মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-০৭

0
15

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_৭
🦋
অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই যে যার মতো বাসায় চলে আসে।মায়া বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে নিজের গাড়ির দিকে গেলেই রাজের গাড়ি সামনে আসে।ওই গাড়িতে রাজ একাই ছিলো।মায়াকে উদ্দেশ্য করে রাজ বলে,”আমার গাড়িতে উঠে বস।”

“কোনো দরকার নেই।আমার গাড়ি আছে আমি যেতে পারব।”

রাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে মায়ার হাত ধরে উঠিয়ে দেয় নিজের গাড়িতে।মায়াকে বসিয়ে দিয়ে মায়ার দিকে ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে বলে,”এক কথা এক আবদার একবারই করব আমি।বারবার যেনো রিপিট করতে না হয়।”

বলেই রাজ নিজের সিটে বসে ড্রাইভ করতে থাকে।মায়া তারেককে এসএমএস করে দেয় যে মায়া রাজের সাথে আছে।গাড়ির ভিতরে মায়া বসে বসে প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত আর রাজ ড্রাইভ করতে।মাঝে মাঝে রাজ তাকায় মায়ার দিকে।মায়া আনমনে বাইরে তাকিয়ে থেকে বলে,”এভাবে তাকাবেন না মন্ত্রী মশাই।মায়ার প্রেমে পড়ে ছারখার হয়ে যাবেন।”

“মায়ার প্রেমে মত্ত আমি।শুধু মায়াকে আমার করে পাওয়াটাই বাকি।”

হালকা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে মায়া।রাজ তাকায় সেদিকে।হঠাৎ মায়ার ফোনে কল আসে।মায়া রিসিভ করলে ওপাশ থেকে কিছু বলে। যা শুনে মায়া বলে,”তিন দিন পর যাবো কক্স বাজারে।আমার জন্য প্লেনের টিকিট কেটে রাখো। নির্জন জায়গা খোলা পরিবেশ দেখা যায় এমন দেখেই রুম বুক করবে আমার জন্য।”

রাজ শুনলো কথাগুলো।মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,”কক্স বাজারে কেনো?তোমার বিজনেস তো চট্টগ্রামের অন্য এরিয়াতে।”

“কিছু সময় নিজেকে একা দিতে চাই তাই।চট্টগ্রামের ফ্যাক্টরি ঘুরতেও পারবো আর কক্স বাজারের পরিবেশ উপভোগ করবো।”

বলেই সিটে মাথা ঠেকায় মায়া।রাজ বলে ওঠে,”ইশ,এই সিট যদি আজ আমার কাধ হতো।”

মায়া প্রতিক্রিয়া করে না।রাজ গাড়িতে গান চালিয়ে দেয়।গান বাজতে থাকে আর মায়া রাজ দুজন দুজনকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকে।

সকালে~~
সিড়ি দিয়ে একসাথে নামছে দুই ভাই,রাজ আর রুদ্র।সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।রাজ ও রুদ্র বসে পড়তেই সার্ভেন্ট তাদের খাবার দেয়।রুদ্র চামচ হাতে নিতেই হিয়ার চোখ যায় রুদ্রর হাতের ব্যান্ডিসের দিকে।কোনো কিছু বলে না হিয়া।হিয়ার ধারণা কোথাও মাস্তানি করে এসেছে তাই।মোহন সরদার ছেলের হাত দেখে বলেন,”কি হয়েছে হাতে?”

তাচ্ছিল্য করে রুদ্র উত্তর দেয়,”যাক কারো চোখ পড়লো আমার দিকে।আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে নিয়ে ভাবার কারো সময় নেই।”

রুদ্রের কথায় বিরক্ত হয় মোহন সরদার।মাহমুদ সরদার রুদ্রকে বলেন,”তুমি আমাদের পরিবারের এক অংশ।রাজকে আমরা যেভাবে দেখি তার থেকেও বেশি আমরা তোমাকে দেখি।আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসি।”

রুদ্র তাকায় হিয়ার দিকে।মাহমুদ সরদারকে জিজ্ঞাসা করে,”সত্যি এই পরিবারের সবাই আমাকে ভালোবাসে?”

