#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_16
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অভীক্ষা ও সারজিসের বিয়ে সম্পন্ন হতেই বিয়ের আসরে ছুটে চলে এলো ইভা। এসেই অভীক্ষা ও সারজিসকে এভাবে একসাথে দেখে বলে উঠল,”এসবের মানে কি?”
সাজিদ বলে ওঠে,”তুমি শান্ত হও ইভা। আমি সারজিসের সাথে অভীক্ষার বিয়েটা দিয়ে ফেললাম।”
“কার অনুমতি নিয়ে তুমি এটা করলে? কে দিল তোমায় এত বড় সাহস? আমার ছেলের জীবনের এত বড় সিদ্ধান্তটা তুমি একা কিভাবে নিলে?”
“আমি সারজিসের বাবা হই। তাই তোমার থেকে ওর উপর আমার অধিকার বেশি ইভা৷ তাই এই নিয়ে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা।”
সাজিদের কথা ইভাকে ভীষণ ক্ষেপিয়ে তোলে। সে এগিয়ে এসে অভীক্ষার হাত ধরে বলে,”এক্ষুনি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। তোমাকে আমি কিছুতেই আমার ছেলের বউ হিসেবে মানবো না।”
সারজিস ইভার থেকে অভীক্ষার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”তখন থেকে তোমার অনেক বাড়াবাড়ি আমি সহ্য করেছি মম। কিন্তু আর না। এবারে তুমি যদি অভীক্ষার সাথে আর একটুও খারাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করো তাহলে কিন্তু আমি অভীক্ষাকে নিয়ে চিরতরে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব এবং আর কখনো এই বাড়িতে পা রাখব না।”
ইভা নিজের ছেলের মুখে এহেন কথা শুনে চরম পর্যায়ের হতবাক হয়ে গেল। ক্রন্দনরত সুরে বলল,”সারজিস! তুই এই বাইরের মেয়েটার জন্য নিজের মমকে এভাবে বলছ!”
“ও বাইরের মেয়ে নয় মম, ও আমার স্ত্রী। ওকে ওর প্রাপ্য সম্মানটা দেয়ার চেষ্টা করবে। যেখানে আমার স্ত্রী তার প্রাপ্য সম্মানটা পাবে না সেখানে আমি ওকে রাখব না। কারণ বিয়ের মাধ্যমে আমি ওর সম্মানের দায়িত্ব নিয়েছি।”
এমন সময় সাগর এসে বলে ওঠে,”আর আমার মেয়ের সম্মানের কি হবে?”
সাগরের সাথে সাথে সোহেলও এসেছিল। সোহেল এসেই বলল,”তুমি আমার আপুকে ঠকিয়ে একদম ঠিক কাজ করোনি। এর ফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে। আমরা কেউ এত সহজে তোমাকে ক্ষমা করব না।”
সাগর সোহেলকে বলে,”তুই চুপ থাক। আমার সারজিসের সাথে কিছু বোঝাপড়া আছে। আগে সেগুলো করে নিতে দে তারপর বাকি কথা হবে।”
বলেই সাগর এগিয়ে যায় সারজিসের সামনে। গিয়ে বলে,”আমাদের মেয়েটা তোমার কি ক্ষতি করেছিল সারজিস? কেন তুমি ওকে এভাবে সবার সামনে অপদস্ত করলে? ও তো কেবল তোমাকে ভালোই বেসেছিল, তার জন্য এত বাজে ভাবে অপমানিত করবে ওকে?”
“আমি ওকে অপমানিত করিনি চাচ্চু। আমি তো..”
