#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 56
🍁🍁🍁
আচমকা ফ্লোরের লাইট অফ হয়ে যায়। জ্বলে উঠে রঙিন লাইট। সেই সাথে ফুল সাউন্ডে বক্সে বেজে উঠে Anakh marey গানের সুর। ডান্স ফ্লোরে লাইটের ফোকাস যেতেই ভেসে ওঠে তন্ময় আর তুহিনের চেহারা।
Ho dil dhadkaaye
Arry seeti bajaye
Haye dil dhadkaaye, seeti baajaye
Beech sadak pe nakhre dikaye
Saare, oh karke ishare
Ho ladki aan..aan..aann.
Ho ladki aankh marey (3)
লাইটের ফোকাস অন্যদিকে যেতেই সবাই ওদিকে তাকায়। লাইটের আলোয় ভেসে আসে রোদেলার মুখ। আবারো গান বেজে ওঠে।
Jahaan jahaan jaaun
Mere peeche peeche aaye
Gali gali ke ashik
Dono mera hona caahaae
এবার তিনজনই একসাথে নেচে উঠে। গানের অর্ধেক হতেই পুরো ফ্লোরের আলো নিভে যায়। সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। তখনই বক্সে চিরচেনা গানের সুর ভেসে আসে। গান বেজে উঠতেই আলো চলে আসে। ফ্লোরে চোখ যেতেই সবাই আকাশ থেকে পড়ে। তুহিন, তন্ময় লুঙ্গি পড়ে আছে চোখে কালো চশমা।
Moochhon ko toda rpund ghumake
Ahnna ke jaisa chasma lagake
Coconut me lassi milake
Aa jaao sare mood banake ( 2)
All the rajini fans – thalaivar
Don’t miss the chance – thalaivar (2)
This
Lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch
এবার তুহিন আর তন্ময়ের পেছন থেকে সিমথি আর রোদেলা বেরিয়ে আসে। দুজনের ড্রেসআপ দেখে উপস্থিত সবার মাথা ঘুরে যায়। সবার মাঝে সিমথিকে নাচতে দেখে উপস্থিত সবাই যেনো পৃথিবীর নবম আশ্চর্য দেখলো। কি আজব এরা দুজনও লুঙ্গি পড়েছে।
Jaddho jawaani bada
Jor si ve jaalma
Main tah rajini da
Fan si ve jaaalma
Disko me jab ye gana bajega
On the floor aana padega
Lunghi ko uthana padega
Step karke dikaana padega( 2)
All the rajini fans – thalaivar
Don’t miss the chance – thalaivar (2)
This
Lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch
গানের শেষ পর্যায়ে আয়াশ মেঘার কাজিনসহ ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাই ইশানরা ও ডান্স ফ্লোরে গিয়ে নাচতে শুরু করে। মুহুর্তের মধ্যেই পুরো বাড়ি মেতে উঠে। এই সুন্দর মুহূর্তটা ক্যামেরাম্যান ভিডিও করে নেই। আয়াশ আর মেঘা আশ্চর্য হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।
এরই মাঝে আবারো গান বেজে ওঠে ” তুমি ছুঁয়ে দিলে হায় “। এবারের গানে সবাই থমকে যায়। আয়াশ আর মেঘা ফিক করে হেসে দেয় । সিমথি চোখ-মুখ কুঁচকে নেয়। এই গান টা ওর সবচেয়ে বিরক্তির।
সিমথি : এই কেরে বাজালো এটা।
আচমকা আদি সিমথির হাত টেনে নাচ শুরু করে। আদি – সিমথির দেখাদেখি সবাই আবারো হুড়াধুড়া নাচ শুরু করে। সিমথি আদির থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে নিলে আদি চোখ পাকায়। সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। নাচের এক পর্যায় সায়নরা গিয়ে আয়াশ কে টেনে নিয়ে আসে। সিমথিরা গিয়ে মেঘাকে নিয়ে আসে। এবার দুইজনের ফ্রেন্ড সার্কেল ব্যতিত বাকিরা ডান্স ফ্লোর ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। আয়াশের ফ্রেন্ডরা একসাইডে চলে যায়। সিমথিরা এক সাইডে চলে যায়। মিউজিক বক্সে আবারো বেজে ওঠে ” মেরে ইয়ার কি সাদি হে “।
রাত তিনটায় ওদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। তাও বড়দের বকাঝকায়। সবাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে যে যার নির্ধারিত রুমে চলে যায়। অতঃপর যে যেভাবে পারে সেভাবেই শুয়ে পড়ে।
____________
বরপক্ষ – কনেপক্ষ যদিও একই রিসোর্টে কিন্তু আদিরা মজার জন্য আয়াশকে বর সাজিয়ে গাড়ি করিয়ে পথ ঘুরিয়ে আবারো রিসোর্টে নিয়ে আসে। দরজার সামনে আসতেই ইয়াবড় ফিতা দেখে আয়াশরা হাসে। ফিতার এপাশে আয়াশ, আদিরা আর ওপাশে রোদেলারা।
