মরুর বুকে বৃষ্টি ২ পর্ব-০২

0
304

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-২
®মেহরুমা নূর

★আদিত্য রেডি হয়ে এলো ব্রেকফাস্টের জন্য।বিহান আগে থেকেই ছিলো টেবিলে। আদিত্য বসতেই জমিলা তার খাবার সার্ভ করে দিলো। জমিলাকে দেখে আদিত্যর কেন যেন ওই মেয়েটার কথা মনে পড়ল। আবারও মেয়ে! চরম অস্বস্তি হচ্ছে আদিত্যর। মেয়েটার নাম কি! সেটা জানার ইচ্ছে জাগলেও তা কাউকে জিজ্ঞেস করবে কিভাবে সে। ভীষণ ইতস্তত ফিল করছে এইটুকু বিষয় জানতেও। আদিত্য আরচোখে রান্নাঘরের দিকে তাকালো। ভাবছে হয়তো জমিলার সাথে রান্নাঘরেও থাকতে পারে। কিন্তু দেখা গেলনা তাকে। মেজাজ টা আবারও অকারণেই বিগড়ে যাচ্ছে কেন যেন। তার অন্যমনস্কের মাঝেই পাশ থেকে বিহান বলে উঠল,
“কিরে খাইতাছস না ক্যালা? দেরি ওইয়া যাইতাচেনা! আজ ওই আদিল গ্রুপের একটা ফয়সালা করনই লাগবো বুঝছস! হালার পুতেরা বড্ড বাড় বাড়ছে। আমগো মাল ইম্পোর্ট করতে খালি ঝামেলা করতাচে।”
আদিত্য কাটা চামচে স্যালাড গেঁথে মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে স্বাভাবিক সুরে বলল,
“এখন সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর এমন দিন এসেছে যে ওই চুনোপুঁটির সাথে নিজের এনার্জি লস করবে! ওরজন্য আমার লোকগুলোই যথেষ্ট। বলে দিস শুধু একবার কথা বলবে। না মানলে জনপ্রতি একটা করে গুলি বরাদ্দ, সিম্পল।”
“আইচ্চা, আজই ওর কেল্লাফতে করতাছি।”
বিহান এবার জমিলার উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাবি কেমন আছে খালা? বাড়িতে কথা বলবে নাকি? ফোন দিবো?”
জমিলা বলল,
“আজ সকাল থেকে আর বাড়ির কথা কিছু বলেনি এখনো বউমনি। বললে জানাবনে আপনাকে।”
এদের কথপোকথন শুনে আদিত্যর অস্বস্তি আর রাগের একটা অদ্ভুত সংমিশ্রণ হলো। কেন, কি হচ্ছে তা বুঝতে পারল না সে। শুধু বারবার একটা কথাই মাথায় ঘুরছে বিহান মেয়েটার ভালো মন্দের খেয়াল রাখে। আর ও একই বাড়িতে থেকেও তার নামও জানে না। বিষয় টা কেমন যেন হজম হচ্ছে না তার। বিহান তখন আবারও জিজ্ঞেস করল,
“ভাবি খাবার খাইছে?”
জমিলা জবাবে বলল,
“না এখনো খায়নি। আপনাদের খাওয়া হলে বউমনির জন্য খাবার নিয়ে যাবো রুমে।”
এপর্যায়ে আদিত্য হঠাৎ কি মনে করে একটু কড়া সুর করে বলে উঠল,
“এক মিনিট! এখানে আমি টেবিলে বসে খাচ্ছি। আর সে কোন দেশের মহারাণী যে তাকে রুমে খাবার বয়ে নিয়ে দিতে হবে! খেলে এখানে এসে খাবে নাহলে খাওয়ার দরকার নেই। না খেয়ে থাক।”
আদিত্যের কথায় জমিলা আর বিহান দুজনেই হালকা অবাক হলো। জমিলা বলল,
“কিন্তু আপনিইতো বলেছিলেন আপনার সামনে না আনতে।”
আদিত্য গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ তো! সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু এই বাড়িতে কেউ আমার রুল ভাঙবে সেটাও আমার পছন্দ না। খাবার খেলে সঠিক স্থানেই খেতে হবে। নাহলে না।”
বিহান যেন বন্ধুর ব্যাপার কিছুটা আচ করতে পারলো। সে জমিলার উদ্দেশ্যে বলল,
“হ হাচাইতো কইচে আদি। যান ভাবিরে লইয়া আসেন অহনি। এইহানে বসে খাবার খাইব।”
জমিলা মাথা নেড়ে বলল,
“ঠিক আছে নিয়ে আসছি।”
জমিলা যেতেই আদিত্য বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“কি ভাবি ভাবি লাগিয়ে রেখেছিস! নাম ধরে বলতে পারিসনা! নাম নেই তার!”
