মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-১২+১৩

0
5

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_১২
🦋
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বইয়ের পাতায় মুখ লুকিয়েছে হিয়া।আজ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিলো।বই আর পড়া হয়নি। উহু কোনো একাডেমিক বই না তার প্রিয় গল্পের বই নিয়ে।চশমা চোখে দেওয়া মুখে হালকা হামি উঠছে।চেয়ারে বসে টেবিলের উপর এক হাত ভর করে থুতনিতে ঠেকিয়ে আরেক হাত বইয়ের পাতায় আবদ্ধ করে রাখলো হিয়া।ঠোঁটে মিষ্টি হাসির সাথে দুষ্টু মিষ্টি গল্পের কাহিনী।এই দৃশ্য দূর দরজায় দাড়িয়ে দেখছে রুদ্র।মনোমুগ্ধকর লাগছে তার কাছে এই শীতের সকালের দৃশ্য।করা শীত গায়ে চাদর জড়ানো হিয়াকে দেখতে রুদ্রর নিজের আলাদা ভালো লাগে।হিয়া সাজগোজ করে না।সবসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বজায় রাখে।রুদ্র হিয়ার এই রূপে অভ্যস্ত।রুদ্র কল্পনা করতে থাকে সিয়া ও হিয়ার জন্মের সময়টি।যেদিন সিয়া ও হিয়া হয় সেদিন রুদ্র মিলিকে নিয়ে হসপিটালে অপারেশন রুমে পাশে খেলছে আর আনন্দ করছে। মিলি বলে,”আমাদের নতুন দুই বোন আসবে।খুব ভালোবাসবো আমরা তাকে।”

রুদ্র বলে,”হ্যাঁ।আমাদের আরো দুই খেলায় সাথী আসবে।”

রুদ্রর তখন নয় বছর বয়স আর মিলির দুই বছর।সবার উত্তেজনায় রুদ্র নিজেও উকি দিতে থাকে অপারেশন রুমের দিকে কিন্তু সে ব্যার্থ।কিছুই দেখতে পারে না।মুখ ফুলিয়ে ফিরে আসে সেখান থেকে। ছোট রুদ্র মুখ ফুলিয়ে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে ঠিক সেই সময় নার্স বের হয়। হাতে দুটো ছোট ছোট শিশু।একজন শিশুকে কোলে নিয়ে কানে আজান দিচ্ছেন মাহমুদ সরদার।শিশুটি চুপ করে বাবার আজান শুনছে।সেই শিশুটি ছিলো সিয়া।রুদ্র সিয়ার দিকে থাকে অতঃপর বিরক্ত হয়ে তাকায় হিয়ার দিকে।হিয়া মে মে করে কান্না করছে।যেনো সে এক হিংসুটে।মাহমুদ সরদার সিয়ার কানে আজান দিয়ে সিয়াকে মিসেস সোনালীর হাতে দিয়ে দেন।তারপর হিয়াকে কোলে নেন।হিয়ার কানে আজান দিলে হিয়া আজানের পর পরই খিল খিল করে হেসে দেয়।রুদ্র এখনও মুখ ফুলিয়ে দেখছে।মাহমুদ সরদার খেয়াল করে দেখে রুদ্রর কাছে আসেন।বলেন,”কি হয়েছে বাবা?”

রাগী রাগী মুখ করে রুদ্র বলে,”তোমার মেয়েকে তো দেখতেই পারছি না।”

মাহমুদ সরদার হেসে হেসে রুদ্রর কোলে হিয়াকে দিতে যায়। আর বলে,”এই নেও আমার মেয়েকে দেখো।”

রুদ্র হিয়াকে কোলে নিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।বাবার কোল থেকে ছোট হিয়া অন্য কারোর কোলে গেছে।এবার সে নিজেই কান্না করতে থাকে।রুদ্র মুখ কালো করে ফেলে।বলে,”তোমার মেয়ে আমাকে ভালোবাসেনা।আমি কি পঁচা?”

