#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
#Labiba_Islam_Roja
#Part_14
.
🍁
শাওয়ার নেওয়ার পর ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আরেকবার বিস্মিত হলাম আমি।আজ কি হচ্ছে এই ব্যাটা এত ভালো কি করে হলো।বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে মুগ্ধ।আমি বের হতেই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অনেক্ক্ষণ ধরে এভাবে তাকিয়ে থাকায় অস্বস্তি হচ্ছে আমার।হয়তো আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরেছেন উনি।তাই চোখ সরিয়ে বসা থেকে উঠে বললেন……
.
~~~মুগ্ধতা তুমি নিশ্চয় খুব ক্লান্ত…?মাথা ধরেছে নাকি…?
.
উনার কথায় আবারও বিস্মিত হলাম আমি।বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।আমতা আমতা করে বললাম…..
.
______ককই না তো!কোনো সমস্যা নেই।
.
মুগ্ধতার কথায় চোখ ছোট করে তাকালো মুগ্ধ।আঙ্কেলের কথাই ঠিক মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের।নিজের দুঃখ কষ্ট কাউকে মুখ ফুটে বলে না।চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট তাও বলবে না।
.
~~~তুমি মিথ্যা বলছো!আর যদি তুমি সত্যি বলো তাহলে তুমি মানুষ নও।
.
—–উনর কথায় রেগে গেলাম আমি।রাগান্বিত সুরে বললাম…..কি যা তা বলছেন।আমি মানুষ নই মানে কি বুঝাতে চাইছেন….?জঙ্গলের পশু…!!
.
এই মেয়েটা আস্ত পাগল এখন আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে।একটা কথাও সহজভাবে নিতে পারে না।উড়নচণ্ডীর মতো ফুস করে উঠে…..
.
____মুগ্ধতা বি কুল! আমি এটা বুঝাতে চাই নি আগে পুরো কথাটা তো শুনো….একটা মেয়ে সারাদিন ভারী গয়না ঘাটি তার উপর এই বস্তা জড়ানো গায়ে।বারো রকমের আটা ময়দা সুজি।তার উপরে বিদায় বেলার কান্নাকাটি।এরপরও তুমি ক্লান্ত নও।সেজন্য কথাটা বলেছি তুমি মানুষ নও এলিয়েন।
.
এই বিচ্ছিরি ভাবনা শুনে হতবাক।ক্লান্ত নয় বলে এলিয়েন আশ্চর্য।লোকটার মাথায় সমস্যা আছে নইলে বেনারসি কে বস্তা, আমাকে এলিয়েন যা তা বলে যাচ্ছে……
.
~~~আচ্ছা আপনার মাথায় কি কোনো প্রবলেম আছে….?
.
মুগ্ধতার কথায় কপাল কুঁচকে এলো মুগ্ধর।মুখ দিয়ে শুধু এইটুকুই উচ্চারণ করলো “কিহ”!
.
______আসলে আপনার এমন উদ্ভট চিন্তা দেখে আপনাকে অসুস্থ লাগছে আমার।তাই এখন আমাকে নির্দ্বিধায় সবটা বলতে পারেন।কারণ আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তাই কিছু করার নেই।পাগল নিয়েও ঘর করতে হবে তার কারণ তো আপনি জানেনই।
.
মুগ্ধতার কথায় বেশ রেগে গেলো মুগ্ধ!সে পাগল এটা ঠিক কিন্তু তাই বলে মস্তিষ্কের সমস্যা নেই।সে তো কেবল মুগ্ধতাতেই পাগল।ওকে ঘিরেই পাগলামি করতে চায়।নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে করুণ কন্ঠে বললো মুগ্ধ…….
.
~~~তোমার কি আমাকে ঠকবাজ মনে হয় মুগ্ধতা।নাকি আমার ফ্যামিলিকে দেখে বুঝা যায়।
.
মুগ্ধর কথায় চমকে উঠলো মুগ্ধতা।না না সে তো এমনটা ভাবছে না।বরং এই পরিবার তার দেখা সবচেয়ে চমৎকার পরিবার।খুবই ভদ্র নম্র।দরকার পরলে নিজেরা ঠকে যাবে কিন্তু কাউকে ঠকাবে না।একদিনেই কতটা আপন করে নিয়েছে ওকে।
.
