মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
7

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৪
#ইশরাত_জাহান
🦋
[১৮+ এলার্ট]
রুদ্র চোখ টিপ দিয়ে বলে,”আমার হিয়াপাখিকে উড়াল দিয়ে নিয়ে যাবি আর আমি চুপ থাকব।এতই সোজা?”

রুদ্রের কথা শেষ হতেই লোকগুলো বুঝে যায় রুদ্র হিয়ার জন্য এসেছে।হাতে থাকা ছুরি নিয়ে লোকগুলো এগোতে যাবে ওমনি রুদ্র তাদের ধরে মারতে থাকে।রুদ্রর ফাইট দেখে বোঝা যায় সে এসব খুব ভালোভাবে পারে।এক্সপেরিয়েন্স না থাকলে কেউ এত ভালো ফাইট করতে পারে না।হিয়া ওর ওড়না ধরে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।লোকগুলোকে আধমরা বানিয়ে রুদ্র আসে হিয়ার কাছে।হিয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,”চল আমার সাথে।”

হিয়া দূরে সরে যায়।রুদ্রের প্রতি এখনও তার রাগ আছে।হিয়া বলে ওঠে,”আমি যাবো না আপনার সাথে।আপনি একজন প্রতারক নষ্ট পুরুষ।আপনার ইন্টেনশন খুব খারাপ।”

“এখন তর্ক করার সময় না।চল আমার সাথে।”

বলেই রুদ্র হিয়ার হাত ধরতে যায়।ঝাড়া দিয়ে দূরে সরে দাড়ায় হিয়া।রুদ্র বুঝলো হিয়া কথা শুনবে না।হিয়াকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে হাঁটতে থাকে রুদ্র।হিয়া ছোটাছুটি করে।বলে,”আমাকে ছাড়ুন নষ্ট পুরুষ।আমি আপনার সাথে যাবো না।আপনি বাজে লোক।”

রুদ্রর কানে কথাগুলো পৌঁছালেও আগ্রহ দিলো না হিয়ার কথাতে।সোজা হিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে আসে নিজের ফ্ল্যাটে।ফ্ল্যাটে এসে হিয়া দেখতে পেলো জেসিকে।রুদ্র জেসিকে দেখে বলে,”তুমি বাইরে যাও।ওর সাথে আমার কথা আছে।”

হিয়া হা হয়ে আছে।জেসি আর রুদ্র একসাথে থাকে।এখন আবার এই রাতের বেলা জেসিকে বাইরে যেতে বলে তার সাথে একা ঘরে কথা বলতে চায়।জেসির পেটের দিকে তাকিয়ে হিয়া আরো অবাক।একদম স্লিম হয়ে আছে।জেসি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।রুদ্রর মুখে ঘাম লেগে আছে।হাত মুঠ করে শার্টের হাতা দিয়ে মুখ মুছে নেয়।তারপর হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করবি না।যতদিন আমি না তোকে মুক্ত করি এই ঘরে থাকবি। বেড় হবি তো বিপদে পড়বি।”

“আপনার কথায় চলব আমি?আপনি আবার কোন উদ্দেশ্যে আছেন?”

“যেই উদ্দেশে থাকি না কেনো তোকে আমার করেই ছাড়বো।”

“সপ্ন দেখতে থাকুন।বাস্তব হবে না।আমি মন্ত্রীর বোন হই।আমাকে ফাঁদে ফেলা এত সহজ না।”

“আসছে আমার মন্ত্রীর বোন হতে।আমার পজিশন তোর ভাইয়ের থেকে কম কিছু না।”

“কোন জায়গার মিনিস্টার আপনি?এতদিন বাবার টাকায় খেয়েদেয়ে এখন হয়তো শ্বশুরের টাকায় চলে।আবার বেশি দাপট দেখাতে থাকে।”

“এই অপমান করবি না।একদম চুপ।”

“করব না চুপ।কি করবেন কি আপনি?”

রুদ্র এবার এগিয়ে আসে হিয়ার কাছে।হিয়ার মুখের সামনে নিজের মুখ নিয়ে স্লো ভয়েসে বলে,”বেশি কথা বলিস আজকাল।চুপ না করলে কিন্তু টুকুশ করে চুমু দিয়ে চুপ করিয়ে দিব।”

হিয়া নাকে কাপড় দিলো।নাক মুখ শিটকে বলে,”আপনার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ,রুদ্র ভাই।”

রুদ্র দুষ্টু হেসে বলে,”মুখ ধুয়ে আসলে চুমু খেতে দিবি?”

“ছিঃ!কি বাজে লোক আপনি।বউকে বাইরে রেখে অন্য মেয়ের সাথে এসব বলতে লজ্জা করছে না?”

রুদ্র গলা ঘুরিয়ে দেখলো বাইরের দিকে।তারপর হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আসলেই তো।আমার এত সুন্দর বউকে আমি বাইরে রেখে তোর সাথে কি করছি।ধুর আমাকে এখন যেতে হবে।থাক তুই।কোনো দুষ্টুমি করবি না।ফলাফল খারাপ হবে।”

বলেই বেড় হয় রুদ্র।দরজা পিছন থেকে লাগিয়ে দিয়ে যায়।বেড় হতে হতে রুদ্র কল করে সোনালীকে।সোনালী রিসিভ করতেই রুদ্র বলে,”হিয়াপাখি এখন আমার খাঁচায় বন্দী।তুমি এখন তোমার কাজ সফল করতে পারো।”

সোনালী শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”এই তো সাব্বাস।মায়া খুঁজতে থাকবে হিয়াকে।ও মনে করবে আমি কিডন্যাপ করেছি।কিন্তু হিয়া তো থাকবে তোর কাছে।এবার এই হিয়াকে নিয়ে ব্লাকমেইল করেই আমি মায়া আর রাজের থেকে সবকিছু আদায় করব।”

শাহানা পারভীনের কাছে এসে দাড়ালো মায়া ও রাজ।মায়া এসে শাহানা পারভীনের হাত ধরে বলে,”তোমার শাহমীর বাবাকে দেখো মা।আমার মন্ত্রী মশাই এসেছে।আমরা একসাথে আজ তোমার সামনে এসেছি।কিছু বলবে না?”

বলেই মায়া দেখতে থাকে শাহানা পারভীনকে।রাজ এসে শাহানা পারভীনের হাত ধরে বলে,”আড়ালে আবডালে তোমাকে অনেক দেখেছি ছোট মা।মায়াবতীর ইচ্ছাতে আমি আসিনি সামনে।এছাড়া আমি আর মায়াবতী একসাথে থাকলে ওরা বুঝে যেতো যে আমি আর মায়াবতী একই উদ্দেশ্যে শামিল আছি।এবার খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।একসাথে মিলে আমরা সুখে জীবন কাটাব।”

“আণ্টি দুই একের ভিতরে রিকোভার করবে।ইনফ্যাক্ট আন্টির পা কাজ করতে শুরু করেছে।আজ সকালে থেরাপি দেওয়ার সময় আণ্টি পায়ে ব্যাথা অনুভব করে একটু নড়ে উঠেছেন।কোমায় থাকা ব্যাক্তি কখনও ব্যাথা অনুভব করে না।যেহেতু আণ্টি অনুভব করেছে এর মানে উনি সেভেন্টি পার্সেন্ট ওকে।আশা করা যায় আমার করা এবারের অপারেশন সাকসেস হয়েছে।”

কথাগুলো পিছন থেকে বলে ওঠে আদ্র।মায়া ও রাজ একসাথে পিছনে ঘুরে দেখতে পায় আদ্র ও সিয়াকে।সিয়া এসে জড়িয়ে ধরে রাজকে।বলে,”তোমরা আমাকে আগে কেনো বলোনি যে তোমরা এক হয়ে আছো?”

সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে রাজ বলে,”তার কারণ আমাদের পিছনে স্পাই লাগানো আছে।আমরা খুব সাবধানে একেক করে শত্রুদের দমন করছি বোন।বিশেষ করে কাকিয়া।তার আশেপাশে তো আমাদের বুঝেশুনে চলতে হবে। আর আমি জানি আমার বোন তার ভালোবাসার মানুষের কাছে সুরক্ষিত আছে।”

সিয়া অবাক হয়ে যায়।সাথে একটু লজ্জা পায়।মাথা নিচু করতেই মায়া এসে জড়িয়ে ধরে সিয়াকে।রাজ বলে ওঠে,”বুঝলে ভাই লজ্জাই নারীর ভূষণ।আমাদের এই লজ্জা পাওয়া নারী দেখেই জীবন পার করতে হবে।বউ ভালোবাসলেও লজ্জাতে দশ হাত দূরে থাকবে।বর হয়ে আমাদেরকেই বউয়ের আচল ধরে বউ বউ করা লাগবে।”

আদ্র হেসে দেয়।মায়া চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে,”মুখে লাগাম দিন মন্ত্রী মশাই।”

“আচ্ছা আজ থেকে সিয়া এখানে থাকুক।আন্টির কাছে সিয়া থাকলে ভালো হবে। আয়রাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।ও এখন এখানে থাকা মানে শত্রুপক্ষ এলার্ট হয়ে যাবে।”(আদ্র বলে)

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় রাজ।মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে আমাদের এখন যাওয়া যাক।সকালে তো নতুন নাটক শুরু করতে হবে।”

বলেই মায়াকে নিয়ে চলে যায় রাজ।সিয়া আর আদ্র শাহানা পারভীনের কাছে থাকে।বাইরে বেড় হওয়ার সময় হুডি পরে নেয় মায়া।মুখ ঢেকে রাখা তার।মায়া এসে ড্রাইভিং সিটে বসতেই রাজ তার পাশে বসে।গ্লাস দিয়ে পিছনে থাকা লোকদের দেখে রাজ বলে,”শালার শত্রুরা পিছনে থেকে লাভ কি?সেই তো বউ নিয়ে ইনজয় করছি।বলদগুলো বুঝতেও পারছে না যে মন্ত্রী তার বউ নিয়ে ভালোবাসার সাগরে পারি জমাচ্ছে।আচ্ছা বউ চলো একটু ভালোবাসায় ডুব দেই এই গাড়িতে।পিছনে স্পাই দেওয়া লোকগুলো ভাববে আমি ড্রাইভারের সাথে ব্যাস্ত আছি।”

“যেখানে সেখানে রোমান্স চলে আসে আপনার?”
কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলে মায়া।রাজ এবার টুকুশ করে চুমু দেয় মায়ার গালে।তারপর বলে,”যেখানে সেখানে বউ নিয়ে রোমান্টিক হওয়ার মাঝে যে আলাদা ভালোবাসা মায়াবতী।ও তুমি বুঝবে না।”

মায়া ড্রাইভ করতে থাকে।রাজ একবার পিছনে দেখছে তো আবার মায়ার গালে কিছুক্ষণ পরপর চুমু দিচ্ছে।মায়া এবার রাগী চোখে তাকায় রাজের দিকে।রাজ বলে ওঠে,”এভাবে চোখ বড় করে তাকাবে না তো।বউ ছাড়া দুইদিন পার করেছি।বউকে এবার আমার কাছে চাই।নাহলে কিন্তু আমি সন্ন্যাসী হয়ে যাবো।”

“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”

“রক্তবতী আমার মায়াবতী।”

মায়া হেসে দেয়।গাড়ি এসে থামে রাজের বাংলোর সামনে।লোকগুলো সেখানে এসে গাড়ি থামিয়ে কল করে সবকিছু জানিয়ে দেয় সোনালীকে।মূলত তারা মায়াকে রাজের ড্রাইভার ভেবেছে।বাংলোর ভিতরে আসতেই পিয়াশ ও মৌ এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে।মৌ এসে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।মৌকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে মায়া বলে,”এভাবে চিন্তা করবি না আমাকে নিয়ে।বাবুর আর তোর জন্য রিস্ক আছে তো বোন।”

“তুমি যে কখন কি করো এতে চিন্তা হবে না?”(মৌ বলে)

“আরে চিন্তা নেই।আমি তো আছি আমার মায়াবতীর কাছে।”(রাজ বলে)

“এই জন্যই তো একটু শান্তিতে আছি।”

মায়া এবার মৌকে এক গ্লাস পানি দিয়ে মৌয়ের পাশে বসে।মৌ পানি নিলে মায়া বলে,”মা খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।ডক্টর আদ্র বলেছে মা এখন সেভেন্টি পার্সেন্ট ওকে।”

মৌ খুশি হয়ে বলে,”তারমানে আমার পুচকু আর মা একসাথে আনন্দ করবে।আমার অনেক ভালো লাগছে আপু।”

“হ্যাঁ মা সুস্থ হলেই আমি পুরো পরিবার মিলে ওই লকার থেকে ফর্মুলা নিয়ে পাবলিক করে দিবো।কৃষিকাজে এখন উন্নতমানের ফসল উৎপন্ন হবে।আর আমাদের বংশীয় ব্যাবসা নতুন রূপে দাদুর সপ্নের মতো করে গড়ে উঠবে।”(মায়া বলে)

“আচ্ছা তাহলে চলো এবার ঘুমাবে।সারারাত তো ম্যামকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছো।”(পিয়াশ বলে)

মায়া এবার মৌকে তাড়াহুড়া দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি যা বোন।ঘুম না হলে তো পুচকুর সমস্যা হবে।”

মায়ার কথায় আলতো হেসে ঘুমোতে যায় মৌ।ওরা ঘরের দরজা লাগাতেই রাজ এসে মায়াকে কোলে করে নেয়।মায়া অবাক হয়ে বলে,”কি করছো তুমি?”

“বউকে মন ভরে ভালোবাসবো আজ।বাইরে শত্রু ভিতরে স্বামী স্ত্রী।আহ ডেঞ্জার মোমেন্টে মন্ত্রীর ভালোবাসা।”

“তোমার মাথায় শুধু প্রেম ভালোবাসা!”

“বউ ছাড়া যে পুরুষ দূরে থাকে সেই বোঝে ভিটামিন-বউ শরীর ও মনের জন্য কতটা উপকার।”
বলেই মায়াকে নিয়ে ঘরে আসে রাজ।মায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাজ বলে,”তো বউ রেডি তো বাথরুম বিলাসের জন্য?”
মায়ার মুখে কোনো কথা নেই।রাজ বলার সুযোগ দিলো না।সে তার মতো ব্যাস্ত তার মায়াবতীকে ভালোবাসতে।

সকাল বেলা,
মায়া ও রাজ ঘুমে বিভোর।ঠিক তখনই মায়ার ফোনে কল আসে।তারেক করেছে ফোন।ফোনের রিংটোন বাজতেই মায়া ও রাজ একসাথে চোখ মেলে।রাজ কিছুটা বিরক্তির সাথে বলে,”ব্যাটা বউ নিয়ে কি সুখে থাকতে পারে না।আমার বউকে রাত বিরাতে কল দেয়।”

রাজের মাথায় আলতো মেরে মায়া উঠে বসে।তারেকের কল রিসিভ করতেই তারেক বলে,”আশ্রমে আজ নজর পড়েছে আমার শাশুড়ির গ্যাংদের।ইনফরমেশন মোতাবেক আজ বিকালে ওরা আশ্রমে বাবুর্চি সেজে আসবে।”

আজকে আশ্রমে অনুষ্ঠান হবে।আশ্রমের পঁয়ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান।মায়ার নানু আর মা মিলে আশ্রম করেছিলো।মায়া প্রতি বছর এই আশ্রমে অনুষ্ঠান করে।তারেকের কথা শুনে মায়া বলে,”আমাদের আসল বাবুর্চিদের একটি করে চিহ্ন জানিয়ে দেও।যেটা আমি প্রশ্ন করলে জানতে পারব। আর হ্যাঁ ডেকরেটর হিসেবে আমাদের গার্ড রেখে দিও।বাকিটা আমি আর মন্ত্রী মশাই দেখে নিবো।”

“ওকে ম্যাম,বাই।”
বলেই কল কাটে তারেক।রাজ মায়ার এক বাহু ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে বলে,”আরেকবার ঘুম দিয়ে বাথরুম বিলাস করে তারপর যাই।এখনও অনেক দেরি আছে অনুষ্ঠানের।”

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৫
#ইশরাত_জাহান
🦋
রাজ বাদে সবাই মিলে উপস্থিত হয় আশ্রমে।মায়া আসতেই বাচ্চাগুলো এসে জড়িয়ে ধরে।মায়া ও রাজ পরিবার নিয়ে প্রায়ই এখানে আসে।তাই তো বাচ্চাগুলোর সাথে এখন তারা অনেক মিশুক হয়েছে।সবাইকে চকলেট দিয়ে মায়া যায় গাড়ির দিকে।গাড়ি থেকে আস্তে আস্তে মৌকে নামিয়ে নিয়ে আসে।পিয়াশ নিজেই মৌকে সাহায্য করতে চায়।কিন্তু মায়া যতক্ষণ থাকে পিয়াশ যেনো মায়ার আশেপাশেই আসতে পারে না।বোনকে যত রকম সাহায্য লাগে মায়া নিজে থেকে করতে ভালোবাসে।নিজের ডান হাত মায়ার হাতের সাথে দিয়ে ধীরে ধীরে ফুলে ওঠা পেট নিয়ে হাঁটছে মৌ।বাচ্চারা অবাক নয়নে চেয়ে আছে সেদিকে।চট্টগ্রাম থেকে সেই ছোট্ট হাসিকে আনা হয়েছে।মায়া এনেছে তাকে।হাসির মধ্যে নিজের ছোটবেলা খুঁজে পায় তাই।হাসি এসে মৌয়ের দিকে হাত ইশারা করে বলে,”এই আন্টির পেটে কি হয়েছে?”

