মন রাঙানোর পালা ২ পর্ব-১৪

0
48

#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_14(মহাধামাকা পর্ব)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সারজিস ও অভীক্ষার বিয়ে হয়েছে শুনে সবাই হতবিহ্বল দৃষ্টিতে অভীক্ষার দিকে তাকায়। অভীক্ষা মুষড়ে পড়ে। আমায়রা বুঝতে পারছিল না এসব কি হচ্ছে। সে অভীক্ষার দিকে তাকায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে। তার চোখে সন্দেহ।

অভীক্ষা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না। এমন সময় ইভা বলে ওঠে,”সাজিদ, সাগর তোমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? এইসব পাগলদের দূর করো এখান থেকে। তখন থেকে কিসব বাজে কথা বলে চলেছে।”

এই বলে তিনি সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তুমি চুপ আছিস কেন সারজিস? সবাইকে বলে দেও যে, এরা যা বলছে তা সব মিথ্যা। তুমি আমাদের সবাইকে লুকিয়ে বিয়ে করবে এটা হতেই পারে না।”

সারজিস কিছু না বলে চুপ করে থাকে। সারজিসকে চুপ দেখে ইভা উত্তেজিত হয়ে বলে,”কিছু বলছ না কেন?”

সারজিস চুপ ছিল বিধায় ইভা অভীক্ষার সামনে গিয়ে বলে,”তুমি অন্তত কিছু বলো। এখানে তো তোমার নামও জড়িয়েছে।”

এমন সময় এক বৃদ্ধ লোক বলে ওঠেন,”ওরা আর কি বলবে? কিছু বলার মতো মুখ আছে নাকি ওদের? যা আকাম করেছে তা আমাদের গ্রামের সবাই দেখেছে। এবার আপনারাও দেখুন।”

এই বলেই তিনি একটি সারজিস ও অভীক্ষার বিয়ের কাবিননামা তুলে ধরে সবাইকে দেখান। আমায়রা ছুটে এসে সেই কাবিননামা ছিড়ে বলেন,”মিথ্যে, মিথ্যে, এই সব মিথ্যা। সারজিস ভাই, তুমি কিছু বলছ না কেন? আমি জানি, এরা সবাই তোমাকে ফাঁসাছে। অভীক্ষা, তুমি অন্তত কিছু বলো। আমি যে সারজিস ভাইকে খুব ভালোবাসি। সারজিস ভাই শুধু আমার। সে আর কাউকে এভাবে বিয়ে করতে পারে না।”

ঐ বৃদ্ধ লোকটি বলে,”আমি জানতাম, তোমরা এসব কিছুর পরেও কিছু বিশ্বাস করতে চাইবে না৷ তাই এবার এমন কিছু দেখাবো যাতে তোমরা সত্যটা মেনে নিতে বাধ্য হবে।”

বলেই তিনি গ্রামের তরুণ কিছু ছেলেকে ডাক দেন। অতঃপর তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”এদের বিয়ের ভিডিও তো আছে তোদের সবার ফোনে। সেটা একটু চালিয়ে দেখা দেখি।”

একটা তরুণ ছেলে তার ফোন বের করে ভিডিও প্লে করে বলল,”নিজের চোখেই দেখুন সবাই।”

ভিডিওটাতে দেখা যাচ্ছে, অভীক্ষা একটি লাল শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে জল। সারজিস আর্মির পোশাকে দাঁড়িয়ে। সকল গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ধরেছে। কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে। অতঃপর দুজনেই কবুল বলল।

ভিডিওটা দেখে সকলে হতবাক হয়ে গেল৷ অভীক্ষা কাঁদতে শুরু করে দিলো। সুনীতি অভীক্ষাকে জিজ্ঞেস করল,”এসবের মানে কি অভীক্ষা? তুমি এতদিন ধরে এত বড় সত্যটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলে? এটাই কি আমায় বলতে চেয়েছিলে তুমি?”

