#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৯
ভার্সিটির পিছনের সেই নদীর পাড়ে এসে বসে আছে অথৈ প্রায় দশমিনিট যাবত।কিন্তু রুদ্রিকের কোনো খবর নেই।অথৈ বসে বসে অপেক্ষা করছে।কারন মাঝে মাঝেই রুদ্রিক এরকম পাঁচ দশ মিনিট দেরি করে আসে।অথৈ আনমনে রুদ্রিককে নিয়ে ভাবছে।তার সবসময় রুদ্রিককে নিয়ে ভাবতে ভালোলাগে।লোকটা যেন তার সবটা গ্রাস করে নিয়েছে।চব্বিশ ঘন্টা যেন মন মস্তিষ্কে এই লোকটারই বসবাস।মুচঁকি হেসে ঘড়ির দিকে তাকালো অথৈ। পনেরো হুয়ে গিয়েছে।এখনও আসছে না কেন লোকটা?বিরক্ত হয়ে অথৈ মোবাইল অন করে রুদ্রিককে কল দিতে যাবে ঠিক তখনই ওর মোবাইলে একটা মেসেজ আছে।আর মেসেজটা রুদ্রিকই করেছে।অথৈ চট জলদি মেসেজটা ওপেন করল।
‘I’m waiting in my car. Come quickly. I need you badly.’
মেসেজটা পড়ে অথৈয়ের বুক কেঁপে উঠল।কি হলো লোকটার?কোনো বিপদ হলো না তো?নানান চিন্তা নিয়ে অথৈ ছুট লাগালো রুদ্রিকের কাছে যাওয়ার জন্যে।রুদ্রিকের গাড়িটা কার পার্কিং সাইটে অন্যসব পার্ক করা গাড়িগুলোর থেকে বেশ দূরে।সে বাইক নিয়েই এসেছিলো।সকালের ওই ঘটনার পর ওর বাড়ির একজন ড্রাইভারকে ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছিলো।আর সে আসতেই ওর বাইকটা তাকে দিয়ে দিয়েছিলো।কারন তার প্লানিং অথৈ নিয়ে দূরে কোথাও যেতে।একান্ত কিছু সময় কাটাতে।নিরিবিলি কোন জায়গায়।আর তার মন মেজাজ ভালো না এমনিতেই।বাইক চালানোর মতো মুডও ওর নেই।এতে রিস্ক হয়ে যেতে পারে।আর অথৈকে নিয়ে কোনোপ্রকার রিস্ক রুদ্রিক নিবে না।
অন্যদিকে অথৈ পার্কিং এরিয়ায় এসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।সে মূলত রুদ্রিকের গাড়ি চিনে না।সবসময় রুদ্রিককে বাইক নিয়েই আসতে দেখেছে।কিন্তু আজ হঠাৎ লোকটার কি হলো কে জানে?গাড়ি দিয়ে কি করবে এই লোক? এর মধ্যে ওর ফোনে আবারও মেসেজ আসে।
‘Look to your right side. There is a gray car. I am in that car.’
মেসেজটা পড়ে অথৈ সেই কথামতো ওর ডানদিকে তাকালো।সেখানে একটা ধূসর রঙের গাড়ি আছে।অথৈ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেই গাড়ির দিকে।গাড়ির কাছে আসতেই গাড়ির দরজা খুলে গেলো।অথৈ ভীতরে উঁকি দিয়ে দেখে রুদ্রিক কপালের উপর হাত রেখে ড্রায়ভিং সিটে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে।রুদ্রিককে এমন অবস্থায় দেখে অথৈয়ের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিলো।হঠাৎ রুদ্রিকের গম্ভীর স্বর ভেসে আসল,
‘ what are you looking for?just get in the car quickly.’
অথৈ হকচকিয়ে গেল।তারপর তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে ঢুকে বসে পরল।অথৈ গাড়িতে এসে বসতেই রুদ্রিক কপালের উপর থেকে হাত সরালো।তারপর সোজা হয়ে বসে একেবারে অথৈয়ের দিকে ঘুরে বসল।রুদ্রিকের চোখের দিকে তাকাতেই অথৈয়ের বুকটা ধ্বক করে উঠল।কারন রুদ্রিকের চোখজোড়া অসম্ভব লাল হয়ে আছে।অথৈ ঘাবড়ে গেলো।চটজলদি হাত ছোঁয়ালো রুদ্রিকের গালে।উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,’ কি হয়েছে আপনার?এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে?’
রুদ্রিকের কোনো জবাব নেই। সে এক দৃষ্টিতে অথৈকে দেখছে।রুদ্রিকের কোনো জবাব না পেয়ে অথৈ আবারও বলে উঠে,’ কি হয়েছে?কিছু বলছেন না কেন?মাথা ব্যথা করছে আপনার?বেশি খারাপ …..!’