_____নাহ!ছিঃ ছিঃ আপনি এসব কি বলছেন।আমি কেন আপনাদের পরিবারকে এতটা জঘন্য ভাবতে যাবো।এই ফ্যামিলির সবাই খুব ভালো।কিন্তু আপনি হঠাৎ এভাবে কথা বলছেন কেন….?
.
মুগ্ধতার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুগ্ধ।তাহলে মেয়েটা তাকে খারাপ ভাবছে।এই ধারণাটা কবে পাল্টাবে ওর।
.
~~~তাহলে এক্ষুনি যেই কথাটা বললে ওটা কি মিন করে বললে মুগ্ধতা।আমার ফ্যামিলি ভালো এটা এক বাক্য স্বীকার করে নিলে অথচ আমার কথা!আমার কথা কিছু বললে না….আমি কি ঠকবাজ!যে তোমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করবো।জানো তো!আমি।আর যে কাউকেই ঠকাই না কেন কোনোদিনও তোমায় ঠকাতে পারবো না।।তার আগেই মরে যাবো।যদি আমার মাথায় বা কোথাও কোনো প্রবলেম থাকতো মেন্টালি সিক থাকতাম তাহলে কখনও তোমাকে নিজের সাথে জড়াতাম না।
.
এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে সক্ষম হলো মুগ্ধতা।তার মানে ওই একটা কথার জন্যই এতগুলো কথা বলছে মুগ্ধ।
.
_____আপনি ওই কথাটাকে সিরিয়াসলি ভেবে নিয়েছেন মুগ্ধ!আমি তো তর্কের খাতিরে জাস্ট এমনি কথাটা বলেছি আর কিছু নয়।
.
কথাগুলো শুনে না শোনার ভান ধরে ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে পড়লো।পেছন পেছন মুগ্ধতাও ছুটলো।ও কি নিজের অজান্তেই ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো।আজ আকাশে একটা বিশাল চাঁদ উঠেছে।সেটা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মুগ্ধ। পাশের মানুষটাকে খেয়ালই করছে না।খুব ইচ্ছে ছিলো মুগ্ধতাকে নিয়ে চাঁদ দেখবে কিন্তু মুগ্ধতার এমন কথায় রাগ লাগলো তার।কিছুক্ষণ নীরব কাটলো দুজনের।মুগ্ধতা বুঝতে পারছে না কি করবে।তাই মুগ্ধর পাশে ঠ্যাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।মুগ্ধ নিজের রাগ সামলে হঠাৎ মিষ্টি হেসে বললো…….
.
~~~ঘুমাচ্ছ না কেন…?যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।সারাদিন অনেক দকল গেছে।এত অনিয়ম করো না।শরীর সইতে পারবে না।কাল আবার রিসেপশন আছে।
.
লোকটাকে বুঝতে পারছি না।এখন এত রাগ দেখালো আবার এখন পানি।আবার আমার খেয়ালও রাখছে।একটা ঢোক গিলে উনার উদ্দেশ্যে বললাম……
.
_____আপনি ঘুমাবেন না…?
.
মুগ্ধতার কথা শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকালো মুগ্ধ। মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে বললো…..
.
~~~হুম ঘুমাবো!!তবে এখন না তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে।এখন একটু চাঁদ দেখবো।
.
_____তাহলে আমিও পরে ঘুমাবো…!!
.
~~~~মুগ্ধতার কথায় আনমনেই হেসে উঠলো মুগ্ধ।সন্দেহের দৃষ্টিতে বললো…..আমার সাথে ঘুমাতে চাও বুঝি…?
.
কথাটা শুনেই থতমত খেয়ে গেলো মুগ্ধতা।এই ছেলে একদম নির্লজ্জ,বজ্জাত।যতটা ভালো ভাবি আসলে ততটা ভাল নয়।লুইচ্ছা একটা।আমি কি তাই বলেছি নাকি।মুগ্ধতা কিছু বলতে যাবে তখনই মুগ্ধ বললো……
.
_____জানো মুগ্ধতা আমি কখনও ভাবিনি তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।কিন্তু ওই যে বলে না “জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ” সব আল্লাহর ইচ্ছা।উনার ইচ্ছাতেই এক সুতোয় বাঁধা পড়েছি আমরা।যেই বাঁধন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অটুট থাকবে।আমার মায়ের বরাবরই বৌমা ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিলো।তাই সবটা কি করে যেন হয়ে গেলো।আমার বন্ধুরা যেই তোমার কথা বললো অমনি মা তোমায় না দেখে রাজি হয়ে গেলো।ব্যস এক সপ্তাহে বিয়ে।তুমি কি এতে খুশি মুগ্ধতা….?
