মন রাঙানোর পালা পর্ব-১০

0
9

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_10
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতি কনের সাজে বসে আছে। ভীষণ উত্তেজিত অনুভব করছে। এমন সময় “বর এসে গেছে” শুনে তার হৃদস্পন্দনের গতি যেন দ্বিগুণ হলো। অহনা সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলল,”কি ব্যাপার, রাহা নেহি যাতা..”

বলেই হাসতে লাগল। এদিকে সুনীতি লজ্জা আর ভালো লাগার অদ্ভুত অনুভূতিতে হারিয়ে গেল। সুনীতি ভাবতে লাগলো আর কিছুক্ষণ পর সে সাজিদের সাথে আজীবনের বন্ধনে জড়িয়ে যেতে চলেছে। এটা ভেবে সে অধর প্রসারিত করে হাসলো। অহনা সেই হাসি লক্ষ্য করল। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল যেন তার বান্ধবীর মুখে এই হাসি সবসময় বজায় থাকে। কোনদিন যেন এই হাসি মলিন না হয়।


সাজিদকে বিয়ের আসরে এনে বসানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু হবে। সামিউল খন্দকার ও নয়না খন্দকার উপস্থিত সকল অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর এবং তাদের সাথে আলাপ করতে ব্যস্ত। আর সালমা খন্দকার গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন সাজিদকে। তাকে কেমন জানি চিন্তিত লাগছে। এছাড়াও তিনি সাগরকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পাচ্ছেন না। এই বিষয়টাও তাকে ভাবিয়ে তুলছে। সালমা খন্দকার এগিয়ে গিয়ে সাজিদকে জিজ্ঞেস করলেন,”কিরে, সাগর কোথাও? ওকে তো আশেপাশে কোথাও দেখছি না। সাগরের তো তোর সাথেই আসার কথা ছিল।”

সাজিদ থাম খেয়ে যায় এই প্রশ্নে। ভীষণ উদ্বিগ্নতার সাথে তোতলাতে তোতলাতে বলে,”সা..সাগর তো আমার সাথেই এসেছিল। দেখো এখানেই হয়তো আছে কোথাও। তোমার ছোট ছেলে কি চুপ করে বসে থাকার মানুষ নাকি!”

সাজিদের কথাটা সালমা খন্দকারের খুব একটা হজম হলো না। তিনি আশেপাশে সাগরকে খুঁজতে লাগলেন।

সুনীতির বিয়ে উপলক্ষ্যে আহসান চৌধুরী এবং রাহেলা খাতুনও উপস্থিত হয়েছেন দাওয়াত রক্ষার্থে। রাহেলা খাতুন চারিদিকে তাকিয়ে বলেন,”এরেঞ্জমেন্ট তো ভালোই করেছে। এখন একটু দেখি আমার হিরের টুকরো ছেলেকে না করে দিয়ে কেমন ছেলে ওরা পছন্দ করেছে।”

আহসান চৌধুরী বলেন,”উফ, রাহেলা। তোমাকে নিয়ে আর পারিনা। এখনো তুমি এসব ভাবছ। এখানে এসেছ কোথায় নবদম্পতির বিয়ে দেখে তাদের সুখের সংসারের জন্য দোয়া করবে তা না..”

রাহেলা খাতুন ভেংচি কেটে বলেন,”আমার দ্বারা এত ভালোমানুষি সম্ভব না। ওসব তোমার জন্য। আমার তো এখানে আসারই ইচ্ছা ছিল না। নেহাৎ ওনারা বারবার করে বলেছিলেন তাই ফেলতে পারিনি।”

এরইমধ্যে সামিউল খন্দকার আর নয়না খন্দকার এগিয়ে এসে তাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। সামিউল খন্দকার বলেন,”আপনারা আসায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। আসুন, ভেতরে আসুন।”

রাহেলা খাতুন বলেন,”হুম, যাচ্ছি। তা বর কোথায়?”

