মনের অনুরণন পর্ব-০১

0
6

#মনের_অনুরণন
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রতা
#পর্বঃ১

“আপনি যদি সত্যিই আমার চিঠির উত্তর দেন, তাহলে আমি বুঝব যে আপনি শুধু নেতা না, একজন মানুষও।”

চিঠিতে শুধু এই দুই লাইন লিখে বক্সে চিঠিটা ফেলে দিলো সামিয়া। পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে এগোতে লাগলো সে। এই যুগে এসে চিঠি দেওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না। সামিয়া জানে সে চিঠির কোনো উত্তর কোনো কালেই পাবেনা। তবুও নিজের মন যে মানেনা। লোকটা ব্যস্ত মানুষ। তার মতো মানুষকে নিয়ে পাগলামি করাটা মানায় না।

সামিয়া লম্বা বেণীগুলো ঝুলিয়ে স্কুলের দিকে যেতে লাগল। আর কিছুদিন পরেই টেস্ট পরীক্ষা। এদিকে তার ভাবনায় যে শুধু তার নেতামশাই ঘুরছে। তাকে রেখে সে কিভাবে পড়াশোনায় মন দিবে।

স্কুলে প্রবেশ করে চারপাশে চোখ ঘুরালো সে। দূরে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের বান্ধুবী হুমায়রাকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তার। সে দ্রুত পায়ে সেদিকে যেতে লাগল। তখনি পিছন থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে উঠলো

“কেমন আছো মাধবীলতা!”

কথাটা কর্ণপাত হতেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে এলো সামিয়ার। সে মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে পিছু ফিরে তাকালো। আরিশ একগাল হেসে সামিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আরিশকে হাসতে দেখে মেজাজ খারাপ হলো সামিয়ার। বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আরিশ ভাই আপনারকে কতবার বলতে হবে এক কথা। আমার একটা নাম আছে। সেই নাম ছাড়া অন্য নামে আমায় ডাকবেন না।”

আরিশ একটু হেসে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা, রাগ করো না। তোমার নামেই ডাকব। তবে কি জানো, ‘মাধবীলতা’ তোমার মতো একটা চমৎকার নামের সাথে বেশ মানিয়ে যায়।”

সামিয়া চোখ ঘুরিয়ে বলল,
“আপনার এই হাসি-ঠাট্টা আমার একদম ভালো লাগে না। আমি চলে যাচ্ছি।”

সে হেঁটে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু আরিশ তার সামনে এসে দাঁড়ালো।

“ঠিক আছে, আর কিছু বলবো না।”

সামিয়া গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“দেখি সরুন আমি ক্লাসে যাবো।”

আরিশ আর কিছু বলতে পারলো না। সামিয়া তার আগেই পাশ কাটিয়ে হনহন করে চলে গেল।

আরিশ সামিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলল। এই ছোট্ট মেয়েটা কি কখনোই তার অনুভূতিগুলো বুঝবেনা। আর কত নিজের অনুভূতির দহনে পোড়াবে মেয়েটা। আর কিছুমাস তারপর তো তার কলেজ জীবনো শেষ হয়ে যাবে। তখন এই পিচ্চি মায়াবি মুখটা না দেখে সে কিভাবে থাকবে!

আরিশের মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভূত হলো। সামিয়া হয়তো জানে না, তার এই ঠান্ডা আচরণে আরিশ কতটা কষ্ট পায়। প্রতিদিন সে সামিয়াকে দেখে, তার কণ্ঠ শুনে, তার হাসির ঝলক দেখতে চায়। কিন্তু সামিয়া বরাবরই তাকে এড়িয়ে চলে, যেন তাদের মধ্যে কোনো দূরত্বের সীমানা টেনে রেখেছে।

আরিশ ভাবতে লাগল, সামিয়ার প্রতি এই অনুভূতিগুলো কোথা থেকে এলো। সামিয়া তো তার চেয়ে অনেক ছোট, সাধারণ একটা মেয়ে। তবুও কেন তার প্রতি এত টান? সে জানে না এটা ভালোবাসা, নাকি কেবলই একটা অদ্ভুত মোহ। কিন্তু এক জিনিস স্পষ্ট, সামিয়ার হাসিমুখ আর তার মায়াময় চেহারা তার দিনগুলোতে যেন আলো ছড়ায়।

সামিয়ার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আরিশ মনে মনে ঠিক করল, আর কিছুদিন মাত্র। তারপর যদি সাহস করে সামিয়ার সাথে তার মনের কথাগুলো বলতে না পারে, তবে হয়তো সারাজীবন সেই অপূর্ণতা বয়ে বেড়াতে হবে।

কিন্তু মনের কথাগুলো বলা কি এত সহজ হবে?

