মন রাঙানোর পালা পর্ব-৩৬+৩৭

0
3

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_36
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতি এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর তাকে বাসায় আনা হয়েছে। অভিক সুনীতির উপর অনেক রেগে ছিল কারণ সুনীতি বোকামি করে নিজের বিপদ ডেকে এনেছিল। সুনীতিকে এ নিয়ে অনেক বকাবকিও করেছে। তবে এখন সবটা স্বাভাবিক। আগামী দুই দিনের মধ্যেই অভিককে আবার সিলেটে সেনা ক্যাম্পে ফিরতে হবে৷ সুনীতির শারীরিক অবস্থা এখনো কিছুটা খারাপ থাকায় আপাতত ডাক্তার তাকে ট্রাভেল করতে মানা করেছে। তাই এবার সুনীতি ঢাকাতেই নিজের শ্বশুর বাড়িতে থাকবে। এই নিয়ে তার মনটা বেশ খারাপ। যা নজরে এসেছে অভিকেরও।

রাতে অভিক ঘরে ঢুকেই সুনীতিকে মনমরা দেখে বলে,”মুখটা এমন গোমড়া করে রেখেছ কেন নীতি? তোমাকে এমন গোমড়া মুখে দেখতে ভালো লাগছে না।”

সুনীতি অভিমানী সুরে বলে,”তুমি কি সত্যিই পরশু আমায় রেখে সিলেটে চলে যাবে?”

অভিক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”যেতে তো আমায় হবেই নীতি। এটা তো আমার ডিউটি।”

সুনীতি মন খারাপ করে বলে,”ইশ, যদি আমিও যেতে পারতাম।”

“ডাক্তার বলে দিয়েছেন এখন তোমার এতদূর ট্রাভেল করা যাবে না। তাই তোমাকে আমি কিছুতেই ঝুঁকি নেব না। তুমি আগে অন্তত ৬ মাস এখানেই থেকে বিশ্রাম নাও। তারপর যখন তুমি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে তখন তোমায় আবার আমি সিলেটে নিয়ে যাব আমার সাথে।”

সুনীতি মলিন মুখে মাথা নাড়ায়। অভিক এসে সুনীতির মাথা বসে তার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে কপালে চুমু দিয়ে বলে,”আমিও যে তোমায় ছাড়া ভালো থাকব না নীতি কিন্তু কি আর করার? তোমার ভালোর জন্য যে আমাদের এতটুকু সেক্রিফাইজ কর‍তে হবেই।”