“অপমান করো নি? এতগুলো মানুষের সামনে ওকে বিয়ের আসরে টেনে এনে কি বললে ওকে বিয়ে করবে না। কারণ তুমি আগে থেকেই বিবাহিত এবং নিজের স্ত্রীকে ভালোও বাসো৷ তাহলে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হলে কেন? কেন তোমার জন্য ওকে আজ এত কষ্ট পেতে হলো? আমি আমার মেয়ের প্রত্যেক ফোঁটা অশ্রুর দাম আজ বুঝে নেব।”
বলেই সাগর সবার সামনে সারজিসকে ঠাস করে থাপ্পড় মারে। শুধু একটা মেরেই ক্ষান্ত হয়না। বারংবার থাপ্পড় মারতেই থাকে। ইভা এগিয়ে এসে সাগরকে বাঁধা দিয়ে বলে,”তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে সাগর? তুমি কার জন্য আমার ছেলের গায়ে হাত তুলছ? ঐ আমায়রা তো তোমার নিজের মেয়েও না। আর তার জন্য তুমি আমার ছেলেকে…”
“ভাবি, আপনি একদম চুপ থাকুন। আপনাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি। কিন্তু আপনার বর্তমান ব্যবহারে সেই সম্মান উঠে যাচ্ছে। আজ যা কিছু হয়েছে তাতে আপনিও সমান ভাবে দোষী। ছোট থেকে আমার মেয়েটাকে এই স্বপ্ন দেখিয়েছেন যে ওকে নিজের ছেলের বউ করে ঘরে তুলবেন অথচ একবারো এটা খোঁজ নেন নি যে আপনার ছেলে কি চায়। এতেও ক্ষান্ত হন নি, নিজের ছেলেকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে রাজি করিয়েছেন বিয়ে করতে। কি ভেবেছন কি আপনারা মা-ছেলে? আমার মেয়ের মন বলে কিছু নেই। আর কি বললেন, আমায়রা আমার নিজের মেয়ে না। আজ আপনাকে শেষবারের মতো সাবধান করে দিচ্ছি, দ্বিতীয়বার ভুলেও এই শব্দ আপনার মুখ থেকে উচ্চারণ করবেন না। নাহলে কিন্তু আমি ভুলে যাব আপনি আমার কে হোন। আমায়রা আমার মেয়ে, ওকে ছোটবেলা থেকে আমি বুকে আগলে মানুষ করেছি, বুঝেছেন আপনি?”
সোহেল বলে,”আমার আপুকে আপনারা কষ্ট দিয়েছেন। আমরা আপনাদের কারো সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না।”
সোহেলের এই কথা শুনে সাজিদ এগিয়ে এসে বলে,”এসব তুই কি বলছিস সোহেল? সব পরিবারেই তো ঝামেলা হয় কিন্তু তার জন্য সম্পর্ক শেষ করে দিবি মানে? এটা কেমন কথা?!”
সাগর বলে,”আমার ছেলে একদম ঠিক বলেছে। তোমাদের সাথে আর এক ছাদের তলায় থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি খুব শীঘ্রই আমার পুরো পরিবারকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যাব। আর ততদিন আমাদের হাড়ি আলাদা হবে।”
ইভার সমস্ত রাগ এবার গিয়ে পড়ে অভীক্ষার উপর। সে বলে ওঠে,”সব হয়েছে এই মেয়েটার জন্য। ওর জন্য আমার সাজানো সংসারটা এলোমেলো হয়ে গেল।”
এবার সুনীতি প্রতিবাদ করে বলে উঠল,”আপনি তখন থেকে আমার মেয়েকে যা নয় তাই বলছেন। আমি কিন্তু এসব সহ্য করবো না। আপনার ছেলে কি দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নাকি?”
সাজিদ সবাইকে রেগে বলে,”এসব ঝামেলা এখন বন্ধ করো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।”
মুকিত দূরে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্যের সাক্ষী হয়৷ তার তো এখনো এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না যে সে তার অভীক্ষাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলল। মুকিত তো আজ কত আশা নিয়ে এখানে এসেছিল যে তার অভীক্ষার সাথে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে আবারো আগের মতো তাদের মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলবে। আর সেখানে কিনা তাদের সম্পর্ক গড়ার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল! অভীক্ষা কিনা আজ অন্য কারো স্ত্রী! অন্য এক পুরুষ তাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। এই সত্যটা মানা মুকিতের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। মুকিত নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে দুপা দুপা করে পিছিয়ে খন্দকার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। অতঃপর পিছন ফিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো৷ এই পৃথিবীকে বড্ড নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে তার, বড্ড নিষ্ঠুর।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমায়রা তখন থেকে নিজের রুমে এসে চুপচাপ করে বসে আছে। কারো সাথে কোন কথা পর্যন্ত বলছে না, কাঁদছে না পর্যন্ত। অহনা নিজের মেয়ের পাশে বসে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করে যাচ্ছিল। সকাল থেকে আমায়রা তেমন কিছু খায়নি। তাই তো অহনা আমায়রাকে বলল,”একটু কিছু খেয়ে নে, মা। এভাবে না খেয়ে থাকলে তো তোর শরীর খারাপ করবে।”
“সারজিস ভাই কেন আমায় ঠকালো আম্মু? আমি ওনার কি ক্ষতি করেছিলাম? অভীক্ষাই বা আমার সাথে এমন কেন করল? কেন ওরা দুজনে মিলে আমার সব স্বপ্ন চূড়মাড় করে দিল কেন?”