আমায়রার চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে চলেছে। হঠাৎ করেই সে কান্না থামিয়ে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ল। হাসতে হাসতে সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”কেন? কেন আমার সাথে এমন করলে সারজিস ভাই? আমি তো তোমাকে মন থেকে ভালোবেসেছিলা। সেই ছোটবেলা থেকে শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি। তুমি ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাই নি। তোমাকে বিয়ে করে তোমার বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। সেটাই কি আমার অপরাধ ছিল, যার কারণে তুমি আমায় এত বাজেভাবে ঠকালে? আমাকে এভাবে ঠকিয়ে কি খুব আনন্দ পেলে? আমার অনুভূতির সাথে খেলা করার বিনিময়ে কি পেলে তুমি? আমি তো শুধু তোমার থেকে একটু ভালোবাসাই চেয়েছিলাম৷ এটাই কি আমার অপরাধ ছিল?”

অভীক্ষা বলে উঠল,”তুমি ওনাকে ভুল বুঝছ আমায়রা। আসল সত্যিটা শোনো, এই বিয়েটা আমাদের স্বেচ্ছায় ঘটে নি..এটা তো..”

আমায়রা গর্জে উঠে বলে,”চুপ…একদম চুপ। তোমার মুখে আর আমি একটা কথাও শুনতে চাই না। তোমরা দুজনে মিলে আমায় ঠকিয়েছ। আমার সব স্বপ্ন, আমার অনুভূতির সাথে খেলেছ তোমরা। কি লাভ পেলে এসব করে? কেন করলে এমন তোমরা?”

অহনা ও সাগর এগিয়ে এসে আমায়রাকে সামলানোর চেষ্টা করল। সোহেল রাগী কন্ঠে সারজিসকে বলল,”কাজটা তুমি ঠিক করো নি ভাইয়া। আমার আপুকে কেন এভাবে ঠকালে তুমি?”

এত সবকিছুর মাঝে ইভা বলে উঠল,”তোমরা শুধুশুধু আমার ছেলেকে দোষ দিচ্ছ। ওকে ফাঁসানো হয়েছে। এই সব কিছুর মূলে রয়েছে এই মেয়েটা।”

বলেই তিনি অভীক্ষার দিকে ইশারা করেন। অভীক্ষা হতবাক চোখে তাকায় ইভার দিকে৷ ইভা বলে ওঠে,”এই মেয়েটাই ফুসলিয়ে আমার ছেলেটাকে ফাঁসিয়েছে৷ অবশ্য এতে অবাক হবার কিছু নেই। গাছ যেমন তার ফলও তো তেমন হবে। ওর মাও তো আমার থেকে আমার ভালোবাসা, আমার সাজিদকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। এখন ওর মেয়েও তার মায়ের দেখানো পথেই হাঁটছে।”

অভীক্ষা আর চুপ থাকতে পারে না৷ ইভার কথায় প্রতিবাদ করে বলে ওঠে,”আপনি আমার নামে যা খুশি বলুন কিন্তু আমার মায়ের নামে এত জঘন্য কথা আমি সহ্য করবো না। আপনার সাহস কি করে হয় আমার মাকে নিয়ে এসব বলার? আর কি বললেন, আমি আপনার ছেলেকে ফাঁসিয়েছি?! মোটেই এমন না। আগে সত্যটা জানুন, তারপর কথা বলুন। আমি আপনাকে আসল সত্যিটা বলছি।”

বলেই অভীক্ষা সেদিন জঙ্গলে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা সবাইকে খুলে বলে। সব শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। সুনীতি বলে ওঠে,”এতকিছু হয়ে গেছে অথচ তুমি আমাদের কিছু বললে না।”

অহনা এগিয়ে এসে অভীক্ষাকে বলল,”যখন তুমি এখানে এসে দেখলে, আমায়রার সাথে সারজিসের বিয়ে ঠিক হয়েছে তখনই তো তোমার উচিৎ ছিল আমাদেরকে সব খুলে বলা। কিন্তু তুমি সেটা না করে সত্যটা লুকিয়েছে আজ আমার মেয়েটাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে দাঁড় করালে। সবার সামনে আমার মেয়েটাকে এভাবে অপদস্ত করালে। একবার তাকাও আমার মেয়েটার দিকে। কতোটা ভেঙে পড়েছে। ও কি আসলেই এটা ডিজার্ভ করে?”

