতের সবচেয়ে বলদ বান্দর কোথাকার।’

এসব বলেই পিহু হনহন করে চলে গেল। এইদিকে নিজের কথায় প্রিয়ান নিজেই যে এতো বাজেভাবে ফেঁসে যাবে ভাবেনি।এখন এই রাগের রানিকে কিভাবে শান্ত করবে সে?রেগে তো একেবারে বোম হয়ে আছে।তবে রাগি পিহুকে দেখতে অনেক ভালো লাগে প্রিয়ানের।রাগি রাগি ওই চোখের চাহনীটা একেবারে বুকের বা পাশে গিয়ে লাগে।পিহুর জায়গাটা যে ওর মনের মধ্যে একটু ভিন্ন।মানে স্পেশাল তা সে বেশ বুঝতে পেরেছে প্রিয়ান।শুধু অপেক্ষায় আছে নিজের মনের অনুভূতি ঠিকঠাক বুঝে উঠার জন্যে।ওর মন ঠিক কি চায় তা ভালোভাবে জেনে নেওয়ার জন্যে।তবে পিহুকে যে এখন সে বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু মনে করে তা বেশ বুঝেছে সে।তার সহ্য হয় না পিহু সে বাদে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে।রাগ লাগে তার প্রচন্ড রাগ।মন চায় চারপাশ সেই রাগের তেজে ঝলসে দিতে।তাই তো সেদিন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পিহুর সাথে বাজে ব্যবহার করেছিলো।তবে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। দেখা যাক সময় তাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়।কথাগুলো নিজ মনে ভেবেই মুচঁকি হাসল প্রিয়ান। পর পর ছুটে চলে গেল রাগি পিহুর রাগ ভাঙানোর জন্যে।

#চলবে___________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৭
রেস্টুরেন্টের ছাদের প্রায় একপাশ রুদ্রিক নিয়ে নিয়েছে।বেশ খোলামেলা ছাদটা।হরেকরকমের বাহারি ফুল গাছের ছড়াছড়ি ছাদটায়। সেই গাছে কয়েকটায় ফুলও ফুটেছে।এতে যেন ছাদের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে।দু টো ছোটো খাটো ওয়াটার ফলও আছে।সেখানে আবার ছোটো ছোটো মাছ ছাড়া হয়েছে।পাশেই আবার বড়ো একটা খাচায় নানান রঙের লাভ বার্ডসও আছে।ছাদের এদিক সেদিক চার পাঁচটা খরগোশকেও দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যাচ্ছে।রুদ্রিক আর অথৈয়ের সব ফ্রেন্ডরা একসাথে বসেছে একটা টেবিলে।বিশাল বড়ো টেবিলটা।মূলত রুদ্রিক এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে বলে এই ব্যবস্থা করিয়েছে।এদিকে অথৈ খরশোশ দেখেই সেইগুলোর পেছনে লেগেছে। উদ্দেশ্য যে করেই হোক একটাকে ধরে আদর করবে।সাদা সাদা পশমযুক্ত ওই গা টা ছোঁয়ার জন্যে সে মরিয়া হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে একধ্যানে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।মেয়েটা মাঝে মাঝে যে বাচ্চাদের মতো ব্যবহারগুলো করে তা রুদ্রিক বেশ উপভোগ করে।এই মেয়েটার যে আর কতো রূপ আছে কে জানে?রুদ্রিক যে আর কতোবার এই মেয়ের প্রেমে পরবে।রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
অথৈ খরগোশের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে উঠেছে।কিন্তু একটাও ধরতে পারেনি। অথৈ মুখ ফুলিয়ে রুদ্রিকের পাশে ধপ করে বসে পরল।অথৈয়ের মুখ ফুলানো দেখে হাসল রুদ্রিক।দৌড়াদৌড়ি করার ফলে অথৈয়ের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে।রুদ্রিক ট্যিশু দিয়ে অথৈয়ের ঘার্মাক্ত মুখশ্রীটা যত্নসহকারে মুছে দিল।এতোগুলো মানুষের সামনে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে অথৈ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।মিনমিন করে বলে,’ কি করছেন?’

