মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব-১১

0
1364

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১১

★অফিস থেকে মাত্রই এসেছে আদিত্য। দরজার সামনে এসে দেখলো দরজা খোলা। বাসার সব সার্ভেন্ট রা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে একটু উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–কি হচ্ছে এখানে?

আদিত্যকে দেখে সবার চেহারা রক্তশূণ্য হয়ে গেল। সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।আদিত্য এবার আরও একটু জোরে বললো।
–ক্যান এনিওয়ান টেল মি? হোয়াট দ্যা হেল গোয়িং অন হেয়ার?

একটা সার্ভেন্ট ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো।
–স সস্যার রাণী সাহেবাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

“রাণী সাহেবাকে পাওয়া যাচ্ছে না ” এই একটা বাক্যই আদিত্যর হৃদস্পন্দন থামানোর জন্য যথেষ্ট। আদিত্য কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
–হোয়াট? পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? ইজ দেয়ার সাম কাইন্ড অফ জোক?তোমরা এতগুলো মানুষ থাকতে নূর কোথায় গেল?

তখনই নিলা কোথাথেকে দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো।
–আসলে জিজু ওদের দোষ নেই। আপু সবার সাথে লুকোচুরি খেলছিল।সবার মতো আপুও লুকানোর জন্য কোথাও গেল। কিন্তু তার পর থেকেই আর পাচ্ছিনা আপুকে। তখন থেকে আমরা সব জায়গায় খুঁজে যাচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছি না।

আদিত্যের হাত পা কাঁপা শুরু করলো। গলা শুকিয়ে আসছে ওর। কোথায় গেল ওর এঞ্জেল টা? কিছু হয়ে গেল নাতো ওর? এসব ভাবতেই আদিত্যের শরীর ঘেমে উঠছে। আদিত্য আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে নূরকে খুঁজতে লাগলো। বুকটা অসম্ভব কাঁপছে ওর। নূরকে না দেখা পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হতে পারছেনা। আদিত্য এতটাই অশান্ত হয়ে আছে যে, বাসার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার কথাও ওর মনে আসছে না।

আদিত্য পাগলের মতো সবজায়গায় খোজার পরও নূরকে না পেয়ে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়লো। বোধশক্তি কেমন যেন হারিয়ে ফেলেছে ও। কিছুই মাথায় আসছে না। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ আদিত্যের মনে পড়লো ওতো সব জায়গায় দেখেছে। কিন্তু নিজের রুমেই একবারও দেখেনি। কথাটা মনে আসতেই আদিত্য ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে দৌড়ালো। রুমে ঢুকে এদিক ওদিক চেক করতে লাগলো। কিন্তু নূরকে পেলনা। হতাশ হয়ে আদিত্য বেডের ধপ করে বসে পড়লো। তাহলে কি ওর এঞ্জেল টা সত্যিই হারিয়ে গেল? কথাটা ভাবতেই আদিত্যর দম বন্ধ হয়ে আসছে।

হঠাৎ কাবার্ডের ভেতর থেকে কেমন যেন হালকা আওয়াজ আসলো। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়াল ।ধীরে ধীরে কাবার্ডের কাছে গিয়ে, কাবার্ডের দরজাটা আস্তে খুলে দিল। দরজা খুলতেই আদিত্য হতভম্ব হয়ে গেল। হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। যাকে পাগলের মতো সব জায়গায় খুঁজে বেরাচ্ছে সেই নূর কিনা এখানে কাবার্ডের ভেতর ঘুমিয়ে আছে। নূরকে দেখে কলিজায় পানি ফিরে পেল আদিত্য।আদিত্য নূরের গালে হাত রেখে আস্তে করে ডাক দিল। দুই বার ডাক দিতেই নূর হকচকিয়ে উঠে বললো।
–আমি ধরা পরিনি, আমি ধরা পরিনি।
আদিত্যকে সামনে দেখে নূর বলে উঠলো।
–আরে হিরো তুমি? তুমিও কি লুকোচুরি খেলছ? দেখ আমি কোথায় লুকিয়েছি।আমাকে কেউ ধরতে পারবে না হি হি।