আয়াশ : কি চাই শ্যালক-শ্যালিকাগন’স
রোদেলা : আরে বাহ আমাদের দুলাভাই তো একস্ট্রা অর্ডিনারী। তা দুলাভাই ঝটপট ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে দেন তো।
আয়াশ : কেনো আমার বউ আমি নেবো টাকা কেনো দেবো।
তুহিন : বাহ রে সিমথির বিয়ের সময় ও তো টাকা নিলাম।
আয়াশ : সেটাই তো। এক বন্ধু তো টাকা দিয়েছে আমি দিয়ে কি করবো।
তরী : কি আশ্চর্য এক বন্ধু টাকা দিয়ে কি দুইজনকে নিয়েছে নাকি। কি হলো আদি ভাইয়া আপনি কয়জনকে নিয়েছেন।
____
আদির জবাব না পেয়ে তরীরা আদির দিকে তাকায়। আদিকে এদিক ওদিক উঁকি দিতে দেখে সবার ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
রোজ : কাউকে খুঁজছেন।
আদি : সিয়া কোথায়৷
আদির কথায় সবাই মুখ টিপে হাসে। আদির হুশ ফিরতেই থতমত খেয়ে যায়। মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকায়। আদির চোরাভাব দেখে এবার সবাই সশব্দে হেঁসে দেয়।
আয়াশ : ভাই বিয়ের এক বছরের উপরও এভাবে চোখে হারাস।
আদি : একবছর কি কাছে ছিলো নাকি। সাতমাস তো দূরেই ছিলো। তারজন্য না দেখলে খালি খালি লাগে। তুই এসব বুঝবি না। বর বরের মতো রুমাল মুখে চুপ করে থাক।
আয়াশ : হাহ কি প্রেম রে ভাই তোদের দু’জনের। আর আমি কি ওদের কাছে নতুন নাকি। যে রুমাল চেপে লাজুক হাসবো।
রিক : হ ভাই তুই পারলে আজই বাসর করিস।
আয়াশ : বাসর তো আজই হবে।
সায়ন : ভাই চুপ কর। একটু লজ্জা রাখ।
আয়াশ : নিজে বিয়ে করে আমার ভোলাভালা বান্ধবী কে মা বানিয়ে দিলি আর এখন আসছিস জ্ঞান দিতে।
আয়াশের কথায় সায়ন চুপ মেরে যায়। এই ছেলের সাথে কথা বলা মানেই ইজ্জত রফাদফা।
শাওন : আরে গেট ছাড়ো ভেতরে যাবো আমরা।
আদিবা : বললেই হলো আগে টাকা পরে ছাড়াছাড়ি।
আয়াশ : আরে ভাই টাকা দিয়ে দে। আমার বউটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আদি : আরেহ থাম তোরা। এই রোদ সিয়া কোথায়। গেটে আসলো না যে। দাঁড়াও ফোন করছি।
আদি ফোন বের করে কানে ধরে। এদিকে রোদেলা কিছু বলার আগেই ওখানে সিমথি আসে।
সিমথি : আরেহ এখনো এখানে কি ক,,,,
আদির দিকে তাকিয়ে সিমথির কথা বন্ধ হয়ে যায়। হা করে আদির দিকে তাকিয়ে থাকে। শুকনো একটা ঢোক গিলে গলা ভেজানোর জন্য কিন্তু কোনো কাজ হয়না। এই ছেলেকে এতো সুদর্শন হতে কে বলেছে। ইশশ কালো রঙ টায় কি সুন্দর লাছে। সিমথি আদির পা থেকে মাথা অবধি স্কেন করে। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট। শার্টের উপর জ্যাকেট। হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, পায়ে ব্ল্যাক – ওয়াইট সংমিশ্রণে সু। এই ছেলে কি এখানে শোক পালন করতে এসেছে। এতো কালো পড়তে কে বলেছে। সিমথির হাত কাঁপতে কাঁপতে একসময় ফোনটা নিচে পড়ে যায়।
এদিকে আদিরও সেইম অবস্থা। সিমথি কে দেখে ফোন কানে নিয়েই থমকে যায়। দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। একপর্যায়ে ফোনটা গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। বুকের ভেতর টা কেঁপে ওঠে। ফর্সা গায়ে কালো শাড়িটা ফুটে উঠেছে। শাড়িটা হাতে রাখা। কানে পানি কালার এয়ারিং, গলায় বাসর রাতে আদির দেওয়া একটা নতুন প্যানডেড পানি কালার। হাতে কালো – সিলভার কালারের সংমিশ্রণে চুড়ি জোড়া। ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক। মুখে কালকের মতোই হালকা প্রসাধনী। চুলগুলো একসাইডে সিথি করে সামনে দিয়ে কেমন করে হালকা বেঁধে ডান সাইডে এনে রাখা। বাম কানের সাইডে গোলাপ ফুল গুজা। আদি একটা শুকনো ঢোক গিলে।
সিমথি – আদির অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসে। এরা হুটহাট একে অপরকে দেখে থমকে যায় এটা সবার জানা। কিন্তু এভাবে যে থমকায় এটা দেখেঔই সবাই অবাক। রোদেলা দুষ্টু হেসে সিমথির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,,,,