রুদ্রিক ভাবলেশহীনভাবে বলে,’ কি করছি?কিছুই করছি না।শুধু বউয়ের ঘর্মাক্ত মুখশ্রীটা মুছে দিলাম।আর এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।চুমু তো আর খাইনি।এতো লজ্জা পেও না।তোমার ওই লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখলে কিন্তু সত্যি চুমুটুমু খেয়ে ফেলতে পারি।তখন আমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’

ভয়ংকর লজ্জা পেয়ে অথৈ ঠিক কি বলবে ভাষা খুঁজে পেল না।এই লোকটার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই।আর মুখে লাগামও টানে না।কিসব বলে ফেলে।যা শুনে অথৈয়ের মন চায় একগ্লাস পানিতে ডুবে মরে যেতে।এইযে এখন মাত্র বলা লোকটার কথা শুনে অথৈয়ের কথা গলায় আটকে গিয়েছে।হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে গিয়েছে।গাল দুটো লজ্জায় ফুলফেপে উঠেছে।অথৈয়ের গলা শুকিয়ে কাঠ।কোনোরকম হাত বাড়িয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।হঠাৎ কানের কাছে রুদ্রিকের ফিসফাস করা কণ্ঠ শুনতে পেল,’ চুমু খাব?বলেছিলাম লজ্জা পেতে নাহ।বেষামাল হয়ে যাচ্ছি আমি।’

অথৈ টানটান হয়ে কাঠ হয়ে বসে রইলো।শরীর তার বরফের ন্যায় জমে গিয়েছে।শ্বাস আটকে গিয়েছে তার।
_____________
ইহানের ঠোঁটের কোণে মুচঁকি হাসি।বোনটা যে তার এতোটা সুখে শান্তিতে থাকবে সেটা দেখেই তার প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
যাক,তার আর কোনো চিন্তা নেই।আজ রুদ্রিকের অথৈয়ের প্রতি কেয়ার দেখে ইহানের সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর হয়ে গিয়েছে।ইহান তার দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।কিন্তু হঠাৎ করে চোখ আটকে যায়।ঠিক তার বরাবর বসা অপরপ্রান্তের রিধির দিকে।গাঢ়ো লাল রঙের কামিজ সেটে মেয়েটাকে একদম বউ বউ লাগছে।সুন্দর লাগছে অনেক দেখতে।নজর ফিরাতে পারছে না সে।ইদানিং তার সাথে যে কি হচ্ছে সে বুঝতেই পারছে না।এই মেয়েটাকে নিয়ে মনের মাঝে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে তার।অদ্ভূত সব ইচ্ছে জাগে মনে।যার কোনো কূল কিনারা সে পাচ্ছে না।রিধির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কথাগুলো ভাবল ইহান।হঠাৎ তার কপাল জোড়া কুচকে এলো। আজকের রিধিকে তার অন্যরকম লাগছে।অন্যান্য দিন রিধির সাথে ওর দেখা হলে।বা ওরা কোনো কারনে একসাথে হলে।রিধি দু এক মিনিট বাদে বাদেই ইহানের দিকে তাকাতো।চোরা দৃষ্টিতে পরখ করে যেতো ওকে।ইহানের থেকে যতোই লুকোতে চেষ্টা করত মেয়েটা।ইহান তাকে দেখেই ফেলত।তবে ইহান কোনোদিন কিছু বলেনি।কিন্তু আজ একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না মেয়েটা।কি হয়েছে?সে তো কিছু করেনি রিধিকে।বা কোনো খারাপ কথাও বলেনি।তবে এমন কেন করছে ও?ভালো ভালো মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেলো ইহানের।কিন্তু রিধি তার দিকে তাকালেই কি বা না তাকালেই বা কি? তার কেন এতো কষ্ট লাগছে?বুকের বা পাশে এতো জ্বাপাপোড়া করছে।জানে না সে কিছুই জানে না।
____________
সিয়া বিরক্ত হয়ে বার বার অনিকের দিকে তাকাচ্ছে।এই ছেলের মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।বা মাথার তাড় ছিড়ে গিয়েছে বোধহয়।কিসব যে শুরু করে দিয়েছে।অনিক একেবারে সিয়ার গায়ের সাথে লেপ্টে বসেছে।এই নিয়ে সিয়া কয়েকবার বলেছে অনিককে সরে বসতে।কিন্তু সে সিয়ার কথা শুনেও না শোনার ভাণ ধরে একইভাবে বসে।এতোগুলো মানুষের সামনে অনিকের এমন কান্ডে সিয়ার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।সহ্য করতে না পেরে এইবার দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ কি সমস্যা এমন করছেন কেন?’

