#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_২২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________
একদম ঘরোয়াভাবে দোলা এবং হিমেলের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। হিমেলের আপন বলতে কেউই নেই। তবে ছাদে বার দু’য়েক এক মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। নাম পৃথুলা। মেয়েটার সহজ-সরল আচরণ তাকে খুব টেনেছিল। পরিচয়টা ছাদেই হয়েছিল। জ্বরে অসুস্থ হয়ে সেদিন সিঁড়িতে যেই শার্ট-প্যান্ট পরেছিল, ছাদে দেখা হওয়ার দিনও একই পোশাক পরা ছিল। তাই পৃথুলা যেচে এসেই জানতে চেয়েছিল,
“আপনিই কি সেদিন সিঁড়িতে বসে ছিলেন?”
হিমেল ভ্রু কুঞ্চন করে জানতে চায়,
“কোনদিন?”
“তা তো ঠিক মনে নেই। তবে অসুস্থ মনে হয়েছিল।”
হিমেল বুঝতে পেরে বলে,
“হ্যাঁ।”
“আপনাকে এত ডাকলাম সেদিন শোনেননি?”
“ঝাপসা শুনেছিলাম। জ্বর ছিল খুব।”
“ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ওখানে কেন বসে ছিলেন?”
“ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্যই বের হয়ে ছিলাম। কিন্তু হাঁটতে এত কষ্ট হচ্ছিল যে সেখানেই বসে পড়ি।”
“আপনার বাড়ির কেউ নেই? ওরা কেন যায়নি ডাক্তার আনতে?”
হিমেল ম্লান হেসে বলেছিল,
“আমার দুনিয়াতে আপন বলতে কেউ নেই।”
পৃথুলা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। দুর্বোধ্য হেসে বলে,
“আমারও কেউ নেই।”
হিমেল চমকে তাকায়। কিছু বলার পূর্বেই ছাদে তখন সীমন্তির আগমন ঘটে। সে পৃথুলাকে হিমেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখে রেগে যায়। গর্জে উঠে নিয়ে আসে রুমে। সেদিন থেকেই পৃথুলার প্রতি আলাদা একটা টান তৈরি হয়েছিল হিমেলের। নিজের বোন থাকলে হয়তো এমনটাই অনুভূতি অনুভব হতো। এভাবে মাঝে মাঝেই ওদের ছাদে কথা হতো। কিন্তু ওদের এই মেলামেশা চোখের বিষ ছিল সীমন্তির।
হিমেলকে চিন্তিতচিত্তে বসে থাকতে দেখে দোলা বলল,
“তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
হিমেল মলিন হেসে বলল,
“কই না তো!”
“কিন্তু তোমার চোখ-মুখ বলছে তুমি কিছু একটা নিয়ে খুব ভাবছ।”
এরপর কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলে,
“এখনো সময় আছে। চাইলে বিয়েটা না করতে পারো।”
হিমেল সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। দোলার হাত চেপে ধরে বলে,
“এমন কথা বোলো না দোলা! তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি অন্তিম পথ পাড়ি দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। আর তুমি বলছ তোমাকে পেয়েও হারাতে?”
দোলা নিশ্চুপ। হিমেল বলল,
“আমি পৃথুলার কথা ভাবছি।”
দোলা বিস্মিত হয়ে বলে,
“পৃথুলা কে?”
“আমরা এক বাড়িতেই থাকি। মেয়েটাও আমার মতো অনাথ। আমি ওকে বোনের মতোই দেখি।”
“তাহলে ওকে নিয়ে এলে না কেন?”
“আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর রুমমেট বলল দু’দিন ধরেই নাকি বাড়িতে নেই।”
“ফোন দিতে।”
“ফোন নাম্বার তো নেই!”
“আচ্ছা এত চিন্তা কোরো না। হয়তো কোনো আত্মীয় কিংবা বান্ধবীর বাড়িতে আছে।”
“বিয়ের কথাটাও তো বলতে পারলাম না।”
দোলা হেসে ফেলে হিমেলের সরলতা দেখে। গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,
“বোকা ছেলে! দেখা তো আবার হবে নাকি? তখন আমায় দেখিয়ে সারপ্রাইজ দিও।”
দোলার হঠাৎ এমন আচরণে হিমেল যেমন অবাক হয়েছে তেমনই খুশিও হয়েছে। এই প্রথম দোলা এতটা স্নেহের সাথে ভালোবেসে কথা বলেছে।
হিমেলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে দোলা বলে,
“একটা কথা বলি?”