বাকিটুক আর বলতে পারল না অথৈ। তার আগেই রুদ্রিক অথৈয়ের বাহু ধরে টেনে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসে।নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে।এদিকে রুদ্রিকের এমন কান্ডে চমকে যায় অথৈ। পরক্ষণে রুদ্রিকের এমন শক্ত করে জড়িয়ে ধরার কারনে হাশফাশ করে উঠে।এতো জোড়ে চেপে ধরায় সে শ্বাস নিতে পারছে না।অথৈ বহু কষ্টে রুদ্রিকের পিঠে আলতো করে দু হাত রাখে।আটকে আসা স্বরে বলে,’ রু..রুদ্রিক! একটু আস্তে ধ..ধরুন।শ্বাস নিতে পারছি না আমি।’
অথৈয়ের কথায় রুদ্রিক একটু ঢিলে করে ওর হাতের বাঁধন। তবে অতোটাও না।এভাবে কিছু সময় থেকে ছেড়ে দেয় অথৈকে।রুদ্রিকের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে অথৈ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল। বুকে হাত চেপে শ্বাস নিতে নিতে অথৈ বলে,’ এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে?যেভাবে চেপে ধরেছিলেন মনে হচ্ছিলো আমার হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙে গুড়ো হয়ে যাচ্ছিলো।আর একটু হলে আমি উপরে চলে যেতাম।’
রুদ্রিক গাড়ি স্টার্ট করতে করতে অথৈয়ের কথার জবাবে বলে,’ অভ্যাস করে নেও।কারন ভবিষ্যতেও আমি এইভাবেই জড়িয়ে ধরব।আর যখন আমার কাছে একেবারে নিয়ে আসব।তখন তো কোনো টাইম টেবিল মেইনটেইন করব না।চব্বিশ ঘন্টাই তোমাকে আমার সাথে লেপ্টে থাকতে হবে।’
অথৈয়ের গাল,কান গরম হয়ে উঠল রুদ্রিকের এহেন কথায়।দুগালে হাত চেপে ধরল অথৈ। মিনমিন স্বরে বলে,’ অসভ্য লোক।যতোসব বেঁফাস কথাবার্তা তার।এদিকে আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছিলাম।আর সে আছে শুধু অসভ্য কথাবার্তা বলার ধান্দায়।’
রুদ্রিক আচমকা অথৈয়ের কাছে চলে আসল।এতে অথৈ চমকে গিয়ে গাড়ির জানালার সাথে মিশে গেল।বলে উঠল,’ ক…কি করছেন?’
রুদ্রিক অতি সাবধানে অথৈয়ের সিট বেল্ট বেঁধে দিলো।তারপর সরে আসল অথৈয়ের কাছ থেকে।ভ্রু-কুচকে অথৈয়ের উদ্দেশ্যে বলে,’ মাথায় শুধু আমাকে নিয়ে এসব উল্টাপাল্টা ভাবতে থাকো তাই নাহ?’
পরক্ষণে চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটে উঠে ওর।বলে,’ অবশ্য তুমি চাইলে এতোক্ষণে তুমি যা কল্পনা করছিলে।তা আমি এখন করতে পারি।আই হেভ নো প্রবলেম।’
অথৈয়ের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল রুদ্রিকের কথায়।এই লোক তো গিরগিটির থেকেও বেশি নিজের রূপ বদলায়।
অথৈ সোজা হয়ে বসল।তারপর মুখ ফুলিয়ে বলে,’ আমি কোনো কিছুই ভাবছি না।আপনার ভীতরেই সব সমস্যা।আমাকে শুধু শুধু দোষ দিবেন না।মাথায় শুধু তার অসভ্য চিন্তা ভাবনা ঘুরে শুধু।’
অথৈয়ের মুখ ফোলানো দেখে রুদ্রিক নিঃশব্দে হাসে।এই মেয়েটা তার আশেপাশে থাকলেই তার সকল দুশ্চিন্তা, সকল ক্লান্তি,মন খারাপ নিঃশেষ হয়ে যায়।চারদিকে শুধু ভালোলাগার প্রজাপতিরা ডানা মেলে উড়তে থাকে।মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলেই মনে হয় যেন সে পৃথিবীর সকল সুখ পেয়ে গিয়েছে ও।
এদিকে রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠা সেই হাসি দেখে অথৈর ঠোঁটেও হাসি ফুটে উঠল।একটু আগে কি হয়েছিলো লোকটার সে জানে না।কিন্তু রুদ্রিকের ওমন রূপ দেখে তার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছিলো।তবে এখন ভালো লাগছে।এইযে লোকটার ঠোঁটে হাসি। এটা দেখে যে অথৈয়ের কি যে শান্তি লাগছে তা ও নিজেই শুধু জানে।
ড্রায়ভিংয়ের মাঝেই হঠাৎ রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে দিলো অথৈয়ের দিকে।অথৈ হেসে বিনাবাক্যে রুদ্রিকের হাতে হাত রাখল।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত নিজের হাতের মাঝে শক্ত করে ধরল।এইভাবেই পুরোটা পথ পারি দিলো তারা।রুদ্রিক গাড়ি থামালো একটা নির্জন রাস্তায়।রাস্তার দুধারে শুধু বড়ো বড়ো করে মেহগনির গাছের বাগান।রুদ্রিক নেমে আসল।তারপর ঘুরে গিয়ে অথৈকেও নামতে সাহায্য করল নামতে।অথৈ শুধু চারদিকে তাকাচ্ছে।এরকম জায়গা যে আছে অথৈ জানত না।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে,’ চলো আমার সাথে।’
অথৈ কোনো প্রশ্ন করল না।হাটতে লাগল রুদ্রিকের সাথে।রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে বামপাশের জঙলে নেমে পরল।এরকম বাগানে প্রবেশ করতে অথৈয়ের মনে প্রশ্নেরা উঁকিঝুকি দিতে থাকে।এই বাগানের ভীতর দিয়ে এই লোক যাচ্ছেটা কোথায়?মনের কৌতুহল দমাতে না পেরে অথৈ প্রশ্ন করে বসে,’ কোথায় যাচ্ছেন আপনি?এমন জঙলের মাঝে যাচ্ছেন কেন?’
