#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_5
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আজ সুনীতি তার ফুফুর বাসায় চলে এসেছে সাজিদের সাথে দেখা করার জন্য। সুনীতিকে আসতে দেখে তার ফুফু সালমা খন্দকার অনেক খু্শি হলেন। বললেন,”তুই এসেছিস সুনীতি! তোকে দেখে আমি খুব খু্শি হলাম।”
সুনীতি হালকা হাসল। এই মুহুর্তে সাগর এসে বলল,”আরে সুনীতি আপু তুমি! ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছ নিশ্চয়ই!”
সুনীতি লজ্জা পেয়ে গেলো। সালমা খন্দকার বললেন,”সাগর তুই এখন থেকে সুনীতিকে আপু ডাকা ছেড়ে ভাবি বলার অভ্যাস করে নে। কিছুদিন পরেই তো ওর সাথে তোর বড় ভাইয়ের বিয়ে!”
সাগর মজা করে বলল,”আগে বিয়েটা হোক তারপর নাহয় বলব! এমনও তো হতে পারে যে বিয়েটা ভেস্তে গেল।”
সাগরের কথা শুনে সুনীতির বুক ছ্যাত করে উঠল। সালমা খন্দকার বলে উঠলেন,”একদম অলুক্ষণে কথা বলবি না। সুনীতির সাথেই সাজিদের বিয়েটা হবে।”
সাগর আর কিছু বলল না। সে শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার নিজের ভাইয়ের ঘরের দিকে তাকালো। গতকাল রাতে সে তার ভাইকে কারো সাথে কথা বলতে শুনেছে। সেগুলো বেশ ঘনিষ্ঠ রকমের কথাবার্তা। ছোটবেলা থেকেই সাগর দেখে আসছে সাজিদ তার মায়ের চোখের মনি। সে পড়াশোনায় ভালো এবং মায়ের বাধ্য জন্য বেশি ভালোবাসা পেয়েছে। সাগর একটু চঞ্চল আর দুষ্টু স্বভাবের এবং তার পড়াশোনাতেও তেমন মনযোগ নেই। তাই সালমা খন্দকার সবসময় নিজের বড় ছেলের সাথে তার তুলনা করে। এসব ভেবেই সাগর মৃদু হেসে মনে মনে বলে,”তোমার বড় ছেলের মুখোশ সবার সামনে খুলে দেয়ার সময় বোধহয় এসে গেছে! আমাকে সবসময় তোমার বড় ছেলেকে নিয়ে কথা শোনাও তো! এবার দেখ তোমার বড় ছেলের আসল চেহারা কিভাবে সবার সামনে আনি!”
সুনীতি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। সালমা খন্দকার তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”সাজিদ নিজের ঘরেই আছে। তুই চাইলে গিয়ে দেখা করতে পারিস।”
সুনীতি মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে গেল সাজিদের রুমের দিকে৷ গতকাল রাতে সাজিদ ওভাবে কথা বলায় সেটা মোটেই ওর ভালো লাগে নি। তাই তার মন একটু বিষন্ন। সুনীতি সাজিদের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই শুনতে চায় সে কাউকে বলছে,”তুমি একদম চিন্তা করো না ইভা! আমি এদিকটা সামলে নিচ্ছি। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরব আর…”
কথা বলতে গিয়েই সাজিদ থেমে যায়। সে লক্ষ্য করে দরজার সামনে হয়তো কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তার ছায়া টের পাওয়া যাচ্ছে। তাই সে চেচিয়ে ওঠে,”কে ওখানে?!”
সুনীতি কেপে ওঠে। ভয়ে কিছু বলতে পারে না। সাজিদ ইভাকে বলে,”ফোনটা একটু হোল্ড করে রাখো।”
বলেই সে দরজার সামনে চলে আসে। পর্দা সরিয়ে সুনীতিকে দেখতে পেয়ে বেশ রেগে যায়। সুনীতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজিদ বলে ওঠে,”এ কি! তুমি এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? কোন ম্যানারস শেখো নি?”
শেষ লাইনটা বেশ চেঁচিয়ে বলে ফেলল। সুনীতি কাঁদতে শুরু করে দিলো তার চিৎকারের শব্দে। সালমা খন্দকার এগিয়ে এসে সাজিদকে বললেন,”কি হয়েছে সাজিদ? এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?”
সাজিদ কিছু বলে না। সালমা খন্দকার খেয়াল করেন সুনীতি কাঁদছে। তাই তিনি সুনীতিকে জড়িয়ে ধরেন। সুনীতির কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায়। সে বলতে থাকে,”বিশ্বাস করো ফুফু..আমি কিছু করিনি..শুধু দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম আর তাতেই উনি আমায়…”
সালমা খন্দকার বেশ রেগে সাজিদকে বলেন,”তুমি ওকে এভাবে ধমক দিছ কেন?”
“আসলে আম্মু আমি ফোনে একটা জরুরি কথা বলছিলাম আর এমন সময়..”
আচমকা সাগর সেখানে এসে বলে,”তা কার সাথে কি এমন জরুরি কথা বলছিলি তুই? যে সুনীতি আপু চলে আসায় এত চটে এলি?”