রোদেলা : কি সোনা জামাইকে এভাবে দেখে কি আবারো বাসর করতে মন চাইছে।
সিমথি ঘোরে থেকেই হুমম বলে উঠে। রোদেলা পেট চেপে ধরে মুখ টিপে হাসে। আবারো ফিসফিসিয়ে বলে,,,
রোদেলা : আদি ভাইয়া কে কাছে পেতে মন চাইছে নাকি হিংসে হচ্ছে এতো সুন্দর লাগায়।
সিমথি : দুটোই
রোদেলা : বুকের ভেতর টা ধকধক করছে
সিমথি : হুমমম
রোদেলা হাসতে হাসতে তন্ময়ের বাহুতে মাথা ঠেকায় এই মেয়ে যদি হুঁশে থাকতো তাহলে এসব বলার জন্য নির্ঘাত ওর গালে চপাট চপাট পড়তো। আর এখন ঘোরে থাকায় সব বলে দিচ্ছে। এসব ভেবেই রোদেলা এবার শব্দ করে হেঁসে দেয়। রোদেলার সাথে বাকিরা ও হেঁসে দেয়। আচমকা এতোজনের হাসির শব্দে সিমথি – আদি দুজনেরই ধ্যান ভাঙ্গে। দুজনই দৃষ্টি সরিয়ে সবার দিকে তাকায়। সবার তাকানো দেখে সিমথি লজ্জায় পড়ে যায়। আদি মাথা চুলকে অন্যদিকে ফিরে হেসে দেয়। সিমথি আমতা আমতা করে বলে,,,,
সিমথি : ভ ভাইয়াকে ন নিয়ে য যা তত তাড়াতাড়ি।
সিমথির তোতলানো দেখে আরেক দফা হাসির রোল পড়ে যায়। ভাবা যায় সিমথি তোতলাচ্ছে। সিমথি বিরক্ত হয় এবার। এভাবে হাসার কি আছে আমি কি অন্য ছেলের দিকে তাকিয়েছি। নিজের বরের দিকে তাকিয়ে থাকবো না তো কার দিকে তাকাবো। মনের কথাটা এবার মুখেও এসে পড়ে।
সিমথি : কিছু পারিস আর না পারিস ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে জানিস। এতো হাসার কি আছে আমি কি পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নিজের বরকে দেখছিলাম। ইচ্ছে হলে আবার দেখবো।
সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। সিমথি এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে রোদেলার দিকে তাকায়।
সিমথি : টাকা তুলেছিস।
রোদেলার হাসি থামিয়ে মাথা নাড়িয়ে না করে।
সিমথি : আয়াশ ভাইয়া টাকা দেন।
আদি : তুমিও কি গেট ধরবে নাকি।
সিমথি : তো ধরবো না।
আদি : ভাবীরা বুঝি গেট ধরে।
সিমথি : কে ভাবী কার ভাবী কিসের ভাবী।
সিমথির কথায় আয়াশরা হতভম্ব দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। আদি চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,
আদি : আমার বউ হলে তো ভাবীই হবে।
সিমথি : আমি বুঝি আপনার বউ হয়।
সিমথির কথায় আদি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকায়। মেয়ে পক্ষ মুখ চেপে হাসে।
আদি : তো কি তুমি আমার বেয়াইন হও।
সিমথি : হ্যাঁ বান্ধবীর জামাইয়ের বন্ধু তো বেয়াই ই হয়।
আদি : সিয়া আমি তোর বেয়াই কেনো হবো।
সিমথি : তাহলে কি হবেন।
আদি : আম ইউর হাসবেন্ড।
সিমথি : কাবিননামা দেখান।
আদি : মানে
সিমথি : বাহ রে এই যে বললেন আম ইউর হাসবেন্ড তো কাবিন নামা দেখান আমি মেনে নেবো।
আদি : কেনো তোর মনে নেই।
সিমথি : কি জানি শর্ট টাইম মেমোরি লস। আমি তো আপনাকে চিনিই না।
আদি : ও মা তাই। একটু আগে কার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলি।
সিমথি : আরেহ বিয়ে বাড়িতে দু একটা সুন্দর ছেলে দেখলে সব মেয়েই পিছলা খায় আমিও তাদেরই দলে। বুঝলেন। কথা কম কাবিননামা দেন। যে কেউ এসে আমাকে বউ দাবি করলেই তো আর আমি বিশ্বাস করে নেবো না তাই না।
সিমথির কথায় আদি বিষম খায়। সিমথি মুচকি হেসে আবারো আদির দিকে তাকায়। আদি বুঝতে পারে সিমথি মজা করছে।
আদি : কাবিননামা কি কেউ সাথে করে ঘুরে।
সিমথি : তাহলে বউ ফউ বাদ। টাকা দিয়ে বন্ধুর বউ নিয়ে যান। বুঝলেন ভাইয়া।
আদি : একবার তোকে বাঘে পাই ভাই ডাকার ইচ্ছে জন্মের মতো বুঝাবো।
আদির কথায় সিমথি ভেংচি কাটে। আদি কিছু বলতে নিলে আয়াশ কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,,,,
আয়াশ : থাম তোরা। আমি টাকা দিচ্ছি। এখনো বিয়ে করলামই না বাসর করবো কখন।
রিক : শা/লা লু/ই/চ্ছা বাসর নিয়া আছে। ত্রিশ হাজার টাকার মানে বুঝিস।
সিমথি : ত্রিশ হাজার চেয়েছে। ( অবাক হয়ে)
সায়ন : তা নয়তো কি। তোরা যে এতো ডাকাত ভাবিওনি। একটু কমা