সিয়ার এই কথাটুকু শোনার জন্যেই যেন মনে হয় অনিক অপেক্ষায় ছিলো।অনিক বলল,’ আবার আপনি করে বলছিস?এখন তুই কি চাচ্ছিস? তোর ওই সুন্দর ঠোঁটজোড়া দিয়ে যে আমায় বার বার আপনি বলে সম্বোধণ করছিস সেই ঠোঁটে আমি সবার সামনে চুমু খেয়ে বসি?চয়েজ ইজ ইয়্যোরস!’

সিয়া হা হয়ে গেল অনিকের কথায়।এই মাত্র এসব কি বলল অনিক তাকে?তাদের রিলেশন থাকাকালীন অবস্থাতেও তো অনিক এমন লাগামহীন কথাবার্তা বলেনি। তাহলে ইদানিং এই অনিকের কি হলো?আর কেনই বা এইভাবে হাত ধুয়ে ওর পিছনে পরেছে। সে তো বলেছিলো ওদের ব্রেকআপের দিন।অনিকের নাকি সিয়াকে পছন্দ হয় না।তার বিরক্ত লাগে সিয়াকে।তবে হঠাৎ কি এমন হলো যে অনিক এমন মরিয়া হয়ে উঠেছে।ওর পিছনে লেগেই থাকে।তবে কি অনিক আবারও তার মোহ পরেছে?সেই মোহে পরেই আবারও অনিক তার কাছে আসতে চাইছে?একসময় মোহ কেটে গেলে আবারও তাকে আগের মতো ছুড়ে ফেলে দিবে?কিন্তু সিয়া তো তা চাইছে।অনিকের দেওয়া সেই প্রথম কষ্টের রেশ এখনও সে ভুলতে পারেনি।প্রতিরাতে তার জন্যে চোখের পানি ফেলে সে বালিশ ভেজায়।আবারও সেই কষ্ট সিয়া পেতে চায় না।প্রথমবারের কষ্টে তো কোনোরকম সে বেঁচে যাবে।দ্বিতীয়বার আবার সেই কষ্ট পেলে সিয়া এইবার বাঁচতে পারবে না। কোনোমতেই বাঁচতে পারবে না।তাই অনিককে থামাতে হবে।তাকে বোঝাতে হবে।এইভাবে ওর পিছনে পরে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।যে করেই হোক অনিককে থামাতে হবে।আর আগাতে দেওয়া যাবে না।
সিয়া উঠে দাঁড়ালো নিজের চেয়ার থেকে।তারপর সোজা হেটে গিয়ে ইহানের কাছে গেল।ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ ইহান তুই গিয়ে অনিকের পাশো বোস না গিয়ে।আমার ওইখানে আনকোম্ফোর্টেবাল ফিল হচ্ছে।প্লিজ ভাই যা না।’