এমন সময় সুনীতি সেখানে চলে এলো। এসে আমায়রার এই অবস্থা দেখে বলল,”আমি তোমার অবস্থাটা বুঝতে পারছি আমায়রা। একসময় আমাকেও তোমার মতো পরিস্থিতি দিয়ে যেতে হয়েছিল। আমি তখন ভেবেছিলাম আমার জীবনের সবকিছু বোধহয় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তা হয়নি। বরং এরপর আমার জীবনে আরো ভালো কিছু হয়েছে। আমার জীবনে আমি আরো ভালো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছিলাম যে সবসময় আমায় আগলে রেখেছে৷ তাকে পেয়ে আমি আমার অতীতকে ভুলে গেছিলাম। আমি দোয়া করি, তোমার জীবনেও এমন কেউ আসুক।”
অহনা সুনীতিকে দেখে রেগে বলে,”তুই কেন এসেছিস এখানে?”
“আমি কেন এসেছি মানে?”
“আমার মেয়েটাকে এত কষ্ট দিয়ে কি তোর মেয়ের শখ মেটে নি যে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে তোকে পাঠিয়ে দিয়েছে!”
To be continue……
#মন_রাঙানোর_পালা_2
#Part_17
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অহনার মুখে এহেন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলে সুনীতি। সে ভাবতেও পারেনি তার প্রিয় বান্ধবী অহনা কখনো তাকে এভাবে বলতে পারে। সুনীতি বলে উঠল,
“অহনা! তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি? ভুলে গেলি আমাদের এত দিনকার বন্ধুত্ব?”
“চুপ, তোর মুখ থেকে আমি আমার নাম শুনতে চাইনা। তোকে তো আমি আমার বন্ধু ভেবেছি সবসময়। আর আজ এটা কি হলো?”
“এখানে আমার কি দোষ?”
“তোরই দোষ। তুই তোর মেয়েকে মানুষ করতে পারিস নি। তোর মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারিস নি। ওহ, শিক্ষা দিতে পারিস নি বললে ভুল হবে। তোর মেয়েকে এটাই শিখিয়েছিস যে, কিভাবে অন্য মেয়ের কাছ থেকে তার ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে হয়।”
“মুখ সামলে কথা বল অহনা।”
“এতকিছুর পরেও তুই কিভাবে এটা বলছিস নীতি? নিজের মেয়েকে তো ডেংডেং করে সারজিসের গলায় ঝুলিয়ে দিলি। এতেও শান্তি পাসনি?”
