#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩৬
#ইশরাত_জাহান
অতীত(মায়াবীর)
🦋
সকালবেলা হাসি এসে মৌকে নিয়ে হসপিটালে আসে।মৌ কান্নাকাটি শুরু করেছে।তাই বাধ্য হয়ে মায়ার কাছে আনা হয় তাকে।মায়া কিছুক্ষণ মৌকে বুঝিয়ে বলে সবকিছু।তারপর মৌ বাধ্য মেয়ের মত চলে যায়।বীর সবকিছু দেখতে থাকে।
সবাই চলে যাওয়ার পর বীর জিজ্ঞাসা করে,”ওই রাতে কে আন্টিকে মেরেছে?”
“আমি জানি না।আমি দেখিনি তাদের।তবে একজনের মুখ দেখেছি।”
“আমাকে বলতে পারবে কে সে?”
“নাহ,কারণ আমি তো ওদের কাউকে চিনি না।এই প্রথম দেখলাম।”
“কেনো মারতে চায় জানো?”
“পরিপূর্ণ কিছু জানি না।তবে আমার মা কাদের নারী পাচার করতে দেখে।ওদেরকে বাঁচাতে সক্ষম হয়।কিন্তু মা নিজেকে বাঁচাতে পারে না।ওদের কি কি প্রমাণ যেনো মায়ের কাছে থেকে যায়।”
“কোথায় সেগুলো?”
“আমি তাও জানি না।মা আমাকে ওগুলো নিয়ে কিছু বলেনি।”
“আন্টিকে তো গাড়িতে ধরে নিয়ে এসেছিলে।এমন কিছু পেয়েছো তার শরীরে।(মায়ার চাহনিতে অপ্রস্তুত হয়ে) মানে প্রমাণ স্বরূপ কিছু থাকলে তার শরীরে লোকানোর অপশন আছে নাহলে আসামি সব নিয়ে গেছে।”
“কাল তো মায়ের শরীরে এমন কিছু দেখিনি।”
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো দুজনে।বীরের লোকজন ঔষধ আনা নেওয়া করছে।রক্তের ব্যাবস্থা করে রেখেছে বীর।যদি আরও লাগে তাহলে রক্ত আনা যাবে।
এখন সকাল দশটা।মায়া না খেয়ে আছে।সারারাত জেগে ছিলো।বীর অনেক কিছুই খেয়েছে।বেশি বেশি ফল খেয়েছে সে।শাহানা পারভীনের এখন অবস্থা আগের থেকে ভালো।ডাক্তার বলেছে,”আপাতত ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।উপর থেকে সবকিছু নরমাল।তবে তার শরীরের অবস্থা এখন বোঝা যাবে না।জ্ঞান ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।আরো কিছু পরীক্ষা করা বাকি।”
মায়া এবার শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।মায়াকে উদ্দেশ্য করে বীর বলে,”পাশেই ক্যান্টিন আছে।চলো কিছু খেয়ে আসা যাক।আমার লোকেরা আছে এখানে।না খেয়ে থাকলে মায়ের সেবা করতে পারবে না।”
মায়া সম্মতি দিয়ে চলে যায় বীরের সাথে।খাবার অর্ডার করা হয়।খাবার খাওয়ার মাঝে মায়ার থেকে সবকিছু শুনলো বীর।মায়া সবকিছু বললেও এটা বলেনি তার বাবার নাম মোহন সরদার। আর রাজের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।এসবের সাথে তো আর শাহানা পারভীন জড়িত না।তাই মায়া ওর মায়ের সাথে হওয়া কথাগুলো বললো।সবকিছু শুনে বীর বলে,”তোমরা আপাতত ডেঞ্জার পজিশনে আছো।আমার মনে হয় আন্টিকে এখন আড়াল করে রাখা উচিত। আর শত্রুদের খুঁজে বের করা উচিত।”
“কিন্তু আমি তো চিনি না কারা এই লোকজন। আর আমি কিভাবে বের করবো তাদের?সব থেকে বড় কথা আমি মাকে আড়াল করে রাখবো কোথায়?ঢাকার বাইরে নিয়ে গেলেও চিকিৎসার জন্য মাকে কোথায় রাখবো?”
বীর কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”আমার বাড়িতে থাকবে তোমরা।আণ্টি আমার বাড়িতে সেফ থাকবে।আমি এখানে একা থাকি।বাবা মা বিদেশে আছেন। আত্মীয় স্বজন আমার বাড়িতে আসেন না।কারণ আমি একা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করি।আমি মন চাইলে তাদের সাথে দেখা করি মন না চাইলে দেখা করি না।এক কথায় আমি গ্যারান্টি দিতে পারি আণ্টি আর তুমি আমার হেফাজতে সুরক্ষিত থাকবে। আর আন্টিকে যারা মেরে ফেলতে চেয়েছিলো তাদের বের করার দায়িত্ব আমিও নিলাম।তোমাকে আমি সাহায্য করবো।এই বীর থাকতে কোনো চিন্তা নেই তোমার।”
মায়া বীরের প্রস্তাবে প্রথমে রাজী হয় না।কিন্তু পরে ভেবে দেখলো তাকে এবং তার মাকে রাতের আধারে একা না রেখে এই বীর বাঁচিয়েছিলো।বীর চাইলে রাতেই মায়ার ক্ষতি করে দিতে পারতো।কিন্তু না উল্টো হসপিটালে এনে এই বীর তার মাকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছে।কোনো স্বার্থ ছাড়া একমাত্র বীর সেই যে মায়াকে সাহায্য করছে।বীর না থাকলে শাহানা পারভীনকে বাঁচানো সম্ভব হতো না।তাই মায়া রাজি হয়ে যায় বীরের কথায়।
ম্যাচে এসে মায়া ও মৌয়ের সমস্ত জিনিস পত্র গোছাতে থাকে মায়া।রাতে দেওয়াল টপকে গেছিলো।এখন আবার এসেছে তো একজন মাফিয়ার সাথে।দেশের প্রায় মানুষ চিনে বীরকে।মায়ার রুমের পাশের একটি মেয়ে এসে মায়াকে খোঁচাতে থাকে।সে মায়াকে রাতে পালিয়ে যেতে দেখেছিলো। যেই মায়াকে নিয়ে ম্যাচের মালিক সুনাম করে তার এমন দৃশ্য দেখে মেয়েটি সুযোগ পেলো কিছু শুনানোর।মায়াকে খুব বাজে ভাবে বলে,”কাল সারারাত তো এখানে ছিলে না।রাত ভরে বুঝি ওই ছেলেটার সাথে ইনজয় করছিলে?বড়লোক ছেলে পেয়ে তোমরা মেয়েরা এত ফুর্তি করতে পারো?”