ইহান সিয়ার এতো রিকুয়েস্ট ফেলতে পারল না।তাই উঠে গিয়ে বসল সিয়ার পাশে।আর সিয়া সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইহানের জায়গায় বসে পরল।এদিকে সিয়ার এমন কাজে অনিকের রাগে মাথা ফেটে যাবার জোগাঢ়।সাহস কিভাবে হলো এই মেয়ের ওর পাশ থেকে উঠে চলে যাবার?কিভাবে পারল এইভাবে উঠে চলে যেতে?অনিকের সান্নিধ্য কি ওর এতোটাই খারাপ লাগছিলো?কই আগে রিলেশনে থাকাকালীন তো এমন করত না।উলটো অনিকের সাথে আরও চিপকে থাকত।এখন কি তার স্পর্শটাও এই মেয়ের সহ্য হয় না।এতোটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এই মেয়ের মধ্যে?অনিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল।হঠাৎ করেই রাগটা পরে গেল তার।এটা ভেবেই যে দোষ তো তারই।কম অপমান করেনি ও সিয়াকে।তবে এতো সহজে কেন মেয়েটা মেনে নিবে?কঠিন শাস্তি পাওয়া দরকার তার।সেখানে তো এই মেয়ে তাকে কিছুই বলেনি।অনিকের নিজের প্রতি রাগ লাগছে।কেন সেদিন সিয়াকে ওভাবে অপমান করেছিলো সে? সিয়াকে ছেড়ে অন্য মেয়ের মোহে পরে গিয়েছিল সে।এই মেয়ের কথা শুনেই সেদিন সিয়ার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছিলো।রাগে দুঃখে অনিকের মন চাচ্ছে এই সাততলা বিল্ডিংয়ের ছাঁদের উপর থেকে লাফ দিয়ে পরে মরে যেতে।হঠাৎ কাধে কারও হাতের ছোঁয়া পেয়ে সেদিকে তাকায় অনিক।অনিক তাকাতেই ইহান বলে উঠল,’ ধৈর্য ধর।ধৈর্য ধরলে মোয়া ফলে।মেয়েটাকে যে পরিমান কষ্ট তুই দিয়েছিস।তার কাছে এসব কিছু না।ইনফেক্ট সিয়া তো তোকে কিছু করেই নি।এমন কি কিছু বলেও নি।এখন একটাই উপায় বলব।নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা কর ওর অভিমান ভাঙাবার।যেই অভিমানের পাহাড় তুই নিজে সৃষ্ট করেছিস।তা ভালোবাসা দিয়ে ভেঙে ফেল।হাল ছাড়বি না কোনো।দরকার পরলে সারাজীবন চেষ্ট করবি।ভালোবাসলে তো মানুষ কতোকিছুই করে।তুইও হাল ছাড়িস না।’

অনিক ইহান কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল।তার ঠোঁটের কোণে হাসি।এতোক্ষনের খারাপ লাগা দূর হয়ে গিয়েছে।এখন ইহানের কথাগুলোও বাজছে। যে ভাবেই হোক সিয়াকে সে মানিয়েই ছাড়বে।হাল ছাড়বে না কোনো।

#চলবে___________

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৮
সময় বহমান।দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ।সবার জীবনের চলা গতি বেশ ভালোই।তবে ভালো কাটছে না ইহানের।তার মনটা আজকাল তার আয়ত্ত্বে নেই।মনটা যেন রিধির হয়ে গিয়েছে।নাহলে এই মন তাকে কেন বাধ্য করে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা রিধিকে নিয়ে ভাবতে?উঠতে,বসতে,খেতে,শুতে সবসময় শুধু রিধিই তার মাথায় ঘুরপাক খায়।কি করবে ইহান?কেন এমন হচ্ছে?এই প্রশ্নের উত্তরগুলো সে গত একসপ্তাহ যাবত খুঁজে চলেছে।কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি।মন মরা হয়ে ইহান বিছানায় উপুর হয়ে পরে আছে।সম্পূর্ণ মস্তিষ্কে তার রিধিই কিলবিল করছে।নিজের উপর চরম বিরক্ত হয়ে মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠল ইহান।ঠিক তখনই রুমে ছেলের জন্যে কফি নিয়ে প্রবেশ করছিলেন মিনহা বেগম।ছেলের এমন অস্থির আর ছটফট আচড়ণ দেখে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসেন।কফির মগ টেবিলের রেখে।উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠেন,’ আব্বা?কি হয়েছে তোর?এমন করছিস কেন বাবা?’

