#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_16
ইশফা ফোনের মধ্যেই ডুবে মনের সুখে কার্টুন দেখছে।বাড়িতে কে এল না এল,কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে তার কোন খবর নেই।
মিসেস খান তুশি আর তুশির ভাই এর সাথে কুশল বিনিময় করে তাদের ড্রয়িং রুমে বসিয়ে ইশফাকে ডাকতে গেল।
—ইশফা তুশি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে।
ইশফা মায়ের কথা সুনে একপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
–তুলশি পাতাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।
—তুশি একা আসে নি।সাথে ওর ভাই এসেছে।
কথাটা শোনার সাথে সাথে ইশফা ভ্রু কুচকে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল……
—তুশির ভাই!কোন ভাই?মা তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?
মেয়ের এমন কথা সুনে মিসেস খান বিরক্ত হয়ে বলল……
—তোর কি মনে হচ্ছে আমি তোর সাথে মজা করছি?
ইশফা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না করল।
মিসেস খান তাড়া দিয়ে বলল……
—পায়ের ব্যাথা আছে?তুই একা তুশির সাথে দেখা করতে যেতে পারবি নাকি আমি ধরে নিয়ে যাব?
ইশফার পায়ের ব্যাথা অনেকটাই কমে গেছে।এখন একা একা আস্তে আস্তে হাটতে পারে।তাই ইশফা বলল…..
—তুমি যাও।ওদের নাস্তা পানি দাও।ব্যাথা একটু কম আছে। আমি আস্তে আস্তে আসছি।
—ঠিক আছে সাবধানে আয়।
কথাটা বলে মিসেস খান চলে গেলো।ইশফা বিরবির করে বলতে লাগলো……
—আমার জানা মতে তুলশি পাতার কোন ভাই নাই।নতুন করে ভাই টপকালো কোথার থেকে।ভাই সাজিয়ে কাকে ও বাড়িতে নিয়ে এসেছে?উল্টাপাল্টা বুদ্ধি বের কইরা যদি ও কাউরে বাড়িতে আনে তাইলে ওর খবর আছে।
কথাগুলো বিরবির করতে করতে চুলগুলো হাত খোপা করে মাথায় সুন্দর করে ওড়না জরিয়ে বেড থেকে নামলো।আস্তে আস্তে পা ফেলে ড্রয়িং রুমের দিকে যেতে লাগলো।
💦💦💦💦💦💦
সোফার মধ্যে গাল ফুলিয়ে বসে আছে ইশরা।ইশরা,ইশিতা বেগম এর বাড়িতে আসার পর জানতে পেরেছে,ইশান নাকি তার বাবার সাথে কথা বলে তার জন্য নতুন টিচার রেখেছে।
—ফুপি তোমার ছেলেকে কিন্তু আমি খুন করে ফেলবো দেখে নিও তুমি।তখন আবার আমাকে কিছু বলতে পারবে না।
ইশানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে নালিশের সুরে ইশরা কথাগুলো ইশিতা বেগমকে বলল।
ইশিতা বেগম এক পলক ইশান এর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল…..
—কি করেছে ইশান আমার মামুনিটার সাথে?
ইশরাঃতোমার ছেলে আব্বুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার জন্য নতুন টিচার রেখেছে।তাও আবার ইংলিশ টিচার। আবার নাকি তোমাদের বাড়িতে এসে পড়তে হবে।বল এটা কি ও ঠিক করেছে?(কাদো কাদো হয়ে)
ইশিতা বেগমঃইশান কাজটা একদম ঠিক করেছে মা।ইশান তোর বড় ভাই।তোর যাতে পড়ালেখা ভালো হয় তার জন্যই তো ইশান নতুন টিচার রেখেছে।আর তাছাড়া আমাদের বাড়িতে এসে পড়তে তো তোর কোন অসুবিধে নেই।কলেজ থেকে তোদের বাড়ি যাওয়ার পথেই তো আমাদের বাড়ি পরে।পড়ার বাহানায় হলেও তুই আমাদের বাড়িতে আসতে পারবি।সাথে মা,মেয়ে মিলে একটু আড্ডা দিতে পারবো।
ইশরাঃরাখো তোমার আড্ডা। তুমিও তোমার ছেলের পক্ষ নিচ্ছ।কোথায় একটু বকবে তা না করে উল্টো আমাকে বুঝ দিতে আসছে।যাও তোমার সাথেও কথা নেই।(গাল ফুলিয়ে)
ইশিতা বেগম ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল……
—রাগ করে না মা।তোর ভালোর জন্যই তো সবটা করা হয়েছে।
—ফুপি পাগলেও নিজের ভালো বুঝে।একে বুঝিয়ে লাভ নেই এতো পাগল না বাদর।
কথাগুলো বলতে বলতে জিদান সামনে এসে দাড়ালো।
ইশরা, জিদানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হালকা চেচিয়ে বলল…….