মায়া মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়,”এখানে একটি ছোট বাবু আছে।তাই এভাবে বড় হয়ে আছে।”

হাসি যেনো না বুঝেও অনেক কিছু বুঝে গেলো।খুশি হলো খুব।মৌয়ের একপাশে এসে মৌকে ধরে বলে,”আমিও তোমাকে ধরে নিয়ে যাবো।”

অগত্যা মায়া ও ছোট্ট হাসি মিলে ভিতরে নিয়ে যায় মৌকে।মৌকে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে চারপাশে দেখতে থাকে মায়া।দূরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রান্না চলছে।সেখানে লোকদের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে মায়া।বাবুর্চিরা সবাই মিলে তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।তাদের কোনো রিয়েকশন না দেখে মায়া বুঝে যায় এরা সোনালীর লোক।আশ্রম কর্মীর হাত পা কাপছে।মায়া ওনার দিকে তাকাতেই উনি ইশারা করে উপরের দিকে।সেকেন্ড ফ্লোরে একটি কিচেন আছে।ওখানে মায়ার বাবুর্চিরা রান্না করতে ব্যাস্ত।মায়া ভিলেনি হেসে দেখতে থাকে বাকি লোকদের।এর মধ্যেই আশ্রমে উপস্থিত হয় মিলি ও তারেক।মিলিকে এখানে মায়া আনতে বলেছে।মিলি এসে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।তারপর মৌয়ের পাশে বসে।আড্ডা দিতে থাকে মৌ ও মিলি।তারেক এসে মায়াকে বলে,”রাজ স্যার আসবে তাকে নিয়ে।শুধু একটু সময় নিবে বলেছে।”

মায়া বলে ওঠে,”এখানের আবহাওয়া ভালো নেই তারেক।যখন তখন হামলা পড়বে।বাচ্চাগুলোকে আগলে রাখার দায়িত্ত্ব তোমার আর পিয়াশের।অন্য দিকটা আমি দেখছি।শুধু একবার তাদের আসার অপেক্ষা।”

“ওকে ম্যাম।”

হাসির মৃত্যুর জন্য সবাই মিলে মোনাজাত করতে থাকে।মায়ার ইচ্ছা এটা।ছোট্ট বাচ্চাদের থেকে দোয়া পেলে হাসির রুহু একটু শান্তি পাবে।নিজের ছেলের থেকে তো সুখ পেলো না অন্তত মায়া আর বাকি বাচ্চাদের থেকে মৃত্যুর পর দোয়া পেয়ে রূহুর শান্তি পাক।মোনাজাত শেষ করতেই মায়ার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি।মনে পড়ে যায় পুরনো স্মৃতি।হাসি তাকে কত যত্ন করে আগলে রাখতো।আজ মিহির লোভে পড়ে এমনটা না করলে হাসি তাদের সাথে থাকতো।মায়ার জীবনে হাসি কোনো অংশে কম না।মুখে দুই হাত নিয়ে মোনাজাত শেষ করতেই শো শো করে আশ্রমের ভিতরে আসে তিনটি গাড়ি।মায়ার কানে এসে পৌঁছায় সেই গাড়ির শব্দ।গরমের উত্তাপে এখন মাটিগুলো শুকিয়ে থাকে।চারপাশে ধুলা বালি ভরে আছে।গাড়ি আসার সাথে সাথে ধুলাগুলো উড়তে থাকে।আশ্রমের দারোয়ানদের চোখে মুখে ধুলাবালিতে ভরে যায়।চোখমুখ ডলতে থাকে তারা।গাড়ির শব্দে মুখে রহস্যের হাসি ফুটিয়ে তোলে মায়া।কানে থাকা ব্লুটুথের মাধ্যমে বলে,”ওরা এসেছে তারেক।মৌ আর মিলিকে বাচ্চাদের মধ্যে রেখে তুমি ওদের আগলে রাখো।আমি দেখছি এই জায়গাটা।”

একটু ঘাবড়ে যায় তারেক।রাজ নেই এখানে।এখনও আসেনি।মায়া একা কিভাবে কি করবে?তাই তারেক বলে,”ম্যাম একটু বেশি রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?”

“শত্রু দমনের আজ সেরা দিন।এখানে এদের দ্যা ইন্ড করে আমি আমার দাদুর সপ্ন পূরণ করতে চাই।তুমি চিন্তা করো না।কিছু হবে না আমার।আমার মন্ত্রী মশাই আছে আমার সাথে।”

তারেক এবার কোনো প্রতিউত্তর না করে মিলি ও মৌকে বাচ্চাদের মধ্যে রেখে গার্ডদের দিয়ে চারপাশ ঘেরাও করে রাখে একটি ঘরে।মিলি অবাক হয়ে দেখতে থাকে।কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না সে।তারেক সবকিছু তাড়াহুড়া করে করছে।সোনালী ও তার গ্যাং মিলে এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।মায়া ঘুরে তাকালো ওদের দিকে।কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মায়ার চোখমুখে।মিলি অবাক হয়ে বলে,”মা এটা কেমন রূপে এসেছে?এতগুলো লোক আবার ব্ল্যাক জ্যাকেট পড়েছে মা।”

মৌ বিদ্রুপের সুরে বলে,”এটাই তো ওনার আসল পরিচয়।দেখতে থাকো কি হয়।”

সোনালীর পিছনের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে মিস্টার বিভান ও মিসেস রাজিয়া।এদেরকে দেখেও ভড়কে যায় না মায়া।মায়া একাই দাড়িয়ে আছে।দূরে একটি বসে আছে বাচ্চাসহ বাকিরা।মায়ার মুখে দমে যাওয়ার ছাপ দেখতে না পেয়ে সোনালী এবার বিরক্ত।বাবুর্চি রুপি লোকগুলোকে ইশারা করে সোনালী।লোকগুলো দৌড়ে এসে যেই মায়াকে হামলা করবে ওমনি আশ্রমের পিছন থেকে মায়ার লোক এসে ওদের সাথে মারামারি করতে থাকে।এবার যেনো ভড়কে গেলো সোনালী ও বিভান।সোনালীর দলের একজন পিছন থেকে এসে যেই মায়াকে আঘাত করতে যাবে ওমনি মায়া লাফ দিয়ে ঘুরে উল্টো অ্যাটাক করে লোকটিকে।তারেকের দিকে তাকাতেই তারেক একটি গুলি ছুড়ে মারে মায়ার দিকে।মায়া ওটা নিয়ে শুট করে দেয়।আশ্রমের বাচ্চারা ভয় পেয়ে যায়।কাপতে থাকে ভয়তে।মায়ার দিকে আরো একজন তেড়ে আসতে নিলে মায়া যেই তাকে হামলা করবে ওমনি মায়ার মাথায় কেউ এসে আঘাত করে।মাথায় হাত দিয়ে নিচে পরে যায় মায়া।কাঙ্ক্ষিত লোকটির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় মালিনীকে। হাতে তার হকিস্টিক।বিদ্রুপের সুরে বলে,”আমাকে এটা দিয়ে মেরেছিলে না?এবার বোঝো কতটা যন্ত্রণা এই যন্ত্র দিয়ে।”

বলেই আবার একটা আঘাত করে মায়ার বাহু বরাবর।দর্শক হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে দেখছে সোনালী ও বিভান।তারেক আর পিয়াশ এবার না পেরে এগিয়ে আসতে নেয়।মালিনীর কাছে এসে যেই মালিনীকে হামলা করবে তখনই মায়া হাত দেখিয়ে ইশারা করে।মালিনী এবার গুলি নিয়ে তাক করে মায়ার মাথায়।মায়াকে যেই শুট করতে যাবে ওমনি পিছন থেকে সিয়া চিল্লিয়ে বলে,”এটা তুমি কি করছ মা?তুমি এমনটা করো না।ভাবীর ক্ষতি কেনো করছো।তুমি যদি মারতে হয় তো মারো ওনাকে।”

হাতের ইশারায় দেখালো সোনালীকে।কিন্তু সোনালীর পাশে বিভান ও রাজিয়াকে দেখে অবাক হয় সিয়া। সিয়াকে উদ্দেশ্য করে বিভান বলে,”কি মামা!বুঝতে পারছো না তো?আসলে আমরা পুরোটাই তো একটি গ্যাং।তোমার মা এই কাজগুলো করতে বাধ্য।নাহলে আমি আমার কাজ সফল করতে পারব না তো।”

এবার সোনালী বলে ওঠে,”ওকে তো মরতেই হবে।কিন্তু একবার পাসওয়ার্ড বলে দিলেই হবে।তো মায়া অফ সরি মোহনা বলে দেও পাসওয়ার্ড কি?”