বলতে বলতে তিনি ইহানের কাছে বসে পরলেন।তার সর্ব মুখশ্রীতে ছেলের জন্যে চিন্তার ছাপ।মায়ের চিন্তিত চেহারা দেখে ইহান নিজেকে খানিক দমিয়ে আনল।বলে উঠল,’ কিছু হয়নি মা।এমনিতেই ভালো লাগছে না।’
‘ কেমন লাগছে বল আমায়। আমি জানি তোর কিছু হয়েছে।আমি তো মা আমি সব বুঝি।তোরা মুখে না বললেও আমি বুঝে যাই।’

মায়ের কথায় হাসে ইহান।ঝলমলে সুন্দর হাসি।এগিয়ে এসে দপ করে মায়ের কোলে শুয়ে পরল।মিনহা বেগম ছেলের চুলে আদুরে স্পর্শ হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।ইহানের আরামে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।সেভাবেই ধীর স্বরে বলে,
‘ মা আমি তোমাকে এখন কিছু বলব।আমার অস্থিরতার কারনগুলো বলব।তুমি শুধু আমায় কারনটা জানাবে কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে।’

মিনহা বেগম ইহানের চুল টেনে দিতে দিতে বলে,
‘ তুই বল।আমি যদি কোনো উপায় বলতে পারি।অবশ্যই আমি বলব।’

ইহান লম্বা শ্বাস ফেলল।এরপর বলতে শুরু করল,
‘ ইদানিং কি যেন হয়েছে মা।আমি তোমাকে সবটা ক্লিয়ার করেই বলছি।তুমি তো জানো অথৈ, রিধি,পিহু,প্রিয়ান,আহিদ ওরা ছোটো থেকেই একসাথে বড়ো হয়েছে।অথৈকে আমি যতোটা স্নেহ করি। আর ভালোবাসি ওদেরও ঠিক ততোটাই করি।কিন্তু ইদানিং আমার সাথে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।রিধিকে আমি সেই ছোটো থেকেই দেখে আসছি।কিন্তু আগে কখনই এমন লাগেনি।তবে এখন রিধিকে নিয়ে আমি চব্বিশ ঘন্টা ভাবি।না ভাবতে চাইলেও আমার মন,আমার মস্তিষ্ককে যেন বাধ্য করে ওকে নিয়ে ভাবতে।তবে কি জানো ওকে নিয়ে ভাবতে আমার ভালোলাগে।মনের মাঝে আলাদা সুখ সুখ অনুভব হয়।ওকে নিয়ে ভাবলেই অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।আর জানক আগে মেয়েটা ঘনঘন আমাদের বাড়িতে আসত।আমার সাথে কথা বলত।কিন্তু রিধি এখন আর আসে না আর আমার সাথে কথা তো দূরে থাক।আমার দিকে তাকাও না।মেয়েটা কেমন যেন আমাকে ইগ্নোর করে।কিন্তু আমার কেন যেন ভালোলাগে না।একটুও ভালোলাগে না।ওর ইগ্নোরেন্স যেন আমার বুকের বা-পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়।অসহ্য লাগে সবকিছু।কি হয়েছে আমার মা?কেন হচ্ছে আমার সাথে এমন?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।তুমি কোনো একটা উপায় বলো।’

একোনাগাড়ে মায়ের কাছে নিজের মনের কথাগুলো বলে যেন ইহান মনে শান্তি পেল।নিজের মাঝে লুকানো কথাগুলো ব্যক্ত করতে পেরে এখন বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু মায়ের কোনো জবাব না পেয়ে ইহানের ভ্রু-কুচকে আসে।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মিনহা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন।ইহানের কুচকানো ভ্রু-জোড়া আরও কুচকে আসে।মায়ের কোল থেকে উঠে বসে পরল।বলল,’ কি হলো মা?তুমি হাসছ যে?আমি তোমাকে আমার এতো বড়ো একটা সমস্যার কথা বললাম।আর তুমি কিনা হাসছ?’

মিনহা বেগম এইবার স্বজোড়েই হাসছেন।হাসতে হাসতে তার চোখের কোণে পানি চলে এসেছে।মায়ের এমন হাসি দেখে মুখ ফোলালো ইহান বাচ্চাদের মতো।পরক্ষণে মায়ের এমন প্রাণখোলা হাসিতে ওর ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠল।সময় নিয়ে মিনহা বেগম হাসি থামালেন।উঠে দাঁড়িয়ে ছেলের হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিলেন তিনি।মুচঁকি হেসে বলেন,’ তুই রিধিকে ভালোবেসে ফেলেছিস।এইটাই আমার জবাব আপাততো।আমার ছেলে প্রেমে পরেছে।এইবার বাকিটা তুই নিজেই বুঝে নেহ।আমি জানি আমার ছেলে বুদ্ধিমান আছে। এখন আসি আমি।’