—উনি এ বাড়িতে কি করছে?
ইশানঃঐ তোর নতুন টিচার।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই ইশরা মাথা ভনভন করে ঘুড়তে লাগলো।ইশরা, ইশানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল…….
—শয়তান পোলা দুনিয়াতে কি তোর জন্য টিচারের অভাব পরছিলো?আমি এর কাছে পড়বো না।
জিদান সোফায় আয়েস করে বসে বলল…..
—তোর না করাতে তো কিছু হচ্ছে না।কাল সুন্দর মত পড়তে চলে আসিস।আজ তোর ছুটি।
ইশরা,ইশিতা বেগমের হাত ধরে করুন গলায় বলল…..
—ফুপি প্লিস আমি এই রাক্ষস এর কাছে পড়বো না।তুমি মানা করে দাও।
ইশিতা বেগমঃএমন কথা বলে না মা।বরকে কি কেউ রাক্ষস বলে বল।
ইশরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল……
—কার বর।কিসের বর।এর সাথে আমার না বিয়ে হয়েছে আর না হবে।
জিদানঃবিয়ে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। আগে বড় হ। সময় হলে আমিই সব ব্যবস্থা করবো।বাচ্চা মানুষদের মুখে এতো বিয়ে,বিয়ে মানায় না।
জিদান কথাটা বলে সবার অগোচরে ইশরাকে চোখ মারলো।
জিদানের এমন কাজে ইশরা কথা বলতে ভুলে গিয়ে জিদানের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা,তুশির সাথে বসে বসে কথা বলছে,আর আড় চোখে সামনে বসে থাকা ছেলেটাকে পর্যবেক্ষণ করছে। ছেলেটাকে ইশফার কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু গোফ,দাড়ি,চশমাতে মুখ ঢেকে থাকার কারনে ভালো মত মিলাতে পারছে না। ইশফার সিক্সত্থ সেন্স জানান দিচ্ছে সামনের মানুষটা তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।কিন্তু চোখে চশমা থাকার কারনে সে পুরোপুরি সিউর হতে পারছে না।
মিসেস খান ওদের সামনে কিছু স্নেক্স আর কফি রেখে নিজের কাজে চলে গেল।
ইশফাঃতুশ ভাইয়ার সাথে তো তুই আমাকে ভালোমত পরিচয় করালি না।তা উনি কেমন ভাইয়া হয় তোর?
ইশফার কথা সুনে তুশি ঢোক গিলে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে তুতলিয়ে বলল…..
—ভা-ভাই মানে আ-আমার ভাই।
ইশফা ভ্রু কুচকে বলল…….
—তা তো জানিই তোর ভাই।কেমন ভাই হয় সেটাই জানতে চাচ্ছি।
তুশিঃআ-আমার আ-আমার আ-আমার……
ইশফা আড় চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছেলেটার হাব ভাব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তুশিকে আমতা আমতা করতে দেখে ছেলেটা কেমন উসুখুসু করছে।
ইশফা যা বুঝার বুঝে গেছে।ইশফা তুশিকে আর বিভ্রান্ত না করে তুশির বাহুতে চাপর মেরে বলল…..
—আমি জানি তোর ভাই।তাই এতো আমার আমার করতে হবে না।তোর আমার আমার করতে করতে কফি ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে গেল।আমার, আমার করা রেখে কফি খা।ভাইয়া আপনিও নিন না।কফি তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।(ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে)
ইশফার কথা সুনে মনে হয় দুজন হাফ ছেড়ে বাচলো।
ইশফা কফির মগে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে আর তুশির সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে।কথার মাঝেই ইশফা বলল…….
—ভাইয়া আপনি ক্রিকেট খেলেন?
