#মেঘ_হবি_তুই
[তৃতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নীলা খাবার নিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকতেই হতবাক হয়ে যায়। কারণ নীলার সব জামাকাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো রুমে। নীলা এবার খাবার গুলো এক সাইডে রেখে জামাকাপড় গুলো হাতে নিতেই তন্ময় নীলার কাছে এসে খুব শক্ত করে নীলার হাত চেপে ধরে। শক্ত করে চেপে ধরার কারণে নীলা হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে।
— আমার আলমারিতে তুই তোর এসব জামাকাপড় রাখলি কেন? কার অনুমতি নিয়ে তুই আমার আলমারিতে হাত দিয়েছিস?
— তাহলে আমার এসব কোথায় রাখবো?
— যেখানে খুশি। আমার আলমারিতে না। নেক্সট টাইম যদি আবার দেখি তখন দেখবি আমি তোর কি অবস্থা করি।
— আমি বুঝলাম না, আপনি যেহেতু আমাকে সহ্যই করতে পারেন না তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করলেন?
— বিয়ে কেন করছি জানতে চাও?
ফ্ল্যাশব্যাক
_______________
— তন্ময় অনেক দিন হয়েছে ট্যুর দেওয়া হয়নি কোথাও। চল কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক। কি বলিস তুই?
— ভালোই, কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়?
— আমাদের পাশে যে একটা গ্রাম আছে ওখানে চল।
— গ্রামে? তোদের মধ্যে কি রুচি খারাপ হয়ে গিয়েছে? শেষে কিনা গ্রামে যেতে হবে? কক্সবাজার অথবা সাজেক চল।
— আমি শুনেছি আমাদের পাশের গ্রামে সুন্দর একটা পার্ক হয়েছে। অনেক মানুষ সেখানে যাচ্ছে।
— তাহলে সেখানেই যাবি?
— হুম।
— ওকে ফাইনাল। আগামীকাল সকালে আমরা বের হবো।
— ঠিক আছে।
এবার যে যার বাসায় চলে গেলো। কিন্তু তন্ময় গেলোনা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল তন্ময়। গ্রামের পরিবেশ তন্ময়ের কাছে ভালো লাগেনা। বন্ধুদের কারণেই তাকে যেতে হবে। তন্ময় পকেট থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে ওটা কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ করে বাসার দিকে চলে যায়। রাতে সবার সাথে খাবার খেতে বসে তন্ময়। তখনই সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল।
— আমি কাল ট্যুরে যাচ্ছি। ফিরতে দুইদিন সময় লাগবে।
আয়ান চৌধুরী বলল — কোথায় যাবি?
— আমাদের পাশের যে গ্রাম আছে সেখানে যাবো।
— ওখানে গেলে দুই একদিন থাকতে হবে কেন? ওখানে গিয়েই তো চলে আসতে পারবি।
— ওখানে আমরা থাকব একদিন।
–ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে তন্ময় নিজের রুমে ঘুমতে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তন্ময় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনানের সব বন্ধু চলে আসে। আর তাড়া গাড়িতে উঠে সেই গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে তারা যাচ্ছে। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। রাস্তার খারাপ অবস্থা দেখে তন্ময় একট রেগে যায়।
— এই জন্যই গ্রাম আমার পছন্দ না। এইসব রাস্তা দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করা যায়? কি অবস্থা রাস্তায়। চারপাশে ধুলাময়লা।
— দোস্ত আর বেশি ধুরে না। আর বিষ মিনিটের রাস্তা।
তন্ময় বাধ্য হয়ে আবার ড্রাইভিং করতে শুরু করে হঠাৎ। আচমকা তন্ময় খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করে। এতে সবাই ঘাবড়ে যায়।
— কিরে কি হইছে এভাবে ব্রেক করলি কেন?
তন্ময় কিছু না বলে নিজের সিট ব্যালট খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তন্ময়ের বন্ধুরা কিছু বুঝতে না পেরে তারাও বের হয়ে আসে। তন্ময় গাড়ি থেকে নেমে একটা বয়স্ক লোকের কলার চেপে ধরে।
— চোখা কোথায় রেখে হাটিস? রাস্তা কি তোর বাপের?
তন্ময় এমনিতেই রেগে আছে৷ তার উপর এখন আরো বেসি রেগে যায়। লোকটা তন্ময়কে বলল,
— আসলে তুমি গাড়িটা এতো জোরে চালাচ্ছ আমি খেয়াল করতে পারিনি।
— ঠিক ভাবে চলাফেরা করতে পারিস না রাস্তায় বের হোস কেন?