বলেই অভিক সুনীতিকে আরো কাছে টেনে নেয়। ধীরে ধীরে তারা ভালোবাসার আরো গভীরে হারিয়ে যায়। অভিক সুনীতিকে শুইয়ে দিয়ে তার উপরে উঠে যায়। পাগলের মতো সুনীতির পুরো শরীরে আদর করতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের দুটো শরীরের মিলনের পালা শুরু হয়। একে অপরের মন রাঙিয়ে তারা হারিয়ে যায় ভালোবাসার আরো গভীরে। আর চারপাশের পরিবেশ সাক্ষী হয় তাদের এই পবিত্র ভালোবাসার।

~~~~~~~~~~~
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সুনীতি গোসল করে নেয়। অভিক তখনো ঘুমে আছন্ন। সুনীতি অভিকের কাছে গিয়ে নিজের চুলে জমে থাকা পানি তার মুখে ছিটিয়ে দেয়। মুখে পানির ছিটা আসতেই অভিক ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে বসে। সুনীতি এ দৃশ্য দেখে হেসে ফেলে। অভিক বলে,”তবে রে,,আমার সাথে মজা করা হচ্ছে,,”

বলেই সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। সুনীতির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। সুনীতি বলে ওঠে,”উম,,ছাড়ো আমায়,,তুমি এখনো ব্রাশ করোনি,,উয়াক থু,,”

“এটাই তোমার শাস্তি,,”

বলে আরো গভীর ভাবে চুম্বন করতে থাকে অভিক। এরমধ্যে হঠাৎ সুনীতির ফোন বেজে ওঠে। অভিক বিরক্ত হয়ে দূরে সরে বলে,”ধুর এত সুন্দর রোম্যান্টিক মুডের ১২ টা বাজিয়ে দিল।”

সুনীতি ঠোঁট টিপে হেসে বলে,”বেশ হয়েছে!”

অতঃপর সুনীতি টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে রিসিভ করে। অহনা ফোন দিয়েছে। সুনীতি ফোনটা রিসিভ করতেই অহনা হাপাতে হাপাতে বলে ওঠে,”অনেক বড় সমস্যায় পড়ে গেছি রে বান্ধবী! তোর সাহায্যের প্রয়োজন।”

সকাল সকাল এমন কথা শুনে সুনীতি অবাক স্বরে বলে,”তুই একটু শান্ত হ। এত হাপাচ্ছিস কেন?”

অহনা ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে বলে,”মামারা যেন আমার জন্য কোন এক পাত্র ঠিক করেছে। আজ তারা আমায় দেখতে আসবে। মা আমায় দুপুরের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকতে বলেছে।”

সুনীতি অহনার কথা শুনে বলে,”এটা তো খুব ভালো খবর। খুব শীঘ্রই তাহলে তোর বিয়ের দাওয়াত পেতে চলেছি! কি বলিস?!”

অহনা রাগী সুরে বলে,”দাওয়াত মাই ফুট! আমি এই বিয়েটা করবো না।”

“কেন রে? তুই না বলেছিলি তুই তোর পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবি! তাহলে এখন এমন কথা বলছিস কেন?”

অহনা এখন সুনীতিকে কিভাবে সবটা বোঝাবে। তার মনে যে,,

অহনা বলে,”ফোনে এত কথা বলা সম্ভব না। তুই প্লিজ আজ আমার বাসায় আয়। তোকে অনেক কথা বলার আছে।”

“ঠিক আছে,যাবো এখন। তুই চাপ নিস না।”

বলেই সুনীতি ফোনটা কে’টে দেয়। অভিক সুনীতিকে জিজ্ঞেস করে,”কে ফোন করেছিল?”

“অহনা।”

“কি বলল?”

“বলল, ওকে নাকি আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আমাকে ওর বাসায় যেতে বলল। তুমি একটু দুপুরের মধ্যে আমায় অহনাদের বাসায় পৌঁছে দিও তো।”

অভিকের কথা শুনে অভিক গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়৷ সে তো ক্যাম্পে থাকাকালীন আরাফাত ও অহনার ঘনিষ্ঠতা খেয়াল করেছে। যতদূর মনে হয়েছে তারা একে অপরকে পছন্দ করে। তাই হঠাৎ অহনাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে শুনে তার কেমন জানি লাগল। সুনীতি অভিককে চুপ দেখে বললো,”কি হলো? চুপ করে আছ যে!”

“কিছু না। তুমি তৈরি হয়ে থেকো আমি এখন তোমায় অহনার বাসার সামনে রেখে আসব।”

একথা বলেই অভিক একটু দূরে সরে এসে আরাফাতকে ফোন দিতে থাকে। কিন্তু আরাফাতের ফোন বন্ধ দেখায়। অভিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে রুমের বাইরে বের হয়।

~~~~~~~~~~
দুপুরে অভিক সুনীতিকে একদম অহনাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। অহনার মা-বাবার ডিভোর্সের পর থেকে মূলত অহনা তার মামার বাসাতেই থাকে। অভিকদের বাড়ি থেকে অহনাদের বাসার দূরত্ব বেশি নয়৷ ৩০ মিনিটের মতো রাস্তা। তাও অভিক অনেক সাবধানে ড্রাইভ করে যাতে সুনীতির কোন প্রব্লেম না হয়।

সুনীতি অহনাদের বাসায় ঢুকতেই অহনার মা তাকে দেখে খুশি মনে বলে,”সুনীতি তুমি এসেছ! বেশ ভালোই হলো। আজ তো অহনাকে দেখতে আসবে। তুমি একটু ওর পাশে থাকো ওর তাহলে ভালো লাগবে।”

“আচ্ছা, আন্টি। আমি তাহলে অহনার কাছে যাই।”

“হুম, যাও।”

সুনীতি অহনার রুমে গিয়ে দেখতে পায় সে বিষন্ন মনে বিছানায় বসে আসে। সুনীতিকে আসতে দেখেই অহনা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”তুই এসেছিস!”

“হুম। না এসে আর পারলাম না৷ তুই নিজের একি হাল করে রেখেছিস! আজ তোকে দেখতে আসবে আর তুই এমন পেত্নীর মতো আছিস! তোকে তো মুখের উপর রিজেক্ট করে দিয়ে চলে যাবে।”

“সেটাই তো চাই!”

“মানে?”