সিমথি : আমি হলে এমাউন্ট থাকতো পঞ্চাশ। ওরা তো বিশ কম চেয়েছে।
সিমথির কথায় ছেলেপক্ষের মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। অবশেষে আয়াশ জোড়াজুড়ি করে টাকা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। আয়াশকে নিয়ে জায়গা মতো বসানো হয়।
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 57
🍁🍁🍁
আদিকে খুঁজতে এসে সায়নদের এক জায়গায় জোট পাকিয়ে থাকতে দেখে সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। আয়াশ ভাইয়াকে ওদিকে ফেলে এরা সব এখানে কি করছে। সিমথি ওদের মধ্যে এগিয়ে যায়। কিছুদূর আসতেই কোনো উটকো ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। আরেকটু এগুতেই ধোঁয়া জাতীয় কিছু দেখতে পেয়ে সিমথি থেমে যায়। কিছুক্ষণ ভাবতেই আচমকায় সিমথির রাগ উঠে যায়। হাত মুঠো করে জোরে একটা শ্বাস টানে। দ্রুত কদমে এগিয়ে যায়। আদিদের পাহাড়া দেওয়া অবস্থায় রিক আর সূর্য সিমথিকে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়। আদিদের বলতে নিলে সিমথির রাগী দৃষ্টিতে থেমে যায়। সিমথি সোজা গিয়ে আদির সামনে দাঁড়ায়। আচমকা সিমথিকে দেখে সায়নরা ঘাবড়ে যায়। দ্রুত হাতের সিগারেট ছুঁড়ে মারে। আদি হাত পেছনে নিয়ে যায়। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই মুখের সব ধোঁয়া এসে সিমথির মুখে পড়ে। সিমথি চোখ বুঁজে মাথা কিছু টা পিছে হেলিয়ে দেয়। আদি অসহায় দৃষ্টিতে সায়নদের দিকে তাকায়। সাশনরা গলায় ফোচ দেওয়ার ভঙ্গিমা করে ইশারায় বলে উঠে,,,,
_ আজ তুই শেষ।
সিমথি : টেস্ট কেমন
সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে সায়নরা শুকনো ঢোক গিলে। আদি আমতা আমতা করে বলে,,,
আদি : আ আসলে সি,,
সিমথি : আরেকটা খাবেন।
আদি : সিয়াজান
সিমথি : ডোন্ট কল মি সিয়াজান।
সায়ন : দেখ পরী
সিমথি : স্বামী স্ত্রী কথা বলার সময় প্রাইভেসি দিতে হয় এক বাচ্চার বাপ হয়ে ও যদি সেটা না জানিস তাহলে আরেকটা বিয়ে কর।
আদির দিকে দৃষ্টি রেখে সিমথি সায়নকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে উঠে। সায়ন শুকনো ঢোক গিলে দ্রুত কেটে পড়ে। সায়নের পেছন পেছন বাকিরা ও চলে যায়। আদি যেতে নিলে সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,
সিমথি : তোকে আমি যেতে বলেছি।
আচমকা সিমথির মুখে তুই শুনে আদি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সিরিয়াসলি সিমথি ওকে তুই বলে সম্বোধন করছে।
সিমথি : কবে থেকে খাস এসব।
আদি : ত তুমি আ আমাকে ত তুই ক করে বলছো।
সিমথি : প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবি না উত্তর দে।
আদি : ত তুমি ক কোমায় যাওয়ার পর থেকে।
সিমথি : আমি কি ম/রে গিয়েছিলাম।
আদি : সিয়াজান ( আহত স্বরে)
সিমথি : আমি কোমায় যাওয়াতেই হাতে সিগারেট উঠেছে ম/রে গেলে তো ম/দ, গা/ঞ্জা এসব উঠতো।
আদি : নাহ উঠতো না।
সিমথি : আদি তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম না সিগারেট কখনো হাতে না নিতে। তোমার কিসের কমতি বলো আমাকে টাকা আছে, সুন্দর একটা ফ্যামিলি আছে, ভালোবাসো যাকে সেও তোমার কাছে আছে। তারপর ও এসব কেনো।
সিমথির গলার স্বর কিছু টা নরম হয়ে আসে। আদি কিছুটা সাহস জুগিয়ে সিমথি নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। একহাত সিমথির মাথায় রেখে আহত স্বরে বলে,,,,,
আদি : আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। নিজেকে পা/গ/ল পা/গ/ল লাগতো তারজন্য অনেক বছর পর সিগারেট হাতে নিয়েছিলাম। আমার কাছে সাত মাস আগে তুই ছিলি না সোনা। সুন্দর একটা ফ্যামিলি, টাকা-পয়সা সব থাকলে আমার নেশা, আমার আসক্তি, আমার ভালোবাসা আমার কাছে ছিলো না। না পেরে সিগারেটের নেশায় জড়িয়েছিলাম। আমি সত্যি সরি। আর কখনো সিগারেট হাতে নেবো না। তবে তুই সারাজীবন আমার কাছে থাকলে। কিন্তু কখনো যদি আমাকে ফাঁকি দিস সেটা অন্য কথা৷