মাহমুদ সরদার জোরে জোরে হেসে বলেন,”আমার বাবা অনেক ভালো।তুমি ওর সাথে খেলতে খেলতে ওর মন জয় করে নিও।দেখবে একদিন না একদিন ও তোমাকে ভালোবাসবে।”

রুদ্রর ছোট মনে কথাগুলো গেঁথে যায়।হিয়া ওকে একদিন না একদিন ভালোবাসবে।এটা যেনো বড় হওয়ার পরও রুদ্রর কাছে মুখস্ত বিদ্যা।রুদ্রর ভাবনার ছেদ ঘটে হিয়ার অট্টহাসিতে।হিয়া খুব জোরে জোরে হাসছে।রুদ্র শূন্য দৃষ্টির ছেদ ঘটিয়ে আবার হিয়ার দিকে তাকায়।হিয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।রুদ্র বুঝলো মজার কোনো এক জায়গা হিয়া এখন পড়ছে।
বই পড়ায় মগ্ন হিয়ার কানে ভেসে এলো,”কোনো নষ্ট পুরুষের প্রেম কাহিনী কি লেখা আছে তোর উপন্যাসের পাতায়?”

কথাটি রুদ্র বলে হিয়াকে।হিয়া থমকে যায় রুদ্রর কণ্ঠে।গত চারদিন ধরে রুদ্র তার আশেপাশে ঘোরে না।হিয়া আর তারেক কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে তাই ভেবে রুদ্র দূরে সরে আছে।এমনটা ভেবে রেখেছিলো হিয়া।তাই কাল আর তারেকের সাথে দেখা করেনি হিয়া।তারেকের সাথে ঘুরতে হিয়ার ভালো লাগে না।কিন্তু রুদ্রের জন্য শো অফ করে হিয়া।আবার তারেক নিজেও এখন ফ্রেন্ডলি হয়ে গেছে।ভালো না লাগার সত্বেও কথা বলতে থাকে হিয়া।রুদ্রের কণ্ঠ শুনে হিয়া তাকায় রুদ্রের দিকে।কিছু না বলে গাঁয়ের চাদর আরেকটু উপরে উঠিয়ে বইয়ের দিকে আবার তাকায়।রুদ্র ডান হাতে থাকা চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে হিয়ার সামনে রাখে।বাম হাতের আঙুলের ভিতর দুটো মগের গোল অংশ একসাথে ঢোকানো।তার টুকটুক শব্দে হিয়া তাকায় রুদ্রের হাতের দিকে।রুদ্র হালকা হেসে বলে,”চায়ের নেশা কাটাতে চাই।”

হিয়া চশমা হালকাভাবে ঠিক করে বেল,”নারীর নেশা কেটে গেছে?”

“হিয়াপাখির নেশা জেগে উঠেছে।”

“মদ ও ভিন্ন নারীতে মেতে থাকা পুরুষদের মুখে এমন কথা মানায় না।”

“মদের বদলে চা,ভিন্ন নারীর বদলে আমার হিয়াপাখি কবে হবে আমার?”

“নির্লজ্জ ও নষ্ট পুরুষ মানুষ।”

“তোর প্রেমে মত্ত।”

ঠাট্টার হাসি দেয় হিয়া।রুদ্র দেখেও যেনো দেখেনি। কাপ দুইটি টেবিলে রেখে ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে হিয়ার সামনে এক কাপ দেয় রুদ্র।বলে,”নে তোর নেশা।”

হিয়া কাপ নিয়ে চায়ে চুমুক দেয়।রুদ্র নিজেও তার নিজের চায়ের কাপে চুমুক দিতে থাকে।কিন্তু চোখ তার হিয়ার চায়ের কাপে আবদ্ধ।হিয়ার ঠোঁট চায়ের কাপে মিশে যেনো আলাদা আগুন জ্বলে উঠতে থাকে রুদ্রর বক্ষে।রুদ্র হিয়ার দিকে চোখ রেখেই বলে,”আমরা মানুষ কি অদ্ভুত তাই না হিয়াপাখি?”

হিয়া বুঝলো না এখানে এখন এই কথার মানে কি।তাই ভ্রু কুচকে তাকালো রুদ্রের দিকে।রুদ্র বলে,”আমরা যাকে একবার মন দেই তার সাথে কোনো কিছুর ঘর্ষণটাও যেনো সহ্য করতে পারি না।হোক এটা কোনো বস্তু বা কোনো ব্যাক্তি।হিংসেগুলো মনের মধ্যে নিজের থেকেই আবিষ্কার করে।এই যেমন এখন তোর চায়ের কাপ আমাকে হিংসায় পুড়িয়ে দিচ্ছে।”

রুদ্রর কথা মন দিয়ে শুনতে থাকে সাথে করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে থাকে হিয়া।রুদ্রর শেষ বাক্য শ্রবণ হতেই বিষম খেলো হিয়া।কটমট চশমা চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি এত লুচু কেনো?”

ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে রুদ্র বলে,”তোর মাইন্ড লুচু তাই।তুই কি ভেবেছিস!আমি তোকে চুমু খাবো?বোকা মেয়ে।”

“তাহলে চায়ের কাপকে হিংসা করার মানে কি?”

