#মনের_গহিনে (১২)
Sarika Islam(mim)
নীলা একাধারে বলা শুরু করলো।
-ফারাহ জানতো মডেলিং করা আমার স্বপ্ন যা কিছু করেই হোক আমি সেটা করবোই।তারপর,,
নীলা কান্না করেই যাচ্ছে কথা বলতেও যেন তার কষ্ট হচ্ছে।ইয়াদ বিরক্তি ফিল করলো নীলার ওই আলগা কান্নায়।চোখ মুখ কুচকে রাগের মাথায় বলল,
-তোমার এই ফালতু কথা আমি কেন শুনছি?কোন মানেই হয় না এইসবের।
বলেই পুনরায় উঠে যেতে নিলে নীলা বলা শুরু করে,
-ফারাহ আমার এই উইকনেস এর ফায়দা উঠিয়েছে।আমাকে মডেলিং এর মিথ্যে খবরে পাঠিয়ে নিজে তোমাকে বিয়ে করে নিয়েছে।যেন সব টাকা পয়সা ওর ভালোবাসার মানুষকে দিতে পারে।
ইয়াদ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না মোটেও নীলার বলার কথা গুলো।নীলা ইয়াদের অবিশ্বাস্য চেহারা দেখে আরো একটু কান্নার অভিনয় করলো।
-সত্যি বলছি বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করো রনি নামের কেউ আছে কিনা?
ইয়াদের মাথায় মুহুর্তেই আগুন ধরে উঠলো।জিদ্দে দাতের সাথে দাত চেপে কড়া গলায় বলল,
-এতক্ষন ধরে যে তোমার কথা শুনছি অযথা আমার সময় নষ্ট।আমি চললাম।
বলেই উঠে দাড়ালো।ঘুরে চলে গেল।নীলা আটকানো চেষ্টা করলো না।গালে পরে থাকা জল আংগুল দিয়ে মুছে ডেভিল হাসি দিল।
-এখন দেখি তোর সংসার কিভাবে টিকে মাই ডেয়ার সিস্টার।
নিজে নিজে বলে হাসলো।
ইয়াদ গাড়ি ড্রাইভ করছে আর নীলার বলা ফারাহর প্রতি প্রত্যেকটা কথা তার মাথায় ঘুরছে।ফারাহ তার থেকে কখনো টাকা পয়সা চায়নি কখনো লোভ জাতীয় কিছুই ফারাহর মধ্যে দেখেনি।আর ওর বয়ফ্রেন্ড তো থাকবেই না।ইয়াদ পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফারাহকে সে কখনোই এইসব করবে না।
———–
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো এখনো ইয়াদের কোন খবর নেই।মনের ভিতর এক অজানা ভয় ঝেকে বসেছে।কিছু হলো নাতো তার সাথে?অজানা কারনে মনের ভিতর ‘কু’ ডাকতে লাগলো।বারংবার আমার নজর শুধু গেটের মধ্যেই কবে ইয়াদ সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।
সোনিয়ার ডাকে তার দিকে তাকালাম।
-ভাবী দেখ এই ড্রেসটা সুন্দর না?
মোবাইলে নানান ধরনের ড্রেসের কালেকশন দেখছে তার মাঝে একটি ড্রেস দেখালো আমায়।আমার মন এখনো সেই চিন্তায় মশগুল।হাল্কা ফোনের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে হ্যা বললাম।ইয়াদ বাড়ির ভিতর ঢুকলো তাকে দেখে একটু শান্ত হলাম।কিন্তু কেমন যেন উষ্কখুষ্ক দেখাচ্ছে কিছু কি হয়েছে তার সাথে?উঠে দ্রুত তার কাছে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে দেখে এক গাল হাসলো।
-কোথায় ছিলেন?এত্ত দেরি হলো যে?যানেন আমি কত্ত টেনশনে ছিলাম?
ফারাহর কপাল কুচকে কথা গুলো বলা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে আসলেই কতটা টেনশনে ছিল ইয়াদের জন্য।ইয়াদ নীলার বলা কথাগুলো মাথায় আবার আওড়ালো’ফারাহ লোভী’ কিন্তু ইয়াদের একটুও মনে হচ্ছে না এইসব।ফারাহ তার সাথে কোন ছলনা করছে না যা আছে সত্যি।ভেবেই এক গাল হাসলো।ফারাহ ভ্রু কুচকে আবার বলল,
-কি হলো কথা বলছেন না যে?এত্ত লেট হলো?
ইয়াদ ফারাহর দিকে ফিরলো সব ভাবনা বাদ দিয়ে।
-ফ্রেন্ডদের সাথে ছিলাম তাই একটু লেট হয়ে গেল।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।ব্যাপারটা মোটেও সত্যি না সোনিয়া বলল মিটিং এ ছিল এখন সে বললো ফ্রেন্ডদের সাথে ছিল?কোনটা সত্যি?আসলে সে ছিল কোথায়?
আমি পুনরায় সন্দেহ চোখে বললাম,
-আপনার নাকি মিটিং ছিল?