“আরে তুইও আজিব কথা কস মাইরি। ভাবিরে ভাবি কমুনাতো কি মাওই কমু!”
“এসব আমার ইরিটেটিং লাগে। এমনিতেও তোর ছোট বয়সে। নাম ধরে ডাক। নাকি নাম নেই কোনো!”
“নাম থাকবোনা ক্যালা! তোর বউ আর আমার ভাবির সুন্দর একটা নাম আছে। তার নাম হলো, নূর।”

“নূর”… নামটা যেন ধ্বনিত হতে লাগলো আদিত্যর কর্ণগুহে। ঠিক তখনই জমিলা নূরকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামল। নিচে নামতেই টেবিলে আদিত্যকে দেখে ভয়ে আবারও জমিলার পেছনে লুকিয়ে গেল নূর। জমিলা তাকে আস্বস্ত করে বলল,
“ভয় নেই বউমনি, কেউ কিছু বলবে না।সবাই খেতে ডেকেছে আপনাকে। আসেন আমার সাথে।”
নূর তবুও জমিলার বাহু ধরেই তার সাথে চেপে রইলো। জমিলা তাকে নিয়ে টেবিলের সামনে এলো।সে মাথা নিচু করে জমিলাকে ধরেই দাঁড়িয়ে রইলো। যেন আদিত্যের দিকে তাকাতেও ভয় পাচ্ছে সে। আদিত্য আরচোখে তাকিয়ে দেখে নিলো নূরকে। আবারও ভয় পাচ্ছে তাকে মেয়েটা। রাগ বাড়ছে আদিত্যর। আদিত্যর ত্রাস জনসাধারণের মাঝে ভয়াবহ। সেটা আদিত্য এনজয় করে। কিন্তু এই মেয়েটার তাকে ভয় পাওয়াটা পছন্দ হচ্ছে না তার। রাগ হচ্ছে বারবার। জমিলা নূরের হাত ছাড়িয়ে বলল,
“খেতে বসেন বউমনি।”
নূর হঠাৎ টেবিলের কাছ থেকে সরে গিয়ে কিছুটা দূরে মেঝেতে পা ভাজ করে বসে পড়ল। বসে বলল,
“এইযে বসেছি।”
আদিত্যর চোয়াল শক্ত হতে দেখা গেল। ভাবছে হয়তো নূর তার জন্যই এমন করছে। বিহান তখন বলল,
“আরে ভাবি ওখানে বসছেন কেন? চেয়ারে বসুন। আমাদের সাথে টেবিলে খান।”
নূর সরল ভঙ্গিতে বলল,
“আমিতো টেবিলে খেতে পারি না। মা বলে আমি টেবিল নষ্ট করে ফেলি। তাই আমি সবসময় নিচেই খাই।”
জমিলা প্লেটে খাবার বেড়ে নূরের সামনে নিয়ে এনে দিলো। খাবারের প্লেট দেখে নূর হঠাৎ জমিলার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“আরে ভালো প্লেট দিয়েছেন কেন? আমাকে কারোর এঁটো প্লেট দিন।”
নূরের এমন কথায় সবাই হালকা অবাক হলো। বিহান বলল,