আদিত্য কিছু না বলে দুই হাতে নূরকে কোলে করে কাবার্ডের ভেতর থেকে নামালো। তারপর নূরকে কোলে নিয়ে বেডের ওপর এসে বসলো। বেডের ওপর বসে আদিত্য নূরকে বুকের মাঝে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো। যেন কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে ফেলতে পারলে শান্তি। এতক্ষনের অশান্ত মনটা এবার শান্তি পাচ্ছে। নূরকে এতক্ষণ না পেয়ে আদিত্যের কি অবস্থা হয়েছিল তা শুধু ওই জানে। আদিত্য নূরের মাথায় কয়েকটা চুমু খেল। তারপর দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে সামনে এনে বললো।
–এভাবে কেউ লুকাই? জানো তোমাকে না পেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছিল? জান বেরিয়ে গিয়েছিল আমার। তুমি আমাকে সেদিন বলেছিলে না আমি কিসে ভয় পাই? আজ আমি বলছি, আমি ভয় পাই, খুব ভয় পাই।আমি তোকে হারাতে ভয় পাই। তোকে ছাড়া যে আমি নিশ্ব। আমাকে প্রমিজ কর, কখনো আমাকে ছেড়ে যাবিনা। আমাকে ছাড়া একা একা কোত্থাও যাবিনা না। কোত্থাও না। প্রমিজ কর আমাকে।

নূর আদিত্যের দিকে বাচ্চামো চোখে তাকিয়ে থেকে ফট করে বলে উঠলো।
–ওয়াশরুমেও একা যাবোনা?

এমন একটা সিরিয়াস সিচুয়েশনে নূরের এমন বাচ্চামো কথ শুনে আদিত্য ফিক করে হেসে উঠলো। তারপর বললো।
–আমি কি করবো তোর এঞ্জেল?

নূর ঠোঁট উল্টিয়ে বললো।
–আমি কি জানি?

আদিত্য মুচকি হেসে আবারও নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল।
______

যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে আদিত্যের গাড়ি থামলো। আদিত্য আজ নূরকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে। সাথে বাকি সবাইও এসেছে। আদিত্য নূরের হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে দাড় করালো। এত সুন্দর শপিং মল দেখে নূর খুশিতে লাফাতে লাগলো। আদিত্য মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটার হাসিতেই যেন ওর সব সুখ খুঁজে পায় আদিত্য। আদিত্য নূরের হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
নিলা গাড়ি থেকে নামতে নিয়ে ওর ওড়নায় পা বেজে পড়ে যেতে নিলেই আবির এসে ধরে ফেললো ওকে। নিলাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বাঁকা হেসে বললো।
–একটু সামলে মিস কচি বিয়াইন সাহেবা। একটু তো দেখে চলবে। মানলাম আমাকে দেখে তোমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। তাই বলে রাস্তাঘাটে সবার সামনেই ডেস্পারেট হয়ে যাওয়া টা ঠিক?

নিলা রাগে কিড়মিড় করে আবিরের দিকে আঙুল তুলে বললো।
–ইউ,,

বাকি কথা বলার আগেই আবির বলে উঠলো।
–ইউ না।বলো লাভ ইউ। কথার মাঝখানে ওয়ার্ড মিস করো কেন?
কথাটা বলে আবির হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে গেল।
নিলা রাগে এক পা ফ্লোরে লাথি মেরে গটগট করে সামনে গেল।

বিহান গাড়ি পার্ক করে বাইরে বের হয়ে এলো। আয়াত এখনো বসেই ছিল। বিহান নামতেই আয়াত গাড়ির দরজা খুলে বিহানের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–বিহানজি আমার হাতটা একটু ধরবেন প্লিজ? আসলে আমি না উঠতে পারছি না একটু হেল্প করুন না প্লিজ?

বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ক্যা, উঠবার পারেন না ক্যলা? নিচে কি কেউ আপনেরে বাইন্দা ধুইছে নি? যে উডবার পারতাছেন না। দেহেন আমার লগে এইছব আজাইরা ঢং দেহাইবার আইবেন না।নামবার পারলে নামেন, না হইলে এইহানেই বইয়া থাহেন।
কথাটা বলে বিহান সামনের মিররে হাঁটা ধরলো।