তার চোখে মুখে সন্দেহের বাণ। সাজিদ ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার জন্য সুনীতির কাছে গিয়ে বলে ওঠে,”আ’ম সরি। আসলে মেজাজ টা একটু খারাপ ছিল তাই..তুমি কিছু মনে করো না সুনীতি।”
সুনীতি সাজিদের উপর ভীষণ রাগ করেছিল তাই তার কথার কোন জবাব দেয়না। সালমা খন্দকার সুনীতিকে বলেন,”তুই আমার সাথে আয়। আমি আজ সকালে খিচুড়ি রান্না করেছি৷ তুই তো খিচুড়ি খেতে ভালোবাসিস৷ চল খেয়ে নিবি ”
সুনীতি মাথা নাড়িয়ে সালমা খন্দকারের সাথে যেতে থাকে। তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সাজিদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। ওরা চলে যাবার পর সাগর সাজিদের সামনে এসে বলে,”তা মায়ের ভালো ছেলের আর কি কি রূপ দেখতে হবে?”
“ঠিক করে কথা বল সাগর,আমি বড় ভাই হই তোর!”
“সম্মান করার মতো কাজ করলে সম্মান পাবি নাহলে নয়। একটা কথা জানিস তো ভাইয়া…অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। তোর উপর আমার কেন জানি সন্দেহ হয়। আসলেই কি তুই এত ভালো যতটা মানুষকে দেখাস?”
“মা..মানে..কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”
“আমি কি বলতে চাইছি সেটা তুই খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিস। যাইহোক, একটা কথা মাথায় রাখিস। সুনীতি আপুকে কিন্তু আমি নিজের বড় বোনের থেকে কম কিছু ভাবি না। তাই তুই যদি সুনীতি আপুকে কোন ভাবে ঠকানোর চেষ্টা করিস তাহলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলব না।”
এটুকু বলে সাগর বিদায় নেয়। এদিকে সাগরের কথা শুনে সাজিদের শরীর বেয়ে ঘাম নামতে থাকে। সে টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছতে থাকে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মেজর অভিক তার বন্ধু আরাফাতকে নিয়ে আজ একটু শহর ঘুরে দেখছিল। কত দিন হয়ে গেল দুই বন্ধু একসাথে আড্ডা দেয় না৷ কাজে এতটা ব্যস্ত থাকতে হয় যে অন্যদিকে নজর দেয়ার সময়ই নেই। আজ ঘুরতে ঘুরতে দুজনে শহরের শেষ প্রান্তে মফঃস্বল এলাকায় চলে আসে। এখানে এসে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় আরাফাত। একটা গাছের নিচে বসে বলে,”তুইও আমার পাশে বস। আবার আমরা হারিয়ে যাই কলেজ জীবনে।”
অভিক হালকা হেসে আরাফাতের পাশে বসে। আরাফাত যেন স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যায়। হঠাৎ করে বলে ফেলে,”তোর মনে আছে আমাদের কলেজ দিনের কথা? আমি, তুই আর ও..”
আরাফাত নিজের কথা সম্পুর্ণ করার আগে অভিক তাকে থামিয়ে দেয়। আরাফাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অভিক বলে,”অতীতকে তার জায়গাতেই থাকতে দে৷ বর্তমানে টেনে এনে এই সুন্দর মুহুর্তটা নষ্ট করিস না।”
“তুই আজও ওকে মনে রেখেছিস?”
আরাফাতের প্রশ্নে ভীষণ রেগে যায় অভিক। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসে বলে,”তোকে প্রথম এবং শেষ বারের মতো ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার সামনে আর ওর নাম নিবি না। ক্লিয়ার?”
আরাফাত আর কিছু বলে না। সে বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে অভিক মুখে যাই বলুক এখনো অতীতকে আকড়ে ধরে আছে। এখনো ভুলে যায়নি অতীতের মুহুর্ত গুলো। তাই সে অভিকের কাধে হাত রেখে বলে,”দুঃখ নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখা কোন সমাধান না। মাঝে মাঝে দুঃখ কারো সাথে ভাগ করে নিতে হয়।”
অভিক তখনো চুপ। আরাফাত একটু থেমে বলে,”বুঝতে পারছি তুই আমার সাথে নিজের দুঃখগুলো শেয়ার করবি না। তাহলে যার সাথে নিশ্চিন্তে শেয়ার করতে পারবি তার সাথেই করিস। আঙ্কেল বলছিল তোর বিয়ের কথা…”
“তুই বাবাকে বলিস এই নিয়ে আর কথা না তুলতে। আমার এসবে আগ্রহ নেই।”
“এটা কেমন কথা! আমাদের সবারই জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজন।”
“বাট আই ডোন্ট নিড। মেজর অভিক ইজ এনাফ ফর হিম।”
বলেই সে হনহন করে হাটা ধরে৷ আরাফাত অভিকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”কিন্তু আজ আমি উপলব্ধি করলাম তোর কাউকে দরকার। অন্য সবার থেকে বেশি দরকার একজন সঙ্গীর! যার কাছে নির্দ্বিধায় খোলা বইয়ের মতো সবকিছু শেয়ার করতে পারবি!”
To be continue…….