#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ইভানা ও ফাহিম ভিজে একদম কাক হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আর ঘুরতে না গিয়ে তারা বাড়িতে ফিরে এলো। বাড়িতে ঢোকার পথেই দেখলো ঝর্ণা ও তার পরিবারের সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। ফাহিম ঝর্ণাকে জিজ্ঞেস করল,
‘এত তাড়াতাড়ি ফিরে যাচ্ছ কেন? তোমরা নাকি কোন দরকারে এসেছিলে?’
ঝর্ণা মলিনমুখে জবাব দেয়,
‘যে দরকারে এসেছিলাম সেটা পূরণ হয়ে গেছে। না চাইতেও অনেক বেশি পেয়ে গেছি। বেশি কিছু যে আবার হজম হতে চায় না! তাই ফিরে যাচ্ছি।’
ঝর্ণার কথার আদ্যোপান্ত কিছু বুঝল না ফাহিম। ঝর্ণাও বোঝানোর চেষ্টা করল না৷ সে নিজের মতো বেরিয়ে গেলো। বাড়িতে প্রবেশ করেই ইভানা দেখতে পেল ফারজানা বেগম থমথমে মুখে বসে আছেন। ইভানা প্রশ্নই করে ফেলল,
‘আপনাকে এরকম লাগছে কেন? বাড়িতে কি কিছু হয়েছে? ওনাদেরও দেখলাম ওভাবে চলে গেল।’
ততক্ষণে ফাহিমও বাড়িতে প্রবেশ করেছে। ইভানার তালে তাল মিলিয়ে সেও প্রশ্ন করে,
‘হ্যাঁ, আম্মু। আমারও ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে। ঝর্ণা আপুকে অনেক দুঃখী লাগছিল।’
ফারজানা বেগম হতাশ গলায় বললেন,
‘কি একখান গুণধর পোলা জনম দিছিলাম। এহন হের লাইগা আমারে আজীবন পস্তাইতে হইবো। যেই ফারহান আমার গর্ব আছিল এহন সেই আমার নাম মাটিতে মিশাইয়া দিতাছে।’
ফাহিম হতবাক হয়ে যায় নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে। উদগ্রীব হয়ে জানতে চায়,
‘এমন কথা কেন বলছ আম্মু? ভাইয়া কি করেছে?’
‘কি করেছে! বল কি করে নাই। ঝর্ণা ওর পরিবারের লগে বিয়ার সম্মন্ধ নিয়া আছিল। তুই বিয়া করবি না ভালো ভাষায় কইলেই হয়। কিন্তু না। ও যাতা বইলা অপমান করিয়া ওদের তাড়াইয়া দিল।’
ফাহিমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য তারা বাইরে ছিল। তার মধ্যে যে এতকিছু হয়ে গেছে তা ধারণারও বাইরে। ফাহিম বলে ওঠে,
‘আমি এক্ষুনি এই ব্যাপারে ভাইয়ার সাথে কথা বলছি।’
‘না থাউক। আর কিছু কইতে হইবো না। আমি চাই না এই নিয়া বাড়িতে আর কোন ঝামেলা হউক।’
ফারজানা বেগম একটু থেমে ইভানা ও ফাহিমের দিকে ভালো ভাবে তাকান। তাদের ভেজা শরীর দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন,
‘তোরা এইরকম ভিজে গেছস কিভাবে? যা তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে কাপড় বদলা নাইলে শরীল খারাপ হইবো।’
এতকথার মাঝে ফাহিম তো প্রায় ভুলতেই বসেছিল যে তারা ভিজে গিয়েছে। ফারজানা বেগমের কথা শুনে ইভানার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘চলো তাড়াতাড়ি। আমরা চেঞ্জ করে নেই।’
অতঃপর দুজনে নিজেদের রুমে চলে যায়।
৫৭.
রাতের আকাশে চন্দ্র মামা উঁকি দিচ্ছেন। চাঁদের আলোয় পরিবেষ্টিত চারিদিক। এই রাতে পরিস্থিতি অনেক ঠান্ডা। তবে এই হিমশীতল রাতে উষ্ণতা বয়ে যাচ্ছে ইভানার শরীরে। বৃষ্টিতে ভেজার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে জ্বর এসে বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। জ্বরে পুরো শরীর উষ্ণতায় মুড়িয়ে আছে।
ফাহিম উদ্বীগ্ন হয়ে বসে আছে ইভানার মাথার কাছে। সমানে জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছে। ইভানার অবস্থা বেশ নাজুক। ফাহিম আর ঝুঁকি নিতে চাইল না। ডাক্তার ডাকতে চাইল তখন ইভানা বাঁধা দিয়ে বলল,
‘প্লিজ ডাক্তার ডাকবেন না। আপনি আমার সেবা করুন, আমি ভালো হয়ে যাব। স্বামীর সেবা পাওয়া যে প্রত্যেক মেয়েদের নিকট সৌভাগ্য।’
ফাহিম কিছুটা উপহাস করে বলল,
‘ঠিক আছে। তাহলে কালকে যদি আবার বৃষ্টি হয় তো ভিজতে চলে যেও। তাহলে পুনরায় এই সৌভাগ্যপ্রাপ্তি ঘটবে।’
ইভানা কিছু বলল না। ফাহিম থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখল ইভানার শরীরে এখন ১০২° জ্বর। অতঃপর প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলো। যতক্ষণ সম্ভব জলপট্টি দিল। এভাবে একসময় ফাহিম নিজেও ঘুমের কোলে ঢোলে পড়ল।
সকালে সূর্যের রক্তিম আভা চোখে পড়তেই ফাহিম জেগে উঠল। ইভানার মাথায় হাত দিয়ে দেখল শরীর এখনো গরম। তবে উত্তাপ কম। যার অর্থ জ্বর কমে গেছে অনেকটাই। ফাহিম অনেকটা নিশ্চিত হয়ে শ্বাস ফেললো। ইভানার অসুস্থতা তাকে অনেক চিন্তার মধ্যে ফেলেছিল। এখন চিন্তা কমে গেছে।
ফাহিম দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিলো। ততক্ষণে ইভানার ঘুম ভেঙে গেছে। ইভানা বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করতেই ফাহিম ধমকের সুরে বলল,
‘একদম ওঠার চেষ্টা করবা না। তোমার এখনো জ্বর আছে। যা দরকার আমাকে বলো।’
‘আমি ব্রাশ করবো না?’