“আরে ভাবি, আপনি এঁটো কেন খেতে যাবেন! ভালো প্লেটেইতো খাবেন।”
নূর তখন জানাল,
“নাতো,আমিতো সবসময় এঁটো প্লেটেই খাই। আমার মা,বোনেরা বলে আমি নাকি ভালো প্লেট দিলে খাবার নষ্ট করে ফেলি। খেতে পারি না। তাই আমাকে সবসময় কারোর এঁটো প্লেটই দেয়।”
মুখের সামনে আনা খাবারের চামচটা নূরের ওমন কথা কানে আসতেই তৎক্ষণাৎই থেমে গেল আদিত্যের। হঠাৎ যেন চটাস করে কোথাও কিছু লাগল তার। গলার খাবারটাও যেন হঠাৎ আঁটকে গেল গলার মাঝে। মুখয়বে অদ্ভুত এক কালো আভা ছেয়ে গেল মুহুর্তেই। নূরের কথা শুনে বিহানেরও একটু খারাপ লাগল। অবুঝ মেয়েটাকে যে ওর বাড়ির সবাই প্রচুর অবহেলায় ফেলে রাখতো তা বোঝা যাচ্ছে। বিহান জোরপূর্বক হেঁসে বলল,
“এইহানে নষ্ট করলেও কেউ কিছু কইবো না ভাবি। এবাড়িতো আপনারই। যতো খুশি নষ্ট করুন কোনো সমচ্যা নাইক্কা।”
বিহানের কথায় নূর যেন খুশি হলো। সে ঘাড় কাত করে বাচ্চাদের মতো বলল,
“আচ্ছা।”
তবে আদিত্য আর খেতে পারল না। সে হাতের চামচটা প্লেটের উপর রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। একবার তাকালো মেঝেতে বসে থাকা নূরকে।পরপরই দ্রুত পায়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল সে।
__

নূরের ভীষণ একা একা লাগছে। গ্রামে থাকতে সে কি সুন্দর সবার সাথে খেলে বেড়াতো। আমবাগান আর পুকুর পাড়ে বাচ্চাদের সাথে খেলতো। কিন্তু এখানে কোনো খেলার সাথীই নেই ওর। কার সাথে খেলবে নূর! নূর রান্নাঘরে জমিলার সাথে বসে আছে। জমিলা তার এমন মলিন মুখ দেখে বলল,
“কি হয়েছে বউমনি? মন খারাপ? মা বাবার কথা মনে পড়ছে?”
নূর ঠোঁট উল্টে বলল,
“আমার খেলার সাথীদের কথা মনে পড়ছে। আমার খুব খেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কার সাথে খেলব? কেউ নেই খেলার সাথী। তুমি একটু খেলোনা আমার সাথে। ”
জমিলা বলল,
“আমি কিভাবে খেলব বউমনি? বুড়ি মহিলারা কি খেলে!”