হো হো করে হেসে দেয় মায়া।রক্ত চক্ষু করে সোনালীকে দেখে বলে,”এই মায়াকে মারা এত সহজ না।এই মায়ার জীবন গেলে যে কোটি টাকার চান্স মিস হয়ে যাবে।যেটার জন্য পাগলা কুত্তার মতো আমাকে খুঁজছেন আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেটা পাবার আগে যে আমার মৃত্যু অন্তত আপনাদের হাতে নেই এটা আমি জানি।তাই যত পারেন উল্টো আঘাত করতে থাকুন।আর সিয়া তুমি ওদিকটায় যাও।এখানে তোমার আসা উচিত হয়নি।”

সিয়া কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না।কিছু একটা ভেবে চুপ করে সরে যায় পিয়াশের পিছনে।ফোন নিয়ে আদ্রকে ম্যাসেজ করে দেয়।সোনালী আর বিভান একে অপরের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকায় মায়ার দিকে।বলে ওঠে,”তোমাকে খুন না করতে পারি কিন্তু তোমার জীবনের প্রিয় ব্যাক্তিদের তো শেষ করে দিতে পারি।”

বলেই সোনালী ইশারা করে রুমে থাকা একটি লোককে।মৌকে নিয়ে বাইরে বেড় হয়ে আসে সে।মৌয়ের মাথায় গুলি ধরে দাড়িয়ে আছে সোনালীর লোক।আতকে ওঠে পিয়াশ ও মায়া।এই লোককে সোনালী কখন কবজা করে নেয় এটা বুঝতে পারছে না মায়া।পিয়াশ দৌড়ে যাবে মৌকে বাঁচাতে কিন্তু পিয়াশের পায়ে একটি ছুরি ছুড়ে মারে বিভান।ওখানেই ক্ষত সহ বসে পড়ে পিয়শ।হো হো করে হেসে সোনালী বলে ওঠে,”বোনের জীবনটা কি শেষ করে দিতে চাও?বাচ্চা সহ বোনকে কি পরপারে পাঠিয়ে দিবে বলো?তুমি তো টাকা পয়সার পরোয়া করো না।তোমার লাগবে ভালোবাসা।তাহলে বাঁচাও তোমার ভালোবাসার মানুষকে।বলে দেও পাসওয়ার্ড।ওখান থেকে ফর্মুলা পেলে মুক্তি পাবে তোমার বোন।”

ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে সোনালীকে দেখছে মৌ ও মিলি।সিয়া নিজেও তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সব জানলেও তার মা আর মামা মামী নিয়ে কেউ তাকে কেনো বলেনি এটা বুঝতে পারছে না সে।তাহলে কি বিভানের কথা মায়া জানত না।মাথা কাজ করছে না সিয়ার।শুধু ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছে আদ্রকে।কিন্তু আদ্রর কোনো রেসপন্স নেই।

মৌ তার পেটে হাত দিয়ে বলে,”আমি আমার সন্তান নিয়ে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে রাজি কিন্তু এই মহিলাকে জিততে দেখতে রাজি না আপু।তুমি কিছুতেই বলবে না পাসওয়ার্ড।”

মৌয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া দেখতে পেলো সোনালীর প্রতি অঢেল ঘৃণা।মায়ার মুখে ফুটে ওঠে বিজয়ের হাসি।মায়া যেনো দেখতে পাচ্ছে সোনালীর সবকিছু থেকেও নেই।সোনালীর দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”আমাকে দমন করতে আপনি আপনার কোন জিনিসটিকে হাতিয়ার বানালেন নিজেও জানেন না।যখন জানবেন নিজের পায়ের নিচ থেকে মাটি ভেদ হতে থাকবে।”

সোনালী একটু অবাক হয়।তবে বেশি একটা পাত্তা না দিয়ে বলে,”ওহ কাম অন।এসব ইমোশনাল সেন্টি মার্কা কথা বলে আমার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে পারবে না।আমি যেটার জন্য তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি ওটা আমার চাই।”

রহস্যের হাসি হেসে মায়া বলে,”আমি আপনাকে মাইন্ড ডাইভার্ট করছি কি না এটা একটু ভালো করে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো।একটু ভালো করে দেখে বলুন তো চিনতে পারেন কি না কে এই মেয়ে।কার সাথে মিল আছে এই মেয়ের।”

ঘৃণা লাগছে মৌয়ের এসব শুনতে।চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”একদম না আপু।ওই মহিলাকে তুমি কিছু বলবে না।”

পিয়াশ তার পা থেকে ছুরি সরিয়ে নেয়।কিন্তু পা থেকে রক্ত পড়তেই থাকে।মৌয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না।সোনালী এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,”আমি বুঝেছি এরা কথার জালে আমাদের ভুলাতে থাকবে। ড় আপা তুমি যাও ওই পিয়াশকে শেষ করে দেও।দেখবে এই মৌ আর বাধা দিবে না।আমাদের কাজ সহজ হয়ে যাবে।”

সোনালীর কথামত মালিনী এসে পিয়াশের মাথায় গুলি তাক করে।সিয়া চিল্লিয়ে বলে,”মাআআ এমন করো না।মৌ আপু প্রেগনেন্ট।মেয়েটার বাচ্চা বাবা হারা হয়ে যাবে।”

মালিনী এবার নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সিয়াকে বলে ওঠে,”হুশ একদম কোনো কথা নয়।আমাদের বলে দিলেই তো হয় পাসওয়ার্ড কি।আমরা তো এতকিছু করতাম না।করতে তো হয় এই মেয়েটার জন্য।সব প্ল্যান করে রেখেছিলাম আমরা।ওই বীরকে আনতাম না।কিন্তু না এই মেয়েটা প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের হারিয়ে দিতে থাকে তাই তো বীরকে এনেছিলাম।আর বেচারা সাইকো বীর।ওকে মায়াকে পেতে যা যা পদক্ষেপ বলে দেওয়া হতো ও সব পালন করতো।এই মেয়েটার ভিতর কি আছে কে জানে?একদম সবাই পাগলের মতো লেগে থাকে।মেয়েটিকে পেতে বীর ছিলো মরিয়া।সেই সুযোগ কাজে লাগাই আমরা।কিন্তু না তোমার ভাই আর এই মেয়ে মিলে ওখানেও আমাদের হারিয়ে দিলো। তিলে তিলে আমরা অসুস্থ বীরের মস্তিষ্কে শুধু মায়া নামটাই ব্যাবহার করতাম।একজন সাইক্রেটিস দিয়ে বীরকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যে বীর শুধু তার মায়াকে মনে রাখবে।বাকি সব তার কাছে কিছু না।আমরা ওটাতে সাকসেস হই।অসুস্থ বীরের শরীরে ড্রাগ দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে ড্রাগের ডোজ বৃদ্ধির ফলে বীর আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়।বীরের সামনে মায়ার বিয়ের ব্যাপারটা আমরাই তুলি জাতে সে বাংলাদেশে ব্যাক করে।মায়ার পিছনে মরিয়া হয়ে ঘুরবে বীর।এমনকি সেই কাজটাই হয়।কিন্তু এই মেয়েটার মন মস্তিষ্ক তো বীরের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে।অজান্তেই আমাদের হারিয়ে দিলো নিজের কথার বুলিতে।ইডিয়েট বীর ভালোবাসা না পেয়ে সুইসাইড করেই নেয়।অবশ্য এছাড়া কি আর উপায় ছিলো?তার মন মস্তিষ্ক ধরেই তো আমরা এই মেয়েকে নিয়ে ভড়িয়ে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম বীর আসলে মায়া ও রাজের মধ্যে বিচ্ছেদ হবে।রাজ তো বীরকে খুন করতে মরিয়া হয়েছিলো।শুধু গাধাটা সুইসাইড না করলে প্ল্যান ফ্লপ হতো না।যখন ওই প্ল্যান ফ্লপ হয় আমরা হাতিয়ার হিসেবে দেখি মিহিরকে।অবশ্য মিহির নিজে থেকেই ধরা দেয় আমাদের কাছে।কারণ ও এই দেশে নাম করা কৃষি বৈজ্ঞানিক হতে চায়।মিহির এট লিস্ট মায়ার প্রেমে মগ্ন ছিলো না।সে তো আমাদের মতই আরেক লোভী।টাকার গন্ধ পেয়ে সুরসুর করে আমাদের দলে আসে।কিন্তু এখানেও এই মেয়ে আমাদের হারিয়ে দিলো।আমরা কোথায় ভাবলাম রাজকে খুন করে এই মেয়ে জেলে যাবে।আমরা সেইটাকে হাতিয়ার করে উশুল করে নিবো।কিন্তু না এই মেয়ে এতই চালাক যে চোখের নিমিষে সব বুঝে যায়।তাই তো আজ আমাদের এই রাস্তা দেখতে হয়।”