সুনীতি বলে উঠলো,”তুই আমাকে ভুল বুঝলি অহনা। কোন ব্যাপার না,এই সময় তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। আমারই উচিৎ হয়নি এখানে আসা।”
বলেই সে বেরিয়ে আসে। অহনা সেদিকে খেয়াল না করে আমায়রাকে বলে,”তুই একদম চিন্তা করিস না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই আছি তো তোর পাশে।”
আমায়রা একটু শান্ত হবার চেষ্টা করে কিন্তু তার মন মানতে চায়না।
~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতি আর এক মুহুর্ত এখানে অবস্থান করতে চায়না। কিন্তু তার মূল চিন্তা তার মেয়েকে নিয়ে। তাই তো রাহেলা খাতুনকে সাথে নিয়ে সারজিসের সামনে দাঁড়িয়েছে সুনীতি। সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলল, “দেখো আমি বুঝতে পারছি বর্তমান পরিস্থিতিটা কেমন কিন্তু এটাও সত্য এই পরিস্থিতির জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরাই সত্যটা গোপন করে রেখে আজ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছ যাতে সবাই তোমাদের ভুল বুঝছে। এমনকি তোমাদের জন্য আরো অনেক সম্পর্কই নষ্টের পথে। সেসব বাদ দাও, আমি যতটুকু বুঝেছি তোমাদের সংসার জীবন খুব একটা মসৃণ হবে না। প্রতি পদে পদে অনেক অপমান সইতে হবে। এসব সহ্য করেও কি তুমি আমার মেয়ের পাশে থাকবে? ওর হাত শক্ত করে আকড়ে ধরতে পারবে তো?”
সারজিস অভীক্ষার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”হ্যাঁ, পারব।”
সুনীতি নিশ্চিত হয়ে বলে,”আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম তোমার মুখ থেকে। এখন অনেকটা নিশ্চিত থাকতে পারব।”
অতঃপর সুনীতি অভীক্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”জীবন একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র মামনী, এখানে তোমাকে প্রতিনিয়ত একের পর এক পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কখনোই হার মানলে চলবে না। এখান থেকে তোমার একটা নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। আশা করি, তুমি আমায় আর নিরাশ করবে না।”
অভীক্ষা সুনীতিকে জড়িয়ে ধরে। দুই মা-মেয়ে অনেকক্ষণ কান্না করে। রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে বলেন,”সখী, তুই এখানে সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করিস। যতটা পারা যায় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করিস। কেউ যদি তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে তাহলে প্রতিবাদ করবি। আর সারজিস তোমার কাছে একটাই অনুরোধ, এখন যেমন করে আমার সখীর পাশে আছ ঠিক তেমনি থেকো।”
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না দাদী,আমি সবরকম পরিস্থিতিতেই সুনীতির পাশে থাকব।”
সুনীতি ও রাহেলা খাতুন ফিরে যান। সবাই যাওয়ার পর একা রয়ে যায় সারজিস ও অভীক্ষা। সাজিদ তার কিছু বন্ধু ও রিলেটিভসদের ছেলে-মেয়েকে বলে,”তোমরা ওদেরকে ওদের রুমে নিয়ে যাও। আমি মুরুব্বি মানুষ তাই আমি তো আগ বাড়িয়ে কিছু করতে পারছি না। আর বাড়ির পরিস্থিতি তো দেখছই। আমি বাদে কেউই ওদের পাশে নেই।”
“জ্বি, আঙ্কেল। আমরা বুঝতে পারছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না আমরা সব কিছু দেখে নিচ্ছি।”
এই বলে তারা এগিয়ে আসে। কয়েকজন মেয়ে অভীক্ষাকে ঘিরে ধরে আর কয়েকজন ছেলে সারজিসকে। অতঃপর বলে,”চলো, তোমাদের নতুন সংসার জীবন শুরু করবে।”
বাসর ঘরে এসে বসানো হয়েছে অভীক্ষাকে। একটু পর সারজিস বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। সারজিসকে দেখামাত্রই অভীক্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”আপনার সাথে আমার কিছু জরুর কথা আছে।”
“আমারও তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
“আমাকে প্লিজ তুমি করে বলবেন না।”
“আমাদের তো এখন বিয়ে হয়েছে, এখন তো আমাদের একে অপরকে…”
“শুনুন, মিস্টার সারজিস খন্দকার, এই বিয়েটা আমি করেছি বাধ্য হয়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে আমার কাছে এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তবে আমি এই বিয়েটাকে অস্বীকার করবো না। আপনাকেও আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিতে হবে। তবে একটা কথা না বললেই নয়, আমি আপনাকে সেদিনই স্বামীর পরিপূর্ণ মর্যাদা দিবো যেদিন আপনার পরিবারের সবাই আমাদের বিয়েটাকে মেনে নেবে, আমায়রা আমাদের ক্ষমা করে দেবে। তার আগে নয়। এর আগে আমরা একে অপরকে আপনি বলেই সম্মোধন করব।”
“অভীক্ষা!”
