মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১৬

0
608

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
#Labiba_Islam_Roja
#Part_16
.
🍁
বার দুয়েক ডাকার পরও যখন মুগ্ধ উঠলো না তখন ওর চুল টেনে ধরলো মুগ্ধতা।এতটা জোরে জোরে টানছে যে ঘুমে মধ্যেই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠছে মুগ্ধ।প্রথমে হালকাভাবে দিলেও যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন খুব জোরেই চুল টানতে লাগলো।ব্যাথায় গেংগাতে গেংগাতে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে মাথার চুল ধরে বিছানায় উঠে বসলো সে।মুগ্ধ কে উঠতে দেখে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মতো হাসি দিলো মুগ্ধতা।ওর মুখ দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে মাএ যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে।ব্যাথায় টান টান হয়ে আছে পুরো মাথা। তার উপর মুগ্ধতার হাসি জাস্ট সহ্য হচ্ছে না মুগ্ধর।এই মেয়ে এমন কান্ড ঘটাতে পারে এটা কখনও ভাবতেও পারেনি।বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে রাগে গজ গজ করছে।সেদিকে খেয়ালই নেই মুগ্ধতার।সে এক কোণে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে।রাগী কন্ঠে বললো মুগ্ধ…….
.
~~~হাউ ডেয়াট ইউ…..!!আমার চুল টেনে ছেঁড়ার সাহস হলো কি করে তোমার।তাও আমি যখন গভীর ঘুমে ছিলাম তখন।জানো এই চুলগুলো কত শখের আমার।আর তুমি সেই চুলগুলোকে উফ!কি করে করলে এটা এ্যান্সার মি ড্যামেট….!!
.
মুগ্ধর চিৎকার শুনে ভয়ে আঁতকে উঠলো মুগ্ধতা।এতটা বাড়াবাড়ি হবে ভাবতে পারেনি ও।ভেবেছিলো খুব স্বাভাবিক নিয়মে মুগ্ধ খুব একটা রাগ করবে না।হালকা পাতলা কথা শুনালেও কিছুই হবে না কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হলো।ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো…..
.
_____আসলে আমি ভাবতে পারিনি এতটা হয়ে যাবে।আপনাকে অনেকবার ডাকার পরও যখন উঠছিলেন না তখন এই বুদ্ধি টা মাথায় খেললো তাই আর কি!এদিকে আপনার বন্ধু প্লাস আপনার মা আপনাকে তোলার জন্য বার বার বলছে।তো আমি কি করবো বলুন।
.
রাগে নিজের মাথার চুলগুলো এখন নিজেই টানছে মুগ্ধ।কি করে এতটা ইডিয়ট হতে পারে মেয়েটা।আমাকে ভালোবাসে না ঠিক আছে তাই বলে এরকম একটা কাজ করবে।মানুষ বলে তো আমার উপর একটু মায়া থাকা উচিৎ ছিলো।কিন্তু সেটাও থাকলো না।কথাটা ভেবেই বুক ভারী হয়ে উঠলো মুগ্ধর।দাঁত কিড়মিড় করে বললো…..
.
~~~সবাই আমাকে ঘুম থেকে তুলতে বলেছিলো মানছি।তাই বলে তুমি এভাবে আমার চুল টানবে।কেন পৃথিবী তে মানুষকে ঘুম থেকে তুলার জন্য আর কোনো ওয়ে নাই…?মুগ্ধতা বি সেনসেটিভ!
.
চোখ দুটো পানিতে ভরে গেছে মুগ্ধতার।মানছে অন্যায় করেছে তাই বলে এভাবে চিৎকার করে কথা বলতে হবে কেন….?বুঝিয়ে বললে কি বুঝতো না! নাকি এতোটাই অবুঝ।নাগ টেনে বললো……
.
_____এতক্ষণ তো আমাকে বকলেন এখন যে নিজেই নিজের চুল টানছেন তাঁর বেলায় কিছু না তাই না।নিজে করলে দোষ নাই আর অন্যরা করলে দোষ।ঠিক আছে আমি দুঃখীত!বুঝতে পারিনি।রাগ করবেন না প্লিজ!
.
এতক্ষণ ধরে মুগ্ধতার দিকে না তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলো মুগ্ধ।এবার রাগী চোখে একবার মুগ্ধতার দিকে তাকালো।মুগ্ধতার চোখের পানি দেখে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো ওর।মুগ্ধতা কে কখনও কাঁদতে দেখতে চায় না কিন্তু আজ ও নিজেই ওর কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।বিছানা থেকে অলস পায়ে নিচে নামলো সে।একটু একটু করে এগিয়ে গেলো মুগ্ধতার কাছে।।একটু আগেও মেয়েটার মুখে হাসি ছিলো আর এখন কাঁদছে সবটাই হয়েছে মুগ্ধর জন্য।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ওর চোখ মুছে দিতেই চোখ তুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো মুগ্ধতা।নরম কন্ঠে বললো……
.