মায়া শুনেও না শোনার মতো করে থাকে।এমনিতেই রাতে ঘুম হয়নি তার।তার উপর মায়ের উপর হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়ার নেশা জেগেছে।মাথা ঠিক নেই মায়ার।হুট করে অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে।মায়া চুপ করে কাজ করছে।মেয়েটি আবার বলে ওঠে,”তোমার তো বাবা নেই। ম্যাচের মালিক বললো তোমরা নাকি কোটিপতি।বাবা না থাকার পরও এই রুমটা একা একা মাসে ভাড়া দিয়ে থাকো।নিজেদের মতো আলাদা খাবার কিনে খাও।আমরা যা খাই তা নাকি তোমাদের হজম হয় না।এতগুলো টাকা কোথা থেকে আসে?এই আশিক দিয়ে যায় বুঝি?”
রক্তচক্ষু নিয়ে ঘুরে তাকায় মায়া।মায়া এবার মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাই না।”
মেয়েটির মুখে বিদ্রুপের হাসি।মেয়েটি আবার বলে,”বাবা!মুখের বুলি ফুটেছে দেখছি।ওসব রঙ্গলীলা করার সময় মনে থাকে না?লোকে কি বলে জানো?বলে তুমি আর তোমার মা সব এক।তোমার মা কি এমন করে যে আমাদেরকে বলো না আবার মাসে মাসে এত টাকা উরাও?”
মায়া আশেপাশে মেয়েদের সাথে মিশে না।মৌ আর মায়া নিজেদের মতো চুপচাপ পড়াশোনা করে আর নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করে।শাহানা পারভীন মাঝে মাঝে আসতেন। ম্যাচের খাবার মায়া ও মৌ খেতো না।শাহানা পারভীন তাদের আলাদা ব্যাবস্থা করে দেয়।মায়া ম্যাচে নিজের মতো স্টোভ নিয়ে রান্না করতো।এইজন্য সন্দেহ হতেই পারে কিন্তু তাই বলে মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে?এবার মায়া চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”আমাকে নিয়ে যা খুশি বলো আমি সহ্য করবো।কিন্তু আমার মাকে নিয়ে একটা বাজে কথা বললে তোমার জিহ্বা আমি কেটে দিবো।”
মেয়েটিও থেমে থাকেনি।সে তেজ দেখিয়ে আবার বলে ওঠে,”চোরের মায়ের বড় গলা।তোমার মা যে কতটা নোংরা এটা লোকে লোকে বলে বেড়ায়।তুমিও হয়েছো তার মতো।সারারাত ফুর্তি করে এসে আবার তর্ক করো।তোমার মা নিজেও যেমন তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেও তেমন।কুশিক্ষা পেয়েছো।তাইতো মনে হয় তোমার বাবা তোমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করেছে।”
আর কিছু বলতে পারলো না মেয়েটি।মায়া তার সর্ব শক্তি দিয়ে মেয়েটির গলা টিপে ধরে।মায়া এতটাই শক্তি প্রয়োগ করে ধরেছে যে মেয়েটি ছাড়াতে পারছে না মায়ার হাত।মায়ার চোখগুলো বড় বড় করে রাগে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।তার মাকে নোংরা বলেছে।তার পবিত্র মাকে অপবিত্র বানিয়ে দিয়েছে।এমনিতেই এখন তার মা হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আর এই মেয়ে তার মাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে।গলা টিপে ধরাতে মেয়েটির জিহ্বা বেরিয়ে আসে।মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা। ছট ফট করতে থাকে সে।মায়া এবার তেজী সুরে বলে,”বলেছিলাম না আমার মাকে নিয়ে কিছু বলবি না।মায়া চুপ থাকে এর মানে এই না যে মায়া অন্যায় মেনে নেয়।আমার মাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার ফল ভোগ এবার।”
মায়া যে কি করছে মায়া নিজেও জানে না।রাগে জেদে জ্ঞান শূন্য হয়ে সে এই কাজটি করছে।প্রায় বিশ মিনিট এমন চেপে ধরে ছিলো মায়া।এদিকে মায়ার দেরি হচ্ছে কেনো বুঝে উঠতে পারছে না বীর।মায়া বলেছিলো শুধু জামাকাপড় আর বই নিয়ে আসবে।বাকি জিনিস গাড়িতে করে নিলেও চলবে।মায়ার দেরি হতে দেখে বীর উপরে ওঠে।মেয়েদের ম্যাচে ঢুকছে বীর।দারোয়ান বাধা দেয় না।কারণ বীরের পকেটে একটি গুলি আছে।সেটা দেখেই দারোয়ানের মুখ বন্ধ। বীরকে দেখে তার একটাই কথা মাথায় আসলো,”বেচে থাকলে অন্য বাড়ির দারোয়ান হতে পারবো।কিন্তু মরে গেলে ফিরতে পারবো না।”
বীর উপরে উঠে মায়াকে দেখে অবাক।মায়া এখনও গলা টিপে ধরে আছে মেয়েটির।মায়ার চোখ মুখ হিংস্র।ঠিক যেনো বীরের মতো।আশেপাশে তাকালো বীর।বীরের কাছে মায়ার এই রূপ ভালো লাগছে।তাই সে মায়ার কিছু ছবি তুলে নিলো।মায়া যে একটি মেয়েকে খুন করেছে সেটা নিয়ে যায় আসেনা বীরের।ছবি তোলা শেষ করে বীর মায়ার কাছে এগিয়ে এসে বলে,”ওকে কেনো মারলে?”