রুদ্রিক হাটতে হাটতেই গম্ভীর গলায় বলে,’ কেন ভয় লাগছে আমার সাথে যেতে?তোমাকে নিয়ে গিয়ে গভীর জঙলে কিছু উল্টাপাল্টা করে। তোমাকে মেরে ফেলি। এমন কিছুর ভয় পাচ্ছ?’
রুদ্রিকের এমন কথা শুনে অথৈ আচমকা তার চলন্ত পা জোড়া থামিয়ে দেয়।অথৈয়ের হাত ধরে হাটছিলো রুদ্রিক।অথৈ থেমে যাওয়ায় তাকেও থামতে হয়।পিছনে ফিরে তাকাতেই রুদ্রিক থমকে যায়। অথৈয়ের চোখজোড়া ছলছল করছে।রুদ্রিক যে এমন একটা কথা এইভাবে তাকে বলবে সে স্বপ্নেও ভাবেনি।সে তো এমনেই জানতে চেয়েছিলো যে তারা কোথায় যাচ্ছে।রুদ্রিক তা উলটো বুঝল।কিসব বলে বসল।যা অথৈ স্বপ্নেও কখনও ভাববে না।অথৈ অনেক কষ্ট পেয়েছে।এতোদিনে রুদ্রিক তাকে এই চিনল?কই সে তো রুদ্রিককে নিয়ে এসব ভাবে না।ও তো চোখ বন্ধ করে লোকটাকে বিশ্বাস করে।নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে।অথৈ অনেক কষ্ট পেয়েছে রুদ্রিকের এমন কথায়।অথৈয়ের চোখ থেকে একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।যা দেখে রুদ্রিক অস্থির হয়ে উঠে।অথৈ কাছে এসে ওর গালে দু হাতে আলতো করে স্পর্শ করল।ব্যাকুল কণ্ঠে বলে,’ কি হয়েছে অথৈ? কাঁদছ কেন?হাটতে নিয়ে কি ব্যথা পেয়েছ?’
অথৈ ঝটকা মেরে রুদ্রিকের হাত দুটো সরিয়ে দিলো।এতে অবাক হয়ে যায় রুদ্রিক।অথৈ সেদিকে পাত্তা দিলো না।
ও চোখের পানিটুক মুছে নিলো।তারপর বিনাবাক্যে উলটো দিকে পা বাড়ালো চলে যাবার জন্যে।এতে যেন ঘাবড়ে গেল রুদ্রিক।দৌড়ে গিয়ে অথৈয়ের বাহু আকঁড়ে ধরল।এতে যেন অথৈ আরও ক্ষেপে গেল।রাগি চোখে তাকাল রুদ্রিকের দিকে।রাগি গলায় বলে,’ আমার হাত ছাড়ুন।’
‘ কিন্তু কে কি হয়েছে?’
‘ আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।’
‘ আরে কারনটা তো বলবে আমায়?’
অথৈ রুদ্রিকের হাত সরিয়ে দিলো ওর বাহু থেকে।পর পর চেঁচিয়ে উঠে,’ আপনি কিভাবে পারলেন ওমন জঘন্য কথাগুলো বলতে।আমাকে নিয়ে এসবই ভাবেন আপনি।এতোদিনে এই চিনলেন আমায়?আপনি ভাবলেন কিভাবে আপনি আমাকে এখানে এনেছেন তাই আমি ওইসব চিন্তা ভাবনা করব।আরেহ আপনি যদি আপনার সাথে আমাকে জাগান্নামেও নিয়ে যেতেন তাও আমি আপনার সাথে চোখ বন্ধ করে চলে যেতাম।আমি তো শুধু এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম।আর আপনি আমাকে নিয়ে কিসব ভেবে নিলেন।আর এক মিনিটও আমি আপনার সাথে থাকব না।আমি এক্ষুণি বাড়ি চলে যাবো।’
কথাগুলো বলে শেষ করে অথৈ হনহনিয়ে হাটা ধরল। সে চলে যাবে।এদিকে রুদ্রিক নিজেই হতভম্ব হয়ে পরেছে।ও নিজেও ওইভাবে মিন করে কথাগুলো বলেনি।যে অথৈ কষ্ট পাবে।সে এমনিতেই মজা করে বলে ফেলেছে।কিন্তু অথৈ যে এতোটা কষ্ট পাবে যে ও কেঁদে দিবে।এটা ভাবেনি।নাহ,মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।রুদ্রিক দৌড়ে চলে গেল অথৈয়ের কাছে।কোনোকিছু না বলে অথৈকে পিছন দিক থেকেই পাঁজাকোলে তুলে নেয়।আচমকা রুদ্রিক এমন করায় অথৈ ভয়ে মৃদ্যু চিৎকার করে উঠে।পর পর বুঝতে পারে এটা রুদ্রিকের কাজ।সাথে সাথে রুদ্রিকের কোলে ছটফট শুরু করে দেয়।চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেয়,’ নামান আমাকে।নামা বলছি অসভ্য লোক।আমায় একদম স্পর্শ করবেন না।’