মিনহা বেগম খুশি মনে চলে গেলেন।তিনি অনেক খুশি।এমনিতেও সে আর তার স্বামী ভেবেই রেখেছিলেন রিধিকেই তাদের একমাত্র ছেলের বউ করে আনবেন।আর এখন তো তার ছেলে রিধিকে ভালোইবেসে ফেলেছে।তাদের আর কোনো চিন্তা নেই।রিধির পরিবারের সাথে কথা বলতে হবে।ওদের বাগদানটা যতো দ্রুত সম্ভব সেরে ফেললেই ভালো হবে।ভেবেই তিনি মুচঁকি হেসে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
————-
এদিকে ইহান তব্দা মেরে বসে আছে।তার মা একটু আগে তাকে এসব কি বলে গেল?তার বিষয়টা হজম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।সত্যিই কি ও ভালোবাসে রিধিকে?কিন্তু কিভাবে সম্ভব?ইহান আনমনা হয়ে অনেকক্ষণ নিজের মনে কি কি যেন ভাবল।সময় নিয়ে ভাবার পর হঠাৎ তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।ঠোঁটের কোণ প্রসারিত কর হেসে বলে,’ ভালোবাসি।হ্যা আমি রিধিকে ভালোবাসি।আমি আমার মনের কথা বুঝতে পেরেছি।থ্যাংক ইউ মা।ইউ আর দ্যা বেস্ট মা ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।’

ইহান খুশিতে নাঁচতে নাঁচতে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে।
______________
বাইক পার্ক করে মাত্রই ভার্সিটিতে প্রবেশ করল রুদ্রিক।হঠাৎ ওর সামনে এসে দাঁড়ালো একজন।রুদ্রিক ব্যক্তিটিকে দেখার পর পর ওর চোয়াল শক্ত হয়ে আসল রাগে।শক্ত চোখে চেয়ে রইলো ব্যক্তিটির দিকে।রাগে ব্যক্তিটির পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পা বাড়াল সে।এখন এখানে কোনো ঝামেলা সে চায় না আপাততো।কিন্তু তা আর হতে দিলো না। ব্যক্তিটি আবারও এসে দাঁড়ালো রুদ্রিকের সামনে।রুদ্রিক এইবার রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাল।বলল,’ কি সমস্যা?তোকে না বলেছি আমার সামনে আসবি নাহ? শান্তিতে থাকতে বুঝি তোর ভালো লাগে না রিয়ান।’

রিয়ান হাসল।বলে উঠল,’ অনেকদিন তোর সাথে দেখা হয় না।তাই শান্তি পাচ্ছিলাম না এইজন্যেই আসলাম তোর কাছে।আর এটা কেমন ব্যবহার রুদ্রিক?আমি না তোর বড়ো ভাই?বড়ো ভাইকে কেউ তুই করে বলে?’

রুদ্রিক দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ তুই আমার আপন ভাই না।ফুপাতো ভাই।আর এমনিতে তোকে আমি কোনোরকমই কোনো ভাই মানি না।তাই এইসব ফাউল কথাবার্তা আমার সামনে বলবি নাহ।’

রিয়ান এগিয়ে আসল খানিক।ধীর স্বরে বলে,’ তুই আমায় ভাই না মানলে কি হবে?আমি তো মানি।তাই তো তোর সব খবরাখবর রাখি আমি।এইযে তুই লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস সেটাও জানি আমি।’

রুদ্রিক কিছুই বলল না।সে ভীষণ বিরক্ত রিয়ানের উপর।তার ফুপুর ছেলের ছেলে,মেয়ে দুটোর একটাও তার দেখতে মন চায় না।জেনি আগে ভালো ছিলো।তাই তো রুদ্রিক টুকটাক ওর সাথে মিশত।কিন্তু এই রিয়ান জেনিকে বাজে পথে নিয়ে গিয়েছে। একেবারে নিজের মতো বানিয়েছে বোনটাকে।যাই হোক রুদ্রিক অহেতুক তর্কে জড়াতে চায় না রিয়ানের।তাই চলে যেতে নিলো।কিন্ত রিয়ানের হঠাৎ একটা কথায় থেমে গেলো ওর পা জোড়া।