হুশ ফিরলো মায়ার।মারলো কোথায় ও?ও কাউকে খুন করেছে এটা ও নিজেই বুঝতে পারেনি। মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে মায়ার।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।মেয়েটির গলা থেকে হাত সরাতেই মেয়েটি নিচে পরে যায়।মায়া লাফিয়ে ওঠে।এই প্রথম তার হাতে কেউ মারা গেছে।মায়া তার দুই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।বলে,”আমি মারতে চাইনি।আমি মারতে চাইনি।আমি খুনি হতে চাইনি।আমি মারতে চাইনি।”
বলেই কাপতে থাকে মায়া।বীর এক গ্লাস পানি এনে মায়ার সামনে ধরে বলে,”এই নেও খাও।”
মায়ার হাত কাপছে।জীবনের এই প্রথম খুন নিজে থেকে করলেও সজ্ঞানে করেনি।তার জীবনে কম ঝর যায়নি।মায়াকে যখন মেয়েটি বাজে কথা বলেছিলো তখন মায়ার কল্পনায় আসে আরো এক অতীত।মায়ার নাম পরিবর্তন করার পরের ঘটনা।
শাহানা পারভীনকে কু প্রস্তাব দেয় তার বিজনেস পার্টনার।শাহানা পারভীন না করে দেন।একদিন কোনো কিছু না জানিয়ে তিনি মায়াদের বাসায় আসে।মায়া তখন ঘরে বসে পড়াশোনা করছে।রাত তখন দশটা।মায়ার কানে বারান্দা থেকে থালাবাটি পড়ে যাওয়ার শব্দ আসে।সেই শব্দের সাথে মায়ার কানে আসে শাহানা পারভীন বলেন,”ছাড়ুন আমাকে।আমার সতীত্ব হরণ করবেন না।আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।”
মায়া বের হয়ে আসে।দেখতে পায় লোকটি জোর করে দুই হাত ধরে আছে তার মায়ের।শাহানা পারভীনের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসতে থাকে সে।মায়ার ঘৃণা লাগছে লোকটিকে দেখে।শাহানা পারভীন এদিক ওদিক তাকাতে থাকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য।হঠাৎ দেখলো মায়া দাড়িয়ে আছে।শাহানা পারভীন চেঁচিয়ে বলে,”এভাবে দাড়িয়ে থেকে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবি না মা।কিছু কর মা।তোর মাকে বাঁচা।”
মায়ার হুশ ফিরলো মায়ের কথাতে।পাশে তাকিয়ে দেখলো শিল নোরা। নোরা হাতে নিয়ে মায়া লোকটির মাথায় ছুড়ে মারে।শাহানা পারভীন মায়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।তাই মায়া যখন নোরা ছুড়ে মারে তিনি সাথে সাথে মাথা নামিয়ে নেয়। নোরা এসে সোজা লোকটির কপালে লাগে।সাথে সাথে লোকটি শাহানা পারভীনকে ছেড়ে কপালে হাত দেয়।এই সুযোগ পেয়ে শাহানা পারভীন নোরা হাতে নিয়ে লোকটির ঘিলু বরাবর স্থানে কয়েকটি আঘাত করে।মায়া দূরে সরে যায়।কান্না করে দেয় সেখানে দাঁড়িয়ে।লোকটি ওখানেই মারা যায়।শাহানা পারভীন ঘুরে তাকিয়ে দেখে মায়া কান্না করছে।শাহানা পারভীনের হাতে লোকটির রক্ত লেগে আছে।শাহানা পারভীন সেই হাত নিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”জীবনে যতটুকু আয়ু নিয়ে বাঁচবি নিজের সতীত্ব বজায় রেখেই বাঁচবি মা।এই সতীত্ব হরণ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে হাজারটা খুন করার দরকার হলে করবি কিন্তু নিজেকে বিলিয়ে দিবি না।তুই দুর্বল তো লোকে তোকে খুবলে খাবে।এতদিন একে আমি ছার দিয়েছি।ভালোভাবে বুঝিয়েছি।ওর বউকে পর্যন্ত বলেছি যে আপনার স্বামীকে সামলান।দেখ লোকটা তারপরও এসেছিলো আমার সাথে অন্যায় করতে।আমি আর কি করলে এরা আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দিবে? স্বামী ছাড়া জীবন কাটানো কি অন্যায়?স্বামী ছেড়ে দিলে সেই মেয়ের কি সমাজে মুখ উঁচিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই?কেনো মেয়েদের এসবের সম্মুখীন হতে হবে?এই রাতের বেলা এই নরপশু আমাকে খুবলে খেতে আসবে?”
বলেই কান্না করেন শাহানা পারভীন।মায়া এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি ঠিক করেছো মা।তুমি কান্না করবে না।”
বলেই শাহানা পারভীনের চোখের পানি মুছে দেয় মায়া।
শাহানা পারভীন ও মায়া মিলে সেই রাতে লোকটির লাশ নিয়ে গ্রামের এক জঙ্গলে মাটি চাপা দেয়।মায়া ছোট টর্চ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মিহির ও হাসিকে ডেকে নেয় শাহানা পারভীন।মিহির ও শাহানা পারভীন মিলে মাটি খুঁড়ে তার ভিতর লোকটিকে রেখে কবর দেয় ওরা।
মায়ের এই অতীত মনে পড়ে মায়া হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।বীর মায়ার হাত কাপতে দেখে মায়ার মুখের দিকে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,”আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।তুমি নিজে খেয়ে নেও।”
মায়া ঢকঢক করে পানি গিলতে থাকে।এখন একটু স্বাভাবিক হয় মায়া।বীর জিজ্ঞাসা করে,”কেনো খুন করলে?”
“ও আমার মাকে নিয়ে যা নয় তাই বলেছে।আমি বারবার বলছি চুপ করতে ও তাও বাজে কথা বলছে।আমার মা আমার মা তো পবিত্র।নিজেকে সব সময় রক্ষা করেছে।তাহলে কেনো আমার মাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে?আমি ছাড়বো না কাউকে।আমি সবাইকে শাস্তি দিবো।বেশ করেছি ওকে মেরেছি। মায়েদের সম্মান করতে জানে না।যাকে চিনে না তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে।”
শেষের কথাগুলো অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে বলে মায়া।বীর বুঝলো মায়ার অবস্থা।যে বীর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না আজ সেই বীর মায়াকে বাঁচাতে অন্যায় করবে।এখন সে ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি বের করলো।মেয়েটিকে নিয়ে তার রুমে গেলো।এখন সবাই কলেজে আছে। আর কিছু মেয়ে তাদের নিজস্ব রুমে।বীর মেয়েটিকে ফ্যানের সাথে একটি ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখলো।এমন ভাবে সেট করলো যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে মেয়েটি মার্ডার হয়েছিলো।মায়া সবকিছু দেখলো।কিন্তু কিছু বললো না।তারপর দুজনে মিলে চলে গেলো নিজেদের গন্তব্যে। যাওয়ার আগে বীর দারোয়ানকে টাকা দিয়ে বলে,”চুপচাপ যা দেখেছেন যা আপনার এই পেতেই হজম করে পাকস্থলী দিয়ে বের করবেন।যদি একবারের জন্য এই মেয়েটি ফেশেছে তো আপনার এই সুন্দর মোটা পেট আমার গুলিতে ফুটো হয়ে যাবে।”
দারোয়ান আর কি করবে।বেচারা বীরের পিছু নিয়েছিলো।দেখতে যে কি করে। যা যা দেখলো তাতে দারোয়ান নিজেই এখন বোবা।তারপরও সে তুতলিয়ে বলে,”ঠি ঠি ঠিক আছে স্যার।”
মাহমুদ সরদার লাগাতার কল করে যাচ্ছেন শাহানা পারভীনকে।চারদিন মতো কথা হয়না তার সাথে।বিপদ আপদ হলো কি না জানতে পারছে না।মায়ার খোঁজ খবর নিতে পারছেন না তিনি।মায়ার ম্যাচের সামনে যাবেন ভাবছেন।রাজ এসে মাহমুদ সরদারের কাছে বলে,”ছোট মায়ের খবর কি বাবা?”