“বলো।”
“তোমাকে একটাবার জড়িয়ে ধরি?”
একের পর এক ঝটকা আর নিতে পারছে না হিমেল। আজ কি সূর্য অন্যদিকে উঠেছে? নাকি ভাগ্য তার সহায় হয়েছে? নববধূ রূপে রূপবতী দোলা উত্তরের আশায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে। হিমেলের পূর্ণ সম্মতি আছে বুঝতে পেরেই সে হিমেলকে জড়িয়ে ধরে। মনে মনে স্বগতোক্তি করে বলে,
“আই এম সরি হিমেল। নিজের স্বার্থের জন্যই তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। অতীতের জীবন নিয়ে আমি অতিষ্ঠ। রাফসানকে চিরতরে ভুলে যেতে চাই। এরজন্য জীবনে নতুন কাউকে প্রয়োজন ছিল। কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। ভালোও বাসতে পারি না। এমনকি তোমাকেও আমি ভালোবেসে বিয়ে করছি না। এই কঠিন সত্যটা জানলে তুমি কষ্ট পাবে বলেই তোমাকে বলা হয়নি। কিন্তু আমি মন থেকেই দুঃখিত।”
.
.
পৃথুলা কাৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দিবা। আরশানের কাছ থেকে ফিরে আসার পর আজ দু’দিন ধরেই সে দিবার কাছে থাকছে। নিজ বাড়িতে সীমন্তির জন্য টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ছিল। ওর রুড ব্যবহার, অস্বাভাবিক আচরণ, ড্রা’গ নিতে বাধ্য করা এসব নিতে পারছিল না পৃথুলা। অভিমানে সে আরশানের কাছেও ফিরতে চাইছিল না। তার যাওয়ার মতো অন্য কোনো পথ নেই। তাই সে দিবার কাছে চলে এসেছে। দু’দিন যাবৎ ফোনও বন্ধ করে রেখেছে।
“এখনো মন বিষণ্ণ?” মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করল দিবা।
পৃথুলা দিবার হাত ধরে বলল,
“একটু, একটু। আমি এসে আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছি তাই না?”
“মোটেও না। আমার ছোটো বোন এলে কি আমি বিরক্ত হতাম?”
“আচ্ছা আমাকে তো ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, জানেন না। তবুও কেন এত ভালোবাসেন?”
“কারণ তুমি মেয়েটাই ভালোবাসার মতো।”
“আমার জীবনকাহিনীর জন্য কি সবাই আমাকে করুণা করে? সহমর্মিতা দেখায়?”
“এসব কথা কেন বলছ সোনা?”
“কারণ আমার এমনটাই মনে হয়।”
“ভুল ভাবো তুমি। যারা তোমায় ভালোবাসে তারা সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসে। দু’দিন ধরেই বলব ভাবছি। কিন্তু বলা হচ্ছে না। আরশান ছেলেটার সাথে কি তোমার ঝগড়া হয়েছে?”
পৃথুলার হঠাৎ-ই কান্না পেয়ে যায়। সেই রাতের কথা মনে পড়লেই তার কান্না পায়। আরশান কী করে তার সাথে এতটা রুডভাবে কথা বলল? কীভাবে আঘাত করতে পারল? পৃথুলাকে কাঁদতে দেখে দিবা অস্থির হয়ে পড়ে। চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
“আমি সরি বাচ্চা। কাঁদে না প্লিজ! আমার কিন্তু খারাপ লাগছে।”
“সে আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে আপু।” ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে পৃথুলা।
“কী হয়েছে আমাকে বলা যাবে?”
পৃথুলা কাঁদছে। কিছু বলছে না। কোনো মেয়েঘটিত ব্যাপার নিয়ে আরশান তাকে কষ্ট দিয়েছে এই বিষয়টা সে দিবাকে বলতে চাইছে না। আর যাই হোক সে চায় না, আরশান কারও কাছে খারাপ হোক।
“আচ্ছা বেশ, কিছু বলতে হবে না। এখন ওঠো তো। ফ্রেশ হয়ে নাও। আমরা বের হব।”
“কোথায় যাব?”