“চায়ের কাপে হিংসে করেছি মানে আমি তোকে চুমু খাবো?”

কোনো উত্তর না দিয়ে হিয়া ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে রুদ্রর দিকে।এই লুচু লোকটি তাকে কি বলতে চাইছে।রুদ্র হিয়ার কাপে তাকালো।এখনও অর্ধেক চা আছে ওটাতে।হিয়ার হাত থেকে চা নিয়ে নিজে চুমুক দিলো।হিয়া তাকিয়ে আছে সেদিকে।রুদ্র প্রায়ই এমন করে।হিয়া চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার পরপরই রুদ্র কাপ নিয়ে নিজেও চুমুক দেয়।
এক ডোকে সম্পূর্ণ চা শেষ করে রুদ্র।হিয়া তাকিয়ে থাকে সেদিকে।বলে,”এটা চা ছিলো আপনার মদ না।”

“আমার জন্য চাও যা মদও তাই।মদ ভুলিয়ে দেয় যন্ত্রণা,কল্পনায় ভেসে আনে তোকে আর চা থাকা মানে তো আস্ত তোর সাথেই একটি সময় কাটানো।”

“আপনার এই শক্ত শক্ত কথা আমার বুঝে আসে না।”

“আস্ত আমিটাকেই তো তুই বুঝিস না।”
বলেই কাপ ও ফ্লাক্স টেবিলে রেখেই উঠে যায় রুদ্র।গেট দিয়ে বেড় হতে হতে বলে,”চায়ের কাপে কখনও আমি নিজের ঠোট কল্পনা করি না।রুদ্র কারো জায়গা দখল করে না।বরং নিজের জায়গা করে নেয়।আমি নিজের জায়গা করতে আস্ত চায়ের কাপটাকেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো।”

হিয়া রুদ্রর কথাগুলো শুনলো।রুদ্র চলে যাওয়ার পর নিজের অজান্তেই দুই হাতে দুইটি চায়ের কাপ নিলো।তারপর কাপদুটি একত্র করে মিষ্টি এক হাসি দেয়।নিজের মনে আওড়ায়,”বাস্তবে মিলন না হোক।আমার কল্পনায় আপনার সাথে মিলন তো হয়েই গেছে।”

______
সূর্যের আলো বড় খোলা কাচের জানালা দিয়ে প্রবেশ করছে।শীতের মধ্যেও সূর্যের আলো আলাদা গরম উষ্ণতা উপহার দিতে থাকে।এই গরম উত্তাপে ঘুম ভেংগে যায় মায়ার।চোখ পিটপিট করে তাকায় মায়া।চোখ খুলেই যেনো অবাক হয়ে যায় সে। বেডের পাশেই মুখে হাত রেখে বসে আছে ব্ল্যাক ড্রেস পড়া রাজ।মায়া তাড়াতাড়ি উঠে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ?”

“মন্ত্রীকে ডেয়ার দেখাচ্ছো,মায়াবতী?”

রক্ত চক্ষু নিয়ে মায়া বলে,”আমার পারমিশন ছাড়া আমার রুমে কেনো ঢুকেছেন?”

রাজ ফিচেল হেসে বলে,”বিনা পারমিশনে আমার হৃদয়ে কেনো ঢুকেছ?”

দাত কটমট করে মায়া বলে,”আপনার ওই হৃদয়ে তালা মেরে রাখুন,মন্ত্রী মশাই।তাহলে আর কেউ ঢুকতে পারবে না।”

“তোমার মত চোরেরা ঠিকই পারবে।”বলেই মায়ার দিকে ঝুঁকে মায়ারমুখে ফু দিয়ে কপালের চুলগুলো উড়িয়ে দেয়।মায়া রাজের কলার চেপে ধরে।রাজ তাকায় তার দুই পাশের কলারের দিকে।বলে,”এমনি তোমার ঘুমন্ত মুখের নেশালো দৃশ্য দেখে আমি শেষ।এভাবে কলার টেনে কাছে টানলে তো মরেই যাবো।”

“তো যান মরে।”

“এভাবে বলে না,মায়াবতী। সত্যি সত্যি মরে যাবো।তবে আমি মরে যাওয়ার আগে তোমাকে আমার করেই যাবো।”