সিমথির রাগ পড়ে যায়। আহা রে বেচারা জামাই আমার।
সিমথি : কথাটা মাথায় রাখবে।
আদি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। অধর জোড়া এগিয়ে সিমথির কপালে ছুঁয়াতে নিলে সিমথি পিছিয়ে যায়।
সিমথি : মুখে এখনো সিগারেটের স্মেল আছে। এখন এসব চলবে না।
আদি : প্লিজ একটা।
সিমথি : নো মিনস নো।
আদি : সারাদিনে একটা ও দেয়নি।
সিমথি : সকালে দিয়েছেন।
আদি : সেটা তো সকাল আর এখন দেখে রাত আটটা বাজতে চললো।
সিমথি : তো। সরো। কাজি এসে পড়বে।
আদি : আদর করতে গেলেই এমন করো। হুহ
সিমথি ভ্রু কুঁচকে আদির ফোলা গালের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আদি বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলে উঠে ,,,,
আদি : এভাবে হাসিস না সোনা। কোনো অনর্থ হলে আমি দায়ী নয়।
আয়াশ আর মেঘা পাশাপাশি বসে আছে। একটু আগেই ওরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এখন ছোটরা সবাই আড্ডা দেবে। এই ভেবে বড়রা ও যে যার নির্দিষ্ট রুমে চলে যায়। সবার মাঝ থেকে রোজ উঠে ফ্রেশ হতে যায়।
রোদেলা : মেঘা বোন আমার
মেঘা : কি
রোদেলা : নাউ এক্সপ্লেইন ইউর ম্যারিড লাইফ ফিলিংস।
মেঘা : কিসের ফিলিংস। মাত্র তো বিয়ে হলো। এখনো তো,,,
তন্ময় : আরে রোদ সোনা এখনো আমাদের মেঘা বাবুর বাসর করা বাকি এটাই বলতে চাইছিলো।
তন্ময়ের কথায় সবাই হেঁসে দেয়। মেঘা চোখ ছোট ছোট করে তন্ময়ের দিকে তাকায়।
মেঘা : বাসর সম্পর্কে তোর অনেক ভালো এক্সপেরিয়েন্স তাই না।
তন্ময় : শুধু আমার না সিমথির ও আছে। তাইনা সিমথি।
তন্ময়ের কথায় সিমথি বিরক্তি নিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকায়৷
সিমথি : কি বলতে চাইছিস তুই আমি দশ বারোবার বাসর করেছি। জামাই একটা হলে মানুষ কিভাবে দশ বারো বার বাসর করে। আশ্চর্য
সিমথির কথায় সবাই হতভম্ব।
তুহিন : মানুষ একবার বাসর করেই নাজেহাল হয়ে যায় আর তুই
সিমথি : মানুষ একবার বাসর করে নাজেহাল হয় কিন্তু আমার একবারোও হয়নি তাই এই বিষয়ে আমার কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই। আর তাছাড়া বিগ পয়েন্ট দ্যাট কেইস তুই কিভাবে জানিস।
তুহিন : ধ্যাত শা/লি। আমি তো জাস্ট বললাম।
সিমথি : আমি তোর শালি না। তরী তুই কি তুহিনকে বিয়ে করবি।
তরী : কি বলিস। আমার পেছনে আপাতত একজন ঘুরছে ভাবছি তাকেই করবো। তুহিন ভাই তো আমার ভাইয়া লাগে।
সিমথি কিছু বলার আগে তুহিন বলে উঠে,,,
তুহিন : তুই হলি আমার দুই মাত্র শালী তোকে কেনো বউ বানাবো আমি।
সিমথি : আমি তোর শালী, তরী ও তোর শালী তাহলে তোর বউ,,,
আচমকা সিমথি থেমে যায়। চোখ বড়বড় করে তুহিনের দিকে তাকায়। সায়নরা ও তুহিনের দিকে তাকায়। মেঘারা মিটিমিটি হাসে। তুহিন সামনে চুল গুলো পেছনে ঠেলে সুর তুলে গেয়ে ওঠে,,,,
তুহিন : সুন্দরী বউ আর বুদ্ধিমতী শালী, খুশিতে তুহিন মার হাতে তালি।
সিমথি : শা/লা হারামীর বাচ্চা। তোর শেষ মেষ,, ছিহ তুহিন ( দাঁতে দাঁত চেপে)
তুহিন : আহা শালী ডাক্তার বোনের জামাই পাইবা রাগে না সোনা।
সিমথি : রাখ তোর শা/লী। শেষমেশ বেস্টফ্রেন্ডের বোনের দিকে নজর দিলি। ও তোর বোন হয়।
তুহিন : আহা গো তুমি যখন আদি ভাইয়ার উপর ফিদা খাইছিলা। ইতিহাস ভুইলো না। তোমার পাগলামীর প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমরা।
সিমথি দমে যায়। সবার দৃষ্টি এবার সিমথির দিকে পড়ে। সিমথি ভ্রু কুঁচকায়।
সিমথি : আমি ভাইয়ের বন্ধুর উপর ফিদা হইছিলা। বন্ধুর ভাইয়ের উপর না।
তুহিন : তুমি যাহাকে লঙ্কা বলো আমি তাহাকে মরিচ বলি।
সিমথি : কেনো কেনো। লঙ্কা যা মরিচ ও তো তাই। তাহলে তোর উচিত ছিলো বোনের বান্ধবীর প্রেমে পড়া কিংবা বেস্টফ্রেন্ডের বান্ধবীর প্রেমে পড়া।
তুহিন : নাউজুবিল্লাহ। এই দুইটার উপর আমি সেন্টি খাওয়ার আগে ভাগ্যিস তোর ওই বোকাসোকা বোনের প্রেমে পড়ছি। নয়তো আমার জীবমটা আজ আয়াশ ভাইয়ার মতো কোরবানির গ/রু হতো।