সিয়া একটু অবাক হয়ে বলে,”সাইক্রেটিস দিয়ে বীর ভাইয়ার ব্রেইন ওয়াশ করেছো।মা তুমি জানো এটা কত বড় অন্যায়?এখন অসুস্থ ব্যাক্তিকে এভাবে মাইন্ড ডাইভার্ট করে খারাপ পথে লেলিয়ে দেওয়াটা একদম উচিত হয়নি।”

মায়া নিজেও অবাক হয়ে যায় এটা শুনে।হ্যাঁ বীর তাকে পেতে মরিয়া এমনিতেও কিন্তু মায়াকে না পেলে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো মাথা নষ্ট বীরের ছিলো না।তারমানে ওভার ড্রাগ আর ট্রিটমেন্ট পেয়েই বীরের মাইন্ড শুধু মায়াকে খুঁজতে থাকে।বাবা হয়ে বিভান নিজেই এসব করেছে তার ছেলের সাথে।মায়া বিভানকে উদ্দেশ্য করে বলে,”নিজের ছেলের এমন অবস্থা করে দিতে লজ্জা লাগে না?আবার আমাকে এর জন্যই মারতে চান।”

বিভান এবার এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।একটু ঝুঁকে বলে,”কে বলেছে তোমাকে বীরের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছি?আরে বীর তো শুরু থেকেই আমার পথের কাটা ছিলো।ছেলে আমার হলে কি হবে।হয়েছে তার দাদুর মতো একদম ইনোসেন্ট।বাংলাদেশে এসে মাফিয়া গিরি করবে।একদম অনেস্ট মাফিয়া হয়ে যায়।দেশের ভালো করতে ব্যাস্ত সে।ওর জন্য আমার ব্যাবসায় লস হতে থাকে।যখন জানতে পারি তুমি ওকে গুলি করেছো।কারণ ও তোমার প্রেমে মত্ত তখন তোমার জন্য ওকে ডাক্তারকে আমি ঠিক করি।কিন্তু আমার ব্যাপারে ছেলেটা জেনে যায়।আমার সাথে একদিন ঝামেলাও হয় ওর।ঝামেলার বসে আমাদের চ্যালেঞ্জ হয়।ও যদি তোমাকে বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি এই ব্যাবসা থেকে সরে যাবো আর ও যদি তোমাকে বিয়ে করতে না পারে তাহলে ওকেই আমার কাজে সাহায্য করতে হবে।বেচারা বীর রাজি হয় আমার শর্ততে।ভালোবাসার প্রতি কি বিশ্বাসটাই না ছিলো।তাই তো ভালোবাসায় হেরে যাওয়ার সাথে আমার শর্তে হেরে সে জীবনটাই দিয়ে দিলো।অবশ্য আমি আমার লোক দিয়ে ওর কাছে থাকা প্রমাণ সরিয়ে নেই। যাতে করে ও তোমাকে না পেলেও আমার পর্দা ফাঁস করবে না।”

আরও কিছু বলতে যাবে তখন সোনালী বলে ওঠে,”এত কথা এই মেয়েকে বলার দরকার কি?আমাদের তো সময় নষ্ট হচ্ছে।”

পিয়াশ এবার ঘাবড়ে যায় সাথে মায়াও।কারণ এতক্ষণের সব কথা মায়া জানলেও কথার ছলে আটকে রাখে এদের।কিন্তু এখন এই সোনালীর সাথে পেরে ওঠে না।সোনালী বলে ওঠে,”বড় আপা শুট করে দেও পিয়াশকে।”

মালিনী এবার গুলিটা নিজের হাতে ভালোভাবে সেট করে নেয়।ঠিক তখনই একটি বাইক আশ্রমের ভিতর থেকে শো করে আসতে থাকে। মালিনীর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ওঠে।মায়ার দিকে তাকাতেই মায়া চোখ টিপ দেয়।সাথে সাথে মৌয়ের মাথায় গুলি তাক করা ব্যাক্তিকে শুট করে দেয় মালিনী।লোকটি মৌকে ছেড়ে দিয়ে নিচে পড়ে যায়।অবাক হয়ে তাকালো সোনালী ও বিভান।বাইক থামিয়ে মাথা থেকে হেলমেট খুলে দুই দিকে মাথা ঝাড়ি দিয়ে শয়তানি হাসি দেয় রাজ।রাজের পিছনে আছে আরো এক যুবক।যাকে দেখে বিভান আর সোনালী তাকালো মালিনীর দিকে।সোনালী এবার আঙ্গুল উঁচিয়ে তেড়ে আসে আর মালিনীর উদ্দেশ্যে বলে,”প্রতারক তোকে তো আমি।”

আর কিছু বলতে যাবে মায়া এসে সোনালীর হাত ধরে মুচড়ে দূরে ধাক্কা মারে।রাজের সাথে থাকা ছেলেটিকে তারেকের পাশে রেখে রাজ এসে দাঁড়ায় মায়ার পাশে।ঠিক তখনই মায়া রাজের দুই পাশে এসে দাঁড়ায় মালিনী ও রাজিয়া।মায়ার কাছে এসে মালিনী বলে,”তো বউমা কেমন হলো তোমার শাশু মায়ের অভিনয়?”

রাজিয়া বলে ওঠে,”সাথে আমিও কিন্তু কম ছিলাম না।”

মায়া ও রাজ একে অপরকে দেখে হেসে দেয়।সোনালী আর বিভান পারলে এখনই কাচা গিলে খাবে মালিনী ও রাজিয়াকে।

চলবে…?

#মায়াবতীর_ইচ্ছা
#পর্ব_৫৬
#ইশরাত_জাহান
🦋
রাজিয়াকে উদ্দেশ্য করে মিস্টার বিভান বলেন,”মালিনীর নাহয় কারণ আছে তাই ও এমনটা করলো।তুমি কেনো আমাকে ধোঁকা দিলে রাজিয়া?”

রাজিয়ার চোখমুখে ঘৃণা স্পষ্ট বোঝা যায়।একদলা থু ছুড়ে মারে বিভানের মুখে।ঘৃণার দৃষ্টিতে বলে,”আমার ছেলেকে খুন করে তুমি কিভাবে ভাবো যে আমি তোমার হয়ে থাকব? আরে তুমি কি ভাবো আমি কিচ্ছু জানি না!আসলে আমি আগে থেকেই জানি যে তুমি আমার বীরকে খুন করেছো।এই দেশে তোমাকে এই জন্যই আনা হয়েছে।জাতে তোমাকে আমরা শেষ করে দিতে পারি।”

“পাগল হয়ে গেছো তুমি!আমি কেনো আমার ছেলেকে খুন করব?আমি তো শুধু ওকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম আর লোক দিয়ে ওর কাছে থাকা সকল প্রমাণ সরিয়ে রাখি।বরং আমাদের ছেলেকে এই মায়া আর রাজ খুন করে।”