“এই বিয়েটা আমি করতে চাই না।”

“কিন্তু কেন? আমি যতদূর জানি তোর তো পছন্দেরও কোন মানুষ নেই,,তাহলে?”

“কে বললো আমার পছন্দের কেউ নেই? আমার পছন্দের একজন আছে।”

“কে সে? যেই জুনিয়র ছেলেটা তোকে ম্যাসেজ করে?”

“না,সে নয়।”

“তাহলে?”

“মেজর আরাফাত। দুলাভাইয়ের বন্ধু।”

“কি? তুই আরাফাত ভাইয়াকে…”

“হুম। সিলেটে গিয়ে কিছুদিন ওনার সাথে মিশে আমি ওনার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে ওনার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি ডিপলি ওনার প্রেমে পড়ে গেছি রে! ওনাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতে পারি না।”

“কিন্তু…”

“তুই কিছু একটা কর সুনীতি। কোনভাবে এই বিয়েটা আটকাতে হবে।”

“তুই রিল্যাক্স হ! ওরা তো কেবল দেখতেই আসছে। বিয়েটা তো আর আজ হচ্ছে না।”

“আমি মামিকে বলতে শুনেছি আজ যদি ওদের আমাকে পছন্দ হয়ে যায় তো একেবারে কাবিন করিয়ে নেবে!”

সুনীতির ভীষণ অস্থির লাগে। সে কি করবে এই মুহুর্তে সেটা বুঝতে পারে না। এরইমধ্যে অহনার মা এসে তাড়া দিয়ে বলে,”তুই এখনো তৈরি হস নি কেন অহনা? দ্রুত তৈরি হ। সুনীতি মা তুমি ওকে একটু হেল্প করো তো। পার্লার থেকে লোক আসতে চেয়েছিল কিন্তু পাত্রপক্ষের বারণের জন্য আনা হয়নি। ওরা সাধারণ সাজেই দেখতে চেয়েছে।”

অহনা বলে ওঠে,”মা প্লিজ! তুমি আমায় জোর করো না। আমি পাত্রপক্ষের সামনে যাব না।”

“দেখো, তোমার বাবার মৃত্যুর পর তোমার মামারাই কিন্তু আমাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তারা নিশ্চয়ই আমাদের খারাপ চাইবে না! ছেলে যথেষ্ট ভালো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে তৈরি হয়ে নাও।”

বলেই তিনি চলে যান। অহনা অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।

To be continue……

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_37
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অহনা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সে শপথ করে নিয়েছে কিছুতেই পাত্রপক্ষের সামনে যাবে না। সুনীতি অনেক কসরত করে কোনরকমে অহনাকে একটু সাজিয়ে দিয়ে বলল,”এরকম করে কোন লাভ নেই অহনা। তুই এমন জেদ করলে পাত্রপক্ষের সামনে তোর ফ্যামিলির মান-সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তার থেকে ভালো তুই আজ পাত্রপক্ষের সামনে চল৷ এমনি দেখা-সাক্ষাৎ হোক। তারপর নাহয় তুই তোর ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে না করে দিস। এদিকে আমিও নাহয় অভিকের সাথে কথা বলব। অভিক, আরাফাত ভাইকে সবটা জানাবে। তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“তুই ঠিক বলছিস তো?”

“হ্যাঁ, রে বোকা। আমি ঠিক বলছি।”

“বেশ, শুধুমাত্র তুই বললি জন্য আমি মেনে নিলাম। তুই তোর কথাটা রাখিস।”

“আচ্ছা।”

অহনার মা হঠাৎ এসে সুনীতিকে তাড়া দিয়ে বলেন,”তুমি জলদি অহনাকে নিয়ে আসো। ছেলে পক্ষ চলে এসেছে।”

“আচ্ছা, আন্টি। আপনি যান। আমি অহনাকে নিয়ে যাচ্ছি।”

অহনার মা নিশ্চিত হয়ে চলে যায়। সুনীতি অহনার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এই তুই শোন, পাত্রপক্ষের সামনে আবার এমন কীর্তি করিস না যাতে তারা অপমানিত বোধ করেন। ওদের সামনে একদম ভদ্র মেয়ে হয়ে বসে থাকবি।”

অহনা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,”ভদ্র মেয়ে মাই ফুট! তুই শুধু দেখে যা, পাত্রপক্ষের সামনে আজ আমি এমন সার্কাস করব যে ওরা নিজেরাই বিয়ে ভেঙে দিয়ে চম্পক দেবে।”

“অহনা! তুই কিন্তু খবরদার এমন কিছু করবি না!”