“বুঝতে পারছি না কিছু।কোনো সন্ধান পাচ্ছি না তাদের।আজকে মায়া মার ম্যাচে যাবো ভাবছি।”
“ওর ম্যাচ কোথায় আমাকে বলো।আমি যেয়ে দেখছি।”
মাহমুদ সরদার ম্যাচের ঠিকানা দিতেই রাজ চলে যায় সেখানে।কিন্তু সেখানে যেয়ে রাজ অবাক হয়।এখানে মায়ার কোনো খোঁজ নেই।সবাই বলছে মায়া ও তার বোন কাল সকালে চলে গেছে।এদিকে সবাই শোক পালন করছে। ম্যাচের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।অনেকে বলছে কিছুদিন আগে ব্রেকআপ হয়েছে তাই এমন করেছে।মেয়েটির বাবা মা এসে কান্না কাটি করছে।রাজ মায়াকে না পেয়ে বাসায় ব্যাক করে।মাহমুদ সরদারকে বলাতে তিনি শিবচর ছুটে যায়।লোক লাগিয়ে জানতে পারে শাহানা পারভীন ও মায়াকে বেড়াতে গেছে।টুর দিচ্ছে তারা।এটা মূলত হাসি লোকেদের মিথ্যা বলেছে।মায়া শিখিয়ে দিয়েছে।মাহমুদ সরদার বিশ্বাস করে নিলেন।তাই তিনি রাজকে শান্তনা দিলেন যে মায়া আর ওর মা আপাতত বেড়াতে গেছে।
চলবে…?
#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৩৭
#ইশরাত_জাহান
অতীত(মায়াবীর){সমাপ্তি}
🦋
মায়া এখন বীরের বাসায় থাকে।বাসা বললে ভুল হবে এটা যেনো এক রাজপ্রাসাদ।অনেক বড় এক বাড়িতে বীর একা থাকে।আশেপাশে ছোট ছোট বাড়ি।ওগুলোতে গরীব দুঃখীদের বসবাস।এসব বীর করেছে।বীরের কার্যকলাপে মুগ্ধ হয় মায়া।
বাড়িতে থাকা মহিলা সার্ভেন্ট ডেকে বীর বলে,”এনাদেরকে যে রুম সাজিয়ে রাখার কথা বলেছিলাম ওই রুমে নিয়ে যাও। আর হ্যাঁ এই বীরের মেহমান বলে কথা।এদের খাতিরে যেনো কোনো ত্রুটি না থাকে।এই বীরের মহল থেকে যাওয়ার সময় যেনো কেউ এটা না বলতে পারে যে বীর আপ্যায়নে কৃপণ।”
সার্ভেন্টটি সম্মতি জানিয়ে নিয়ে যায় মায়াকে।ফ্রেশ হয়ে মায়া বাইরে আসতেই সার্ভেন্ট তার খাবার দিয়ে যায়।খাবার খাওয়া শেষ করতেই বীর মায়াকে নিয়ে হসপিটালে যায়।শাহানা পারভীন এখন সুস্থ।কিন্তু উনি কোমায় চলে গেছেন।ওনার নিজে থেকে মনোবল শক্তি কম।সব রোগ ট্রিটমেন্ট দিয়ে সারানো সম্ভব নয়।শাহানা পারভীন ঠিক তখনই সাভাবিক ভাবে চলাফেরা করবে যখন সে নিজে থেকে চেষ্টা করবে।মনের ধৈর্য শক্তি চেষ্টা না থাকলে তার জন্য হাজার ডাক্তার থাকলেও সম্ভব না।এই যে দুইদিন হলো শাহানা পারভীন জ্ঞান ফেরার পর কোনো রেসপন্স করছেন না।কিন্তু তার হার্টবিট চলছে।উনি সবকিছু শুনতে পারছেন।এছাড়া দেখতেও পারছেন।কিন্তু কথা বলতে পারছেন না।আবার চেষ্টাও করছেন না।ডাক্তারের মতে,”উনি ট্রমার উপর দিয়ে গেছেন।হয়তো জীবনে অনেক বড় বড় ধাক্কা সামলাতে সামলাতে উনি হাপিয়ে গেছেন।এখন ওনার মনোবল শক্তি কমে এসেছে।কিছু চাওয়া পাওয়া দিয়ে হয়তো ওনাকে সুস্থ করা সম্ভব।এছাড়া তার কমপ্লিটলি যত্নে রাখতে হবে।”
বীর ও মায়া মিলে শাহানা পারভীনকে রিলিজ করিয়ে নিয়ে আসে।বীর নিজের দায়িত্বে শাহানা পারভীনের জন্য নার্স রাখেন।নার্স ও মায়া মিলে শাহানা পারভীনকে দেখাশোনা করে।এছাড়া মায়া তার নিজের মতো পড়াশোনা করতে থাকে।বীর খোঁজ লাগিয়ে দেয় চারপাশে।সেদিন রাতে রাস্তায় ঘটে যাওয়ার ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজে ক্যাপচার করা ছিলো।বীর সেই ফুটেজ মায়ার সাথে করে দেখে।সেখানে যে হুডি পরেনি তাকে জুম করে একটি ছবি তুলে নেয় বীর।ফুটেজটির এই অংশটুকু মায়ার কাছে সেভ করে রাখে বীর।বলে,”হয়তো এটা বারবার দেখলে মাইন্ডে কোনো প্ল্যান চলে আসবে।বলা যায় না এই ভিডিও কোনো কাজে লাগবে পরবর্তীতে।”
বীরের কথাতে মায়া ভিডিওটি রেখে দেয়।যত দিন যাচ্ছে বীর মায়া সম্পর্কে অবগত হতে থাকে।কিন্তু মায়া বীরকে সরদার বাড়ির নাম বলে না। আর বীর নিজেও জোর করেনা।মায়ার জীবনী শুনে বীর মায়াকে বলে,”আমার মনে হয় তোমাকে সবদিক থেকে পারদর্শী হওয়া উচিত।একজন ছেলে কেনো সবসময় লড়াই করবে?একজন মেয়ে হয়ে তোমাকেও সেই এবিলিটি রাখা দরকার।”
“কি করতে হবে আমাকে?”
“কাল থেকে জিম করবে। আর আমি তোমাকে কিছু ফাইট শেখাবো।যেগুলো জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তোমার প্রয়োজনে আসতে পারে।তুমি রাজি তো?”