রুদ্রিকের কোনো ভাবান্তার নেই।সে একমনে অথৈকে কোলে নিয়ে হেটে যাচ্ছে।এদিকে ছটফট করে,চিল্লাপাল্লা করে অথৈ ক্লান্ত হয়ে চুপ করে রইলো রুদ্রিকের কোলে।এই বজ্জাত লোক যে তাকে আর কোল থেকে নামাবে না সে ভালোই বুঝতে পেরেছে।তবে ওর নিজেরও বেশ ভালো লাগছে রুদ্রিকের কোলে উঠে।এই প্রথমবার লোকটা ওকে কোলে তুলেছে। অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।অথৈ আনমনে আরও লেপ্টে গেল।রুদ্রিকের প্রসস্ত বুকে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।রুদ্রিকের উষ্ণতায় নিজেকে সপে দিতে চাইছে যেমন।রুদ্রিক হাসল অথৈয়ের কান্ডে।মেয়েটা তার সাথে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতেই পারে না।সেটা সে নিজেও জানে না।এভাবে অনেকটা পথ হাটার পর রুদ্রিক জঙলের মাঝে হঠাৎ থেমে গেল।পর পর অথৈকে থামিয়ে দিলো।রুদ্রিকের কোল থেকে নেমে অথৈ সামনে তাকাতেই ওর চোখজোড়া বড়ো বড়ো হয়ে যায়।চোখে মুখে অবাকের রেশ তার।
#চলবে___________
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩০
ঘন জঙল,সেখানে রয়েছে বড়ো বড়ো মেহগনি গাছ।সেই গাছের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে কিঞ্চিত পরিমানে রোদের আলো দেখা দিচ্ছে।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিত চারপাশ।আশেপাশে ঝোপঝাড়ে নাম না জানা হরেক রঙের ফুল ফুটে রয়েছে। এ যেন রূপকথার কোনো রাজ্যে এনে দিয়েছে অথৈকে রুদ্রিক।আর সেই রূপকথার রাজ্যে অথৈয়ের সামনে কাঠের কটেজটা হলো একটা রাজপ্রসাদ।চারদিকের এই অপার সৌন্দর্যে অথৈয়ের চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে।সে বাকরুদ্ধ।ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে।সে কি এসব বাস্তবেই দেখছে।নাকি তার মনের ভ্রম।এসব ভেবে ভেবে সে হয়রান।তার অবস্থাটা হয়তো রুদ্রিক বুঝতে পারল।অথৈয়ের নরম হাতটা তার শক্তপোক্ত,নিরেট হাতের মাঝে আগলে নিলো।অতঃপর মৃদ্যু হেসে বলে,
‘ এটা তোমার স্বপ্ন না বউ।এটা তুমি বাস্তবেই দেখছ।সবটা তোমার চোখের সামনেই স্পষ্ট।’
অথৈয়ের গলা কাঁপছে। এমন সুনশান-নিস্তব্ধ জঙলের মাঝে এতো সুন্দর কাঠের কটেজ কেউ তৈরি করতে পারে ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো।এমন না যে সে এসব দেখেনি।দেখেছে তবে তা বিভিন্ন মুভিতে।কিন্তু বাস্তবে যে এমন কিছু ও দেখতে পারবে এটা ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো।অথৈ তাকালো রুদ্রিকের দিকে।কণ্ঠ তার স্পষ্টভাবে কাঁপছে।অথৈ বলে উঠে,
‘ এটা এতো সুন্দর কেন রুদ্রিক?’
‘ তোমার পছন্দ হয়েছে?’
‘ আপনি কি আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন নাহ?’
রুদ্রিক বিনিময়ে হাসল।বলল,
‘ ভীতরে যাবে নাহ?নাকি এইভাবেই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে?’
অথৈ মাথা দুলালো।পা বাড়াতে নিয়েও কিছু একটা মনে করে থেমে গেল।কৌতুহল দমাতে না পেরে অথৈ মনের কথাটা বলেই ফেলল,’ কিন্তু এই কটেজটা কাদের?এইভাবে না জেনেশুনে কটেজের ভীতরে যাওয়া ঠিক হবে?’
অথৈয়ের এমন বোকাসোকা প্রশ্নে রুদ্রিক ভ্রু-কুচকালো। দু কদম এগিয়ে আসল অথৈয়ের কাছে। গম্ভীর গলায় আওড়ালো,’ তোমার কি মাথা খারাপ?আমি আমার বউকে অন্যের কটেজে নিয়ে আসব?আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়?’
রুদ্রিকের গম্ভীর গলায় বলা বাক্যে চুপসে যায়।মিনমিন করে বলে,’ এভাবে বলছেন কেন?আমি কি খারাপ কিছু বললাম নাকি?’
রুদ্রিক বলল,’ হ্যা সেরকমই কিছু বলেছ।’
‘ আর সেটা কি?’
