মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-১০

0
12

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_১০
#ইশরাত_জাহান
🦋
সুট বুট পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে অফিসের জন্য গোছাতে থাকে মায়া।চট্টগ্রামের ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে একটু পর।মায়া অনুষ্ঠান ছাড়া মুখে কোনো প্রকার মেকআপ ব্যাবহার করে না।রেডি হওয়ার ভিতর শুধু হাত ঘড়ি মাথার চুলগুলো পনিটেল করা ও কানে ছোট এয়ারিং পরা থাকে।মায়া হাতে ঘড়ি পড়তে থাকে তখনই মায়ার রুমে নক করা হয়।সকালের খাবার আসে।মায়া না তাকিয়ে বলে,”come in.”

খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে রাজ বলে,”আপনার খাবার এসে গেছে ম্যাম।ঝটপট গরম গরম খাবার খেয়ে নিন।”

রাজের কণ্ঠ শুনে মায়া স্মিত হাসি দিয়ে তাকায় রাজের দিকে।বলে,”মন্ত্রীগিরি বাদ দিয়ে কি এখন ওয়েটারের কাজ ধরেছেন?”

মায়ার কাছে এসে এক হাত দুরত্ব রেখে দাড়ায় রাজ।মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”মায়াবতীর জন্য রাজ ওয়েটার কেনো কবলারও হতে পারে।”

“How funny!”

“Everything is only for you. চলো এবার একসাথে খেয়ে নেই।”

“আপনার মনে হয় না আপনি আমার ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছেন?”

“বউ বানাতে চেয়েছি।ক্লোজ তো হবই।”

“বউ বানাতে পারবেন না আপনি আমাকে।”

“চ্যালেঞ্জ করছো?”

“যদি বলি হ্যাঁ।”

“Challange accepted.”

বলেই চোখ টিপ দেয় রাজ।মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকায় সেদিকে।রাজ মায়ার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়।তারপর টি টেবিলের উপর থেকে খাবারগুলো নিজের হাতে নেয়।মায়ার মুখের সামনে খাবারগুলো ধরলে মায়া না খেয়ে নিজের মতো আলাদা প্লেটে খাবার সাজিয়ে খেতে থাকে।

রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে।মায়া পানি পান করে বলে,”এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না মন্ত্রী মশাই।আপনার কার্য হাসিল হবে না।”

“মন্ত্রী হয়ে যদি নিজের রাজ্যের রানিকে আনতে না পারি তাহলে এই মন্ত্রী জীবনের সবথেকে ব্যার্থ এক …”

আর কিছু না বলে থেমে গেলো রাজ।তারপর আবার বলে,”এই মায়া শুধু রাজের হবে। আর কেউ মায়ারাজের ভিতরে আসলে তার জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে।মাইন্ড ইট।”

বলেই রাজ উঠতে নেয়।তখনই রাজের হাত ধরে মায়া।রাজ দাড়িয়েছিলো চলে যাওয়ার জন্য।মায়ার এই হাত ধরার জন্য থমকে গেলো রাজ।ঘুরে তাকালো মায়ার দিকে। মায়া বলে,”একসাথে খাবেন বলেছিলেন।আমার তো খাওয়া শেষ হয়ে গেছে।আপনি খাবেন না?”

মায়ার কথাতে ম্লান হেসে রাজ বসে মায়ার পাশে।আবদারের সুরে বলে,”খাইয়ে দিবে আমাকে,মায়াবতী?”

“খেতে দিলে ঘুমোতে চান কেন?আমি আপনাকে খেতে বলেছি মানে এই না যে আপনার প্রতি আমার মনে প্রেম জেগেছে।”

“আরে ধুর।প্রেমের কথা কে বলেছে?তুমি ভালোবাসো আর নাই বাসো হবে তো তুমি আমারই।”

বলেই রাজ খাবারগুলো নিজে থেকে খেতে থাকে।মায়া তাকিয়ে হালকা হাসে।খাবার শেষ করে রাজ চলে যায় নিজের রুমের দিকে।পথে দেখা হয় পিয়াশের দিকে।

পিয়াশ বলে,”ওয়েটার থাকতে আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেনো?আমি এবার থেকে ওয়েটারকে আরো আগে পাঠিয়ে দিবো।”

“তুমি ওয়েটার পাঠিয়ে দিবে আর আমি তোমাকে ঠাটিয়ে কয়েকটা দিবো।”

ভ্রু কুঁচকে পিয়াশ বলে,”মানে?”