অভীক্ষা বলে,”আমি আপনাদের কে এসব জানাই নি, সবকিছু লুকিয়ে গেছি তার পেছনে একটা কারণ ছিল। আমার বা সারজিসের কাছে এই বিয়ের কোন মূল্যই নেই। এটা আমাদের কাছে কেবলই একটা দূর্ঘটনা। আমরা তো ঠিকই করেছিলাম, জীবনে কখনো আর একে অপরের মুখোমুখি হবো না। তবে দূর্ভাগ্যবশত, এখানে এসে আমাদের দেখা হয়ে যায়। তবে আমরা ঠিক করেছিলাম এই মিছে বিয়েটা ভেঙে ফেলব। আমাদের মধ্যে তো ডিভোর্সের কথাও হয়ে গেছিল কিন্তু..”

ইভা হঠাৎ করে বলে ওঠে,”ব্যস, অনেক হয়েছে তোমার নাটক। আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি, এসব তোমারই সাজানো নাটক। নিজে আমার ছেলেটাকে সেদিন ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছ এই লোকগুলোর সাহায্য নিয়ে আর এখন তাদেরকে এখানে নিয়ে এসে নতুন নাটক শুরু করেছ। তাই তো আমি বলি, আমার সহজ সরল ছেলেটা কিভাবে এমন কিছু করতে পারে। ও আমার অনুমতি ছাড়া কোন মেয়েকে স্পর্শও করবে না, বিয়ে করা তো অন্তত দূরের কথা। কিন্তু তোমার এইসব নাটক আর এক মুহুর্ত চলবে না। সাজিদ তুমি এখনই কোন ভালো লইয়্যারকে কল কর। আমি এই মুহুর্তে আমার ছেলের সঙ্গে এই মেয়ের সব সম্পর্ক ছিন্ন করব। তারপর এখানেই এই বিয়ের আসরেই সারজিসের সঙ্গে আমায়রার বিয়ে হবে।”

এমন সময় অহনা বলে ওঠে,”দয়া করুন ভাবি। আমার মেয়েটাকে আর এসবের মধ্যে জড়াবেন না। এমনিতেই ও যথেষ্ট অপমানিত হয়েছে। দয়া করে ওকে আর সবার সামনে মজার পাত্র বানাবেন না। আপনার ছেলের সাথে আপনি অভীক্ষার বিয়ে মানবেন কি ডিভোর্স দেওয়াবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু এত কিছুর পর আমি কিছুতেই আর আমার মেয়েকে আপনার ছেলের হাতে তুলে দেব না। কারণ এসবকিছুর জন্য আপনি একতরফাভাবে অভীক্ষাকে দায়ী করতে পারেন না। অভীক্ষা যদি আমাদের থেকে সমস্ত সত্যটা লুকিয়ে অন্যায় করে থাকে তাহলে সেই অন্যায় আপনার ছেলে সারজিসও করেছে। প্রতারণা করেছে ও আমাদের সবার সাথে। আমার মেয়েটার সাথে। এমন প্রতারকের হাতে আমি কিছুতেই আমার মেয়েকে তুলে দেব না।”

সাগরও অহনার কথায় সমর্থন জানিয়ে বলে,”তুমি একদম ঠিক বলেছ অহনা। আমায়রার জন্য আমি সারজিসের থেকেও ভালো ছেলে খুঁজে বের করব। আমাদের মেয়ে এতোটা ফেলনা হয়ে যায়নি যে, ওকে যার তার হাতে তুলে দেব।”

To be continue……