“মায়া হয়তো আমার ছেলেকে খুন করতো।কিন্তু আমার আর্তনাদ দেখে মায়া বীরকে ছেড়ে দেয়।সেদিন মায়া যখন বীরের বুকে গুলি করে তার আগের কাহিনী কিছুই জানো না তুমি।রাজ আমাকে মায়ার নাম্বার দিয়ে বলে ওকে যেনো আমি রিকোয়েস্ট করি। তাজকে যখন এই মালিনী এসাইলাম থেকে পালাতে হেল্প করে তখন রাজ ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তাজকে নিয়ে।কাকে কিভাবে বাঁচাবে ভাবতেই ও আমাকে কল করে সব বলে।এক মায়ের আর্তনাদ মায়া কখনোই ফেলতে পারবে না মায়া।আমিও রাজের কথায় তখন মায়াকে কল দেই আর অনুরোধ করি।এক মা পাগল মায়া।এক্সেক্টলি তাই মায়া বীরের বুকের ঠিক দুই ইঞ্চি উপরে টার্গেট করে গুলি করে।বীরের আশেপাশে বীরের লোক থাকায় মায়া এটা শিওর ছিলো যে কাছের হসপিটালে বীরকে নিয়ে যাবে।আসলে গুলিটা একটু উচুতে করায় বীর মারা যাবে না কিন্তু আহত হবে।রাজের কথামত আমি বীরকে পরে আমার কাছে আনি।ওকে আড়ালে বুঝিয়ে বললে ও ঠিক হয়ে যায়।দূরত্ব বাড়িয়ে সুখে থাকতে দেয় মায়াকে।ওর মনে অনুতপ্ত হয়।মায়ার মুখে হাসি দেখতে আমার ছেলে মায়াকে রেখে আমাদের সাথেই থাকতে চায়।কিন্তু তুমি আর এই মহিলা(সোনালী)হতে দেওনি।তোমরা ওকে ওর ডাক্তার দিয়ে ড্রাগ দিতে।আমার ছেলের মাথায় ধীরে ধীরে যন্ত্রণা বেড়ে যায়।সেখানে আগুন ঢেলে জ্বালা বাড়িয়ে দেও ওর বুকে।ছেলে আমার দিক বিদিক হারিয়ে মায়াকে চাইতে থাকে।ওর কাছে তখন একমাত্র ঔষধ মায়া।তাই বাধ্য হয়ে ও এখানে আসে।”

আর কিছু বলতে যাবে তার আগে বিভান বলে,”আমি ওটা করলেও খুন তো মায়া আর রাজের ইচ্ছাতেই হয়।”

হালকা হাসলো রাজিয়া।তারপর রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”রাজ আমার হীরের টুকরো ছেলে।ও ওর ভাইয়ের দায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন করেছে।নাহলে সেদিন আমাকে বলত না মায়াকে কল দিয়ে রিকোয়েস্ট করতে।সে যাই হোক।বীর যেদিন নিজেকে শেষ করে ওখানে তো বীরের কপালে দুটো গুলি না তিনটা গুলি পাওয়া যায়।দুইটা ও নিজে করে নিজের মাথায় আর একটা দুর থেকে তোমার লোক করে।এটা আমাকে তোমার লোকই বলেছে।কিভাবে জানলাম জানো?”

বিভান এবার অবাক হলো।বলে ওঠে,”তুমি কিভাবে জানলে?”

“কারণ রাজ একটি গাছের আড়ালে মিথ্যে মিথ্যে সিরিয়াল কিলার রেখে দেয়।যে আসলে বীরকে মারতে না ওইদিন বীরকে খুন করার নাটক করে।জাতে তুমি আর সোনালী মনে করো রাজ ওর ভাইকে খুন করতে চায় আর মায়াকে ভুল বুঝবে।কিন্তু রাজ ওটা না করে তোমাদের দেখিয়ে বীরকে আঘাত করতে চেয়েছিলো।মায়া নিজেও তো তখন বীরকে গুলি করেনি বরং বীরকে বোঝাতে থাকে।যে মায়া তার মন্ত্রী মশাইকে পেতে ব্যাকুল সে মায়া কেনো বীরকে ওই সময় খুন করেনি এটা তো তুমি তোমার মাথায় আনো নি।আসলে ছেলেকে খুন করে ভাগ্নের থেকে বউকে আলাদা করার কাজে ব্যস্ত ছিল যে।ওইদিন মায়া বীরকে ইচ্ছা করে আঘাত দেওয়া কথা বলে।কারণ বীরের মন মস্তিষ্ক ঠিক করতে হলে ওকে ওর মতো করে আবার রোগী বানিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।যেটা সুস্থ বীরকে আমরা হাজার চাইলেও নিয়ে যেতে পারতাম না।আর মায়া সে তো কখনোই মিথা অভিনয় করবে না।কারণ ওর মন মস্তিষ্ক শুধু রাজ।আমাদের কাছে অপশন না থাকায় আমি আর রাজ এই প্ল্যান করি।কিন্তু বীর নিজেকে শুট করার আগেই তোমার লোক বীরকে শুট করে দেয় এটা রাজের ওই হিডেন কিলার দেখে নেয়।সে ছবি তুলে রাখে এই সবকিছুর।”

বিভান এবার জোরে মাটিতে লাথি মেরে বলে,”যদি তাই হতো তাহলে ঐ লোকের হাতে টাকা দিয়ে রাজ গাড়িতে উঠে ওগুলো কেনো বলে ওর অ্যাসিসট্যান্টকে?”

এবার রাজ এগিয়ে আসে বিভানের সামনে।কপালে স্লাইট করতে করতে বলে,”আমার গাড়িতে আমার অফিসে ইনফ্যাক্ট আমার বেডরুমে যে হিডেন ক্যামেরা রেখেছো এটা কি ভুলে গেছো?অপস তুমি তো ভুলবে না।ওটা আসলে তোমরা ভেবেছো আমরা জানিই না।কিন্তু কি বলোতো তোমাদের একটু সন্দেহ করা উচিত ছিলো।যে রাজ তার বউকে কাছে না পেলে জোর করে বউয়ের ভালোবাসা আদায় করে সে কিন্তু এই কয়েকদিন বউ ছাড়া নিজেকে সংযত রেখেছে।বারবার বলতাম বেচারা আমি বউ ছাড়া শূন্যতায় ভুগছি।কিন্তু বোকা মামা আমার বুঝলোই না স্বামী স্ত্রী দূরে মানে কিছু তো একটা চলছে।তোমাকে আর এই সোনালীকে দেখানোর জন্যই তো আমরা বর বউ এভাবে চুপ করে থাকি।”

ভ্রু কুচকে সোনালী বলে,”মানে তোমার আর এই মেয়েটার মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়নি?”

দুষ্টু হেসে রাজ বলে,”আরে আমরা বর বউ তো এই কয়দিন প্রেম প্রেম না খেলে শত্রু শত্রু খেলছিলাম।তবে তোমাদের শেষ করে আমি আবার আমার বউকে নিয়ে প্রেমের সাগরে ডুব দিবো।”

রক্তচক্ষু করে মায়া বলে,”শাট আপ মন্ত্রী মশাই।লাগামহীন হয়ে গেছেন আপনি।”

বাচ্চাদের মতো কাদো কাদো মুখ করে রাজ বলে,”এমনি আছি ঝামেলায় তার উপর পাইনি বউকে কাছে।লাগামহীন আমি হবো না তো কি ইমরান হাশমি হবে?ব্যাটা সিনেমার মধ্যে নায়িকাদের কতকিছু করে বাস্তবে তো আলাদা বউও আছে।সেখানে আমি আমার বৈধ বউকে কাছে না পেয়ে ভিটামিন-বউ এর অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছি।শোনো মায়াবতী এদের কাজ শেষ করে আমাকে আবার তোমার ভালবাসায় নাদুস নুদুস করে দিবে।”

রাজের লাগামহীন কথার মাঝে চিল্লিয়ে ওঠে বিভান।বলেন,”হচ্ছেটা কি?তোদের প্রেমলীলা চলছে না এখানে।”

ব্যাঙ্গ করে রাজ বলে,”আরে মামা মরার আগে ভাগ্নের প্রেম দেখে যাও।”

“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”(মায়া বলে)

রাজ মায়াকে ফ্লাইং কিস দেখিয়ে দেয়।তারপর মালিনীর কাছে এসে বলে,”নিজের কলিজার টুকরোকে কাছে নিবে না মা?যার জন্য তুমি এতগুলো বছর অপেক্ষা করেছো ”

মালিনী এবার পিছনে ঘুরে তাকালো তারেকের সাথে থাকা যুবকটির দিকে।দুই হাত মেলে বলে,”মায়ের কোলে আসবি না বাবা?এই অসহায় মা যে তোর জন্য অনেক ধৈর্য ধরে ছিলো।”

সাথে সাথে যুবকটি এসে জড়িয়ে ধরে মালিনীকে।মালিনীর যেনো আজ মুক্ত লাগতে থাকে।সে তার ছেলেকে পেয়েছে।চোখ বন্ধ করে বলে,”মানিক আমার বাবাটা।”

তারপর চোখ মেলে দেখতে থাকে মানিককে।আশ্রমের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে মাহমুদ সরদার।মাহমুদ সরদারের সাথে হুইল চেয়ারে করে আছে মোহন সরদার।মোহন সরদারের চোখেমুখে ক্ষিপ্ততা।সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর মতো নষ্টা মেয়েকে আমি আমার বাড়ির বউ করে পাপ করেছি।যার ফল এখন আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে।”

তাচ্ছিল্যের সাথে মায়া বলে,”এখনও আরো এক ঝটকা বাকি আছে মিস্টার মোহন সরদার।কর্মের ফল তো এখনও পাওয়া বাকি।আমার আসল উদ্দেশ্য তো আপনার জীবনকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া।”

নিজের মেয়ের মুখে বাবা ডাক না শুনে নাম ধরে শুনে যেনো বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো মোহন সরদারের।আহত দৃষ্টিতে মায়াকে দেখে বলে,”একবার বাবা বলে ডাকা যায় না, মোহ মা?”