হালকা দুর্বল হয়ে এসেছে মায়ার হাত।কিন্তু রাজের কলার এখনও ধরে আছে।চোখ জ্বলতে থাকে তার।রাজের কথাগুলো দুর্বল করেছে মায়াকে।মায়া ঘোরে চলে গেলো।শক্ত সাহসী মায়ার চোখের কোনায় পানির বিন্দু জমেছে।রাজ উপলব্ধি করলো মায়ার দুর্বলতা।যখন মায়া শক্ত করে রাজের কলার ধরেছিলো রাজের গলার দিকে টান অনুভব করে।মায়া দুর্বল হওয়ার পর এই টান অনুভব হয় না রাজের।খোঁচা খোঁচা দাড়ির মাঝে কালো ঠোঁট জোড়া হাসতে থাকে।সিগারেট খায় রাজ।ঠোঁট তার আস্ত এক প্রমাণ।মায়া তাকিয়ে আছে সেই দিকে।চোখের পানি বিন্দু হয়ে আটকে আছে।এখনও গড়িয়ে পড়েনি চোখ থেকে।মায়া বের করতে চায় না এই পানি।শক্ত রাখতে চায় মনকে।কিন্তু পারছে না সে।রাগ হচ্ছে মায়ার খুব।মায়া তো চায় না দুর্বল হতে।এই দুর্বলতার জন্য যে তার হৃদয়হরণ হওয়ার ভয় কাজ করে।মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দেয়।মায়ার এই শক্ত মন গড়ার প্রচেষ্টার ভিতরেই রাজ মায়াকে আরো দুর্বল করে দেয়।মায়ার ললাটে এক চুম্বন একে দেয় রাজ।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় মায়া।চোখের পানি এবার অনিচ্ছায় গড়িয়ে পড়ে মায়ার চোখ থেকে।রাজের ঠোঁটের দূরত্ব অনুভব করতেই মায়া চোখ খুলে।সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয় রাজকে।বালিশের পাশে থাকা গুলি হাতে নিয়ে তাক করে রাজের দিকে।বলে,”আমি আপনার মায়াবতী না,মন্ত্রী মশাই।আমি এক হৃদয়হীনা কন্যা।নিজেকে দাউ দাউ করে পুড়িয়েছি আমি।আপনাকে পোড়াতে চাই না।তাই দূরে সরে যান আমার থেকে।”

ঠোঁটের কোণায় বাকা হাসি রেখে রাজ ঘাড় কাত করে তাকায় মায়ার দিকে।নিজের ঠোটে নিজেই স্লাইট করে রাজ বলে,”পূরন্ত মায়াবতীর জখমে মলম লাগানোর কেউ ছিলো না।এখন এসে গেছে।মেনে নেওয়া না নেওয়া তোমার ব্যাপার।তোমার এই জখম যেমন আমি সারিয়ে দিবো,তোমার হৃদয়ে আমার স্থান আমিই গড়ে তুলবো।”

মায়া হাতে থাকা বন্দুক নামিয়ে বলে,”চলে যান মন্ত্রী মশাই।একা থাকতে চাই আমি।”

রাজ কথা বাড়ায় না।একা থাকতে দেয় মায়াকে।যেতে যেতে বলে,”ব্রেকফাস্ট টাইম হয়ে এসেছে।তাড়াতাড়ি চলে এসো।না খেয়ে অপেক্ষা করব আমি।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#ইশরাত_জাহান
#পর্ব_১৩
🦋
ঘণ্টা দুই ধরে গড়গড় করে পড়া ঝর্নার পানির নিচে বসে গোসল করছে মায়া।দুই হাঁটু ভাঁজ করে মুখ লুকিয়ে বসে আছে।ঝর্নার পানিগুলো সব তার মাথায় পড়ছে। কনকনা শীতে লোকজন যেখানে পানি গরম করে দ্রুত গোসল করে মায়া সেখানে গিজার অন না করেই গোসল করছে।নাহ,এটা গোসল করা হচ্ছে না বরং এটা রাগ নিবারণ করা হচ্ছে।চোখের পানি বেড় করতে চায় না বলে এত চেষ্টা তার।তারপরও আজ সে চোখের পানি বেড় করেছে।একা একা সব সময় অশ্রু বিসর্জন দিলেও প্রকাশ্যে মায়া তার অশ্রু কাউকে দেখাতে চায় না। কান্না করতে করতে মায়া এবার ফোফাতে শুরু করে।রাগ জেদ সবকিছু মাথায় চেপে বসেছে।মন তো একবার চাচ্ছে রাজকে খুন করতে।আবার খুন করতে হাত উঠালেও ব্যার্থ হয়ে পড়ে।মায়ার এই শক্ত রক্তমাখা হাত তো কখনও থেমে থাকেনি।আজ কেনো এমন হবে?এগুলো মানতে পারছে না মায়া।কিছুক্ষণ এমনভাবে থাকার পর ফোন বেজে ওঠে মায়ার।হাঁটুর ভাজে গুঁজে রাখা মুখ উচু করে তাকায় মায়া।অনেকক্ষণ ভেজার কারণে চোখ লাল হয়ে আছে।মুখে ফুটে ওঠে ডেভিল হাসি।সাথে সাথে গোসল সেরে ওঠে মায়া।ড্রেস চেঞ্জ করে ফোনের দিকে তাকায়।দেখতে পায় হাসির কল।মায়া কল ব্যাক করতে যাবে ঠিক তখনই মায়ার রুমে নক করে একজন ওয়েটার।বলে,”রাজ স্যার ইজ ওয়েটিং ফর ইউ ম্যাম।”