“হুম, এটা নাহলে আমি প্রতি মুহুর্তে অপরাধবোধ এ ভুগব। দয়া করে আমার অনুরোধটা রাখবেন।”
সারজিস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, তুমি মানে আপনি যা চান তাই হবে।”
এই বলে সারজিস একটা বালিশ হাতে নিয়ে বলে,”তো এখন আমি সোফায় শুই আপনি বিছানায়।”
“এর কোন দরকার নেই। আপনার সাথে বিছানা আমি শেয়ার করতেই পারি। আফটার অল, এটা তো আপনারই ঘর।”
সারজিস মুচকি হেসে বলে,”যেদিন আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবে এটা সেদিনই সম্ভব। তার আগে নয়।”
এই বলে সারজিস সোফাই শুতে যাবে এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। সারজিস বালিশটা বিছানায় রেখে বলে,”কে?”
কিন্তু কোন উত্তর আসে না৷ দরজার ধাক্কার মাত্রা বাড়ে। সারজিস গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ইভাকে দেখতে পায়।
ইভাকে দেখে সারজিস বলে ওঠে,”মম, তুমি?!”
ইভা সারজিসকে উপেক্ষা করে বাসর ঘরে প্রবেশ করে। অভীক্ষাকে দেখেই তো তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। ইভা ফুল দ্বারা সজ্জিত বাসর ঘরটা এলোমেলো করতে করতে বলে,”হবে না কোন বাসর! এই মেয়েকে আমি কিছুতেই তোমার স্ত্রীর অধিকার পেতে দেব না।”
বলেই ইভা অভীক্ষার হাত টেনে ধরে বলে,”এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এই রুম থেকে। তোমার কোন অধিকার নেই এখানে থাকার।”
সারজিস এগিয়ে এসে বলে,”এবার কিন্তু তুমি সব সীমা অতিক্রম করছ মম। এসবের মানে কি?”
“মানে কি তুমি বুঝতে পারছ না? আমি আমায়রাকে তোমার বউ হিসেবে পছন্দ করেছি। তাই কিছুতেই এই মেয়েকে মানব না।”
“তোমার মানা না মানায় কিছু এসে যায়না মম। অভীক্ষা আমার স্ত্রী আর এটাই সত্য।”
বলেই সারজিস ইভার হাত ধরে টানতে টানতে তাকেই রুমের বাইরে বের করে দেয়। ইভা অবাক কন্ঠে বলে,”সারজিস!”
সারজিস ইভার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে,”সরি, মম। কিন্তু তোমার পাগলামী থামানোর জন্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তুমি নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নাও তাহলে শান্ত হতে পারবে।”
ইভার মাথায় আগুন জ্বলতে থাকে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,”এই অভীক্ষাকে আমি কিছুতেই তোমার স্ত্রী হিসেবে থাকতে দেব না। আমি ওর শেষ দেখে ছাড়ব।”
ইভা চলে যেতে নেবে এমন সময় তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে জরিনা ছুটে এসে বলে,”বড় ম্যাডাম, অনেক বড় কাণ্ড হয়ে গেছে!”
“আবার কি হলো?”
“আমায়রা ম্যাডাম বি*ষ খেয়েছেন। ছোট স্যার আর ছোট ম্যাডামা কাঁদতে কাঁদতে ওনাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে গেল!”
সারজিস সবটাই শুনতে পায়। হতবাক হয়ে দরজা খুলে বলে,”কি বলছ তুমি এসব!”
“ঠিকই বলছি সারজিস স্যার।”
ইভা বলে,”দেখলে তো আজ তোমার জন্য কি হলো! তোমাকে আমি দোষ দিচ্ছি কেন? সব দোষ তো ঐ অভীক্ষার। তোমাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে আর..”
সারজিস আর এসব শোনার প্রয়োজন মনে করল না। ঐ অবস্থাতেই হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো।
To be continue…….