নূরের মুখটা তখন কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। জমিলার খুব মায়া লাগল। এই দুদিনেই মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে তার। একেবারে নিস্পাপ শিশুর মতো মেয়েটা। জমিলা কিছু একটা ভেবে বলল,
“আচ্ছা আপনি মন খারাপ কইরেন না। আসেন আমার সাথে। আমি আপনার খেলার সাথী জোগাড় করে দিচ্ছি।”
নূর তৎক্ষনাৎই খুশি হয়ে বলল,
“সত্যিই! ইয়েএএ.. তুমি অনেক ভালো।”

জমিলা নূরকে সাথে করে বাসার বাইরের লনে নিয়ে এলো। বাসার অন্যান্য সব সার্ভেন্ট আর বাসার গেটের দুই দিকে লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিকিউরিটি গার্ডদের ডাকল জমিলা। সবাই আসলে জমিলা তাদের বলল,
“শোন সবাই, তোমরাতো নিশ্চয় জানোই বউমনি কে। তোমাদের স্যারের বউ। তাই তাকে খুশি রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। তো বউমনির খেলতে ইচ্ছে হয়েছে। তো সবাই এখন বউমনির সাথে খেল। নাহলে কিন্তু সে রাগ হয়ে তোমাদের স্যারের কাছে বিচার দিবে।”
সবাই জমিলার কথায় ভয় পেয়ে তার কথা চুপচাপ মেনে নিলো। জমিলা নূরকে ওদের সাথে খেলতে দিয়ে নিজে ভেতরে রান্নার কাজে চলে গেল। নূরতো ভীষণ খুশি। সে খেলার মানুষ পেয়ে গেছে এখন মজা করে খেলবে। নূর সবার প্রথমে কানামাছি খেলতে চাইলো। বাসার এক ফিমেল সার্ভেন্ট উষার চোখ বেঁধে দিলো তারপর চারিদিকে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিলো।উষা হাত বাড়িয়ে সবাইকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে আর কেউ তাকে ধরা দিতে চাচ্ছে না। নূর এদিক ওদিক থেকে তাকে চিমটি কেটে সরে যাচ্ছে।উষা একবার বাসার এক অন্য সার্ভেন্ট জমিরকে জাপ্টে ধরল। জমিরতো হেব্বি খুশিতে গদগদ করছে। উষা চোখ থেকে পট্টি সরিয়ে যখন দেখলো জমির তখন চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“জমিরর‍্যা তুই! সর এখান থেকে।”
জমির দুপাটি দাঁত কেলিয়ে কেবলা হাসি দিয়ে বলল,
“ছাড়লি ক্যা? আরও ধইরা থাক না। আমারতো ফাইন শুরশুরি লাগছিলো। আমারতো খেলাডা হেব্বি ভালো লাগতাছে।”
“যা সর লুইচ্চা। খালি গায়ে পড়ার ধান্দায় ঘোরোস।”
নূর ওদের কাছে এসে বলল
“এবার এই কোদালে দাঁত ওয়ালা লোকটার পালা। ওর চোখ বাঁধো।”
বেচারা জমির অনেক কষ্টে মুখের চামড়া টেনে তার দাঁতগুলো ঢাকার চেষ্টা চালালো। বেইজ্জত খারাপ হয়ে গেল তার যেন। উষা এবার জমিরের চোখ বেঁধে দিলো। জমির দুই হাত সামনে বাড়িয়ে হাতাতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,
“এই উষা, কই তুই। আয়না তোরে একটু ধরি। ধরাধরি শোধবোধ হইয়া যাইবো তাইলে।”
