মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১১

0
686

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_11
.
🍁
~~~আগামী সপ্তাহে তোমার বিয়ে মুগ্ধতা!!
.
কথাটা শোনামাত্র মাথা তুলে চোখ বড় বড় করে তাকালো মুগ্ধতা।নিমিষেই চোখ দুটো ভরে এলো তাঁর।বিয়ে!আবার সেই লজ্জাজনক হতাশা।যেই লজ্জাজনক অবস্থায় কয়েকমাস আগেও পড়তে হয়েছিলো মুগ্ধতা কে।কিন্তু না এবার আর সেই লজ্জায় পরতে চায় না ও।নিজেকে আর কারোর কাছে হাসির খোঁড়াক বানাতে পারবে না।চোখ ভর্তি জল নিয়ে অসহায় চোখে তাকিয়ে আঙ্কেলের উদ্দেশ্যে বললো…….
.
_____বিয়ে!!কি বলছো আঙ্কেল।আঙ্কেল কোনোকিছু অজানা নয় তোমার।আমি চাই না আর কেউ তোমার দিকে বা আমার দিকে আঙ্গুল তুলুক।
.
মুগ্ধতার কাছে এসে মাথায় হাত বুলালেন উনি।চোখের পানি মুছে বললেন…..
.
~~~তোর আঙ্কেলকে বিশ্বাস করিস তো মুগ্ধতা।এটা জানিস তো তোর আঙ্কেল কারোর কাছে তোকে ছোট হতে দিবে না।তোর ভালো ছাড়া কখনও খারাপ চাইবে না।
.
আঙ্কেল এমন একজন মানুষ যিনি আমার খারাপ হতেই দিবেন না।সবসময় আগলে রাখেন আমায়।
.
____বিশ্বাস করি আঙ্কেল!নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।কিন্তু আঙ্কেল…..
.
~~~~কোনো কিন্তু নয়!!আদনানকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত তোর ছিলি আমি আপওি করিনি।কারণ আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়েটা যেন ভালো থাকে মনের মানুষের সাথে সুখে থাকে।কিন্তু বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন উনি।যা হলো সেটা কল্পনাতীত ছিলো আমার।কিন্তু এবার আমি যাকে তোর জন্য ঠিক করেছি আমি জানি সে তোকে ভালো রাখবে।কখনও তোকে অসম্মান করবে না।কারোর কাছে তোকে ছোট হতে দিবে না।
.
আঙ্কেলের সিদ্ধান্তের উপর কথা বলার সাহস নেই আমার।কারণ আঙ্কেল কখনও খারাপ চান না।আর যেই মানুষটা আমাকে ছোট থেকে আগলে রেখেছে সেই মানুষটার কথা না শুনলে নিজেকে বড় অকৃতজ্ঞ মনে হবে আমার।
.
_____কিন্তু আঙ্কেল আমি যে এই বাড়ির কেউ নয় সেটা জেনে কি কেউ আমাকে মানতে রাজি হবে।যেখানে এতদিনের পরিচিত আদনান মানতে পারেনি।
.
~~~মারে সবাই আদনান নয়!!আদনান তোর পরিচয় টাকে বড় করে দেখেছে তোর ভালোবাসাটা দেখেনি।কিন্তু আমি যাকে ঠিক করেছে সে সবটা জেনেই তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।তুই এই বাড়ির কেউ হস না সব জানে তবুও তোকে মানতে সমস্যা নেই ছেলে আর তাঁর মায়ের।তুই দেখ না শুধু মাএ তোর একটা ছবি দেখে ওরা তোকে পছন্দ করে নিয়েছে।সামনাসামনি দেখার প্রয়োজনই মনে করে নি।আমি বলার পরও মানা করেছে।ওই ছেলে হীরের টুকরো রে মা।তুই দেখিস খুব সুখী হবি।
.
আঙ্কেলের কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি!সুখ সেটা আর এই জীবনে পাবো না আমি।কারণ মা বাবা মারা যাওয়ার পর পরই আমার জীবনের সুখ পাখিটা উড়ে গেছে।যা আর কখনও ধরা দিবে না আমায়।করুন সুরে আঙ্কেল কে বললাম……
.
______আঙ্কেল বিয়েটা এখনই না করলে হয় না।মানে আমার লেখাপড়া টা শেষ হওয়ার পরই না হয়।
.
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠলেন আঙ্কেল……
.