মোহন সরদারের চোখে চোখ রেখে আছে মায়া।যেনো আজ সবকিছুর হিসাব মিটবে। হ্যাঁ ভিতর থেকে এই সবকিছু দেখেছে আর শুনেছে মোহন সরদার।তাই তার কাছে মায়ার আসল পরিচয় ক্লিয়ার।কিন্তু এতে মায়ার যায় আসে না।মায়া তো এটাই চেয়েছে।তার সন্তান দ্বারা অবহেলিত হয়ে সে মায়ার শূন্যতা অনুভব করবে।আজ মায়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।মায়া বলে ওঠে,”আপনার মতো নোংরা মন মানসিকতার লোভী ব্যাক্তিকে কখনও বাবা বলে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।অন্তত সেই সন্তান তো পারবেই না যে তার মাকে নিয়ে অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছে।মায়ার অস্তিত্ব মায়ার মা।মায়ার বাবার কোনো দরকার হয় না।”

উপস্থিত সবাই তাকিয়ে দেখছে এক মেয়ের দৃষ্টিতে তার বাবার জন্য ভরা ঘৃণা।মিলি যেনো অবাক হয়ে যায় যে মায়া তার বাবার প্রথম সন্তান।মায়ার পাশে এসে রাজ বলে ওঠে,”আমার মায়াবতীর ইচ্ছা তাহলে পূরণ হলো।”

মাহমুদ সরদার এসে মালিনী ও মানিকের পাশে দাঁড়ায়।মানিকের মাথায় হাত রেখে বলেন,”আমাকে কেনো বলোনি তোমার একটি ছেলে আছে।তাকে আটকে রাখা হয়েছিলো।অন্তত আমি তোমাকে সাহায্য করতাম।”

চোখের পানি মুছে বিভান আর সোনালীর দিকে তাকায় মালিনী।বিভান আর সোনালী ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।তারা এখন সুযোগ খুজতে থাকে কিভাবে এদের সব কয়টাকে একসাথে শেষ করা যায়।মালিনী ওদেরকে দেখে বলেন,”মানিকের বাবা(মিনার)তো কৃষি বৈজ্ঞানিক ছিলো সাথে রোহিনী।রোহিনী মারা যাওয়ার পর ভুল বললাম ওকে খুন করে বিভান আর সোনালী।কিন্তু তখন আমি জানতাম না।তো তখন আমার কাছে বিভান আসে।আমাকে কিছু মিথ্যা ছবি দেখিয়ে বলে,রোহিনী আর মিনার একজন আরেকজনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত ছিলো।আমিও বোকার মতো মিনার আর রোহিনীর একত্রে কাজ করে যাওয়াটাকে নোংরা সম্পর্ক ভাবি।কারণ মিনার আর রোহিনী তো তখন ব্যাস্ত থাকতো ভালো একটা ফর্মুলা তৈরি করতে।ওদের ওই ব্যস্ততা আমাকে সময় না দেওয়া সাথে এই ছবি দেখে আমি উস্কে যাই।রাগে দুঃখে ডিভোর্স দেই মিনারকে।ডিভোর্সের কিছুদিন পর মানিক আসে আমার গর্ভে।আমার মনে হয় আমাদের তো তাহলে ডিভোর্স কার্যকর না।আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।ঠিক সেদিন আমি ওর কাছে যেতেই দেখতে পাই আমার মিনারকে নির্মমভাবে খুন করছে বিভান।আমি ওখানে চিৎকার করে ওদের আটকাতে যাই।কিন্তু পারি না।আমাকে আটকে রাখে এই সোনালী।তারপর কয়েকমাস আমাকে ধরে রাখে গোপন এক বাড়িতে।আমার মানিকের জন্মের পর ওরা মানিককে নিয়ে যায়।আর বারবার আমাকে থ্রেট করতে থাকে।আমার মানিকের ক্ষতি হলে আমি যে শেষ হয়ে যেতাম।সেই ভয়তে আমিও ওদের কথা মতো কাজ করি।কিন্তু আমি কারো কোনো ক্ষতি করিনা।একদিন আমি এটাও জানতে পারি যে রোহিনীকে এরা খুন করেছে। আর পাসওয়ার্ড কি এটা এরা জানার চেষ্টায় আছে।তখন ওরা টার্গেট করে সরদার পরিবার।বিভান আমাদের বাবাকে বুঝিয়ে এই পরিবারে বিয়ে দেয়।আমি আড়ালে অনেক চেষ্টা করি সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দিতে।কিন্তু মনিকের ভয়তে চুপ থাকতাম।তুমিও আমার সাথে তেমন কথা বলতে না।আমাকে এড়িয়ে চলতে।রাজকে অবহেলা করতে চাইতাম না কিন্তু আমার মন যে ছোট্ট মানিককে খুঁজতো।তারপর রাজ চলে যায় লন্ডন বিভানের কাছে।এটাও ওর প্ল্যান ছিলো।এর ভিতর একদিন সুযোগ বুঝে আমাদের বাবাকে(রাজের নানু আর দাদু)আমি সত্যিটা জানিয়ে দেই।খুবই সতর্কতার সাথে।বাবা যদি বিভানকে সঠিক পথে আনে তাহলে অন্তত বিভান ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না ওর তো শুধু টাকা পয়সা নাম যশ এগুলোই লাগবে।বাংলাদেশ তো দখল করতেই চায় নিজ খেতির জন্য লন্ডনকে নিজের টার্গেট করে রাখে।লন্ডনে এই ফর্মুলা বিক্রি করলে ও পাবে কোটি টাকা। আর লন্ডন সরকার থেকে ওকে আলাদা সুনাম দেওয়া হবে।জাতে ওর পাওয়ার দ্বিগুণ হতে থাকে।তাই বাবাদের খুন করে দেয় ও।কিন্তু বাবাদের খুন করলেও ও ফর্মুলা পায় না কারণ ওটা বাবা লকারে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখে।তাই সোনালী প্ল্যান করে পিএ হয়ে আসে ছোট ভাইয়ের(মোহন সরদার)কাছে।সোনালী বুঝে যায় এই বাড়িতে আসার একমাত্র চাবিকাঠি ছোট ভাই।ছোট ভাইকে নিয়ে পার্টি ও বিভিন্ন জায়গায় যেয়ে নেশা করতো ওরা।তারপর সোনালী প্রেগনেন্ট হয়।ছোট ভাইয়ের তখন ওর প্রতি আর ইন্টারেস্ট থাকে না।আমিও এবার একটু শান্তি পাই।যে ও এই বাড়িতে আসতে পারবে না।কিন্তু ছোট ভাই ওকে শর্ত দেয় ছেলে সন্তান হলে ওকে বউয়ের মর্যাদা দিবে।তাই করা হলো।যখন রুদ্রের মুখ দেখলো ছোট ভাই কোনো কিছু না ভেবে খুশিতে আগে সোনালীকে সরদার বাড়িতে আনে।তারপর শাহানা আপাকে তাড়িয়ে নিজে জায়গা করে নেয়। আর আমি কিছু বলতে যাবো তার উপায় থাকে না।আমাকে প্রতি পদে মানিকের জন্য ভয় দেখিয়ে দেয়।আমার মানিক যে ওদের দখলে ছিলো।ভিডিও কলে মানিককে দেখালেও ওর আশেপাশে গুলি ধরে রাখা থাকতো।অনেক কষ্ট করে হলেও আমি মুখ বুঝে থাকতাম।সোনালী এখানে এসেও তেমন উন্নতি করতে পারে না।কারণ পাসওয়ার্ড কেউ বলতে পারে না।কিন্তু একদিন শাহানা আসে ওই সিক্রেট রুমে। আমিই ওকে আগে দেখি।জানতে পারি বাবা মারা যাওয়ার আগে রাজকে কল দেয়।ওই সময় কানেক্ট পায় না তাই শাহানা আপাকে কল দিয়ে জানায়। আপার সাথে মায়া ছিলো তাই মায়াও জানে পাসওয়ার্ড।এগুলো আপা যখন আমাকে বলে তখন আড়াল থেকে সোনালী শুনে নেয়।তাই তো সেদিন আপাকে ওই সোনালী আঘাত করে।বাকি কিছু আমি জানি না।শুধু সোনালীর থেকে শুনেছিলাম আপা মারা যায়।এদের এই অত্যাচার সাথে মায়ার রক্তিম ব্যাবহার সহ্য করতে না পেরে যখন আমি নিজেকে শেষ করতে যাবো মায়া আমাকে বাঁচিয়ে দেয়।হাত থেকে বিষের বোতল ফেলে দিয়ে আমাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে অন্যায়ের প্রতি লড়ব। আর মায়ারাজের বিষয়ে গোপন তথ্য কে দেয় এটা জানার জন্যই আমরা এই নাটক চালাতে থাকি।একদিকে আড়ালে থাকা শত্রুর খোঁজ আরেকদিকে আমার মানিকের উদ্ধার চলতে থাকে।তাই তো এদেরকে দমন না করে বাঁচিয়ে রেখেছে মায়া।আমার আর্তনাদ মেয়েটা শুনেছে।আমার মানিককে আমার কোলে ফিরিয়ে এনেছে।নিজের মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবে এখন সে।”