হাসিকে কল করে না মায়া।ফোন ছোট টেবিলের উপর রেখে বলে,”আসছি আমি।”

“ওকে, ম্যাম।”
বলেই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটি।রাজ যেখানে ব্রেকফাস্ট রেডি রেখেছে সেখানে মায়াকে নিয়ে যাবে।এটা রাজের অর্ডার।মায়া আজ থ্রি পিচ পড়েছে।গাঢ় নীল রঙের কারুকাজের কামিজ সাথে কালো সেলোয়ার আর ওড়না।মায়ার উচ্চতা ৫ফুট ৬ইঞ্চি।দেখতে ফর্সা হয়েছে।এই ফর্সা চেহারা হওয়াতে মায়ার আরো বেশি রাগ হয়।কারণ মায়ার মা ছিলেন কালো। লোকে এক দেখাতেই মায়াকে বলে,”তুমি তোমার বাবার চেহারা পেয়েছো।”

রেগে ফেটে পড়ে তখন মায়া।কেনো তাকে ওই প্রতারকের মত রূপ নিয়ে জন্ম নিতে হলো।ওই প্রতারকের জন্য তার মা আজ তার কাছে নেই।প্রতারকের জন্য নানা স্ট্রোক করেছে।প্রতারক বাবার জন্য আজ মায়া পিতৃহীন।আরো অনেক কিছুই আছে যা মায়া এই যাবতকাল সহ্য করেছে।

কক্স বাজারে সূর্যের আলোয় রোদের উত্তাপ বেড়েছে।ফাঁকা নির্জন পরিবেশে গরমে শরীর পুড়িয়ে নেওয়ার মতো।হবে নাই বা কেনো?গাছপালা নেই বরং ফাঁকা জায়গায় সূর্যের আলো বেশি প্রভাবিত হয়।ফাঁকা এক নির্জন স্থানে বড় টেবিল সাজানো ভিন্ন খাদ্যে।মাথার উপর সুন্দরভাবে ডিজাইন করা কাপড় দিয়ে ঢাকা যা চারটি খুঁটির সাহায্যে বেধে রাখা।খুঁটির গায়ে মোড়ানো গোলাপী ও সাদা রঙের বেলুন।মাটির উপর দিয়ে ছড়ানো ছিটানো আছে গোলাপ ও রজনীগন্ধা।মায়া গার্ডদের নিয়ে এন্ট্রি নেয় রাজের পাঠানো ওয়েটারের সঙ্গে করে।মায়ার আগমনে রাজের হার্টবিট শুরু হয়।রাজ উল্টোদিকে ফেরা থাকে।মায়ার এক এক পা বৃদ্ধির সাথে রাজ ফিল করে তার হার্টবিট আরো বেশি ফাস্ট হতে থাকে।চোখ বন্ধ করে ম্লান হেসে রাজ ফিল করতে থাকে মায়ার এক একটি মায়ের শব্দ।উচু হিলের শব্দ যেনো বাড়ছে আর মায়া তার অতি নিকটে আসছে।মায়া এসে টেবিলের সামনে দাঁড়ায়।টেবিলের আড়াআড়ি স্থানে বসে আছে পিয়াশ ও মৌ।মায়া তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,”গুড মর্নিং সুইট কাপল।”

মৌ বলে,”ভেরি গুড মর্নিং,ম্যাম।”

মায়ার মিষ্টি হেসে বলে,”ডোন্ট কল মী ম্যাম।আমি তোমার বোনের মতোই।”