এই কথা বলে তন্ময় লোকটাকে একটা ধাক্কা দিতেই সে টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যায়। তখনই তন্ময়ের গালে একটা থাপ্পড় পড়ে। তন্ময় থাপ্পড় খেয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চোখের সামনে একটা মেয়েকে আবিষ্কার করে। মেয়েটা প্রচন্ড রেগে ছিলো। থাপ্পড় খেয়ে তন্ময় আরো বেশি রেগে যায়। যে তন্ময়ের সাথে কেউ ভয়ে কথা বলেনা তার শহরে সেই তন্ময়ের গায়ে থাপ্পড় দেয় একটা গ্রামের মেয়ে।
— রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলেই কি চোখ আকাশে উঠে যায় নাকি? রাস্তায় যে মানুষ চলাফেরা করে সেদিকে খেয়াল থাকেনা? আমি এতক্ষণ সব দেখছিলাম নিজে দোষ করলেন আবার এই লোকের উপরে চড়াও হচ্ছেন। মগের মুল্লুক পাইছেন নাকি?
তখনই মেয়েটার বান্ধুবী এসে বলল,
— নীলা বাদ দে চল এখান থেকে।
— বাদ দিলে হবে নাকি? ওদের এভাবে ছেড়ে দিলে হবেনা। ওনাকে সরি বলতে হবে। কতো বড় সাহস আমাদের এলাকায় এসে আমাদের মুরুব্বিদের গায়ে হাত তুলে। এই-যে মিষ্টির ওনাকে সরি বলুন। নাহলে কিন্তু অবস্থা খারাপ হবে।
— হোয়াট! আমি বলব সরি? এই তন্ময় চৌধুরী কাওকে সরি বলে না ওকে?
— আপনি সরি বলবেননা? ওয়েট আমি গ্রামের লোকজন ডেকে এখনি ব্যবস্থা করছি।
তখনই তন্ময়ের বন্ধু এসে তন্ময়কে বলল,
— দোস্ত এখানে ঝামেলা না করাই ভালো।জাস্ট সরি তো বলে দে প্লিজ।
— কখনও না। চল সবাই গাড়িতে উঠে বস।
নীলা এবার তন্ময়ের সামনে গিয়ে বলল,
— সরি না বলে এখান থেকে আপনি যেতে পারবেন না। নাহলে দেখেন আমি কি করতে পারি।
এই কথা বলে নীলা লোকজন ডাকতে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে অবশেষে তন্ময় লোকটাকে সরি বলে। আর নীলার কাছে এসে বলে,
— তোকে আমি দেখে নেবো।
এই কথা বলে তন্ময় গাড়িতে উঠে। তারা নিজেদের গন্তব্যে চলে যায়। রেগে তন্ময়ের পুরো শরীর আগুন হয়ে আছে। তন্ময়ের সব আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছে। সে একটা চেয়ারের উপরে বসে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে। তখনই তন্ময়ের বন্ধু চলে আসে।
— কিরে তুই এখানে একা বসে কি করছিস? ওখানে সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর তুই এখানে!
— আমার ভালো লাগছেনা তোরা আড্ডা দে।
— আরে গ্রামের একটা মেয়ের জন্য তুই এমন করছিস কেন?
— এই মেয়ের কতো বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলছে। এই মেয়ের কিছু,,,
এই কথা বলে তন্ময় থেমে যায়। কারণ তন্ময় দেখতে পায় নীলা এখানে এসেছে। তন্ময় চেয়ার থেকে উঠে নীলার কাছে চলে গেলো। আর পিছন থেকে নীলার হাত চেপে ধরে। আচমকা নীলার হাত টেনে ধরায় নীলা কিছুটা আতংকিত হয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। তখনই সে দেখতে পায় তন্ময়কে।
— অসভ্যের মতো আমার হাত ধরছেন কেন? বাড়িতে কি মা বোন নেই?
— মুখ সামলে কথা বল। নাহলে দেখবি এখন আমি তোর কি হাল করি।
নীলা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
— আপনি আমার কিছুই করতে পারবেন না। হাত ছাড়ুন।
এই কথা বলে নীলা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তন্ময় নীলাকে আবার পিছন থেকে হাত ধরে এক সাইডে নিয়ে যায়। তখনই তন্ময়ের বন্ধু এসে তন্ময়কে আটকানোর চেষ্টা করে,
— তন্ময় কি করছিস এসব? লোকজন দেখছে ছেড়ে দে।
তন্ময়ের রাগি মুখ দেখে নীলা খুব ভয় পেয়ে যায়। তন্ময় নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নীলাকে ছেড়ে দেয়। তারপর সে আবার চেয়ারে গিয়ে বসে। আর সে কিছু একটা চিন্তা করতে থাকে।
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। নীলা নিজের বাড়ির দিকে যেতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলা নিজের বাড়িতে পৌছে যায়। বাড়ির ভিতরে আসতেই নীলার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্য নীলা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
চলবে?