মনের মতো তুই পর্ব-০১

0
730

#মনের_মতো_তুই
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা মনি

১.
রাতে রোম্যান্টিক গল্প পড়ে ঘুমানোর পর অনেক সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।স্বপ্নে এক রাজপুত্র পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আমার কাছে আসছে।আমার কাছে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।আমি তার হাত ধরতে যাব তার আগেই এলার্মের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল।

আমি হিয়া খানম।অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়াশোনা করছি।ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করে একটু লুডুলস করে খেয়ে নিলাম।তারপর বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে।আমার হোস্টেল থেকে ভার্সিটি বেশি দূরে নয় তাই হেটে হেটেই যাচ্ছিলাম।

রাস্তায় হঠাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে আমার গায়ে কাদা ছিটিয়ে দিয়ে গেল।আমি তো রেগেমেগে বলে দিলাম,
‘চোখে দেখতে পাননা? দিলেন তো আমার নতুন ড্রেসটা নষ্ট করে।এখন আমি কিভাবে এই ড্রেস পড়ে ভার্সিটি যাব?’

আমার কথা বোধহয় গাড়ির ড্রাইভার শুনতে পেল।তাই গাড়ি থামালো।আমি তো ভয়ে থরথর করে কাপতে লাগলাম।না জানি ড্রাইভার আমাকে কত কথা শোনাবে।

আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে গাড়ি থেকে নেমে এলো এক সুদর্শন যুবক।বয়স ২৫ হবে, দেখতে মাশাল্লাহ।গায়ের রং ফর্সা, উচ্চতায় ৫ ফিট ৮ ইঞ্চি হবে, সাথে বলিষ্ঠ দেহ।প্রথম দেখাতেই তো আমি পুরো ফিদা হয়ে গেলাম।একটু আগেই যে লোকটাকে এত কথা শোনালাম সেসব আর আমার মনেই নেই।

লোক বলব না উনি তো একজন রাজপুত্র, আমার স্বপ্নের রাজপুত্র।উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর ভ্রু কুচকে বললেন,
‘আপনি রাস্তায় দেখে চলতে পারেন না? আমি অন্ধ হলে আপনি কি?’

আমি ঝটপট উত্তর দিয়ে দিলাম,
‘ আসলে আ’ম সরি।দোষ তো আমারই।আমার দেখে চলা উচিৎ ছিল।আপনি কিছু মনে করবেন না আসলে আমার নতুন ড্রেস,,,’

রাজপুত্র আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা নরম সুরে বলে,
‘আচ্ছা চলুন আমার সাথে।আমি আপনাকে নতুন ড্রেস কিনে দিচ্ছি।’

আমি ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম,
‘না, না তার কোন দরকার নেই।আমি ড্রেস চেঞ্জ করে নেব।’

রাজপুত্র এবার আমাকে কিছুটা জোরাজুরি করতে থাকে।কারণ সে নাকি কারো ক্ষতি করলে তাকে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ছাড়েনা।আর আমিও তো রাজপুত্রর সাথে থাকার কোন সুযোগ মিস করতে চাইনা।২০ বছরের জীবনে এতদিনে আমার মনের মতো কাউকে দেখেছি।তাই আর বেশি কথা না বাড়িয়ে রাজপুত্রর গাড়িতে উঠে বসলাম।

গাড়িটা বেশ দামী মনে হচ্ছে।আমি দেখলাম উনি খুব সুন্দরভাবে গাড়ি ড্রাইভ করছে।পাশে যে একটা সুন্দরী মেয়ে বসে আছে তার দিকে কোন নজরই নেই।বুঝলাম আমার রাজপুত্র খুবই ভদ্র মানুষ।

পাশেই একটা শপিং মলের সামনে উনি গাড়িটা থামালেন।তারপর আমায় নামতে বললেন।আমি সিট বেল্ট খুলতে পারছিলাম না তখন উনিই আমার সিটবেল্টটা খুলে দিতে সাহায্য করলেন।আমার হার্টবিট তো খুবই বেড়ে গেল।জানি না উনি কি আমার মতো ফিল করছেন নাকি করছেন না।

আমি আর এসব ভাবনাকে পাত্তা দিলাম না।ওনার সাথে শপিং মলে ঢুকে পড়লাম।উনি আমাকে পছন্দমতো একটা ড্রেস কিনতে বললেন।শপিংমলে অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রেস ছিল।কিন্তু আমার কেন জানিনা পছন্দই হচ্ছিল না।আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল যে, উনি যেন নিজে পছন্দ করে আমায় কোন ড্রেস কিনে দেন।

আমার ইচ্ছেটা বোধহয় উনি বুঝতে পারলেন।তাই এগিয়ে এসে একটা ড্রেস আমায় দেখিয়ে বলে,
‘এটা বোধহয় আপনাকে ভালো মানাবে।’

আমার রাজপুত্রের পছন্দ সত্যিই বেশ ভালো।ড্রেসটা দেখেই আমার ভালো লেগে যায়।ট্রায়াল রুমে গিয়ে পড়ে দেখি খুব ভালো মানিয়েছে।কিন্তু ড্রেসটার প্রাইজ দেখে আমার চোখ কপালে উঠে যায়! ২৫ হাজার টাকা! এত দাম।আমার ড্রেসটার দাম ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা।আর এই ড্রেসের বদলে কিনা আমি ২৫ হাজার টাকা ড্রেস নেব।

আমি মন খারাপ করে বাইরে এসে বলি,
‘ড্রেসটা আমায় মানায় নি।আমি অন্য একটা ড্রেস দেখি।’

বলেই কমদামি একটা ড্রেস খুঁজতে থাকি।উনি বোধহয় এবারও আমার মনের কথা বুঝে গেছেন।তাই আমাকে বললেন,
‘ড্রেসটা কিন্তু আপনায় ভালোই মানাতো।দাম নিয়ে কোন চিন্তা নেই।আপনি ড্রেসটা নিলে ভালো লাগত।’

ওনার কথা শুনে আমার একটু খারাপ লাগল।আমার উপর বোধহয় রাগ করেছেন।তাই আমি ওনার মন রাখতে ঐ ড্রেসটাই নিয়ে নিলাম।রাজপুত্রর মন কি করে খারাপ হতে দেই আমি?