“হ্যাঁ।নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত অন্যায়ের মোকাবিলা করতে আমি যা যা শিখতে হয় শিখবো।”
“ভেরি গুড।এবার থেকে ভোর বেলা উঠবে।আমার সাথে জগিং করতে যাবে।তারপর তোমাকে জিমে নিয়ে যাবো।নিজেকে খাবারের দিক থেকেও সচেতন হতে হবে। আর সন্ধায় আমি বাড়িতে এসে তোমাকে ফাইট শেখাবো।”
“ওকে।”
“তোমার পড়াশোনার দিকে ফোকাস রাখবে।তোমাদের পারিবারিক ব্যাবসা এখন তোমাকে দেখতে হবে।আপাতত আশ্রম আমি চালাবো।তুমি নিজের ইচ্ছাকে পূরণ করার মতো নিজেকে গড়ে তুলবে।”
“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মিস্টার খান।আমার এই বিপদে আপনি আমার জীবনে ঢাল হয়ে এসেছেন।”
মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বীর মনে মনে বলে,”জানি না এই চোখে কি আছে।কিন্তু এই চোখে জমে থাকা পানি সহ্য করতে পারিনা আমি।এই চোখ কাজলে ভরপুর থাকবে।তোমার মুখের আমি হাসি দেখতে ভালোবাসি।সেই হাসির জন্য তোমার সমস্ত ইচ্ছাকে পূরণ করবো আমি।”
বীরের মনে মনে বলা কথাগুলো মনেই থেকে যায়।মায়ার কান অব্দি পৌঁছায় না।মায়া বীরকে নিজের ফ্রেন্ড ভাবতে শুরু করে।কারণ মায়ার মনে একজনই রাজত্ব করে আছে।সে হলো শাহমীর রাজ।মায়া এখন প্রতিদিন ভোরবেলা জগিং করে জিমে যায় তারপর বাসায় এসে পড়াশোনা করে।শাহানা পারভীনের সেবাযত্ন করে।নিজের খাবারের দিকে যত্নশীল হয়।বীর এসে তাকে ভিন্ন ফাইট শিখিয়ে দেয়।যেগুলো বীর বিদেশ থেকে শিখেছে। বড় একটি ব্যাগে কয়েকটি ডাব রেখে ব্যাগটি ঝুলিয়ে তাতে পাঞ্চ করে মায়া।প্রথম প্রথম হাতে খুব ব্যাথা পেতো।কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।উচু হয়ে উল্টো দিকে ঘুরে যাওয়া শিখে নেয় মায়া।প্রথম দিকে খুব কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে মায়া এটাতেও পারফেক্ট হয়।বীর নিজ দায়িত্বে মায়াকে গাড়ি চালানো শিখিয়ে দেয়।এখন মায়া পারফেক্টলি ড্রাইভ করতে পারে।
এভাবে ছয়মাস চলার পর একদিন কথা ওঠে বীরের দরকারি কাজে সাজেক যেতে হবে।সাজেকে পাহাড় থাকে। পাহাড়ের নাম শুনে মায়া খুশি হয়।যেটা দেখে বীর বলে,”তুমি যাবে আমার সাথে?”
আপত্তি জানিয়ে মায়া বলে,”মাকে এভাবে একা রেখে যাওয়া উচিত হবেনা।আপনি যান ঘুরে আসুন।”
“আন্টিকে দেখার জন্য এখানে অনেক মানুষ আছে।তুমি যেতে চাইলে তোমাকে পাহাড় থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো।”
মায়া রাজি হয়ে যায়।সাজেক যেয়ে মায়া পাহাড়ের উপরে উঠে অনেক আনন্দ করে।মন খারাপ করে থাকা মায়াকে উৎফুল্ল দেখতে পায় বীর।পাহাড়ের উপর উঠে মায়া দুই হাত দুইদিকে করে মেলে চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি উপভোগ করতে থাকে।বাতাসে মায়ার ওড়না উড়তে থাকে।ওড়নার এক প্রান্তের আচল এসে বীরের মুখ ঢেকে দেয়।ওড়না থেকে এক সুগন্ধি ভেসে আসে বীরের নাকে।বীরের মনে হতে থাকে এটা মায়ার নিজস্ব সুগন্ধ।মুখ থেকে ওড়না সরিয়ে বীর তাকিয়ে থাকে মায়ার মুখের দিকে।মায়ার এই অবস্থায় কিছু ছবি তুলে নেয়।মায়ার দিকে তাকিয়ে বীর মনে মনে বলে,”এই মুখের হাসি ধরে রাখতে বীর তার সর্বস্ব দিতে রাজি।শুধু এই আস্ত হাসি খুশি নারীটি আমার হয়ে থাকুক।”
রাজ ছট ফট করতে থাকে।সে তার বউকে খুঁজে পাচ্ছে না।এই সফলতা দিয়ে কি হবে যদি বউ হারিয়ে যায়?মাহমুদ সরদার এদিক ওদিক লোক লাগিয়েছে।সবার এক কথা শাহানা পারভীন ও মায়া বিদেশে ঘুরতে গেছে।কিন্তু কোথায় এতকিছু বলে না।মৌ ও হাসি কথা এড়িয়ে দেয়।প্রায় প্রায় ওরা গোপনে দেখা করে শাহানা পারভীনের সাথে।শত্রুদের ভয়তে কাউকে শাহানা পারভীনের আসল খোঁজ দেয় না কেউ।এবার যেহেতু মায়া সাজেক গেছে তাই সবাইকে হাসি বলে দিলো যে মায়ারা বিদেশ থেকে এসে সোজা সাজেক গেছে।সবাইকে জানাতে নিষেধ করেছে।রাজ এবার একটু শান্তি পেলো।তবে তার বউকে দেখার জন্য সেও সাজেক যেতে চাইলো।কিন্তু টিকিট কাটার আগে জানতে পারলো মায়া নিজেই চলে আসছে।মাহমুদ সরদার ও রাজ দুজনেই চায় মায়াকে এখন বাড়ির বউ করে আনতে।কিন্তু শাহানা পারভীন বলেছিলেন,”মায়া আগে পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দারাবে তারপর ও এই বাড়িতে বউ হয়ে ওর বাবাকে যোগ্য জবাব দিবে।আমার মেয়ে তার নিজের যোগ্যতায় তার বাবার সম্মুখে আসবে।মা ও মেয়ের অবহেলার মুক্ষম জবাব দিবে আমার মেয়ে।”
তাই রাজ মায়ার সামনে যায়না।মায়া আগে নিজে থেকে ধরা দিবে তারপর রাজ তার প্রতি দিওয়ানা প্রকাশ করবে।