.
প্রশ্নটার উওর দেওয়া টা খুব কঠিন মুগ্ধতার কাছে।
এই সম্পর্কে কি আদৌ খুশি হতে পেরেছে মুগ্ধতা।কিন্তু এই মূহুর্তে এই কথাটা বললে কষ্ট পাবে মুগ্ধ। আর যদি বাসা থেকে বের করে দেয় তখন আঙ্কেলকে মুখ দেখাবে কি করে…..
.
~~~আমাদের দ্বারা যা কিছু ঘটে সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।এই সম্পর্কেও আল্লাহর ইশারা ছিলো।তাই দুঃখ পাইনি আমি খুশি।
.
মুগ্ধতার কথার ধরনে মুগ্ধর বুঝতে বাকী নেই কি বললো ও।মুগ্ধ জানে ওর পক্ষে এত কম সময়ে সবকিছু একসেপ্ট করা সহজ নয়।তাই ওর কথায় দুঃখ পেয়েও পেলো না।কারণ ও জানে মুগ্ধতা ঠিক কতটা কষ্টে আছে।বাইরে যতই স্বাভাবিক থাকুক না কেন ভিতরে ভিতরে তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে।
.
_____আচ্ছা ঠিক আছে এবার ঘুমিয়ে পরো।মুগ্ধ কে পাশ কাটিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ ঠ্যাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।মুগ্ধ আজ ঘুমাবে না আজ সারারাত তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দু চোখ ভরে দেখবে।এতদিন দূর থেকে একটু আধটু দেখতো যেটাতে মন ভরতো না তাঁর।তাই আজ মুগ্ধতার অলক্ষ্যে ওকে দেখবে।প্রাণ ভরে দেখবে।
.
.
রাত প্রায় তিনটা!কোথাও কোনো মানুষের সাড়া শব্দ নাই। ঘড়ির কাটাগুলোর ঠিক ঠিক শব্দ শোনা যাচ্ছে।ঝিঁঝি পোকাগুলো ডেকে চলছে।।মুগ্ধতার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ কিন্তু সেটা টেরও পাচ্ছে না।কেমন বাচ্চাদের মতো গুটি-শুটি মেরে শুয়ে আছে।কয়েকটা চুল এসে উপচে পড়েছে কপালে।আলতোভাবে চুলগুলো সরিয়ে কানের নিচে গুঁজে দিলো মুগ্ধ।মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত একটা মায়া আছে।একদিন এই মায়াবী চেহারায় আটকা পড়েছিলো সে।আজকে মেয়েটাকে একটু অন্যরকম লাগছে।ভয়ংকর সব ইচ্ছে জাগছে মনে।খুব ইচ্ছে করছে ওকে একটু ছুঁয়ে দিই।নিজের মনের চাওয়াটুকু বেশিক্ষণ অপূর্ণ রাখলো না।হঠাৎই ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো মুগ্ধতার কপালে।মুগ্ধতা কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো।ঘুমের ঘোরেই হাত চেপে ধরলো মুগ্ধর।এখন সে পড়েছে বিপাকে।কিছুতেই হাত সরাতে পারছে না।অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ সে।যতবার হাত সরাতে যাচ্ছে ততবারই আরো চেপে ধরছে…!!
.
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো মুগ্ধতার।আধো আধো চোখে তাকিয়ে আবারও চোখ বুজে নিলো।কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না।ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারছে যেন রশি দিয়ে কেউ বেধে রেখেছে তাঁকে।একটু নড়তে যাবে কিন্তু পারছে না।মুগ্ধতার ঘুম আস্তে আস্তে হালকা হতে লাগলো।মুখ একটু উপরে তুলতেই অবাক।একি!আমি উনার বুকে কি করে৷…..মুগ্ধতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মুগ্ধ।কিছুতেই নিজেকে তাঁর কাছ থেকে ছাড়াতে পারছে না মুগ্ধতা।অনেক চেষ্টা করেও ফলাফল শূন্য।বোকার মতো তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না।এখন একমাএ উনাকে ঘুম থেকে তুলতে হবে আমায়।তাহলেই প্রবলেম সলভ।কিন্তু উনাকে তুলবো কি করে।উনি তো উঠেই নিজের দোষ দেখবেন না আমাকে আবোলতাবোল বলবেন তাহলে উপায়….!!
.
.
#চলবে…..