উনি বিল পে করে বাইরে চলে এলেন।বাইরে এসে আমায় বললেন,
‘আমি কি আপনাকে পৌঁছে দেব।’

আমি বললাম,
‘ধন্যবাদ।তবে আমি একাই যেতে পারব।’

আমার কথাটা শুনে উনি আর অপেক্ষা না করে গাড়িটা নিয়ে আমার সামনে দিয়ে চলে গেলেন।বোধহয় খুব তাড়ায় আছেন।নিজের উপরেই খুব রাগ হচ্ছে।কি দরকার ছিল এতটা ভদ্র‍তা দেখানোর? আর যদি কখনো রাজপুত্রর সাথে দেখা না হয়।এতদিনে মনের মতো কোন ছেলেকে পেলাম।কিন্তু তার নাম,ঠিকানা কিছুই জানতে পারলাম না।এই এত বড় শহরে কিভাবে খুঁজে পাব তাকে? আর যদি কোনদিন ওনাকে দেখতে না পাই।সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম রাজপুত্রকে না পেলে আজীবন কুমারী থাকব।

২.
আমি ভার্সিটির গেইটে ঢুকতেই পিছন থেকে কেউ আমার চোখ হাত দিয়ে ঢেকে ধরল।অন্য সময় হলে হয়তো আমি খুব রাগ করতাম।কিন্তু আজ আমি আমার রাজপুত্রকে খুঁজে পেয়েছি।তাই আর রাগ করলাম না।আমি বললাম,
‘লিলি ছাড় আমায়।’

লিলি আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে বলে,
‘তুই কিভাবে বুঝলি এটা আমি?’

আমি ব্যাঙ্গ করে বললাম,
‘এই কলেজে এরকম আজাইরা কাজ তুই ছাড়া আর কেই বা করতে পারে।’

লিলি রাগ করে বলল,
‘তাই আমি আজাইরা কাজ করি।যা আর কোনদিন তোর সাথে কথা বলব না।শা**লী নিজে তো সিঙ্গেল আর আমাকেও জীবনে প্রেম করতে দিলি না।তোর পেছনে ঘুরে আমার জীবনটাই লস হয়ে গেল।’

আমিও ভাব দেখিয়ে বললাম,
‘তোকে আমার পিছনে ঘুরতে বলেছে কে? তোকে এখন আর আমার সাথে ঘুরতে হবে না।আমি আমার মনের মানুষটাকে মানে আমার রাজপুত্রকে খুঁজে পেয়েছি।’

লিলি খুব উৎসাহ নিয়ে বলে,
‘কি বললি দোস্ত? আমি কি ঠিক শুনলাম? তোর কাউকে পছন্দ হয়েছে।আমি তো ভেবেছিলাম তুই নিজে চিরকুমারী হবি আর আমাকেও চিরকুমারী বানাবি।ভালোই হলো এবার তোকে তোর মনের মানুষের হাতে তুলে দিয়ে আমিও নিজের মনের মানুষ খুঁজে দেব।তা তোর মনের মানুষটার নাম কি?’

আমি বললাম,’জানি না।’

লিলি আবার বলল, ‘ফোন নম্বর কিংবা ঠিকানা।’

আমি হতাশ হয়ে বললাম,’এগুলোও জানিনা।’

লিলি এবার রেগে আমায় বলে,
‘ফাজলামী করো মামনী? কিছুই যখন জানোনা তখন জানোটা কি? প্রেম করবে অথচ নিজের উডবি প্রেমিকের সম্পর্কে কিচ্ছু জানোনা? তোমার দ্বারা পড়াশোনাই হবে প্রেম আর হবে না।সারাদিন বসে বসে রোম্যান্টিক গল্প পড়লে এমনই হবে।এখন তুমি কি ভাবছ গল্পের নায়ক নায়িকার মতো তোমাদের আবার কোনভাবে দেখা হবে? এসব স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর।আমাকে আগে পুরো ঘটনাটা বল তো ছেলেটা কে আর কিভাবে তোর সাথে পরিচয় হলো।’

আমি এবার লিলিটা পুরো ঘটনা খুলে বলি।লিলি আমার সব কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘আমার সব বোঝা হয়ে গেছে।তুই চিরকুমারীই থাকবি আর আমাকেও চিরকুমারী করে রাখবি।বেটি এত বড় শহরে কোথায় খুঁজে পাবি ছেলেটাকে? তোর কপালে রাজপুত্র নেই।শেষে দেখবি তোর মা-বাবার পছন্দমতো কোন টাকলা বুড়োকে বিয়ে করতে হবে।’

লিলির কথা শুনে আমি ভীষণ রেগে গেলাম।তারপর বললাম,
‘যদি ভাগ্যে থাকে আমাদের আবার দেখা হবে দেখে নিস।’

লিলি আর কিছু বলল না।শুধু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসল।হয়তো আমায় পাগল ভাবছে।কিন্তু আমি ওর ভাবনাকে পাত্তা দিলাম না।আমার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছিল রাজপুত্র আমারই হবে।

একটু এগিয়ে যেতেই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,,,
চলবে…..?