“বাইরে ডিনার করতে যাব।”
“আপনি আর ভাইয়া যান। আমি যাব না।”
“তোমার ভাইয়া আজ ভোরেই চট্টগ্রাম গেছে একটা কাজে। বলেছিলাম তো তোমাকে।”
“ওহ। ভুলে গেছিলাম।”
“এখন চটজলদি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো।”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও পৃথুলা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
_____
আরশান অস্থির হয়ে দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছে। তাকে ভীষণ চিন্তিতও দেখাচ্ছিল। দু’দিন ধরে হন্যে হয়ে সে পৃথুলাকে খুঁজেছে। পায়নি। কিন্তু আজ সকালেই সে পৃথুলার সন্ধ্যান পেয়েছে। দিবার সঙ্গে হাসপাতালে আরশানের দেখা হয়। আরশান তাকে না চিনলেও দিবার চিনতে সমস্যা হয় না। তার স্মৃতিশক্তি ভীষণ ভালো। দিবার কাছেই আরশান জানতে পারে যে, পৃথুলা এখন তার কাছেই আছে। সে দিবাকে অনুরোধ করে পৃথুলার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য। সেই অনুরোধ রাখতেই দিবা পৃথুলাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসবে।
আরশানকে বারবার ঘড়ি দেখতে দেখে শিমুল বলে,
“স্যার, একটু শান্ত হয়ে বসুন। এত অস্থির হচ্ছেন কেন?”
“তুমি বুঝবে না আমার ভেতর দিয়ে কী বয়ে যাচ্ছে।”
“আমাদের আরেকটু সেইফ থাকা দরকার ছিল। তাহলে পৃথুলার সাথে এই ঘটনাটি ঘটত না। মেয়েটা ভীষণ হার্ট হয়েছে।”
আরশান ভীষণ অনুতপ্ত। সে মুখে কিছু বলল না। থাই গ্লাস ভেদ করে নিচে তাকিয়ে দিবা এবং পৃথুলাকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে শিমুলকে নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে সে।
আরশান এবং শিমুল যেই টেবিলে বসেছিল দিবাও পৃথুলাকে নিয়ে সেখানেই বসল। এখান থেকে বাইরের ভিউটা খুব ভালোভাবে দেখা যায়। রেস্টুরেন্টে লোকজনও খুব কম। চারদিকে তাই নিস্তব্ধতা ও নির্জনতা বিরাজ করছে।
“তুমি বসো। খাবার অর্ডার করো। আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।” বলে দিবা ওয়াশরুমে যায়।
পৃথুলা কাচের বাইরের শহরটা দেখছে। যান্ত্রিক শহরে গাড়ির অবাধ চলাচল। মানুষের সমাগত। ব্যস্ত নগরী। রাতের শহর। আকাশের বুকে অর্ধখণ্ড চাঁদ এবং ছোটো ছোটো তারা নিবিষ্ট মনে দেখছিল পৃথুলা। এতকিছুর মাঝে থেকেও তার শুধু আরশানের কথাই মনে পড়ছে। কতটা সময় পার হয়ে গেল মানুষটাকে দেখা হয় না, ছোঁয়া হয় না, কথা হয় না!
“তেরা ধিয়ান কিধার হে,
এ তেরা হিরো ইধার হে।”
হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠে গানের লাইন শুনে পৃথুলা বিচলিত হয়ে পড়ে। তারচেয়েও বেশি অবাক হয় যখন পাশে তাকিয়ে আরশানকে দেখতে পায়।
চলবে…
#মহাপ্রস্থান
#পর্ব_২৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
পৃথুলা বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। অনেক চেষ্টা করেও সে কিছুতেই নিজেকে এবং নিজের কান্না আটকে রাখতে পারল না। ওকে হঠাৎ করে এভাবে কাঁদতে দেখে আরশানের বুক মোচড় দিয়ে ওঠে। সে পৃথুলাকে বুকের মাঝে এনে জড়িয়ে ধরলে কান্নার গতি আরও বেড়ে যায় পৃথুলার। আরশান ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করে বলল,
“প্লিজ, কেঁদো না। আমি সরি। ভুল করে ফেলেছি। আমাকে যত ইচ্ছে শাস্তি দাও। তবুও দূরে সরে যেও না।”
পৃথুলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আরশান ওর দু’গালে হাত রেখে বলল,
“ক্ষমা করবে না আমায়?”