সাজেক থেকে আসার পর বীর তার বাবা মায়ের কাছে চলে যায়।তাদের ব্যাবসার কাজের জন্য।বীর মাফিয়া জগতে পা দেওয়ার পাশাপাশি ওর বাবার ব্যাবসা দেখে। যেটার একমাত্র উত্তরাধিকার বীর নিজে।মায়া এবার বীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে বলে,”আমার জীবনের বেস্ট একটি অংশ আপনি।আপনার এই ঋণ আমি কিভাবে শোধ করবো নিজেও বুঝতে পারছি না।”
“সবকিছুর ঋণ পরিশোধ হয় না।আমাকে ওখানে দুই কি তিন বছর থাকতে হবে।তোমার সুবিধা অসুবিধা আমাকে জানাবে।দূরে গেলেও এই বীর তোমার সকল উপকার করেই ছাড়বে।”
“আচ্ছা।”
মায়া নতুন একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়।শাহানা পারভীনকে নিয়ে মায়া ওই ফ্ল্যাটে থাকে।মৌ থাকে আলাদা ম্যাচে।মায়া ইচ্ছা করে মৌকে দূরে রেখেছে।এখন সবাই জানে শাহানা পারভীন মারা গেছে।গ্রামেও জানানো হয় শাহানা পারভীন আর নেই।সাজেক অ্যাকসিডেন্টে শাহানা পারভীন মারা যান।এতদূরে লাশ আনা সম্ভব না তাই ওখানেই তার দাফন করা।এই মিথ্যেটা না চাইতেও বলতে হয় সবার।কি আর করার?শাহানা পারভীন বেঁচে আছে জানলে নারী পাচারকরি সচেতন হয়ে যাবে। মায়া বীরের মাধ্যমে তাদের ফ্যাক্টরিতে গার্ড রেখেছে।কারণ বেশিরভাগ নারী এই গার্মেন্টস থেকে নেওয়া হয়।
দিনগুলো ভালোই যেতে থাকে।রাজ যখন থেকে মায়ার খোঁজ পেলো চুপি চুপি তার বউকে দেখতে আসে।রাজের বিশ্বাস তার ছোটমা বেচে আছে।হুডি পরে রাতের আধারে রাজ এসে এসে দেখে যেতো মায়াকে।মায়ার আশেপাশে কোনো ছেলেকে ঘেঁষতে দেখলে রাজ তার হাত পা ভেঙ্গে রাখতো।
একদিন মায়া রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটতে থাকে।একটি আইস ক্রিম পার্লার দেখে সেখানে যায় মায়া।আইস ক্রিম খেতে খেতে যেই রাস্তা পার হবে ওমনি দুজন ছেলে উক্তক্ত করতে থাকে মায়াকে।মায়া না পেরে ব্যাগ দিয়ে দেয় তাদের কাছে।দূর থেকে রাজ এটা দেখে রেগে যায়।রাজ তার গার্ডদের কল করে বলে দেয় এই ছেলে দুটোকে ধরে বেঁধে রাখতে।ওরাও তাই করে।ছেলে দুটোর সামনে একটু ধারালো মোটা কেচি নিয়ে এসে রাজ বলে,”আমার মায়াবতীকে উত্যক্ত করেছিলি।এখন তো তোদের বুঝতে হবে এর ফল কি।”
ছেলে দুটো না পারছে কিছু বলতে না পারছে চুপ থাকতে।বারবার ক্ষমা চাওয়া শর্তেও রাজ করেনি তাদের ক্ষমা।যেই হাত দিয়ে ওরা মায়াকে ধরতে এসেছিলো সেই হাতের আঙ্গুলগুলো রাজ কেচ করে কেটে দেয়।ছেলেগুলো চিৎকার করে ওঠে।একজনের ডান হাতের আঙ্গুল আর আরেকজনের বাম হাতের আঙ্গুল কেটে দেয় রাজ।
এই সবকিছুর দৃষ্টিগোচর হয় না মায়ার।রাজ মনে করে মায়া এগুলো জানে না।আসলে এগুলোর আসর মাস্টার মাইন্ড মায়া নিজে।মায়া কিছুদিন লক্ষ করেই বুঝতে পারে তার পুতুল বর তাকে দেখছে।তাকে ফলো করছে।তাই মায়া নিজেও উড়ন্ত সাজতে শুরু করে।যেদিকে বাজে লোকদের আড্ডা মায়া সেদিকেই ইচ্ছা করে যায়। যাতে করে মায়াকে কেউ উত্যক্ত করলে রাজ ওদের শাস্তি দিবে।মায়াকে যত বাজে ছেলেরা উত্যক্ত করবে রাজ তত মায়ার প্রতি সেনসিটিভ হয়ে যাবে।যেটা মায়ার খুব বেশি ভালো লাগে।মায়ার কাছে এটা দৈনন্দিন খেলার মতো লাগতে থাকে।মায়া যেমন রাজের প্রতি আসক্ত ঠিক তেমনই মায়া রাজকেও তার নিজের প্রতি আসক্ত করতে চায়।কিন্তু বোকা মায়া জানেনা যে তার বর এমনিতেই তার প্রতি আসক্ত।
এভাবে যেতে থাকে দিন।একদিন দুই দিন করতে করতে যায় মাস।তারপর আস্তে আস্তে কেটে যায় বছর।মায়া এখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে।তার পাশাপাশি মায়ার কোম্পানি উন্নতি করেছে।বীর তো তার গার্ড রেখেছে আবার রাজ নিজেও মায়ার ফ্যাক্টরিতে গার্ড রেখেছে।যেগুলো মায়া খুব ভালো ভাবেই জানে।কিন্তু কিছু বলে না।রাজের এই ছোট ছোট যত্ন মায়ার কাছে সুখের লাগে।
কিন্তু মায়া ও রাজের এই ভালোবাসার মাঝে আবারও ফিরে আসে বীর।বীর এবার মায়াকে বিয়ে করতে চায়।তাই সে মায়ার প্রিয় ফুল জারবেরা নিয়ে চারপাশ সাজিয়ে রাখে।মায়াকে কল করে আসতে বলে।মায়া যায় বীরের সাথে সাক্ষাৎ করতে।কিন্তু মায়া জানে না বীর তাকে কি বলবে।
বীরের বাড়িতে এসে মায়া ডাকতে থাকে,”মিস্টার খান।কোথায় আপনি?মিস্টার খান?”
গিটার বাজাতে বাজাতে সিড়ি থেকে নেমে আসে বীর।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে গাইতে থাকে,
“Mohabbat ho gayi he tumse……”
মায়া অবাক হয়ে শুনছে।হঠাৎ এভাবে সারপ্রাইজ দেওয়ার মানে কি।চারপাশে আলো জ্বলতেই মায়া দেখলো তার প্রিয় জারবেরা দিয়ে সাজানো হয়েছে হলরুম।বীরের মুখে প্রণয়ের গান।চারপাশ মায়ার পছন্দে সাজানো পরিবেশ দেখে সন্দেহ হয় মায়ার।মায়া বলে,”এগুলো কেনো?”
বীর হাঁটু গেড়ে বসে মায়ার সামনে।মায়ার দিকে তাকিয়ে একটি ছোট বক্স উচু করে।বক্সটি খুলে দেখায় তাতে একটি আংটি।মায়াকে উদ্দেশ্য করে বীর বলে,”I love you Maya.Love you so much Janeman.You know how much I miss you all the whole time.”
“ক ক কি?”