~~~আই’এম সরি মুগ্ধতা!আসলে ঘুম থেকে উঠে মাথার ঠিক ছিলো না।তাই এত বেশি রিয়াক্ট করে ফেলেছি।যা উচিৎ হয়নি আমার।প্লিজ কেঁদো না।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।লোকটার আচরণ কখণও বুঝতে পারে না মুগ্ধতা।যদিও এখন পুরোটা ভুল ওর তবুও কেমন শীতল কন্ঠে ক্ষমা চাইছে।যেখানে ওরই বেশি দোষ।
.
.

বেলা প্রায় এক টা….!!টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট গায়ে দিয়ে নিচে নামলো মুগ্ধ।ওকে দেখেই হাসির রুল পরে গেলো পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে।সকলের জন্য কফি বানাতে রান্নাঘরে ঢুকেছে মুগ্ধতা।ও খুব ভালো কফি বানাতে পারে কথার প্রসঙ্গে তিথিই বলেছে সবাইকে।তাই রিদি আর স্নেহার অনুরোধে মুগ্ধর মা’র কাছ থেকে রান্নাঘরে ঢুকার পারমিশন পেয়েছে মুগ্ধতা।সকলের হাসি তামাশা দেখে সরে গেলেন উনি।ছোটদের মাঝখানে থাকা বড্ড বেমানান।সকলের হাসির উৎস একটাই একদিনেই এত অধঃপতন মুগ্ধর।বউ পেয়ে বন্ধুদের প্রায় তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখলো।যে কিনা বন্ধু মহল বলতে অজ্ঞান সেই ছেলে এই কাজ করলো ভাবতে পারছে না ওরা।রিদির মাথায় গাট্টা মেরে বললো মুগ্ধ……
.
______আমার বউকে জড়িয়ে অকারণে একটাও ফালতু কথা বলবি না।কারণ তোরা জানিস আজ অনেকদিন হলো আমি ঠিকমতো ঘুমাই না।কারণটাও তোদের অজানা নয়।আর গত দুইদিন এই তোদের জন্য একে বারেই ঘুমাতে পারিনি সেটাও জানিস।আর আজ রাতে…..বলেই মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো মুগ্ধ……তাই বুঝতেই পারছিস কেন আজ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি।
.
সকলে হা হয়ে তাকিয়ে আছে মুগ্ধর দিকে।এদিকে রান্নাঘরে লজ্জায় মরে যাচ্ছে মুগ্ধতা।উনার মুখে কি কিছুই আটকায় না।সবার সামনে নির্লজ্জের মতো আমার বউ বলছেন।কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর একসাথে ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে উঠলো সকলে।আচমকা সকলের হাসি দেখে বোকা বনে গেলো মুগ্ধ।এখন সবার হাসির কারণ খুঁজতে ব্যস্ত ও।হঠাৎ রিদি বললো……
.
~~~সবটাই জানি!সবটাই বুঝি!তবুও এভাবে একা একা এতক্ষণ মরার মতো না ঘুমালেও পারতিস।তোর জন্য মেয়েটাকে চারবার উপর নিচ করতে হয়েছে।ভাবতে পারছিস।
.
নিচের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো মুগ্ধ…..
.
_____সেই চার বারের শোধ এক বারেই আমার চুলের বারোটা বাজিয়ে তুলে নিয়েছে।সবার কাছে যতটা চুপচাপ আমার কাছে ততটাই ধূর্ত আর চঞ্চল।
.
কিছুক্ষণেই চলে এলো সকলের কফি।মুগ্ধতা নিজ হাতে সবাইকে কফি দিচ্ছে।ইতিমধ্যে মা ও এসে বসেছেন সোফায়।মুগ্ধর হাতে কফি তুলে দিতেই তৃপ্তির হাসি হাসলো মুগ্ধ।সকলেই প্রসংশায় পঞ্চমুখ।।মেয়েটার হাতে যাদু আছে।এই বাড়িতে এসে প্রথমবার কিছু বানালো মুগ্ধতা।আর সেটায় খুশি হয়ে ওকে একটা চেইন উপহার দিলেন ওর শাশুড়ী।
.
.

মুগ্ধতা দের বাসায় যাওয়ার জন্য সকলে বেড়িয়ে যাবে এমন সময় সামনে এসে দাঁড়ায় মিতুল।মিতুলকে দেখেই চমকে উঠে আফিফ।মেয়েটা তো আসবে না বলেছিলো তাহলে।হা করে তাকিয়ে আছে মিতুলের দিকে।আফিফকে স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো মিতুল…..
.
~~~কি হলো আমাকে আশা করেন নি তাই না।এভাবে হা হয়ে আছেন যে….?
.
____কপাল কুঁচকে…..আশা করার কি কথা।না বলে ছিলো তো!
.
~~~”না”বলে আবার আসতে ইচ্ছে করলো যে।যদি আপনার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে চলে যাবো নো প্রবলেম।
.