পৃথুলা উত্তর দিতে পারল না। নিরবে মাথা রাখল আরশানের বুকে। সে নিজেও আরশানকে ছাড়া ভালো নেই। ক্ষমা না করে থাকবে কীভাবে? পৃথুলার নিরব সম্মতিতেই প্রসন্নতার হাসি হাসল আরশান।
বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কান্না থামাল। ওদের মধ্যকার ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর দিবা এবং শিমুল আসে। মূলত ওদের স্পেস দেওয়ার জন্যই ওরা দূরে ছিল। খাবার আগেই অর্ডার দেওয়াতে বেশি অপেক্ষা করতে হলো না ওদের। খাওয়ার মাঝে আরশান বারবার করে দিবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিল। যাওয়ার পূর্বে দিবা বলে গেল,
“আমার বোনটাকে আর কষ্ট দিয়েন না। দেখেশুনে রাখবেন।”
আরশান মুচকি হেসে বলল,
“অবশ্যই।”
রাত একটু বেশি হওয়াতে শিমুল দিবাকে পৌঁছে দিতে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ দুজনে সময় কাটায়। দু’দিনের না বলা অনেক কথা জমে ছিল। মান-অভিমান ছিল। সবকিছু দূর করে। শুধু সিক্রেট গার্লের ব্যাপারেই পৃথুলা কিছু বলতে পারল না। পাছে আবার আরশানের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়! আস্তে আস্তে না হয় ঐ মেয়ে কে জানা যাবে। রাগ, জেদ দেখিয়ে সে আরশানের থেকে দূরে থেকে কষ্ট পেতে চায় না এবং আরশানকেও কষ্ট দিতে চায় না।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পৃথুলার আবদারে দুজনে স্ট্রিটফুড খায়। আরশান যদিও এসব খাবার এড়িয়ে চলে। তবে আজ সে পৃথুলার খুশির জন্য খেয়েছে। খাওয়ার পর মনে হলো, টেস্ট বাজে নয়। কিন্তু খোলামেলা থাকায় এগুলো খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সে স্বাস্থ্য সচেতন তাই এসব মেনে চলে। কিন্তু পৃথুলা এসবের ধার ধারে না। রাস্তার পাশে থাকা দোকানগুলোর এই খাবারগুলোই তার নিকট অমৃত। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে চলে এসেছে। আরশান হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“রাত তো অনেক হলো। চলো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
আরশান গাড়ির দরজা খুলতে গেলে পেছন থেকে পৃথুলা ওর শার্ট খামচে ধরল। আরশান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“কী?”
“আমি বাড়িতে যাব না।” মাথা নত করে বলল পৃথুলা।
আরশান হেসে বলল,
“আমার সাথে থাকবে আজ?”
“আমি ঐ বাড়িতে আর কখনো যাব না।”
এবার একটু অবাক হলো আরশান। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“কী হয়েছে পৃথু?”
পৃথুলার চোখে অশ্রু জড়ো হয়। আরশান ব্যস্ত হয়ে বলে,
“বলো আমাকে। কী হয়েছে?”
“আমার রুমমেট! আমার রুমমেট সীমন্তি…”
“হ্যাঁ। কী হয়েছে ওর?”
পৃথুলা ফোঁপায়। চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করে বলে,
“ও কেমন যেন! কারও সাথে আমাকে মিশতে দেয় না। অপমান করে কথা বলে সবসময়। এতদিন সব সহ্য করেছি। ও ড্রা’গ নিত আমি জানতাম। কিন্তু সেদিন রাতে ও আমাকেও ড্রা’গ নিতে বাধ্য করেছিল। অনেক খারাপ আচরণ করেছিল। তাই আমি দিবা আপুর কাছে চলে গেছিলাম।”
“তুমি এসব আমাকে আগে জানাওনি কেন তখন?”
“তখন তো আমার সাথে আপনার ঝগড়া চলছিল।”
“বাড়িওয়ালাকে জানাতে পারতে।”
“ঝামেলা ভালো লাগে না। আর এতকিছু তখন মাথায়ও আসেনি। ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি।”
“আচ্ছা আমি দেখছি বিষয়টা। তুমি চলো আমার সাথে।”
“কোথায়? আমি কিন্তু ঐ বাড়িতে যাব না।”
“আমার কাছে রাখব।”
.
.
সাতদিন পর দোলা হিমেলের সঙ্গে হিমেলের বাড়িতে আসে। অগোছালো রুম। বোটকা গন্ধে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দোলা দ্রুত ওড়না দিয়ে নাক চেপে ধরল। হিমেল গিয়ে বারান্দার দরজা খুলতেই দোলা দৌঁড়ে বারান্দায় চলে যায়। প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে বলে,
“এখানে কি সত্যিই তুমি থাকতে?”
