মেঘ হবি তুই পর্ব-০২

0
176

#মেঘ_হবি_তুই
[দ্বিতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নীলা বাসর ঘরে স্বামীর পায়ে সালাম করতে গেলে তখনই তন্ময় নিজের পা সরিয়ে নেয়। বাসর রাতে স্বামীর এমন ব্যবহার দেখে হতবাক হয়ে যায় নীলা। এবার নীলা দাঁড়িয়ে আবার যখন বিছানার দিকে পা বাড়াবে তখনই তন্ময় নীলার হাত টেনে ধরে।

— খুব সখ বড়লোক বাড়ির বউ হওয়া তাইনা?

নীলা মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— তুই কি ভাবছিস আমি সব ভুলে গেছি? তুই এবার টের পাবি তন্ময় চৌধুরী কি জিনিস। এখন মুখে কোনো কথা নেই কেন?

— দেখুন আগে যা হইছে এসব বাদ দেন। এখন তো আমরা স্বামী স্ত্রী।

— কিহ? স্বামী স্ত্রী! হাহাহা।

— আপনি হাসছেন কেন?

— তোর কথা শুনে। আমি তোকে বিয়ে করছি তোকে আমার বউ করার জন্য না। তোর উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আর আজ থেকে শুরু তোর জীবনের কালো অধ্যায়।

— অনেক রাত হইছে আমার ঘুম পাচ্ছে।

— তো যা ঘুমিয়ে পড়। বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে মেঝেতে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়।

— মেঝেতে কেন?

— এই তোর বাপে কখনও এতো দামী বিছানা দেখেছে? আর তুই এখানে ঘুমানোর কথা ভাবছিস।

— আপনি আমাকে যা বলার বলুন আমার বাবাকে নিয়ে কিছু বলবেন না।

— তোর সাথে আপাতত কোনো কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।

এই কথা বলে তন্ময় চৌধুরী নিজের বিছানায় গিয়ে নীলার দিকে একটা বালিশ আর একটা কাঁথা এগিয়ে দিয়ে সে বিছানার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর এদিকে নীলা মেঝেতে বিছানা করে ওখানেই শুয়ে থাকে। বালিশে মাথা রাখতেই নীলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে। বাসর রাত নিয়ে তার কতো স্বপ্ন ছিলো। সব স্বপ্ন, স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেলো। কান্না করতে করতে একটা সময় নীলা ঘুমিয়ে পড়ে। খুব সকালে নীলার ঘুম ভেঙে যায়। তাই সে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। সকালে কাজ করার অভ্যাস তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে যাবে এমন সময় নীলার শ্বাশুড়ি নীলাকে ডাক দেয়।

— বউমা তুমি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠলে কেন?

— ঘুম ভেঙে গেলো। তাই ভাবছি সবার জন্য সকালের নাস্তা টা তৈরি করে নেই।

উনি একটা হাসি দিয়ে বলল — এখানে তোমার কাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এই বাড়িতে কাজ করার জন্য অনেক মানুষ আছে। আর সবার জন্য নাস্তা অনেক আগেই রিডি হয়ে গিয়েছে। তুমি একটা কাজ করো তন্ময়কে নিয়ে নাস্তা করতে আসো।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

এই কথা বলে নীলা তন্ময়ের রুমে গিয়ে তন্ময়কে অনেক বার ডাকে। কিন্তু তন্ময়ের কোনো রেসপন্স নেই। তাই সে কাঁপাকাঁপা হাতে তন্ময়ের শরীর স্পর্শ করে তন্ময়কে ঘুম থেকে তুলে। তন্ময় রাগী চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময়ের রাগী মুখ দেখে নীলা কিছুটা ঘাবড়ে যায়।

তন্ময় এবার বিছানা থেকে উঠে নীলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — তোকে আমার শরীর স্পর্শ করার অধিকার কে দিয়েছে?

— মা বলছে আপনাকে ডেকে তুলার জন্য। আসলে আপনাকে অনেকবার ডেকেছি আপনার কোনো রেসপন্স নাই দেখে।

— তোর এই নোংরা হাতে নেক্সট টাইম আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা ও করবিনা।

এই কথা বলে তন্ময় নীলাকে সামনে থেকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতেই নীলা টাল সামলাতে না পেরে পাশে থাকা চেয়ারে কোনায় পড়ে কপাল কেটে এখান থেকে র*ক্ত পড়তে শুরু করে। যদিও তন্ময় সেটা খেয়াল না করেই ওয়াশরুমে চলে যায়। ব্যাথা পেয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখে হাত পুরো লাল হয়ে গিয়েছে। নীলা কোনরকম ভাবে কাটা যায়গায় হাত দিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে। ব্যাথার কারণে চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। তখনই তন্ময় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর এসে দেখে নীলা ওখানেই বসে আছে কপালে হাত দিয়ে। তন্ময় প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে নিজের ড্রেস খুঁজতে গায়ে দিয়ে যখনই বের হতে যাবে তখনই সে বলল,

— ওখানে বসে আছিস কি জন্য?

নীলা কিছু না বলে কপালে হাত দিয়ে এখনও বসে আছে। তখনই তন্ময়ের চোখ পড়ে ফ্লোরের উপর। সেখানে রক্তের দাগ দেখে তন্ময় এবার নীলার কাছে এগিয়ে যায়।

— এই রক্ত কোথা থেকে এলো?

তন্ময় বুঝতে পারে নীলা যেখানে হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে সেখানে কিছু একটা হইছে। তন্ময় নীলার হাত সরিয়ে দিতেই সে দেখতে পায় নীলার কপাল থেকে রক্ত পড়ছে।

— এটা কীভাবে হলো?