“ইয়া জানেমান।আমি এতগুলো বছর দূরে থেকে এটা বুঝেছি তুমি হীনা আমি শূন্য।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই মায়া মাই জানেমান।আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।”
মায়া আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে।তার সামনে রাজের প্রতিচ্ছবি ভেসে আসে।সে তো একজনের বউ। হ্যা এখানে বীরের বাড়িতে থেকেছিলো কিছুদিন।কিন্তু তাও নিজের মায়ের সুরক্ষার জন্য।তাছাড়া ম্যাচে ওই মেয়ের খুনের জন্য মায়াকে এখানে থাকতে হয়। যাতে সে ফেসে না যায়।কিন্তু মায়া তো তার সাথে রোমান্টিক কথা বলেনি বা কোনো আশা দিয়েও রাখেনি।আবার বীরের কোনো আচরণে মায়া অনুভব করেনি যে বীর তাকে ভালোবাসে।যদি মায়া জেনে যেতো অবশ্যই মায়া চলে যেত এখান থেকে।মায়ার কাছে মনে হয়েছিলো গরীব অসহায়দের যেমন বীর তার মহলে স্থান করে দিয়েছে ঠিক তেমন তার মায়ের বিপদে বীর হাত বাড়িয়ে সাহায্য করেছে।যেটা মাফিয়া বীরের বৈশিষ্ট্য।এর ভিতরে ভালোবাসা আসবে এটা মায়ার কল্পনাতেই ছিলনা।
মায়া দু কদম পিছিয়ে বলে,”আমি বিবাহিত মিস্টার খান।আমার স্বামী আছে।”
বীরের বুকে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে।এমনটাই উপলব্ধি করে বীর।মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তারপর হো হো করে হেসে বলে,”মজা করছো জানেমান।তুমি আঠারো বছর বয়সে থাকতে আমার কাছে ছিলে। আর এতদিনে যে তুমি মুভ অন করোনি এই খোঁজ আমি নিয়েছি।”
“আপনি আমার অতীত জানেন না।আমার ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়।আমি এখন আমার সেই স্বামীকেই ভালোবাসি।”
“ছোটবেলায় বিয়ে মানে তো বাল্যবিবাহ।এই বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই।তুমি এখন এডাল্ট হয়েছো।এখন আমরা দুজনে এক হয়ে বিয়ে করলে ওই বিয়ের মূল্য থাকবে না।আমার হয়ে যাও তুমি।প্লিজ জানেমান না করোনা।আমি সহ্য করতে পারবো না।”
“আপনাকে সহ্য করতে হবে মিস্টার খান।আমি আপনাকে কিছুতেই গ্রহণ করতে পারবো না।আপনি হয়তো শেষের কথাটা শুনেননি।আমি আমার স্বামীকে এখনও ভালোবাসি।”
“কে তোমার সেই স্বামী?নাম বলো তার।আমি তার সাথে তোমার বিচ্ছেদ করিয়ে দিবো।তারপর আমার করে নিবো।”
“কিছুতেই পারবেন না।আপনি আমার ভালোবাসার থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবেন না।আমি বারবার বলছি আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি।”
“আমিও তো বারবার বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।কেনো শুনছো না তুমি আমার কথা?”
শেষের কথাটি বেশ জোরেই বলে ওঠে বীর।মায়া এবার আর কথা বাড়ায় না।সে চলে যেতে নিলে বীর রিমোট দিয়ে দরজা লক করে দেয়।মায়া দরজা খুলতে পারে না।পিছনে তাকিয়ে দেখে বীরের মুখে ডেভিল হাসি চোখ লাল।মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি শুধু আমার থাকবে, জানেমান।”
মায়া নিজেও এবার চিল্লিয়ে বলে,”আমার মাথা গরম করে দিবেন না মিস্টার খান।আপনি যদি আমাকে পেতে জোর করেন তাহলে আমিও আমার স্বামীর কাছে যেতে আপনাকে শেষ করবো।এই মায়ার জীবনে শুধু একজনের নাম।সেটা শাহমীর রাজ।”
শাহমীর রাজ নামটি শুনে থমকে যায় বীর।প্রশ্ন করে,”মন্ত্রী শাহমীর রাজের কথা বলছো?”
“হ্যাঁ।”
“তোমার সাথে ওদের কি সম্পর্ক?কিভাবে হয়েছে এই বাল্য বিবাহ?তোমার আসল নাম কি?”
“আমার আসল নাম মানে?”
অবাক হয়ে বলে মায়া।
বীর স্মিত হেসে বলে,”মোহনা সরদার।এম আই রাইট জানেমান?”
“আপনি কিভাবে জানলেন?”
“ওটা তোমার না জানলেও চলবে।তবে সে যেই হোক তোমার জীবনে এখন শুধু আমি থাকবো।”
বলেই মায়ার মুখের উপর স্প্রে করে দেয় বীর।মায়া অজ্ঞান হয়ে যায়।
জ্ঞান ফিরতেই মায়া দেখলো সে একটি বিছানায় শুইয়ে আছে।পাশের সোফায় বীর বসে আছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”গুড ইভিনিং জানেমান।”
“গো টু হেল ইওর গুড ইভিনিং।”
বলেই যেই মায়া তেড়ে আসতে যাবে ওমনি বীর একটি ভিডিও ওপেন করে মায়ার সামনে ধরে।যেখানে দেখা যায় শাহানা পারভীন।তার আশেপাশে গার্ড আছে।মায়ার পায়ের নিচে ফাঁকা অনুভব করতে থাকে।বীর মায়াকে বলে,”চুপচাপ বিয়ে করে নেও আমাকে জানেমান।আমি আর তুমি সংসার করবো।দেখবে ওই সংসারে তুমি এতটাই সুখী থাকবে যে রাজের কথা ভুলেই যাবে।”
মায়া কোনো কথা বলেনা।চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।বীর বের হতেই রুমে দুজন বিউটিশিয়ান আসে।বিউটিশিয়ান এসে মায়াকে সাজিয়ে দেয়।মায়া চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মতো সেজে নেয়।কোনো বাধা দেয় না কাউকে।আয়নার সামনে বড় পারফিউমের কৌটা দেখলো মায়া।ওটা হাতে নিয়ে বিউটিশিয়ানদের চোখে মেরে দিলো।তারা কিছু বলতে যাবে আগে মায়া তাদের হাত ও মুখ বেঁধে দেয়।