মাহমুদ সরদার বলেন,”হ্যা সবাই ভালোবাসি।এই সবাই মিলে রুদ্রকে বল ভালোবাসি রুদ্র।”

হিয়া বাদে সবাই একসাথে বলে ওঠে,”ভালোবাসি রুদ্র।”

এবার মাহমুদ সরদার বলেন,”দেখেছো তো?”

রুদ্র বলে ওঠে,”কই আর বলল সবাই!তোমার ছোট মেয়ে তো চুপ ছিলো।”

রাজ তাকায় রুদ্রর দিকে।কিছুটা সন্দেহ লাগছে রুদ্রের কথাবার্তা।মাহমুদ সরদার হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”কি হলো হিয়া?তুমি বলোনি রুদ্রকে ভালোবাসো!এখনই বলো।”

হিয়া আমতা আমতা করে বলে,”ভালোবাসি রুদ্র ভাই।”

রুদ্র জানে হিয়া মন থেকে বলেনি।কিন্তু হিয়াকে পটাতে তো সে কিছুটা হলেও সক্ষম।এভাবে আস্তে আস্তে হিয়া তার প্রেমে পড়বে।এটা রুদ্রের বিশ্বাস।

রাজ ব্রেকফাস্ট শেষ করে মাত্র উঠলো।ঠিক সেই সময় রাজকে পিছন থেকে একজোড়া হাত জাপটে ধরে।রাজ বুঝে যায় মেয়েটি আর কেউ না রুদ্র ও মিলির একমাত্র খালাতো বোন জারা। জারা অনার্স শেষ করে এবার মাস্টার্সের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে।রাজ বাংলাদেশে আসার পর জারা রাজের প্রেমে পরে।তখন জারার বয়স কম।প্রায় পাঁচ বছর হলো জারা লন্ডনে যায় অনার্সের জন্য।আজকে এসেছে বাংলাদেশে। আর এসেই সোজা রাজের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।রাজকে পাগলের মত ভালোবাসে জারা।কিন্তু রাজ তাকে দুই টাকারও দাম দেয় না।তবে মিসেস সোনালীর মতে আঠার মতো লেগে থাকলে একদিন সফল হবেই।যেমনটি তিনি করেছিলেন মোহন সরদারের সাথে।এছাড়া মিসেস মালিনীর খুব পছন্দ জারাকে।

রাজ পিছন থেকে জারার হাত সড়িয়ে ঘুরে তাকায়। জারা বলে,”I miss you so much baby.”

বলেই জারা রাজের অতি নিকটে আসবে সাথে সাথে রাজ বাধা দিয়ে বলে,”ওহ জারা বেইবী!ডোন্ট ট্রাই টু টাচ মি, ডোন্ট ট্রাই টু কিস মি।”

টেবিলে বসে থাকা রুদ্র হিয়া সিয়া ও মিলি একসাথে হেসে দেয়।মিসেস মালিনী মিসেস সোনালীকে খোঁচা দিয়ে বলেন,”এভাবে কেউ করে সবার সামনে!কি শুরু করলো জারা?”

মিসেস সোনালী শান্তনা দিয়ে বলেন,”আরে এরা বিদেশী কালচার শিখেছে।এগুলো তো এদের জন্য পান্তা ভাত।তুমি অত কিছু ভেবোনা।”

জায়ের কথাতে চুপ করলেন মিসেস মালিনী।মাহমুদ সরদার বিরক্ত হয়ে উঠে গেলেন।মোহন সরদার ভাইয়ের সাথে পিছু নিলেন।মিলি এসে জারাকে জড়িয়ে ধরে।বলে,”I miss you so much.”

“আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি। স্পেশালি রাজ বেইবীকে।”

ওরা কথা বলতে থাকে রাজ চলে যায়।রুদ্র হিয়ার দিকে তাকিয়ে চলে যায় নিজের কাজে।

~~~
ফ্যাক্টরিতে এসে সবকিছু দেখে নিজের কক্ষে ঢুকে মায়া।কল করে তারেককে আসতে বলে।তারেক এসে মায়ার কেবিনের গেটে নক করে।মায়া বলে,”come in.”

তারেক এসে বলে,”ডেকেছিলেন ম্যাম?”

“হ্যা ওই কাজগুলো কমপ্লিট…”

আর বলতে পারলো না মায়া।তারেকের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।তারেকের নাকে ব্যান্ডিস করা।কপাল ফুলে আছে।সাদা চামড়া পুরো লাল টমেটোর মতো।মায়া হেসে দেয় তারেককে দেখে।বলে,”এ কি অবস্থা তোমার?”

“আসলে ম্যাম কাল অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলাম।ঠিক তখন পিছন থেকে কেউ আমার মুখ বেধে দেয়।তারপর ধুমধাম মারতে থাকে।আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।কে করলো কিছুই বুঝলাম না।”

মায়া কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”কালকে কাপল ড্যান্স ছাড়া আর কি কি করেছিলে?”

“আপনার এসএমএস পেয়ে আমি আপনার বাসায় গাড়ি রেখে আসি।তারপর আমি আমার বাড়ির দিকে যেতে নেই।তখন ঘটে এই কাহিনী।”

মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলে,”রৌদ্রদ্বীপ রুদ্রকে তুমি কতটুকু চেনো?”

“কালকেই তো প্রথম দেখেছিলাম।তেমন একটা চিনি না।”

“খোঁজ নেও ভালো করে।সকল ইনফরমেশন কালেক্ট করো। আর হিয়াকে তোমার কেমন লেগেছে?”

“মোটামুটি ভালই,কেনো?”

“তোমার নতুন ডিউটি শুরু।বেশি বেশি হিয়ার সাথে মিশবে।হিয়াকে ট্র্যাপ করে ওর আশেপাশে থাকবে।”

“ওকে ম্যাম।”

বলেই চলে গেলো তারেক।মায়া হাতে থাকা কলম দুই আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে নাড়াতে থাকে। আর ভাবতে থাকে,”রুদ্রর দুর্বলতা হিয়া।হিয়া যদি অন্যের প্রতি দুর্বল হয় তাহলে রুদ্র ভেঙ্গে যাবে।তখনই রুদ্রর জীবনে এন্ট্রি নিবে মায়া।”

~~~
রাজ বসে আছে নিজের কক্ষে। পিয়াশ এসে বলে,”বস চট্টগ্রামের টিকিট কাটা কমপ্লিট।দলের লোকদের সবকিছু বোঝানো আছে।ওরা এই এক সপ্তাহ নিজেদের মতো গুছিয়ে নিবে।”

“গুড ভেরি গুড।”

“কিন্তু বস আমরা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ বাদ দিয়ে চট্টগ্রামে কেনো যাচ্ছি।”

“তোমার বিয়ে হয়েছে দেড় মাস হতে গেলো পিয়াশ।বউয়ের সাথে কি হানিমুন করবে না?মনে করো তোমাকে হানিমুনের একটা সুযোগ করে দিলাম।”

“হানিমুনে বউকে সহ বসও যাবে!”

টেবিলে আলতো শব্দ করে রাজ বলে,”ওহ কাম অন পিয়ু!বী স্মার্ট।আজকাল মানুষ ইউনিক কিছু করে,তুমিও করবে।তোমার বসকে নিয়ে হানিমুনে যাবে।

পিয়াশ কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।মাথা কি তার নিজের গেছে নাকি বসের গেছে।কিছু বললে আবার হানিমুনটাই ক্যান্সেল হবে।ফ্রীতে হানিমুন প্যাকেজ পাচ্ছে।তাই চুপ করে রাজের কথায় সম্মতি জানায়।

চলবে…?