হিমেল অবাক হয়ে বলল,
“হ্যাঁ। কেন?”
“এখানে কোনো মানুষ থাকতে পারে! সবকিছু এলোমেলো, অগোছালো। গন্ধে পেট মুচড়ে উঠছে। বাইরে থেকে তুমি যতটা পরিপাটি ভেতর থেকে তুমি ততটাই নোংরা।”
হিমেল মুখ নত করে ফেলে। দোলা ওড়না কোমড়ে গুঁজে বলে,
“বোকার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে হেল্প করবে আসো।”
হিমেল দোলাকে অনুসরণ করল। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দোলা আগে বিছানার ওপর পড়ে থাকা জামা-কাপড়গুলো ভাঁজ করতে লাগল। ভাঁজ করা কাপড়গুলো হিমেল আলমারিতে রাখছিল। ময়লা কাপড়গুলো দোলা হিমেলকে দিয়ে বলল,
“এগুলো হুইল পাউডার দিয়ে ভিজিয়ে রেখে আসো যাও।”
হিমেল তা-ই করল। কাপড় গোছানো শেষ হলে বিছানা গুছিয়ে, ঘর ঝাড়ু দিল দোলা। রান্নাঘরে রান্নাবান্না করা হয়নি বলে এর অবস্থাটা ঠিক আছে। তবুও দোলা কাপড় ভিজিয়ে রান্নাঘরটা মুছে ফেলল। রুম মোছার সময় হিমেল দৌঁড়ে এসে বলল,
“এই, এই আমাকে দাও। আমি রুম মুছছি। তুমি অনেক কাজ করেছ।”
“এইটুকুও পারব।”
“আমি জানি তুমি পারবে। কিন্তু আমিই করব।”
অগত্যা দোলা মেনে নিল। সেই সময়টুকুতে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবারগুলো গরম করে নিল দোলা। লাগেজ থেকে নিজের কাপড়গুলো বের করে আলমারিতে রাখল। এক সেট কাপড় নিয়ে গোসল করতে গিয়ে হিমেলের কাপড়গুলোও ধুয়ে এলো। রুমে এসে দেখে হিমেল খুব সুন্দর করেই ফ্লোর মুছেছে। এখন আর বোটকা গন্ধটা আসছে না। এর পরিবর্তে ফুলের সুবাস ভেসে আসছে। সম্ভবত রুম স্প্রে দিয়েছে। হিমেল বারান্দা থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে বলল,
“কাপড়গুলো আমি ছাদে দিয়ে আসি দাও।”
দোলা রাজি হলো। এদিক-ওদিক খুঁজেও সে একটা আয়নার হদিস বের করতে পারল না। হিমেল ছাদ থেকে এসে দোলাকে কিছু খুঁজতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“কী খুঁজছ?”
“আয়না। তোমার কাছে আয়না নেই?”
হিমেল নতমুখে বলল,
“না, বউ। আমার তো আয়না লাগতো না।”
দোলা হেসে ফেলল। বলল,
“ইট’স ওকে। তুমি গোসল করে আসো।”
হিমেল গোসল করে আসার পর দুজনে খেয়ে নেয়। একটু টায়ার্ড থাকায় দোলা শুয়ে পড়ে ঘুমানোর জন্য।
দোলার ঘুম ভাঙে বিকেল চারটা নাগাদ। চোখ মেলেই দেখে মুখের সামনে হিমেল হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে চমকে ওঠে দোলা। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসতে গেলে হিমেল তার দু’বাহু ধরে বলে,
“রিল্যাক্স, রিল্যাক্স! আমি।”
এরপর সে দোলাকে খাট থেকে নামিয়ে পেছন থেকে হাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে। দোলা জানতে চায়,
“কী করছ?”