ইশফা যে কথাটা ছেলেটিকে বলেছে তা বুঝতে ছেলেটির একটু সময় লাগলো।ছেলেটা একটু বেশ ভাব নিয়ে বলল…..
—হুম খেলি।
ইশফাঃতাহলে নিশ্চই আপনার কাছে ব্যাট,স্টেম্প আছে?
—স্টেম্প নেই ব্যাট আছে।কেন?
ইশফাঃআমি আপনার ব্যাটটা একদিনের জন্য ধার নেবো।দেবেন?
তুশি অবাক হয়ে বলল……
—ইফু তুই ব্যাট দিয়ে কি করবি? ক্রিকেট খেলা তো তুই পছন্দই করিস না।
ইশফাঃগাধী আমি কি একবারো বলেছি আমি ব্যাট দিয়ে ক্রিকেট খেলবো।আমি তো ব্যাট দিয়ে ঐ বাদর বাহিনীর নেতা সান এর পা ভাঙবো।তখন ব্যাটা বুঝবে ব্যাথার জায়গায় শরীরের শক্তি দিয়ে ম্যাসেজ করলে,মলম লাগালে কেমন লাগে।
ইশফার কথা সুনে ছেলেটি কাশতে লাগলো।
ইশফা তার সামনে থেকে পানির গ্লাস ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে বলল……
—হায়রে…. মানুষ।কাশি এক কাশির ধরন আলাদা।
ইশফার কথায় ছেলেটির কাশি থেমে গেল।ছেলেটি অবাক হয়ে বলল…..
—মানে!!!
ইশফা মুচকি হেসে বলল…..
— চুরি করতে গেলে চোরকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়।না হলে সে, যে কোন সময় ধরা পরে যেতে পারে।কথাটা মাথায় রাখবেন মিঃসানজান শিকদার উফ্ সরি সান ভাইয়া (সুরটেনে)
#চলবে,
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_17
৪দিন পর…..
ইশফা ভার্সিটিতে এসে করিডোর দিয়ে ক্লাশরুমের দিকে যাওয়ার সময় সান, নিরব ইশফার সামনে পরলো।নিরব ইসফাকে দেখে মুখের মধ্যে বড় একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল…..
—হাই ।কেমন আছো তুমি?
ইশফাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। আপনি?
নিরবঃএইতো বেশ যাচ্ছে দিনকাল।
সান ইশফার সামনে দাড়িয়ে এদিন ওদিক তাকাচ্ছে।ইশফাকে এতোদিন পর সামনা-সামনি দেখে কথা বলার লোভটা আটকাটে পারছে না।কিন্তু ভিতরে সেদিনের ব্যপারটা নিয়ে একটা জরতা কাজ করছে।
ইশফা ব্যাগ থেকে একটা সানগ্লাস বের করে সানের সামনে ধরে বলল…..
—এটা আপনার।সেদিন বাড়িতে ফেলে চলে এসেছিলেন।
সানগ্লাসটা সান কাপাকাপা হাতে ধরে মুখে জোর পূর্বক একটু হাসি টেনে বলল…..
—ধন্যবাদ।
ইশফা সান এর এমন ভিতু ফেস দেখে মনে মনে হাসতে লাগলো।
নিরবঃবলতে হবে তোমার খুব সাহস আছে।যার সাথে প্রথম দিন কথা বলার সময় কাদো কাদো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো তাকে মারার জন্যই তার কাছে ব্যাট,স্টেম্প ধার চাচ্ছিলে।ও মাই গড ভাবা যায় এসব।তা কি বলো,ব্যাট,স্টেম্প জোগাড় করে দিব।তুমি চাইলে আমি কিন্তু দু’টোই জোগাড় করতে পারি।
ইশফাঃলাগবে না।দরকার পরলে আমিই জোগাড় করে নিতে পারবো।আসি।
কথাটা বলে ইশফা সামনে দু’কদম বাড়ানোর পর সান পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল…..
—ইশফা শোন……
ইশফা ঘুড়ে সান এর দিকে তাকিয়ে বলল…..
—কিছু বলবেন ভাইয়া?
ইশফার মুখে ভাইয়া সুনে সান তার রুপে ফিরে আসলো।রাগি গলায় বলল…..