“লজ্জা করে না তোমার!হানিমুনে এসে বউয়ের সাথে রোমান্স না করে বসের রোমান্সে বাধা দিতে?”

“কিন্তু বস!আমি তো আপনার সুবিধার জন্যই বললাম।”

“শোনো পিয়াশ,বউয়ের জন্য কুলিও হওয়া যায় তাতে লজ্জার কিছু নেই।”

রুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে রাজ আবার বলে,”শুধু শ্বশুরের মাথায় নকল গুলি তাক করে বিয়ে করলেই হয় না।বউয়ের সাথে রোমান্স করতে হয়।বেটা নির্ঘাত বলদ ছিলো।নাহলে কেউ নকল গুলি দেখে ভয়তে মেয়ে বিয়ে দেয়!”

বলেই হাসতে হাসতে ঘরে ঢোকে রাজ। পিয়াশ মিনমিন করে বলে,”আমাকে কোথায় রোমান্স করতে দেন?বউ কাছে আনলেই তো আপনার বউয়ের জন্য ডাক দেন।…”

আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজ রুমের দরজা থেকে মাথা বের করে বলে,”খবরদার আমাকে বউ পাগল বলে গালাগাল করবে না।”

পিয়াশ অবাক হয়ে বলে,”আপনি কিভাবে জানলেন বস!”

“আমি যতটা না আমার মায়াবতীর মন বুঝি তার থেকেও বেশি তোমার মন বুঝি পিয়ু বেইবী।”

পিয়াশ হালকা হেসে চলে যায় মৌয়ের কাছে।রাজ পিয়াশকে নিজের এসিস্ট্যান্ট কম ভাই বেশি মানে। পিয়াশের বাবা মা নেই।তাই রাজ পিয়াশের ছোট ছোট বিষয়গুলো সাহায্য করে দেয়। পিয়াশ আর মৌ রাজের গড়া আলাদা এক বাসাতে থাকে।রাজের ভালোবাসা আর এই ছোট ছোট মজার কথাগুলো পিয়াশ নিজেও ইনজয় করে।এই বস না থাকলে সে এত ভালো পরিবেশ পেতো না।

কানে ব্লুটুথ কানেক্ট করে পার্সোনাল গার্ডের সাথে কথা বলছে মায়া।মোহন সরদারের পিছনে নিজের আলাদা এক গার্ড রেখেছে।যে সারাক্ষণ ফলো করে মোহন সরদারকে।ওপাশ থেকে গার্ড বলে,”মোহন সরদার কাল একটি মিটিংয়ের ব্যাবস্থা করেছেন।ওখানে আমাদের লোক পার্টনারশিপ সেজে থাকবে ম্যাম।সব ব্যাবস্থা কমপ্লিট।”

মায়া লিফটের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে,”ভেরী গুড।কালকের মিটিংয়ে যেনো মোহন সরদার জিততে না পারে।যে করেই হোক ডিল যেনো অন্য কোম্পানির লোক পায় সেই দায়িত্ব তোমার।”

“জী ম্যাম।কিন্তু একটা অন্য বিষয় আছে এখানে।”

লিফটের ভিতর ঢুকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে টাচ করে মায়া বলে,”কি বিষয়?”

“আমি ছাড়াও আরো একজন মোহন সরদারকে ফলো করে ম্যাম।”

“আর ইউ শিওর?”

“একদম ম্যাম।একদিন হলে তো কথা ছিলো না।কিন্তু পরপর তিনদিন তাও একই হুডি আর মাস্ক পরা লোক একজন ব্যাক্তির পিছনে প্রতিনিয়ত থাকলে তো এটাই বোঝা যায়।”

“তার মানে এমন কেউ আছে যে মোহন সরদারের বরবাদ চায়।”

“হতে পারে ম্যাম।”

“ফলো হিম,তার ইন্টেনশন কি খুঁজে বেড় করো।”

“ওকে,ম্যাম।”

বলেই কল কাটে।অতঃপর লিফটের দরজা খুলে যায়।মায়া লিফট থেকে বেড় হতে নিবে তখনই দেখে রাজ লিফটের সামনে একটু ঝুঁকে দাড়িয়ে আছে।মায়া কিছু বলার আগে রাজ বলে,”আর ইউ রেডী,মায়াবতী?”