______আমার সমস্যা হতে যাবে কেন…?আর যদি সমস্যা হতো তাহলে কিছুতেই আসার জন্য রিকুয়েষ্ট করতাম না।খুব তাড়া আছে তোমার তাই না।
.
~~~কই না তো! কাজ ছিলো এখানে আসার জন্য বাদ দিয়া দিছি।ভেবেছিলাম ছুটি পাবো না কিন্তু শেষমেশ পেয়ে গেলাম দেন চলে আসলাম।
.
_____ওহহ!!
.
~~~আপনারা বেড়িয়ে পরছিলেন বুঝি।আরেকটু লেইট হলে তো আমার যাওয়াটাই হতো না।
.
______আচ্ছা বাই এনি চান্স আপনি কি রেগে আছেন আমার উপরে।এভাবে চুপচাপ কখনও কথা বলেন না।তাহলে আজ কি হলো।
.
~~~নাহ!কিছু না।আর রাগ করতে যাবো কেন,…?তুমি আমার কি হও গার্লফ্রেন্ড না বউ।
.
ওদের কথার মাঝেই চলে এলো সবাই।আফিফের খুব রাগ হয়েছে মিতুলের উপর।খুব করে বললো কিন্তু মুখের উপর না করে দিয়েছিলো।তাই মিতুলের উপর খুব অভিমান হয়েছে ওর।এদিকে আফিফের এতটা চুপচাপ থাকার কারণটা বুঝতে পারছে না মিতুল।যে স্বভাব সুলভ খুব মিষ্টি ভাষায় কথা বলে আজ সেই কিনা কেমন ধাঁরালো ভাবে কথা বলছে।আফিফের কথা বলার ধরণ একদম ঠিক লাগছে না ওর কাছে।কিন্তু সবাই থাকায় কিছু বলতেও পারছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই মুগ্ধর বাসার উদ্দেশ্যে সকলে বেড়িয়ে পরলো।
.
.
🥀
মুগ্ধতা কে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক আনিয়েছে মোহনা।তারা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে ওকে।খয়েরী রঙের ভারী লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি।হাতে চুড়ি আর ব্রেসলিট।কানে বড় কানদুল।চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া এতে চোখ গুলোকে বড় বড় দেখাচ্ছে।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।মুগ্ধতা আর মুগ্ধ বসে আছে পাশাপাশি চেয়ারে।।আঁড়চোখে বারবার দেখে চলেছে মুগ্ধতা কে।রোজ রোজ নতুন করে ওর প্রেমে পড়ে মুগ্ধ।
.
কিছুক্ষণেই চলে এলো আফিদের বাসার সবাই শুধু অন্যান্য বাদে।আঙ্কেল কে জড়িয়ে কান্না শুরু মুগ্ধতার।একে একে সকলে দেখা করে গেলো তার সাথে।কাপল ড্যান্সের মাধ্যমে শেষ হলো অনুষ্ঠান।কাপল ড্যান্সের জন্য রাতুল কন্টিনিউয়াসলি ডেকে চলেছে মুগ্ধতা আর মুগ্ধ কে।কিন্তু মুগ্ধতা নাচতে জানে না সো সে নাচবে না।কিন্তু রাতুল রিদি নাছোড় বান্দা।ওদের কিছুতেই ছাড়বে না।যাদের ওনারে এই সবকিছু তারাই নাচবে না তা আবার হয় নাকি।জোর করে ওদের পাঠিয়ে দিলো স্টেজে।লজ্জায় মরে যাচ্ছে মুগ্ধতা।সকলের সামনে কিভাবে নাচবে সেই চিন্তায় বিভোর।নিচের দিলে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও।মুগ্ধ নিজের ডান হাতটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে।কিছুক্ষণ পর হাতটা ধরে নিলো মুগ্ধ।রাতুল তিথি স্নেহা রিদি হৃদয় সবাই উঠে গেলো।রিদি একটু প্ল্যান করে তিথি আর রাতুলকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে ড্যান্সের সুযোগ করে দিলো।যদিও রাতুল চায় নি তবুও জোর করে চাপিয়ে দিলো ওর গাড়ে।আফিফ কে আর মিতুলকে নিয়ে এলো তিথি।তারা দুজনে নাচবে একসাথে।হৃদয় আর রিদি নাচবেও।শুধু স্নেহারই কোনো পার্টনার নাই।কিন্তু তাতে আপসোস নেই ওর।কারণ ও চায় না এসবে থাকতে।খুব বোরিং লাগছে সবকিছু।স্টেজের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো ও।
.
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর যে যার বাসায় চলে গেলো।মুগ্ধতা কে রাতের খাবার খাইয়ে দিলেন ওর শ্বাশুড়ি মা।ব্যাথায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে ওর।মুগ্ধ এঝনও রুমে আসেনি।ফ্রেন্ডসদের সাথে আছে।শাওয়ার নিয়ে মাথার উপর হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শুয়ে আছে মুগ্ধতা….!!
.
.
#চলবে….….