‘ এইটা তোমার শশুড়বাড়িরই সম্পত্তি।মানে এটা আমাদের ই কটেজ।বাবা এই কটেজটা মাকে তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী সময়ে গিফট করেছিলো।’
অথৈ আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো।সে যে আসলেই বলদের মতো কান্ড করেছে তা আর বুঝতে বাকি নেই।একটু লজ্জা লাগল।মাথা নিচু করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক অথৈকে মাথা নিচু করতে দেখে সাথে সাথে অথৈয়ের থুতনিতে স্পর্শ করে ওর মাথা উঁচু করে দিলো।শক্ত গলায় সুধালো,’ আর কখনও যেন না দেখি মাথা নিচু করতে। তুমি আরিহান রুদ্রিক মির্জার স্ত্রী এটা ভুলে যাবে না।আর আমার বউ সবসময় মাথা উঁচু করে বাঁচবে।কখনও কোনো পরিস্থিতিতেই যেন মাথা নত না হয়।বুঝেছ?’
অথৈয়ের মন ছুঁয়ে গেল রুদ্রিকের প্রতিটি কথায়।এই লোকটা এমন এমন কথা বলে। যে অথৈয়ের মন চায় রুদ্রিককে খুশিতে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিতে।লোকটার কথাগুলো একদম বুকে গিয়ে লাগে।হৃদয়ে গেধে রাখার মতো।নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেলো অথৈ। গালদুটোকে লাল আভা ছেঁয়ে গেল।রুদ্রিক অথৈয়ের ওই ফোলা ফোলা গালে লজ্জার লাল আভাগুলো দেখে মুগ্ধ হলো।এই মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে কেন?রুদ্রিকের মাঝে মাঝে মন চায় অথৈকে একদম তার শক্তপোক্ত বুকের মধ্যিখানটায় লুকিয়ে রাখতে। যাতে কেউ অথৈকে না দেখতে পায়। একমাত্র সে একাই দেখবে তার বউকে।রুদ্রিক অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।নম্র কণ্ঠে বলে,’ চলো তাহলে। যাওয়া যাক।’
অথৈ রুদ্রিকের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। তারপর পা বাড়ালো রুদ্রিকের সাথে কটেজের ভীতরে।যাবার আগে আরেকবার কটেজের বাহিরের সৌন্দর্যটা পরখ করে নিলো।কাঠের কটেজটা বেশি বড়ো না আবার ছোটোও না।দুতলা কটেজটা অন্যরকম সুন্দর লাগে।এই কটেজের বেশিরভাগ সৌন্দর্য এই কারনে যে কটেজটায় প্রায় সব জায়গাতেই গাছ লাগানো। গাছ গাছালি দিয়ে ভড়পুর।তাতে নানান রকম ফুল ফুটে আছে।পাতা বাহার গাছও আছে।যে কারোরও ভীষণ পছন্দ হবে জায়গাটি।তার মধ্যে অথৈ একজন।
এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে কটেজের মধ্যে প্রবেশ করতেই অথৈ চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।কটেজটার ভীতরটা দেখেও অথৈ মুগ্ধ হলো।কটেজটার ভীতরকার ডিজাইন, এর প্রতিটা আসবাবপত্র। সবকিছুই বেশ সুন্দর।অথৈ উচ্ছ্বাসিত গলায় বলে,’ ভীতরটাও বেশ সুন্দর।আসবাবপত্রগুলোও বেশ ইউনিক।আর ঘরের মধ্যেও কি সুন্দর নানান জাতের গাছের সমাহার।এতো এতো সুন্দর।’
অথৈয়ের খুশিতে রুদ্রিক যেন দ্বিগুন খুশি হলো। তার এখন আফসোস হচ্ছে।আরও আগে কেন আনলো না মেয়েটাকে।তাহলে আর প্রাণপ্রিয়ার এই স্নিগ্ধ মুখখানায় ওই নির্মল হাসিটুকু আরও আগেই দেখতে পারত ও।তবে এখন আফসোস করে তো আর লাভ নেই। এখন শুধু সময় প্রেয়সীর ওই হাসিটুকু দুচোখ ভরে দেখা।আর রুদ্রিক সেটাই করছে।রুদ্রিক হেসে বলে,’ কটেজটার ডিজাইন বাবা করলেও।মা এই কটেজটা নিজ হাতে সাজিয়েছে।এই কটেজের প্রতিটা আসবাবপত্র তার করা ডিজাইনে বানানো।’
অথৈ চারদিক থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।প্রশ্ন করল,’ আচ্ছা আপনারা তো সবসময় এখানে থাকেন না।তাহলে কটেজটা দেখাশোনার জন্যে নিশ্চয়ই কেয়ারটেকার রেখেছেন।কিন্তু এমন কাউকেই তো দেখলাম নাহ।’
‘ তা দেখবে কিভাবে?আমি তোমাকে নিয়ে এখানে আসার আগে তাকে ফোন করে বলে দিয়েছি। সবকিছু গুছিয়ে রেখে সে যেন চলে যায়। ‘
কথাটা শেষ করে এইবার অথৈয়ের কাছে একটু ঝুকে আসল রুদ্রিক।ফিসফিস করে বলে,’ বউয়ের সাথে একান্তভাবে একটু সময় কাটাতে এখানে এসেছি।সেখানে তাকে এখানে রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’
লজ্জা পেল অথৈ। লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,’ ধুর,আপনিও না।’
রুদ্রিক শব্দ করে হেসে দিলো। সেই হাসি শব্দে বুক কেঁপে উঠল অথৈয়ের।চোখ তুলে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো।এই লোকটার হাসি এতো সুন্দর।যে একবার তাকালে অথৈ চোখ সরাতে পারে না।এদিকে হাসি থামিয়ে অথৈকে নিজের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক মৃদ্যু হাসে। ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ কি এভাবে কি দেখছ?’