ফাহিম ব্রাশ নিয়ে এসে নিজে ইভানাকে ব্রাশ করিয়ে দিলো। এই সময় ইভানার মনে হলো সে যেন একটা বাচ্চা। তবে ফাহিমের এমন কেয়ার তার ভালোও লাগছিল। তাই সে বাধা দিলো না।
ব্রাশ করিয়ে দেওয়ার পর ফাহিম নিচে চলে গেলো৷ ফারজানা বেগম ও ফারহান তখন ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট করছিল। ফাহিম নিজের ও ইভানার জন্য খাবার নিয়ে উপরে যেতে নেয়। ফারজানা বেগম প্রশ্ন করেন,
‘খাবার নিয়া উপরে যাইতাছিস কেন?’
‘আসলে আম্মু ইভানার জ্বর এসেছিল কালকে রাতে। এখনো ও পুরোপুরি কমেনি। তাই উপরে নিয়ে যাচ্ছি খাবার।’
‘এমন হওয়ারই আছিল। কাইল যেভাবে বৃষ্টিতে ভিজা আইলি। আইচ্ছা যা, দরকার হইলে ডাক্তার আনিস।’
ফাহিম মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
৫৮.
বাংলায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ৷ জ্ঞানীজনের বলা কথাটা মিথ্যা নয়। ইভানার জ্বর হওয়া যেন ফারহানের সামনে সুযোগের একটি দ্বার উন্মোচিত করল। ফারহান দ্রুত ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে নিজের রুমে এলো।
নিজের এক বন্ধুর মাধ্যমে তোহার ফোন নম্বর জোগাড় করেছে ফারহান। এতক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দে ছিল ফোন করবে কিনা? করলেও বা কি বলবে। তবে এখন আর সেই দ্বিধা নেই।
ফারহান কল দিলো তোহার নাম্বারে৷ কিছু সময় রিং হওয়ার পর তোহা ফোনটা রিসিভ করল। রিসিভ করেই বলল,
‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘তোহা আমি ফারহান বলছি। ইভানার ভাসুর।’
‘আপনি? কেন ফোন করেছেন আমায়? আমি তো আপনাকে সেদিনই,,,আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেলেন আপনি?’
‘উফ, এত প্রশ্ন না করে আমার কথাটা শুনুন। আপনার বোন ভীষণ অসুস্থ।’
‘কি হয়েছে তোহার?’
‘ওর ভীষণ জ্বর। খুব অসুস্থ।’
‘ওহ নো। ইভানার এই অবস্থা। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি ওর সাথে দেখা করতে।’
বলেই তোহা ফোন রেখে দেয়। ফারহানের মুখে ফুটে ওর কুটিল হাসি। বিড়বিড় করে বলে,
‘এরকম অসুস্থ তুমি বারবার হও ইভানা। তাহলে তোমাকে দেখার বাহানায় হলেও তোমার বোন এখানে আসবে। আর আমিও দুচোখ ভরে ওকে দেখতে পারব।’
তোহার সকালে মেডিকেলে ক্লাস করার জন্য যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইভানার অসুস্থতার কথা শুনে সে ক্লাস ফেলে ছুটে যায় বোনের বাড়িতে। ইভানার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ড্রয়িংরুমে ফারজানা বেগমের সাথে দেখা করে। ফারজানা বেগম বলেন,
‘তোহা মা তুমি কেন আইছ?’
‘শুনলাম ইভানা নাকি অসুস্থ? কোথায় ও?’
‘হ। ওর জ্বর হইছে। নিজের রুমেই আছে। যাও দেইখা আসো।’
তোহা দ্রুত ইভানার রুমের দিকে যায়। ফাহিম তখন ইভানাকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছিল। তোহা এসেই ইভানার নাম ধরে ডাকে। ইভানা স্মিত হেসে বলে,
‘আপাই তুই এসেছিস।’
ফাহিম দুই ভাইবোনকে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বলে,
‘আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি।’
ফাহিম রুমের বাইরে যেতেই তোহা ইভানার মাথার কাছে এসে বসে। ইভানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
‘কেমন আছিস এখন? শুনলাম তুই অনেক অসুস্থ।’
‘আগের চেয়ে বেটার। আমি অসুস্থ সেটা তোকে কে বলল?’
‘তোর ভাসুর।’
‘উনি তোর ফোন নম্বর কই পেলো?’
তোহা প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। দুবোন কিছুক্ষণ কথা বলে। তোহার মেডিকেলে জরুরি কাজ ছিল জন্য সে ইভানাকে নিজের খেয়াল রাখতে বলে বেরিয়ে আসে। ইভানার রুম থেকে বেরিয়ে তোহা কিছুটা এগিয়ে যেতেই ফারহান হঠাৎ করে এসে তোহার হাত ধরে ফেলে। তোহা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফারহান তাকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