উষা মুখ ভেঙ্গিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। আর জমির তাকে ধরতে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় সে সুইমিং পুলের পাশে পৌঁছে গেল। আর দুষ্টু নূর হঠাৎ তখন জমিরকে ধাক্কা দিয়ে সামনের পুলের পানিতে দিলো। জমির বেচারা ঝপ পড়লো পানির মাঝে। তা দেখে খিলখিল হেঁসে উঠল নূর। হাতে তালি বাজাচ্ছে আর লাফিয়ে লাফিয়ে প্রফুল্লচিত্তে হাসছে সে। সাথে বাকিরাও হাসছে জমিরের অবস্থা দেখে।

আদিত্য অফিসের কেবিনে বসে কাজ করছিল।টেবিলে কিছু পেপার চেক করছিল সে। কাজের মাঝেই হঠাৎ আনমনেই তার নজর গেল সামনের সিসিটিভি স্কিনে। বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার লাইভ চলছে সেখানে।গ্যাংস্টার হওয়ায় আদিত্যর শত্রুর অভাব নেই। তাই সেফটির কারণে বাসার সব কোণায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আর সেটার রেকর্ডিং স্কিন আদিত্য কেবিনের টেবিলের পাশেই থাকে। সেটাতেই হঠাৎ নজর গেল আদিত্যর। দেখতে পেল তৎক্ষনাৎ নূরের কান্ড। জমিরকে কিভাবে পানিতে ফেলে সে খুশিমনে হাসছে সে। ওই প্রাণবন্ত হাসিটাতে আবারও আঁটকে গেল আদিত্যর দৃষ্টির সীমারেখা। থমকিত নয়নের শিরায় শিরায় ছেয়ে গেল ওই হাসিমাখা মুখখানি। আদিত্য আনমনেই স্কিনের আরও কাছে এগিয়ে গেল। জুম করে নূরের মুখখানা আরও সামনো আনলো। দেখতে পেল তখন তারা ঝিলমিল ওই আঁখি যুগল। ওই চোখে নেই কোনো অকৃত্রিম পর্দা। কেবলই স্বচ্ছ, নিস্পাপ ঝর্ণাধারা।নিজের অজান্তেই আদিত্যর হাত গেল সিসিটিভির স্কিনে নূরের উচ্ছ্বসিত মুখটার উপর। কিন্তু হাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। হঠাৎ এই জিনিসটা তার মোটেও ভালো লাগল না। ওই হাসির রিনিঝিনি সুর শুনতে না পারাই যেন রাগ হচ্ছে তার। সে কি মনে করে হঠাৎ বিহানকে ডেকে পাঠাল। বিহান আসতেই আদিত্য বলে উঠল,
“শোন, আজই আমার বাসায় সিসিটিভির সাথে সাউন্ড রেকর্ডিং সিস্টেমও লাগাবি।”
“কেন? হঠাৎ এই খেয়াল আইলো ক্যালা?”
“এমনি। তোকে যা বললাম তুই তাই কর যা।”
বিহান যেতেই আদিত্য আবার তাকালো স্কিনের দিকে। দুষ্টু নূর ততক্ষণে আরেক কান্ড শুরু করেছে। সে হঠাৎ গিয়ে লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড গুলোর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। আর সবার পেছনের গার্ডটাকে ধাক্কা মারলো। বেচারা গার্ড হুমড়ি খেয়ে সামনের দিকে পড়তে গিয়ে আরেক জনের গায়ে ধাক্কা লাগল। এভাবে একে একে সবগুলো গার্ড ধপধপ করে নিচে পড়তে লাগল। তা দেখে নূর আরও খুশি হয়ে আবারও হাসতে লাগল। নূরের কান্ড দেখে অজান্তেই আদিত্যর ঠোঁটেও হাসির রেখা ফুটল।হাসলো নূরের কান্ড দেখে। নিজের উপর হঠাৎ নিজেই চরম অবাক হলো আদিত্য। সে হাসছে! সত্যি হাসছে সে! সে শেষ কবে এভাবে মুচকি হেঁসেছে তার নিজেরও মনে নেই। তাহলে আজ কি হয়ে গেল তার! অন্য সময় হলেতো তার এসব কান্ড কারখানা দেখে ভীষণ রাগ হতো। তাহলে আজ কেন রাগের পরিবর্তে হাসি পাচ্ছে তার! কারণটা কি ওই মেয়েটা!