~~~না রে মা!!ছেলের মা পুএবধূ ঘরে তোলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।উনি খুব তাড়াতাড়ি তোকে নিজের ঘরে নিয়ে যেতে চান।উনার তাড়াহুড়ায়ই সামনের সপ্তাহে তোর বিয়ের ডেইট ফিক্সড করতে বাধ্য হয়েছি।তোর কাছে আমার একটাই অনুরোধ তুই না করিস না মা।আমার মুখ পোড়াস না।নিজের মেয়ে মনে করে তোকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আর এটা বিশ্বাস রাখিস তুই ঠকবি না।
.
আঙ্কেলের অনুরোধের কাছে হার মানতে হলো আমায়।এমন করুন সুরে আকুতি ভরা কন্ঠের কথাগুলো ফেলতে পারলাম না আমি।কি করে ফেলবো নিজের বাবার জায়গায় উনাকে বসিয়েছি আমি।যদিও কখনও বাবা বলে ডাকিনি তাতে কি উনাকে বাবার থেকে কম ভালোবাসি না আমি।
.
.
গম্ভীর মুখে ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে দাঁড়িয়ে আছি। তিথি কোথায় সেই সম্পর্কে কোনো আইডিয়া নেই আমার।ওকে খোঁজার ইচ্ছা টাও কেন জানি মরে গেছে।বিষন্ন হয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।কি অদ্ভুদ আমার জীবনটা।যাকে ভালোবাসলাম যার সাথে সারাজীবন থাকতে চেয়েছিলাম তাঁকে ছেড়ে আজ অন্য কারোর সাথে ঘর বাঁধতে হচ্ছে আমায়।আচ্ছা আমি ঠকাচ্ছি না তো তাঁকে।তাঁকে নিজের সবটুকু দিয়ে আপন করতে পারবো কি।আর মাএ তিনদিন পর বিয়ে।ছেলেটাকে দেখিনি এখনও।আঙ্কেল ছবি দিয়েছিলো সবাই দেখেছে অধরা আপু অনেকবার দেখার জন্য বলেছে কিন্তু একবারও তাঁকে দেখার ইচ্ছে জাগেনি আমার।সকলের ভাষ্যমতে,ছেলেটি খুবই স্মার্ট!আন্টিও ছেলের প্রসংশায় পঞ্চমুখ।আনমনে কথাগুলো ভেবে চলেছি তখনই কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে গেলাম আমি……
.
____হেই ডেনঞ্জারাস ওমেন!এখানে এভাবে গোমড়া মুখ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন…?দেখে তো মনে হচ্ছে স্বামী মারা গেছে….?
.
পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আমি।মুগ্ধ!মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে।এই মূহুর্তে তর্কে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই আমার।তাই আবারও সামনে তাকালাম।হঠাৎ কানের কাছে স্থির গলায় বললো…..
.
~~~মুগ্ধতা তোমার কি মন খারাপ…?
.
এমন শীতল কন্ঠ শোনে হকচকিয়ে উঠলাম আমি।এই প্রথম এতটা আকুতি জরিত কন্ঠে আমার সাথে কথা বলছে মুগ্ধ।নইলে সবসময় ছেলেটা আমার সাথে খোঁচাখোঁচি ছাড়া কথাই বলে না।তাঁর প্রতিওোরে বললাম…..
.
_____নাহ!মন খারাপ হতে যাবে কেন…?
.
আমার কথায় মৃদু হাসলো মুগ্ধ।সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মুখপানে।হয়তো কথাটা বিশ্বাস হয়নি তাঁর।তাই বললো….
.
~~~তাহলে এখানে এভাবে বিষন্ন হয়ে একা একা তিথিকে ছাড়া দাঁড়িয়ে আছো কেন…?তোমাকে দেখে স্বাভাবিক লাগছে না মুগ্ধতা।কেমন চিন্তিত লাগছে।কোনো সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারো।যথাসাধ্য হেল্প করার চেষ্টা করবো।
.
উনার কথায় ক্ষীণ হাসলাম আমি।সমস্যা এ আর নতুন কি।এটা তো নিত্যদিনের সঙ্গী।কিন্তু কাউকে বলা যায় না।আপনি বুঝবেন না মুগ্ধ আমি কীভাবে বেঁচে আছি।কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে আছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম…….
.
_____নাহ্!!কোনো সমস্যা নেই।এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম।আর বাকী রইলো তিথি ও বোধহয় এখনও আসে নি।
.
~~~ওহ্হ!!তাই বলো।আচ্ছা তুমি কি সবসময় এরকম গোমড়া মুখো হয়ে থাকো নাকি….?