“ঐ তো বিয়ের আসরে বসে আছে। বর আমার বড় বোনের ছেলে। ওর সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি।”

“ওহ আচ্ছা।”

রাহেলা খাতুন দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। আহসান চৌধুরী বিব্রতবোধ করেন। হালকা হেসে তিনিও রাহেলা খাতুনের পেছনে পেছনে যেতে থাকেন। রাহেলা খাতুন বিয়ের আসরের সামনে এসে সাজিদকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে বলেন,”এই ছেলের থেকে তো আমার অভিক হাজার গুণ ভালো ছিল। হিরে ফেলে কাচের পেছনে ছোটা আরকি!”

আহসান চৌধুরী বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন,”রাহেলা! তুমিও না। ওনারা যখন পছন্দ করেছেন তখন সবকিছু দেখেই পছন্দ করেছেন। তাছাড়া ছেলেটা আমেরিকায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং করে। ওর যোগ্যতা নিয়ে নিশ্চয়ই কোন সন্দেহ নেই।”

“মানুষ তো আমেরিকায় গিয়ে কম্পিউটারের দোকানে কাজ করলেও সবাইকে পরিচয় দেয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আমি কিছু বুঝি না নাকি! সবই USA এর সিটিজেনশিপ পাওয়ার ধান্দা!”

“দোহাই লাগে রাহেলা, এসব কথা আর বলো না। আশেপাশে কত লোকের আনাগোনা। কেউ শুনে ফেললে কি ভাববে?”

রাহেলা খাতুন আবারো মুখে ভেংচি কেটে চুপ হয়ে যান।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অভিক আরাফাতের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় আরাফাত বলে,”ডিনারের টাইম তো হয়ে যাচ্ছে। বাইরের খাবার আমার ঠিক হজম হয়না। চল তোদের বাসায় গিয়ে ডিনার টা করে নেই।”

অভিক বলে,”আম্মু আব্বু ওরা বাসায় নেই।”

“কোথায় গেছেন আঙ্কেল, আন্টি?”

” আমাদের এলাকায় একটা মেয়ের বিয়ে আজ। ওরা ওখানেই এটেন্ড করতে গেছে।”

“তাহলে চল, আমরাও ওখানে যাই।”

“আমার ইচ্ছা নেই!”

“কেন?”

“আচ্ছা, তোর কি কোন লজ্জা নেই আরাফাত! তুই বিনা দাওয়াতে একটা বিয়ের বাড়িতে যেতে চাচ্ছিস!”

আরাফাত মুখ বিকৃত করে বলে,”আমি তো এমনিই বলছিলাম। বাদ দে এসব। চল, তাহলে কোন রেস্টুরেন্টেই ডিনার‍টা করে নেই।”

অভিকের হঠাৎ কি যেন মনে হলো সে বলে উঠল,”আচ্ছা, চল। আমরা বিয়ের বাড়ি থেকেই ঘুরে আসি।”

“তোর কি ক্ষণে ক্ষণে মুড চেঞ্জ হয়! একটু আগেই বললি যাবি না আর এখনই যাওয়ার জন্য কথা বলছিস।”

“যাবি কিনা বল, নাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি।”

বলেই অভিক হাটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাইকে গিয়ে বসল। আরাফাতও গেল তার পেছন পেছন। বসে পড়লো অভিকের পেছনে। অতঃপর আরাফাত বাইক স্টার্ট দিলো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতিকে নিয়ে আসা হলো বিয়ের আসরে। তার পরনে লাল রঙের বেনারসি, গা ভর্তি গহনা। সুনীতিকে দেখেই সবার চোখ জুড়িয়ে গেলো। এদিকে রাহেলা খাতুন আফসোস করতে লাগলেন। তার কত ইচ্ছা ছিল সুনীতিকে নিজের ছেলের বউ করবেন কিন্তু ভাগ্যে আছে অন্য কিছু! অথবা ভাগ্যে যা আছে তা এর থেকেও চমৎকার কিছু।

