মন রাঙানোর পালা পর্ব-০৬

0
5

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_6
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতি তার ফুফু সালমা খন্দকার এর সাথে বসে বসে গল্প করছিল। গল্প করার ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে সাজিদকে দেখছিল৷ সাজিদ একটু দূরে বসে কম্পিউটারে কিছু কাজ করছিল। সুনীতি আলাপ চারিতা শেষে তার ফুফুকে বলে,”এখন তাহলে আমি উঠি, ফুফু?”

“এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি?”

“হ্যাঁ, আসলে আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে। একটু জরুরি ক্লাস আছে।”

সুনীতি উঠতে যাবে তখন সালমা খন্দকার সাজিদের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”সাজিদ যা সুনীতিকে ওর ভার্সিটিতে গিয়ে ড্রপ করে আয়।”

সাজিদ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসে। সুনীতির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,”চলে এসো৷ আমি গাড়ি টা বের করি।”

সুনীতি মাথা নাড়ায়৷ সাজিদ বাড়ি থেকে বের হতেই সাগর এসে সেখানে উপস্থিত হয়। সালমা খন্দকার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রান্নাঘরে গিয়ে তিনি আজকের রান্না করতে থাকেন৷ এই সুযোগে সাগর সুনীতির কাছে এসে তাকে বলে,”ছোট ভাই হিসেবে তোমাকে একটা পরামর্শ দিচ্ছি, আপু৷ তুমি চোখ কান খোলা রেখো। চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করো না। আজকাল কার যুগে কাউকে এত সহজে বিশ্বাস করতে নেই।”

সুনীতি সাগরের এসব কথার কোন মানে বুঝতে পারল না। কাকে উদ্দ্যেশ্য করে সে এই কথা গুলো বলল? সুনীতি কিছু সময় সাগরের পানে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজিদ এসে বলে,”তোমাকে না বললাম তাড়াতাড়ি আসতে। আমি গাড়ি বের করে কতক্ষণ ওয়েট করব?”

সুনীতি বলে,”আচ্ছা, চলুন আমি যাচ্ছি।”

সুনীতি যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়াতেই সাগর আবারো তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,”যা বললাম সেই কথাটা মাথায় রেখো আপু।”

সুনীতি সাগরের দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইরে চলে এলো। তারপর সাজিদ তার সামনে গাড়ি নিয়ে আসায় সাজিদের গাড়িতে উঠে বসল। সাজিদ গাড়ি চালানো শুরু করল৷ সাজিদের পাশের সিটেই বসে আছে সুনীতি। তার মনে একদম অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছিল। সাজিদ হঠাৎ করে বলে উঠল,”আচ্ছা, সাগর তোমায় কি বলছিল?”

সুনীতি বলল,”তেমন বিশেষ কিছু না।”

সাজিদ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”ওর থেকে একটু দূরেই থাকো। ছোট থেকেই ও আমায় সহ্য করতে পারে না। কারণ মা ওর থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসে। তাই হয়তো তোমাকে আমার নামে ভড়কানোর চেষ্টা করবে।”

সুনীতি বলে,”আমার বিশ্বাস আছে আপনার উপর। কারো কথায় সেই বিঃশ্বাসে বিন্দু মাত্র ফাটল আসবে না। আমি জানি, আপনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো।”

সাজিদ একটা বাকা হাসি দিয়ে মনে মনে বলে,”এই অন্ধবিশ্বাসই তোমার জীবনে কাল হয়ে যাবে। আমাকে এত বিশ্বাস না করলেও পারতে!”

সাজিদ সুনীতিকে তার ভার্সিটির সামনে এসে নামিয়ে দিলো। সুনীতি গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই সাজিদের ফোনে কারো কল এলো। সাজিদ মৃদু হেসে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করল৷ সুনীতি দেখলো সাজিদ কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত তাই সে আর সাজিদকে কিছু না বলে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। এদিকে সাজিদ ইভার সাথে কথা বলছিল। ইভা উদ্বিগ্ন স্বরে সাজিদকে বলে,”তুমি কবে ইউএসএতে ফিরবে? তোমার জন্য আমি আর কত অপেক্ষা করব?প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসো।”

সাজিদ বলে,”আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। মায়ের শরীর অনেক খারাপ। তাকে নিয়ে রোজ হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আমি কিভাবে যাই বলো? মায়ের প্রতি তো আমার একটা কর্তব্য আছে!”

“তুমি তোমার মাকেও এখানে নিয়ে এসো৷ তাহলেই তো সমস্যা মিটে যায়।”

“তুমি তো জানোই, মা এই দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চায়না।”

ইভা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমাদের বিয়ের কথাটা তোমার মাকে জানিয়েছ তো?”