আর আয়াত জেদ করে গাড়িতেই বসে রইলো। আজ সে মনে মনে পণ করেছে। বিহান না নামালে সে কিছুতেই নামবে না। দরকার হলে সারাক্ষণ এখানেই বসে থাকবে হুহ। কি মনে করে সে নিজেকে।
বিহান কিছুদূর এসে একটু পেছনে ফিরে দেখলো আয়াত এখনো না নেমে গাড়িতেই বসে আছে। বিরক্ততে বিহানের কপাল কুঁচকে এলো। এই মেয়েটার জ্বালায় আর শান্তি নেই। কেমন জেদ ধরে বসে আছে। ওদিকে আদিত্য আয়াতকে না দেখলে নিশ্চয় ওর কথা জিজ্ঞেস করবে। কিযে একটা ঝামেলা। বিহান আবার গাড়ির সামনে এসে আয়াতের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–না নাইম্মা বইয়া আচেন ক্যালা? ছপিং মল এইহানে হাইট্টা আইবো নি? বারান জলদি। আমি গাড়ি লক করুম।

আয়াত একটু অভিনয় করে বললো।
–কেউ যদি আমার হাত ধরে বের করে তাহলেই আমি বের হবো। নাহলে আমি সারাদিন এখানেই বসে থাকবো।

বিহান বিরক্ত হয়ে কতক্ষণ এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরাতে লাগলো। আদিত্যর জন্য হলেও মেয়েটাকে এখন নামাতে হবে। কথাটা ভেবে বিহান অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে আয়াতের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আয়াতকে আর পায় কে। আয়াত খুশী তাই বিহানের হাতে হাত রাখলো। বিহান আয়াতের হাত ধরে গাড়ি থেকে বের করলো।বের হওয়ার সময় আয়াত দুষ্টুমি করে ইচ্ছে করে বিহানের গায়ের ওপর পড়ে গেল। বিহানের দুই ঘাড়ে হাত রেখে বিহানের মুখোমুখি হয়ে গেল আয়াত। আয়াত ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বিহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মনে হচ্ছে সময় টা এখানেই থমকে যায়। কিন্তু আয়াতের খেয়ালকে বেলুনের মতো ফাটিয়ে দিয়ে আয়াতকে এক ঝটকায় সোজা করে দাঁড় করালো বিহান। তারপর গাড়ি লক ধুমধাম পা ফেলে সামনের দিকে চলে গেল। আয়াতও মুচকি হেসে ওর পিছে পিছে গেল।

শপিং মলের ভেতর নূর আদিত্যের হাত ধরে হাঁটছে আর সবকিছু দেখে খুশিতে আদিত্যের হাত ধরে লাফালাফি করছে। নূরকে খুশী দেখে আদিত্যেরও অনেক ভালো লাগছে। অন্যেরা সবাই যার যার মতো ঘুরে ঘুরে শপিং করছে। হঠাৎ বড়ো একটা টেডিবিয়ারের দোকান দেখে নূর আরও খুশী হয়ে গেল। আদিত্যের হাত টেনে ধরে দোকানের দিকে ইশারা করে বললো।
–হিরো হিরো,দেখ কত্ত সুন্দর সুন্দর টেডি। আমাকে কিনে দাওনা আমি নিবো।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–অফকোর্স। আমার এঞ্জেলের যা ইচ্ছে হয় সে তাই নিবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের কাছে ধরে টেডির দোকানে গেল। টেডির দোকানে এসে এত্তো বড়ো আর সুন্দর সুন্দর টেডি দেখে নূর খুশিতে লাফাতে লাগলো। কখনো এই টেডিবিয়ারের কাছে তো কখনো ওই টেডিবিয়ারের কাছে ছুটতে লাগলো। আদিত্য শুধু নূরের খুশী দেখে যাচ্ছে। তখনই হঠাৎ আদিত্যের ফোনে ফোন এলো।অফিসের একটা গুরুত্বপূর্ণ কল। আদিত্য ফোন রিসিভ করে কথা বলতে নিয়ে দেখলো দোকানের ভেতর ভালো করে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–তুমি টেডিবিয়ার পছন্দ করো, আমি এখানেই আছি হ্যাঁ?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো সায় জানালো। আদিত্য দোকানের বাইরে এসে উল্টো দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো।
নূর দোকানের ভেতর ইচ্ছেমতো লাফালাফি করছে আর টেডিবিয়ার দের নিয়ে নিয়ে খেলছে। দোকানের ভেতর আশেপাশের আরো লোকজনেরা নূরকে দেখে মুখ কুচকাতে লাগলো।এতো বড় ধামড়ি মেয়েকে এভাবে বিহেব করতে দেখে সবাই নানান কথা বলাবলি করতে লাগলো। একজন বললো,শপিং মলে এসব পাগলছাগল কোথাথেকে এলো? আরেকজন বললো, আরে এমন পাগলকে তো ঘরে বেঁধে রাখা উচিত। একে বাইরে কেন নিয়ে এসেছে? আরেকজন বললো,এখন তো শপিং করতে এসেও শান্তি নেই। এসব পাগলছাগলও আসা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের বাচ্চারা তো একে দেখেই ভয় পেয়ে যাবে।