অথৈ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় বলে,’ আপনি এভাবে কারো সামনে হাসবেন না রুদ্রিক।কোনোদিন হাসবেন না।এই হাসিটুক সবসময় শুধু আমার সামনে হাসবেন। আপনার এই প্রাণখোলা হাসি যেন শুধু এবং শুধু আমিই দেখতে পাই।আপনার হাসি দেখার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যক্তিটি শুধু আমি হবো।আর কেউ না।’
অথৈয়ের সহজসরল সিকারোক্তিটুক যে রুদ্রিকের হৃদয়ে কি পরিমান প্রভাব ফেলেছে তা শুধু সে জানে। এই মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে তাকে আরও বাজেভাবে নিজের মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছে।মেয়েটার ভালোবাসায় আরও গভীরভাবে পরে যাচ্ছে সে।তবে রুদ্রিকের এতে একটুও খারাপ লাগে না।সে তো আরও ভালোবাসতে চায় মেয়েটাকে।শতবার,হাজারবার,লাখোবার,কোটিবার,বহুবার এই এক মেয়েরই প্রেমে পরতে চায় সে।যে কিনা তার সহধর্মিনী,তার স্ত্রী,তার ভালোবাসা।রুদ্রিক অথৈয়ের বাহু ধরে তাকে নিজের বরাবর এনে দাঁড় করালো।মুখ নামিয়ে আনলো অথৈয়ের কাছে।তার নিখাঁদ ভালোবাসাটুক বুঝানোর জন্যে অধর ছোঁয়ালো অথৈয়ের ললাটে।ওই একটুখানি স্পর্শে অথৈয়ের সর্বাঙ্গ যেন ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল।লোকটার অধরের ওই স্পর্শটুকু যেন তাকে জানান দিয়ে দিচ্ছে যে রুদ্রিক তাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।অথৈ তা খুব করে অনুভব করতে পারছে। তাইতো পরম সুখে অথৈয়ের বন্ধ চোখের কোণ ঘেষে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।তা রুদ্রিকের অগোচরেই বিলীন হয়ে গেলো। সময় নিয়ে সরে আসল রুদ্রিক।অথৈ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।রুদ্রিক মুচঁকি হেসে বলে,’ দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে।নিশ্চয়ই তোমার ক্ষুদা লেগেছে। খাবার তৈরিই আছে।চলো যাওয়া যাক।’
‘ চলুন তাহলে।’
অথৈকে নিয়ে কিচেনরুমে আসল রুদ্রিক।মূলত কিচেনরুমেই খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা।রাউন্ড একটা টেবিল।সেখানে চারটা চেয়ার রাখা।রুদ্রিক অথৈকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও বসে পরল।তারপর খাবারের বাটিগুলো ঢাকনা সরালো।কিন্তু দেখে খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ আগেই বানিয়ে রেখেছে খাবারগুলো।যা দেখে নাক মুখ কুচকালো রুদ্রিক।রাগি স্বরে বলে,’ এই ছাব্বিরটাও না।একটা কাজও ঠিকঠাকভাবে করতে পারে না।খাবারগুলো পুরো ঠান্ডা।না জানি কখন বানিয়েছে।উফ,অসহ্য।’
রুদ্রিকের কথা শেষ হতেই দেখে অথৈ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। অথৈকে দাঁড়াতে দেখে ও প্রশ্ন করে,’ তোমার আবার কি হলো?দাঁড়িয়ে পরলে কেন?’
অথৈ ওর ব্যাগ থেকে একটা ক্লিপ বের করল।তা দিয়ে নিজের চুলগুলো সুন্দরভাবে বেধে নিলো।এরপর বলল,’ খাবারগুলো যেহেতু ঠান্ডা।আর আমি জানি আপনি গরম খাবার ছাড়া খেতে পারেন না।তাই খাবারগুলো গরম করা প্রয়োজন।আর আমি এখন সেটাই করব।’
অথৈয়ের বলতে দেরি রুদ্রিকের চেঁচাতে দেরি হয়নি।সে বলে,’ হোয়াট?কি বলছ এসব?তুমি খাবার গরম করবে?’
‘ হ্যা। কেন কোনো সমস্যা?’