“বলছি।”
কিছুক্ষণ পর চোখ ছেড়ে দেয় হিমেল। দোলা ঝাপসা দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে দেখে ড্রেসিংটেবিল। সে চোখ ঝাঁকিয়ে আরও একবার দেখল। পেছনে ফিরে হিমেলের দিকে তাকাতেই হিমেল ওর নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বলল,
“আমার সুন্দরী বউয়ের জন্য সুন্দর উপহার। আমি চাই, প্রতিবেলা আয়না মুগ্ধ হোক আমার সুন্দরী বউটাকে দেখে।”
দোলা কিছু বলতে পারল না। আয়নাতেই হিমেলের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল। একটু একটু করে যেন সে হিমেলের মাঝে তলিয়ে যাচ্ছিল। কেমন ঘোরলাগা মায়ায় সে আটকে যাচ্ছে। হিমেলকে তার এত আপন আপন মনে হয় কেন? কেন প্রতিটা মুহূর্ত এই ছেলেটা তাকে স্পেশাল ফিল করায়? গত সাতদিনে দোলার মেন্টালি টেনশন অনেক কমেছে। রাফসানের কথা ঠিক কোন সময়ে মনে পড়েছে বা আদৌ মনে পড়েছিল কিনা সেটাও ঠাওর করতে পারছে না দোলা।
তার ভাবনার মুহূর্তে ব্যাঘাত ঘটিয়ে হিমেল হাত টেনে ধরে বলল,
“তোমার জন্য আরও একটা সারপ্রাইজ আছে। দেখবে আসো।”
বারান্দায় গিয়ে দেখে হরেক রকমের ফুল গাছ। বেলীফুলের সুবাসে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেও যেই রুমটাকে তার আবর্জনা ফেলার জায়গা মনে হচ্ছিল, এখন সেই রুমটাকেই তার স্বর্গ মনে হচ্ছে। মনের উথালপাতাল করা খুশির জোয়ার দোলা প্রকাশ করতে পারছিল না। তার চোখে আনন্দের অশ্রু। খুশিটুকু প্রকাশ করতেই বোধ হয় সে হিমেলের বুকে মাথা রাখল।
অনেকক্ষণ দুজনে এভাবে থাকার পর দোলা বলল,
“তোমার সেই বোনকে তো আনলে না।”
হিমেলের মুখটা শুকনো দেখায়। বিষাদিতস্বরে বলে,
“পৃথুলা আর ওর রুমমেট কেউই নেই।”
“কোথায় গেছে?”
“জানিনা। বাড়িওয়ালা বলল, আর নাকি আসবে না।”
হিমেলকে মন খারাপ করতে দেখে দোলার নিজেরই এখন খারাপ লাগছে। সে প্রসঙ্গ বদলে বলল,
“দেখো ওয়েদারটা সুন্দর না? মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।”
“হুম।”
“বৃষ্টিতে ভিজবে?”
“না।”
“কেন?”
“তোমার জ্বর আসবে।”
“কিচ্ছু হবে না।”
বলতে বলতেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়। দোলা নিজেকে হিমেলের বাহুডোর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
“চলো ছাদে যাই।”
“উঁহু! এখানেই থাকি। এখানেই ভিজব। কাছ থেকে যেও না।”
হিমেলের আবদারে কী ছিল কে জানে! দোলা সরল না বাহুডোর থেকে। বৃষ্টির ঝাপটায় দুজনেই ভিজে যাচ্ছিল। মনের ভেতর সঞ্চারিত হচ্ছিল প্রেমের তুষ। দোলার ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেল হিমেল। ঠোঁটের দিকে মুখ এগিয়ে নিতেই দোলা আটকে ফেলল। কাঁপান্বিত কণ্ঠে বলল,
“এখানে নয়!”