মৌ মিষ্টি হাসি দেয়।মায়া সেদিকে তাকিয়ে থাকে।মৌ আর মায়ার কথার পিঠে যেনো চোখে চোখে ভিন্ন কোনো কথার আদান প্রদান চলছে।রাজ লক্ষ করে বিষয়টি।কিন্তু খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বলে,”মায়াবতীর আগমণ শুভেচ্ছায় স্বাগতম।”

কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকে মায়া।এই দৃষ্টিতে না আছে কোনো ভালোবাসা আর না আছে কোনো ঘৃণা।শুধু আছে লুকিয়ে থাকার প্রচেষ্টা।রাজ মায়ার কাছে পা দোলাতে দোলাতে হেঁটে আসে।মায়ার চোখে চোখ রেখে রহস্য কণ্ঠে বলে,”এই চোখ মিথ্যা কিছু বোঝাতে চাইলেও আমি আমার মায়াবতীর চোখ খুব ভালো করে পড়তে পারি।”

বলেই চোখ টিপ দেয় রাজ।তারপর আঙুল দিয়ে তুরি বাজিয়ে ইশারা করে ওয়েটারকে।ওয়েটার এসে খাবার দিতে থাকে সবাইকে।এখানে যেনো খাবার খাওয়া কম চোখে চোখে কথা বেশি।রাজ পিয়াশকে কিছু ইশারা করছে তো মায়া মৌকে।আবার মায়া রাজ একে অপরের চোখে চোখ রেখে খাবারে মন দিতে থাকে।

_____
সরদার বাড়ির সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসেছে। জারা গেছে বাবার বাসায়। কাল আসবে।রাজ আসার সময় হয়ে এসেছে।তাকেও তো তাড়াতাড়ি আসতে হবে।সিয়া হিয়া ও মিলি মিলে এক শাড়িতে বসেছে অন্য শাড়িতে রুদ্র সোনালী মালিনী বসেছে।টেবিলের ওপর দুই কর্নারে মুখোমুখি দুই ভাই।সার্ভেন্ট এসে খাবার দিচ্ছে।রুদ্রর চোখ হিয়ার দিকে।হিয়া তার খাওয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে।চশমার ফাঁকে তাকিয়ে দেখতে থাকে রুদ্রকে।সেই দৃষ্টি বুঝতে অবগত হয় না আশপাশের লোকজন।খাওয়ার মাঝে মাহমুদ সরদার বলেন,”বাবা রুদ্র!তোমার তো গ্র্যাজুয়েশন শেষ আবার বয়স বেড়েছে।এখন এমন ঘুরাফেরা করলে হবে?ভবিষ্যৎ নিয়েও তো ভাবতে হবে।কিছু না করলেও আপাতত বাবার ব্যাবসায় এক বেলা ঘুরে আসতে পারো।”

রুদ্র হেয়ালি ভাব নিয়ে বলে,”বাবা তো আছেই দেখার জন্য।আমার এখনও ইচ্ছা নেই কিছু করার।জাস্ট চিল আছি চিল করতে চাই।”

মোহন সরদার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,”এক অপদার্থ জন্ম দিয়েছি আমি।কোনো কাজের না।”

রুদ্র বাকা হেসে বলে,”পদার্থ জন্ম দিয়েও ধরে রাখতে অক্ষম তুমি।তোমার মুখে এসব মানায় না।আসছি আমি।”

সবাই তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে।রুদ্র নিজের মতো করে কাধে জ্যাকেট ঝুলিয়ে হেলতে দুলতে চলে যাচ্ছে।না খেয়ে বের হওয়ায় হিয়ার মন খচখচ করতে থাকে।কিন্তু কিছু বলে না।মাহমুদ সরদার বলেন,”কখনও তো বাবা হয়ে ছেলের সাথে ভালোভাবে কথা বলিস না।আমি একটু চেষ্টা করি তাও তোর জন্য হয় না।ছেলেটা বড় হয়েছে তোদের কোনো শিক্ষাদীক্ষা ছাড়াই।”

বলেই উঠে গেলেন মাহমুদ সরদার।রুদ্রকে কেউ ভালো না বাসলেও তিনি বাসেন।রুদ্রর একাকীত্বে তিনি রুদ্রকে সাপোর্ট করতেন।টাকা পয়সা সবাই দেয় কিন্তু যত্ন করতে পারেনি রুদ্রর বাবা মা রুদ্রকে।যখনই বাবা মায়ের সাথে খেলাধুলা করতে চায় তার হাতে দেওয়া হয়েছে বড় ট্যাব।যখন একটু ঘুরতে যেতে চায় বাবা মায়ের সাথে তখন তার হাতে দেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা সাথে থাকতো গার্ড।এভাবে বেড়ে ওঠা রুদ্র হয়েছে আজ বখাটে।বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে রুদ্রকে কেউ না বুঝলেও মাহমুদ সরদার একটু একটু চেষ্টা করতেন ভালোবাসার।কিন্তু তার ব্যাস্ততায়ও সময় বেশি একটা দেওয়া হতো না।