সুনীতিকে এনে সাজিদের পাশে বসানো হয়। এখন শুধু কাজির আসার অপেক্ষা। কাজি একটু জ্যামে আটকে পড়েছিল জন্য তার আসতে একটু দেরি হচ্ছিল। এদিকে সাজিদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছিল। তার মনে ভয় জাগে যে সাগর যেন না চলে আসে। এরইমধ্যে সে সালমা খন্দকারকেও সবটা জানিয়ে দিয়েছে। প্রথমে তো জানাতে চায়নি কিন্তু পরবর্তীতে জোরাজুরি করায় বলে দিয়েছে। এরপর থেকে সালমা খন্দকারও উদ্বিগ্ন। তিনিও চান বিয়েটা জলদি হয়ে যাক। তারপর নাহয় সাগরকে কোন রকম ভাবে বোঝানো যাবে। এদিকে সবাই যখন সাগরের কথা জানতে চাইছিল তখনো অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে বলেছেন সাগরের এক খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাবা মারা গেছে। তাই সাগরকে ওখানে যেতে হয়েছে।

সালমা খন্দকার সামিউল খন্দকারের কাছে গিয়ে তাড়া দিয়ে বলেন,”কিরে! কাজিকে আরেক বার কল করে দেখ না। আর কত সময় লাগবে ওনার আসতে?”

“আপনি এত অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন কেন আপা! কাজি সাহেব এখুনই চলে আসবেন।”

রাহেলা খাতুন বিড়বিড় করে বলেন,”না আসুক, কাজি। এই বিয়েটা না হলেই ভালো। তাহলে এরা মজা বুঝবে।”

আহসান চৌধুরী রাহেলা খাতুনকে চোখ রাঙান। তাই তিনি আর কিছু বলেন না।

এরই মধ্যে কাজি সাহেব চলে আসলেন। যা দেখে সাজিদ ও সালমা খন্দকার দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। সালমা খন্দকার তাড়া দিয়ে বললেন,”আসুন কাজি সাহেব, জলদি বিয়ের কার্যক্রম শুরু করুন। আমরা কতক্ষণ থেকে আপনার অপেক্ষাতেই বসে আছি।”

কাজি সাহেব আর কথা না বাড়িয়ে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করে দেন।

অভিক এবং আরাফাতও ততক্ষণে সেখানে এসে হাজির হয়। অভিক দূর থেকে সুনীতিকে দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আজ মেয়েটাকে বধূবেশে অনেক বেশি স্নিগ্ধ লাগছে। অভিক নিজেই নিজেকে ভৎর্সনা করল। চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,”এসব আমি কি ভাবছি!”

আরাফাত বিয়ের আসরে সাজিদকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”আরে এটা সেই ছেলেটা না যাকে আমরা সেদিন এয়ারপোর্টে দেখছিলাম।”

অভিক এবার সাজিদের দিকে তাকিয়ে বলে,”হ্যাঁ, ঐ ছেলেটাই তো। ওর সাথেই তাহলে সুনীতির বিয়ে।”

আরাফাতের মাথায় কোন একটা চিন্তা আসে। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে সে বলে,”আরে, এই ছেলেটাকে তো আমি চিনি! নিউইয়র্কে আমার বোনেরই পাশের বাসায় থাকে। এজন্য ওকে এত চেনা চেনা লাগছিল। কিন্তু ও তো বিবাহিত!”

অভিকের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যায় আরাফাতের কথা শুনে।

“কি বলছিস কি তুই!”

“ঠিকই বলছি। এই ছেলেটা একজন আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করছে।”

“তাহলে তো নেক বড় একটা ভুল হতে যাচ্ছে। ওরা তী ঠকাচ্ছে সুনীতিদেরকে। এই বিয়েটা থামাতে হবে।”

বলেই অভিক সামনে এগোতে থাকে।

এদিকে কাজির কথায় সুনীতি কবুল বলতে প্রস্তুত এমন সময় এক বিদেশি তরুণী সেখানে এসে বলে,”সাজিদ..”

সাজিদ হতবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,”ইভা! তুমি!”

সাগর ইভার পাশে দাঁড়িয়ে সে বলে,”তোমাদের সব খেলা শেষ, ভাইয়া!”

To be continue…….