কথাগুলো বলেই মায়াকে জড়িয়ে ধরে মালিনী।রাজ নিজে এসে ওদের সাথে যুক্ত হয়।এতক্ষণ মায়ের অসহায়ত্বের কথাগুলো শুনে কান্না করে দেয় সিয়া।দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে মালিনীকে।বলে,”আই এম সরি মা।আমি তোমাকে ওই সময় ভুল বুঝেছি।আমি তো জানিনা এতকিছু।কি করব বলো মৌয়ের ছোট বাবুর কথা ভেবে আমি ভয় পাই।”

মালিনী এবার সিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”বোকা মেয়ে আমার। তোর মন যে নরম।একদম ভীত হয়ে পড়িস।”

“একদম তোমার মতো হয়েছে আমার বোনগুলো।ভাইটাও কম না।”(রাজ বলে)

কিছু একটা ভেবে বিভান বলে,”তাহলে তোকে ওইদিন খুন করতে চায় কেনো?”

মালিনী এবার বিভানকে দেখে নেয়।তারপর বলে,”জাতে করে তুমি আমাকে দিয়ে আর কোনো অন্যায় কাজ না করাও। আর মায়া আমাকে ওই দিন আঘাত করেনি।বরং ও নাটক করেছিলো।ভুলে গেলে ও কিন্তু আমাকে আঘাত করার আগে লাইট অফ করে দেয়।হিডেন ক্যামেরাতে আবছা আলোয় তুমি আমাকে করা আঘাত দেখবে আর আমার আর্তনাদ শুনবে।তারপর আয়রাকে দিয়ে ইচ্ছা করে রাস্তায় নামায়।তুমি আমাকে ওর সাথে রাস্তায় ধরবে আর মনে করবে ও আমাকে কবর দিতে যাচ্ছে।এটাই তো প্ল্যান করে রাখে আমাদের অফিসার।আই মিন ক্রিমিনাল অফিসার।আমরাও তাই মেনে নেই।কারণ সেই তো তোমাদের শাস্তি দিবে।”

“ক্রিমিনাল অফিসার!”(বিভান বলে ওঠে)

মায়া এবার মালিনীকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আহ শাশু মা।সব বলে দিলে টুইস্ট থাকবে কি করে।একটু অপেক্ষা করো সে আসবে।”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো মালিনী।এদের কথার মাঝেই হাত তালির শব্দ হয়।সবাই মিলে পিছনে ঘুরে দেখে সোনালী রহস্যের হাসি দিয়ে হাত তালি দিচ্ছে।বিভান নিজেও বুঝে ওঠে না কেনো সোনালী এমন করছে।সোনালীর কাছে এসে রাগ দেখিয়ে বলে,”মাথা কি গেছে তোমার?এদের শেষ করার উপায় না পেয়ে কি এখন পাগল হয়ে গেছো?”

শয়তানি হাসি দিয়ে সোনালী বলে,”ভালো করে দেখো বিভান।এখানে ফুল ফ্যামিলি থাকেলও একজন মিসিং।”

সবাই তাকালো এদিক ওদিক।মিলি এসে বলে,”হ্যাঁ হিয়া কোথায়?ওর তো কাল আসার কথা ছিলো।”

ভয় পেয়ে যায় সিয়া।বলে ওঠে,”কি বলছো আপু?হিয়া তো বেড়াতে গেছে।ও আসার আগে তো আমাদের জানাবে।”

“আমাকে জানিয়েছিলো।কারণ আমি রাগ করেছিলাম আমার বিয়েতে আসেনি তাই।আমি তো আর এত কাহিনী জানতাম না।তাই ওকেও আসতে বলি।”

সোনালী এবার বিজয়ের হাসি দিয়ে বলে,”বেচারি মায়া!কি সুন্দর প্ল্যান করে হিয়াকে নিজের কাছে রেখেছিলো।ভেবেছিলো হিয়ার ব্যাপারটা আমরা বিশ্বাস করবো।কিন্তু মায়ার কিছু ইচ্ছা যে আমিও জানি।মায়া তো কখনও নিরপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি করে না।তাই তো আমি হিয়াকে আমার কব্জায় রেখেছি।ভাগ্যিস ওটাও আমার প্ল্যানের এক অংশ ছিলো।হিয়া এখন আমার ছেলের কব্জায়।”

হুইল চেয়ার সহ এগিয়ে আসতে নেয় মোহন সরদার।কিন্তু পেরে ওঠে না।রাগ দেখিয়ে বলে,”ছেলেকে নিজের মতো নষ্ট বানিয়ে রেখেছো।একটা নিরপরাধ মেয়ের জীবনটা নষ্ট করো না সোনালী।”

“চু চু চু!আসলে বেবী সরি।আমি তো আমার বোনকেও শেষ করেছি শুধুমাত্র এই রাজত্ব পেতে।তাহলে কেনো অন্যের মেয়েকে আমি ছেড়ে দিবো?আমার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমি সবাইকে শেষ করে দিতে পারি।আমার অকেজো ছেলেটা কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে না পারলেও শুধু ওই হিয়াকে নিজের কব্জায় রেখেছে।”

খুশিতে খুশিতে সোনালীর কাছে এসে বিভান বলেন,”আরে বাহ সোনালী।আমার পার্টনার দেখছি খুব চালাক।”

নিজের প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে সোনালী বলে,”আসলে রুদ্রটা কোনো কাজের না।আমি কত ভাবে জারা আর রুদ্রকে এটা ওটা শিখিয়ে দেই কিন্তু কেউ কিছু করতেই পারে না।তাই তো ওকে দিয়ে সোজা কিডন্যাপ করে রেখেছি।আগে ফর্মুলা হাতে পাবো তারপর এদের শেষ করে দিবো।রুদ্র অবশ্য ভাবছে আমি ফর্মুলা পেয়ে গেলে হিয়ার সাথে ওর বিয়ে দিবো।বোকা ছেলে কোথাকার।মোহন সরদারের মত হয়েছে।মেয়েবাজী করে আর কর্মে ঢেঁড়স।”

ভয়তে কান্না করে দেয় সিয়া আর মিলি।কিন্তু আশেপাশের আবহাওয়া পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে যায়।একসাথে হেসে ওঠে মায়া রাজ মাহমুদ সরদার মালিনী আর রাজিয়া।এদের হাসি দেখে যেনো সোনালী আর বিভানের মনে হতে থাকে কোনো সার্কাস চলছে।মায়া এবার পিছনে ইশারা করে বলে,”একবার পিছনে তাকিয়ে দেখুন।কাহানি তো আব শুরু।”

বলেই চোখ টিপ দেয় মায়া।জোরে বাইকের শব্দ কানে আসতেই পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় সোনালী আর বিভান।একসাথে দুইটা বাইক আসছে।দুইজন ব্যক্তির মাথায় হেলমেট আর একজনের পিছনে একটি মেয়ের পিঠের অংশ দেখা যায়।ব্যাক্তি দুজন বাইক নিয়ে সোনালীর সামনে এসেই হেলমেট খোলে।একটা বাইকে আদ্র যার পরনে অ্যাপ্রন আর পাশের বাইকে আছে রুদ্র যার গেটাপ পুরোই ভিন্ন।পিছনে আছে জেসি।বাইক থেকে নামতেই রুদ্রের পোশাক দেখে অবাক হয়ে গেলো সোনালী ও মোহন সরদার।সোনালীর সামনে একটি আইডি করে ধরে রাখে রুদ্র।যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে Criminal Investigation Department তার নিচে পরিচয় পত্র লেখা।যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় নামের জায়গায় লেখা রুদ্রদ্বীপ রুদ্র।

কার্ডটি নিজের পকেটে রেখে রুদ্র বলে,”CID অফিসার রুদ্রদ্বীপ রুদ্র ইজ হেয়ার।নাও ইওর গেম ইজ ওভার।মিসেস সোনালী।”

চলবে…?