তুহিনের কথায় রোদেলা আর মেঘা তুহিনের চুল টেনে ধরে। তুহিন চেঁচিয়ে উঠে। সবাই হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়ে। বেশকিছু ক্ষণ পর তুহিনকে ছেড়ে দুজনই জায়গায় বসে। তুহিন মাথার চুল ধরে তব্ধা খেয়ে যায়।
তুহিন : আল্লাহ গো। আয়াশ ভাইয়া, ইফাজ ভাইয়া তোমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে।
রোদেলা আর মেঘা আবারো আসতে নিলে রোজ এসে তরীর পাশে বসে। রোজকে দেখে তুহিন শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। সিমথিরা ভ্রু কুঁচকে তুহিনের দিকে তাকায়। ইফাজ আর সায়ন হালকা করে কাশে।
সিমথি : বোঝেনা সে বোঝেনা, সেতো আজোও বোঝেনা। কাঁদে মনের কথা প্রেম কি শুধু। গান টা সুন্দর না তুহিন।
রোজ : কি হয়েছে সিমথি আপু।
সিমথি : আসলে তুহিনের কোনো বোন নেই তাই বেচারা দুঃখ প্রকাশ করছে। রেড রোজ তুই একটু ওকে ভাইয়া বলে কষ্ট টা কমিয়ে দেতো।
রোজ : কিন্তু আমি তো উনাকে ভাই বলেই সম্বোধন করি।
সিমথি : আহা তুই তো তুহিন ভাই বলিস। ভাই তো পাড়াপড়শি দেরও ডাকা যায়। সায়ন ভাইয়া আর ইফাজ ভাইয়া কে যেমন ভাইয়া বলিস তুহিন চাই তুই ওকেও সেভাবে ভাইয়া ডাক।
রোজ : ঠিক আছে। তুহিন ভাই সরি তুহিন ভাইয়া আজ থেকে আমি আপনাকে ভাইয়া বলবো। ভাইয়া তবুও দুঃখ পাইয়েন না ভাইয়া ।
রোজের কথায় সবাই গলা ফাটিয়ে হেসে উঠে। তুহিন রাগী দৃষ্টিতে একবার সিমথির দিকে তো কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে একবার রোজের দিকে তাকাচ্ছে। তুহিনের ফেস দেখে সবার হাসির বেগ আরো বৃদ্ধি পায়। রোজ বোকার মতো ওদের হাসির দিকে চেয়ে থাকে। রোজ – তুহিনের ফেসে রিয়াকশন দেখে হাসতে হাসতে পেট চেপে যে যেখানে পারছে সেখানে শুয়ে বসে পড়ছে।
চলবে,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 58
🍁🍁🍁
রাত বারো টা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট৷ মেঘাকে বাসর ঘরে বসিয়ে সিমথিরা বাইরে আসে। প্রায় অনেকক্ষণ হলো ছেলেদের কোনো দেখা নেই। কোথায় গেলো। এদিকে রাত ও হচ্ছে। সিমথিরা সবাই মিলে ছাঁদের উদ্দেশ্যে যায়। ছাঁদে পা রাখতেই সিমথিদের মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। একেকজন একেক জায়গায় বসে কেমন মাতলামি করছে। সিমথিরা পুরোটা বিষয় ক্লিয়ার করতে কয়েক পা এগিয়ে যায়। তখনই সূর্য রা সিমথির সামনে আসে।
সূর্য : ভাবী দেখুন না কতক্ষণ ধরে মাতলামি করছে সবাই।
সিমথি : ওরা কি ড্রিংক করেছে।
আফিন : হুমম।
মেহের : একটু পর বাসর আর এখন এরা ড্রিংক করছে।
সিমথি : আপনারা করেননি।
সিমথির কথায় সূর্য রা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে না করে। তখনই তুহিন এসে রোজের সামনে দাঁড়ায়। টলতে টলতে রোজের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,,,,
তুহিন : ত তুমি তততখন আআমাকে ভাইইয়য়া কককেন ডাকললে। আমি ত তোমাকে আআমার বাবুরর মাহহহ বানননাবো। আআআর তুমমি আআমাকে মমমামা বানাতে চাইছো।
তুহিনের কথায় রোজ হতভম্ব হয়ে যায়। বাকিরা সবাই আশ্চর্য দৃষ্টিতে তুহিনের দিকে তাকায়। আদিরা হাত তালি দিয়ে বলে,,,
আদি : এএএই ননা হলে ভালললোবাসসসসা। তুহিন কোলে আসো ভাইই।
সায়ন : চিন্তা নননেই তততোকেই রোজকে দদদেবো।
সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে তুহিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রোজকে আড়াল করে। তুহিন ভ্রু কুঁচকায়।
তুহিন : সসসসব সমমময় আআআমার পপ্রেমে ব্যাগড়া দদেওয়ারর চচচাকরী নিয়েছিস। বড় শশশা/লললি।
সঙ্গে সঙ্গে সিমথি তুহিনের গালে এক থাপ্পড় মারে। তুহিন গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে তাকায়।
তন্ময় : ববববাহ আআআজ আমার গগাল টটটা বেঁচে গগগেলো। আলাবু তোনা।