এভাবে নানান জন নানান কথা বলাবলি করতে লাগলো। আর এসব কথাই নূরের কানে যাচ্ছে। এতক্ষণ ধরে হাসিখুশী থাকা মুখটা চুপসে গেল।লাফালাফিও বন্ধ হয়ে গেল নূরের। এদের কথা শুনে নূরের কান্না আসতে লাগলো। এখন আর কিছুই ভালো লাগছে না নূরের। সবকিছু অসহ্য লাগছে। নূর চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেলো। আদিত্য উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় সেটা দেখতে পেল না।

আদিত্যের কথা বলা শেষ হলে আবার দোকানের ভেতর গেল আদিত্য। দোকানের ভেতরে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে নূরকে কোথাও দেখতে পেল না। আদিত্য একটু ঘাবড়ে গেল। ভালো এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও নূর নেই। আদিত্য দোকানের সেলসম্যানকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো।
–এক্সকিউজ মি,আপনি আমার ওয়াইফ,আই মিন এখানে একটু আগে যে মেয়েটা লাফালাফি করছিল। সে কোথায়? তাকে দেখেছেন?

সেলসম্যান বললো।
–জ্বি স্যার। উনি এইমাত্রই বেরিয়ে গেলেন।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–বেরিয়ে গেল মানে, কোথায় বেরিয়ে গেল?

–স্যার সেটাতো জানিনা।

আদিত্য আর একমুহূর্তও দেরি না করে দোকানের বাইরে গেল নূরকে খুঁজতে। মনে মনে নিজেকে হাজারো গালি দিচ্ছে আদিত্য। কেন আমি ওকে একা ছাড়ি? কেন,কেন, কেন? আদিত্য বিহান আর আবিরকেও ফোন করে জিজ্ঞেস করলো নূর ওদের কাছে আছে নাকি। ওরা বললো ওদের কাছেও নেই নূর। আদিত্য আরও ভয় পেয়ে গেল। ওরা সবাই মিলে পুরো শপিং মলে ঘুরে ঘুরে নূরকে খুঁজতে লাগলো।

আদিত্য পাগলের মতো দৌড়ে দৌড়ে নূরকে খুঁজছে। হঠাৎ শপিং মলের তিনতলায় এককোনায় নূরের জামার কিছু অংশ দেখতে পেল আদিত্য। আদিত্য দ্রুত সেখানে গেল। সেখানে গিয়ে দেখলো নূর হাটুর ভেতর মাথা গুঁজে বসে আছে। আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কাচের দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু শান্ত করে নিল আদিত্য। আজ নূরের ওপর ওর চরম লাগছে ওর। এভাবে কেউ চলে আসে। কাল ওকে এতো করে বললাম যে আমাকে না বলে কোথাও যাবে না।তারপরও সে আজ একই কাজ করছে। আজতো একে একটু আদিত্যর রাগ দেখাতেই হবে। কথাগুলো ভেবে আদিত্য নূরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। চেহারায় রাগী ভাব নিয়ে নূরকে কিছু বলার জন্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে উপরে তুললো। মুখটা উপরে তুলতেই চমকে গেল আদিত্য।

নূর কেঁদেকেটে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে উঠছে নূর। নূরের এই অবস্থা দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। আদিত্য নূরকে শুধু হাসিখুশি প্রানবন্ত দেখেছে।কখনো কাঁদতে দেখেনি। নূরের চোখে পানি দেখে আদিত্যর ভেতরটা পুড়ে উঠছে। একটু আগেও তো কতো উচ্ছ্বসিত ছিল। তাহলে হঠাৎ করে কি হয়ে গেল? আদিত্য নূরের মুখটা আরও একটু কাছে এনে বললো।
–হেইই এঞ্জেল কাদছ কেন? কি হয়েছে আমাকে বলো?