শাহানা পারভীনকে যে ঘরে আটকে রাখা হেয়েছ সেই ঘর মায়া চেনে।ঘরের ডেকোরেশন পাশ থেকে দেখে মায়া বুঝতে পারে এটা কোন রুম।তাই আস্তে আস্তে মায়া সেদিকে চলে যায়।রুমের মধ্যে চারজন গার্ড দেখতে পায় মায়া।কি করবে বুঝতে পারছে না।মনে পড়ে যায় বীরের সেই স্প্রে বোতলের কথা।যে ঘরে মায়া ছিলো ওই ঘরেই ওটা দেখতে পায় মায়া।মায়া দৌড়ে গিয়ে স্প্রে বোতল নিয়ে নেয়।তারপর একটি কাপড় দিয়ে নিজের নাক বেধে রাখে। আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে মায়া স্প্রে করে।সবাই অজ্ঞান হয়ে যায়। একজন গার্ডের পকেট থেকে গুলি নিয়ে মায়া নিজের কোমরে গুঁজে রাখে।শাহানা পারভীন কে কষ্ট করে উঠিয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয় মায়া।তারপর আশেপাশে ভালো করে দেখতে থাকে।এই বাড়ির পিছন সাইট চেনে মায়া।বাড়ির পিছনের গেটে বড় তালা ঝোলানো।কিছুটা দূরেই স্টোর রুম। সেখান থেকে হাতুড়ি নিয়ে মায়া তালা ভাঙতে থাকে। তালা ভাঙার ফলে মায়ার হাত কিছুটা থেতলে যায়।মায়া তারপরও চেষ্টা করে।বেশ সময় লাগিয়ে তালা ভেঙ্গে মায়া শাহানা পারভীনকে নিয়ে গ্যারেজে চলে যায়।নিজের গাড়িতে না উঠে মায়া বীরের গাড়ি নেয়।গাড়ির উপরে ড্রাইভারের শার্ট আর কেপ থাকে।যেটা পরে নেয় মায়া।তারপর শাহানা পারভীনকে নিয়ে গাড়ির ব্যাক সিটে শুইয়ে দেয়।শাহানা পারভীনের হাতে ক্যানোলা ছিলো।যেটা মায়া বন্ধ করে খুলে নেয় পালানোর সময়।মায়ের কষ্ট হয়েছে ভেবে কষ্ট পায় মায়া।শাহানা পারভীনের হাত ধরে বলে,”সরি মা। এখান থেকে পালানোর জন্য তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।দেখবে এখান থেকে যাওয়ার পর তোমাকে আমি ভালো ডাক্তার দেখাবো।”
কথাগুলো বলেই মায়ার ফ্রন্ট সিটে এসে ড্রাইভ করে।গেটের কাছে দারোয়ান গাড়ির ভিতরে শার্ট আর কেপ দেখে ভেবে নেয় এটা ড্রাইভার।তাই দরজা খুলে দেয়।যেহেতু এটা বীরের গাড়ি।অন্ধকার রাস্তায় বেখেয়াল মায়া।কখনও শাহানা পারভীনের দিকে নজর তো কখনও পিছনে।আবার সে ভাবছে এখন শাহানা পারভীনকে রাখবে কোথায়?এখন পালালেও বীর একটু পরই তার গাড়ির GPS ট্র্যাক করবে।ভাবতে না ভাবতেই মায়ার ফোনে কল করে বীর।মায়া রিসিভ করেনা।
বীর এবার মায়াকে ম্যাসেজ দেয়,”তোমার পিছনেই আমি আছি জানেমান।”
এমন ম্যাসেজ দেখে মায়া পিছনে তাকিয়ে দেখতে থাকে। আর ঠিক তখনই গাড়ির সামনে এসে পড়ে একজন যুবক।মায়া ব্যালেন্স হারা হয়ে যায়। যার কারণে যুবকটির পেট ও মুখের উপর থেকে মায়ার চালানোর গাড়ির চাকা সংঘর্ষ লেগে চলে যায়।মায়া তারপরও ছেলেটিকে দেখার জন্য পিছনে তাকাতেই মায়ার গাড়ি ব্রেক ফেল করে একটি গাছের সাথে বাড়ি খায়।
মায়া এবার কি করবে বুঝতে পারছে না।একদিকে তার মা।আরেকদিকে না চাইতেই তার দ্বারা নিরীহ ছেলের খুন।আবার আরেকদিকে তার মন্ত্রী মশাইকে না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।মায়া গাড়ির দরজা খুলে যেই ওর মায়ের কাছে যাবে ওমনি সেখানে হাজির হয় বীর।গাড়ি থেকে বের হয়ে ছেলেটির লাশ দেখে বীর বলে,”নির্দোষ ছেলেকে খুন করলে তুমি। জানো ও কে? শাহমীর রাজের ছোটভাই তাজ।সিসি ক্যামেরায় যে সব প্রমাণ হয়ে গেলো জানেমান। এবার কি হবে?”
মায়া একটু ঘাবড়ে যায় তবে এবার আর থেমে থাকেনা।যেহেতু শাহানা পারভীন তার কাছেই আছে তাই মায়া এবার কোমর থেকে গুলি বের করে বীরের দিকে তাক করে বলে,”আমাকে পাওয়া এতটা সহজ নয় মিস্টার খান।আপনাকে ভালোবাসতে পারেনি এই মায়া।ভালোবাসাহীন এই সম্পর্কে জড়িয়ে থাকতে চাই না আমি।সরি টু সে আপনি আমার এত উপরকার করলেও আজ তার প্রতিদান হিসেবে আপনি মৃত্যু গ্রহণ করবেন।”
বলেই মায়া শুট করে দেয় বীরের বুকে।বীর তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।মায়া আবার বীরের বুক বরাবর গুলি করে।বীরের বুক থেকে গড়গড় করে বের হয় রক্ত।যেটা দেখে বীর বলে,”ভালোবাসার জন্য হাত বাড়িয়েছিলাম আমি,কিন্তু এর বিনিময়ে রক্ত দিয়ে বন্যা বইয়ে দিলে তুমি।এই বীর মরে গেলেও বীরের ভালোবাসা থাকবে অমর।যদি বেচে যাই তো তোমাকে পেতেই বেঁচে ফিরবো।এটা এই আরহাম খান বীরের ওয়াদা জানেমান।”
বলেই নিচে ঢলে পড়লো বীর।বীরের সাথে আসা লোকগুলো ছুটে আসে বীরের কাছে।বীর তাদেরকে বলে,”সিসি ক্যামেরায় থাকা এই ফুটেজ ডিলিট করে দিবি তোরা।আমার জানেমানের দেখাশোনা করে রাখবি।আমার আমানত রেখে যাচ্ছি। বেঁচে ফিরলে তাকে আমার করতে আবার আসবো।সে আমাকে মেরে ফেলতেই পারে।কিন্তু তার বিপদ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব এই বীরের। ফুটেজগুলো তাড়াতাড়ি ডিলিট করার ব্যাবস্থা কর যা।”
একদিকে বীর তার মৃত্যুশয্যায় থেকেও তার জানেমানকে বিপদের মুখ থেকে বাঁচাতে চাইছে আরেক দিকে মায়া তার মাকে নিয়ে আরেক গাড়িতে উঠে পালিয়ে যাচ্ছে।যদিও এই সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখছে বীর।রাস্তায় শুয়ে থাকা বীরের চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। যার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ছুটছে সে কি না অন্যের হতে চাইছে।
বীরকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। আর আরেকদিকে বীরের কথায় ফুটেজ ডিলিট করে দেওয়া হয়।বীর সুস্থ হওয়ার পর অতিরিক্ত পাগলামি শুরু করে দেয়। যার কারণে বীরকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিক মায়া সুযোগ বুঝে শাহানা পারভীনকে আলাদা ফ্ল্যাটে নার্স সহ রেখে দেয়।জাতে কেউ শাহানা পারভীনের খোঁজ না পায়।
বর্তমান,
কোমরে কারো স্পর্শ পেতে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে মায়া।কোমরের স্পর্শ করা ব্যাক্তির মুখ না দেখলেও বুঝতে পারে কে এই ব্যাক্তি।
রাজ মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”এভাবে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে নিজেকে পোড়াচ্ছো কেনো মায়াবতী?”
আশেপাশে সূর্যের তাপ।যেটা ব্যালকনিতে এসেছে।সেই তাপের মাঝে দাড়িয়ে সবকিছু অনুভব করছে মায়া।রাজের প্রশ্নে মায়া বলে,”এই রোদের মিষ্টি তেজ আমাদের মন ভালো করে দেয় মন্ত্রী মশাই।এখানে দাড়ালে শান্তি অনুভব করা যায়।ভুলে থাকা যায় কিছু অপ্রিয় সত্য।”
চলবে…?