সিমথি কপালে আঙ্গুল ঘষে জোরে একটা শ্বাস নেয়। সব মাতাল এক হয়েছে। একটু দূরে রিক আর আয়াশকে দুলতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সিমথি : সূর্য ভাইয়া আপনারা আয়াশ ভাইয়া কে রুমে দিয়ে রিক ভাইয়া, তুহিন আর ইফাজ ভাইয়াকে নিয়ে যান। তারপর ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত হয়েছে অনেক।
আফিন : কিন্তু বাকিদের কি হবে।
সিমথি : আমরা সামলে নিচ্ছি।
সিমথির কথানুযায়ী সূর্যরা তিনজনে ওদের ধরে বেঁধে নিয়ে যায়।
সিমথি : মেহের ভাবী, ভাবীপু তোমাদের বর সামলাও। সিনহা তন্ময়কে নিয়ে রুমে যাও। তরী, রোজ, রোদেলা, আদিবা, তুহা তোমরা ও রুমে যাও।
মেহের : আর আদি।
সিমথি : এনার নেশার ভূত ছাড়াবো আজ। কখনো সিগারেট তো কখনো মদ। আজ তোমার দেবরের হচ্ছে।
সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে আদির দিকে তাকায়। মেহেররা হাসতে হাসতে শাওনদের নিয়ে নিচে চলে যায়। ছাদে থেকে যায় সিমথি আর আদি। আদি আকাশে তারা গুনছে। সিমথি পেছন থেকে আদির হাত টেনে নিজের দিকে ফেরায়। আদি নিভু নিভু দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথিকে দেখে বড় একটা হাসি দেয়।
আদি : সসসিয়াজজান আমি তোকে ভালোবাসি। আজ ততোকে ভীষণ সুন্দর ললাগছে।
সিমথি : জাতে মাতাল তালে ঠিক।
আদি : কিছু বললি।
সিমথি : নিচে চলুন৷
আদি : নাহ যাবো না।
সিমথি : আদি রাগ উঠিও না। রুমে চলো। রাত বাজে একটা আর উনি রাসলীলা করছে।
আদি : রাসলীলা ররাইট। চল আআমরাও করি।
সিমথি : কিহহ
আদি : রাসলীলা।
সিমথি : চুপচাপ রুমে চলো। আর একটা কথা বললে মাথা ফাটিয়ে ফেলবো ( ধমকে)
সিমথির ধমকে আদি চুপ হয়ে যায়। সিমথি আদিকে টানতে টানতে নিচে নামে।
আদি বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সিমথি ফ্রেশ হয়ে এসে আদিকে আগের অবস্থায় দেখে দাঁতে দাঁত চেপে আদির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সিমথি : এখনো চেঞ্জ করলে না যে।
আদি : নাচবো।
সিমথি : কিহহ।
আদি : হ্যাঁ। আমি আর তুই নাচবো।
সিমথি : ইম্পসিবল। এতোরাতে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নাচে।
আদি : আমি নাচি।
সিমথি : তুমি তো মাতাল।
আদি : সিয়াজান একটু নাচবো। পরে চেঞ্জ করে ঘুমাবো সত্যি।
সিমথি : নো মিনস নো
আদি : তাহলে আমিও এভাবেই থাকবো।
সিমথি : আদি প্লিজ ( ইনোসেন্ট ফেস করে)
আদি : প্লিজ
অগত্যা সিমথি ধুপধাপ পা ফেলে গান চালাতে নিলে আদি এসে গান চালায়। ” তেরি মেরি ” গান চালিয়ে রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে। বেশকিছু ক্ষণ নাচার পর আচমকা আদি সিমথিকে কোলে তুলে নেয়।
সিমথি : আরেহহ কি করছো।
আদি : এখন নাচবো না।
সিমথি : তো কোলে নিলে কেনো
আদি : এখন রোমান্স করবো। মুড এসে গেছে।
সিমথি : এইইই ছাড়ো।
আদি সিমথির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। আদির ঘোরলাগা দৃষ্টি দেখে সিমথি চুপ হয়ে যায়। সারাদেহে কাঁপন ধরে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। আদি সিমথির উপর ঝুঁকে ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। সিমথি চোখ বুঁজে নেয়। অতঃপর সিমথির গলায় মুখ ডুবায়।
মেঘা : এমন মাতালের মতো কি দেখছো।
আয়াশ : আমার বউকে।
আয়াশের কথায় মেঘা কেঁপে ওঠে। আমার বউ কথাটা পুরো হৃদয় কাঁপিয়ে তুলেছে আজ। আচমকা আয়াশ মেঘার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে। মেঘা চমকে আয়াশের দিকে তাকায়। কিন্তু আয়াশের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বেশকিছু ক্ষণ পর মেঘাও আয়াশের ডাকে সাড়া দেয়। আরো দুইজন ভালোবাসার মানুষ আজ একে অপরকে ভালোবাসার সাতরঙে রাঙাবে।