অহনা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”আমার মতের বিরুদ্ধে কেউ আমার সাথে কিছু করতে চাইলে আমি এমনই করবো।”

সুনীতি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অতঃপর অহনাকে নিয়ে রওনা দেয় তাদের বাসার ড্রয়িংরুমের দিকে। ড্রয়িংরুমে যেতে যেতে সুনীতি আবারো অহনাকে বলে,”বোন, তুই প্লিজ একটি শান্ত থাকিস। কোন ভেজাল করিস না। আমার তোর মুখ-চোখ দেখে ভীষণ ভয় লাগছে।”

“তুই শুধু দেখে যা আমি কি কি করি।”

বলেই অহনা একটা অন্যরকম হাসি দেয়। সুনীতি বুঝতে পারে, সে যাই বলুক অহনা যা ভেবেছে তাই করবে। এজন্য সেও আর কথা বাড়ায় না।

সুনীতি অহনাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হতেই অহনার মামা পাত্রপক্ষের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ঐ তো অহনা এসে গেছে। আয় মা এখানে এসে বস।”

অহনা তো তার মামার এহেন কথা শুনে একটুও খুশি হয়না। তবু মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে থাকে। তখনো সে ছেলের দিকে তাকায় নি। অহনার মামা পাত্রপক্ষের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এই হলো অহনা, আমার ভাগ্নি। অহনা মা, ওনাদের সালাম দাও।”

অহনা সালাম দেয়ার জন্য পাত্রপক্ষের দিকে তাকাতেই হতবাক হয়ে যায়। বিস্ময়ে তার মুখ থ হয়ে যায়। এদিকে সুনীতিও তো পাত্রপক্ষকে দেখে পুরোই অবাক। কেননা, সেখানে আর কেউ নয় পাত্র হিসেবে বসে আছে আরাফাত। এদিকে অভিকও আরাফাতের পাশের স্থান দখল করে বসে আছে।

অহনা বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে থাকে। আরাফাত ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে,”মুখটা বন্ধ করুন, ম্যাডাম। নাহলে তো মাছি ঢুকে যাবে।”

আরাফাতের মুখে এহেন কথা শুনে অহনা ভীষণ লজ্জা পায়। কোনরকমে সালাম দিয়ে বসে পড়ে। কিন্তু তার বিস্ময় ভাব কখনো কাটেনি। এদিকে সুনীতিও অভিকের দিকে জিজ্ঞাংসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। অভিক ইশারা করে সুনীতিকে আশ্বস্ত করে যে, সে তাকে সবটা বুঝিয়ে বলবে।

অহনা সোফায় বসতেই আরাফাতের মা আনোয়ারা বেগম বলে ওঠেন,”মাশাল্লাহ,মেয়েটা তো অনেক সুন্দর। আমার ওকে ছেলের বউ হিসেবে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তুমি কি বলো আরাফাতের বাবা?”

আরাফাতের বাবা শফিক ইসলাম বলেন,”আমার ছেলের পছন্দ একদম আমার মতোই সেরা। দেখো কি সুন্দর পরির মতো মেয়ে পছন্দ করেছে। আমাদের আর কষ্ট করে মেয়ে খুঁজতে হলো না।”

অহনা তো এসব কথা শুনে একদম লজ্জায় মিইয়ে যায়। অহনার মা অহনার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,”কিরে! খুব তো বলেছিলি বিয়েটা করবি না। এখন চুপ যে? আমি বলেছিলাম না, গুরুজনেরা কখনো খারাপ সিদ্ধান্ত নেন না। তুই যে তলে তলে এতদূর এগিয়ে গেছিস সেটা তো আর আমরা জানতাম না। তবে যাই বলিস, তোর পছন্দ খারাপ না। ছেলেটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। এমন একটা জামাই তো আমি খুঁজছিলাম তোর জন্য। এখন তোকে বিয়ে দিতে পারলেই আমি সকল দায়িত্ব থেকে মুক্তি নিয়ে শান্তিতে দুচোখের পাতা বন্ধ করতে পারব।”

অহনা বলে ওঠে,”মা! একদম এসব বাজে কথা বলবে না।”