“ফর হোয়াট?”

“আপাতত তোমার ফ্যাক্টরিতে।তবে তুমি চাইলে প্রী হানিমুনের জন্য সমুদ্র এলাকা ফাঁকা করতে পারি।”

“নট ইন্টারেস্টেড।”

বলেই হাটা দেয় মায়া।রাজ মায়ার পিছন পিছন হাটতে থাকে।মায়া বলে,”আপনার গাড়ি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই?চলুন তাহলে যাওয়া যাক।তানাহলে তো মন্ত্রী মশাই আবার হুটহাট কোলে করে নিয়ে যায়।”

“আমার কোলে চড়তে তোমার এত ভালো লাগে মায়াবতী?”

“শাট আপ অ্যান্ড লেটস মুভ।”

মুখে আঙ্গুল দেখিয়ে রাজ বোঝায় সে চুপ করেছে।অতঃপর গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে রাজ মায়াকে ইশারা করে ভিতরে বসার জন্য।মায়া বসে পড়ে তারপর রাজ মায়ার পাশে বসে।গন্তব্য মায়ার ফ্যাক্টরিতে।
_____
ফ্যাক্টরিতে এসেছে মায়া ও রাজ।একজন মন্ত্রী মশাই এসেছে দেখে ফ্যাক্টরির সবাই মিলে রাজকে ওয়েলকাম করে।সবকিছু কমপ্লিট করে মায়া ও রাজ ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখতে থাকে।ফ্যাক্টরির কেয়ারটেকারের সাথে কথা বলে মায়া।তুলা সুতা ও বিভিন্ন কাপড় ভালোভাবে চেক করে।সবকিছুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে নিজের অফিস কক্ষে আসে মায়া।এটা মায়া না থাকলে বন্ধ থাকে।মায়া আসার আগেরদিন এই কক্ষ পরিষ্কার করা হয়।রাজ এসে মায়ার অফিস কক্ষের সোফায় বসে।চারপাশ ভালো করে দেখে বলে,”মানতেই হবে মন্ত্রী হয়ে জীবনে নিজে সফলতা অর্জন করে এখন একজন সফল বউ অর্জন করতে যাচ্ছি।”

মায়া উত্তর না দিয়ে ফ্যাক্টরির সকল হিসাব নিকাশ দেখতে থাকে।তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।রাজ মায়া গাড়িতে ওঠার পর একদল লোক গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।একজনকে কল করে বলে,”বস মেয়েটি তো একা নেই এখানে।সাথে মন্ত্রী শাহমীর রাজ আছে।এই মেয়েকে খুন করা এত সহজ না।”

ওপাশ থেকে বলে,”তোমাদের কি খেয়ে পুষেছি তাহলে?আমার ছেলে জেলের ভিতর বসে আছে আসামি হয়ে আর ওই মেয়ে কি না আরাম করছে।ফলো করতে থাকো মেয়েটিকে।একবার না একবার হলেও মেয়েটিকে নিজের আয়ত্বে আনার সুযোগ পাবে।ঠিক সেই সময় টার্গেট করে মেরে ফেলবে।”

“ওকে।”

কয়েকদিন আগে রিমুকে যে ছেলে ধর্ষণ করেছিলো তার বাবা লোক পাঠিয়েছে মায়ার পিছনে।রিমুর ধর্ষণ কেসে মায়া রিমুকে সাহায্য করেছিলো যার ফলে আজ লোকটি মায়াকে খুন করতে চায়।খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলো রিমুর হয়ে উকিলকে মায়া হায়ার করেছিলো।রাজের উকিলের বিষয় কিছু জানতে পারেনি।কারণ মায়ার উকিল দ্বারা সবকিছু সমাধান হয়ে যায়।খবরে রাজকে দেখানো হলেও সুনাম পায় মায়া।মায়ার দ্বারা রিমু আজ সমাজে আবারও উড়ন্ত এক নারী হয়েছে।শাস্তি পেয়েছে ধর্ষণকারী।এই কথাগুলো মায়ার ছবির সাথে খবরে দেখেছিলো ছেলেটির বাবা।তাই তো লোক লাগিয়ে রেখেছিলো।

চলবে…?