‘ ফার্স্ট ইয়ার,ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট।নাম জাফ্রিন অথৈ। তোর বউ,কি? ঠিক বলছি নাহ?যাই বলিস বউ পেয়েছিস একটা সেরা।রূপেরও যেমন আগুন আছে,কথাও তেমন আগুন।হটনেসে একেবারে ঠাসা ঠাসা।আমার কিন্তু হেব্বি লেগেছে। ফিগারটাও জোস।’

রিয়ান কথাটা শেষ করতে দেরি।রুদ্রিক শক্তপোক্ত হাতের জোড়ালো ঘুষি একেবারে ওর নাক বরাবর এসে পরেছে।রিয়ান পরতে পরতে নিজেকে সামলে নিলো।দুহাতে নাক চেপে ধরল সে।বেশ জোড়েসোড়েই মেরেছে রুদ্রিক।মাথাটা ভণভণ করে ঘুরছে।হাতে তরল জাতীয় কিছু আভাস পেতে হাতটা চোখের সামনে এনে ধরল রিয়ান।ঝাপ্সা দৃষ্টিজোড়া সময় নিয়ে স্পষ্ট হতেই বুঝতে পারল।রুদ্রিকের ঘুষির প্রখরতায় তার নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
এদিকে অথৈকে নিয়ে বলা রিয়ানের বাজে কথাগুলো শুনে রাগে রুদ্রিকের সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।তেড়ে গিয়ে রিয়ানের কলার চেপে ধরল।ভয়ংকর রাগিস্বরে বলে উঠল,’ আমার বউয়ের দিকে বাজে নজরে তাকালে তোর ওই চোখজোড়া আমি আগুনে জ্বালিয়ে দিবো।আমার অথৈয়ের থেকে একশ হাত দূরে থাকবি।নয়তো তোকে মেরে মাটিতে পুতে ফেলব।কাক পক্ষিও টের পাবে না।’

রিয়ানকে প্রায় একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে ফেলে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেল রুদ্রিক।রুদ্রিকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রিয়ান শয়তানি হাসি দিলো।বলে,’ নজর তো আমার বহু আগেই পরেছে।আমিও দেখি তুই ঠিক কিভাবে তোর বউকে প্রটেক্ট করিস।শুধু তোর বউকে নিয়ে কিছু কথা বলায় আমার গায়ে হাত তুললি।একদিন গোটা তোর বউটাই আমার কাছে থাকবে।ঠিক এতোটাই কাছে।যতোটা কাছে থাকলে তুই রুদ্রিক।তোর বুক কেঁপে উঠবে।এর প্রতিশোধ তো আমি নিবোই।’

__________
রুদ্রিক কিছুতেই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।তীব্র রাগে মন চাচ্ছে ওই রিয়ানকে এখনই মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলতে। তবে বোধহয় একটু শান্তি পাবে। রুদ্রিককে এতোটা রাগতে দেখে নীল বলে উঠল,’ কি হয়েছে তোর?এমন রেগে আছিস কেন?’

রুদ্রিক রাগে সজোড়ে ওর বাইকে একটা থাবা মারল।এতে বিকট শব্দ হলো।চমকে গেল ওরা।অনিক দ্রুত এসে রুদ্রিকের হাত ধরল।চিন্তিত স্বরে বলে,’ সালা কি করছিস?কার না কার উপর রেগে নিজেকে আঘাত করছিস কেন?’