—এই এতো ভাইয়া,ভাইয়া করো কেন?আমি তোমার কোন কালের ভাইয়া হই।একটু সাইয়া,সাইয়া করলেও তো পারো।(শেষের কথাটা সান আস্তে করে বিরবির করে বলল)
ইশফা সানের শেষের কথাটা বুঝতে না পেরে সানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।
সানঃতোমার সাথে কিছু কথা আছে।
ইশফাঃজ্বি বলুন।
সানঃসেদিনের ব্যপারটা নিয়ে তুশিকে কিছু বলো না।ও এমনিতে অনেক ভয়ে রয়েছে।যা হয়েছে তাতে তুশির কোন দোষ নেই।আমিই তুশিকে ব্ল্যাকমেইল করে তুশির সাথে গিয়েছিলাম।
ইশফাঃএতো কষ্ট করে ছদ্মবেশে না গেলেও পারতেন।
সানঃযাওয়ার কারন তোমার কাছে অজানা নয়।তারপেরও যদি তুমি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করো তাহলে কিছু করার নেই।তুমি খুব বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে।কারো মনের কথা না বুঝলেও, চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে।না কোন অন্যায় আবদার করবো আর না অন্যায় সইবো।আমি ভালো কিন্তু আমার রাগ অনেক খারাপ।যা আমার তা কিভাবে আমার করে রাখতে হয় তা আমি খুব ভালো করে জানি।
কথাটা বলেই সান চলে যেতে লাগলো।কয়েক কদম সামনে হেটে যাওয়ার পর পিছন দিকে ঘুড়ে বলল…..
“মুখের কথা মিথ্যে হতে পারে”
“কিন্তু চোখের নয়।”
কথাটা বলে সান আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সেখান থেকে গটগট করে হেটে চলে গেলো।আর ইশফা সান এর যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।এতোক্ষন সানের সব কথা ইশফার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু সান যে সান্ত ভাবে ইশফাকে ছোটখাট একটা ওয়ার্ণিং দিয়ে গেলো সেটা ইশফার মাথায় ঠিকই ঢুকেছে।
💦💦💦💦💦💦
ইশফাকে দেখে রিধি ঝাপিয়ে পরলো ইশফার উপর।ইশফাকে টাইট করে জরিয়ে ধরে বলল…..
—ইফু….কেমন আছিস তুই?পায়ের ব্যাথা কমেছে?জানিস কত মিস করেছি তোকে?আই মিস ইউ ইফু…….
ইশফাঃবোইন আমি চ্যাপটা হয়ে যাচ্ছি।আগে ছাড় আমায়।তার পরে তোর উওর দিচ্ছি।
রিধি ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে বলল……
—বল এবার কেমন আছিস?
ইশফাঃআছি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।পা দুদিন আগেই ভালো হয়ে গেছে।তার পরেও বাবা ভার্সিটিতে এ দুদিন আসতে দেয়নি।
রিধিঃযাক ভালো হলেই আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তোকে অনেকদিন পর পেয়েছি।তোর সাথে বলার জন্য অনেক কথা পেটে জমে আছে।তাই আজ কোন ক্লাশ হবে না।আজ শুধু ঘুরাঘুরি।
তুশি রিধির মাথায় গাট্টা মেরে বলল…….
—মাথা ঠিক আছে তোর?দুদিন আগে পা ভালো হয়েছে।এ পা নিয়ে বেশি হাটাচলা করলে পরে পা ব্যাথা করবে না।
রিধি তুশির কথা সুনে জিভে কামড় দিয়ে বলল…..
—তাইতো।আমি তো অতোটা ভেবে বলিনি।যা ঘুরাঘুরি বাদ।পেট পুরে খাওয়া-দাওয়া তো করতে পারবো।
তুশিঃপেটুপুরে খেতে খেতে একদিন দেখবি তোর টামি ফেটে গেছে।
রিধিঃএকদম আমার খাবার নিয়ে কথা বলবি না।আই লাভ খাবার।
ইশফাকে অন্য মন্যস্ক দেখে তুশি কাদো কাদো ফেস করে বলল…….
—ইফু তুই কি এখনো আমার উপর রেগে আছিস?
ইশফার মাথায় এতোক্ষন পযর্ন্ত সান এর কথাই ঘুরঘুর করছিলো।তুশির কথায় ইশফা চোখ রাঙিয়ে বলল…..
—তোর কি মনে হয় তোরে আমি এমনে এমনে ছাইরা দিমু।কিছুই ভুলি নাই আমি।সব সুদে আসলে উসুল করুম।
রিধি সন্দেহর চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল…..