সাজিদ বলার মতো কিনা খুঁজে পায়না। এখানে আসার কিছুদিন আগেই সাজিদ ইভাকে বিয়ে করে নিয়েছে। মূলত ইভার জেদের কারণেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। সাজিদ একটু ভেবে বলে,”মায়ের শরীরটা একটু ভালো হোক। তারপর নাহয় বলব।”

এদিকে সুনীতি ভার্সিটির গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় তার সামনে এসে দাঁড়ালো ছাত্রনেতা মন্টু। এই মন্টুই সেই ছেলে যার ভয়ে সুনীতির বাবা-মা তাকে দ্রুত বিয়ে দিতে চাইছে। মন্টুকে দেখে সুনীতির ভীষণ রাগ হয়। সে মন্টুর উদ্দেশ্যে বলে,”আমার সামনে থেকে সরো। নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড় করব।”

মন্টু একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে,”চিতকার করবে? আচ্ছা করো। দেখি কার বুকের এত পাটা আছে যে মন্টুর বিপক্ষে কথা বলে।”

সুনীতি মন্টুকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেবে এমন সময় মন্টু তার হাত টেনে ধরে। সুনীতি রেগে মন্টুর গালে ঠাস করে একটা থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। সেই থাপ্পড়ে মন্টু রেগে গিয়ে বলে,”তোমার এত বড় সাহস তুমি মন্টুর গায়ে হাত দিয়েছ। এর ফল ভালো হবে না।”

“আমি তোমাকে ভয় পাই না। আমার গায়ে দ্বিতীয় বার স্পর্শ করার আগে এই কথাটা মনে রাখবে।”

মন্টু একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে সুনীতিকে বলে,”এর থেকেও আরো বেশি নীবিড় ভাবে স্পর্শ করব তোমায়। তোমার শরীরের প্রত্যেক অংশে আমার হাতের ছোয়া থাকবে।”

সুনীতি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখতে পেল সাজিদ তার দিকে এগিয়ে আসছে। সাজিদ সুনীতির সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,”তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?”

সুনীতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মন্টু বলে,”এটা কে? আমার শালাবাবু নাকি? কিন্তু আমি যত দূর জানি তোমার তো কোন ভাই নেই।”

সাজিদ বলে,”আমি ওর হবু বর।”

এই শুনে মন্টু ভীষণ রেগে যায়। সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুমি এভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না।”

বলেই সে এগিয়ে গিয়ে সাজিদের গায়ে হাত তুলতে যাবে এমন সময় কিছু ছেলেপেলে এদিকে ছুটে আসে। তাদের সবাই কে আসতে দেখে মন্টু ভয়ে দূরে সরে যায়। কারণ এরা তার প্রতিপক্ষ নেতার দলের লোক। ছেলে পেলে গুলো এগিয়ে এসে সুনীতিকে বলে,”এই ছেলে আবার তোমায় বিরক্ত করছিল। তোমায় না বলেছি আমাদের ভাইয়ের কাছে সাহায্য চাইতে।”

সুনীতি বলে,”আপনাদের অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এগিয়ে আসার জন্য।”

এরপর সে সাজিদকে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো?”

সাজিদ রেগে বলে,”তোমাকে তো আমি ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম। ভার্সিটিতে এসে এসব কি দেখলাম?”

“আপনি ভুল বুঝছেন ঐ ছেলেটা…”

“চুপ..একদম চুপ। শুধুমাত্র মা তোমায় পছন্দ করেছে জন্য আমি এই বিয়েটা করতে বাধ্য। নাহলে মরে গেলেও তোমায় বিয়ে কর‍তাম না।”

সাজিদের কথা শুনে সুনীতির চোখে জল চলে আসে। তবুও সে চোখের জল মুছে বলে,”ঠিক আছে, আপনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে না। আমি ফুফুকে বলে দেব যে এই বিয়েটা যেন ভেঙে দেয়। আমারও একটা আত্মসম্মান আছে। যেই লোক আমাকে এভাবে বলে তাকে তো আমি কোনমতেই বিয়ে করব না।”

এই বলে সে চলে যায়। আর সাজিদ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দিও সুনীতি। আমি জানি তুমি ভালো মেয়ে। কিন্তু আমি যে অন্য একজনকে ভালোবাসি। আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব না। কিন্তু মাকেও আমি সরাসরি না বলতে পারিনি৷ তাই আমায় এমনটা করতে হলো যেন বিয়েটা না হয়। এবার আশা করি, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

To be continue…….