_____
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই মিলে সমুদ্রের ধারে যায়।রাজ তার লোকজন দ্বারা জায়গাটি ফাঁকা করেছে।মৌ সমুদ্রের পানি দেখে মায়ার হাত ধরে দৌড় দেয় সেদিকে।মৌ ও মায়া মিলে পানিতে ভিজছে আর আনন্দ করছে। পিয়াশ ও রাজ ওদের থেকে বেশ খানিকটা দূরেই আছে।সুযোগ পেয়ে মৌ বলে,”রাজ ভাই তোমাকে ভালোবাসে আপু।”

ঠোঁট বাকা করে হেসে মায়া বলে,”সরদার বংশের ছেলে সে।এসব দেখে গোলে যাস না বোন।”

মৌ বলে,”আমরাও তো একই বংশ আপু।তাহলে আমরা কেন এমন নই?”

মায়া বলে,”কারণ আমার শিক্ষা দীক্ষা আমার মা দিয়েছে। আর তোর শিক্ষা আমি দিয়েছি তাই।”

কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে মৌ বলে,”বাবা থাকতেও বাবা ছাড়া জীবন কাটিয়েছি আমরা।ওই লোকটাকে তো ভোগ করতেই হবে।”

মায়া বলে,”মোহন সরদার একা নয়।এর ভিতর আরো কেউ জড়িত।শুধু তাদেরকে বের করার দায়িত্ব আমাদের।”

মৌ দূরে পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই তো আমরা দুই বোন ট্র্যাপ করেছি এদেরকে।আমার ট্র্যাপ কাজে লেগেছে।তোমারটা কখন কাজ করবে?”

মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে রাজকে।সূর্যের আলো চোখে পড়েছে।শীতের ভিতরেও এই সূর্যের তাপ অতি মাত্রায় জ্বালা দিচ্ছে।রাজ ঘামছে তাতেই।মায়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,”আমার ট্র্যাপ মিস যায়নি বোন।খুব সুন্দরভাবে মন্ত্রী মশাই আমার ফাঁদে পা দিয়েছে।”
বলেই মায়া ও মৌ হাসতে থাকে।দুই বোনের কথোপকথন শুনতে পায় না কেউ।মায়া পিয়াশের দিকে তাকিয়ে মৌকে বলে,”পিয়াশ ছেলেটা ভালো।ও অনেক ইনোসেন্ট।তোকে সর্বোচ্চ দিয়ে ভালোবাসে।তুইও ওকে খুব ভালোবাসিস।এটাকেই বলে ভালোবাসার পূর্ণতা।”

মৌ দুই হাতে পানি নিয়ে আবার নিচে ফেলে।এভাবে খেলতে খেলতে বলে,”পিয়াশ আমার সেই ভালোবাসা যেটা অনেক সাধনার পর আমি পেয়েছি।হতে পারে আমার স্ট্যাটাসের সাথে পিয়াশ যায় না।কিন্তু ভালোবাসার কাছে এই স্ট্যাটাস ফিকে আপু।”

মায়া মজা করে বলে,”হ্যাঁ,সেই তো ইনোসেন্ট। তোর পাতানো নকল বাবা মাকে গুলি দেখিয়ে বিয়ে করলো।বেচারা বুঝলো না যে তুইই ওকে বিয়ে করতে ফাঁদ পেতেছিলি।”

“নকল বাবা মাকে নকল গুলি দেখিয়ে বিয়ে।এটা যে আমার কাছে কতটা ফানি লেগেছিলো তোমাকে কি বলবো!”
বলেই হেসে দেয় মৌ। মায়া অনেকদিন পর বোনের সাথে মন খুলে কথা বলছে।এই কয়দিনে তেমন কথা বলতে পারেনি।
_____
রাজ ও পিয়াশ নিজেদের মতো কথা বলে এগিয়ে আসে মায়া ও মৌয়ের দিকে।রাজ বলে,”হানিমুনে এসে যদি বর থুয়ে বোনকে সময় দেয় এটা কেমন হানিমুন মায়াবতী?”

মায়া ও মৌ ভ্রু কুচকে তাকায়।মৌ ভয়তে ঘাবড়ে যায়। তুতলিয়ে প্রশ্ন করে,”ব বোন মানে?”