ইয়াদ হচকচিয়ে গেল।বাড়ি থেকে তো এই বলেই বের হয়েছিল এখন ফারাহকে সে এইটা কি বলে দিল?এখন?ফারাহর দিকে তাকালে যেন সব ভুলে যায় ইয়াদ।মনে মনে নিজের করা কাজে ধরা খাওয়ার ভয় জাগলো।আমতা আমতা করে বলল,
-ওই আসলে,হ্যা মিটিং ছিল তারপর বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম।
-ওহহ।
এক গাল হাসলাম তাহলে এই কথা।আর আমিও না কি আজেবাজে ভেবে ফেলি।সবাই একসাথে বসলাম ইফতি ভাইয়া বলল,
-কাল তো আমি চলে যাচ্ছি আজ সারারাত আড্ডা চলবে।
সোনিয়া হাত তালি দিল।
-হুম হুম ভাইয়া অনেকদিন হলো সারারাত আড্ডা দেওয়া হয়নি।
আমি আর ইয়াদ এক গাল হাসলাম।
রাত এগারোটা সুহানা আন্টি এসে ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,
-সবাই ঘুমাতে যাও এত রাত পর্যন্ত জাগা ভালো না।
ইফতি আর ইয়াদ বলল,
-সবে তো এগারোটা আর কিছুক্ষন?
সুহানা আন্টি বিরক্তি কন্ঠে বললেন,
-সোনিয়া জলদি রুমে যা।পড়ালেখা বাদ দিয়ে শুধু আড্ডা দিয়েই যাচ্ছিস।
সোনিয়া মুখটা গোমড়া করে রুমে চলে গেল।সুহানা আন্টি আমার উদ্দেশ্য বলল,
-সারাদিন না পড়াশুনোয় এত্ত বিজি থাকো বাড়ি ফিরতে লেট হয়?তাহলে যাও গিয়ে শুয়ে পরো।সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
বলে উনি চলে গেলেন।আমাদের আড্ডা সেখানেই স্থগিত হলো।তার খোচা মারা কথায় উঠে পরলাম।সবাই নিজ নিজ রুমে গেলাম ইয়াদ আর ইফতি ভাই কিছুক্ষন বসবে তারপর নাকি আসবে।আমি কামরায় চলে আসলাম।
আকাশের অবস্থা বেশ ভালো নয় একদম পরিষ্কার আকাশটা কেমন আস্তে আস্তে মেঘ জমে আসছে।মাঝেমাঝে বিদুৎ চমকানোর রেখা দেখা যাচ্ছে দূর আকাশের বুকে।হয়তো ঝুম বৃষ্টি নামবে ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টির প্রভাব শুরু।প্রচন্ডবেগে বৃষ্টি পরছে আকাশ আজ ভিষণ খুশি লাগছে আমার মনটাও ভরে এলো মুশুলধারের বৃষ্টি দেখে।বুকের মধ্যে হাত ভাজ করে সাইডের দেয়ালে হেলান দিয়ে একাধারে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
এক ধ্যানে আকাশের ঝরে যাওয়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।হঠাৎ কানের কাছে কেউ হাল্কাভাবে ফু দেওয়ায় ভড়কে উঠলাম।চমকে পিছে ফিরে তাকালাম দ্রুত।ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছেন আমি তো পুরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।বুকে জমে থাকা চাপা নিঃশ্বাস ফেললাম।
-ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?
এক গাল হেসে বলল ইয়াদ।আমি দ্রুত নিজেকে ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে বললাম,
-নাহ মোটেও না।
-তাই বুঝি?
মেকি হেসে বলল ইয়াদ।আমি হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ালাম।হুট করেই আকাশ জুড়ে জোরে একটা বাজ পরলো আমি কেপে উঠলাম ইয়াদকে জড়িয়ে ধরলাম।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।ইয়াদ আমার মাথায় হাত রেখে বলল,
-সামান্য একটা বাজ পরলো এতেই এত্ত ভয়?
আমি ইয়াদকে ধরেই তার দিকে মুখ তুলে তাকালাম।নাক টেনে বললাম,
-হুহ আমি মোটেও ভয় পাই না।হঠাৎ পরলো তো তাই ভড়কে গিয়েছিলাম।
-বাজ হঠাৎই পরে তোমাকে বলে আসবে নাকি?
চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল ইয়াদ।আমি নিজেকে সাহসী প্রমান করতে গিয়ে কি বলে ফেলেছি।নিজেই নিজের বলা ভুলের কারনে মাথা নিচে নামিয়ে নিলাম।
বৃষ্টি আরো জোরে নামছে বৃষ্টির ফোটা আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে বারান্দায় আচরে পরছে বৃষ্টির পানি।আমার বরাবরই বৃষ্টি বিলাস করতে খুব বেশিই ভালোলাগে।আমি ইয়াদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বৃষ্টির দিকে মুখ করে তাকালাম।বৃষ্টির একেক ফোটা মুখ ছুয়ে দিচ্ছে বেশ ভালো লাগছে।
ইয়াদ ফারাহর বৃষ্টি বিলাস দেখছে বারান্দার কর্নারে হেলান দিয়ে পকেটে দু হাত গুজে।ফারাহর মুখ জুরে বৃষ্টির ফোটা লেগে আছে।ঠোঁট বেয়ে পানি পরছে ইয়াদ এক নজরে ফারাহর গোলাপি গোলাপি ঠোটের দিকে তাকিয়ে আছে।হুট করে সোজা হয়ে দাড়ালো ফারাহর কাছাকাছি এসে থামলো।ফারাহকে নিজের দিকে ঘুরালো ফারাহ চোখ বন্ধ করে ফিল করছিল হঠাৎ ইয়াদ তাকে ঘুড়াতেই চোখ মেলে তাকালো।ইয়াদ হাল্কা হাসলো ধীরে ধীরে ফারাহর ভিজে ঠোঁটের দিকে অগ্রসরিত হলো নিজের শুস্ক ঠোঁট নিয়ে।
নিজের ঠোঁটের সাথে ফারাহর ঠোঁট মিলিয়ে দিল।হাল্কা ভাবে চুমু দিয়ে পিছে ফিরে এলো।চোখের চশমা হাতে নিয়ে ফারাহর দিকে তাকালো।ফারাহ চোখ বন্ধ করেই আছে ইয়াদ মেকি হেসে আবারো চুমু খেল।
ঘটনা দ্রুত ঘটে যাওয়ায় ফারাহর চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেল।পরেই ইয়াদের সাথে সেও তাল মিলালো।
কিছুক্ষন পর ইয়াদ ছেড়ে দিল কপালে কপাল ঠেকালো দুজনেই ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।ইয়াদ মুচকি হাসলো।ফারাহ হাল্কা আওয়াজে বলল,
-ইয়াদ!!!
ইয়াদ মাথা নাড়ালো না।হুট করেই ইয়াদের ফোন বেজে উঠলো দুজোনেই আলাদা হয়ে গেল।ফারাহ ঘুরে দাঁড়িয়ে পরলো ইয়াদ ফোন নিতে রুমে গেল।এক্ষুনি ফোন আসার দরকার ছিল?মেইন টাইমে একটা না একটা গন্ডগোল হয়িই হয়।নানান ধরনের ভাবে ব*কে ফোনের পাশে গেল।
কীভাবে কি হয়ে গেল ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে আমার খুব।ঠোঁটে আপনা আপনি হাত চলে গেল হাত বুলিয়ে হেসে লজ্জায় মুখ ছাপালাম দুই হাতের মাঝে।আমি এখন ইয়াদের সামনে কীভাবে যাবো?লজ্জায় শেষ পুরো।
ইয়াদ খুশি মনে আসছিল ফোনের স্ক্রিনে নীলার নাম দেখে চমকে উঠলো।এত্ত রাতে নীলার ফোন কেন?তার কি কথা হতে পারে?ইয়াদ বারান্দার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো ফারাহ দাঁড়িয়ে আছে।ইয়াদ আর ফোন রিসিভ করলো না কেটে রেখে দিল।পুনরায় আবার ফোন করলো এইবার বেশ বিরক্তি হলো ইয়াদ।ফারাহ রুমে আসলো ইয়াদের ফোন এত্ত বাজছে কিন্তু ধরছে না দেখে ভ্রু কুচকে এলো।
-কে ফোন করছে এত রাতে?
ইয়াদ আমতা-আমতা করে বলল,
-রং নাম্বার।
ফারাহ ওহহ বলে বিছানায় বসলো।বাহিরের বৃষ্টি আজ কমবেই না যেন পন করেছে।বেরেই চলছে বেরেই চলছে।পরিবেশটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে শীত শীত করছে কিছুটা।ফারাহ কাথার নিচে পা রেখে ঘুমালো।ইয়াদও ফারাহর পাশে ঘুমালো।ইয়াদ ফারাহর কাছাকাছি এসে ঘুমিয়েছে ফারাহর হাতের উপর এক হাত রেখে।ফারাহ হাল্কা হাসলো ইয়াদ ফারাহ ঘুমিয়ে গেল।
রাত তিনটায়।
নিস্তব্ধ পরিবেশে ভয়ংকর রুপ নিয়ে মুঠোফোনটা বেজে উঠলো।ইয়াদ ফারাহর দুজনেই কেপে উঠলো ঘুমের মাঝে।ইয়াদের ঘুম ভেংগে গেল।পিটপিট করে চোখ মেলে ঘুমঘুম চোখে সাইডে থাকা টি-টেবিলের থেকে ফোন হাতে নিল।নীলার ফোন দেখে একদফা বিরক্তি ভর করলো তার মুখে।মেয়েটার শান্তি নেই এত্ত রাতেও ডিস্টার্ব করে।ফারাহর দিকে ফিরে তাকালো।ফারাহ চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে যেন গভির ঘুম ভর করেছে তার চোখে।টুং করে একটা মেসেজ আসলো।ইয়াদ মেসেজ বক্স ওপেন করে দেখলো নীলার মেসেজ।
‘জিজ্ঞেস করেছ?বিশ্বাস করো ওর লাইফে রনি নামের একজন আছে।’
চলবে,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)