আদিত্যের কথায় নূর নাক ফুলিয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। এতে করে আদিত্যের ভেতর আরও তোলপাড় হতে লাগলো। কি হয়েছে আমার এঞ্জেল টার? এভাবে কাদছে কেন ও? আদিত্য নিজেও নূরকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো, ওকে শান্ত করার জন্য। কিছুক্ষণ পর আদিত্য নূরকে সামনে এনে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো।
–কান্না করেনা সোনাপাখি।কি হয়েছে আমাকে বলো।তোমার হিরোকে বলবেনা?

নূর এবার নাক টেনে ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললো।
–আ আমাকে সবাই পাগল বলে কেন? আমি কি পাগল নাকি? আমাকে কি পাগলের মতো অমন পচা দেখতে লাগে বলো? আমার কাপড়চোপড় কি ছেড়া ময়লা?
নূর নিজের ঝুটির চুল উঁচু করে আদিত্যকে দেখিয়ে বললো।
–এই দেখ আমার চুল কতো সুন্দর। একদম পাগলদের মতো পঁচা না। তাহলে আমাকে কেন সবাই পাগল বলে? আমার একদম ভালো লাগে না।

আদিত্য চোয়াল শক্ত বললো।
–কে বলেছে পাগল? আমাকে বলো কে বলেছে তোমাকে? দেখ আমি তার কি অবস্থা করি।

নূর নাক টেনে টেনে বললো।
–সবাই বলে।যেখানে যাই সেখানেই বলে।
নূর আদিত্যের চোখের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলে উঠলো।
–আচ্ছা হিরো, তুমিও কি আমাকে পাগল ভাবো? আমি কি সত্যিই পাগল?

আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো নূরের কথায়। আদিত্য নূরের দুই গালে হাত বুলিয়ে আবেগী কন্ঠে বললো।
–হেইই,কক্ষনো না। আমি তোমাকে পাগল কিভাবে ভাবতে পারি? তুমিতো আমার লাইফের এঞ্জেল, আমার মিষ্টি পরি। আর শোন, যারা তোমাকে পাগল বলে।তারা নিজেরাই পাগল। তাইতো তোমার মর্ম বোঝেনা। তাই ওদের কথা কানে নিওনা। এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো কান্না বন্ধ করো। আর সুন্দর করে একটু হাসো। জানো তোমাকে হাসলে কত্তো সুন্দর লাগে দেখতে? একদম পরিদের মতো।

আদিত্যের কথায় নূরের কান্নাটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে এলো। আদিত্য আবার বললো।
–এখন চলো তোমার সেই টেডিবিয়ারের দোকানে যাই। তুমি না অনেক গুলো টেডি নিবে?

আদিত্য নূরের হাত ধরে উঠাতে নিলে নূর ওর হাত ছাড়িয়ে বললো।
–না, আমি আর দোকানে যাবো না। আমি বাসায় যাবো। দোকানে গেলে আবার সবাই আমাকে পাগল পাগল বলবে। আমি যাবো না।

আদিত্য কিছু একটা ভেবে বিহানের নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে উঠলো।
–বিহান, আমি পাঁচ মিনিটের ভেতর পুরো মল খালি চাই। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?

বিহান ওপাশ থেকে বললো।
–ওকে বস,এহুনি হইয়া যাইবো।

আদিত্য ঘরি ধরে পাঁচ মিনিট পর নূরকে বললো।
–এঞ্জেল এখন চলো।এখন এই পুরো মলটা তোমার। এখানে আর অন্য কেও নেই। তুমি যা খুশি তাই করবে। কেও কিচ্ছু বলতে পারবে না। চলো আমার সাথে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল। নূরকে কোলে নিয়ে মলের ভেতর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো যে এখানে শুধু ওরা ছাড়া আর অন্য কেও নেই। নূর এটা দেখে খুশী হয়ে গেল। কাওকে না দেখে নূর আদিত্যর কোল থেকে নেমে আবারও লাফালাফি শুরু করে দিল।আদিত্য শুধু পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নূরের হাসিমুখ টা দেখতে লাগলো। এই হাসিটাই যে ওর বেঁচে থাকার টনিক।

চলবে…..