নীলা কোনো কথা বলছে না। তখন সে বুঝতে পারে হয়তো তার ধাক্কায় নীলার এই অবস্থা হইছে। তন্ময় তার নিজের মেডিকেল বক্স বের করে নীলার কপাল থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। তারপর নীলাকে নিয়ে খেতে যায়। সবাই খাওয়ার জন্য বসে পড়ে। আর নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ান চৌধুরী বলল,

— বউমা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমিও বসে পড়ো।

— বাবা আপনারা খেয়ে নিন আমি পরে খাবো।

— আরে বসো তুমি। আমাদের বাসায় সবাই আমরা এক সাথে খাবার খাই।

তখনই তন্ময় বলে উঠে — বাবা ও যখন বলছে পরে খাবে তাহলে এতো জোর করার কী আছে?

হঠাৎ করে তন্ময়ের ভাবীর চোখ পড়ে নীলার কপালে, উনি উঠে নীলার কাছে চলে যায়।

— বোন তোমার কপাল কাটলো কীভাবে?

প্রশ্নটা শুনে সবাই নীলার দিকে তাকালো। এতে তন্ময় কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তখন নীলা বলল,

— আসলে ভাবী পা স্লিপ করে পেড়ে এমন হইছে। আসলে এতো বড় বাড়ির বউ হয়ে এলাম সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে তো কিছুটা সময় লাগবে।

— আরে কতো খানি কেটে গেলো। দেখেশুনে তো হাঁটতে পারো।

— সমস্যা নেই ভাবী ঠিক হয়ে যাবে একটু পরে। আপনারা খাবার খেয়ে নিন।

— তুমি আমার পাশে আসো। দুই বোন এক সাথে খাবো।

এই কথা বলে ভাবী নীলাকে নিজের পাশে বসিয়ে খাবার বেড়ে দেয়। তারপর সবাই খাবার খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। নীলা নিজের রুমে যেতেই তন্ময় নীলাকে বলল,

— থ্যাংকস।

নীলা কিছুই বললনা। হঠাৎ করে তন্ময়ের ফোন বেজে উঠে। তন্ময় ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার তাই সে ফোন রিসিভ করে। কিছুক্ষণ কথা বলে নীলার দিকে ফোন এগিয়ে দেয়।

নীলা বুঝতে পারে তার বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছে।

— নীলা মা কেমন আছিস তুই?

— আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো বাবা?

— আমিও ভালো আছি। তোর কথা খুব মনে পড়ছে মা।

— আমারও তোমাদের কথা মনে পড়ছে খুব। মা কেমন আছে?

— ভালো।

— আচ্ছা বাবা এখন রাখি পরে কথা হবে আবার।

— ঠিক আছে।

নীলা তন্ময়ের ফোন তন্ময়ের দিকে এগিয়ে দেয়। তারপর নীলা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরে যায়। ভাবী নীলাকে দেখে ওনার কাছে ডেকে নেয়।

— বোন এখনে তোমার কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো?

— না ভাবী, কোনো সমস্যা হচ্ছেনা।

— তো গতকাল রাত কেমন কেটেছে?

নীলা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — খুব ভালো। গতকাল রাত তো আমার জন্য স্পেশাল ছিলো।

— তাহলে আমার দেবর তোমাকে খুশি করতে পারছে?

নীলা মাথা নিচু করে রইলো।

— বাব্বাহ তুমি দেখি লজ্জা পাইছো। আচ্ছা বাদ দাও। এখন উঠি তোমার ভাইয়া আমাকে খুজবে আবার।

— ঠিক আছে ভাবী।

ভাবী চলে গেলো। নীলা নিজের রুমে গিয়ে দেখে তন্ময় কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে। নীলাকে দেখে তন্ময় ফোন কেটে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো। সবাই খাবার খেতে বসে। কিন্তু তন্ময় নেই।

আয়ান চৌধুরী নীলাকে বলল,

— তন্ময় কোথায়?

— বাবা উনি তো অনেক আগে বাহিরে গিয়েছে এখনও আসেনি।

— ওহ আচ্ছা। সবাই খাওয়া শুরু করো।

— বাবা আপনারা খেয়ে নিন উনি আসলে আমি খাবো।

তারপর যে যার মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করে চলে গেলো। দুপুর গিয়ে সন্ধ্যা হলো তন্ময় এখনও এলোনা। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। তাও তন্ময় এখনও এলোনা। তন্ময়ের ফোনে বাসা থেকে বার বার কল দেয় কিন্তু ফোন অফ দেখাচ্ছে। সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে তন্ময়ের কি হলো? কিছুক্ষণের মধ্যেই কলিং বেলের শব্দ শুনে ভাবী গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলে দেখে তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে।

— তন্ময় তোমার ফোন অফ কেন?

তন্ময় পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে আসলেই ফোন অফ।

— আসলে ভাবী ফোন কখন অফ হয়ে গেছে খেয়াল করিনি। আমার খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও।

আয়ান চৌধুরী তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,

–এতো রাত করে তুই কোথা থেকে এলি? কোন বাড়ির ছেলে এতো রাত করে বাসায় আসে?

— উফ বাবা আমি এখন ছোট নেই ওকে? খাবার দিবে নাকি আমি চলে যাবো?

— তন্ময় তোকে আমি একটা প্রশ্ন করছি। কোথা থেকে আসলি এতো রাত করে?

— খাবারি খাবোনা।

এই কথা বলে তন্ময় নিজের রুমে চলে গেলো। নীলা খাবার নিয়ে রুমে যায়। আর সে রুমের ভিতরে যেতেই হতবাক হয়ে গেলো।

চলবে?