হিমেল মুচকি হাসল। দুজনের এতটা কাছাকাছি আসা আজই প্রথম নয়। তবুও দোলাকে লজ্জা পেতে দেখে তার ভীষণ ভালো লাগছে। কী সুন্দর লাজুক মুখ! সে দোলাকে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে গেল। ভালোবাসার সমুদ্রে দুজনে তলিয়ে গেল একসাথে।
_________
আরশানের সঙ্গে একত্রে বসবাস করার কতগুলো দিন কেটে গেছে পৃথুলা জানে না। যদিও একসাথে সময় কাটানো হয়েছে খুব কম। আরশান হরহামেশাই তার কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। পৃথুলা এসব নিয়ে অভিযোগ করে না। দিনশেষে মানুষটার ক্লান্ত মুখ যে দেখতে পারে এটাই তো অনেক।
বাড়িতে এখন সে একা। গত দিনগুলো থেকে পৃথুলা সেই বাংলো বাড়িতেই আছে। এই বাড়িটাকেই তার ভীষণ আপন আপন লাগে। ভয় লাগে না আর একটুও। সে আপন মনে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে গুণগুণ করে গান গাইছিল। দরজা খোলার শব্দ শুনে সে পিছু ফিরে তাকাল। আরশান এসেছে। পৃথুলা বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই প্রবল বেগে দৌঁড়ে এসে আরশান ওকে জড়িয়ে ধরে। এই কাজটা আগে পৃথুলা সবসময় করত। আরশান পৃথুলার চোখেমুখে অজস্র চুমু খেয়ে বলে,
“ভালোবাসি।”
পৃথুলা মুচকি হাসে। আরশানের ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
“আমিও ভালোবাসি।”
অদ্ভুতভাবে আরশান পৃথুলাকে চোখে হারাতে শুরু করে। এক সেকেন্ড না দেখলেই যেন তার দম আটকে আসে। একদিন পৃথুলাকে সারা বাড়িতেও তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেল না আরশান। দুশ্চিন্তায় তার পাগল হওয়ার উপক্রম। তখনই পৃথুলা বাহির থেকে আসে। তার হাতে বন্য ফুল। আরশান কী করবে বুঝতে পারছে না। প্রচণ্ড ধমক দিতে গিয়েও পারল না। বরঞ্চ জড়িয়ে ধরে বলল,
“কোথায় চলে গেছিলে তুমি?”
“ছাদ থেকে দেখলাম এই সুন্দর ফুলগুলো ফুটেছে। তাই আনতে গেছিলাম।”
“তুমি একা কখনো বাড়ির বাইরে বের হবে না। কথা দাও।”
পৃথুলা ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“কী হয়েছে বলুন তো? আজকাল আপনি এরকম আচরণ করেন কেন? সর্বদা চোখে চোখে হারান। এত দুশ্চিন্তা করেন কেন আমাকে নিয়ে?”
আরশান পৃথুলার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
“তুমি বুঝবে না।”
পৃথুলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমি তো আর বাচ্চা নই। বোঝালে বুঝব। আমার আড়ালে কী হচ্ছে বলবেন কি? যেটা আমি জানি না!”
“কিছুই হয়নি। তোমাকে আমি ভালোবাসি। দুশ্চিন্তা হবেই।”
“তাই বলে এরকম? কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক পরিবর্তন। আমি আর এসব লুকোচুরি নিতে পারছি না। আমাকে বলেন প্লিজ!”
আরশান ঠান্ডা গলায় বলে,
“কিছু হয়নি পৃথু।”
পৃথুলার মেজাজ চড়ে যায়। ফুলগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
“কিছু না, কিছু হয়নি, জানিনা, এমনি জাস্ট এ কথাগুলো শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি আমার থেকে কিছু না কিছু তো অবশ্যই হাইড করছেন। বলবেন না যখন ঠিকাছে। বলতে হবেও না।”
পৃথুলা বড়ো বড়ো কদম ফেলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল বাহির থেকে। আরশান অনেক বার ডাকার পরেও পৃথুলা দাঁড়াল না। সন্ধ্যায় নাস্তা করেনি। এমনকি রাতে খাওয়ার জন্যও এলো না। আরশান, শিমুল অনেকবার ডেকেও ব্যর্থ হলো। ওদেরও আর রাতে খাওয়া হলো না। চিন্তিতচিত্তে আরশান গিয়ে নিজের রুমে শুয়ে পড়ে।
রাতঃ ১:০৫ মিনিট
আরশানের রুমে ভেজিয়ে রাখা দরজাটি আস্তে করে খুলে গেল। পা টিপে টিপে ভেতরে প্রবেশ করল একটা নারী মূর্তি। তার চোখে জল। মন অনুতপ্ত। আরশানের বিরহে পুড়ছে সে। বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে সে আরশানের শিয়রে গিয়ে বসল। এগিয়ে গেল মুখের কাছে। গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,
“আমি খুব বাজে! কষ্ট দেই।”
কান্নার জন্য আর কিছু বলতে পারল না। দৌঁড়ে চলে আসতে যাবে সেই সময়ে হাতে টান পড়ে। পৃথুলা ছিটকে এসে পড়ে আরশানের ওপর। নীল রঙের ডিম লাইটের আলোতে দুজনের মুখ খুব কাছাকাছি। দুজনেই দুজনের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। পৃথুলা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আরশান মুচকি হেসে বলে,
“চোরের মতো এসে আবার চোরের মতোই চলে যাচ্ছ কেন? কষ্ট দিয়েছ। অথচ আদর দেবে না?”