এত সবকিছুর মাঝে অভিক বলে ওঠে,”আমাদের তো আর বেশি কিছু বলার নেই। পাত্র-পাত্রী তো একে অপরকে আগে থেকেই পছন্দ করে নিয়েছে। আর আজ পারিবারিক দেখাশোনাও হয়ে গেল৷ এবার শুধু বিয়েটাই বাকি আছে।”

আরাফাত বলে,”পরশু তো আমায় সেনা ক্যাম্পে ফিরতে হবে। তাই আমি চাইছি কালকে বিয়েটা সম্পন্ন করে একেবারে বউ নিয়ে যেতে।”

অহনা যেন আজ একের পর এক অবাক হচ্ছে। অহনাকে আরো অবাক করে দিয়ে অহনার মামা বলে,”হ্যাঁ, আমাদের কোন অসুবিধা নেই। তুমি তো নাকি শুনলাম আগে থেকেই কমিউনিটি সেন্টার বুক করে রেখেছ। আমাদেরও খুব একটা আত্মীয় স্বজন নেই আসার মতো। যারা আসবে তাদের আজকেই জানিয়ে দেব।”

অহনার অবাক মুখ দেখে অহনার মা হেসে বলে,”দেখেছিস, ছেলেটা কি চতুর! কিভাবে গোপনে গোপনে সব এরেঞ্জমেন্ট করে নিয়েছে অথচ তোকে কিছু বুঝতেও দেয়নি।”

অহনা বুঝতে পারে আরাফাত তাকে লুকিয়ে গোপনে কত কি পরিকল্পনা করেছে। এবার অহনা আরাফাতের উপর একটু প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নাটক করে বলে,”কিন্তু আমি এই বিয়ে করতে পারব না।”

আরাফাত সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে তাকায়। আনোয়ারা বেগম বলে ওঠেন,”সে কি মা! তুমি বিয়ে করবে না কেন? কোন কি অসুবিধা হয়েছে? তাহলে আমাদেরকে জানাতে পার।”

অহনা মুচকি হেসে বলে,”আমার যে অনেক ইচ্ছা ছিল আমার বিয়েতে অনেক শপিং করব সেটা যে হলো না।”

আরাফাত চটপট বলে ওঠে,”কোন ব্যাপার না। এখনই বসুন্ধরায় চলো। তোমার যা যা নেবার নিও। কিন্তু বিয়ে কালই হবে।”

আরাফাতের এমন ব্যতিব্যস্ততা দেখে সবাই আড়ালে হাসে। বিয়ের জন্য বেচারা কতটা উদগ্রীব! অহনাও আর ব্যাপারটাকে বেশি না পেচিয়ে বলে,”আচ্ছা, ঠিক আছে।”

সুনীতি এবার অভিকের কাছে এসে জানতে চায়,”তুমি বলো তো ব্যাপার কি?”

আরাফাত বলে,”আমাদের ক্যাম্প থেকে ফেরার পরই আরাফাত অহনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সব ঠিক করে রেখেছে। অহনাকে এতদিন জানতে দেয়নি সারপ্রাইজ দেবে বলে। আমিও কাল জেনেছি। যখন তুমি আমায় অহনার বিয়ের কথা বললে তখন আরাফাতকে ফোন দিয়েছিলাম। তখনই ও বলল। তোমাকে জানালে তুমি অহনাকে বলে দিতে পার তখন আর এটা সারপ্রাইজ থাকবে না জন্য আরাফাত আমায় এটা তোমায় জানাতে মানা করেছিল।”

“ওহ আচ্ছা। যাইহোক, ব্যাপারটা বেশ ভালোই হলো। অহনা যখন আমায় বলল ও আরাফাত ভাইয়াকে পছন্দ করে আমি তো চিন্তায় পড়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমাকে ব্যাপারটা জানাবো।”

“আরাফাত হলো সুপা রুস্তম। দেখলে না, কিভাবে আমাদের থেকে ব্যাপারটা লুকিয়ে তলে তলে কত কি করে নিলো।”

“তুমিও কিছু কম যাও না।”

সুনীতির কথা শুনে অভিক হেসে ফেলল।

এদিকে অহনা আরাফাতের দিকে তাকিয়ে বলে,”নিজেকে বেশ শেয়ানা ভেবেছেন। একবার শুধু বিয়েটা হতে দিন, তারপর আমি বোঝাবো আপনাকে। আপনার মন রাঙিয়ে দেবার আগে যা করলেন তার একটা সুইট রিভেঞ্জ অবশ্যই নিবো।”

বলেই একটা দুষ্টুমির হাসি দেয়।
To be continue……