“এই দেখো পিয়ু বেবী!তোমার বউ তো তোতলায়।আরে মায়াবতী তো তোমার বোনের মতোই।আণ্টি ফুফু মামী চাচী এগুলো নিশ্চয়ই হবে না?”

হাফ ছেড়ে বাঁচে মৌ।বলে,”ওহ!আসলে ম্যামকে বোন বলছেন তো তাই।”

“নিজেদের মধ্যে কিসের ম্যাম?তুমি ওকে আপু বলেই ডাকবে। হতে পারে আমার মায়াবতী একজন সফল নারী তাই বয়স একটু বেশি।তবে আমার থেকে কিন্তু তার এজ ডিফারেন্ট অনেক।তাই না মায়াবতী?”

ফিচেল হেসে মায়া বলে,”হ্যাঁ,নিশ্চয়ই।আমাকে নির্দ্বিধায় আপু বলতে পারো।তোমার কাছ থেকে ম্যাম শুনতে আমারও ভালো লাগছে না।”

“এটাই তো হওয়ার।”

মায়া রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”মানে?”

রাজ বুক পকেটে গোজা সানগ্লাস বের করে চোখে দিয়ে বলে,”মানে এই যে আমার মায়াবতী খুব উদার।”

বলেই রাজ মায়ার হাত ধরে সমুদ্রের আরো একটু গভীরে যায়।সমুদ্রের স্রোত কিছু সময় পরপর এসে তাদেরকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে।মায়ার বাহু রাজের হাতের মুঠোয়।মায়া তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।রাজ নিজের হাতে পানি নিয়ে মায়ার দিকে ছুঁড়ে মারে।মায়া নাক মুখ ছিটকে ফেলে।রাজ ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে,”বিয়ের আগেই প্রী হানিমুন।ইনজয় মায়াবতী।”

মায়া রাজের কাছে এসে রাজের কানের গোড়ায় নিজের ঠোঁট কিছুটা দূরত্বে রেখে বলে,”ইনজয় উইথ ইয়র ফেক ড্রিম,মন্ত্রী মশাই।”
বলেই চলে যেতে নেয় মায়া।রাজ মায়ার বাম হাতের বাহু ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে আনে।মায়ার কোমড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এবার প্রেম করবে।”
রাজের কথায় সবাই চোখ বন্ধ করে।এবার আর পিয়াশ চোখ খুলে রাখেনি।নিজে তো চোখ বন্ধ রেখেছে সাথে মৌয়ের চোখটাও হাত দিয়ে বন্ধ করে দেয়।

চারপাশে পানির স্রোত বাড়ছে আবার কমছে।শীতের বাতাস চারপাশ থেকে একটু একটু আসতে থাকে।হাঁটু ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে মায়া ও রাজকে।মায়ার চোখ তার মন্ত্রী মশাই এর দিকে।রাজের বুক বরাবর মায়ার দুই হাত লেপ্টে আছে।হার্টবিট বৃদ্ধি পাচ্ছে মায়ার।রাজ চোখের পাতা একবার বন্ধ করে সেকেন্ড কয়েক পর খুলে তাকায় মায়ার দিকে।নিজের ঠোট মায়ার দিকে এগিয়ে দিতে থাকে।মায়া চোখ বন্ধ করে নেয়।রাজ ঠোঁট এগিয়ে মায়ার কানের দিকে এগিয়ে আসে।অতঃপর বলে,”মন্ত্রী মশাইয়ের চুমু এত ভালো লাগে মায়াবতী? আস্তে আস্তে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছো যে আজ নিজে থেকেই চোখ বন্ধ করেছো।”

সাথে সাথে চোখ খুলে তাকায় মায়া। ঢোপ দিলো তাকে মন্ত্রী মশাই।রাজ মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”মন্ত্রী মশাইয়ের প্রতি দূর্বল তুমি মায়াবতী।কঠিনভাবে ফেসে গেছো আমার কাছে।”
আর শুনতে চাইলো না মায়া।রাজকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে।

মায়ার দৌড়ানোর সময় পায়ের সাথে পানির ঘর্ষণ আলাদা শব্দ তৈরি করে।মৌ চোখ খুলে তাকায়।মনে মনে বলে,”আমার মতো তুমিও ট্র্যাপ করতে যেয়ে নিজেই ট্র্যাপে পড়লে আপুই।দেখা যাক আমাদের যাত্রাপথ কেমন হয়।”

চলবে…?