_____________
সকাল দশটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট। কাল ড্রিংক করায় ছেলেরা অনেকেই এখনো ঘুমে। আপাতত ড্রয়িংরুমে সিমথিরা বসে আছে। আদি রা এখনো বেঘোর ঘুম৷ সিমথি মেহেরের কাঁধে মাথা রেখে মেহেরের শাড়ির আঁচল নিয়ে একবার কুন্ডলী পাকাচ্ছে আবার ছাড়াছে। তখনই সূর্য, আফিন, আহাত ওখানে এসে ওদের পাশে বসে। আদিবা একপলক সূর্যর দিকে তাকায়। চোখাচোখি হতেই সূর্য চোখ টিপে দেয়। আদিবা থতমত খেয়ে দৃষ্টি ফেরায়। সিমথি আড়চোখে ওদের পরোখ করে মুচকি হাসে।
সিমথি : প্রেমের মরা জলে ডুবে না।
মেহের : কিছু বললি
সিমথি : হুমম বলছি মেঘার কি এখনো বাসর শেষ হয়নি। বড়রা কি ভাবছে।
রোদেলা : কি আর ভাববে। ওরা ও এই সময় পার করেছে।
সিমথি : হোপসসস৷
তখনই ওখানে একে একে তুহিনরা হাজির হয়। সিমথি ওদের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত। শরীর টা ভালো লাগছে না। তাই কালকের রাতের ঘটনা ধামাচাপা দিলো।
তন্ময় : যাহ সবাই দেখি চুপচাপ।
রোদেলা : তো কি নৃত্য করবো।
তুহিন : করতেই পারিস। এ ছাড়া আর কি পারিস তোরা।
সিমথি : ঝগড়া করবি না। চুপচাপ থাক। ( বিরক্ত হয়ে)
তখনই ওখানে আয়াশ-মেঘার দাদি আর মায়েরা আসে।
আদিবা : বউমণি শরীর খারাপ লাগছে তোমার।
আদিবার কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকায়। আসলেই চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।
আদি : সিয়া কি হয়েছে। বললি না তো আমায়।
সায়ন : কি রে পরী বল কিছু
সিমথি : কিছু হলে তো জানতেই। এমনি জাস্ট ভালো লাগছে না৷
আয়াশের দাদি : আরে মাইয়ার চোখ – মুখ দেইখা তো মনে হইতাছে পোয়াতি। তা মা সিমথি কয় মাস। সুখবর টা জানাইলা না আমগোরে।
আয়াশের দাদির কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হতভম্ব হয়ে আয়াশের দাদির দিকে তাকায়। সায়ন আর ইফাজ মাথা নিচু করে নেয়। যতই হোক বোন তো। সিমথি সায়ন আর ইফাজের দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়। তবুও সেটা ভেতরে চেপে রাখে।
সিমথি : আসলে দাদি,,,
আয়াশের দাদি : আরে বুঝছি সরম পাইছো এল্গায় কও না। কিন্তু আমি তো ঠিকই ধইরা ফেলাইলাম। যায় হোক আদি তোর বাপ- মারে জানা।
আদি : না মানে
আয়াশের মা : লজ্জা পাচ্ছিস কেনো। এটা তো খুশির সংবাদ।
সিমথি বোকার মতো একবার এর দিকে তো একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। ওকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না। কি আজব। এদিকে তুহুন রা চোখের ইশারায় ফাজলামো শুরু করেছে। সিমথি বিরক্তির শ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে নেয়।
আয়াশের দাদি : এই সময় আবার বউয়ের কাছে যাস না যেনো এতে অনাগত সন্তানের ক্ষতি হবে।
আয়াশের দাদির কথায় আদি বিষম খায়। ছোট ভাই বোনের সামনে এমন লজ্জায় পড়তে হবে জানলে কখনোই আসতো না রুম থেকে।
সিমথি : সাত মাস কোমায় থাকাকালীন মানুষ কিভাবে কনসিভ করে দাদি।
সিমথির কথায় সবাই এবার সিমথির দিকে তাকায়।
আয়াশের দাদি : কি কইবার চাও তুমি আমি ভুল বলতাছি।
সিমথি : আরেহ দাদি রাগ করেন কেনো। সন্তান যার হবে সেই নিশ্চয় ভালো বলতে পারবে। আর আমি বিগত সাত মাস কোমায় ছিলাম। এটা কিভাবে সম্ভব।
আয়াশের দাদি : আরে সব সম্ভব।
সিমথি : আহা। যাক। তাহলে কনসিভ করার নতুন পথের দেখা মিললো। কনসিভ করতে হলে কোমায় যেতে হবে। কোমা থেকে ফেরার চারপাঁচ দিন পরই তাহলে সেই ব্যক্তি প্রেগন্যান্ট। বাহ কষ্ট ও কমলো সময় ও সাশ্রয় হলো।
সিমথির শেষের কথায় ছোট বড় সবাই বিষম খায়। এই মেয়ে এতো স্পষ্টবাদী কেনো।
সিমথি : মেঘা তুই চাইলে ট্রাই করতে পারিস।
আয়াশের মা : তার মানে তুই বলতে চাইছিস
সিমথি : উফফস এটাও কি ভেঙে বলতে হবে কেনো প্রেগন্যান্ট হয়নি। আমি রুমে যাচ্ছি।
সিমথি আর থাকতে না পেরে রুমে চলে যায়। আয়াশের দাদিও গোমড়া মুখে চলে যায়। এতো বছরের সব তাহলে বৃথা। মুখ দেখে পোয়াতি চিমতে উনি এখনো সম্পূর্ণ পারে না। আয়াশের মা-দাদিরা যেতে ই আদি হাফ ছেড়ে বাঁচে।
রিক : বেচারী বোন আমাদের লজ্জায় চলেই গেলো।
চলবে,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)