‘ সমস্যা মানে,অনেক সমস্যা।এখানে ওভেন নেই যে সেটা দিয়ে খাবার গরম করবে তুমি।এখানে চুলো জ্বালিয়ে সব করতে হবে। আর আমি তোমাকে তা করতে দিবো না।বাই চান্স যদি ছ্যাঁকা ট্যাকা লেগে যায়।আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায়নি।’
রুদ্রিকের এহেন কথায় অথৈয়ের বিরক্ত লাগল।সে কপাল কুচকে বলে,’ আমি কি কচি খুকি?যে রান্না করতে পারি না।আর চুলো জ্বালাতে গেলে আগুনের আঁচ লেগে যাবে।শুনুন আপনার বউ কোনো অকার্মার ঢেকি না।সে মোটামুটি সবকিছুই রান্না করতে পারো।সো কোনো কথা বলবেন না।আমি এখন এই খাবারগুলো গরম করে নিয়ে আসছি।আপনি বসুন।’
কি আর বলবে রুদ্রিক।বউয়ের করা কথায় তাকে চুপচাপ মেনে নিতে হলো।হতাশ হয়ে বলল,’ ঠিক আছে। তবে সাবধানে হ্যা?আর আমিও তোমাকে হ্যাল্প করি?’
‘ ঠিক আছে। আপনি আমাকে তরকারির বাটিগুলো চুলোর কাছে এনে দিন।তাহলেই হবে।’
বলেই অথৈ একটা তরকারি বাটি নিয়ে চলে গেল।তারপর চুলোতে একটা ননস্টিকি কড়াই দিয়ে সেটাই তরকারিগুলো ঢেলে দিলো।সুন্দরভাবে তরকারিটা গরম করতে লাগল। এর মধ্যে রুদ্রিক বাকি তরকারির বাটিগুলোও নিয়ে আসল।অথৈ একটা একটা করে তরকারি গরম করে নামাচ্ছে আর রুদ্রিক সেগুলো নিয়ে টেবিলে সাজাচ্ছে।এইভাবে সবগুলো তরকারি গরম করে নিলো তারা মিলেমিশে।অথৈ গিয়ে নিজে খাবার বেড়ে দিলো প্লেটে।কিন্তু একটা প্লেটে খাবার বাড়তেই রুদ্রিক অথৈকে থামিয়ে দিলো।
‘ একটাতেই খাবার বাড়ো।’
ভ্রু-কুচকে অথৈ বলে,’ কিন্তু কেন?’
মুচঁকি হেসে রুদ্রিক বলল,’ কারন আমি তোমার হাতে খাবার খাবো।’
রুদ্রিকের সরল আবদার।যা শুনে অথৈ মনটা কেমন করে যে উঠল।সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে রুদ্রিক বলে,’ কি হলো?চুপ করে আছ যে?খাইয়ে দিবে নাহ?’
নিজেকে সামলে নিলো অথৈ। ধীর আওয়াজে বলে,’ আসলে আমি কখনও কাউকে খাইয়ে দেয়নি।তাই আর কি।’
‘ কোনো সমস্যা নেই।তবুও আমি তোমার হাতেই খাবো।’
অথৈ মাথা দুলালো।তারপর ভাতের প্লেটটা হাতে তুলে নিলো।তরকারি দিয়ে ভাতটুকু মেখে নিয়ে রুদ্রিকের মুখের সামনে ধরল। রুদ্রিক অনতিবিলম্বে খাবারটুকু মুখে পুরে নিলো।এদিকে রুদ্রিকের ঠোঁটের ছোঁয়া অথৈয়ের আঙ্গুলে এসে লাগতেই অথৈ ঠোঁট কামড়ে ধরে। তার পায়ের তলা শিরশির করছে।রুদ্রিক খাবারটুকু গিলে নিতে।অথৈ আবারও খাবার ধরল রুদ্রিকের মুখের সামনে।কিন্তু এইবার রুদ্রিক খেলো না।সে অথৈয়ের হাতটা ধরে সেটা অথৈয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিলো। চোখের ইশারায় করে বলে উঠল,’ তুমিও খাও। তোমারও তো ক্ষিদে পেয়েছে।’
অথৈ বিনাবাক্যে খাবার খেয়ে নিলো।ঠিক এইভাবেই পুরোটা খাবার শেষ করল দুজনে।অথৈ এঁটো থাল নিয়ে চলে গেল।অপরিষ্কার থালাবাসনগুলো সুন্দরভাবে ধুঁয়্র মুছে জায়গামতো রেখে দিলো। কাজ শেষ করে পিছনে ঘুরতেই রুদ্রিকের প্রসস্থ বুকের সাথে ধাক্কা লাগে অথৈয়ের।পরে যেতে নিলেই রুদ্রিক দ্রুত অথৈয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো অথৈ। এখন নিরাপদে আছে ভেবে চোখ মেলে তাকায়।তারপর কপট রাগ দেখিয়ে বলে,’ এসবের মানে কি?এমনভাবে ভুতের মতো পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর একটু হলেই তো পরে আমার কোমড়টা ভেঙে যেতো।’
রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ ভাঙতে তো দেয়নি।তার আগেই তো ধরে ফেলেছি।’
‘ হুহ! ‘ ভেঙচি কাটলো অথৈ। রুদ্রিক আলতো হাসল।পর পর এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো অথৈকে।ভয় পেয়ে অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরল।আতংকিত গলায় বলে,’ আরে এভাবে হুটহাট কোলে নিয়ে নেন কেন আজব?আমি ভয় পাই নাহ হ্যা?’