__

রাতে বাসায় ফিরে রোজকার মতোই সোজা নিজের রুমের যেতে নেয় আদিত্য। লিভিং রুমের মাঝামাঝি আসতেই হঠাৎ তার দ্রুতগামী কদম স্থির হয় সহসাই। তার চোখ যায় সামনের সোফায়৷ যেখানে ঘুমিয়ে আছে নূর। ঘুমন্ত ওই মুখখানাই যেন আদিত্যর চলার পথে বাঁধা সৃষ্টি করল। সে চোখ সরিয়ে আবারও নিজের রাস্তায় কদম এগুনোর প্রয়াস করল। কিন্তু ওই ঘুমন্ত মুখখানা এড়িয়ে যাওয়া যেন অতিব দুষ্কর কাজ হয়ে দাঁড়াল তার জন্য।এক কদম এগিয়ে আবারও থেমে গেল। সে পারল না নিজ রাস্তায় যেতে। রাস্তার মোড় ঘুিয়ে পদযুগল বাড়াল ঘুমন্ত নূরের দিকে। নূরের সামনে এসে দাঁড়াল। নজর স্থির ওই মায়াবী, নিস্পাপ মুখখানাতে। আনমনেই একসময় নূরের মুখের সামনে এক হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল আদিত্য। নূরের মুখখানা যেন সত্যি সত্যিই নূরের মতোই আলো ছড়াচ্ছে। আলোকিত হচ্ছে আদিত্যর শূন্য মহল। বুকের বাম পাশে জং ধরা কোনো বস্তু নতুন উদ্যমে সচল হওয়ার প্রচেষ্টা করছে।মেয়েটা কি কোনো যাদুর অধিকারী।নাহলে এই কঠোর মানব, যাকে সুন্দরী থেকে সুন্দরী নারীর মোহও আকর্ষিত করতে পারেনা।সেই মানব কিভাবে এই মেয়েটার প্রতি খিঁচে যাচ্ছে! কি আছে এই মেয়েটার মাঝে! ঘুমের মাঝে নূরের এক হাত সোফার নিচে ঝুলে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে মুখের উপর। সামনেই টিভিতে কার্টুন চলছে এখনো। হয়তো কার্টুন দেখতে দেখতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। আদিত্য নূরের হাতটা তুলে ঠিক করে রাখল। মুখের উপর থেকে চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে সরিয়ে কানের পিঠে গুজে দিলো। তখনই হঠাৎ কানের নিচে কালো দাগ চোখে পড়ল আদিত্যর। আঘাতের দাগ বোঝা যাচ্ছে। সেটা দেখেই মুখশ্রীর পরিবর্তন ঘটলো সহসাই। শক্ত হয়ে ফুলে উঠল চোয়াল। উচ্চস্বরে চিল্লিয়ে ডাকল সে জমিলাকে। তার হুংকারপূর্ণ ডাক শুনে ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠল নূর। সম্মুখে আদিত্যকে দেখেই আত্মা কেঁপে উঠল ভয়ে তার। জমিলাও তৎক্ষনাৎ ছুটে এলো সেখানে। নূর দৌড়ে গিয়ে লুকাল জমিলার পেছনে। ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে থরথর করে তার। জমিলা জিজ্ঞেস করল,
“রাগ করেন না ছোট সাহেব। আসলে বউমনিকে টিভি দেখতে দিয়ে আমি একটু কাজ করছিলাম। বউমনি বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি।”
আদিত্য মুখমন্ডল কঠিন করে বলল,
“আপনি কি ওর গায়ে হাত তুলেছেন? ওর শরীরে আঘাতের দাগ কেন?”
“না, ছোট সাহেব। আপনি ভুল বুঝছেন। আমি বউমনিকে মারি নি। আসলে এই দাগগুলো সেদিনই দেখেছি আমি৷ আমি বউমনিকে জিজ্ঞেস করলে বলল,তার মা নাকি মেরেছিল তাকে সেদিন৷ সেটারই দাগ। আমারতো শুনে খুব মায়া লাগছিল।আপন মা হয়ে এমন মিষ্টি অবুঝ মেয়েটাকে কিভাবে ওমন জানোয়ারের মতো মারছে! সেদিনতো আরও দাগ ছিলো। কাপড় পাল্টিয়ে দিতে গিয়ে দেখেছি আমি। পিঠে অনেক র,ক্ত শুকিয়ে যাওয়ার দাগ ছিল। কেমন পাষণ্ড ওরা!”

আদিত্য স্তব্ধ হয়ে গেল যেন৷ লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল সব। নূরের ভয় পাওয়া দেখে আদিত্য চোখের ইশারায় নিয়ে যেতে বলল নূরকে৷ জমিলা নূরকে নিয়ে গেল। নিজের উপর হঠাৎ করে প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছে আদিত্যর।সেদিন হয়তো ওকে রেখে আসার কথা বলায় মেয়েটাকে ওভাবে মেরে পাঠিয়েছে ওরা। ভাবতেই রাগে রক্তনালী ফেটে যাচ্ছে তার। রাগে সামনের টি টেবিলে সজোরে একটা লাথি মেরে দিলো সে।

চলবে….