রুদ্রিক হাত ছাড়িয়ে নিলো অনিকের কাছ থেকে।দু হাতে মাথার চুলগুলো খামছে ধরে চেঁচিয়ে উঠল,’ ওই কুত্তার*** সাহস কিভাবে হলো আমার অথৈকে নিয়ে বাজে কথা বলার।ওর জিভ টেনে ছিড়ে না ফেলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।কিন্তু আমি তা করতে পারছি না।আই’ম ফিলিং সো হ্যাল্পল্যাস।কেন ওকেই আমার কাজিন হতে হলো?শুধু মাত্র দাদুর কারনে আমি নিজেকে দমিয়ে রেখেছি।নাহলে আমি ওকে সেখানেই জিন্দা কবর দিয়ে ফেলতাম।তবে এটাই ফার্স্ট আর এটাই লাস্ট। সেকেন্ড টাইম ওকে আমি ছাড়ব না।সবকিছু ভুলে যাবো আমি।ওকে খুন করে তবেই শান্ত হবো।’

ইহান রুদ্রিকের কাধে হাত রাখল।শান্ত স্বরে বলে,’ রিলেক্স রুদ্রিক।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নে।কি হয়েছে আমাদের খুলে বল।’

রুদ্রিক জোড়েজোড়ে নিশ্বাস নিলো।তারপর একে একে সবটা খুলে বলল ওদের।সব শুনে ইহানেরও রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।কিন্তু ও কিছু বলল না।কারন রুদ্রিক বলল তো ওই শয়তানটাকে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে।তবে দ্বিতীয়বার এমন কিছু শুনলে রুদ্রিকের আগে ইহান নিজে গিয়েই ওই রিয়ানকে কুপিয়ে মেরে আসবে।

এদিকে সব বলা শেষে।রুদ্রিক রাগে চোয়াল শক্ত বলে উঠে,’ অথৈ ইজ মাইন।ওকে আমি আমার সবটা দিয়ে প্রটেক্ট করব। আর ওই জানোয়ারটাকে তো দেখে নিবো।আমার অথৈয়ের দিকে হাত বাড়ানোর কথা স্বপ্নেও পরিকল্পনা করলে।ওর সেই হাত আমি ভেঙে দিবো। বাস্তবে করবে তো দূরে থাক।তুই চিন্তা করিস না ইহান।’

ইহান হালকা হাসল রুদ্রিকের কথায়।বলে,’ আমি জানি সেটা রুদ্রিক।এইজন্যেই তো আমার বোনটাকে বিনাবাক্যে তোর হাতে তুলে দিয়েছি। ‘

সাফাত ব্যথিত নজরে রুদ্রিকের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু ঠোঁটের কোণে তার মুচঁকি হাসি।রুদ্রিকের কণ্ঠে উচ্চারিত হওয়া প্রতিবার ‘ আমার অথৈ।’ শব্দ দুটো বড্ড পীড়া দিচ্ছে ওকে। বুকের বা-পাশটা অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে।আচ্ছা, এক তরফা ভালোবাসায় কি এতোটাই যন্ত্রণা থাকে?কেন যে সে ভালোবাসতে গেল।ভালোবাসায় এতো কষ্ট থাকলে কখনই ভালোবাসত না সাফাত অথৈকে। কিন্তু মনকে কি বেঁধে রাখা যায়? মন তো যখন তখন যাকে তাকে হঠাৎই ভালোবেসে ফেলে।এখানে কারও কোনো হাত থাকে না।সাফাত চোখ বুজল।লম্বা শ্বাস ফেলল।পর পর ওর বদ্ধ চোখের পাতায় ভেসে উঠল রুদ্রিক আর অথৈয়ের হাস্যজ্জ্বল একসাথে দাঁড়ানো একটা মুহূর্ত। যা কল্পনা করে সাফাতের ঠোঁটের কোণেও চমৎকার হাসি ফুটে উঠল।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাল সাফাত।তার প্রিয় দুটি মানুষ যদি একে অপরের সাথে থেকে,একে অপরকে ভালোবেসে সুখে থাকে।তাহলে সে নিজেও সুখী।সবকিছু পেয়ে গেলেই যে সে সর্বসুখী এমনটা ভাবা বোকামি।মাঝে মাঝে কিছু ত্যাগ করলেও সুখী।হওয়া যায়।আর সেই ত্যাগে যদি তারই প্রিয় মানুষ দুটি সুখী হয়।তাহলে তো কোনো কথাই নাই।তাহলে এই সুখের থেকে বড়ো সুখ আর কিছু হতেই পারে না।আর তাই সাফাত নিজেও সুখী।অনেক সুখী।

#চলবে___________