‘ অভ্যাস করে নেও।’
বলেই রুদ্রিক কিচেন থেকে বেড়িয়ে দোতলার দিকে হাটা ধরল।দোতলায় এসে একটা রুমে প্রবেশ করল রুদ্রিক।রুমে আসতেই অথৈ গোলগোল চোখে সব দিকে তাকাচ্ছে।রুমটা আকাড়ে বেশ বড়ো।এবং বেশ খোলামেলা।রুমের একপাশ পুরো খোলা।মানে সেখানে স্লাইডিং ডোর লাগানো।সেখান দিয়ে ব্যালকনিতে যায়।সেখানে পর্দা লাগানো।সাদা আর নীল রঙের সংমিশ্রণে।বিছানার চাদর,আর সোফা সেটের কুশনগুলো একই কালারের সংমিশ্রণে।রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে সোজা বিছানায় সুইয়ে দিলো।এরপর নিজেও অথৈয়ের অন্যপাশে শুয়ে পরল।পর পর হাত বাড়িয়ে অথৈকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিলো।অথৈয়ের বুক কাঁপছে।কেমন যেন অস্থির লাগছে।এই প্রথম রুদ্রিকের সাথে এক বিছানায় শুয়েছে সে।মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।রুদ্রিকের একটা হাত অথৈয়ের কোমড়ে।যা আলতো হাতে স্পর্শ করে যাচ্ছে ওকে।অথৈ নিজেই আরো একটু মিশে গেলো রুদ্রিকের বুকের মাঝে।এদিকে রুদ্রিকের নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে গভীরভাবে।আদরে আদরে ভড়িয়ে তুলতে ইচ্ছে করছে।রুদ্রিক ধীর স্বরে বলে উঠল,’ অথৈ?’
‘ হু!’
‘ একটুখানি ছুঁয়ে দেই তোমায়?রাগ করবে?’
কি সুন্দর আবদার।এই আবদার কি অথৈ ফিরিয়ে দিতে পারবে? অথৈ হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল রুদ্রিককে শক্ত করে।খামছে ধরল রুদ্রিকের পিঠ।মৌনতা বজায় রেখেই রুদ্রিককে সম্মতি দিয়ে দিলো অথৈ। ও নিজেও চায় রুদ্রিক তাকে ছুঁয়ে দিক।কোন মেয়েই বা না চাইবে নিজের স্বামি আদর,সোহাগ, ভালোবাসা পেতে।রুদ্রিক অথৈকে বালিশে শুইয়ে দিলো।অথৈ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে।রুদ্রিক চুমু খেল অথৈয়ের কপালে।একে একে অধরের স্পর্শ দিলো অথৈয়ের গালে,নাকে,চিবুকে।অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরেছে।রুদ্রিক মাদকতা চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।অথৈয়ের ওই ওই ভেজা,গোলাপি ঠোঁটজোড়া দেখে শুকনো ঢোক গিলল।হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো অথৈয়ের অধরজোড়া।ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠল।এদিকে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে অথৈয়ের সারাদেহ কাঁপছে।রুদ্রিক ঢোক গিলে বলে,’ এই ঠোঁটজোড়া আমায় বড্ড টানছে অথৈ। চেয়েও নিজেকে সামলাতে পারছি না।’
জোড়ে শ্বাস নিতে থাকা অথৈ রুদ্রিককে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো।কাঁপা গলায় থেমে থেমে বলে উঠল, ‘ নিজ..নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসবেন।আ..আমি তো আপ..আপনাকে আটকাইনি।’
রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।যা দেখে লজ্জা চোখ বন্ধ করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক কালবিলম্ব না করে অধরে অধর মিলিয়ে দেয় অথৈয়ের।অথৈ ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠল।খামছে ধরল রুদ্রিককে।স্বামীর ভালোবাসাময় ছোঁয়ায় নিজেকে মাতিয়ে তুলল।রুদ্রিক যেন প্রিয়িতমার ওষ্ঠ সুধায় মত্ত হয়ে গিয়েছে।নিয়ন্ত্রণহীন্ন হয়ে গিয়েছে সে।প্রেমময় দীর্ঘ চুম্বনে লিপ্ত হলো তারা।অনেকটা সময় কেটে গেলো। অথৈ ঠিকঠাক শ্বাস নিতে পারছে না আর।তা উপলব্ধি করতে পেরে সরে আসল রুদ্রিক।দুজনেই হাপাচ্ছে।রুদ্রিক হাঁপানো কণ্ঠে বলে,’ নেশা ধরে গিয়েছে বউ।এখন থেকে তো প্রতিদিন এই সুধা পাণ করতে হবে আমায়।নাহলে যে আমি শান্তি পাবো না।’
এমনিতেই প্রচুর লজ্জা পাচ্ছিলো অথৈ। আর এখন রুদ্রিকের এই কথায় আরও ভয়ানক লজ্জা পেলো।সর্ব মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিকের বুকে আলতো আঘাত করল সে।পর পর নিজের লজ্জা ঢাকতে রুদ্রিকের বুকে মুখ লুকালো।রুদ্রিক তৃপ্তির হাসি দিয়ে অথৈয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।বলল,’ এখন ঘুমাও একটু।’
তারপর নিজেও চোখ বন্ধ করে নিলো।অথৈও কিছুক্ষন হাশফাশ করে ঘুমিয়ে গেল।
#চলবে___________