.
লোকটা কেমন যেন ঠ্যাস না দিয়ে কথা বলতেই জানে না।ইচ্ছে করেই নাকি এমনি আমার পেছনে লাগে কে জানে।
.
_____কই আমি তো কখনও গোমড়া মুখে থাকি না।সবসময় হাসি মুখেই থাকি।আচ্ছা অন্যের পেছনে না লাগলে আপনার বোধহয় পেটের ভাত হজম হয় না তাই না।
.
মুগ্ধতার কথা শুনে কপাল কুঁচকে এলো মুগ্ধর!!কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে বিরবির করে বলে উঠলো……
.
~~~অন্যের পেছনে না শুধু তোমার পেছনেই লাগি।নইলে দিনটাই খারাপ কাটে আমার।
.
____কি বললেন….?
.
~~~ককই কিছু না তো!!আচ্ছা ভালো থেকো আসছি বলেই শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে চলে গেলেন উনি।এই ছেলেটা আস্ত বিরক্তির হাড্ডি।কেমন যেন! আমার সব বিষয়ে নাগ গলাতেই হয় তাঁকে।
.
.
ক্লাসে বসে টিচারের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা!তিথি কে এই ব্যাপারে বলবো কি বলবো না ভাবতে পারছিনা আমি।না বললেও কেমন হয়।তাই সবকিছু খুলে বললাম ওকে।আমার কথা শুনে মাথায় হাত তিথির।তবে আঙ্কেলের ডিসিশন টা খুব ভালোই সেটা এক বাক্যে স্বীকার করলো ও।কিন্তু আমি এখনও পাএ কে দেখিনি এটাই মানতে পারছে না তিথি।কানা না লোলা কার না কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটা না দেখেই বিয়ে করবো এটা ১০০% বোকামি।ওর কথা অনুযায়ী আদনানকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও আদনানের কপালে বউ জুটানোর আগে আমার বিয়ে করা জরুরি।ওর কথাগুলো একেবারে ফেলার মতো নয়।আঙ্কেলের ও এক কথা আদনানকে দেখিয়ে ওর আগে আমার বিয়ে সারতে চান উনি।ওকে দেখিয়ে দিতে চান আশ্রিতা বলে সবাই দূরে ঠেলে দেয় নি।কারণ সবাই ওর মতো অমানুষ নয়।
.
এক বুক সাহস সঞ্চয় করে তিথির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাতুল।আজ তিথিকে মনের কথা বলেই ছাড়বে।এতদিন ধরে ওকে আকারে ইঙ্গিতে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু বুঝতে নারাজ তিথি।ভালোবাসা সম্পর্কে কোনো ধারণাই যেন নেই তাঁর।এখনও যেন দুধের শিশু।সবার সব কথা বুঝে।মুগ্ধতার ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান ও দিয়ে বেড়ায় কিন্তু বুঝলো না শুধু রাতুলকে।রাতুলকে রাস্তা আটকে দাড়াতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো তিথি।রাতুলের উদ্দেশ্যে বললো…..
.
~~~ভাইয়া তুমি হঠাৎ এখানে…?আর আমার রাস্তা আটকেছেন কেন…?
.
তিথির চাহনী দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো রাতুল।গলা অবধি শুকিয়ে গেছে তার।কোনোকথা বের করতে পারছে না।অনেক চেষ্টা করে কথা বলতে সফল হলো সে…..
.
_____নাহ!এমনি এদিকে যাচ্ছিলাম তোমাকে দেখে দাঁড়িয়ে পরলাম এই আর কি!
.
~~~ওহ্হ!!তাই বলেো
.
_____হুম আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো…!!
.
রাতুলোর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিথি।ওর চাহনী দেখে ভড়কে গেলো রাতুল।
.
~~~হুম বলেন!!
.
তিথিকে প্রপোজ করার সাহস কোনোকালেই করে উঠতে পারেনি রাতুল।কেন জানি ওর চোখের দিকে তাকালে সব এলোমেলো হয়ে যায়।কেন হয় নিজেই বুঝতে পারে না।এই পর্যন্ত অনেকবার নিজের অব্যক্ত মনের কথা বলতে গিয়ে বলতে পারে নি রাতুল।বারবার শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে ওকে আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলো না।
.
____কিছু না!!বলেই হবহন করে চলে গেলো।হতভম্ব হয়ে রাতুলের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো তিথি।
.
.
#চলবে……