— কি হয়েছে রে তোদের?তোদের কথায় আমি কেমন যেন রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি।
ইশফাঃতোকে সব পরে বলব।এখন কথা না বাড়িয়ে আমার কথা শোন।খাওয়া-দাওয়া,ঘুরাঘুরি সব হবে।কিন্তু আজ না পরে।আজ এমনিতেই অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এসেছি।এভাবেই অনেক ক্লাশ মিস হয়েছে।
ইশফার কথার উপরে কেউ আর অন্য কোন কথা বললো না।কেননা ওর দুজন ভালো করেই জানে ইশফা পড়াশুনা নিয়ে কতটা সিরিয়াস।
💦💦💦💦💦💦
মাঠের এক কোনে ইশফা,তুশি,রিধি বসে আছে।তুশির মুখে সব শোনার পর রিধি মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর রিধি আসফোসের সুরে বলল……
—এতোকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানলাম না।
ইশফাঃআগে জানালে তোর এই চেহারাটা দেখতাম কেমনে।
তুশিঃরিধু তুই সুইন্নাই এমন করতাছোস।বোঝ এবার আমার কি হাল হয়েছিলো।আমি তো সামনে ছিলাম।
রিধিঃসব ঠিক আছে কিন্তু ইফু তুই বুঝলি কেমনে ঐইটা সান ভাইয়া ছিলো।
ইশফাঃতার হাতে একটা পোড়া দাগ আছে।যেটা আমি আমার পায়ে ম্যাসেজ করে দেওয়ার সময় লক্ষ করছিলাম। তুশরে আমতা আমতা করতে দেখে বাব বার হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছিল।কন্ঠ সুনে আমার প্রথমেই কেমন সন্দেহ হইছিলো হাতের পোড়া দাগ দেখে সিউর হয়ে গেছি।
রিধিঃবলতে হবে ইফু তোর বুদ্ধি আছে।
ইশফা ভাব নিয়ে বলল……
—আই নো।
তুশিঃভাব পরে নাও।এখন ক্লাশে চল।ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে।
রিধিঃমাত্রই না আসলাম।এতো তাড়াতাড়ি টাইম শেষ হলো কিভাবে?
ইশফাঃবকবক করার সময় তোর আবার টাইমের খবর থাকে নি।চুপচাপ এবার উঠ।ক্লাশে যেতে হবে।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা ভার্সিটি থেকে বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো।ইশফা ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল……
—বাহ্ ভালোই তো আজ-কাল প্রপোজ পাওয়া হচ্ছে।আবার বাড়িতে এসেও নাকি খবর নেওয়া হচ্ছে।তা আমার কথা কি ভুলে গেছো?বলেছিলাম না,সান এর থেকে দূরে থাকবে।সান কোন সাহসে তোমার বাড়িতে এসে তোমার সাথে দেখা করে ?আর তুমি ওকে কেন কিছু বলোনি?তোমার বাড়িতে আসার পর ওকে বিনা অপমানে কিভাবে তুমি যেতে দিলে?
অপর পাশের লোকটার গম্ভীর কথা সুনে ইশফার চিনতে একটুও ভুল হয়নি লোকটা কে।ইশফা লোকটার কথা সুনে রাগে রি-রি করছে।ইশফা রাগি গলায় বলল…….
—আমি কি করবো না করবো সেটা আমার ব্যাপার।বাড়িতে মেহমান আসলে তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় তা আমার বাবা,মা আমাকে শিখিয়েছে।আপনার কাছ থেকে আমাকে শিখতে হবে না।আর আমার যার সাথে ইচ্ছে দেখা করবো কথা বলবো।তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?
— তুমি আবার ঐ সানের প্রেমে পরে যাওনি তো?সানের জন্য এতো দরদ দেখাচ্ছো কেন?
—আপনার মত ফালতু লোকের সাথে কথা বলার সময় আমার নেই।
কথাটা বলেই ইশফা কল কেটে দিয়ে বেডের উপর তার ফোন ছুড়ে মারলো।রাগে তার হাত-পা কাপছে।ইশফা ভেবে পায়না কে এই লোক?কিভাবে ওর সব খবরা-খবর পেয়ে যায়?
#চলবে,
(বানান ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)