—————–

সামিয়া হুমায়রার কাছে এসে দাঁড়াতেই হুমায়রা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। হুমায়রার এমন কাজে কপালে ভাঁজ পড়লো সামিয়ার। তীক্ষ্ম চোখে হুমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
কিরে তোর আবার কি হলো!”

হুমায়রা গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তোর সাথে আমার আর কথা নাই।”

সামিয়া কপালে আরো দ্বিগুন ভাঁজ ফেলে বলল,
“আমি আবার কি করলাম!”

হুমায়রা কটমট দৃষ্টিতে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কাল রাতে কতগুলো মেসেজ দিছি। একটারো রিপলে দিসনি কেন হারামি।”

সামিয়া দুঠোঁট সরু করে বলল,
“ও তাই বল। আমি ভাবলাম কি না কি। ফোন আম্মুর কাছে ছিলো। সামনে পরীক্ষা তাই আম্মু ফোন নিয়ে নিয়েছে।”

হুমায়রা এবার মুখটা ছোট করে বলল,
“তাহলে এখন আমি একটু পরপর কিভাবে সঙ্গে কথা বলবো!”

সামিয়া হেসে বলল,
“ওফ, একদিন ফোন পাইনি আর তুই এমন অভিমান করে বসে আছিস! চিন্তা করিস না, আম্মুকে বুঝিয়ে ফোনটা নিয়ে নেব। তবে তুইও একটু পড়াশোনায় মন দে, পরীক্ষার সময় চলে এসেছে।”

হুমায়রা একটু ভ্রু কুঁচকে বলল,
“হুম… ঠিকই বলেছিস, কিন্তু তোর সাথে কথা না বললে তো মন বসে না। তুই না থাকলে সারা দিনটাই কেমন ফাঁকা লাগে।”

সামিয়া মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা, কাল থেকে তোকে নিয়ম করে ফোন দেব। তুইও ঠিক করে মেসেজ দিবি। কোনো অভিমান করা চলবে না, বুঝলি?”

হুমায়রা হাসি মুখে মাথা নাড়ল।
“ঠিক আছে, তুই যা বলবি তাই। তবে তুই আমায় আরেকটা কথা বল, আরিশ তোর সাথে এত কথা বলে কেন?”

সামিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
“ওই ছেলেটা সবসময় বিরক্ত করে! আমি তো তার সাথে কথা বলতেই চাই না, তুই আবার এসব কেন জিজ্ঞেস করছিস?”

হুমায়রা মুচকি হেসে বলল,
“হয়তো ওর তোর প্রতি একটু অন্যরকম অনুভূতি আছে।”

সামিয়া অবাক হয়ে বলল,
“কী বলিস! আমি ওকে পাত্তা দিই না, আর তুই বলছিস ও আমাকে পছন্দ করে?”

হুমায়রা হাসতে হাসতে বলল,
“দেখিস, একদিন না একদিন তুইও বুঝবি।”

সামিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“আমার এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। এখন ক্লাসে যাই।”

সামিয়া ও হুমায়রা ক্লাসের দিকে এগোতে থাকল, আর সেই সময় সামিয়ার মনে এক অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছিল। তার নেতামশাইয়ের জন্য লেখা সেই চিঠিটা, যা সে কয়েকদিন ধরে লিখতে চাচ্ছিল, অবশেষে ফেলে এসেছে। যদিও জানে, কোনো উত্তর আসবে না, তবুও সে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। সে ভাবছে,
“যদি কোনো অলৌকিকভাবে উত্তর আসে, তাহলে হয়তো…”।

সামিয়ার ভাবনায় ছেদ ঘটলো হুমায়রার কথায়….

#চলবে