পৃথুলার চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আরশানের গালে। আরশান পৃথুলাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে সে পৃথুলার ওপর ঝুঁকে শুলো। চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“বোকা মেয়ে! সবসময় শুধু কাঁদতে হয়?”
পৃথুলা কাঁদতে কাঁদতে আরশানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ভালোবাসি। আপনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।”
“আমিও আমার পৃথুকে ভালোবাসি।” বলে আরশান পৃথুলার কপালে চুমু খেল।
সেই সময়ে শিমুল এসে বাইরে থেকে ব্যস্তভাবে আরশানের দরজায় কড়া নেড়ে বলল,
“স্যার, জলদি উঠুন।”
পৃথুলা এবং আরশান দুজনেই বেরিয়ে এলো। শিমুল ওদের একসাথে দেখেও অবাক হলো না। বরং কাজের কথায় এসে বলল,
“আমরা এখানে নিরাপদ নই। জলদি এখান থেকে আমাদের পালাতে হবে। ওরা আসছে।”
আরশান বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে বলে,
“শিট!”
“কী হয়েছে? কারা আসছে?” জানতে চাইল পৃথুলা।
আরশান গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে বলল,
“পরে সব বলছি। আগে এখান থেকে আমাদের যেতে হবে।”
ফোন, ওয়ালেট সব নিয়ে আরশান পৃথুলার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে। বাড়ির পেছনের গেইটে আগেই শিমুল অপেক্ষা করছিল। ওরা আসার পর তিনজনে ঘন জঙ্গলে বেরিয়ে পড়ে। গাড়ি রাখা আছে মেইন রোডের ওখানে। ঐ রাস্তায় যেতে হলে বাড়ির সামনের দরজা দিয়েই যেতে হবে। কিন্তু ঐ পথ সেইফ নয়। চাঁদের আলো ছাড়া অন্য কোনো আলো জঙ্গলে আসার উপায় নেই। অশরীরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোকে অতিক্রম করে তিনজনে এগিয়ে চলছিল। খুব কাছ থেকে মানুষের পদশব্দ শোনা যাচ্ছে। আরশান এবং শিমুল দুজনেই সচকিত হয়ে পড়ে। রাস্তা বদলাতে হবে। বাম সাইড রেখে এবার তারা ডান সাইডে হাঁটতে থাকে। এই ঘনজঙ্গলে পথের অভাব নেই। যেদিক দিয়ে যাবে সেটাই পথ হয়ে যাবে। কিন্তু এর শেষ কোথায় সেটা কেউ জানে না। হঠাৎ করেই তাদের চোখেমুখে লাইটের আলো পড়ে। তাদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে মুখ ঢাকা অনেকগুলো মানুষ। আরশান পৃথুলার উদ্দেশ্যে বলে,
“দৌঁড়াও!”
তিনজনে গন্তব্যহীন পথে দৌঁড়াচ্ছে। ওদের পিছু পিছু আসছে সেই আগন্তুকেরাও। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে জঙ্গলের শেষ ভাগে চলে এসেছে তিনজন। এখানে বিশাল বড়ো নদী ছাড়া আর কিছু নেই। নদীর পানিতে প্রবল স্রোত। ঝাপ দেওয়া ছাড়া বাঁচার আর কোনো উপায়ও নেই। ওদিকে শত্রুরাও কাছাকাছি চলে এসেছে। কোনোকিছু আর বলার সুযোগ না দিয়েই পৃথুলাকে নিয়ে ঝাপ দিল আরশান। ওদের দেখাদেখি ঝাপ দিল শিমুলও। পানিতে পড়তে পড়তে পৃথুলা কোনোরকমে শুধু এইটুকুই বলতে পারল,
“সাঁ..তার পারি না!”
ঠিক ঐ সময়ে আরশানের থেকে পৃথুলার হাতও ছুটে যায়। পানিতে পড়ে আলাদা হয়ে যায় দুজন। স্রোতের সাথে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে পৃথুলার হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে শিমুল। ঠান্ডা পানিতে শরীর কাঁপছে। সে কাঁপান্বিত কণ্ঠে বলে,
“হাতটা শক্ত করে ধরুণ ম্যাম।”
পৃথুলা পানিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে না। তার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। শিমুলের থেকেও ছুটে যাচ্ছে তার হাত। সে পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]